ভালোবাসি বুঝে নাও-২ পর্ব-৩৫+৩৬+৩৭

0
361

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩৫_পর্ব
.
তখনি কোথা থেকে একটা ছেলে এসে মেহরাব এর কলার টেনে ধরে বলল কিরে সুন্দরী মেয়ে দেখেছিস আর ওমনি তুলে নিয়ে যাচ্ছিস?? জানের ভয় নেই নাকি।

মেহরাব চোখ গরম করে ছেলেটার দিকে তাকাতেই ছেলেটা ওর কলার ছেড়ে দিলো।

এখন আমরা কি করবো,এদের হাবভাব দেখে তো মনে হচ্ছে একটু পরেই পুলিশ চলে আসবে (মাহি ফিসফিস করে মেহরাব এর কানে বলল)

ছোটো বেলায় স্কুলে দৌড় প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলি?? (মেহরাব)

কিহ?? আমি কি জিগাস করলাম আর আপনি কি বলছেন, মাথাটা কি একেবারেই গেছে??

বেশি কথা না বলে আমার প্রশ্নের উত্তর দে,, দিয়েছিলি নাম?

হুম।

ফাস্ট হয়েছিলি নাকি ফুটো।

এসব কি হচ্ছে মেহরাব ভাই আপনি কোন সময়ে কি ভুলভাল প্রশ্ন করেন এদিকে আমার ভয়ে জান বের হওয়া হওয়া ভাব আর আপনি কি সব ভুলভাল প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন।

আবারো প্রমাণিত হলো যে তোর মাথায় গোবর ছাড়া আর কিছুই নেই ,এতো বকবক না করে , যা প্রশ্ন করছি তার ঠিকঠাক উত্তর দে যলদি।

সেকেন্ড হয়েছিলাম (মুখ গোমরা করে বলল মাহি)

আগেই জানতাম তুই ফাস্ট হওয়ার মেয়েই না,,কি আর করা যাবে যা আছে এতেই চলবে,, সেই ছোট বেলার খেলাটা এখন আবার খেলতে হবে বুঝেছিস??

মানে???

মেহরাব মাহির কথার জবাব না দিয়ে যে ছেলেটা ওর কলার ধরেছিলো সেই ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

মেয়ে দেখলেই হিরো হতে মন চাই তাই না?? আর ও আমার বউ বুঝলি,,, তোকে কিছু বলতাম না কিন্তু তুই আমার এই মেহরাব এর কলার ধরেছিস তোকে তো ক্ষমা করা যায় না,, এই বলে মেহরাব ছেলেটার নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে ছেলেটাকে বাকি সবার উপর ফেলে দিয়ে মাহির হাত ধরে জোরে সরে দৌড় দিলো।
ঘটনাটা এতো তারাতারি হয়ে গেলো যে ওখানে থাকা লোকজন কিছু বুঝতেই পারলো না,,, যখন বুঝতে পারলো তখন সবাই ছেলেটাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল কেননা ওর নাক দিয়ে রক্ত বার হচ্ছে , আর ততক্ষণে মাহি আর মেহরাব পাগার পার।

এক দৌড়ে অনেক দূর এসে পড়ল তারপর থামল, মেহরাব কমরে হাত রেখে হাঁফাচ্ছে আর মাহি তো অলরেডি রাস্তায় বসে পরেছে।

এবার বুঝলাম আপনি তখন আমায় কেনো দৌড় প্রতিযোগিতার কথা জিগাস করলেন (হাঁফাতে হাঁফাতে বলল মাহি)

গাধীরা সবসময় পরেই বোঝে।

মাহি কিছু বলতে যাবে তখনি মেঘ সহ বাকিরা আসলো, আসোলে মাহি মেহরাব এর দেড়ি দেখে ওরা ওদেরকে খুঁজতে এদিকেই আসছিলো।

কিরে তোদের কি হয়েছে?? এভাবে হাঁফাচ্ছিস কেনো আর মাহির কি হয়েছে ও এভাবে রাস্তায় বসে কোনো??

