ভালোবাসার ব্যাকরণ পর্ব-০২

0
262

#ভালোবাসার_ব্যাকরণ💖
#লেখনীতে_মাইসারাহ_আরোহি🌸
[পর্ব ০২]

সানফি গুঞ্জনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
‘আচ্ছা মামনি বাবা তখন রুহিয়া ম্যামের সঙ্গে ওরকম আচরণ কেনো করলো?বাবা কি ম্যাম কে আগে থেকে চেনে?ম্যাম কে হয় বাবার?’

এহেন প্রশ্নে অপ্রতিভ হয় গুঞ্জন।মস্তিষ্ক যেনো স্হির হয়ে গিয়েছে।কোনোকিছুই তার মাথায় আসছে না।সে কি বলবে সানফিকে?অপরদিকে প্রত্যুত্তরের আশায় সানফি চেয়ে আছে গুঞ্জনের বদনপানে।গুঞ্জন শুকনো ঢোক গিলে।বারংবার প্রয়াস করে কিছু বলার কিন্তু কথাগুলো গলার নিকট আসতেই কেমন যেনো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।তবুও অতিরিক্ত চেষ্টায় নিজেকে স্বাভাবিক করে গুঞ্জন।গলার স্বর নামিয়ে বলে,
‘রুহিয়া ম্যাম তোমার…’

এটুকু বলতেই থামতে হলো গুঞ্জনকে।তার চোখ গেলো সমতল আয়নায়।আয়নায় প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে অন্তিকের।গুঞ্জন পিছন ফিরে দরজার দিকে তাকালো।অন্তিকের থমথমে মুখশ্রী দেখে ভীতসন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে তাকালো সে।গুঞ্জনকে কিছু না বলে স্বাভাবিক মুখেই অভ্যন্তরে পা রাখলো অন্তিক।দ্রুত পায়ে সানফির নিকট এসে স্মিত হেসে বললো,
‘দিদান ডাকছে তোমায়।চলো বেবি আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ করবো।’

বাবার কথায় হাসিমুখে তাকায় সানফি।চটজলদি উঠে দাঁড়িয়ে সগ্রাহে হাত বাড়িয়ে দেয়।অন্তিক মেয়ের হাত ধরে প্রস্হান করে।তবে যাওয়ার আগে নিম্নস্বরে গুঞ্জনকে বলে যায়,
‘যে ভুলটা করতে যাচ্ছিলে সেটা আর কখনো কোরো না।ভুলেও কোরো না কিন্তু।’
_______________________________
সূর্য অস্ত গেছে অনেকক্ষণ।নিগূঢ় তমসায় আবৃত হয়েছে মেদিনী।বিস্তর অম্বরে দেখা দিয়েছে অর্ধাকৃতির শশাঙ্ক।শশাঙ্কের রুপালি স্নিগ্ধ দীপ্তি জানালার গ্রিল অতিক্রম করে প্রবেশ করছে অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে।চতুর্দিকে বিরাজমান পিনপতন নীরবতা।রুহিয়ার বিমূঢ় দৃষ্টি দূর অন্তরীক্ষের পানে।চাঁদ যেমন একাকী রুহিয়ার‌‌ও নিজেকে আজ বড্ড একা লাগছে।শূণ্যতা ঘিরে ধরেছে তাকে।মস্তিষ্কে বারংবার একটি কথাই ঘুরছে,সানফি তার নিজের মেয়ে।অথচ এতদিন সে তা জানতোই না।না চাইতেও কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো একফোঁটা নোনাজল।চোখের পলক ফেললো রমণী।চক্ষুপর্দায় ভেসে উঠলো অতীতের স্মৃতি।কিয়ৎক্ষণ দৃষ্টিগোচর হলো সেই প্রতিচ্ছবিগুলো।রুহিয়া আঁখি মেললো পিঠে একখানা শীতল স্পর্শ পেয়ে।তৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সে।তাসলিমা ইসলাম মেয়েকে তাড়া দিয়ে বললেন,
‘খেতে আয় মা।’

কথাখানা ব্যক্ত করেই তাসলিমা ইসলাম প্রস্হান করলেন।রুহিয়া চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালো।মনে মনে আওড়ালো,
‘এভাবে আর নয়।আমি আসছি আমার অধিকার বুঝে নিতে।’
_________________________________
মেঘপুঞ্জের আড়ালে চাঁদের লুকোচুরি খেলা।রাত্রির অনিলে বেশ হিমেল ভাব।ঘড়িতে সময় এখন সাড়ে এগারোটা।মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে অন্তিক।আশেপাশের ঘরগুলোতে বাতি নিভেছে বেশ কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই,সানফিও ঘুমিয়ে পড়েছে।শুধু তন্দ্রা নেই অন্তিকের চোখে।তাই তো মায়ের কক্ষে এসেছে সে।অন্তিকের মা মিসেস সাবিনা ছেলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,
‘এভাবে আর কত!শুধু তো কষ্ট‌ই পাচ্ছিস বাবা।এবার নাহয় একটা বিয়ে কর,এভাবে তো চলা যায় না।সানফির‌ও তো মা প্রয়োজন,মেয়েটা সারাক্ষণ মায়ের অভাব অনুভব করে।’

