ভালোবাসি প্রিয় পর্ব-২৭+২৮

0
382

#ভালোবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
পর্ব_২৭
©জারিন তামান্না

জানুয়ারির কনকনে শীতের মিঠে রোদের দুপুর বেলা।স্কুল ছুটি হয়েছে অনেকক্ষণ।ছুটির পরে বাচ্চাদের কপি চেক করতে করতে ১ টা বেজে গেছে। যোহরের আজান দিচ্ছে এলাকার মসজিদে।সব গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালো পলক।এবার বাড়ি ফেরার পালা। পলকের ব্যাগে রাখা ফোনটা বেজে চলেছে অনবরত। ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে করতেই স্কুল গেট পার করে বাইরে এলো সে। ফোন বের করে দেখলো তিয়ান কল করেছে। আমজাদ আলীর অসুস্থতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আর পুরোনো বন্ধুত্বের জের ধরে আজকাল প্রায় কথা হয় তিয়ানের সাথে পলকের। এরমাঝে পলকদের বাড়িও গিয়েছিল সে।শাহনাজ বানু দাওয়াত করেছিল তাকে। পলককে দিয়ে ফোন করিয়ে নিজে দাওয়াত করেছিলেন ওকে লাঞ্চের জন্য।শাহনাজ বানুর এত করে বলায় তিয়ানও আর ফেলতে পারেনি তার কথা।ও বাড়ির সবাই খুব পছন্দ করে তিয়ানকে। তবে নিশাত পলাশ দুজনেই বেশ অবাক হয়েছিল যখন শুনেছিল তিয়ান পলকের কলেজ লাইফের বন্ধু। শুধু বন্ধু নয়। খুব ভালো আর কাছের বন্ধু। তাদের বোনের এমন কোন ছেলে বন্ধু ছিল কোন কালে অথচ তারা সেটা জানেইনি কখনো।এই ভেবেই খুব অবাক হয়েছিল তারা। পরে যখন সবটা জানলো তিয়ানের ব্যাপারে,, ওর বিদেশ চলে যাওয়া আর পলকের বিয়ের কারণে সব কিছু থেকে ব্যাক আউট করার পরে তাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া,,,তখন তারা ভেবে নিয়েছে এই সব ঝামেলার কারণে হয় তো বলা হয়নি পলকের তিয়ানের কথাটা কখনো। তারপর থেকেই আরেকটু বেশি বেড়ে গেছে তিয়ান আর পলকের যোগাযোগ।মাঝে মাঝে বিথিকে সাথে নিয়ে গ্রুপ কলেও কথা চলে তিন বন্ধুর।ব্যাপারটা অনেকটা কলেজ লাইফের দিনগুলোর মত সাবলিল হয়ে গেছে তাদের কাছে। বিথি বেশ খুশি সব স্বাভাবিক হওয়ায়। তবে তিয়ানকে নিয়ে তার চিন্তা হয় কিছুটা। পলকেও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা মাঝে মাঝে। সব স্বাভাবিক হয়েও কেমন যেন স্পস্ট নয় পুরোপুরি।

ঘড়িতে সময় দেখলো পলক।দুপুর ১’১৫ বাজে। এই সময় তিয়ানের অফিসে থাকার কথা। তাই অসময় তার কল দেখে কিছুটা অবাক হলো পলক। কল রিসিভ করতে করতেই সামনে চোখ পড়লো তার। গাড়ির কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে তিয়ান। কানে ফোন ঠেকিয়ে রেখেছে। পলকেই কল করছিল সে। তার পাশেই শাড়ি পড়িহীতা একজন মহিলা। চোখে সানগ্লাস। কোলে ছোট একটা বাচ্চা। কিছুটা দূর থেকে মহিলাটি কে সেটা বুঝতে পারলো না সে। পলককে দেখে ফোন রেখে আলতো হাসলো তিয়ান। পলকের চোখে বিচলতা। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল সে তিয়ানের আর ওই মহিলাটির দিকে। কাছাকাছি যেতেই তাকে দেখে একগাল হেসে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ফেললো মহিলাটা। সানগ্লাস খোলা মাত্রই বিস্ময়ে আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল পলক। তার চোখ মুখে ঠিকড়ে পড়ছে খুশির ঝলক। গুণে গুণে ৫ বছরেরও বেশি সময় পরে সামনাসামনি দেখছে সে বিথিকে। বিথির কোলে ছোট্ট নোরা। বেশ ছটফট করছে সে মায়ের কোল থেকে নামবার জন্য। কিন্তু বিথি শক্ত হাতে আটকে রেখেছে তাকে। পলকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসি হাসি মুখেই তিয়ান বললো, সারপ্রাইজ! কিন্তু পলকের কোন নড়চড় নেই।তা দেখে বিথি নিজেই এগিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। জড়িয়ে ধরেই জিজ্ঞেস করলো,
_কেমন আছিস রে বাঁশপাতা?

এতকাল পরে নিজের প্রিয় বান্ধুবীকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেললো পলক। তা দেখে ভড়কে গেল তিয়ান। দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো পলকের কাছে। কিন্তু বিথি অবাক হলো না মোটেও। পলককে ছেড়ে দাঁড়াতেই তিয়ান খেয়াল করলো বিথিও কাঁদছে। চোখ ভেজা তারও। এবারে ব্যাপারটা বুঝলো তিয়ান।এতবছর পরে..এত কিছুর পরে ঘটা বিচ্ছিন্নতা থেকে আবার প্রিয় বান্ধুবীকে কাছে পেয়ে ইমোশনাল হয়ে গেছে দুজনেই। বিয়ের পর গড়নে,চালচলনে ব্যাপক বদলে গেছে বিথি।বয়কাট চুলের টমবয় টাইপের মেয়েটার এখন কোমড় সমান চুল।শার্ট প্যান্ট ছেড়ে যাকে কখনো সালোয়ার কামিজও পড়ানো যেতো না,,সে এখন শাড়ি পড়ে। পায়ে যার বেশিরভাগ স্নিক্যারস থাকতো সে এখন মেয়েদের হিল জুতো, স্লিপার পড়ে।মুখে যার সামান্য পাউডার দিতেও ঘোর আপত্তি থাকতো তার ঠোটে গাঢ় লিপস্টিক। চোখে মোটা করে কাজল টানা। হালকা গয়নাগাটিতে টমবয় রুপ পাল্টে টিপিক্যাল উইমেন হয়ে গেছে। পলকও আর আগের মত বাঁশপাতা নেই। শরীরে, চেহারায় বেশ পরিবর্তন এসেছে তারও।এখন সে পূর্ণ যৌবনা নারীতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভিডিও কলে বহুবার একে অপরকে দেখেছে তারা,তবুও সামনাসামনি দেখাটাও অন্যরকম একটা অনুভূতি তাদের জন্য। তাদের এমন আবেগপ্লুত হতে দেখে তিয়ান বললো,
_মাঝ রাস্তায় কেঁদে ভাসাচ্ছিস কেন তোরা? আর এত বছর দুই বান্ধুবী নিজেদের পেয়ে আমাকে কি আউট সাইডার করে দিলি হ্যাঁ? কোন ভ্যালু নেই আমার!

তিয়ানের কথা শুনে হেসে দিল দুজনেই। তিয়ানের বাহুতে আলতো করে চাপড় মেরে বিথি বললো,
_মেয়েদের মধ্যে ছেলেদের ভ্যালু একটু কমই থাকে রে! তাই তোর ভ্যালু নাই না বললেও একটু কম বলা চলে।
_বাহ! বাহ! বন্ধুদের মধ্যে এখন ছেলে মেয়ে ভাগ হয়ে গেলো। এই শোন,,পলক যতটা তোর ততোটাই ও আমারও। আমি কোন কমপ্রমাইজ করতে রাজি নই এক্ষেত্রে। তিয়ানের কথাটা বিথি হেসে উড়িয়ে দিলেও পলকের কেমন যেন লাগলো। তিয়ানের সাথে স্বাভাবিক ব্যাবহার করলেও মাঝে মাঝে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যায় সে। তাই শুকনো হেসে এড়িয়ে গেল তার কথাটা। তারপর, বিথিকে বললো,
_কবে আসছিস তুই? আর বাসায় না গিয়ে নোরাকে নিয়ে এখানে ক্যান আসছিস তুই?
_আরেএএ বোইন।স্টপ যা। একটা একটা প্রশ্ন কর। আমি চারদিন হইলো আসছি ঢাকায়। তিয়ানকে দেখা করার জন্য কল দিছিলাম,,তোর বাসায়ই যাইতে চাইছিলাম। কিন্তু,তিনু বললো,তোরে সারপ্রাইজ দিবে।আর আজকে নাকি জনাব ট্রিট দিবেন আমাদেরকে।তাই সরাসরি তোর স্কুলেই নিয়া আসলো।
_কবির ভাইয়া কই? আসেননাই উনি?
_না রে,,,আমি আসছি ২ মাসের জন্য। তোর বিয়ের পর পরই ফিরে যাবো। এতদিন তো আর তার পক্ষে ভার্সিটি গ্যাপ দেওয়া সম্ভব না। তাই তোর বিয়ের আগে আগে আসবে সে। তোদের বিয়ের পরেই আমাদের একটা রিসিপশন পার্টির প্ল্যান আছে।বিয়েটা তো আর এখানে হয়নাই। তাই একটা গেট টুগেদার করবো। আর তার পরে ওই সপ্তাহের শেষদিকে ব্যাক করবো ইন শাহ আল্লাহ।
_এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি তুই?একে তো বিদেশ গেলি পড়তে তারপর সেখানেই নিজের প্রফেসরের প্রেমে পড়ে বিয়েও করে ফেললি। ফিরলি বাচ্চার মা হয়ে।আর এখন মাত্র ২ মাস থাকবি? এইটা কোন কথা হলো!!
_আরেএ…সে যখন যাওয়ার যাবে বিথু,,এখন এসব চিন্তা করে ওর সময়টুকু কেন ওয়েস্ট করতেছো পলক। যতদিন কাছে আছে,enjoy her company. -পাশ থেকে তিয়ান বললো।
_হ্যাঁ,,,একদম ঠিক। এখন চল তো,,কোথাও গিয়ে বসি। বড্ড বিরক্ত করতেছে মেয়েটা। নোরাকে সামলাতে হিমশিম অবস্থা বিথির। তাই ওকে নিয়ে কোথাও স্থির হয়ে বসতে চাইছে সে।

