ভালোবাসি বুঝে নাও ২ পর্ব-২৯+৩০+৩১

0
345

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#২৯_পর্ব
.
কি মানে মানে করছেন,, আপনাকে কিছুই বুঝতে হবে না, এখন আপনি আমায় না ছুঁয়ে এই লেহেঙ্গা টা পরিয়ে দিবেন ব্যাস(মাহি)

তোর কি মাথার বুদ্ধি সুদ্ধি সব গেছে?? এখন আমায় রেডি হতে হবে তারপর নিচে গিয়ে সব কিছুর ব্যবস্হা করতে হবে,, আর ওনি বলছে এখন ওনাকে রেডি করাতে হবে তাও আবার না ছুঁয়ে সত্যি তুই পাগল হয়ে গেছিস সর সামনে থেকে(এই বলে মেহরাব যেতে গেলে মাহি মেহরাব এর হাত ধরে বলল)

নাহ এখন আপনার কোথাও যাওয়া হবে না আমি যেটা বলছি আপনাকে সেটাই করতে হবে(মাহি)

তাই,, ওকে ডান তাহলে তোর কথাই থাকল, আমি তোকে লেহেঙ্গা টা পরিয়ে দিবো তবে সেটা আমার স্টাইলে রাজি??(বাঁকা হেসে বলল মেহরাব)

এইরে ওনাকে ফাঁদে ফেলতে এসে আবার আমিই ফাঁদে পরে গেলাম নাতো কি জানি মনের ভিতর কেমন জানি করছে এখানে না আসাই বোধই ভালো ছিলো (মনে মনে বলল মাহি)

কিরে কি ভাবছিস বল রাজি তো?? (মাহির মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলল মেহরাব)

হ,,হুম র,,রাজি, তবে মনে রাখবেন আমাকে কিন্তু ছোঁয়া যাবে না ওকে।

সেটা আমি বুঝে নেবো এখন তুই আমার সামনে দাড়া আর আমাকে আমার কাজ করতে দে।

ও,,ওকে।

এই বলে মাহি মেহরাব এর সামনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পরল মেহরাব মাহির কাছে গিয়ে ওর হাতটা মাহির বুকের দিকে বারাতে লাগল মাহি ভয় পেয়ে হাত দিয়ে নিজের জামা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল,,
মাহির এহেন কান্ডে মেহরাব বাঁকা হেসে, মাহির গলা থেকে ওরনা টা নিয়ে মাহির চোখ বেঁধে দিলো আর এককোনা দিয়ে নিজের চোখটাও বেঁধে ফেলল।

এটা কি হলো আপনি আমার চোখ বাঁধলেন কেনো??(মাহি)

বলেছি না আমি আমার মতো করে তোকে রেডি করাবো সো তুই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক।

আচ্ছা,,,

যেহেতু মেহরাব এর ও চোখ বাঁধা তাই ও কিছুই দেখতে পারছে না,,, মেহরাব প্রথমে মাহির গলায় হাত রাখল তারপর হাতরে জামার পিছনে চেনটা পেলো,, মেহরাব এর ছোঁয়ায় মাহি যেনো পুরো জমে যাচ্ছে একেবারে রোবট এর মতো দাঁড়িয়ে আছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে,,, প্রায় অনেক সময় নিয়ে মেহরাব মাহিকে লেহেঙ্গা টা পরালো তারপর নিজের চোখের বাঁধন খুলে মাহির টাও খুলে দিলো।

নে তোকে পরিয়ে দিয়েছি,, এবার খুশি তো (মেহরাব)

নাহ আমি মোটেও খুশি নই আপনি আমায় ছুঁয়ে লেহেঙ্গা পরিয়েছেন এটা কিন্তু কথা ছিলো না (মাহি)

ওহ তাই বুঝি?? তো আমি তোকে কোথায় ছুঁয়েছি সেটার প্রমাণ দেখা। (দুহাত বুকে গুজে বলল মেহরাব)

আমি নিজের চোখে না না চোখে না আমি নিজে অনুভব করেছি যে আপনি আমায় ছুঁয়েছেন.

