ভালোবাসি বুঝে নাও ২ পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
307

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩২_পর্ব
.
সবাই একসাথে বীচে চলে গেলো,,, সবাই পানিতে নেমে আনন্দ করতে লাগল আর মেহরাব চোখে সানগ্লাস দিয়ে সমুদ্রের সামনে বসে সমুদ্রের ঢেউ দেখতে লাগল ও আর পানিতে নামলো না।

এই মেঘলা আপু তোমার ভাই এমন কেনো পানিতে না নেমে ওভাবে একা বসে আছে কেনো??(মাহি)

আমি কি জানি তোদের মধ্যে কি হয়েছে আর ভাইয়া এসব তেমন পছন্দ ও করে না দেখিস না সব সময় কেমন মুডে থাকে (মেঘলা)

তুমি দেখবা আমি ওনাকে পানিতে নামাবো।

কীভাবে???

দেখতে থাকো,, এই বলে মাহি চলে গেলো আর মেঘলাও মাহির কথা বোঝতে না পেরে নিজের মতো মেঘ এর সাথে পানি ছুঁড়া ছুড়ি করতে লাগল,, প্রায় কিছু সময় পর মাহি চিৎকার করে উঠল।

আরে এটা কার চিৎকার মাহির না??(মেঘ)

কিন্তু এতো এখানই ছিলো হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো(মেঘলা)

মেহরাব যেহেতু পানিতে নামিনি তাই ও সমুদ্র থেকে কিছুটা দূরে এই জন্য ওদের কথা শুনতে পাইনি,,, মাহির চিৎকার শুনে সবাই চারিদিকে দেখতে লাগল কিন্তু কোথাও মাহিকে দেখতে পেলো না,, মেঘলা ভয় পেয়ে দৌড়ে মেহরাব এর কাছে আসলো।

কিরে তুই একা আর সবাই কই (মেহেরাব)

ভ,,ভাইয়া মাহি (হাঁফাতে হাঁফাতে বলল)

কি হয়েছে মাহির কোথায় ও (হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল মেহরাব)

জানি না, হঠাৎ চিৎকার করে উঠল তার পর আর ওকে দেখতে পাচ্ছি না।

হোয়াট?? মেঘলার কথা শুনে মেহরাব দৌড়ে সমুদ্রের দিকে গেলো তারপর মাহিকে ডাকতে লাগল,,মেহরাব পানির দিকে তাকাতেই দেখলো লাল লাল কি যেনো,, মেহরাব দৌড়ে পানিতে নেমে সেখানে চলে গেলো,, গিয়ে দেখলো মাহি ওখানে, ওকে কোলে তুলে নিয়ে পাড়ে এনে শুইয়ে দিয়ে মাহিকে ডাকতে লাগল।

মাহি এই মাহি কি হয়েছে তোর, আর এই রক্ত কোথা থেকে আসল,,, (উত্তেজিত হয়ে বলল মেহরাব)

মেঘলা তো প্রায় কেঁদে ফেলবে এমন অবস্থা।

মেহরাব ও হয়ত পানি খেয়ে ফেলেছে ওর পেটে হালকা করে চাপ দে তাহলে হয়ত পানি বার হতে পারে(শুভ)

শুভর কথা শুনে মেহরাব যেই মাহির পেটে চাপ দিতে যাবে তখনি মাহি বলল।

আরে না না চাপ দেবেন না আমি একদম ঠিক আছি,,, আর দেখছো মেঘলা আপু আমি তোমাকে বলেছিলাম না ওনাকে পানিতে নামাবো দেখলে কিভাবে নামালাম,, আর লাল লাল ওগুলো তো আবীর ছিলো (মাহি)

তুই ঠিক আছিস তোর কিছু হয়নি??(মেঘলা)

আরে আমার আবার কি হবে,,,,,আমি তো,,আর বলতে পারলো না তার আগেই মেহরাব ঠাস করে মাহি কে একটা চড় মেরে দিলো।

মেহরাব (মেঘ)

