#ভালোবাসার_শেষ_পরিনতি
#প্রথম_পর্ব
#লেখক_নাবীল_শেখ
আট মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যার করে কারাগারে বন্দী অনন্ত। ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা যায় অন্তত তার স্ত্রীর পেটে সজোরে আঘাত করার কারণে মৃত্যু হয়। নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা করেও তার কোনো অনুসূচনা হচ্ছেনা। অন্ধকার কারাগারে মাথা নিচু করে বসে আছে অনন্ত।
অনন্তর সাথে দেখা করতে আসে তার উকিল বন্ধু আরিয়ান।
— তুই কীভাবে পারলি নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা করতে? তোর কি একটি বার ও হাত কাঁপেনি? তুই কি মানুষ? একটা মানুষ কীভাবে তার আট মাসের
অন্তসত্বা স্ত্রীর পেটে লা*থি মারতে পারে? আমার ভাবতেও জঘন্য খারাপ লাগছে। আমি ভাবতেই পারছিনা তুই আমার বন্ধু! ছিহ অনন্ত।
–আমি অ*মা*নুষ। আমি জঘন্য একটা মানুষ। জানি আমার মতো জঘন্য মানুষ দুটি হয়না।
–কেন করলি এমন? তুই না মেঘলাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস? তুই আমাকে সব খুলে বল। আমি তোর হয়ে লড়াই করব। দেখ অন্তত আমার হাতে সময় খুব কম। কাল তোকে কোর্টে তোলা হবে। তার মধ্যে আমাকে সব জোগাড় করতে হবে।
— আমার জন্য তোকে কিছু করতে হবেনা। আমি জানি আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। তুই অহেতুক নিজের সময় নষ্ট করিস না। আমি তো বলছি আমি নিজের হাতে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছি।
— অনন্ত আমি জানি এর পিছনে কোনো একটা কারণ তো আছে। তুই আমাকে সব খুলে বল।
— আমার কিছুই বলার নেই আরিয়ান। আমি এখন আর নিজেকে নিয়ে ভাবছি না। আমি আমার মেঘলার কাছে চলে যেতে চাই। যেখানে আমার মেঘলা নেই সেখানে আমি থেকে কি করব?
— বাহ!মেঘলা তোর? তুই মেঘলাকে হত্যা করে এখন বলছিস মেঘলা তোর? তোর মুখে এমন কথা মানায় না। যে নিজের অন্তসত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে আবার সেই স্ত্রীকে নিজের বলে দাবি করতে লজ্জা লাগছেনা তোর? তোর মতো জঘন্য মানুষ আমি দুটি দেখিনি।
অনন্ত নিশ্চুপ হয়ে রইলো। আরিয়ান আর কোনো কথা না বলে কারাগার থেকে বেরিয়ে চলে আসে। আরিয়ান পেশায় উকিল। অন্তত আর আরিয়ানের বন্ধুত্ব সেই ছোট বেলা থেকে। আরিয়ান যখন জানতে পারে অনন্তর কারাগারে বন্দী, তখন সে বন্ধুর কাছে চলে আসে আসল ঘটনা জানার জন্য। কিন্তু অনন্ত তাকে কিছুই বললনা। আরিয়ান অনন্তর মুখ দেখেই বুঝতে পারে এখানে কিছু একটা লুকিয়ে আছে। আর সেটা কি? আরিয়ান থানা থেকে নিজের অফিসে চলে গেলো।
এই দিকে অনন্ত জেলের মধ্যে বসে অঝোরে কান্না করছে। তার সংসার কীভাবে শেষ হয়ে গেলো? ভালোবাসায় ঘেরা সংসার ভেঙে তচনচ হয়ে গেলো।
ঐদিকে আরিয়ান কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। আগামীকাল অনন্তকে আদালতে হাজির করা হবে। এই একদিনের মধ্যে কিছু একটা করতে হবে। আরিয়ান অফিসে বসে সময় নষ্ট না করে অনত্নের বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে বাসায় তল্লাশি শুরু করল। কিন্তু সে তেমন কিছুই খুঁজে পায়নি। আরিয়ান তার নিজের বাসায় চলে গেলো।
রাতের খাবার খেয়ে অনন্ত ফ্লোরের উপরে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু হঠাৎ করে কারোর ডাকে ঘুম থেকে উঠে যায় অনন্ত।
— অনন্ত!
