ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-০৫

0
439

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব৫
#Raiha_Zubair_Ripte

একের পর এক ফোন করে চলছে নীলা রাতুল কে কিন্তু রাতুল ফোন ধরছে না কাল থেকে। এ নিয়ে বিশ টার মতো ফোন করা হয়ে গেলো ঘন্টা খানেকের মধ্যে। সুহাসিনী বিছানায় শুয়ে শুয়ে নীলার কান্ড দেখছে আর নীলা রুমের মধ্যে পায়চারি করছে ফোন নিয়ে। তপ্ত শ্বাস ছাড়লো সুহাসিনী। কোনো ছেলে কি ভালোবাসার মানুষটার মুখে অন্য ছেলের প্রশংসা শুনতে পারে? উহু কখনোই পারে না।

” এই সুহা রাতুল আমার ফোন কেনো ধরছে না? কি হলো বুঝতেছি না এমন কেনো করছে?

নীলার কথায় ভাবনা থেকে বের হয় সুহাসিনী।

” কেনো ধরবে তোর ফোন বলতো আমায়?

” কেনো ধরবে না কি করছি আমি?

” কি করছিস জানিস না? রাতুল ভাইয়ার সামনে রুদ্র ব্যাটার এতো প্রশংসা ক্রাশ এসব বললি কেনো?

” কেনো সত্যি টাই তো বলেছি।

” তুই কি পা’গল? বয়ফ্রেন্ডের সামনে অন্য ছেলের প্রশংসা করবি আর সে সেটা মেনে নিবে? নির্ঘাত রাতুল ভাইয়া ভালো তাই রেস্টুরেন্টে কিছু বলে নি আমি হলে তোকে চ’ড়িয়ে গা’ল লাল করে দিতাম।

” সামান্য প্রশংসা করাতেই রাতুল এমন করছে আমার সাথে। ভুল হয়ে গেছে ঐ ব্যাটার প্রশংসা আর জীবনেও মুখ থেকে বের করবো না।

সুহাসিনী ফোন টা হাতে নিয়ে চ্যাট লিস্টে গিয়ে রাতুলের করা মেসেজ গুলো দেখায়। নীলা এতো বার ফোন দেওয়ায় রাতুল যখন ফোন ধরছিলো না তখন সুহাসিনী রাতুল কে মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করে কেনো ফোন ধরছে না। তখন রাতুল বলে,,

” আপনার বোন আমার সামনে অন্য ছেলের প্রশংসা করেছে তাই শাস্তি স্বরূপ ফোন ধরছি না।

নীলা সুহাসিনীর ফোন কেঁড়ে নেয়। চ্যাট লিস্টে গিয়ে মেসেজ দেয়।

” আমি আর কখনো অন্য ছেলের প্রশংসা করবো না জীবনেও না। বিলিভ মি ট্রাস্ট মি বিশ্বাস করুন। প্লিজ ফোন টা ধরুন আমার।

রাতুল সিন করে রেখে দিলো রিপ্লাই করলো না। নীলা এবার কেঁদেই দিবে এমন অবস্থা। সুহাসিনী মেসেজ দেয় রাতুল কে।

” ভাইয়া ফোন রিসিভ করুন নীলার কেঁদে দিবে তা না হলে তখন কিন্তু ফুপি চলে আসবে আর নীলা গদগদ করে সব আপনার আর ওর ব্যাপারে বলে দিবে।

দশ মিনিট পর রাতুল নিজে থেকেই ফোন দেয় নীলার ফোনে। নীলার ফোনের আওয়াজ শুনতে পেয়েই বিছানা থেকে উঠে টেবিল থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করে ফোন। নীলা এবার কেঁদে দেয়।

” সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আপনি এভাবে আমার উপর রাগ করবেন জানা ছিলো না আমার। আর কখনো এমন করবো না।

” এটা সামান্য বিষয় না নীলা। কোনো প্রেমিকি সহ্য করবে না তার প্রিয়তমার মুখে অন্য ছেলের প্রশংসা। আমি ও পারি নি। ভদ্রতার খাতিরে তখন চুপ করে ছিলাম।

” আর এমন ভুল হবে না।

” সত্যি?