কি মেহরাব তুই এখনো আমাকে থামতে বলবি, নিজের চোখেই দেখলি তো ও কি করলো,আর ওর কি হবে ওতো এগুলো করে সবাইকে টেনশনে ফেলে মজা পাই একবার ও কারো কথা ভাবে না,, বোঝেই না ওর এরকম মজাই আর কারো কি অবস্থা হয় (রেগে লাল হয়ে কথা গুলো বলে মেহরাব চলে গেলো)

আর মাহি গালে হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল,,আমি কি করলাম সবাই পানিতে কত মজা করছে আর ওনি একা বসে ছিলো এমনিতে ডাকলে তো আসতো না তাই এমনটা করেছি ওনাকে পানিতে নামানোর জন্যই তো এমন করলাম।

এটা তুমি একদম ঠিক করোনি মাহি (শুভ)

হ্যাঁ,, তুমি এতোদিন যেটা করেছো আমি তোমাকে সার্পোট করেছি কিন্তু আজকে তুমি যেটা করলে সেটা মোটেও ঠিক করোনি,, তুমি জানো মেহরাব এর কি অবস্থা হয়েছিলো (মেঘ)

আচ্ছা যা হওয়ার হয়েছে,, এখন এসব বলে আর কোনো লাভ নেই, মাহি তুই উঠ এখন,, সবাই হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিই, আর মাহি ভাইয়া কিন্তু প্রচন্ড রেগে আছে তোকেই সেই রাগ কমাতে হবে,, (মেঘলা)

আমি!!

হুম তুমি,, তবে এখন ওর সামনে যাওয়ার দরকার নেই রাগ একটু কমলে তারপর যেয়ে সরি বলে আসেনি (ইপ্সা)
তারপর সবাই হোটেলে ফিরে গেলো,,

,,,,রাতে,,,,

রাতে সবাই খেতে আসলেও মেহরাব আসিনি সেই তখন রুমে গিয়েছে তারপর আর বার হয়নি আর কেউ সাহস করে ডাকতেও যায়নি,, এদিকে মাহির অনেক খারাপ লাগছে সামান্য মজা করতে গিয়ে আজকে ওনাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে,, ভিতরে ভিতরে খুব অনুসূচনা হচ্ছে, তাই রাতে আর ভালো করে খাওয়া হলো না, যেহেতুওরা ছয়জন তাই ছয়জন এর খাবারই দিছিলো মাহি ওখান থেকে মেহরাব এর খাবারটা প্লেটে সাজিয়ে নিয়ে মেহরাব এর রুমের দিকে গেলো।

একবুক সাহস নিয়ে মেহরাব এর রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর আস্তে করে দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়,, ভিতরে অনেক অন্ধকার, মাহি হাতরে সুইচ টা অন করলো তারপর খাবারটা টেবিলের উপর রেখে সারা রুমে চোখ বুলালো মেহরাব কোথাও নেই,,
বেডে টাওয়াল টা পড়ে আছে, মাহি বাথরুমের দরজা খুলে দেখলো সেখানোও নেই তারপর ব্যালকণিতক গিয়ে দেখলো মেহরাব সেখানে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে,,
মাহি আস্তে আস্তে মেহেরাব এর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।

কিছু বলবি??(আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল মেহরাব)

আরে আজব তো ওনি তো পিছনে ফিরলো না তাহলে পিছনে না ফিরে জানলো কীভাবে যে আমি এসেছি, (মনে মনে কথাগুলো বলে মাহি বলল)

আসোলো আমি আপনার জন্য খাবার এনেছি খেয়ে নিন।

ক্ষিদে নেই খাবারটা নিয়ে যা (মাহির দিকে না ফিরে অনেকটা গম্ভীর সরে বলল মেহরাব)

মেহরাব ভাই তখনকার জন্য আমি,,,

তোকে যেতে বলেছি আর যাওয়ার সময় লাইট টা অফ করে দিয়ে যাবি।

কিন্তু আমি।

যেতে বলেছি তোকে সো যা আমি কথা বলতে চাইছি না এখন। (রাগি কন্ঠে বলল মেহরাব)

অন্য সময় হলে মাহি ভয় পেলেও মেহরাব কে জোর করতো, কিন্তু এখন সে সাহস হচ্ছে না কেননা ভুলটা তো ওরি,, তাই কোনো কথা না বলে মেহরাব এর কথা অনুযায়ী বেরিয়ে গেলো কিন্তু খাবারটা রেখে গেলো।

