ভালোবাসার ব্যাকরণ পর্ব-০১

0
497

#ভালোবাসার_ব্যাকরণ💖
#লেখনীতে_মাইসারাহ_আরোহি🌸
[সূচনা পর্ব]

‘আমার মেয়েকে ছোঁ বেন না মিস মাফরুহা‌ ইবনাত রুহিয়া।আমার মেয়ের থেকে আপনি সবসময় দূ’রে থাকবেন।’

পরিচিত এক পুরুষালি রাশভারী কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ মাত্র‌ই রুহিয়া সানফিকে স্প র্শ করতে গিয়েও থেমে গেলো।তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে পিছু ফিরে চাইলো সে।চোখের সম্মুখে গম্ভীর মুখে অন্তিক’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা মাত্র‌ই বুকের ভেতরটা কেঁ পে উঠলো রুহিয়ার।হাত,পা,ঠোঁট সবকিছুই যেনো কাঁ প তে আরম্ভ করলো।সানফি ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো অন্তিক’কে।অন্তিক নিচু হয়ে বসে দু’হাতে জড়িয়ে নিলো তাকে‌।সানফি হাসিমুখে বললো,
‘বাবা তুমি এসেছো!’

মেয়ের কথায় মুচকি হাসে অন্তিক।অধর কোণে হাসির রেখা উপস্থিত রেখে মৃদু স্বরে বলে,
‘হুম মা এসেছি।আমাকে তো আসতেই হতো।’

ফের খুশির ঝিলিক দেখা যায় সানফির মুখশ্রীতে।অন্তিক উঠে দাঁড়ায়।পদধ্বনি শোনা যায় কারো,অনুভূত হয় উপস্থিতি।ভেসে আসে মেয়েলি নরম কন্ঠস্বর।পশ্চাৎ হতে আগন্তুক রমণী উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে,
‘সানফি মা তোমার হাঁটুতে কি হয়েছে?অনেক র ক্ত বের হচ্ছে তো!’

রুহিয়া বিস্মিত নয়নে তাকায় সম্মুখের রমণীর পানে।আকাশি রঙের জর্জেট শাড়ি পরিহিত সে,ছোট্ট মুখখানি,কপালের উপরের চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকানো।এই মুহূর্তে রুহিয়ার নিকট তাকে পর্যবেক্ষণ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো না বরং সে সানফির দিকে ছুটে যেতে উদ্যত হলো।কিন্তু দু কদম যেতেই অন্তিক তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে ক্রোধিত স্বরে বললো,
‘স্টপ,এক পাও এগোবেন না আপনি।চুপচাপ ওখানে দাঁড়িয়ে থাকুন।গুঞ্জন তুমি সানফিকে নিয়ে গাড়িতে বসো আর ওর পায়ে ব্যান্ডেজ করে দাও।সানফি তুমি মামনির সঙ্গে যাও ঠিক আছে।আমিও এক্ষুনি আসছি।’

গুঞ্জন নামের মেয়েটি ডানে-বামে মাথা নাড়লো।কিঞ্চিত ঠোঁট প্রসারিত করে সানফির ছোট্ট হাতখানি হাতের মুঠোয় নিয়ে অগ্রসর হলো সামনের দিকে।রুহিয়া তাদের পিছুপিছু যাওয়ার প্রয়াস করলেও তাকে ব্যর্থ হতে হলো।অসহায় দৃষ্টিতে সে তাকালো অন্তিকের কঠোর মুখশ্রীর পানে।চোয়াল শ ক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে অন্তিক।কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে রুহিয়ার।বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী পুরুষটির পানে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে অনুরোধের স্বরে সে বলে ওঠে,
‘প্লিজ আমাকে সানফির কাছে যেতে দিন।ওর পায়ে আ ঘা ত লেগেছে,ওষুধ লাগাতে হবে।প্লিজ আমায় একবার যেতে দিন ওর কাছে।’

হাতের মুঠো শ’ক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে রুহিয়ার মুখোমুখি দাঁড়ায় অন্তিক।র ক্তি ম লাল ক্রো’ধি’ত চক্ষু্দ্বয় নজরে আসতেই ভীত হয় রুহিয়া।তবু‌ও স্ফীত হয় না সে,পুনশ্চ অনুরুদ্ধ কন্ঠে বলে,
‘প্লিজ আমায় যেতে দিন।সানফি তো আমার‌ও মেয়ে,মা তো আমি ওর।ওর পাশে থাকাটা আমার ভীষণ জরুরী।’