” সত্যি সত্যি সত্যি।

” ঠিক আছে,আই লাভ ইউ।

” লাভ ইউ টু।

” শুনলাম আজ তোমার ভাই আসছে?

” হ্যাঁ।

” ওহ্ আচ্ছা।

এর মধ্যে নীলার মা বাহির থেকে ডাক দেয়। নীলা রাতুল কে বাই পরে ফোন দিবো কথাটা বলে ফোন কে’টে দিয়ে বাহিরে চলে যায়।

ছাঁদে বসে আছে সুহাসিনী। রুদ্র ফোন করেছিলো একটু আগে। আজ সুভাষিণী আসছে এ বাসায়। রুদ্র ও নাকি আসবে। প্রতিদিন রোজ নিয়ম করে দু বেলা ফোন দেয় রুদ্র। আজও ব্যাতিক্রম হয় নি। হঠাৎ গাড়ির আওয়াজে ধ্যান ভাঙে সুহাসিনীর। ছাদের রেলিং দিয়ে মাথা বের করে দেখে সুভাষিণী গাড়ি থেকে বের হচ্ছে। সুহাসিনী দৌড়ে নিচে নামে। সদর দরজার কাছে আসতেই দেখে সুভাষিণী এগিয়ে আসছে। সুহাসিনী বোন কে জড়িয়ে ধরে। অভ্র গাড়ি থেকে ল্যাগেজ বের করতে করতে সুহাসিনীর উদ্দেশ্যে বলে,,

” আরে শালিকা বোন কে ছাড়ো আগে দুলাভাই কে সাহায্য করো। তোমার বোনের এতো বড় ব্যাগ টানতে টানতে আমি হাঁপিয়ে গেলাম। থাকবে পাঁচ দিন আর কাপড়চোপড় নিয়ে আসবে এক মাসের।

সুহাসিনী বোন কে ছেড়ে দুলা ভাইয়ের কাছে এসে বলে,,

” ভাই দেখেন সেদিন পড়ে গিয়ে মাজা ভেঙে এসেছি। আজ আপুর ব্যাগ নিতে গিয়ে সেদিনের মতো ব্যাগ নিয়ে আর পড়তে চাই না।

সুভাষিণী এগিয়ে আসলো বোনের কাছে।

” রুদ্র বললো তুই নাকি হাঁড়ি পাতিলের উপর ধপাস করে পড়ে গিয়েছিলি। একটু দেখে চলবি তো এতো পড়লে কি চলে বল? খাস না নাকি। সেদিন যখন বাড়ি আসলাম আমার এই সামান্য ব্যাগ টাই নিতে পারলি না চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেলি। বাবা কে বলে ভিটামিন খাওয়াতে হবে তোকে।

সুহাসিনী অভ্রর দিকে তাকালো।

” ভাই এটা সামান্য ব্যাগ?

অভ্র অবাক হওয়ার ভান করে বলে,,

” আমি ও তো তাই দেখছি এটা সামান্য ব্যাগ। ব্যাগের ভেতর কিছুই নেই। শুধএ ব্যাগ নিয়ে আসছে তোমার বোন।

সুভাষিণী রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকায় অভ্রর দিকে। অভ্র ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,,

” কথায় কথায় এতো চোখ গরম করে তাকাও কেনো? আমার বাচ্চার ও তো তাহলে এই স্বভাব হবে দেখছি।

সুহাসিনী গাড়ির ভেতর দিকটায় তাকিয়ে আছে। মেন গেটেও বার বার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সুভাষিণী সেটা দেখে মৃদু হেসে বলে,,

” আসে নি সে।

সুহাসিনী সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

” কেনো আসে নি। উনি যে বললো আসবে।

” তোমার উনির জরুরি কাজে আটকে আছে। আমাদের সাথেই এসেছিলো বাসার সামনেই নেমে গেছে। বিকেলে চলে আসবে বলেছে।

” ওহ্।

” তোর ব্যাপার স্যাপার বুঝিনা বাপু। চল ভেতরে চল।

সুহাসিনী পেছনে একবার ঘুরে বোনের সাথে বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে।