মানুষের ইমোশন,, ভালোবাসা এগুলো মজার জিনিস নয় মাহি,, একজন মানুষের কাছে তার ভালোবাসার মানুষটা কতটা দামী সেটা তোকে বোঝাবো,,, তোকে ফিল করাবো ভালোবাসার মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে গেলে বা সে ইগনোর করলে কতটা কষ্ট হয়, ভিতরে কতটা জ্বলে,,,,
তোর কাছে সবটাই মজা মনে হয়, এবার তোকে বুঝতে হবে কোনটা মজা আর কোনটা ভালোবাসা।

কথাগুলো বলে মেহরাব আবার আকাশের দিকে তাকালো,, আজকে এক মুহুর্তের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস আটকে গিছিলো, কিছু সময়ের জন্য যেনো মনে হচ্ছিলো আমি শ্বাস কষ্টে ভুগছি,, যাকে হারাবোর কথা কল্পনাও করতে পারিনা সেই আজকে এমন করল,,

চলবে,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩৩_পর্ব
.
,,,সকালে,,,

একটা সুন্দর সকাল, সমুদ্রের ঢেউয়ের কলকল আওয়াজে যেনো মন প্রাণ একেবারে জুড়িয়ে যায়,, মাহি সেই ভোরে উঠে ব্যালকণিতে একটা চেয়ারে বসে আছে,, সূর্য সেই কখন উঠেছে তবুও বসে আছে বসে বসে সমুদ্র দেখছে,, তখনি পাশের রুমের দরজা খুলার আওয়াজ হলো, মাহি পাশ ফিরে তাকিয়ে দাখে মেহরাব,, মুখে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে আছে ওনি তাকালেই শুভ সকালটা বলবো,,
কিন্তু মাহিকে নিরাশ করে মাহির দিকে একবার ও না তাকিয়ে মেহরাব চলে গেলো।

আচ্ছা ওনি কি কালকের বিষয় টা নিয়ে এখনো আমার উপর রেগে আছে?? কিন্তু আমি তো ওনাক সরি বলতে চেয়েছিলাম ওনিই তো আমার কথা শুনলেন না।

সবাই খেয়ে রেডি হয়ে একেবারে নিচে নেমে গেছে সকাল সকাল, কেননা ওরা আজকে সেন্টমার্টিন যাবে আর এখান থেকে জলপথে সেন্টমার্টিন যেতে মাএ দুই ঘন্টা লাগবে অবিশ্বাস্য ঠেকছে? মাত্র দু’ঘণ্টায় জলপথে এতদূর পাড়ি দেয়া কি আদৌ সম্ভব! অবশ্যই, হাইড্রোফয়েল জাহাজের ঘণ্টায় গতি গড়ে ৬০ কিলোমিটার৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে এই জাহাজ৷ বাংলাদেশেও এবার এটির দেখা মিলছে, নৌপথে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে৷

কক্সবাজারে যে হাইড্রোফয়েল জাহাজের দেখা মিলছে, সেটির প্রকৃত নাম রাকেতা৷ রাশিয়ায় তৈরি এই জাহাজ গড়ে ৬৪ থেকে ৬৬ জন আরোহী বহন করতে পারে৷ কক্সবাজারের নূনিয়ারছড়ার আইডব্লিউটি ঘাট থেকে প্রতিদিন এই জাহাজ ছেড়ে যাবে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্য

নারিকেল-জিঞ্জিরা খ্যাত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার পর্যটন ভ্রমণ করেন৷ দ্বীপটিতে পাঁচ প্রজাতির কাছিম, নানা প্রজাতির প্রবাল ছাড়াও ৬৮ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে৷

সবাই অনেক খুশি থাকলেও মাহি মুখটা ভার করে আছে,,

কি বেপার আমাদের কথার রানী ওমন চুপচাপ আছে কেনো হুম?? আরে আমরা সেন্টমার্টিন যাচ্ছি ভাবতে পারছিস তুই?? ওহ আমার তো অনেক মজা লাগছে, একটু পরেই সমুদ্রের বুকে ভেসে পরবো।