বাক্যদ্বয় সম্পূর্ণ করেই রুহিয়া অন্তিক’কে পাশ কাটিয়ে যাবার জন্য পদচারণা করলো।তৎক্ষণাৎ অন্তিক শ ক্ত করে চেপে ধরলো রুহিয়ার ডান হাতখানা।পাজোড়া স্হির হলো রমণীর,বেশ শ ক্ত করে চেপে ধরার দরুণ ব্য থায় কঁ কি য়ে উঠলো সে।অন্তিকের একটুও মায়া হলো না।উল্টো সে দ্বিগুণ বল প্রয়োগ করে রমণীকে টেনে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করালো।চোয়াল শ ক্ত করে ক্রোধিত স্বরে বললো,
‘একদম না,সানফিকে একদম নিজের মেয়ে বলে দাবি করবে না।ও আমার মেয়ে,আর ওর কাছে ওর বাবা-ই সব।আর কি বললে ওর পাশে থাকাটা জরুরি?হাহ‌্ পাঁচ বছর আগে তুমি কোথায় ছিলে?কোথায় ছিলো তোমার এতো ভালোবাসা?যখন সানফির তোমাকে প্রয়োজন ছিলো তখন তুমি আসো নি আর এখন এসেছো দরদ দেখাতে!চাই না তোমার সিমপ্যাথি।’

শেষোক্ত কথাখানি বেশ তাচ্ছিল্যের স্বরে‌ই বলে অন্তিক।ব্য থিত দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় রুহিয়ার।পুনরপি চোখের জল গড়ায়।অন্তিক হাত ছেড়ে দেয় তার।কব্জির উপরে লাল দাগ পড়ে গিয়েছে।রুহিয়া মাথা ঘামায় না।নতজানু হয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,
‘আমার কথাটা তো শুনবেন।আমি…..’

বাক্যদ্বয় সম্পন্ন হ‌ওয়ার পূর্বেই অন্তিক ঝাঁ ঝা লো কন্ঠে বলে,
‘কি বলবে তুমি?কিছু বলার মুখ আছে?আমি কিছু শুনতে চাই না।তুমি আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকবে ব্যাস।আর আমিও ট্রাই করবো সানফিকে অন্য স্কুলে ভর্তি করার,যেখানে তুমি আছো সেখানে আমি আমার মেয়েকে রাখবো না।’

কথাগুলো ব্যক্ত করেই অন্তিক হনহন করে প্রস্হান করে।গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় রুহিয়ার চোখের সামনে দিয়ে।হতাশ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রুহিয়া।চাপা কষ্টগুলো বুক চিঁ ড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস হয়ে।
______________________________
নিষ্কর্মা মধ্যাহ্ন।দিবাকরের তে জ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।বিস্তরগগণের মাঝামাঝি অবস্হান নিয়ে খাড়াভাবে কিরণ দিচ্ছে তেজস্বী আদিত্য।বৃক্ষের পল্লবরাশি যেনো নড়তে ভুলে গিয়েছে।বিছানার ওপর পা‌ দুখানা ঝুলিয়ে বসে আছে সানফি।কিয়ৎকাল পূর্বেই বাড়ি ফিরেছে সে।গুঞ্জন সানফিকে স্কুলের পোশাক বদলে হাতমুখ ধু‌ইয়ে দিয়েছে।বর্তমানে সে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে সানফির হাঁটুতে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে।বেশ ব্যথা পেয়েছে মেয়েটা।হাঁটুতে কাঁ টা স্হানটা কালচে রঙ ধারণ করেছে।ক্ষ ত স্হানে ওষুধ পড়তেই সানফি চোখেমুখ খিচে বলে উঠলো,
‘আহ্ মামনি ভীষণ জ্বা লা করছে।তুমি ওষুধ দিও না।’

গুঞ্জন উঠে দাঁড়ায়।মলিন মুখে সানফির মাথায় বুলিয়ে দেয়।আদুরে গলায় বলে,
‘আর একটু মা।ওষুধ না লাগালে যে তোমার আরো বেশি ক ষ্ট হবে।একটু ধৈর্য ধরো।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

ছোট মুখে কথাখানা বললো সানফি।গুঞ্জনের ওষ্ঠাধর প্রসারিত হলো কিঞ্চিত।পুনরপি পরম যত্নে সে সানফির হাঁটুতে ওষুধ লাগিয়ে দিলো।তৎপর উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘হয়ে গিয়েছে মা।এখন তুমি বিশ্রাম করো।দেখবে খুব শীঘ্রই ব্য থা কমে যাবে।’

বাক্যদ্বয় ব্যক্ত করেই গুঞ্জন পিছন ফিরে পদচারণা করলো।সানফি পশ্চাৎ হতে টেনে ধরলো গুঞ্জনের হাত।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো গুঞ্জন।অধর কোণে হাসির রেখা উপস্থিত রেখে নমনীয় স্বরে শুধালো,
‘কিছু বলবে সানফি মা?’

সানফি উপর নিচ মাথা নাড়লো যার অর্থ সে কিছু বলতে চায়।গুঞ্জন এক পা এগিয়ে এসে সানফির সন্নিকটে অবস্হান নিলো।সানফি গুঞ্জনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
‘আচ্ছা মামনি বাবা তখন রুহিয়া ম্যামের সঙ্গে ওরকম আচরণ কেনো করলো?বাবা কি ম্যাম কে আগে থেকে চেনে?ম্যাম কে হয় বাবার?’

চলবে।