ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-০৬

0
339

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব৬
#Raiha_Zubair_Ripte

ড্রয়িংরুমে চলছে পিনপিনে নিরবতা। নীলিমা বেগম আর সুমনা বেগম ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। রুদ্র আর সুহাসিনী এখনো বাড়ি ফিরে আসেনি। নীলয় সোফায় বসে আছে তার পাশেই সুহাসিনীর বাবা। নীলয় এসেছে প্রায় আধ ঘন্টা হবে। সুভাষিণী অভ্র,নীলার সাথে কুশল বিনিময় করো এখন মামার পাশে বসে আছে। নীলয় বারবার নড়েচড়ে উঠছে কিছু বলতে চাইছে। রফিক বিষয় টা লক্ষ করল। গলা ঝেড়ে বলল,,

” কিছু বলতে চাও নীলয় তুমি?

ভরকে যায় নীলয়। আশেপাশে তাকিয়ে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,

” না মামা কিছু বলতে চাইছি না। আসলে গরম লাগছে খুব।

রফিক সাহেব লক্ষ করে দেখলেন বাহিরে বেশ ভালোই বাতাস বইছে তার ঠান্ডা রেশ ড্রয়িং রুমেও আসছে দক্ষিণা জানালা দিয়ে ড্রয়িং রুমেও ফ্যান চলছে তার ভেতরেও নীলয়ের ঘামে উঠা রফিক সাহেবের ভালো লাগলো না। তিনি হাক ছেড়ে সুমনা কে ডাকলেন। সুমনা খাবার রেখে রফিকের সামনে এগিয়ে এসে বলে,,

” কি হলো ডাকলে যে?

” নীলয় কে শরবত দাও ছেলেটা এই ঠান্ডা বাতাসেও ঘেমেছ একাকার হয়ে গেছে।

নীলয় বাঁধা দিলো। রফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,,

” না মামা শরবত লাগবে না। ফ্রেশ হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর কথা বলছি কেমন?

রফিল সাহেব মাথা নাড়ালেন। নীলয় উঠে নিজের বাড়ি চলে গেল মায়ের থেকে গেটের চাবি নিয়ে।

সুভাষিণী অভ্র নীলা ছাঁদে বসে আছে। সুভাষিণীর সামনে তেঁতুলের বাটি আর গুঁড়া মরিচ দিয়ে লবন মাখানো। মনের সুখে সুভাষিণী তেঁতুলের সাথে লবন মিশিয়ে খাচ্ছে আর নীলা লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে সুভাষিণীর খাওয়া দেখছে। মাঝে মঝে জিহ্বা দিয়ে পানি ও বের হচ্ছে। দু বার সুভাষিণী নিজের তেঁতুল থেকে নীলকে দিয়েছে। কিন্তু তারপর ও নীলার আরও খেতো ইচ্ছে করছে। উপায়ন্তর না পেয়ে নীলা সুহাসিনী কে আসার পথে তেঁতুল আনতে বলে।

সুহাসিনী আর রুদ্র ফুচকা আর তেঁতুল নিয়ে বাড়ি ফিরে। সুহাসিনীর হাতে ফুচকা আর রুদ্রর হাতে তেঁতুলের পলি। সুহাসিনী ফুচকা টা নিয়ে টি-টেবিলে রাখে। নীলা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো সুহাসিনী কে শাড়ি পড়ে দেখে চোখ কপালে উঠে। সামান্য ফুচকা আনতে কেউ শাড়ি পড়ে যায়? তার পেছনেই রুদ্র কে দেখে ভরকে যায় নীলা। সিঁড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে নেমে সুহাসিনীর দিকো এগিয়ে এসে বলে,,

” আমার তেঁতুল এনেছিস?

সুহাসিনী কিছু বলার আগেই রুদ্র পেছন থেকে বলে উঠে,,

” এই যে শালি সাহেবা আপনার তেঁতুল আমার কাছে।

নীলা ভ্রুকুটি করে। রুদ্রর থেকে তেঁতুলের পলিটা নিয়ে বলে,,

” আপনার কাছে আমার বোন বিয়ে দেই নি আপনি আমায় শালি বলছেন কেনো? বোন বিয়ে দিয়েছি অভ্র ভাইয়ের কাছে শালি বললে অভ্র ভাই বলবে আপনি নন। তাই না অভ্র ভাই?