কি হয়নি তাই বল,,, তারপর মেহরাব সব কিছু মেঘদের বলল সব শুনে ওরা সবাই তো হাসা শুরু করে দিয়েছে।

হাসো হাসো হাসবাই তো সব গুলাই যে একি কোয়ালিটির (মেহরাব)

মেঘ কিছু বলতে যাবে তখনি পিছন থেকে সেই লোকেরা কিছু বলতে বলতে এদিকেই আসছে ।

ওই ছেলেটাকে একদম ছাড়বো না, কত্ত বড় সাহস আমাদের এলাকায় এসে আমাদেরই ছেলের উপর হাত তুলে,, তাও আবার মেরে নাকও ফাটিয়ে দিয়েছে একে তো কোনো মতে ছাড়া যাবে না।

এই মেহরাব পালা পিছনে দ্যাখ বাহিনীরা এদিকেই আসছে, ধরতে পারলে তোদের তো আলু ভর্তা করবেই সাথে আমাদের ও (মেঘ)

তারপর মেহরাব মাহির,, মেঘ মেঘলার শুভ ইপ্সার হাত শক্ত করে ধরে দৌড় লাগালো,, এক দৌড়ে সমুদ্রের পাড়ে চলে আসলো তারপর জাহাজে উঠে বসল।

ওরে আমি শেষ আর দৌড়াতে পারবো না,, (হাঁফাতে হাঁফাতে বলল মাহি)

কেনো?? আমার মন চাইছে তোকে ওই লোকগুলোর হাতে তুলে দিয়ে আসি সব তোর দোষ তোর জন্যই তো এতো সব কান্ড হলো (মেহরাব)

আহ ভাইয়া চুপ করবি তুই,,, তবে যায় বলিস না কেনো দিনটা কিন্তু ভালোই গেলো,, অর্ধেক দিন সমুদ্রের বুকে আর বাকিটা দৌড়ানী খেয়ে কি বলো। (মেঘলা)

ঠিক বলেছো আমার তো হেব্বি লেগেছে এই দিনটার কথা আজীবন মনে রাখব (ইপ্সা)

তবে যাই বলো না কেনো, এসব কিন্তু আমাদের মাহির জন্যই সম্ভব হয়েছে ও না থাকলে আমরা এই এতো মজা করতে পারতাম না (মেঘ)

হুম আরো বল বলে বলে একে একদম মাথায় তুলে নাচ পরে বুঝবি ঠেলা (মেহরাব)

সব সময় আমায় হিংসা করে,,আমার, ভালো কিছু দেখতেই পারে না হিংসুটে একটা(মাহি)

অবশেষে বিকেলের দিকে ওরা হোটেলে ফিরে আসলো।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আকাশে থালার মতো বড়ো একটা চাঁদ উঠেছে, আর তার চারপাশে গুটিগুটি তারার মেলা,, দূর থেকে মাঝে মাঝে সমুদ্রের গর্জন শুনা যাচ্ছে,, ব্যালকণিতে দুজন কপোত-কপোতী না না কপোত-কপোতী বলা ভুল হবে, দুজন প্রেমিক প্রেমিকা বসে তাদের প্রেম আলাপ করছে। মেহরাব ওর ব্যালকণি থেকে মাহির ব্যালকণিতে আসছে,, ফ্লোরে মেহরাব বসে আছে আর মাহি ওর কোলের মধ্যে বসে হাতের উপর মাথা দিয়ে আছে যেনো ছোট একটা পাখী তার নীড়ে আরাম করে চিন্তাহীন ভাবে বসে আছে।

কি হলো আমাদের কথার রাণী আজকে চুপ করে আছে কেনো হুমম(মাহির চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল মেহরাব)

উমম এভাবেই বিলি কেটে দেন ভালো লাগছে,, শুনুন না আমি ভেবেছি আজকে যা যা হলো সেই সবকিছু আমি আমার বেবীদের বলব।

কিহ?? বেবী আসলো কই থেকে??

আরে এখন নেই,তো কি হয়েছে পরে তো হবে তখন বলবো।

ওরে ব্যাস তুই তো দেখি সেই ফাস্ট, বিয়ে নাই হতে বেবী??