অনন্ত সামনে তাকিয়ে দেখে সাদা শাড়ী পড়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। জেলের ভিতরে অন্ধকার থাকায় সে মুখ দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু সে সাদা শাড়ী দেখে বুঝতে পারে এটা মেয়ে। আর কন্ঠটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে।
–কে আপনি?
মেয়েটা এবার অনন্তের দিকে একটু এগিয়ে আসে। হালকা আলোতে মেয়েটার মুখ দেখে চমকে উঠে অনন্ত। কারণ মেয়েটা আর কেউ না। অনন্তর মৃত স্ত্রী মেঘলা।
— মেঘলা!
— অনন্ত তুমি কেন করলে এমন? আমি কি তোমার কাছে বেশি কিছু চেয়েছিলাম? আমি তো তোমার ভালোবাসা চেয়েছি। আমরা তোমার কি ক্ষতি করেছি?
— মেঘলা। আমি কিছু করেনি বিশ্বাস করো আমাকে। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
মেঘলা একটা হাসি দিয়ে বলল — ভালোবাস? হাহাহা। এই তোমার ভালোবাসার নমুনা? তোমাকে কিছুই বলার নেই আমার। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
এই কথা বলে মেঘলা হাওয়ায় সাথে মিলিয়ে যায়। অনন্ত সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে যায়। অনন্ত বুঝতে পারে মেঘলা তার স্বপ্নে এসেছে। অনন্ত অঝোরে কান্না করতে থাকে। আর সে বলতে থাকে।
— মেঘলা আমি তোমাকে হত্যা করিনি। আমি জানি না কীভাবে সব হবে গেলো।
অনন্ত রাতে আর ঘুমতে পারেনি। পরের দিন সকালে অনন্তকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনন্তকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসে। জজ সাহেব ও চলে আসেন। জজ সাহেব অনন্তকে বললেন — আপনার কোনো উকিল আছে?
অনন্ত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। তখনই আরিয়ান ভিতরে চলে আসে।
— দুঃখিত জজ সাহেব। আমার একটু দেরি হয়ে গেলো।
— কিন্তু আপনি কে?
— আমি আসামী পক্ষের উকিল। এই হলো আমার কাগজপত্র।
আরিয়ান এবার তার কাগজপত্র জমা দিল। তারপর আরিয়ান তার জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে। জজ সাহেব আদালতের কাজ শুরু করার অনুমতি দিতেই আরিয়ান দাঁড়িয়ে বলল — জজ সাহেব আমার একটা আবদার ছিল।
— বলুন।
— স্যার আমাকে দুইদিনের সময় দেওয়া হোক। আমার এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। তার জন্য আমার দুইটা দিন খুব প্রয়োজন। প্লিজ আমাকে দুইদনের সময় দেওয়া হোক।
জজ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে। তারপর উনি দুইদিন সময় দেয় আরিয়ানকে। আজকে আর কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেই আদালতের কাজ বন্ধ করে দেয়। অনন্তকে আবার কারাগারে নিয়ে চলে গেলো। অনন্ত নিজের উপর সব মনোবল হারিয়ে ফেলেছ। এমন সময় অনন্তর কাছে একটা চিঠি আসে। অনন্ত চিঠি টা খুলে পড়তে শুনতে করে। চিঠিতে লেখা ছিল – অনন্ত তোর বন্ধ আরিয়ানকে এই মামলা থেকে সরে যেতে বল। নাহলে তো বুঝতেই পারছিস আমি কি করতে পারি? আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ। তোর স্ত্রীর হত্যা তুই করেছিস। এটা থেকে নড়াচড়া করলে কি হবে বুঝতে পারছিস তো তাইনা? কিছু যদি উনিশ-বিশ হয় তাহলে তোর পরিবারকেও হারাবি এবার। বেস্ট অফ লাক।