অভ্র সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলে,,

” একদাম সাইয়ি কাহা তুমনে আমার প্রিয় শালি। রুদ্র ভাই সব কিছুতে ভাগ বসাস না। এরা আমার শালি নট ইউর

রুদ্র সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে,,

” যাও যাও বসালাম না ভাগ, বললাম না শালি বেয়াইন থেকে তো ঘরওয়ালি করতেই পারি। সেটা তে তো মানা নেই তাই না? তখন জান কালিজা বলবো।

কথাটা বলে সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয় রুদ্র। সুহাসিনী পানি খাচ্ছিলো। রুদ্রর চোখ টিপ দেওয়া দেখে বিষম খায় সুহাসিনী। অভ্র রুদ্র নীলা তাকায় সুহাসিনীর দিকো। সুহাসিনী রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকায় রুদ্রর দিকে। রুদ্র সবার আড়ালে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দেয়। সুহাসিনী রুদ্র কে বিরবির করে বকতে বকতে চলে যায়।

অভ্র রুদ্রর পাশে বসে। রুদ্র ভাইয়ের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,,

” ভাই বুঝলে এতো তাড়াতাড়ি মনে হয় আমার কপালে বিয়ে নেই। তোমার শালি বুঝতেই চায় না আমাকে।

নীলা রুদ্রর কোনো কথার মানে বুঝে না তাই আর রুদ্র কথা না শুনে নিজের তেঁতুল নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে যায়।

সুহাসিনী রুমে গিয়ে শাড়ি বদলিয়ে পিংক কালারের একটা কুর্তি পড়ে নেয়। রফিক সাহেব গিয়েছেন একটু বাড়ির সামনের মোড় টায়।

রাত বাজে আট টা,,

সুভাষিণী দরজা ঠেলে সুহাসিনীর রুমে ঢুকে। সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” সুহা খেতে আয় মা ডাকছে।

সুহাসিনী সায় জানিয়ে সুভাষিণীর পেছন পেছন আসে। রুদ্র, অভ্র,নীলা,রফিক সাহেব বসে আছেন ডাইনিং টেবিলে। সুহাসিনী গিয়ে রফিক সাহেবের পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। খাবার মেনুতে প্রায় নীলয়ের পছন্দের খাবার। সুহাসিনী মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” প্রায় সব তো দেখি নীলয় ভাইয়ার পছন্দের খাবার। ভাইয়া থাকলে ভালো হতো।

নীলা সুহাসিনী র দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ভাইয়া তো আছেই।

” মানে?

” মানে হচ্ছে এই ভাইয়া চলে এসেছে।

” কখন?

” এই তো সন্ধ্যার দিকে বাসায় ছিলি না তো।

” ওহ্ তাহলে এখন কোথায় ভাইয়া?

” আমাদের বাসায়।

” ভাইয়া খাবে না?

” হ্যাঁ খাবে সুহা তুই খেয়ে একটু ডেকে আন তো।

তরকারি টা পাতে দিতে দিতে কথাটা বলে সুমনা বেগম।

সহসা রুদ্র তাকায় খাবার কোনোরকম গিলে কিছু বলতে নিবে তার আগেই পেছন থেকে নীলয় সদর দরজা দিয়ে ভেতরো প্রবেশ করতে করতে বলে,,

” তার আর দরকার নেই মামি আমি চলে এসেছি।

সুহাসিনী তাকায় ভাইয়ের দিকে। নীলয় তার বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো। মুখে হাসি ফুটে উঠে নীলয় কে দেখে। রুদ্র সুহাসিনীর হাসি দেখতে পায়। সাথে সাথে বুকের বা পাশ টায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে। কই সুহাসিনী তো তাকে দেখলে এভাবে হাসে না। বরং পালাই পালাই করে। নীলয় এগিয়ে এসে সুহাসিনীর পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। রুদ্রর রাগ হয়। নীলয় এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে সুহাসিনী কে আর সুহাসিনী হেঁসে হেঁসে সব কথার উত্তর দিচ্ছে। রুদ্র আর সইতে পারলো না। গলা দিয়ে খাবার ও নামলো না তার। অর্ধেক খাবার প্লেটে রেখেই হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলো।

#চলবে?