কে বলল বিয়ে হয়নি বিয়ে তো হয়েছে।

তাহলে চল,, আজকেই বেবী দিয়ে দিই, কি বলিস তারপর এখানে আরো কয়েক মাস থেকে তারপর বাড়ি ফিরে আব্বু আম্মু কে বলল যে তারা দাদু দীদুন হতে চলছে।

ধ্যাত আমি কি বলি আর আপনি কি মিন করেন (লজ্জা পেয়ে বলল মাহি)

এই যে রোমিও জুলিয়েট হানিমুন টা আমাদের তোমাদের নয় বুঝলে,, অনেক প্রেম করেছো এখন চলো (মেঘ)

এই চলে আসছেন কাবাব মে হাড্ডি,,,,।

কিহ?? এখন আমরা হাড্ডি হয়ে গেলাম?? যখন কিছু বলতে পারছিলি না তখন কিন্তু এই হাড্ডি গুলোই আপনার কাজে এসেছিলো (শুভ)

এতো কিছু করার পর শেষে কিনা হাড্ডি হলাম,, হায়! এ জীবন রেখে কি লাভ আমি কালকেই বনবাসে চলে যাবো (মেঘ)

অনেক হয়েছে ড্রামাবাজ এর দল,, এখন বল এতো রাতে কই যাবো??(মেহরাব)

আরে ছাদে চল ওখানে হোলেটের অন্য সবাই আছে অনেক মজা হবে,, আর সাথে বারবিকিউ তো আছেই,,,মেঘলা আর ইপ্সা অলরেডি চলে গিয়েছে আমরাও যাচ্ছি আপনি আপনার বাচ্চার মা কে নিয়ে আসুন (এই বলে মেঘ আর শুভ হাসতে হাসতে চলে গেলো)

মেঘ ভাইয়া কি বলে গেল?? তারমানে ওনি সব শুনেছে, ছি! কি লজ্জা সব আপনার দোষ, এখন আমি ওনাদের সামনে যাবো কীভাবে।

হয়েছে এতো লজ্জা পেতে হবে না,, ওরা ওমনি শুধু সুযোগ খোঁজে কীভাবে আমায় হেনস্তা করা যায়, সব কটা ফাজিল,।

হুম আর আপনি ওদের লিডার (বিরবির করে বলল মাহি)

এখানে সং এর মতো দাঁড়িয়ে না থেকে চল,, নয়ত আমি চলে গেলাম তখন একা একা আসবি।

এই না না আমি আসছি (একটু আগে কত রোমান্টিক ছিলো, আর এখন আবার সেই লম্বার উপর খাম্বা,, বদ লোক একটা)

,,,,ছাদে,,,,

মাহি আর মেহরাব ছাদে গিয়ে দেখলো ওখানে সবাই আছে,

আরে ব্যাস এতো দেখী এলাহী কান্ড।

পুরো ছাঁদে বসার জন্য ছোট্ট একটা টেবিল আর একেক টেবিলে তিনটা করে চেয়ার,, টেবিলের উপরে আবার ছাতা দেওয়া আছে।
পাশেই পজেক্টরে মুভি চলছে, আর এক কোণে বারবিকিউ হচ্ছে।
এগুলো সব হোটেল থেকেই করা হয়েছে পর্যটকদের দূষ্টি আর্কষন করার জন্য।

ওই দ্যাখো তোমার ভাই আর তার বাচ্চার মা এসে গেছে (মেঘ)

মানে??(মেঘলা)

ওই চুপ করবি আর মেঘলা তুই ওর কথা শুনছিস কেনো?? যা ওদিকে যাহ, আর একে তো আমি দেখছি (মেহরাব)

তারপর মেঘলা মাহি আর ইপ্সা অন্যদিকে গেলো,,, দেখতে গেলো বারবিকিউ কত দূর তখনি মাহি কারো সাথে ধাক্কা খেলো মাহি মাথা তুলে সামনে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল

আপনি৷৷,,,,,,,???

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩৬_পর্ব
.

আপনি???

কিরে তুই কাকে আপনি বলছিস,, সামনের লোকটাকে কি তুই চিনিস নাকি??(মেঘলা)

আরে কথা বলো না বসে পরো নইলে বিপদে পরবো সবাই এই বলে,
মাহি মেঘলাকে নিয়ে টপ করে বসে পড়ল আর সামনে থাকা লোকটা এদিক ওদিক দেখে আবার চলে গেলো।

কি হলো এভাবে নিচে বসালি কেনো??