_আচ্ছা,,চল।আমাদের বাসায়ই চল তাহলে। মা, নিশু তোরে দেখলে খুব খুশি হবে।

_উহু,,,আজকে কেউ কোথাও যাবে না। আজকে আমি ট্রিট দিবো তোমাদের। কোন রেস্টুরেন্টে যাবা, সেটা বলো এখন।
পলকের কথায় বাঁধা দিয়ে বললো তিয়ান।

_হ্যাঁ। আজ বাইরে ঘুরবো আমরা। আর আজকেও আমরা আমাদের ওই পুরানো আড্ডাখানাতেই যাবো। পুরোনো জায়গাগুলারে খুব মিস করছি এতদিন।বিথি বললো তিয়ানের কথায় সায় দিয়ে।
_আচ্ছা,,বেশ। চল। ওখানেই যাবো। তিয়ান বললো।

তারপর তিয়ানের গাড়িতে করেই তারা গেল তাদের কলেজ লাইফের পুরোনো রেস্টুরেন্টটায়।কলেজের এরিয়াতে হওয়ায় প্রায় সময় যেতো তারা ওখানে। আজও তাই ওখানেই গেল তারা।পুরোনো স্মৃতির টানে।

এতবছর পর তিন বন্ধু একসাথে হওয়ায় অনেক অনেক স্মৃতি, গল্প,কথায় অনেকটা সময় কাটালো তারা বাইরে। নোরাকে নিয়ে এই শীতের সন্ধ্যায় বাইরে থাকবে না বলে সেদিন বিকেলের পর পর বিথিকে বাসায় ড্রপ করে দিতে চলে গেল তিয়ান।পলককে ড্রপ করে দিতে চাইলেও মানা করে দিল পলক। সে একাই চলে এলো ওখান থেকে। যাওয়ার আগে বিথিকে তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য বারবার করে বলে গেল সে। বিথিও সময় করে চলে আসবে বলে কথা দিল। তারপর, বেরিয়ে গেল যে যে যার যার গন্তব্যে।

___________________________________

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেই বাসার গেটের সামনে এত এত মানুষের ভীড় দেখে অবাক হলো পলক। কিছু একটার গুঞ্জন চলছে সবার মধ্যে। ভীড় এড়িয়ে নিজের ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ালো সে। ফ্ল্যাটের দরজার মুখেও একই অবস্থা। বাসার ভেতর থেকে বেশ চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে। পলক ঠিক বুঝতে পারলো না কি হয়েছে বাসায়। ভীড় এড়িয়ে বাসায় ঢুকতেই স্পষ্ট শুনতে পেল সে কেউ একজন বলছে,
_এত কথা শোনার টাইম নাই আমাদের। আপনি যদি ভালোয় ভালোয় না আসেন তাহলে কিভাবে নিয়ে যেতে হবে সেটা আমরা খুব ভালো করেই জানি। একে তো বউ পিটাবেন আবার তাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য জোর করবেন।তারওপর আবার মেয়ে নিয়ে চলে আসছেন।এত কিছুর পরেও আপনি বলতেছে আপনাকে মিথ্যা আরোপে ফাঁসানো হচ্ছে?
_আপনি কেন বুঝতে পারছেন না! আমি কোন জোরজবরদস্তি করিনি ওর সাথে। আর ডিভোর্স আমি দিচ্ছি ওকে। এর যথেষ্ট কারণও আছে। এখন ডিভোর্স পেপার পাওয়ার পরে সে গিয়ে যদি নারী নির্যাতনের মামলা করে সেখানে আমার কি দোষ? আর একজন মামলা করলে কোন প্রমাণ ছাড়াই আপনারা কাউকে এরেস্ট করতে পারেন না। এমন আইন কোথাও নেই।
_আমাকে আইন শিখানোর তুই কে হ্যা? ব্যাটা বউ পিটাবি, ডিভোর্স দিবি আবার বড় বড় কথা। এতক্ষণ ভালোভাবে কথা বলতেছিলাম, ভাল্লাগেনাই।আসলে তোদের সাথে ভালোভাবে কথা বলতেই নাই। এই বারিক হ্যান্ডকাফ পড়াও শালা রে। থানায় নিয়া দুই ঘা দিলেই সব জাউরামি বেরোয়া যাইবো এর। জদলি করো। আর বাকিগুলা কই ঘাপটি মারছে দেখো।সার্চ করো যাও।

এতক্ষণ শান্তিনগর থানার এস.আই আর পলাশের মধ্যে কথা হচ্ছিল। গত সপ্তাহে ডিভোর্স লেটার সাইন করে পাঠিয়েছিল পলাশ। আমজাদ আলী বা নিশাত কেউ বাসায় নেই। পলাশ সবে মাত্রই ফিরেছিল অফিস থেকে। যোশরের যে ব্রাঞ্চে চাকরি করতো সে সেখান থেকে ইমার্জেন্সি লিভ নিয়ে ঢাকায় এসেছিল সেদিন।এরপর এখানে এসে ঢাকার ব্রাঞ্চে ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করেছিল সে। ম্যানেজার হিসেবে প্রমোশন হওয়ার কথা ছিল তার এ বছর ।কিন্তু এবছর প্রমোশন ছেড়ে দিয়ে এখানে ট্রান্সফার নিয়েছে সে। এত বছরের পুরোনো কর্মী হওয়ায় আর পাস্ট রেকর্ডও ভালো থাকায় কোম্পানি তার আবেদন এক্সেপ্ট করেছে। গত সপ্তাহেই জয়েন করেছিল সে। তার পর পরই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিল সে শেফাকে। আর আজ শেফা থানায় নারী নির্যাতনের মামলা করেছে পলাশ আর তার পরিবারের নামে। পলাশ বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পুলিশ কিছুই মানতে নারাজ। সাথে আসা দুজন কন্সটেবল সারাবাসায় সার্চ করেও শাহনাজ বানু, প্রাপ্তি আর পলাশকে ছাড়া কাউকে পেল না। তাই তাদেরকেই নিয়ে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিল।

এতক্ষণ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হতভম্ব নয়নে সবটা দেখছিল পলক। আশেপাশে মানুষের নানান গুঞ্জন চলছে। কিন্তু কেউ আগ বাড়িয়ে এসে প্রতিবাদ করছেনা। যে পরিবারটা এত বছর তাদের এলাকায়, তাদের বিল্ডিং এ আছে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই, তাদের বিপদেই কেউ পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না।দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে কেবল। বারিক নামের কন্সটেবল পলাশকে হাত কড়া পড়াতেই,শাহনাজ বানু হাহাকার করে উঠলেন। সেটা অগ্রাহ্য করেই তার হাতেও হাতকরা পড়াতে গেলে পেছন থেকে বাঁধা দিল পলক।দ্রুত পায়ে এসে এস.আই লোকটার কাছে গিয়ে বললো,
_আপনি আইনের কথা বলছিলেন না? আপনার আইন যে কোন মহিলা কন্সটেবল ছাড়া কোন মহিলাকে এরেস্ট করার পারমিশন দেয় না সেটা জানেননা আপনি? তারপর চোখ রাঙ্গিয়ে কন্সটেবলের উদ্দেশ্যে বললো, আপনার মায়ের বয়সী উনি। ভদ্রতা জ্ঞান নেই বলে কিছু নেই আপনার? আর পুরুষ কন্সটেবল হয়ে কোন সাহসে হাত দিচ্ছেন আপনি উনার গায়ে?
_এইই, কে আপনি, হ্যা?পুলিশের কাজ পুলিশ জানে। এখানে আপনাকে কে কথা বলতে বলছে!
_এই বাড়ির মেয়ে আমি। তাই কথা বলার অধিকার আমার আছে।আর পুলিশ তার কাজ কতটা জানে সেটার নমুনা বেশ ভালোই দেখতে পাচ্ছি আমি। তাছাড়া, কে কি মামলা করলো সেটার সত্য মিথ্যা যাচাই না করে এরেস্ট করতে পারেন না আপনি।
_এই যে ম্যাডাম। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে যথেষ্ট শিক্ষিত আপনি। আর একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের প্রতি যে নির্যাতন আপনি, আপনার ভাই আর পরিবার করেছে তারপরে আর ভদ্র সভ্যতার জ্ঞান করা সাজে না আপনাদের সাথে। মহিলা কন্সটেবল নাই সাথে তাই আপনাদের দুজনকে এখন ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু আপনার ভাইকে সাথে নিয়ে যাবো। পারলে আপনাদের উলিক নিয়ে এসে ছাড়ায় নিয়ে যাইয়েন আপনার ভাইকে। এই বারিক নিয়ে চলো এরে। -বলেই টানতে টানতে পলাশকে।নিয়ে গেল তারা। প্রাপ্তি প্রচুর ভয় পেয়েছে।কাঁদছে প্রচুর। শাহনাজ বেগম বাঁধা দিয়েও আটকাতে পারেননি ছেলেকে।তিনিও কাঁদছেন। বড্ড দিশেহারা লাগছে পলকের।