অনুভব করলে তো হবে না,, চক্ষুস সাক্ষী লাগবে প্রামাণ দেখা।

আরে আমি তো নিজেই দেখিনি তাহলে প্রমাণ দেখাবো কীভাবে।

এই তো লাইনে এসেছিস,, তুই যেটা নিজে চোখে দেখিসনি সেটার দোষ আমায় দিচ্ছিস কেনো?? আমি তোর উপকার করলাম কোথায় আমায় ধন্যবাদ দিবি তা না করে উল্টো আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছিস এটা কিন্তু খুবি খারাপ৷, বড্ড সার্থপর তো তুই, এই জন্য কারো উপকার করতে হয় না (এই বলে মেহরাব নিজের পোশাক নিয়ে আবার ওয়াশরুমে চলে গেলো)

আরে ওনি তো আমায় বোকা বানিয়ে গেলো, নিজেই তো আমার চোখ বেঁধে দিছিলো তাহলে আমি দেখবো কি করে,,, কত্ত বড় শেয়ানা,, বদ লোক একটা।

মেঘরা এসে পরেছে ওরা এখন গেটে দাঁড়িয়ে আছে,, আর মাহি মীরা ইপ্সা সহ আরো অনেকেই গেট ধরে দাঁড়িয়ে আছে টাকা না দিলে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।

এই পিচ্চি সরো সামনে থেকে ছোট মানুষের এভাবে এতো ভিড়ের মধ্যে থাকতে হয় না,, নয়ত কখন চিরে চেপ্টা হয়ে যাবে টেরও পাবে না (নেহাল মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল)

এই একদম বাজে কথা বলবেন না কিন্তু (মাহি)

হুম এতো বেশি কথা না বলে টাকাটা দিয়ে দিলেই তো পারেন কিপ্টা লোক একটা (মীরা)

এই যে কাঁদা সুন্দরী তোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে বলে এটা ভেবো না যে তোমাকে কিছু বলবো না,, বেশি কথা বললে কিন্তু কাঁদাই নিয়ে গিয়ে চুবিয়ে আনবো (নেহাল)

আপনাকে তো (মীরা নেহাল এর দিকে এগিয়ে যেতে গেলে)

আরে মীরা কি করছো থামো এমন করতে হয় না লোকে কি বলবে (ইপ্সা)

ওরে ব্যাস মারবে নাকি??

ইপ্সার কথা শুনে মীরা থেমে গেলো তারপর অনেক কথা কাটাকুটির পর অবশেষে মেঘরা ভিতরে ঢুকলো, আসোলে মাহিরা যা টাকা চেয়েছিলো মেঘ সেটাই দিতে চাচ্ছিলো কিন্তু নেহাল মেঘকে বাঁধা দিয়ে একটু ঝগড়া করল,, আসোলে বিয়ে বাড়িতে এমন না হলে জমে নাকি।

বিয়ে শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে গেলো মেঘলার বিদায়ের সময় সবাইকে দেখা গেলেও মেহরাব কে কোথাও দেখা যাইনি কেননা মেহরাব ওখানে ছিলোই না ও নিজের রুমে চলে গিছিলো,,, কেননা ও জানে মেঘলা ওকে দেখলে আরো বেশি কাঁদবে যতই হোক ভাই বলে কথা,আর মেঘলা কাঁদলে মেহরাব ও নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না তাই আগেই ওখান থেকে সরে আসছে, ভাই বোনের সম্পর্ক টা অনেক মধুর হয় একটু ঝগড়া একটু মারামারি কিন্তু দিন শেষে আবার সেই এক,,, মেঘলা বারবার মেহরাব এর কথা জিগাস করলে ওকে বলা হলো মেহরাব কোথায় যেনো গেছে একটা কাজে,, মেঘলার বেশ অভিমান হলো আজকের দিনেও ওর কাজ থাকা লাগলো,, অতঃপর মেঘলাকে গাড়িতে তুলা হলো, ,