আরে ওই যে নাকে ব্যান্ডেজ করা লোকটাকে দেখলে না,, ওটাই তো সেই লোক তোমার ভাই তো ওনারি নাক ফাঁটিয়ে দিয়েছে,,, কিন্তু ওনি এখানে কি করছে??

কিহ?? এই সেই লোক?? যদি ভাইয়াকে দেখতে পাই তাহলে তো সম্যসা

সব দোষ তোমার ভাইয়ের কি দরকার ছিলো লোকটার নাক ফাঁটানোর যত্তসব, সব খানে হিরোগিরি দেখাতে হবে।

হুম দেখতে হবে না ভাই টা কার (ভাব নিয়ে বলল মেঘলা)

যেমন ভাই তার তেমন বোন, দুটোই ছাগল।

তারপর মাহি চুপিচুপি ওখান থেকে মেহরাব এর কাছে গেলো,,মেহরাব মেঘ আর শুভ সাথে কথা বলছিলো তখনি মাহি গিয়ে বলল।

এই শুনেন না চলেন না রুমে যায়। (মাহির)

মাহির কথা শুনে মেহরাব মেঘ শুভ তিন জনই চোখ বড় করে একসাথে বলল।

কিহ??

মাহি থতমত খেয়ে বলল,,,ম,,মানে বলছিলাম কি ওই লোকটা যাকে মেরে নাক ফাটিয়েছেন সে এখানে তাই বলছি চলেন সবাই এখন থেকে চলে যায় নয়ত সম্যসা হবে (হাঁফ ছেঁড়ে বলল)

ওহহ আচ্ছা (তিন জন একসাথে)

তারপর ওরা সবাই যে যার রুমে চলে গেলো,, চারদিন কক্সবাজার থেকে ওরা সবাই চলে গেলো, আবার যে যার মতো কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলো,, মেঘলা শশুর বাড়ি মেহরাব তার অফিস আর মাহি নিজের পড়াশুনা,, সময় বয়ে যাচ্ছে নিজের মতো করে দেখতে দেখতে অনেকটা দিন কেটে গেলো, আর মাস তিনেক পর মাহির বোর্ড পরিক্ষা তাই নিজের পড়া নিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত,,
কিন্তু এর মাঝে মেহরাব খেয়াল করল মাহি আর আগের মতো নেই কেমন যেনো বদলে গেছে আগের মতো আর বাচ্চামো করে না,, সব সময় কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে, আগে গাড়িতে গেলে রাস্তায় ফুচকা দেখলে কেমন লাফালাফি করত কিন্তু এখন তেমন টা করে না এই মাহিকে কেমন যেনো অচেনা লাগে মেহরাব এর কাছে।

কিরে ওমন চুপ করে আছিস কেনো??

তো কি করবো বকবক করবো নাকি আর কিছুদিন পরে আমার পরিক্ষা অনেক পড়া লাগবে, কথা বলার সময় নেই।

মাহির কথায় মেহরাব চুপ করে গেলো, তার কিছুক্ষণ পর মেহরাব দেখতে পেলো রাস্তার এক পাশে ফুচকার দোকান মেহরাব গাড়ি থামিয়ে মাহিকে বলল।

ফুচকা খাবি এনে দিই??

মাহি বই থেকে মুখ তুলে বলল,, ওফ মেহরাব ভাই আপনিও না আমি কি বাচ্চা নাকি যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ফুচকা খাবো আর আমি ওসব রাস্তার দাঁড়িয়ে খাবার খেতে পারবো না আমার অস্ততি হয়।

মাহির কথাশুনে মেহরাব যেনো চমকে উঠল, এ কোন মাহি, যাকে বকে ও থামানো যেতো না হাজার বার মানা করলেও ফুচকা খাওয়ার জন্য লাফালাফি করত সেই কিনা আজকে বলছে যে ও ফুচকা খাবে না,, মেহরাব এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

কলেজে এসে মাহি গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলো,, মেহরাব তো মাহির কান্ডে অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে হঠাৎ করে কি এমন হলো যে আমার সেই চেনা মাহি এতোটা বদলে গেলো। একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়ে মেহরাব গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসে চলে গেলো।