বন্ধ চোখজোড়া মেলে তাকায় অন্তিক।শান্ত স্বরে বলে,
‘বিয়ে জীবনে একবারই হয় মা।আর সানফির জন্য তো গুঞ্জন আছেই।সে তো ওকে কম ভালোবাসে না,বরং পরম যত্নে আগলে রাখে।’

অন্তিকের কথায় সহমত পোষণ করেন না মিসেস সাবিনা।কিঞ্চিত ঝাঁ ঝা লো স্বরে বলেন,
‘এসব বললে হয় না অন্তিক।গুঞ্জন যত‌ই করুক ও সানফির মা হয়ে উঠতে পারবে না,চাচিমা-ই থাকবে।এই বয়সে ওর নিজের মা’কে প্রয়োজন।তুই যদি বিয়ে না করতে চাস তাহলে ব‌উমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।তাহলেই তো হয়।’

তৎক্ষণাৎ শোয়া থেকে উঠে বসলো অন্তিক।এতক্ষণ চোখেমুখে শান্তভাব থাকলেও মুহুর্তেই অন্তিকের চক্ষুদ্বয় র ক্তি ম বর্ণ ধারণ করলো।হাতের মুঠো শ’ক্ত করে উঠে দাঁড়ালো সে।মিসেস সাবিনা তী ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন অন্তিকের মুখপানে।অন্তিক রাশভারী কন্ঠে বলে উঠলো,
‘আমার মেয়ের জন্য আমি‌ই যথেষ্ট।আর কাউকে প্রয়োজন নেই আমার।সানফির মা-বাবা দুটোই আমি।তাই এধরণের কথা ফার্দার না বলাই শ্রেয়।’

কথার ইতি টেনে বড় বড় পা ফেলে প্রস্হান করলো অন্তিক।মিসেস সাবিনা বরাবরের মতো হতাশ হলেন।দূর অন্তরীক্ষের পানে চেয়ে দীর্ঘ শ্বা স ছাড়লেন।
____________________________
নব্য এক দিন।দিগন্তের পূর্বকোণে উদীয়মান আদিত্য।গাছে গাছে মগডালে পরিযায়ী বিহঙ্গদের অবাধ গুঞ্জন।ব্যস্ত নগরীর যান্ত্রিক কোলাহলের আওয়াজ।প্রভাতের পরিবেশ স্নিগ্ধ,নির্মল।বাতাবরণে মিষ্টতা।বড় বসার ঘরটায় সমাগম সবার।পাশাপাশি সোফায় বসে আছে মিসেস সাবিনা,অন্তিক এবং অন্তিকের ছোট ভাই অতুল।তিনজনেই চায়ে চুমুক দিতে ব্যস্ত।তাদের পাশেই গুঞ্জন সানফিকে স্কুলের জন্য ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ করেই সানফির নজর যায় সদর দরজার পানে।রুহিয়াকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে সে বিস্মিত কন্ঠে বলে ওঠে,
‘রুহিয়া ম্যাম!’

অন্তিকের হাত থেকে চায়ের কাপখানা পড়ে গেলো শুভ্র রঙা মেঝেতে।ঝনঝন শব্দ জানান দিলো কাপটা ভে ঙে গিয়েছে।কিন্তু অন্তিকের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।অবিলম্বে সে উঠে দাঁড়ালো।সানফির দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো সদর দরজার দিকে।ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে সামনে এগিয়ে এলো রুহিয়া।মিসেস সাবিনা,অতুল দু’জনেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।গুঞ্জন‌ও তাকালো সামনের দিকে।সানফি রুহিয়ার পানে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পেছন থেকে তার হাত ধরে ফেললো অন্তিক।বাবার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো সানফি।অন্তিক প্রত্যুত্তর করলো না বরং রুহিয়ার দিকে এক পা এগিয়ে ক্রোধিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,
‘কেনো এসেছো এখানে?’

রুহিয়া মুচকি হাসে।অন্তিক ভ্রুযুগল কুঁচকে ফেলে।অধর কোণে হাসির রেখা উপস্থিত রেখে রুহিয়া মৃদু স্বরে বলে,
‘আমাকে তো আসতেই হতো।যতোই হোক এটা তো আমার শ্বশুড়বাড়ি।তাছাড়া আমার স্বামী-সন্তান যেখানে আছে আমার‌ও তো সেখানেই থাকা উচিত।কি মিস্টার অন্তিক শাফায়াত আমি ঠিক বলছি তো?’

চলবে
[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।]
ধন্যবাদ _________💜