ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-০৭

0
347

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব৭
#Raiha_Zubair_Ripte

” কিরে সুভা রুদ্র এতো রাতে চলে গেলো যে?

হঠাৎ মায়ের কথায় পেছন ফিরে তাকায় সুহাসিনী। রুদ্র চলে গেছে! কখন? সুভাষিণী ও চমকায় রুদ্র বাড়ি থেকে চলে গেছে? কই তাকে তো কিছু বলে নি আচ্ছা অভ্র কে বলেছে নাকি? সুমনা বেগম সুভা কে কিছু বলতে না দেখে বলে,,

” কি হলো বলছিস না কেনো?

সুভাষিণী মায়ের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বলে,,

” আসলে মা রুদ্রর কি যেনো একটা জরুরি কাজ আছে তাই চলে গেলো।

” ওহ্।

কথাটা বলে সুমনা বেগম চলে গেলো। সুহাসিনী বোনের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

” উনি সত্যি চলে গেছে আপু?

” হুম।

” কই কখন গেলো আমি তো দেখলাম না।

” আমি ও তো দেখি নি।

সুহাসিনী ভ্রু কুঁচকে তাকায় সুভাষিণীর দিকে।

” দেখো নি? তাহলে বললে যে জরুরি কাজ আসায় সে চলে গেছে।

” মিথ্যা বলেছি। দেখলি না মা কিভাবে জেরা করছিলো

” তাই বলে মিথ্যা বলবে।

” রুদ্র কে ফোন দে।

ভরকে যায় সুহাসিনী। সে কেনো রুদ্র কে ফোন দিবে?

” কি হলো ফোন দিচ্ছিস না কেনো?

” ফোনে টাকা নেই। ফোন যাবে না।

” তোর ফোনটা দে আমার কাছে দেখি টাকা আছে কি নেই।

সুহাসিনী রুম থেকে নিজের ফোন টা এনে সুভাষিণীর হাতে দেয়। সুভাষিণী রুদ্রর নাম্বারে ফোন দিয়ে দেখে সত্যি সুহাসিনীর ফোনে টাকা নেই। অগ্যতা ওয়াইফাই অন করো ফেসবুকে ঢুকে রুদ্রর নাম সার্চ দিতেই দেখে রুদ্র সুহাসিনীর সাথে এড। অবাক হয় সুভাষিণী। রুদ্র কে ফেসবুকে এড ও করে ফেলছে। রুদ্রর আইডিতে ঢুকে সুভাষিণী মেসেজ দেয়,,“ চলে গেছো কেনো না বলে?

পাঁচ মিনিটের মাথায় রুদ্রর মেসেজ আসে। রুদ্র সুহাসিনী মেসেজ দেখে ভেবেছিলো সুহাসিনী দিয়েছে মেসেজ কিন্তু মেসেজোর ধরন দেখে বুঝলো এটা সুহাসিনীর মেসেজ না।

” জরুরি কাজ মনে পড়ে গিয়েছিল তাই চলে এসেছি।

সুভাষিণী আর মেসেজের উওর দিলো না। ফোন টা বোনের দিকে এগিয়ে সোফা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,,

” ভালোই চলছে তাহলে চালিয়ে যা।

সুহাসিনী বুঝলো না বোনের কথার মানে। পানির বোতল ভরে বোতল নিয়ে রুমে চলে যায়। এখন তার একটা ঘুমের প্রয়োজন নীলয়ের সাথে অনেক রাত অব্দি গল্প করেছে। এখন না ঘুমালেই নয়।

রাত বাজে পনে একটা। ফোনের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সুহাসিনীর। ঘুমঘুম চোখে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে রুদ্রর নাম জ্বল জ্বল করছে। সাথে সাথে সমস্ত ঘুম উবে যায়। এতো রাতে ফোন কেনো করেছে লোকটা? এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন কে’টে যায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সুহাসিনী এর মধ্যে আবার ফোন দেয় রুদ্র। সুহাসিনী ফোন টা নিয়ে রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় রুদ্র বলে উঠে,,

” আমার রাজ্যের সমস্ত ঘুম চু’রি করে তুমি নিরানন্দে ঘুমাচ্ছ সুহা।

” আপনার ঘুম আমি চু’রি করেছি মানে?

” এই যে আমার চোখে ঘুম নেই অথচ তুমি ঘুমাচ্ছিলে।

” আপনার চোখে ঘুম নেই কেনো। নিশাচর পাখি নাকি আপনি?

” হলে মন্দ হতো না। তোমাকে পাহারা দিতাম রাত্রি বেলায় নিশাচর পাখি হয়ে আর দিনের বেলায় রুদ্র হয়ে।

” আমার ঘুম ধরছে ঘুমাবো।

” রাত ১২ টা অব্দি যখন গল্প করছিলে তখন ঘুম কোথায় ছিলো?