তখন বাঁধল আরেক জ্বালা বিয়ের দিন কণের সাথে তো কাউকে যেতে হয় কোনো মহিলা মানুষ কিন্তু মেঘলার নানিও নেই আর দাদিও তাই বাধ্য হয়ে মীরাকে পাঠালো।

আবার সেই আমার কাছেই আসা লাগল (নেহাল)

আপনার পাশে বসতে আমার বয়েই গেছে নির্ঘাত আর কোনো গাড়িতে জায়গা নেই তাই নয়ত আমি জীবনেও আপনার পাশে বসতাম না (মুখ বাঁকিয়ে বললো মীরা)

আরে ওভাবে মুখ বাঁকিও না শেষে দেখা যাচ্ছে তোমার মুখটাই বাঁকা হয়ে গেলো(এটা বলে নেহাল হেসে দিলো)

মীরা অন্যদিকে মুখ করে বসে থাকলো,, এখন সারাটা রাস্তা এই লোকটা বকবক করে মাথা খাবে,,,,

রুমে,,,,,,

বিছানার উপর মাথা নিচু করে মেহরাব বসে আছে,,, মাহি দরজাটা আস্তে করে খুলে ভিতরে এসে মেহরাব কে দেখতে পেলো, গুটিগুটি পায়ে মেহরাব এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

কি হয়েছে মেহরাব ভাই আপনি এখানে কেনো?? জানেন মেঘলা আপু আপনাকে কত খুঁজতেছিলো (মাহি আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই মেহরাব উঠে দাঁড়িয়ে আচমকা মাহিকে জরিয়ে ধরলো,,, কিছুক্ষণ পর মাহি বুঝতে পারলো ওর ঘাড়ে তরল জাতীয় কিছু পরছে তার মানে কি মেহরাব ভাই কাঁদছে??)

কি হয়েছে মেহরাব ভাই আপনি কাঁদছেন কেনো,, আরে কালকেই তো আমরা মেঘলা আপু কে আনতে যাবো,, আর মেঘ ভাইয়া তো অনেক ভালো আপনি তো ওনাকে চিনেন ওনি ঠিক আপুর খেয়াল রাখবে আপনি চিন্তা করবেন না (মেহরাব কে জরিয়ে ধরে বলল)

পিচ্চি একটা মেয়ে আমাকে বোঝাচ্ছে শান্তনা দিচ্ছে,,, খুব পেকে গেছিস না??(মাহিকে ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল মেহরাব)

কি করবো বলুন আপনারই তো বউ. (মাথা চুলকে হেসে বলল মাহি)

হুম পাগলি বউ,, (মাহিকে বুকে জরিয়ে নিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল মেহরাব)

চলবে,,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩০_পর্ব
.
১ সপ্তাহ পর,,

কিরে তোর হলো আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো তোর তো দেরি হচ্ছে সাথে আমার ও দেরি করিয়ে দিচ্ছিস(গাড়িতে বসে বলল মেহরাব)

আসছি এইতো হয়ে গেছে,,,এই বলে মাহি ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে আসলো তারপর গাড়িতে উঠে বসল।

এতো দেরি হয় কেনো, সকাল সকাল উঠতে পারিস না (গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল মেহরাব)

আরে মেঘলা আপুর বিয়েতে কত মজা করলাম আর আনন্দের জন্য তো ভালো করে ঘুমাতেই পারিনি তাই এখন বেশি বেশি করে ঘুমিয়ে সব পুষিয়ে দিচ্ছি.

কি সব কথা বার্তা,,, গাড়ি চলতে লাগল নিজ গতিতে এর মাঝে মাহি মেহরাব এর সাথে কোনো কথা হয় না, প্রায় অনেকক্ষণ পর মাহি বলল।

আরে আপনাকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি কি মন আমার কিছুই মনে থাকে না (নিজে নিজের মাথায় হালকা চাটি মেরে বলল মাহি)

কি কথা বল আমি শুনছি (গাড়ি চালাতে চালাতে বলল মেহরাব)

জানেন তো আমি না একটা প্লান করেছি,,,

কি প্লান??