চিঠিটা পড়ে অনন্ত নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। আরিয়ান অনন্তের সাথে কথা বলার জন্য কারাগারের ভিতরে প্রবেশ করে।
— অনন্ত আমি তোকে ছোটবেলা থেকে চিনি। আমি জানি তুই কিছুতেই মেঘলাকে হত্যা করতে পারিস না। তুই আমাকে আসল ঘটনা খুলে বল। তুই ভয় পাবিনা আমি আছি তোর পাশে। পুরো দুনিয়া তোর বিপক্ষে চলে গেলেও আমি তোর হয়ে লড়াই করব। আমি তোর সাথে কোনো অন্যায় হতে দেবোনা।
— তোকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না। তুই চলে যা আমার যা হওয়ার হবে। আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।
— ছেলেমানুষী করিস না। তুই জানিস না তোর সাথে কি হতে পারে।
— জানি আমি। ফাঁশি হবে তাইতো? হোক। তুই চলে যা। আমার জন্য তোকে কিছু করতে হবেনা।
অনন্তর কথা শুনে আরিয়ান রেগে যায়। আরিয়ান অনন্তকে কিছু না বলে বেরিয়ে যাবে এমন সময় অনন্তর হাতের দিকে নজর পড়ে আরিয়ানের। আরিয়ান এবার অনন্তর কাছে গিয়ে বলল — এটা কীসের কাগজ?
— কিছু না।
— দেখি আমি তুই আমাকে দে।
অনন্ত চিঠি টা পিছনে নিয়ে যায়। আরিয়ান বুঝতে পারে এই কাগজে কিছু একটা তো আছে। আরিয়ান এবার জোর করে অনন্তর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করে। কাগজটা পড়ে আরিয়ান এবার অবাক হয়ে গেলো।
— তুই আমার থেকে এটা লুকিয়ে রাখলি কেন? আর এই চিঠি তোকে কে দিয়েছে?
— আমি জানিনা। এর আগে দুইটা দিয়েছে। আরিয়ান বিশ্বাস কর আমি মেঘলাকে হত্যা করিনি। কে করেছে আমি সেটাও জানিনা। আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে আমি সব নিজের ঘাড়ে নিয়েছি। মেঘলাকে তো হারিয়ে ফেলছি এখন আমি আমার মা-বাবাকে হারাতে চাইনা। ওরা তোর ক্ষতি করতে পারে। তুই এই মামলা থেকে সরে যা। আমি চাইনা আমার জন্য তোর ক্ষতি হোক। আমি এখন আর নিজেকে নিয়ে ভাবিনা।
— তুই আমাকে প্রথম থেকে সব খুলে বল। আমি সব শুনতে চাই। তারপর বাকিটা আমি করব।
— আমাদের হাসিখুশী জীবন শেষ করে দিল এক মুহুর্তেই।
ফ্ল্যাশব্যাক
—- — — — —
মেঘলা আট মাসের অন্তসত্বা। অফিস থেকে আগে ছুটি নিয়ে নিলাম দু-মাসের। কারণ এই সময় আমার মেঘলার পাশে থাকা খুব জরুরী। আমি মেঘলার দেখাশোনা করতে শুরু করি। মেঘলাকে কোনো কাজ করতে দেইনি। বাসার রান্নাবান্না আমার আম্মুই করছে। যখন যেটা দরকার তখন সেটাই নিয়ে আসছি। প্রতিদিন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখছি। কারণ আমি কোনো রিস্ক নিতে চায়নি। আমি চাই আমার স্ত্রী আর সন্তান দু’জনেই সুস্থ থাকুক। কিন্তু হঠাৎ করে নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়।
চলবে?