সুমনা বেগম আর নীলিমা বেগম রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। মেয়ে এসেছে মেয়ের জামাই এসেছে একটু পরে নীলয় ও আসবে নীলার ভাই। সব মিলিয়ে আজ হইচইপূর্ণ পরিবেশ বাসায়। সুভাষিণী নিজের রুমে শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে। অভ্র ও পাশে শুয়ে আছে। সুহাসিনী সোফায় বসে ফোন টিপছে। নীলা ছাঁদে গিয়ে রাতুলের সাথে কথা বলছে। হঠাৎ সদর দরজার দিকে সুহাসিনীর চোখ যেতেই দেখে রুদ্র আর তার বাবা আসছে। রুদ্র পাঞ্জাবি পড়েছে। এই নিয়ে তিনবার পাঞ্জাবি পড়া দেখলে রুদ্র কে। মুখে বিরাজ করছে ক্লান্তি। পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা। রফিক সাহেব অফিসে ছিলেন মেয়ে আর মেয়ের জামাই এসেছে দেখে তাড়াতাড়ি করে অফিস থেকে বাসায় এসেছেন। বাসায় আসার পথে টঙের দোকানের সামনে দেখা হয় রুদ্রর সাথে। রুদ্র ও আসছিলো অলস ভঙ্গিতে। এদিকে একটা কাজে আটকে পড়েছিলো। রফিক সাহেব রুদ্র কে দেখামাত্রই ডাক দেয়। রুদ্র রফিক সাহেব কে দেখে সৌজন্যমূলক হাসি দেয়।

” কি ব্যাপার রুদ্র তুমি এখানে আমাদের বাসায় যাও নি?

” এই তো আঙ্কেল যাবো এখন। আসলে একটা কাজে আটকা পড়ে গিয়েছিলাম।

” ওহ্ তাহলে চলো এক সাথে যাই।

” হুম চলুন।

রফিক সাহেব বাসায় ঢুকে মেয়েকে সোফায় বসে থাকতে দেখে মুচকি হাসি উপহার দেয়। সুহাসিনী ও হাসে। এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেয় সুহাসিনী। রুদ্র তাকিয়ে আছে সুহাসিনীর দিকে। টিশার্ট প্লাজু এলেমেলো চুলে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে সুহাসিনী কে। সুহাসিনীর অস্বস্তি হয় রুদ্রর চাহনিতে। রফিক সাহেব মেয়েকে ঠান্ডা পানি দিতে বলে। রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে নর্মাল পানি এনে রফিক সাহেব আর রুদ্র কে দেয়। রুদ্র সোফায় বসে পানিটা খেয়ে বলে,,

” থ্যাংক’স।

রফিক সাহেব পানি টা খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুদ্র অভ্র কে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেয় সে এসেছে। অভ্র মেসেজ টা পেয়েই নিচে নেমে আসে। সুহাসিনী উপরে চলে যায় নিজের রুমে।

” সুহা যা রেডি হয়ে আয়।

সুহাসিনীর রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলে সুভাষিণী। হঠাৎ রেডি হওয়ার কথা শুনে সুহাসিনী অবাক হয়।

” রেডি হবো কেনো?

” পাশের মোড়ের দোকানে থেকে ফুচকা নিয়ে আয় রুদ্রর সাথে গিয়ে। আমার খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে।

” তাহলে তুমিও চলো।

” আরে না দেখছিস তো বিকেল হয়ে গেছে। যেতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এই সময় বাহিরে যাওয়া ঠিক না মা যেতে দিবে না। তুই আর রুদ্র গিয়ে নিয়ে আয় না। মা কে বলেছি।

” না না আমি যেতে পারবো না দুলাভাই কে পাঠাও।

” তুই যাবি মানে তুই ই যাবি রুদ্রের সাথে। এই নে শাড়ি এটা পড়।

” শাড়ি কেনো আবার।

” বাহ রে আমার দেবরের সাথে যাচ্ছিস ফাস্ট টাইম শাড়ি পড়বি না।

সুহাসিনী বোনের দিকে তাকায়। সুভাষিণী তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলে চলে যায়। মেরুন রঙের শাড়িটা পড়ে নেয় সুহাসিনী চুল গুলো খোপা করে নেয়। হালকা সেজেও নিলো। আয়নার একবার নিজেকে দেখে নিচে নেমে আসলো। রুদ্র তাকায় সুহাসিনীর দিকে। আজ নির্ঘাত মা’রার প্ল্যান করেছে মেয়ে। শাড়ি পড়তে বলেছে কে?