হুম (শুকনো মুখে বলল মাহি)

মেহরাব আর শুভ গাড়ি ঠিক করতে গিছিলো আর মেঘ সবাইকে নিয়ে হোটেলের সামনে দাড়িয়ে ছিলো,,, ওরা গাড়ি নিয়ে আসতেই সবাই গাড়িতে উঠে বসল, মেহরাব ডাইভার এর সাথে সামনে বসেছে, সকাল থেকে মাহির সাথে একটা কথাও বলেনি,,

একে একে সবাই জাহাজে উঠে গেলো,, জাহাজে অবশ্য আরো অনেক মানুষ ছিলো,, মেঘ আর মেঘলা এক পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো কথা বলছে আর শুভ আর ইপ্সা আরেক পাশে,, মেহরাব একপাশে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে আর মাহি একা একা কি করবে তাই বসে না থেকে হেঁটে হেঁটে সব কিছু দেখছে,,, কি সুন্দর করে জাহাজটা সমুদ্রের বুকে ভেসে চলছে,, মাহি জাহাজের এককোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখছে ,,, একটু পরে কোথা থেকে মেহরাব এসে ওর হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে এসে বলল।

চুপচাপ এক জায়গা বসে থাকতে পারিস না?? তুই কি এখনো ছোট যে তোকে হাত ধরে নিয়ে চলতে হবে (রেগে বলল মেহরাব)

আসলে ভাইয়া আমি তো ওই।

হ্যাঁ শুধু তো পারিস মুখে মুখে তর্ক করতে, (মেহরাব কথাগুলো জোরে বলছিলো ওর কথাশুনে আশেপাশের মানুষ ওদের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার নিজেদের কাজে মন দিলো)

মাহি ছলছল চোখে মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে আছে।

কি হয়েছে ভাইয়া তুই ওকে বকছিলি কেনো কি হয়েছে (মেঘলা)

হ্যাঁ মেহরাব ও ছোট মানুষ একটু আধটু ভুল হতেই পারে তাই বলে কি এভাবে বলতে হয় নাকি?? (মেঘ)

ছোট মানুষ যেহেতু তখন ওকে নিয়ে আসলি কেনো?? বাড়িতে রেখে আসা উচিত ছিলো, এখন এর হাত ধরে নিয়ে বেরাবে কে?(মেহরাব)

তোর কি হয়েছে বলতো ভাইয়া এমন করছিস কেনো?? আর মাহি তুই আমার সাথে থাকবি ওকে বিরক্ত করার দরকার নেই,,, এই বলে মেঘলা মাহিকে নিয়ে চলে গেলো।

একটু না হয় ভুল করেই ফেলেছি তাই বলে এভাবে আমায় কষ্ট দিবেন?? মানছি কালকে আপনাকে একটু বেশিই আঘাত দিয়ে ফেলেছি তাই বলে এমন করবেন আমার সাথে??(মনে মনে বলল মাহি)

অবশেষে ওরা সেন্টমার্টিন এসে পৌঁছালো

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ । এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে।

মেঘলা মাহির হাত ধরে ওকে নামিয়ে সামনের দিকে গেলো ওখানে আরো অনেকেই আছে সবাই অপরূপ সৌন্দর্য্যে উপভোগ করতে এসেছে,, ছোট ছোট পাথর আর ছচ্ছ কাঁচের মতো পানি সবাই অনেক মজা করছে কেউ কেউ আবার পাথরের উপর বসে ছবিও তুলছে।

মেঘলা ইপ্সা মাহি অলরেডি পানিতে নেমে গেছে, এই অপরুপ সৌন্দর্য দেখে মাহির মন ভালো হয়ে গেছে, তাই ও ওদের সাথে মজা করছে মেঘ আর শুভ দুজন দুজনের সিঙ্গেল পিক তুলছে কেননা তাদের বউরা আসলে আর পিক তুলা হবে না তাদের তখন শুধু বউদের পিকই তুলা লাগবে,,,
মেহরাব প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে চোখে সানগ্লাস দিয়ে আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