পুলিশ পলাশকে নিয়ে যেতেই পাড়া প্রতিবেশীরাও যার যার বাড়ি ফিরে গেল।কেউ কেউ ঘরে ঢুকে দু চারটা কথা,পরামর্শরও শুনিয়ে গেল। একটু পরে নিশাত আর আমজাদ আলীও ফিরে এলো।সব শুনে হতভম্ব তারা।এই মূহুর্তে কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারলেন না আমজাদ আলী।ক’দিন আগেই হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল তার। ডাক্তার খুব সাবধানে থাকতে বলেছেন তাকে। আর এরই মাঝে এমন একটা অবস্থায় পড়ে বিপি বেড়ে গেল তার। অসুস্থ হয়ে গেলেন আবারও। শাহনাজ বানু সমানে কেঁদে চলেছেন। নিশাত বোঝাচ্ছে তাকে। প্রাপ্তিকে কোন মতে ঘুম পাড়িয়ে ভেতর ঘরে রেখে এসেছে পলক। কিন্তু,,,এত কিছুর মাঝেও পলাশকে কি করে ছাড়িয়ে আনবে সেটাও ভেবে পাচ্ছে না পলক। আমজাদ আলীকে প্রেশারের মেডিসিন দিয়েছে। কিন্তু,তিনি কিছুতেই শান্ত হতে পারছেন না।তার ভাইকে ফোন করেছিলেন কিন্তু,নারায়ণগঞ্জ থেকে এত রাতে তিনি কিভাবে আসবেন! তাই সকাল হতেই চলে আসবেন বলে আস্বস্ত করলেন আমজাদ আলীকে। শাহনাজ বানুর ভাইও শহরে নেই। ব্যাবসার কাজে খুলনা গেছেন।এই অবস্থায়, ছেলেকে কিভাবে ছাড়িয়ে আনবেন সে চিন্তা তাকে অস্থির করে তুলছে। এত রাতে উকিল কোথায় পাবে সেটাও ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। বিপদে মাথা কাজ করে না,,খুব সত্যি কথাটা।তাই তারাও কেউ কিছুই ভেবে পাচ্ছে না কি করবে।

রাত ৮:৩০ টা। হঠাৎ পলক নিশাতকে ডেকে বললো,,প্রাপ্তির কাছে থাকতে। ব্যাগ নিয়ে কোথাও একটা যেতে দেখে নিশাত জিজ্ঞেস করলো তাকে,
_এত রাতে কই যাইতেছিস তুই,বুবু?
_থানায় যাই।
_কিহ? এতরাতে তুই একা থানায় যাবি? মাথা খারাপ হইছে তোর?
_কিছু করার নাই নিশু। ভাইয়াকে তো আর জেলে থাকতে দিতে পারি না। আর তাছাড়া বাসায় বসে থেকে কিছু করাও যাবে না। ওখানে গিয়েই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। বাবাকে কিছু বলিস না এ ব্যাপারে। চিন্তা করবে আরও।আমি আসছি। -বলেই ব্যাগ নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল পলক।

নিশাত আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না। একদিকে ভাইকে পুলিশ নিয়ে গেছে,,বাবার বিপি হাই,,মা কেঁদে কেটে অস্থির আর অন্যদিকে এতরাতে বোন তার থানায় ছুটলো একা একা। এত কিছুর চিন্তায় অসহ্য লাগছে তার এখন। ক’দিন আগেই এক বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছে আর আজ আবার..! কিন্তু কি করবে সে এখন। আগের বার তো তিয়ান হেল্প করেছিল কিন্তু এবার? তিয়ানের কথা মনে পড়তেই তাকে ফোন করার কথা ভাবলো নিশাত।আবার, পরমূহুর্তেই তার মনে হলো,তিয়ানের নাম্বার তার কাছে নেই।কিন্তু,সিফাতের নাম্বার তো আছে।সিফাতের কথা মনে হতেই আর দেরি করলো না নিশাত। দ্রুত হাতে ডায়াল করলো সিফাতের নাম্বারে।

সিফাত কেবলই অফিস থেকে বাসায় ফিরছিল। গাড়িতে থাকা অবস্থাতেই নিশাতের ফোন পেল সে। নিশাতের থেকে সব শুনে তাকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো, নিশাত যেন টেনশন না করে,,সে যাচ্ছে থানায়।
নিশাতের সাথে কথা শেষ করেই পলককে ফোন করলো সিফাত। কিন্তু,পরপর কয়েকবার কল করার পরেও যখন পলক রিসিভ করলো না টেনশনে পড়ে গেল সে। মেয়েটা কোথায় আছে,,কি অবস্থায় আছে জানে না সে। তবুও,নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে তাদের ফ্যামিলি লইয়ারের নাম্বারে ডায়াল করলো সিফাত। যা ব্যবস্থা করার এখন তাকেই করতে হবে।