” আমার চোখেই ছিলো।

” নীলয় কি আমার থেকেও বেশি হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং?

হঠাৎ কথার মাঝখানে নীলয় কে নিয়ে এমন কথা মোটেও আশা করে নি সুহাসিনী।

” হঠাৎ নীলয় ভাইয়ার কথা বলছেন যে?

” না এমনি বলো তো কে বেশি হ্যান্ডসাম ড্যাশিং আমি নাকি নীলয়?

দুজনেই নিঃসন্দেহে হ্যান্ডসাম ড্যাশিং। তবে নীলয় একটু একটু বেশি ফর্সা রুদ্রর তুলনায়। রুদ্র তো শ্যামলা যাকে চোখ বন্ধ করে এক বাক্যে শ্যাম পুরুষ বলা চলে। চোখ বন্ধ করে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলল সুহাসিনী

” এটা কেমন কথা।

” আচ্ছা শুনো নীলয়ের সাথে মিশতে না করবো না কিন্তু অতিরিক্ত মেলামেশা ও আমি বরদাস্ত করবো না। নীলয়ের সাথে মিশো কিন্তু খুব একটা গভীরে গিয়ে মিশো না। তোমায় নীলয়ের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে দেখলে আমার বুকের বা পাশ টায় চিনচিনে ব্যথা অনুভুত হয়। নীলয় যখন তোমার দিকে তাকায় তখন শ্বাস আটকে যায় আমার। অল্প করে মিশবা তার সাথে আর হেঁসে হেঁসে কথা বলবা না পীড়া দেয় আমায় খুব তোমার হাসি।

কথাটা সুহাসিনীর হৃদয়ে গিয়ে বিঁধে। লোকটার কন্ঠে কিছু একটা ছিলো যখন বাক্য গুলো উচ্চারণ করছিল। মনে হচ্ছিল কথা গুলো তার বলার সময় গলা কাঁপছিল।

রুদ্র ফোন কেটে দেয়। সুহাসিনী বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে দাঁড়ায়। বাহিরের ঠান্ডা বাতাস সুহাসিনীর প্রো শরীর টাকে শীতল করে দেয়। দমকা হাওয়ায় কোমর অব্দি থাকা চুল গুলো উড়ে বেড়ায়। বেশ ভালো লাগছে মুহূর্ত টা। বেলকনিতে থাকা চেয়ার টায় বসে আকাশে থাকা দু একটা তারা আর চাঁদ দেখতে লাগল।

রুদ্র ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। ঘুম নেই তার চোখে শুধু দিন গুনছে কবে সুহাসিনীর পরীক্ষা শেষ হবে আর তাকে নিজের করে পাবে। এক একটা দিন রুদ্রর এক বছরের মতো লাগছে দিন যেনো ফুরাইতে চাইছে না। সুহাসিনী কে প্রথম দেখেছিল সুহাসিনীদের এলাকার স্কুল মাঠে। তখন সুহাসিনী ক্লাস নাইনে পড়ে। কিশোরী এক মেয়েকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে যায় রুদ্র। মেয়েটির হাসির শব্দে সেদিন ঘায়েল হয়ে গিয়েছিল রুদ্র।

এতো সুন্দর করে কেউ হাসে? কথা বলার সময় হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলত আর একবার হাসি পেলে হাসি থামার নাম নেই। এই তো বছর তিনেক আগে সুহাসিনী দের এলাকায় গিয়েছিল রুদ্র তার এক ফ্রেডের বাসায়। কোনো এক দরকারে ফ্রেন্ড শামিমের সাথে তাকে স্কুলে আসতে হয়। মাঠের মধ্যে খান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল শামিম আর রুদ্র হঠাৎ এক হাসির ঝংকারে হাঁটা আপনা-আপনি থেমে যায় রুদ্রর। পেছন ঘুরে তাকাতেই চোখ যায় বট গাছের নিচে থাকা তিন কিশোরীর দিকে।

তাদের মধ্যে হাসতে থাকা সুহাসিনী কে দেখে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন থেমে যায়। মেয়েটা হাসলে গালে টোল পড়ে। একদম বাচ্চা টাইপের লাগলো রুদ্রর কাছে সুহাসিনী কে। শামীম রুদ্রর হাঁটা বন্ধ দেখে তাড়া দেয়। রুদ্র একপলক সুহাসিনী কে দেখে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে,,,

❝ মেয়ে তোমার হাসি তারকারাশির থেকে ও বেশি সুন্দর বেশি উজ্জ্বল।তোমার মুখে লেগে থাকা হাসি,মাদকতায় পূর্ণ আমার হৃদয়কে করেছে চুরি❞

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন।)