আমি ভেবেছি,, আমি একটা খরগোশ কিনবো সেই জন্যই তো কলেজ থেকে ফিরে খরগোশ রাখার ঘর বানাবো, মাটি দিয়ে অনেক বড় করে ঘর বানাবো আর তার চারপাশে ঘাস লাগিয়ে দেবো ইস কত্ত সুন্দর যে হবে তাই না বলুন?? (খুশি হয়ে বলল মাহি)

কিহ?? খরগোশ?? ইয়াক এসব আজগুবি জিনিস তোর মাথায় আসে কিভাবে বাড়ি ঘর নোংরা করার প্লান,, না এসব কিছুই হবে না আমার এসব একদম পছন্দ না (গাড়ি থামিয়ে বলল মেহরাব)

আপনার পছন্দ না তো কি হয়েছে আমার তো পছন্দ আমি কিনবো মানে কিনবোই তাতে আপনার পছন্দ হোক চাই না হোক।

আমি যখন বলেছি কিনবি না তখন কিনবি না এটাই ফাইনাল (রেগে বলল মেহরাব)

সব সময় আপনার কথা শুনতে হবে নাকি আমি যখন কিনবো তো কিনবোই,, আর যেখানে আমার খরগোশ এর কোনো জায়গা নেই আমি সেখানে থাকবো না,, আপনি থাকেন আপনার পরিষ্কার গাড়ি নিয়ে আমি গেলাম (এই বলে মাহি গাড়ি থেকে নেমে গেলো)

মাহি রাস্তার মাঝে এসব কি হচ্ছে মাহি,,(রেগে বলল মেহরাব কিন্তু ততক্ষণে মাহি চলে গেছে)

এত্তো রাগ সামান্য একটা খরগোশ এর জন্য আমায় রেখে চলে গেলো, ওকে ফাইন আমিও আর ডাকবো না থাক তোর খরগোশ কে নিয়ে (এই বলে মেহরাব গাড়ি নিয়ে চলে গেলো)

,,,বিকেলে,,,,

আরে ফোন দিয়ে এভাবে চুপ করে থাকলে আমি বুঝবো কীভাবে যে কি হয়েছে,, কথা বল কি হয়েছে কে কি বলেছে বল আমায় (মেঘলা)

আপু তুমি চলে আসো তো,, এভাবে ফোনে সব বলবো কীভাবে??

এভাবেই বল আমি শুনছি।

তোমার ভাই না খুব খারাপ হয়ে গেছে আস্তো একটা খরুচ,, জানো আজকে কি হয়েছে তোমার ভাই আমার খরগোশ কে নোংরা বলেছে।

কিহ তুই আবার খরগোশ কিনলি কবে আমাকে তো বললি না (মেঘলা)

আরে কিনিনী তো কিনবো।

কিহ?? না কিনেই এ অবস্থা?? এদের তো দেখছি গোপাল ভাঁরের সেই গল্পের মতো হয়ে গেলো গরু না কিনেই গরুর দুধ নিয়ে স্বামী বউ মারামারি,, (শেষের কথাগুলো আস্তে আস্তে বলল মেঘলা)

কি হলো চুপ করে আছো কেনো,,তুমি চলে আসো আর তোমার ভাইকে বলো আমায় খরগোশ কিনে দিতে,, নয় তো মেঘ ভাইয়া কে বলে তোমার ভাইকে জেলে ঢুকাই দেবো কিন্তু (মাহি)

কিহ??

এতো কি কি করো নাতো, আমি রাখলাম।

এবার বুঝবে মজা আমার খরগোশ কে নোংরা বলা না?? এবার তো আমি আপনাকে দিয়েই খরগোশ কিনাবো নয়তো আমার নামও মাহি নয় হম??