রাত ১০ টা। সিফাতের গাড়ি এসে থামলো শান্তিনগর থানার সামনে।থানায় পৌঁছেই গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে ভেতরে গেল সে। ভেতরে ঢুকতেই কোণার একটা বেঞ্চে বসে থাকতে দেখলো পলককে।দুহাতে মুখ চোখ ঢেকে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে আছে সে।তাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখেই বুকের ভেতরটায় ছ্যাৎ করে উঠলো সিফাতের। ধীর পায়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। শান্তকন্ঠে ডাকলো পলককে।
_মৃন্ময়ী? আচমকা সিফাতের কন্ঠ শুনে চমকে তাকালো সে। মুখ তুলে চাইতেই সিফাতকে দেখতে পেল সামনে। পলকের মুখ চোখ ফুলে আছে।কান্নায় দমকে হাল্কা কেঁপে কেঁপে উঠছে সে তখনো।পলককে এই অবস্থায় দেখে অস্থির হয়ে উঠলো সিফাত। পলক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখপানে। এই মূহুর্তে তাকে এখানে মোটেও আশা করেনি পলক। সিফাত সেটা বেশ বুঝতে পারলো। কিন্তু,পলককে কিছু বলার বা জিজ্ঞেস করার আগেই পেছন থেকে একজন কন্সটেবল পলককে বললো,
_আপনি এখনো এখানে বসে আছেন কেন ম্যাডাম? আপনাকে তো চলে যেতে বললাম। স্যার তো বলেছেন কালকে কোর্টে নেওয়ার আগে দেখা হবে না আপনার ভাইয়ের সাথে। তাই বসে না থেকে চলে যান। কাল কোর্টে উকিল নিয়ে আইসেন। তাছাড়া,থানায় কোন মহিলা কন্সটেবল কিন্তু নাই আজকে ডিউটিতে। একা মেয়েমানুষ হয়ে এভাবে রাতবিরাতে থানায় বসে থাকাটা খুব ভালো কিছু না। বাড়ি চলে যান।
_উকিল আসছে আমাদের। সে না আসা পর্যন্ত এখানেই থাকবো আমরা। কন্সটেবলের কথার বিপরীতে বললো সিফাত।
পাশ ফিরে সিফাতকে একনজর দেখলো কনস্টেবল। তারপর বললো,
_অ…আপনার সাথে তো লোক আছে দেখতেছি। তারপর, সিফাতকে উদ্দেশ্য করে বললো, কিন্তু স্যার আজকে আর কিছুই করা যাবে না। কেস কাল কোর্টে উঠবে। নারী নির্যাতনের মামলা এইটা। এত সহজে জামিন হয় না এই কেসে। আপনি ম্যাডামকে নিয়া চলে যান। কাল কোর্টে আইসেন উকিল নিয়া।
_সেটা আমরা দেখে নেব। আপনি আপনার ডিউটি করুন।গম্ভীর কন্ঠে বললো সিফাত। তা শুনে তাচ্ছিল্যের সুরে কন্সটেবল বললো,
_ভালো কথা আজকাল লোকে কানে তোলে না। যাক গে,,আপনাদের ব্যাপার আপনারই বোঝেন। আমার আর কি! বলেই ওখান থেকে চলে গেল লোকটা। কন্সটেবল লোকটা চলে যেতেই ফোঁস করে একটা শ্বাস ছেড়ে পলকের দিকে তাকালো সে।মাথা নিচু করে আগের মতই বসে আছে পলক। সেটা দেখে তার পাশে গিয়ে বসলো সিফাত। নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,
_কল করেছি অনেকবার,রিসিভ কেন করেননি?
_ফোন বাসায় রেখে এসেছি ভুলে।
_আর তারপরেও এখানে এভাবে বসে ছিলেন কেন?আপনার খোঁজ না পেয়ে যে সবার চিন্তা হবে সেটা একবার মাথায় আসেনি আপনার?
_ভাইয়ার সাথে দেখা করবো বলে বসে ছিলাম। কিন্তু,তারা দেখা করতে দিচ্ছে না। ভাইয়াকে ফেলে যেতেও ইচ্ছে করছে না। এতবছর পরে নিজের পরিবারে ফিরেও আজ তাকে….আর কিছু বলতে পারলো না পলক। কান্নার দমকে কথা আটকে গেছে তার। পলকের এ অবস্থা সহ্য হচ্ছে না সিফাতের। কি করবে সেটাও বুঝতে পারছে না। উকিল না আসা পর্যন্ত কিছু করাও সম্ভব না।তাই কেবল আরেকটু কাছে গিয়ে পলকের কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে নিল তাকে। পলককের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আস্বস্ত করতে বললো, লয়ারের সাথে কথা হয়ে আমার। আসেছে সে। সে এলেই ভাইয়ার সাথে কথা বলার একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। Don’t worry.ঠিক হয়ে যাবে সব।
সিফাতের কথাও পলককে শান্ত করতে পারলো না। এক হাতে সিফাতের ব্লেজারের একটা পাশ শক্ত করে আকড়ে ধরে তার বুকে মুখ গুঁজেই ঝরঝর করে কেঁদে দিল সে।সিফাতও আর বাঁধা দিল না তাকে। মৃন্ময়ীর কষ্ট হচ্ছে,ভীষণ রকম কষ্ট হচ্ছে, এটুকু ঠিক অনুভব করতে পারছে সে। তাই আর কিছুই বললো না তাকে। কেবল তার এক হাতে পলকের অন্য হাতের আঙুলে আঙুল গুঁজে নিজের মুঠোয় পুরে নিল সেটা।সিফাতের আর পলকের আংটি পড়া আঙুল দুটো একসাথে হয়ে মিশে রইলো পাশাপাশি। আংটিটা দেখে পলাশের মুখটা মনে পড়ে গেল সিফাতেরও। সেদিন যখন সিফাতের সাথে পরিচয় হয়েছিল পলাশের,হোয়াট গোল্ডের মাঝে ছোট ছোট কয়েকটা হীরা বসানো একটা আংটি দিয়েছিল সে সিফাতকে।ছেলেদের সোনা পড়া নিষেধ।তাই পলকের বিয়ে ঠিক হবার পরপরই মায়ের থেকে সিফাতের হাতের মাপ জেনে এটা সে কিনেছিল সিফাতের জন্য।কিন্তু,বিয়েটা পিছিয়ে যাওয়ায় আর পাঠানো হয়নি তখন এটা।এরপর যখন ঢাকায় চলে এলো সে,,,এটাও সাথে করে নিয়ে এসেছিল। এঙ্গেজমেন্ট রিং বলা চলে একপ্রকার। পলকের হাতেও হীরের একটা আংটি।দুটোকে পাশাপাশি খুব মানিয়েছে বলেই সবাই বলেছিল সেদিন। সেটা দেখে বিষন্ন মনে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো সিফাত। তারপর অন্য হাতে পলকের মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে রাখলো নিজের বুকে।
___________________________________

উকিল এসেও তেমন কোন কাজ হলো না। নারী নির্যাতনের মামলায় সহজে জামিন পাওয়া যায় না। কেস কোর্টে উঠবেই। তাই পলাশকে জামিনে ছাড়ানো গেল না সেরাতে। তবে,পলাশের উকিল হিসেবে তার সাথে কথা বলার একটা সুযোগ পেল মি.জুনাইদ। পলাশের সাথে কথা বলতে গেলে,পলাশ সব খুলে বললো তাকে। শেফার সাথে তার সম্পর্ক, পারিবারিক ঝামেলা, প্রাপ্তির জন্মদান নিয়ে শেফার হুমকি আর যশোর ছেড়ে আসার ঘটনা।আর তারপর ডিভোর্স পেপার সাইন করে পাঠানোর কথাটাও বললো। এতসব কিছু শুনে এসে মি.জুনাইদ সিফাত আর পলককে বললেন, পলাশের ডিভোর্সের কেস যিনি হ্যান্ডেল করছেন এই কেসটাও তাকেই হ্যান্ডওভার করতে। কারণ, সে জানে পলাশের ব্যাপারে সবটা।তিনি ফোনে কথা বলেছেন পলাশের লয়ারের সাথে। তাই কাল কোর্টেও তিনিই যাবেন এই কেস নিয়ে। তারপর,সিফাতের সাথে কথা শেষ করে তাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে তিনিও চলে গেলেন ওখান থেকে।

সে রাতটা পলক থানাতেই রইলো। অগ্যতা সিফাতকেও থাকতে হলো ওখানেই। দুই বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়েছে সিফাত। কাল পলাশকে নিয়ে কোর্টে যাবে একেবারে। কনকনে শীতের রাত। ঢাকায় খুব একটা শীত না থাকলেও দরজা খোলা থাকায় বেশ ঠান্ডা বাতাস আসছিল ভেতরে।পলকের গায়ে একটা চাদর কেবল। সারাদিনের ধকলে বেশ ক্লান্ত পলক। ক্লান্ত সিফাতও। গতকাল ইটালি থেকে ফিরেছে সে। আজ অফিসে কেটেছে সারাটাদিন।মিটিং শেষ করে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরছিল। কিন্তু,মাঝ পথেই নিশাতের ফোন পেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে থানায় এসেছে। আর বিগত ৪ ঘন্টা যাবৎ থানার বাইরে গাড়িতে বসে আছে পলককে নিয়ে। রাতে কিছুই খাওয়া হয়নি কারও। রশিদকে গাড়ি নিয়ে ফিরে যেতে বলেছিল কিন্তু,সে সিফাতকে রেখে যাবে না। তাই সেও বসে আছে গাড়ির দরজা খুলে। আবার একটু পর পর গাড়ি থেকে নেমে পায়চারি করছে থানার সামনে।

রাত ২:১০ মিনিট।

একটু আগে রশিদ দু কাপ চা নিয়ে এসেছে। থানার কাছে একটা টং দোকান খোলা ছিল।সেখান থেকেই ম্যানেজ করেছে। এক কাপ চা পলকের দিকে বাড়িয়ে দিল সিফাত।ক্লান্তিতে আর দীর্ঘসময় কান্নার ফলে মাথা ধরেছে পলকের। তাই চা’টুকু পেয়ে বেশ উপকারই হলো তার। কিন্তু,মনের অশান্তিতে তার এখন কিছুই মুখে দিতে ইচ্ছে করছে না। তাই চায়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল সে। পাশ ফিরে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো।সিফাতও তাই রেখে দিল নিজের কাপটা।একটু পরে হঠাৎ করে মাথায় আলতো স্পর্শে বিলি কাটার অনুভূতি হতেই কেঁপে উঠলো পলক।ঝট করে চোখ খুলে পাশ ফিরে চাইতেই দেখলো সিফাত তার মাথায় বিলি কাটছে। অবাক নয়নে তার দিকে চেয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল পলক তার আগেই খুব আদুরে স্বরে সিফাত বললো,
_এত তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হলে চলবে কি করে মৃন্ময়ী!কাল আরও বড় একটা তুফানের সম্মুখিন হতে হবে আমাদের। তার জন্য তো নিজেকে শক্তপোক্তভাবে ধরে রাখতে হবে।নইলে লড়াই করবো কি করে? আর আমি জানি, আমার মৃন্ময়ী এটুকু ঠিক বুঝবে,তাই না?