মাহি পানি ছিটাতে ছিটাতে মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে দেখলো,, মেহরাব হেঁটে হেঁটে সব কিছু দেখছে আর পাশে কয়েকটা মেয়ে চোখ দিয়ে মেহরাব কে গিলে খাচ্ছে।

কি মেয়েরে বাবা,,, এমন ভাবে কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকে নাকি,,, হ্যাংলা কোথাকার (রেগে বলল মাহি)

কিরে কাকে কি বলছিস??(মেঘলা)

কিছু না তুমি দাঁড়াও তো আমি আসছি (এই বলে মাহি চলে গেলো)

আরে কোথায় যাচ্ছিস?? যাহ চলে গেলো।

দেখ ছেলেটা কত ড্যাশিং নাহ??(১ম মেয়েটা মেহরাব কে উদ্দেশ্য করে বলল)

হমমম ওফফ কত হ্যান্ডসাম,, মনে হয় একাই এসেছে সিঙ্গেল দেখছিস না একা একা ঘুরছে (২য় মেয়ে)

তা তুই কি ভাবছিস ওকে সঙ্গ দিবি নাকি??

দিলে মন্দ হতো না,, ওনি আর আমি ইস ভাবতে ও কেমন রোমান্টিক ফিলিং আসছে।

এই যে আপুরা শুনুন (মাহি)

কি হয়েছে বলো।

আপনারা এতোক্ষণ ধরে যাকে নিয়ে কথা বলছেন ওনি আমার বর হয় একদম চোখ দিবেন না কিন্তু (মাহি)

চলবে,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩৪_পর্ব
.
দেখে তো মনে হচ্ছে আমাদের থেকেও বয়সে অনেক ছোট তা এই বয়সেই এমন?? যেই রাস্তায় সুন্দর ছেলে দেখলে আর ওমনি সে তোমার বর হয়ে গেলো চাপাবাজি করার আর জায়গা পাও না ফটো এখান থেকে যত্তসব।

আরে আমি সত্যি বলছি ওনি আমার বর হয় আপনারা আমার কথা কেনো বিশ্বাস করছেন না,, আসোলে ওনার সাথে আমার একটু ঝগড়া হয়েছে তো তাই ওনি এমন করছেন।

এ কেরে পাগল না মাথা খারাপ এই মেয়ে যাও তো কোথা থেকে যে আসে এরা।

মেয়েগুলো যখন মাহিকে ওভাবে বলছিলো তখনি মেহরাব সেখানে আসলো,,

কি হচ্ছে এখানে?? এতো চেঁচামেঁচি কিসের?? (মেহরাব)

দেখুন না ওনারা বিশ্বাসই করছে না যে আপনি আমার বর হন (মাহি)

এই মেয়ে বার বার একি কথা কেনো বলছো হুম?? আর এই যে হ্যান্ডসাম তুমি কি এই মেয়েকে চিনো?? সেই কখন থেকে এখানে এসে বলছে তুমি নাকি ওর বর।

মেহরাব মাহির দিকে তাকালো দেখলো মাহি হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে, মেহরাব মাহির দিক থেকে চোখ সরিয়ে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল।

কে বলেছে আমি ওর বর আর এই মেয়ে যা বলেছে আপনারা তা বিশ্বাস করেছেন??(মেহরাব)

দেখেছো আমি আগেই জানতাম তুমি ওর বর হতেই পারো না,, আর আমরা তো বিশ্বাসই করেনি।

মেহরাব এর কথাশুনে মাহির হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই চুপসে গেলো৷ ভীষণ কান্না পাচ্ছে মেহরাব ভাই এভাবে বলতে পারলো,, অনেক কষ্টে কান্না আটকে ধরা গলায় বলল মাহি।

আম সরি আমি ভুল বলেছিলাম আসোলে পাগল তো তাই, আর আপনাদের বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত (এই বলে মাহি চলে গেলো)