,,কিচ্ছু ভালো লাগছে না, শুধু শুধু মেয়েটা আমার সাথে রাগ করলো আরে সামনে ওর পরিক্ষা না জানি এখন পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে তা না ছোট বাচ্চাদের মতো খরগোশ কিনবে, ইডিয়ট একটা (নিজের কেবিনে বসে একা একাই কথা বলছিলো মেহরাব তখনি কেউ নক করলো)

আসতে পারি?? (মেঘ)

তুই আবার কবে থেকে অনুমতি নিতে শুরু করলি, আয় তো ভালো লাগছে না (মেহরাব)

ভালো লাগবে কি করে,, আচ্ছা মেহরাব মাহি না হয় ছোট তাই বলে কি তুই ও বাচ্চাদের মতো করবি, ও না হয় একটা খরগোশ কিনতে চেয়েছে কিনিনি তো আর,, এখানে এতো রাগ করার কি আছে ওকে বোঝিয়ে বললেই হতো(মেঘ ভিতরে এসে বসতে বসতে বলল)

তো রাগ করবো না?? ওরকম একটা নোংরা জিনিস কিনবে বলছে,, আর সামান্য একটা খরগোশ এর জন্য আমার সাথে রাগারাগি করবে??

কি জানি ভাই তোদের বেপার তোরা ঠিক কর,, শোননা আমরা পরশোদিন কক্সবাজার যাচ্ছি তো আমি চাই আমাদের সাথে তুই আর মাহিও যাবি। (মেঘ)

এতোদিন জানতাম মাহি একা পাগল এখন তো দেখছি তুই ও পাগল, তোরা হানিমুনে যাবি আর সেখানে আমি যাবো,, একবার তো ভাব আমি তোর বন্ধু হতে পারি কিন্তু তোর বউয়ের বড় ভাই এভাবে যাওয়া যায় নাকি??(মেহরাব)

আরে হানিমুনে না,, আমাদের সাথে শুভ আর ওর বউও যাবে,, শুভ বলছিলো এখন যদি না যাওয়া হয় তো আগামী ২,, ৩ বছরের ভিতর ওর আর যাওয়া হবে না,, কেননা ও তো বাবা হচ্ছে, তাই ভাবলাম সবাই একসাথে যাওয়া যাক একটা ছোটখাটো ট্যুরও হয়ে যাবে,, পরে না হয় মেঘলাকে নিয়ে অন্য কোথাও ঘুরে আসবো, কি বল।

ঠিক আছে আছে দেখা যাবে তবে আমি কিন্তু মাহিকে বলতে পারবো না পারলে তুই বল।

মেহরাব এতো ইগো কিন্তু মোটেও ভালো না, ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে এতোটা রিয়েক্ট করা মোটেও উচিত নয় হিতে বিপরীত হতে পারে,, ওকে আমি তাহলে যায় এখন (এই বলে মেঘ চলে গেলো)

সত্যি কি আমি বেশি রিয়েক্ট করে ফেলছি ওতো শুধু কিনতে চেয়েছে কিনে তো আর আনিনি, আমি ওকে ভালো করে বললেই তো হতো,, হুম আমি বেশি বেশি করে ফেলছি, আজকেই অফিস থেকে গিয়ে পাগলি টাকে সরি বলবো (মেহরাব নিজে নিজেই বলল)

সন্ধ্যার সময়,,,

জানিস তো মনির আমাদের বাড়িতে না একটা লম্বার উপর খাম্বামার্কা রাক্ষস আছে (মাহি)

মানে সত্যি বলছিস ওরে বাবা আগে বলবি তো এখন আমি কি করে (মনির)

আরে এ রাক্ষস সে রাক্ষস না, এটা হলো মানুষ রাক্ষস।

মানে??তুই কার কথা বলছিস আপু(মনির)