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে সিফাতের কথাগুলো শুনলো পলক।সিফাতের শেষ কথায় রোবটের মত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো কেবল। কিছুটা দূরে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রশিদ। সিফাত ইশারা করতেই কাপ দুটো নিয়ে সিফাতকে দিল সে। মৃদু হেসে এককাপ চা পলকের হাতে দিয়ে বললো, এটা খান। ক্লান্তি কমে যাবে। ভালো লাগবে আপনার।
পলক এবারে ঠিকই নিল কাপটা। সিফাত চোখের ইশারায় সেটায় চুমুক দিতে বলায় রোবটের মত তাতে একটা চুমুক দিল পলক। তারপর, সিফাতের দিকে তাকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,
_এত ভালো কেন আপনি?
সিফাত আলতো হাসলো পলকের এহেন কথায়। তারপর, নরম স্বরে বললো,আমি এতটাও ভালো নই মৃন্ময়ী।
_কিন্তু,,তাও আপনি অনেক ভালো।
তার প্রতি পলকের এমন ধারণা দেখে আবারো হাসলো সিফাত। তারপর বললো,
_ তাহলে বলবো,সেটা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে আমাকে মৃন্ময়ীর জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে বলেই।ভালো তো ভালোটাই ডিজার্ভ করে,তাই না? এটা শুনে চট করেই আপত্তি জানিয়ে পলক বললো,
_উঁহু,আপনাকে নয়।আমাকে আপনার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে হয়তো।স্বামীর বাঁ পাঁজরের হাঁড় থেকেই স্ত্রীকে সৃষ্টি করা হয়। বলেই বাইরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে চায়ে চুমুক দিল পলক।
তার এই কথায় ভ্রু কুচকে গেল সিফাতের। “হয় তো” কথাটা পছন্দ হয়নি তার।তাই চকিতেই পলককে প্রশ্ন করলো,
_হয় তো কেন? বিয়ে তো আপনার আমার সাথেই হচ্ছে।সুতরাং আপনিও নিশ্চিতভাবে আমারই। এখানে” হয় তো ” কিসের?

সিফাতের এহেন প্রশ্নে তার দিকে ফিরে চাইলো পলক। তারপর সিফাতের বিভ্রান্ত চোখের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে খাদে নামানো গলায় বললো,
_বিয়েটা হবার কথা।হয়নি এখনো।ভাগ্যটা বড্ড বেসামাল বিষয়। শেষ মূহুর্তে গিয়েও বদলে যেতে পারে।তাই,দুজনের তরফ থেকেই কবুল না বলা পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিত নয়। কে বলতে পারে,,শেষ পর্যন্ত কে কার হয়..কার থেকে কার সৃষ্টি আর কার জন্যই বা কার জন্ম!

সিফাত চমকালো পলকের ওই দৃষ্টির দিকে চেয়ে।পলকের চোখে রহস্য খেলা করছে।আর সিফাতের দৃষ্টিতে বিভ্রান্তি,রহস্য ভেদ করতে না পারার বিচলতা। সেই দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো পলক।সে হাসিতেও যেন রাজ্যের রহস্য নিহিত। চোখ সরিয়ে নিল পলক সিফাতের থেকে।পলকের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেই ঘোর কাটলো সিফাতের।তারপর, অস্থির গলায় বাচ্চাদের মত করে বললো,
_এইই…কিসের কবুল কিসের কি! এই নিন আমি এখনই কবুল বলছি, কবুল..কবুল..কবুল।এবার আপনিও বলে ফেলুন ঝটপট।তাহলেই হবে। নিশ্চিত ভাবেই আপনি আমার হয়ে যাবেন। নিন…বলুন তাড়াতাড়ি!

গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে ছিল পলক।আর সেই মূহুর্তে সিফাতের এমন বাচ্চামো দেখে এই ঘোর ক্লান্তি, কষ্টের মাঝেই হেসে ফেললো পলক। তাকে হাসতে দেখে সিফাত আরও অস্থির হয়ে উঠলো। ব্যাকুল সুরে বললো,
_কি হলো বলুন,কবুল!
সিফাতের এমন বাচ্চামো দেখে এবার মুচকি হেসে মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে চাইলো পলক।তারপর, চায়ের কাপের শেষ চুমুকটুকু দিয়ে বললো,
_চা-টা খুব একটা খারাপ ছিল না। ধন্যবাদ!

চলবে….

#ভালোবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
পর্ব_২৮
©জারিন তামান্না

সকাল ৭’০০ মিনিট।

মৃন্ময়ী…মৃন্ময়ী…উঠুন এবার। সকাল হয়ে গেছে তো। কোর্টে যেতে হবে তো আমাদের।
শেষরাতের দিকে ঘুম নেমে এসেছিল পলকের চোখে। কুয়াশাও ছিল বেশ। গাড়ির ভেতর জুবুথুবু হয়ে এক কোণায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে ছিল পলক। হঠাৎ, এমন আদুরে ডাকে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো সে। পুরোপুরি চোখ মেলতেই দেখলো সিফাত তার মাথায় হাত রেখে তার দিকে ঝুঁকে আছে খানিকটা। সম্ভবত তার মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকছিল তাকে। ঘুম ঘোরে সিফাতকে ওভাবে দেখতেই চমকে উঠলো পলক।হন্তদন্ত হয়ে সোজা হয়ে বসতে গেলেই সিফাত বললো,
_আস্তে মৃন্ময়ী। সময় আছে এখনো অনেকটাই। এমন হরবড়িয়ে উঠতে নেই ঘুম থেকে।
সিফাতের কথায় এবার পুরোপুরি হুঁশ হলো পলকের। মনে পড়ে গেল কাল রাতের ঘটনাটা। কাল রাত থেকে এই মানুষটাই আছে তার সাথে। সারা রাত জেগে ছিল তার জন্য। কতভাবে সামলেছে তাকে।আর এখনও তারা থানার বাইরে অবস্থান করছে। সব কিছু মনে পড়তেই পলক জিজ্ঞেস করলো,
_আপনি ঘুমোননি একটুও?
_ভোরের দিকে চোখ লেগে এসেছিল কিছুটা। তারপর আযান শুনে ঘুম ভেঙে গেছিল। পাশের মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে এলাম কিছুক্ষণ আগে। আপনি ঘুমাচ্ছিলেন বলে আর ডাকিনি। গাড়ি লক করে রেখে গেছিলাম। রশিদও ছিল বাইরে।ভাইয়াকে ১০ টায় কোর্টে নেওয়া হবে। আমরা তার আগেই যাবো। লয়ারের সাথে কথা বলতে হবে। আপনি বাসায় চলুন এখন। পরে না হয় ওখান থেকেই…
_না..আমি ভাইয়ার সাথেই যাবো। আপনি বরং চলে যান বাসায়। এখন তো আর রাত নেই,,সমস্যা হবে না। সারারাত অনেক কষ্ট হয়েছে আপনার। আপনি বরং গিয়ে রেস্ট নিন। হড়বড়িয়ে বললো পলক।
_ভিতরে চেপে বসুন তো একটু।
_হ্যাঁ?!
_আচ্ছা থাক।এখানেই থাকুন আপনি। বলেই গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিল সিফাত। তারপর, ঘুরে এসে অন্যপাশের দরজা খুলে উঠে বসলো গাড়িতে। রশিদকে বললো, মৃন্ময়ীর বাড়ি চলো।
পলক হতবাক সিফাতের এমন কান্ডে। চেঁচিয়ে উঠে বললো,
_এটা কি হলো? আমরা বাসায় কেন যাচ্ছি। আমি বললাম তো আপনি চলে যান।আমি ভাইয়ার সাথে কোর্টে যাবো। তাহলে বাসায় কেন নিচ্ছেন আমাকে?
_কোর্টে আমিও যাবো মৃন্ময়ী। বাসায় চলো আগে। ফ্রেশ হয়ে বাকিদের নিয়ে একসাথে যাবো আমরা। চুপচাপ বসে থাকো এখন।কঠিন গলায় বললো সিফাত।
সিফাতের এহেন গলার স্বরে দমে গেল পলক।সিফাতের ফর্ম চেঞ্জ হয়ে গেছে। এখান কিছু বলেও কোন লাভ হবে না। তাই রাগে,হতাশায় অন্য পাশে মুখ ফিরিয়ে চুপচাপ বসে রইলো পলক।