কোথা থেকে যে আসে এরা যত্তসব পাগল ছাগল এর দল।

হুমম ঠিকি বলেছেন কোথা থেকে যে আসেন আপনারা, দেখতে তো মেয়েদের মতো কিন্তু চাল চলন আর পোশাক দেখে মোটেও মেয়ে মনে হচ্ছে না,, একটু আগে যাকে পাগল ছাগল বললেন ভালো করে দেখে বলুন তো আসোলে পাগল ছাগল কে,, ওর পোশাক ও দেখুন আর নিজের পোশাক ও দেখুন,, একটা মেয়ে হয়ে নিজের থেকে বয়সে বড় ছেলেকে তুমি করে বলছেন, যেখানে আমার আপনাকে তুমি বলার ছিলো। আর আমি ওই মেয়ের বর স্বামী যেটাই বলেন না কেনো সেটাই আর ওর কথা আপনারা বিশ্বাস করলেই কি আর না করলেই কি আমার কিছু আসে যায় না,আমি ওর হ্যাজবেন্ড এটাই সত্যি, ও ঠিকি বলেছিলো, এর পর থেকে নিজেকে আর নিজের দৃষ্টি কে সংযত রাখার চেষ্টা করবেন (এই বলে মেহরাব চলে গেলো আর মেয়ে গুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো)

আরে মাহি ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?? তুই তো এখানকার কিছু ভালো করে চিনিসও না,, আরে দাঁড়া (মেঘলা)

ওর আবার কি হলো।??

নিশ্চয়ই ভাইয়া আবার কিছু বলেছে।

মাহি মেঘলার কথা না শুনে ধপাধপ পা ফেলে সামনে দিলে চলে গেলো চোখ মুছতে মুছতে।

কিরে তোরা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?? আর মাহি কোথায়?? (মেহরাব)

তোর সম্যসা টা কি বলতো ভাইয়া, তুই ঠিক করে রেখেছিস যে মেয়েটাকে ভালো থাকতে দিবি না,, আবার ওকে কি বলেছিস? ও ওদিকে চলে গেছে, জানি না কোথায় গেলো মেয়েটা কিছুই তো চেনে না।

আচ্ছা তোরা টেনশন করিস না,, আমি দেখছি তোরা ইনজয় কর, এই বলে মাহি যেদিকে গেছে মেহরাব ও সেদিকে চলে গেলো।

এদের নিয়ে যে কি করি এরা কখনোই শুধরাবে না…

তোমাকে কিছুই করতে হবে না যা করার এখন তোমার ভাই করবে, চলো আমরা যায় (,মেঘ)

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

কি ভাবে কি ওনি নিজেকে আমি কি ফেলনা নাকি আমার দাম নেই,, থাকবোই না আর ওনার সাথে এই পথ ধরে সোজা সামনে চলে যাবো তারপর হারিয়ে যাবো আর অনেক বছর পর বড় একজন হয়ে তারপর ফিরে আসবো (চোখ মুছতে মুছতে একা একা কথাগুলো বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে মাহি)

এই দাঁড়া ওখানেই সামনে কিন্তু কুকুর আছে আর তোকে কাঁমড়ে দিলে কিন্তু গুনে গুনে ১৪ টা ইনজেকশন নিতে হবে (পিছন থেকে বলল মেহরাব)

মেহরাব এর কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়ল মাহি, কেননা এই দুটো জিনিসে মাহি ভিষণ ভয় লাগে কুকুর আর ইনজেকশন এ,,।

আমি জানতাম একথা বললে মেডাম নিশ্চয়ই দাঁড়াবে ভিতুর ডিম একটা (মনে মনে বলল মেহরাব)

কিছুসময় দাঁড়িয়ে মাহি আবার হাঁটা শুরু করলো,,,, কুকুর থাকলে থাক আমি তবুও যাবো দরকার হলে আজকে কুকুরের কাঁমড়ে শহীদ হয়ে যাবো তবুও ওনার সাথে যাবো না।

কি হলো এটা কুকুরের কথা শুনেও মাহি দাঁড়ালোনা কেনো?? তারমানে মেডাম আজকে অনেক বেশি রেগে আছে।
মেহরাব দ্রুত পায়ে দৌড়ে মাহির দিকে আসলো মাহি মেহরাব কে দৌড়াতে দেখে ও নিজেও দৌড়ানো শুরু করলো কিন্তু মেহরাব এর সাথে কি ও পারে নাকি মেহরাব দৌড়ে এসে খপ করে মাহির হাত ধরে ফেলল।

এই ছাড়ুন আমায়, কে আপনি আমি আপনাকে চিনি না ছাড়ুন বলছি.