কে আবার মেহরাব ভাই,, আস্তো একটা রাক্ষস, আমি কত করে বললাম একটা খরগোশ কিনবো সে নিষেধ করলো,আবার আমার খরগোশ কে নোংরা বলেছে, ভাবা যায় কত্ত বড় খারাপ লোক. মনে চাই।

আপু থাম প্লিজ আর বলিস না, নয়ত পরে আফসোস করা লাগবে (মনির)

কেনো বলবো না বলবো বলবো একশো বার বলবো, মন চাই ওনাকে ধরে কাঁচা মরিচ খাইয়ে মরুভূমি তে রেখে আসি।

একবার পিছনে তাকা তাহলে বুঝতে পারবি কে কাকে মরুভূমি তে পাঠায় (মনির)

কি কি আছে পিছনে দেখি,, এই বলে মাহি পিছনে তাকিয়ে দেখলো মেহরাব চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে,, মূলত মেহরাব মাহিকে সরি বলতে আসছিলো কিন্তু মাহির কথা শুনে সরি তো দূরে থাক উল্টো ওকে ঝুলিয়ে দিয়ে যাবে।

আরে মেহরাব ভাই ভালো আছেন??(দাঁত কেলিয়ে বলল মাহি,,,এখন যে আমার কি হবে, আল্লাহ বাঁচাও নয়ত আজকে আমি শেষ,,,মাহি আব তেরা কিয়া হুয়া).

চলবে,,,,,,

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩১_পর্ব
.
মনির তুই ভিতরে যা আমার মাহির সাথে কথা আছে..

ক,,,কেনো ও ভিতরে যাবে কেনো থাক না এখানে সম্যসা কি।

মনির আমি তোকে যেতে বলেছি,, যলদি যা।

মেহরাব এর রেগে বলায় মনির ফুরুত করে এক দৌড়ে রুমের বাইরে চলে গেলো।

একটু আগে তুই কি বললি,, আমি রাক্ষস?? আমাকে মরিচ খাইয়ে মরুভূমিতে ছেড়ে আসা উচিত??(মাহির দিকে আগাতে আগাতে বলল মেহরাব)

ন,,না আসোলে এসব গুলো তো আমি,, আ,,আপনি তো কত ভালো (পিছিয়ে কাঁপা সরে বলল মাহি)

ওকে আমি তোকে কিছু বলবো না শুধু বোঝাবো,,, একটা কথা ভালো করে শুনে রাখ মাহি তুই কিন্তু এখন আর ছোট নই তুই বড় হচ্ছিস তাই এসব বাচ্চামো ছেড়ে এবার একটু এডাল্ট হওয়ার চেষ্টা কর,, আর একটু হলেও আমাকে বোঝ,, আমার ভালোবাসাটা বোঝ,, বাই দ্যা ওয়ে, তোর জন্য চকলেট এনেছি এখানে রেখে গেলাম,, (এই বলে মেহরাব চকলেট গুলো টেবিলে রেখে চলে গেলো)

কি হলো এটা?? ওনি এসব কি বলে গেলো, আমাকে বড় হতে বলল?? আরে আমি তো বড়ই, আর আমাকে বড় হতে বলে নিজেই চকলেট দিয়ে গেলো,, বুঝি না বাপু এনার মতিগতি কখন যে কি বলে (এটা বলে মাহি চকলেট খেতে লাগল)

,,,,,,পরশোদিন,,,,,,

মেঘলা এসে অনেক কষ্টে মাহিকে আর বাড়ির সবাইকে রাজি করিয়েছে,,, আর আজকে সবাই মিলে কক্সবাজার যাবে,, মাহির তো ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনেই মনের মাঝে লাড্ডু ফুট ছিলো, কিন্তু মেঘলার থেকে একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য এমন করলো।

ওনার যে কি হয়েছে কে জানে, সেদিন এর পর থেকে তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না,, হুম?? ভাব সবই ভাব,,, ভাব দেখলে বাঁচি না আমারও ভাব আছে আমিও আগ বারিয়ে কথা বলতে যাবো না, তাহলে ওনার দাম বেড়ে যাবে। (সবকিছু ব্যাগে ভরতে ভরতে বলল মাহি)