____________________________________

পলকদের বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে হালকা পাতলা নাস্তা করে নিয়েছে সিফাত।রশিদকে ডেকে তাকেও একই টেবিলে বসিয়ে খেয়েছে সিফাত।আমজাদ আলীর শরীর বিশেষ ভালো না। তাই ভিতর ঘরে শুয়ে আছেন তিনি।নিশাত প্রাপ্তির কাছে। পলক বাসায় এসেই গোসল সেরে ঝটপট তৈরী হয়ে নিয়েছে কোর্টে যাওয়ার জন্য।সিফাত ডাইনিং টেবিলেই বসা ছিল। চা খাচ্ছিল। তখনই হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে দ্রুত পায়ে পলক উপস্থিত হলো সেখানে।অস্থির গলায় সিফাতকে বললো, আপনার হলো? কখন যাবো আমরা?
_হ্যাঁ,,আমার তো হয়ে গেছে। তবে যাবো তখনই যখন মৃন্ময়ীর নাস্তা কমপ্লিট হবে। এই বলেই টেবিলের উপর রাখা নাস্তার প্লেটের দিকে ইশারা করলো সিফাত। পলক সেটা দেখে বিরক্তির সুরে বললো,
_উহ…হুউউ..এখন এসবের সময় নেই। আর তাছাড়া আমার খেতেও ইচ্ছে করছে না। আপনি চলুন তাড়াতাড়ি।
_আপনি ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট না করলে আমি কোথাও যাচ্ছি না,,আর আপনাকেও কোথাও যেতে দিচ্ছি না। So,do fast.
এবারে পলকের মেজাজ খিঁচে গেল,কান্নাজমা গলায় খানিক চেঁচিয়ে বললো,
_আপনি কেন বুঝতে পারছেন না। আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না এখন। ওদিকে আমার ভাইয়া কাল থেকে না খেয়ে আছে,,কি অবস্থায় আছে…কিচ্ছু জানি না আমি। আর আপনি সেই কখন থেকে জেদ করছেন… বলতে বলতেই কেঁদে দিল পলক। তা দেখে সিফাত কিছু বললো না। কেবল পলকের হাতটা ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিল। খাবারের প্লেটটা তার সামনে এগিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,
_ভাইয়া ঠিক আছেন মৃন্ময়ী। আর তার খাওয়াও হয়েছে। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবটা করেছি। তাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না আপনার। আপনি ঝটপট নাস্তা করে নিন। কোর্টে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বলেই, নাস্তার প্লেটের দিকে ইশারা করলো পলককে খাওয়ার জন্য।
পলক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে সিফাতের দিকে। সেই অবস্থাতেই প্রশ্ন করলো তাকে,
_আপনি দেখা করেছেন ভাইয়ার সাথে?
_হ্যাঁ।
_কখখখন?
_আজ সকালে। আপনি ঘুমে ছিলেন তখন।
_আমাকে কেন ডাকেননি আপনি? অস্থির গলায় বললো পলক। তারপর কি একটা ভেবে উত্তেজিত গলায় বললো, এই,আপনি কিভাবে দেখা করলেন? ওরা তো দেখা করার পারমিশন দেয় না এভাবে!
পলকের কথায় সিফাত আলতো হাসলো। তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
_টাকা থাকলে বাঘের দুধও পাওয়া যায় এদেশে।সামান্য কন্সটেবলকে ম্যানেজ করাটা আর এমন কি ব্যাপার! আপনি নাস্তা শেষ করে আসুন। আমি বাবার ঘরে যাচ্ছি কথা বলতে। আর হ্যাঁ,,নাস্তা পুরোটা কমপ্লিট হওয়া চাই।
Now, do fast. বলেই নিজের ব্লেজার ঠিক করতে করতে পা বাড়ালো সে আমজাদ আলীর ঘরের দিকে। আর পলক হতভম্ব হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার দিকে। মনে মনে বললো, মানুষটা আদতে কি, হ্যাঁ?!

___________________________________

সকাল ১১’০০ টা। কোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে পলক, সিফাত আর পলকের চাচা আরিফ হুসেইন।আজ সকালে ঢাকায় এসেছেন তিনি। আর কোর্টের সময় হয়ে যাওয়ার সরাসরি এখানেই এসেছেন। আমজাদ আলীর শরীর ভালো না হওয়ায় সিফাত বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসায়ই রেখে এসেছে তাকে। শাহনাজ বানু,নিশাতকেও রেখে এসেছে প্রাপ্তির জন্য। উকিলের সাথে কথা বলছিল সিফাত। পলাশের ডিভোর্সের কেসটা যিনি লড়ছেন তার নাম মি.শফিক। মি.জুনাইদও এসেছেন সাথে।পলাশকে পুশিলের কাস্টাডিতে রাখা হয়েছে একটা ঘরে। সবাই যখন কেস নিয়ে আলোচনা করছিল তখনই দূর থেকে শেফাকে আসতে দেখলো পলক। সাথের মহিলাটিকেও চিনে সে। শেফার মা তিনি। প্রচন্ড রাগ হলো পলকের তাদেরকে দেখে। সিফাত খেয়াল করেছে সেটা। আস্তে করে পলকের হাত চেপে ধরে, ফিসফিসিয়ে বললো, Don’t get so highper, Mrinmoyi. Wait for the end first .Now…let’s go.ভাইয়াকে নিয়ে গেছে ওরা।
সিফাতের কথায় বেশ অবাক হলো পলক। এত কনফিডেন্স কিসের এই মানুষটার? উত্তর জানা নেই তার।
__________________________________

পলাশকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে সেটাও নির্দোষ প্রামাণ করে। পলক জাস্ট ভেবে পাচ্ছে না যে এক রাতের মধ্যে এত কিছু কিভাবে ম্যানেজ করলো সিফাত। কেসটা সে এভাবে উল্টে দিবে ভাবতেই পারেনি কেউ। কোর্ট থেকে বেরোনোর সময় মি. শফিকে যখন ধন্যবাদ দিয়েছিল পলক, তখন তিনি বারবার বলছিলেন,আজকে সিফাত হেল্প না করলে একদিনেই এভাবে কেস ক্লোজ করা সম্ভব হতো না। তার জন্যই এত দ্রুত সব প্রমাণ হাতে পাওয়া গেছে।

আজকে কোর্টে কেস উঠার পর শেফার অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণ করা হয়েছে। সেই সাথে শেফার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও মানহানির মামলা করা হয়েছে। শেফা নিজের অভিযোগে বলেছিল,

পলাশ তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। জোর পূর্বক তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতো।গর্ভধারণের জন্য চাপ দিতো।কিন্তু,তার পুনরায় গর্ভধারণে সমস্যা থাকায় এবং গর্ভধারণ করতে না পারায় তাকে নিয়ে অসন্তুষ্ট পলাশ।বংশ রক্ষায় ছেলে সন্তান চায় পলাশ ও তার পরিবার। নিজের পরিবারের কথায় পলাশকে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য বলায় শেফা সেটায় অমত করে। আর সেই কারণেই, তাকে জোর করা হচ্ছে পলাশকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য। সে ডিভোর্স দিবে না বলায় তাকে খুব মেরেছিল পলাশ।আর যোশরের বাড়িতে রেখে মেয়ে আর সব টাকা,শেফার গয়না নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছে।তারপর, নিজেই ডিভোর্স পেপার সাইন করে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে আর ফোন করে শেফাকে তাতে সাইন করার জন্য চাপ দিচ্ছে। সাইন না করলে মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকিও নাকি দিয়েছে পলাশ।
কোর্টে একেক পর এক এমনসব অভিযোগ শুনে যখন সবাই রীতিমত হতভম্ব, তখনই মি. শফিক তামাম সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে শেফার অভিযোগগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন।

পলাশের প্রতি মিথ্যা অভিযোগের প্রমাণ স্বরূপ তিনি পারিবারিকভাবেই শেফা আর পলাশের বিয়ে, শেফার ভাই সোহেলের সাথে পলকের বিয়ের ঘটনা, সোহেলের এরেস্ট হওয়ার ঘটনা, আর প্রাপ্তিকে জন্মের আগেই এবর্শন করে ফেলার হুমকি দিয়ে পলাশকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনা খুলে বললেন। সন্তান জন্ম দেওয়ার অক্ষমতার কারণে ডিভোর্সের অভিযোগের সাপেক্ষে তিনি শেফার নতুন পর্দা ফাঁস করলেন সবার সামনে। শেফার সত্যিই পুনঃরায় গর্ভ ধারণে সমস্যা রয়েছে। কারণ, প্রাপ্তির জন্মের আগে ৪ বার এবর্শন ও নিয়মিত জন্মনিরোধ পিল সেবন করার ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় জড়িয়ে গেছে শেফা। প্রাপ্তিকেও জন্ম দেওয়ার কোন ইচ্ছা শেফার ছিল না। কিন্তু ডাক্তার বলেছিল এবারে এবর্শন করলে শেফার লাইফ রিক্স হতে পারে তাই প্রাপ্তিকে গর্ভে রাখতে বাধ্য হয়েছিল। প্রাপ্তিকে জন্ম দিতে গিয়েও বিভিন্ন জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছিল শেফাকে।তাই প্রাপ্তির জন্মের পর ডাক্তার পুনঃরায় গর্ভধারণের জন্য নিষেধ করেছে শেফাকে। শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্ব করতে বলেছে। এতবার এবর্শন আর বাকি সব শারীরিক জটিলতার কথাও পলাশ জেনেছিল প্রাপ্তির জন্মের সময়।কিন্তু,নতুন কোন অশান্তি চায়নি বলে চেপে গিয়েছিল ব্যাপারটা। তাই, শেফার সাথে বিগত ৩ বছরে কোন ধরণের শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়নি পলাশ। আসলে,,পরিবার থেকে তাকে ওভাবে আলাদা করার কারণে,আর প্রাপ্তির প্রতিও শেফার অযত্ন অবহেলা দেখে তার প্রতি মন উঠে গেছিল পলাশের। শুধুমাত্র প্রাপ্তির জন্যই একসাথে ছিল।