অফিসে গিয়ে মেহরাব কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না, মাহির এভাবে বদলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না, হঠাৎ করে কি এমন হলো যে মাহি এতোটা বদলে গেলো সেই বাচ্চামো গুলো কোথায় গেলো হঠাৎ করে ওর মধ্যে এতো ম্যাচিওর ভাব আসলো কিভাবে সব কিছু গোলমেলে লাগছে, ওনা কারনেই অফিস স্টাপদের উপর চেঁচামেচি করলো মেহরাব।

দুপুরের দিকে মেহরাব ভাবলো মাহিকে বাড়িতে পৌঁছে দিবে আর মাহিকে জিগাস করবে যে কি এমন হলো যে মাহি এতোটা বদলে গেলো, এই ভেবে মেহরাব গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল কিন্তু মাহির কলেজের সামনে গিয়ে দেখলো মাহি রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে এতে মেহরাব আরো বেশি অবাক হলো কেননা মাহি হেঁটে আসবে তবুও একা একা রিকশায় যায় না ওর নাকি ভয় লাগে তাহলে আজকে কীভাবে গেলো। মেহরাব গাড়ির স্টিয়ারিং এর উপর হাত দিয়ে একটা বাড়ি মেরে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার অফিসের দিকে চলে গেলো।

আসসালামু আলাইকুম বিয়ানসাব (নেহাল)

ভার্সিটি শেষে মীরা হেঁটে যাচ্ছিলো তখনি পিছন থেকে নেহাল সালাম দিলো।

ওয়ালাইকুম সালাম,,,

বাবা আজকে এতো চুপচাপ বেপার কি প্রমে ব্যার্থ হয়েছো নাকি??

কিঞ্চিৎ হাসলো মীরা, তারপর বলল কেনো প্রেমে ব্যার্থ না হলে বুঝি চুপচাপ থাকা য়ায় না??

যায় তবে তোমার ক্ষেত্রে তো আলাদা যে সব সময় আমার সাথে হট মেজাজে কথা বলত সে আজকে হঠাৎ করেই এতো কুল হয়ে গেলো এটা তো ভাব্বার বিষয় তাই না?? নাকি আজকেও আবার আমায় জব্দ করার প্লান করেছো??

আমাকে দেখে কি আপনার এমন মনে হয়??

ভালোও মনে হয় না আবার,, তোমার সাথে কথা বলতেও ভয় লাগে কি যানি কখন আবার কি করে বসো।

হুমম ভয় লাগা ভালো এখন জলদি আপনার ওয়ালেটটা আমায় দিন।

কেনো???

আরে বান্ধবীদের সাথে রেস্টুরেন্টে যাবো আর আমরা যা যা খাবো সেই সবকিছুর বিল আপনি পে করবেন।

পাগল না মাথা খারাপ আমার যে আমি তোমার কথা শুনবো।

শুনবেন না তো???

কখনোই না।

ওকে তাহলে মার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।। এই বলে মীরা চেঁচাতে লাগলো,, হেল্প বাঁচাও কে আছে, এই ছেলে রাস্তার মাঝে এভাবে একটা মেয়েকে উত্যক্ত করতে লজ্জা করে নাহ??

আরে তুমি এসব কি করছো এভাবে চেঁচাচ্ছো কেনো?? লোকে কি বলবে আর আমি আবার কখন তোমায় উত্যক্ত করলাম??

সেটা তো আমি আর আপনি জানি লোকে তো আর জানে না, এখন জলদি করে যা বলছি তাই করেন নয়ত,, পাবলিক দিয়ে এমন কেলানো কেলাবো না একমাস বেডে পড়ে থাকতে হবে।

এই তুমি কি মেয়ে নাকি অন্য কিছু,,,

যলদি করুন সময় নেই আমার।

দিচ্ছি,, এই বলে নেহাল ওর ওয়ালেট টা বার করে মীরা কাছে দিলো,, মীরা খপ করে ওয়ালেটটা নিয়ে ওয়ালেটের ভিতর যা টাকা ছিলো সব নিয়ে নেহালকে খালি ওয়ালেট টা ফেরত দিয়ে, চলে যেতে গিয়ে আরবার ফিরে এসে বলল।