সব কিছু গোছগাছ করে,, সবার থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের সাথে বেরিয়ে পড়ল, মেহরাব দের বাড়ির উদ্দেশ্য ওখান থেকেই সবাই একসাথে রওনা হবে,, আর মেহরাব দের গাড়ি যেহেতু ছোট ওখানে ছয় জন সহ ব্যাগ পএ নিয়ে যাওয়া যাবে না তাই ওরা একটা বড় গাড়ি ভাড়া নিয়েছে,,
মাহি গিয়ে দেখলো সবাই গাড়িতে সব কিছু তুলে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে,।

মাহি তুই আজকেও লেট করলি এটা কিন্তু মোটেও ঠিক নয় (মেঘলা)

হ্যাঁ মাহি তোমার জন্য আমরা কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি (ইপ্সা)

হয়েছে বাকি কথা গাড়িতে উঠে বলবা এখন সবাই চলো তো (মেঘ)

মাহি আশে পাশে তাকালো কিন্তু কোথাও মেহরাব কে দেখতে পেলো না, আবার লজ্জাই কারো কাছে জিগাসও করতে পারছে না

কি বেপার ওনি কোথায় ওনি কি আমাদের সাথে যাবেন না নাকি (মনে মনে বলল মাহি)

কি হলো মাহি উঠো গাড়িতে আর হ্যাঁ তুমি সামনের সিটে বসো (শুভ)

শুভর কথা শুনে মাহি গাড়িতে উঠে পরলো,, গাড়ির দরজা লাগিয়ে পাশে ডাইভিং সিটে তাকিয়ে দেখলো মেহরাব অলরেডি ওখানে বসে আছে,, চোখে সানগ্লাস পরে হাতটা স্টিয়ারিং এর উপর দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। কি ভাব একবারও আমার দিয়ে তাকালো না হম?? তাতে আমার কি আমিও আগ বাড়িয়ে কথা বলবো না হম??

কেউ যেন তার সিট বেলটা লাগিয়ে নেই (মাহির দিকে না তাকিয়ে বলল মেহরাব)

কি ভাব আমার দিকে তাকালো না,, আমিও মাহি আমি সিট বেল লাগাবো না হুম (মনে মনে বলল মাহি)

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে তারপরও যখন মাহি সিট বেল লাগানো না তখন মেহরাব বাধ্য হয়ে মাহির দিকে ঝুকে ওর সিট বেল লাগাতে লাগল।

আরে,,,

গাড়িতে উঠে যারা সিট বেল না লাগাই তাদেরকে এক নাম্বারের বলদ বলে (গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল মেহরাব)

আমি বলদ?? আপনি বলদ, লম্বার উপর খাম্বা একটা বদ লোক (ফিসফিস করে বলল মাহি)

দীর্ঘ ৮ ঘন্টা জার্নির পর অবশেষে ওরা কক্সবাজার পৌঁছালো,,সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্র। কক্সবাজার গেলে সকালে-বিকেলে সমুদ্রতীরে বেড়াতে মন চাইবে। নীল জলরাশি আর শোঁ শোঁ গর্জনের মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের নাম কক্সবাজার। অপরূপ সুন্দর বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

মাহি তো সারা রাস্তা ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছে এখনো অলরেডি ঘুমিয়ে আছে,, গাড়ি হোটেলের সামনে এসে থামলো,,একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।

আহ কি নির্মল বাতাস যেনো সব ক্লান্তি এক ছুটে পালিয়েছে (মেঘ)

মেহরাব বতল থেকে সামান্য পানি হাতে নিয়ে মাহির দিকে ঝুঁকে ওর মুখে ছিটিয়ে দিলো। ঠান্ডা পানির ঝাঁপটায় মাহি ধরফরিয়ে লাফিয়ে উঠে বসে পড়ল।