তবে, পলাশ যে সব জানে এটা শেফা জানতো না। এসবের সাক্ষী ও প্রমাণ হিসেবে শেফা ঢাকায় যে ডাক্তারকে দিয়ে এবর্শন করাতো তাকে আর প্রাপ্তির জন্মের সময় যার তত্ত্বাবধায়নে ছিল তাদেরকে হাজির করা হয়। সাথে সমস্ত মেডিকাল ডকুমেন্টস।আর মারধোরের অভিযোগও যে মিথ্যা সেটা প্রমাণ করতে প্রয়োজনে শেফার মেডিকাল চেকআপের জন্য আর্জি পেশ করা হয় কোর্টে। আর, যশোর থেকে আসার আগে শেফা তাকে নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয় সেটাও বলা হয় কোর্টে।

শেফা ভাবতে পারেনি ব্যাপারটা এত সহজে হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। সে শুনেছিল নারী নির্যাতনের মামলা করলে আসামীর কমপক্ষে সাত বছরের জেল হয় আর ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকাও পাওয়া যায়। তাই এত কিছু না ভেবেই কেস করে দিয়েছিল। ফলাফল কেস হেরে গেছে সে। মিথ্যা মামলার অভিযোগে এবং মানহানির মামলায় তাকে দুবছর করে চারবছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।ডিভোর্সের আবেদনটাও মঞ্জুর করা হয় একই সাথে। শেফার জেল হওয়ায় প্রাপ্তির কাস্টাডিও পলাশ পায়। সব মিলিয়ে কেসটা সম্পূর্ণ পলাশের পক্ষে চলে আসে। আর এক রাতের মধ্যে এত সব প্রমাণ সিফাত জোগাড় করিয়েছে তার এক বন্ধুকে দিয়ে যে কিনা পুলিশের বড় কর্মকর্তা। রাতেই তার সাথে যোগাযোগ করে কথা বলে সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছিল সে। কিন্তু পলক এসবের কিছুই জানতো না। কিন্তু,এত সব কিছুর মাঝে সে এটা ঠিক বুঝতে পারলো সিফাত নামের মানুষটি তার জীবনে আশীর্বাদ সরূপ।তাকে কষ্ট দেওয়া বা ঠকানোর দুঃসাহস করারও তার জন্য কল্পনাতীত হবে।

___________________________________

এত এত ঝড়ের পরে পলকের আজকাল বেশ সুখসময় চলছে। বিয়ের মাত্র দেড় মাস বাকি। সেটার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত সবাই। বিথি তিয়ানের সাথেও নিয়মিত কথা হচ্ছে।দেখা হচ্ছে। পুরোনো স্মৃতিদেরও উল্টেপাল্টে দেখা হচ্ছে আবার। দূরত্ব, জড়তাও কাটছে একটু একটু করে। শপিংএও যাচ্ছে তারা একসাথে।তবে সিফাতের সাথে খুব একটা যোগাযোগ হয় না পলকের। সিফাতের সাথে দেখা হওয়ার একমাত্র উপায় ভিডিওকল। নইলে ফোনের দুই চারটা কথাতেই ক্ষান্ত হতে হয় তাদের। অফিস,,ফ্লাইট সব মিলিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় চলছে সিফাতেরও। বিয়ের সময়টা বেশ কিছুদিন ছুটিতে থাকবে তাই আগেই যতটা সম্ভব কাজ গুছিয়ে রাখছে।

এরই মাঝে একদিন রাতে বিথি গ্রুপ কলে কানেক্টেড করলো পলক আর তিয়ানকে। এই কথা সেই কথার পরে তাদের কথার প্রসঙ্গে এলো পহেলা ফাল্গুন নিয়ে।আর ১ দিন বাদেই পহেলা ফাল্গুন। অথচ এবার বিথি তার বরের থেকে দূরে। তাই মন খারাপ করে বললো,
_বুঝছোস দোস্ত,,,এই বিদেশ ভূইয়ে গিয়া দেশীয় সব উৎসব চঙ্গে উঠছে আমার। ওই সব কমিউনিটির রংঢং এর ফাংশন একটুও ভাল্লাগে না আমার। জামাইটা যাও ভ্যালেন্টাইনটা পালন করে,,এবার এইটাও হইবো না।
_তো এতে মন খারাপ করার কি আছে। এইবার তো দেশে আছিস। তুই আর পলক যা,শাড়ি টাড়ি পড়ে ঢাকা শহর ঘুরবি সারাদিন। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বললো তিয়ান।
_আরেএ ধুর,,পলকের তো এইবার উনি জুটছেন একজন
আমার সাথে আর কি যাবে! দুই দিন তার উনার সাথে কাটাবে দেখিস। বলেই রসিকতা করে হাসলো বিথি।
_উহু,,এমন কিছু না।।উনি এসব নিয়ে বলেননি কিছু। ব্যস্ত উনি। ১৪ তারিখ ফ্লাইট আছে উনার লন্ডনের।
_ যাহ…বাবা! এইসব কি!বিয়ের আগে এইটাই তোদের ফার্স্ট আর লাস্ট ভ্যালেন্টাইন। এইটা সেলিব্রেট না কইরা উনি অন্য দেশে ক্যাম্নে উড়াল দিতে পারে ইইইয়ার!!!
বিথির এমন অহেতুক হু-হতাশ করা দেখে হেসে ফেললো পলক আর তিয়ান। তাদের হাসি দেখে মেজাজ খারাপ হওয়া স্বরে বিথি বললো,
_এই ফালিজের দল। হাসোস ক্যান এম্নে! আমি ভুল কি কইলাম!
_তুই ভুল কিছুই বলিশ নাই বিথু। বাট এটা তো পলক আর সিফাত ভাইয়ার ব্যাপার। তুই আমি আফসোস করলেই কি! যেখানে পলকেরই কোন আফসোস নাই। -তিয়ান বললো।
_হ,এইডাও কথা!
_তবে বললামই তো তোরা দুজন যা! ঘুরে আয়। আবার কবে না কবে আসবি বাংলাদেশে। আর পলকেরও এটা লাস্ট সিঙ্গেল ফাল্গুন। তারপরে তো উনিও বর নিয়ে ঘুরবে।বলেই ফিচলে হাসলো তিয়ান।তা দেখে বিথিও হাসলো একইভাবে। পলক ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল এতে। জীবন তার কদিন পরেই নতুন রঙ পেতে চলেছে।ভাবতেই অন্যরকম সুখ লাগছে তার।
_আচ্ছা,,,তাইলে এক কাজ করি। আমরা তিনজনই যাই চল ঘুরতে। এই তিয়ান তুই পাঞ্জাবী পড়বি আর আমরা শাড়ি ওকে?
_এইই তোদের মাঝে আমারে ক্যান টানতেছিস। দুইজন এঙ্গেজড মহিলা নিয়া আমি একা সিঙ্গেল ছেলে ঘুরতে যাবো নাকি! লোকে কি বলবে! বিস্মিত স্বরে বললো তিয়ান।
_বেশি পকপক করিস না তো। কাল আমরা শপিং এ যাবো, এটাই ফাইনাল। আর শপিংও তুই করে দিবি আমাদের।বিথি বললো।
_আচ্ছা যা,,দিবোনে। কাল তাহলে বিকেলে শপিং মলে চলে আসিস তোরা। আমি অফিস শেষ করে আসবো।
_আচ্ছা,,খুশি হয়ে বললো বিথি। কিন্তু,পলকের মন সায় দিলো না এসবে। এভাবে শাড়ি পড়ে ঘুরতে যাওয়ার অভ্যাস নেই তার। কিন্তু বিথি মন খারাপ করবে ভেবে নাও করতে পারলো। তাই রাজি হয়ে গেল বিথির আবদারে।

__________________________________

পলকের বাড়ির সামনে ওয়েট করছে তিয়ান।বিথি পলকের বাসায় গেছে তাকে নীচে নিয়ে আসতে।
আজ পহেলা ফাল্গুন। সকাল সকাল ফোন করে বিথি ঘুম থেকে তুলে দিয়েছে তিয়ান আর পলককে। বলেছে সকাল বেলা না গেলে নাকি ফাল্গুনের কোন মজাই থাকে না। অগ্যতা তাদের ঘুম ছেড়ে তৈরী হতে হয়েছে বিথির সাথে যাওয়ার জন্য। গতকাল শপিং এ গিয়ে বিথি আর পলককে একই রকমের দুটো শাড়ি কিনে দিয়েছে তিয়ান। আর তাদের পছন্দে নিজের জন্য একই রঙ এর পাঞ্জাবীও কিনতে হয়েছে তাকে। পলক তিয়ানের দেওয়া শাড়িটা নিতে না চাইলেও তিয়ান যখন বললো,”বন্ধু হিসেবেই তো দিচ্ছি,,মানা কেন করছো? “আর বিথিও জোর করলো তখন আর পলক না করতে পারেনি। নিয়েছে শাড়িটা। আর সেই শাড়ি পড়েই কুচি ঠিক করতে করতেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিল পলক। গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল তিয়ান।গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আচমকা পলককে দেখে থমকে গেল সে। ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। পলককে সে ভালোবেসে প্রায় সময় “শ্যামকন্যা” বলে ডাকতো। আর আজ পলককে দেখে তার মনে হলো সরিষা হলুদ আর সবুজ মিশেল এই শাড়িতে যেন ‘শ্যামলতার’ প্রতিরূপ এসে হাজির হয়েছে তার সামনে। মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে পলককে।