আমার প্রতি যে ভয় টা আছে সেটা সব সময় রাখবেন। এই বলে মীরা চলে গেলো।

যাহ সব নিয়ে গেলো এতো দিনে দুপুরে ডাকাতি করল, সালা এই জন্যই মেয়ে লোককে বিশ্বাস করতে হয় নাহ।

ছেলেটাকে এতো জ্বালাস কেনো বলত?(তন্নি)

কিছু কিছু জ্বালানোর মধ্যে অন্য রকম একটা শান্তি পাওয়া যায় সেটা তুই বুঝবি না, (মীরা)

,,,,রাতে,,,,,,,

সামনে মাহির পরিক্ষা তাই মাহি যথারীতি মেহেরাব এর কাছে পড়তে এসেছে সেই কখন থেকে মেহরাব এর রুমে বসে আছে কিন্তু মেহরাব এর কোনো খোঁজ নেই।

হঠাৎ করেই কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে মেহরাব এসে সোজা মাহিকে বিছানা থেকে তুলে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল।

কি হয়েছে তোর এমন করছিস কেনো?? কি করেছি আমি?? হঠাৎ করে এতোটা চেঞ্জ হওয়ার মানে কি??

চলবে,,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩৭_পর্ব
.
কি হয়েছে তোর এমন করছিস কেনো?? কি করেছি আমি?? হঠাৎ করে এতোটা চেঞ্জ হওয়ার মানে কি??

মেহরাব এর এহেন কান্ডে প্রথমে মাহি তো ভয়ই পেয়ে গিছিলো,, তারপর তোতলাতে তোতলাতে বলল।

ব,,বলছি আ,,আগে আপনি একটু দূরে যান।

কেনো এভাবে বললে সম্যসা কি??

আমার এভাবে বলতে সম্যসা হচ্ছে আমি ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছি না সরুন প্লিজ।

মাহির কথা শুনে মেহরাব মাহির থেকে একটু দূরে গিয়ে বলল।

এবার বল কি হয়েছে??

মাহি যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে৷ মাথা তুলো মেহরাব এর দিকে তাকালো,,, একদিনেই এই অবস্থা এলোমেলো চুল গলার টাইটা ঢিলে হয়ে আছে,, গায়ে থাকা শার্টটা ঘামে একদম ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে, মুখটাও অনেক শুকনা মনে হয় দুপুরে খাওয়া হয়নি, এই ছেলেটাও না। এমন কেনো এতো কেনো ভালোবাসে আমায় আমি যদি কখনো না থাকি তাহলে এই পাগলটার কি যে হবে।

কী হলো এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে বল?

মেহরাব এর কথায় মাহির হুশ আসলো রেগে কটমট চোখে বলল।

কি বলবো হ্যাঁ কি বলবো?? আপনার সম্যসা টা কি একবার বলেন আমি এতো ছোট কেনো বড় হয়েও ছোটোর মতো কেনো করি, আবার যখন বড় হওয়ার চেষ্টা করি আপনার কথামত বাচ্চামো স্বভাব ছেড়ে ম্যাচিওর হওয়ার চেষ্টা করি আপনি তখন বলেন আমি কেনো এমন ব্যবহার করছি,,,আরে ভাই আপনার তো দেখছি আমি যেদিকে যায় সেদিকেই সম্যসা,,ছোট হলে বলেন বড় হতে বড় হলে বলেন ছোট হতে।

মাহির কথা শুনে মেহরাব হা করে মাহির দিকে তাকিয়ে ছিলো তার কিছুক্ষণ পর বলল।

তার মানে তুই আমার কথায় ম্যাচিওর হওয়ার চেষ্টা করছিলি?? আমি যে তোকে বলেছিলাম একটু বড় হতে সিরিয়াস হতে তাই তুই এমন করছিলি??