এতোই যদি ঘুম লাগে তাহলে আমাদের সাথে আসলি কেনো বাড়িতেই পরে পরে ঘুমাতি (মেহরাব)

এভাবে কেউ কারো ঘুম ভাঙ্গাই?? আমি তো ভয় পেয়ে গিছিলাম।

তোর মতো ভিতুরা তো ভয় পাবেই সবাই তো আর তোর মতো ভিতু নয় এই বলে মেহরাব গাড়ি থেকে নেমে গেলো,, মাহি কিছু বলতে গিয়েও না বলে, ও গাড়ি থেকে নামলো,, তারপর ব্যাগ নিয়ে হোটেলের ভিতর গেলো।
রিসিপশন ডেস্কে গিয়ে সব ফর্মালিটি শেষ করে চারটে রুমের চাবি নিয়ে যে যায় রুমে চলে গেলো,,,মেঘ মেঘলা একরুমে শুভ ইপ্সা এক রুমে মাহি একা এক রুমে আর মেহরাব একা এক রুমে,, তবে মাহির রুমটা মেহরাব এর রুমের পাশেই।

ভাই বলছি কি এটাই তো সুযোগ হানিমুন টা সেরে নেওয়ার কি বল শুভ (চোখ মেরে বলল মেঘ)

মানে??(বুঝতে না পেরে বলল মেহরাব)

মানে হলো চারটে রুম না নিয়ে তিনটে রুম নিলে ভালো হতো না?? সব রুমেই দুজন করে আহ (শুভ)

সেটাপ,,, দুজনের মুখ বন্ধ করবি নয়ত মেরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেবো,, (এই বলে মেহরাব নিজের লাগেজ আর মাহির লাগেজটা নিয়ে চলে গেলো)

ওরা সকাল সকাল বের হলেও এখানে আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেছে, তাই যে যায় রুমে একটু রেস্ট নিয়ে বিকেলের দিকে সমুদ্রে যাবে,, আর সেখানে গোসল করবে,, হোটেলে অবশ্য সুইমিংপুল আছে তবুও সমুদ্র আর সুইমিং কি এক নাকি.

মাহি নিজের রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ল,, মেহরাব ওর লাগেজ টা রুমের দরজার সামনে রেখে নিজের রুমে চলে গিছিলো।
মাহি কিছু সময় চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে লাফ দিয়ে উঠে ব্যাগ থেকে একটা আবীর ভর্তি কৌটো বার করে বলল।

এবার দেখবেন মিস্টার লম্বার উপর খাম্বা আমি কি করি,, কীভাবে আপনাকে টাইট দিই, আমাকে ইগনোর করা এবার বোঝাবো মজা (এটা বলে মাহি একটা দুষ্ট হাসি দিলো)

প্রায় বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল, আজকে শুধু বিচে আর সমুদ্রে বেড়াবে কালকে সকাল সকাল সেন মার্টিন সহ আর সব খানে যাওয়া যাবে।
যেহেতু সবাই সমুদ্র নামবে তাই সেরকম পোশাক পরেই বার হয়েছে,, হোটেল থেকে সমুদ্র দেখা যায় বেশি দূরে নয় কাছেই,, আর সকালের সানসেট টাও দেখা যায়।

মাহি রুম থেকে বেরিয়ে যেই সামনে যাবে তখনি মেহরাব এর সাথে ধাক্কা খেলো কেননা দুজনেই এক সাথে রুম থেকে বার হয়ছে।

চোখ কি রুমে রেখে এসেছিস?? দেখে চলতে পারিস না (মেহরাব)

ওহ আমি না নয় চোখ রুমে রেখে এসেছি তো আপনার চোখ তো সাথেই ছিলো তাহলে ধাক্কা মারলেন কেনো???

তোর সাথে কথা বলায় বেকার ইডিয়ট একটা,, ( এই বলে মেহরাব চলে গেলো)

যাও যাও একটু পরেই বোঝবে মজা,,

চলবে,,,,,??