তার মনে আছে আজও,,,তাদের সম্পর্কের শুরুতে প্রথম ফাল্গুনে তিয়ান আবদার করেছিল পলককে শাড়িতে দেখবে বলে। কিন্তু পলক লজ্জায় শাড়ি পড়েনি সেবার। তিয়ানের তাকে শাড়িতে দেখার ইচ্ছেটাও অপূর্ণ রয়ে গেছিল। আজ সেই ইচ্ছেটাই যেন পূরণ হলো তার। তারই দেওয়া শাড়িতে সেজেছে তার শ্যামকন্যা। কি অপূর্ব লাগছে তাকে! চোখে মোটা করে কাজল টানা।চুলগুলো হাতখোপা করে একসাইডে করে রেখেছে। দুই একটা ফুলও গুঁজে রেখেছে তাতে। সামনের বেসামাল কিছু চুল বড্ড জ্বালাতন করছে তাকে। সেটা দেখে আলতো হাসলো তিয়ান। পলক কাছাকাছি এসে দাঁড়াতেই তিয়ান নিজের অজান্তেই পলকের গালে হাত রাখলো। আলতো করে ছুঁয়ে সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিল। তার চোখ মুখে অদ্ভুত ঘোর। যা দেখে ভড়কে গেল পলক। আর আচমকা তিয়ানের এমন কাজে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেল সে। তিয়ান এমন কিছু করবে মোটেও আশা করেনি সে। ঘোর লাগা চোখে আরও এককদম এগিয়ে এলো তিয়ান পলকের দিকে। পলকের অস্বস্তি লাগছে খুব এবারে। ধীর কন্ঠে তিয়ানকে ডাকলো একবার। বললো,
_তিয়ান….কিকিকিইই…কি করছো তুমি? সরে দাঁড়াও।
কিন্তু তিয়ানের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না এতে। পলকের কথা যেন তার কানেই গেল না। ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে মুগ্ধ নয়নে সে দেখছে তার শ্যামকন্যাকে। আস্তে আস্তে তিয়ানের আঙুল পলকের কানের পেছন থেকে নেমে ঘাঁড় ছুঁতেই চমকে উঠলো পলক। ছিটকে দু কদম পিছিয়ে গেল তিয়ানের থেকে। তা দেখে ঘোর কাটলো তিয়ানের। সেই সাথে বেশ অপ্রস্ততও হয়ে গেল সে তার এহেন কাজে। পলকের চোখে মুখে রাগ,বিস্ময়, বিভ্রান্তির সংমিশ্রণ খেলা করছে।তা দেখে তিয়ান বেশ বুঝতে পারলো কতবড় ভুল সে করেছে। তাই পলকে যেই না স্যরি বলতে যাবে,ওমনি পেছনকে বিথি চেঁচিয়ে বললো,
_এইই কি করিস তোরা। এখনো খাম্বার মতো দাঁড়ায় আছিস ক্যান। গাড়িতে ওঠ।বিথিকে খেয়াল করতেই তিয়ান দেখলো বিথি আর পলক একইভাবে সেজেছে। বেশ মিষ্টি লাগছে বিথিকে। তাকে দেখে মুচকি হাসলো তিয়ান। তার কাছাকাছি গিয়ে পলকের পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
_দেখতো তিনু,,কেমন লাগতেছে আমাদের দুইজনকে?
_মাশাল্লাহ! খুব মিষ্টি লাগছে তোদের।
_থ্যাংক ইউ। খুশি হয়ে বললো বিথি। তারপর,তাদের তাড়া দিয়ে বললো,এই চল চল। এম্নিতেই দেরি হয়ে গেছে। পরে আরও লেট হয়ে যাবে।
_হুম,,চল। এসো পলক। বলেই গাড়ির দিকে পা বাড়ালো তিয়ান।

সারাদিন তিন বন্ধু খুব ঘুরেছে। মজা করেছে। পলক যদিও মন থেকে উপভোগ করতে পারেনি কিছুই।সকালের ঘটনায় বেশ গুটিয়ে গেছে ভেতর ভেতর। বিথি না বুঝলেও তিয়ান সেটা ঠিক খেয়াল করেছে। তাই, বিথি যখন ফোনে কথা বলছিল তিয়ান চট করেই পলকের হাত ধরে একটু নিড়িবিলিতে নিয়ে দাঁড় করালো।পলক হকচকিয়ে গেল তিয়ানের এহেন কাজে। মেজাজও খারাপ হলো ভীষণ তার। হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে,,তিয়ান শক্ত করে ধরে থামালো তাকে। তারপর বললো,

_Polok listen…I’m really sorry yrr….I’m don’t know what happened to me that time…I lost my control. I’m really sorry for my behaviour. plzz…pardon me.
_Its ok Tiyan. ছাড়ো এখন। কেউ দেখলে ভুল বুঝবে। চলো এখান থেকে।
_তুমি রাগ করোনি তো?
_না,, ঠিক আছে। ভুল হয়েছে,তুমি সেটা বুঝতে পেরেছো,,ওটাই এনাফ।
_Are u sure?
Yeah.
_okkk. চলো। আলতো হেসে বললো তিয়ান।

____________________________________

এয়ারপোর্টে বসে নিউজফিড স্ক্রল করছিল সিফাত। স্ক্রল করতে করতেই তার চোখে পড়লো একটা ছবির এ্যালবাম। পহেলা ফাল্গুনে তাদের একসাথে তোলা কিছু ছবি তিয়ান আর পলক আর কয়েকজনকে ট্যাগ করে পোস্ট করেছে বিথি। বিভিন্ন পোজ দিয়ে তোলা ছবিগুলো। সেগুলোর মধ্যে একটা ছবিতে পলক আর বিথিকে দুপাশে নিয়ে তাদের কাঁধে হাত রেখে মাঝে দাঁড়িয়ে আছে তিয়ান। তিনজনেরই হাসি মুখ। ক্যাপশনে লেখা: “Sharies gifted by dear Tiyan .”
আরেকটা ছবিতে পলক কিছু একটা নিয়ে হাসছে। প্রাণখোলা এক হাসি। আর সামনে তিয়ান দাঁড়িয়ে।মুগ্ধ নয়নে সে হাসি দেখছে তিয়ান।তার মুখেও মুগ্ধতার হাসি লেপ্টে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্যান্ডিড ক্লিক এটা। অন্য একটা ছবিতে পলক কোথাও একটা চলে যাচ্ছিল আর তিয়ান শাঁড়ির আচঁলে পেঁচিয়ে যাওয়া তার হাতটা ধরে রেখেছে।
আবার,বিথিকে একপাশ থেকে জড়িয়ে পাশাপাশি দাঁড়ানো একটা ছবিও আছে তিয়ানের সাথে। আরও কয়েকজনের সাথেও বেশ কিছু গ্রুপ ফটো আছে। বন্ধু বোধয় তারা ওদের। পলককে মুগ্ধ হয়ে দেখলো সিফাত। সত্যিই খুব সুন্দর লাগছিল তাকে। বিথি আর সে একই রকম সেজেছে সেটা দেখেও আলতো হাসলো সিফাত। বিথির কথা শুনেছে সে নিশাতের কাছে। পলকের একমাত্র ক্লোজ ফ্রেন্ড সে। কিন্তু,,তিয়ান যে তাদের এত ভালো ফ্রেন্ড সেটা বোধয় নিশাতেরও জানা ছিল না। তাই সিফাতকেও বলেনি সে। তিয়ানকে তার খারাপ লাগে না। প্রথম পরিচয়েই ভালো লেগেছিল তাকে। তারপর পলককে তার বিপদের সময় যেভাবে হেল্প করেছে, তাতেও বেশ ভালো লেগেছিল তিয়ানকে তার। ডিসেন্ট, রেসপন্সিবল , কেয়ারিং একটা ছেলে। কিন্তু,,সে যেটা বুঝেছে,,পলক কি বোঝে সেটা? জানা নেই সিফাতের। লাস্ট দুদিন একবারও কল বা ম্যাসেজ করেছি সে পলককে। পলকও করেনি।সে অবশ্য এমনিতেও করে না খুব একটা। তারপরেও,,,এত সব আয়োজন এত কিছুর কোন কিছুই সে সিফাতকে বলেনি। আজকের দিনটাতেও একটা বার কল করেনি,,কিন্তু কেন করেনি?

স্পিকারে এনাউন্স হচ্ছে। ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে। যেতে হবে এবার। অনেক অনেক প্রশ্নের না পাওয়া উত্তরগুলো ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সিফাত। পা বাড়ালো প্লেনে চেক ইন করার উদ্দেশ্য।

চলবে..