তাই নয় কি আবার জিগাস করছে।

মেহরাব থপ করে বিছানায় বসে বলল।আমি মাফ ও চাই দয়াও চাই বোনরে তুই যেমন আছিস তেমনি থাক তোর কোনো বড় টরো হওয়া লাগবে না,,, এখন কেনো তুই আজীবনই এমনি থাক,, একদিন বড় হয়েই আমার এই অবস্থা না জানি আর কদিন এমন থাকলে আমার কি হতো (শেষের কথাগুলি ফিসফিস করে বলল)

সত্যি তো?? আর কখনো আমায় আমার স্বভাব বদলাতে বলবেন না তো?? আর বলবেন নাতো যে বড় হ বড় হ।

পাগল না মাথা খারাপ,,আর কখনো বলবো না আমার ঘাট হয়েছে।

তাহলে ফুচকা খাওয়ান (মেহরাব এর পাশে বসে বলল)

তুই না ফুচকা খাসনা সকালেই তো বললি।

ধূর ওটা তো আপনাকে দেখানোর জন্য বলেছিলাম,, তখন ফুচকা দেখে তো আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেছিলো মুখের মধ্যে পানি জমে গিছিলো, মনে হচ্ছিলো পুরো দোকান টাই খেয়ে ফেলি।

ওরে ব্যাস তাই নাকি??

তাই নয়ত কি এখন চলেন তো ফুচকা খাবো যলাদি ফ্রেশ হয়ে আসুন।

ঘড়ি দেখেছিস?? রাত ৮ টার বেশি বেজে গেছে এখন দোকান কই পাবো??

এই আপনি জানেন না??

কি জানবো??

আরে দোকানদার রাও জানে যে এই জোছনা রাতে প্রেমিক প্রেমিকা বর বউরা জোছনা বিলাস করতে বেরোই তখন তাদের ফুচকা খেতে মন চাই, এই জন্যই তো দোকানদাররা রাত ১০ টা ১১টা পযন্ত দোকান খুলে বসে থাকে।

তাই নাকি?? এতো কিছু জানিস তুই?? বাবা

হুম?? বুঝতে হয় মাথায় বুদ্ধি থাকা লাগে। (ভাব নিয়ে বলল মাহি)

আচ্ছা ঠিক আছে তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,, আজকে তো আর পড়া হলো না কিন্তু সকাল থেকে পুরো দমে পড়ায় লেগে পড়তে হবে কিন্তু।

সে দেখা যাবে আগে আপনি যান তো,, রাত বাড়ছে তো নাকি।

এরপর মেহরাব ফ্রেশ হতে চলে গেলো,, তারপর ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে বাড়ির সবাইকে বলে বেরিয়ে গেলো,,, রাস্তা ধরে দুজন হেঁটে চলেছে, এখনো রাস্তায় মানুষ আছে কেননা শহরে ৮,,,টা ৯ টা আবার রাত হলো নাকি, মাহি মেহরাব এর বা হাতটা জরায়ে ধরে হেঁটে চলেছে, হাঁটতে হাঁটতে প্রায় অনেকটা দূরে চলে এসেছে।

কীরে তোর ফুচকাওয়ালা কই?? কাওকেই তো দেখছি না,, আর বেশি দূর গেলে আসতে আসতে কিন্তু রাত হয়ে যাবে।

আরে আর একটু চলুন দেখি পাই কি না যদি না পাই তাহলে চলে আসবো।

ওরা সামনে আর একটু এগিয়ে গেলো, তারপর দেখলো রাস্তার পাশে একজন ফুচকাওয়ালা মাহি মেহরাব এর সাথে ওখানে গেলো,

মামা ঝাল ঝাল করে এক প্লেট ফুচকা দেন তো

মোটেও না, এখন ঝাল ঝাল করে ফুচকা খাবে আর পরে চেঁচিয়ে সারা পাড়া মাথায় তুলবে,, মামা একটুও ঝাল দিবেন না।

শুনেন খাবো আমি তো আমিই বুঝে নেবো,, মামা আপনি বেশি করে ঝাল দেন।

মাহির কথামত ফুচকাওয়ালা বেশি করে ঝাল দিয়ে একদম ঝাল ঝাল ফুচকা দিলো, মাহি তো গপাগপ খেয়েই চলেছে,, ঝালে চোখ দিয়ে পানি পরছে ঠোঁট আর নাক লাল হয়ে গেছে তবুও মেহরাব কে কিছু বলছে না।

ফুচকা খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে ওরা বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো।