” শালিকা আমি ও যাবো।

রুদ্র ভ্রুকুটি করে।

” তুমি কেনো যাবে?

” বাহ রে আমি ও ফুচকা খাবো তাই। তোদের সাথে সময় কাটাবো।

” বুড়ো বয়সে ফুচকা কেনো খাবে? বউ কে পাহারা দাও। বউয়ের সাথে সময় কাটাও। সুহাসিনী চলো।

রুদ্র সুহাসিনী কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাটছে রুদ্র সুহাসিনী। মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। রুদ্র পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে সুহাসিনীর দিকে। সুহাসিনী ভেবে পায় না এতো তাকিয়ে থাকার কি আছে? রুদ্র সুহাসিনী কে দাঁড়াতে বলে ছুটে যায় রাস্তার ওপাশে। ফুলের দোকান থেকে বেলি ফুলের একটা মালা এনে সুহাসিনীর খোঁপায় গেঁথে দিয়ে বলে,,

” এবার পারফেক্ট লাগছে।

কথাটা বলে সুহাসিনীর হাত ধরে ফুচকার স্টলে যায়। ফুচকাওয়ালা মামা কে বলে এক প্লেট ফুচকা দিতে। সুহাসিনী তাকায় রুদ্রর দিকে।

” এক প্লেট কেনো?

” আগে এক প্লেট খাও পরে আবার নিয়ো।

” আমি আমার জন্য বলি নি। আপনি খাবেন না?

” না এসব আমি খাই না।

” কেনো খেয়ে দেখুন অনেক টেস্ট।

” হ্যাঁ জানি কেমন টেস্ট পেট খারাপ হবে আমার।

” হবে না খেয়ে দেখুন।

” না খাবো না।

” মামা দুটো দিন ফুচকার প্লেট।

” দুটো কেনো?

” আপনিও খাবেন আমার সাথে।

” বলেছি তো,,,

” উহু কোনো কথা নয় আপনি খাবেন আমার সাথে।

কথাটা বলে এক প্লেট রুদ্রর দিকে এগিয়ে দেয়। আর অন্য প্লেট সুহাসিনী নিজে নেয়। ফুচকা টাকে টকের ভেতর ডুবিয়ে নিয়ে মুখে দিচ্ছে সুহাসিনী মুখ ভর্তি হয়ে গেছে ফুচকায় ঠোঁটের পাশে টক পানি লেগে আছে। সেটা দেখে এক ঢোক গিলে রুদ্র এ মেয়ে আজ সত্যি তাকে ঠিক থাকতে দিবে না। সুহা রাণীর এই রূপ রুদ্র কে যে নাজেহাল করো তুলছে সেটা কি তার ভীতু রাণী সুহাসিনী জানে? মেয়েটার সৌন্দর্যের বিস্তার না বাড়লেই কি নয়। সব কিছুতেই এতো সুন্দর কেনো লাগে। সুহাসিনী রুদ্রকে খেতে না দেখে চোখের ইশারায় বলে খাচ্ছেন না কেনো? রুদ্রর মস্তিষ্ক অব্দি গেলো না সে ইশারা।

রাস্তার ওপর পাশে গাড়ি ভেতর থেকে সুহাসিনী কে সুভাষিণীর দেবরের সাথে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে নীলয়। তার সাথে অবাক হয় দুজন কে শাড়ি পাঞ্জাবী পড়ে ফুচকা খেতে দেখে। মনে সন্দেহ জাগে তাদের নিয়ে।

#চলবে?

(ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)