মাহি,, আচ্ছা সরি এবার চল আমার সাথে রাস্তার মধ্যে এমন করতে হয় না।

রাখুনতো আপনার সরি আপনার কাছে আমি যাবো না মানে যাবো না ছাড়ুন আমায়।

মেহরাব আর কোনো রাস্তা না পেয়ে মাহিকে কোলে তুলে নিলো তারপর উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করলো,, আর ওদিকে মাহিতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে, সাথে চিল্লানো তো আছেই।

হেপ্ল কিডন্যাপার বাঁচাও বাঁচাও কে আছো বাঁচাও (জোরে জোরে চেঁচায়ে লাগল মাহি)

মাহি কি করছিস কি এভাবে চিৎকার করছিস কেনো?? আরেকবার চিৎকার করলে কিন্তু কোল থেকে রাস্তায় ফেলে দেবো। (রেগে বলল মেহরাব)

আমি জানি আপনি ফেলবেন না,, তাই আজকে আর আমি ভয় পাবো না,, মনে মনে কথাগুলো বলে মাহি আবারো চিৎকার করতে লাগল, হেল্প হেল্প বলে…

মেহরাব মাহিকে নিয়ে কিছুদূর যেতেই ওদের সামনে কয়েকজন ছেলে আর কিছু বয়স্ক লোক আসলো।

আরে ব্যাস আমি তো এমনি চিৎকার করছিলাম এখন তো দেখছি সত্যি লোকজন চলে আসলো এখন কি হবে (মুখে হাত দিয়ে মনে মনে বলল মাহি)

হয়ে গেলো,, এই মেয়েটার জন্য আর কি কি যে ফেস করতে হবে কে জানে (বিরবির করে বলে মাহিকে কোল থেকে নিচে নামিয়ে দিলো)

আমাদের এলাকায় এসে দিনে দুপুরে মেয়ে চুরি করা হচ্ছে?? এই কে আছিস পুলিশকে ফোন দে…

কিহ পুলিশ??(ভয় পেয়ে বলল মাহি)

হুম পুশিল কেনো খুশি হসনি তুই?? এখন পুলিশ আসবে তারপর আমাকে নিয়ে চলে যাবে আর এরা তোকে নিয়ে (রেগে বলল মেহরাব)

কিন্তু আমিতো এমনি এমন করছিলাম এখন কি হবে??(ভয়ে ভয়ে বলল মাহি)

যা হওয়ার তাই হবে।

মা তুমি চিন্তা করো না, এই ছেলে (মেহরাব কে উদ্দেশ্য করে বলল) তোমায় কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না আমরা আছি তো,, কিরে শাকিল ফোন করলি??

বলে কি লোকটা আমার বর নাকি আমায় কোথাও নিতে পারবে না, এ আবার কেমন বিপদ আল্লাহ বাঁচাও (মনে মনে বলল মাহি)

মেহরাব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদের কান্ড দেখতে লাগল,, কেননা ও যতই এদের বলুক না কেনো যে ও আর মাহি বর বউ তবুও ওনারা বিশ্বাস করবে না, কেননা ওদের কাছে কোনো প্রামাণ নেই আর মাহির গায়েও বিবাহিতর কোনো চিন্হ নেই শুধু মাএ আংটি ছাড়া কিন্তু শুধু মাএ আংটি দিয়ে তো আর বিশ্বাস করানো যাবে না আর মাহি যে হারে কিডন্যাপার বলে চিৎকার করেছে এর পর তো বিশ্বাস এর কোনো প্রশ্নই আসে না।

আর মাহি যদিও বলে যে আমি ওর বর তবুও আমরা ফেঁসে যাবো কেননা ওনারা বলবে যদি বর বউই হয় তাহলে এমন চিৎকার করে মানুষকে হয়রানি করার মানে কি । এখন আমরা যাই বলি না কেনো তাতেই ফেঁসে যাবো।

কি যে একটা ঝামেলা,, কি যে করবো এখন।

তখনি কোথা থেকে একটা ছেলে এসে মেহরাব এর কলার টেনে ধরে বলল,,,,,,

চলবে,,,,,?