আগেই বলেছিলাম বেশি ঝাল না খেতে এখন দ্যাখ কেমন লাগে,,

মাহি কোনো কথা বলছে না শুধু চুপচাপ হেঁটে চলেছে।

আচ্ছা আর চুপ থাকতে হবে না, আমি দেখছি, এই বলে মাহিকে নিয়ে একটা দোকানে গেলো তারপর ঠান্ডা ঠান্ডা একটা আইসক্রিম নিয়ে মাহিকে দিলো,, মাহি খুশি হয়ে মেহরাব এর হাত ধরে আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটতে লাগল।

আপনি বুঝলে কীভাবে যে আমার এখনো ঝাল লাগছিলো।

যাকে ভালোবাসি, তার সবটাই জানতে হয়, আর আমি তোকে সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমি তোকে তোর থেকেও বেশি চিনি বুঝলি গাধী।

ওরা দুজন হেঁটে যাচ্ছিলো পাশেই একটা গাছের নিচে তিনটা ছেলে বসে মাতলামি করছিলো মাহি আর মেহরাব কে দেখে পাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো,,,

এই যে হিরো, এই জিনিস কে (মাহি কে উদ্দেশ্য করে বলল) একা একে সামলাতে পারবে না,, আমাদের কে দিয়ে যাও, বেশি না তিন জনের তিন ঘন্টা হলেই হয়ে যাবে (এটা বলে একটা বিচ্ছি হাসি দিলো)

মেহরাব চোখ লাল করে হাত মুঠ করে ছেলেগুলোর দিকে তাকালো।

মেহরাব ভাই এরা ভালো ছেলে নয় চলেন আমরা চলে যায় এখান থেকে (মেহরাব এর হাত শক্ত করে ধরে বলল মাহি)

তুই এক কাজ কর পিছন ঘুরে আইসক্রিম খা,, মনে রাখবি আইসক্রিম শেষ না হওয়া অবধি পিছনে তাকাবি না ওকে?

কিন্তু মেহরাব ভাই

চুপ কোনো কথা নয় যা বলছি তাই কর। মাহি মেহরাব এর কথা অনুযায়ী পিছন ঘুরে আইসক্রিম খেতে লাগল এদিকে মেহরাব সোজা গিয়ে যে ছেলেটা কথাগুলো বলেছিলো তার মুখ বরাবর একটা ঘুষি মারল। ছেলেটা ছিটকে দূরে গিয়ে পরলো আর মুখ দিয়ে রক্ত বার হতে লাগল।

এই তুই ওকে মারলি কেনো আজকে তো তোকে এখানে জিন্দা কবর দেবো আর তোর সাথে আাসা ওইটাকে নিয়ে পুরো রাত মজা করবো ,, এই বলে ছেলেটা একটা ছুড়ি বার করল।

দেখি কে কাকে কবর দেয়৷, আর একটা মেয়ের পেট থেকে জন্ম নিয়ে সেই মেয়ে জাতিকেই সম্মান করিস না,, আজ তোদের বোঝাবো কীভাবে কাকে সম্মান করতে হয়।

এই বলে দুমদাম সব কটাকে পেটাতে লাগল, মেহরাব যখন একটা ছেলেকে মারছিলো তখনি আরেকজন পিছন থেকে এসে মেহরাব এর হাতে ছুড়ি মেরে দিলো আর সঙ্গে সঙ্গে হাত দিয়ে রক্ত পরতে লাগল।

আহ,,, মেহরাব এর আর্তনাত শুনে মাহি পিছনে তাকিয়ে ফেলল।

একি রক্ত?? মেহরাব ভাই আপনার হাত।

নাহ মাহি একদম এখানে আসবি না,, যেভাবে ছিলি ওভাবেই থাক পিছনে ফিরে তাকা।

না মেহরাব ভাই আপনার হাত দিয়ে অনেক রক্ত পরছে আমি আসছি। এই বলে মাহি যেই মেহরাব এর দিকে আসতে যাবে তখনি পিছন থেকে একটা ছেলে লাঠি নিয়ে মেহরাব এর দিকে আসলো।

মেহরাব ভাই,,, চিৎকার করে বলল মাহি।

চলবে,,,,,??