ভালোবাসি বুঝে নাও ৩ পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
365

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_১৬
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
গাড়ি তার নিজ গতিতে চলছে জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে বাইরের ফেলে আসা গাছ পালা আর ঘর বাড়ি দেখতে ব্যাস্ত আমি। মাঝে মাঝে বাতাসে খুলে রাখা চুল গুলো মুখের উপর চলে আসায় বিরক্তিতে কানের পাশে গুজে দিচ্ছি। আমার পাশেই মেঘলা আপু বসে সবার সাথে গল্পে মেতে আছে। আর সবথেকে পিছনের সিটে মেহরাব ভাই চারহাতপা ছড়িয়ে দিয়ে মাথার নিচে ব্যাগ রেখে কানে হেডফোন গালিয়ে গান শুনছে।

সবাই সবার মতো সময়টাকে উপভোগ করছে। কিন্তু আমি মোটেও আনন্দ করতে পারছি নাহ। কেননা তখন তারাহুরো তে আমি কিছুই খেতে পারিনি এই জন্য এখন পেটের মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেছে। যেহেতু চলন্ত গাড়ি তাই কাউকে খাওয়ার কথা বলতেও পারবো নাহ তাই চুপ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।

জানিনা কতটা সময় ঘুমিয়েছি তবে ঘুম ভেঙ্গে দেখি গাড়ি একজায়গা দাঁড়িয়ে আছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি আমরা ঘাটে পৌঁছে গেছি। তবে জ্যাম থাকায় ফেরিতে উঠতে পারছি নাহ। পাশে মেঘলা আপুও নেই বাসের প্রায় সবাই নেমে গেছে হয়ত বাইরে হাঁটাহাটি করছে। কেননা এই গরমে বাসের মধ্যে বসে থাকলে আরো বেশি গরম লাগে। ছেলেরা একজন ও নেই ও হ্যাঁ আমাদের সাথে মেহরাব ভাই এর কয়েকজন বন্ধু ও এসেছে ওনাদের বাড়ি ঢাকাতে বিধায় গ্রাম দেখার অনেক ইচ্ছে তাই যাচ্ছে। তবে আমি আর নামলাম নাহ কেননা ক্ষিদের চোটে হাঁটার শক্তি নেই। একটু উঁচু হয়ে সামনে বসা আম্মু কে ডাকতে যাবো তখনি কেউ ধপ করে আমার পাশে বসে পড়ল।

কিরে এমন ইঁদুর ছানার মতো মাথা উঁচু করে কি দেখছিস?

অন্য সময় হলে মেহরাব ভাই এই কথার যথার্থ উত্তর দিতাম কিন্তু এখন মুড নেই কেননা আমি ক্ষুধার্ত। সামনে কি আম্মু আছে? নাকি নেমে বাইরে গেছে মেহরাব ভাই?

নাহ ফুপি নেই পা লেগে গেছে তাই নেমে হাঁটছে। নে এটা ধর।

এটা কি? ওনি আমার দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিলো তাই জিগাস করলাম।

আগে খুলে দেখ তারপর বুঝতে পারবি এটা কি। কথাটা বলেই মেহরাব চলে গেলো। আমি বক্সটা খুলে দেখলাম ওতে নুডলস রয়েছে এটা দেখে তো আমি সেই খুশি। যখনি খেতে যাবো তখনি জানালার পাশ থেকে কেউ ডাকলো আমি তাকাতেই দেখি মেহরাব ভাই।

কি হলো কিছু বলবেন?

নুডলস টা খেয়ে নে ফুপি রান্না করে এনেছে তোর জন্য নামার আগে আমায় বলে গেছে তুই ঘুম থেকে উঠলে দিতে৷ আর এগুলো ধর ওনি দুইটা কলা আর রুটিসহ পানির বতল এগিয়ে দিলো। আজব এগুলো বাসে উঠে দিলে কি হতো এভাবে জানালা দিয়ে দেওয়ার মানে কি? আমার খাওয়া শেষ হতেই ভাবলাম এবার আমি ও একটু বাইরে যাই। সিট থেকে উঠে কেবলি বাইরে যাবো তখনি সবাই হুরমুর করে বাসে উঠলে লাগল। জ্যাম নাকি ছেড়ে গেছে কি আর করার অগত্যা সিটে গিয়ে বসলাম। তবে এবার আমার পাশে মেঘলা আপু নয় মেহরাব ভাই বসেছে তা দেখে মেঘলা আপু রেগে বলল, কিরে তুই আমার সিটে কেনো?

সিটে কোথাও তোর নাম লেখা নেই সো সিট টাও তোর নাহ। চুপচাপ পিছনে গিয়ে মিরার সাথে বসে পড় বিরক্ত করিস না ঘুম লাগছে।

হুম নিজে তো এখানে বসবেই এখানে যে তার প্রাণ ভোমরা বসেছে।তার কাছে বসতে পারলে তো শান্তি হচ্ছে না। খাটাশ একটা মেঘলা বিরবির করতে করতে মীরার পাশের সিটে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল।

কিরে তুই এই সিটে কেনো? তুই না মাহির সাথে বসেছিলি হঠাৎ এখানে এলি যে?

কেনো তোর সম্যসা হচ্ছে? তাহলে আমি নেমে যায়? ঘোড়ার ডিম কোথাও বসে শান্তি নেই। মেঘলার এভাবে রেগে যাওয়া দেখে মীরা কিছু না বলে শুধু বিরবির করে বলল, লে এর আবার কি হলো হুদাই এমন রেগে গেলো কেনো?

আপনি মেঘলা আপুকে উঠিয়ে দিলেন কেনো? আপনি নাহ পিছনে বসেছিলেন তাহলে আবার এখানে আসলেন কেনো?

তোর কোনো সমস্যা? যদি সমস্যা হয় তাহলে বল জানালা দিয়ে ফেলে দিই সোজা পানিতে গিয়ে পড়বি।

এখানে পানি কই এটা তো রাস্তা কিন্ত না জানালা দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি আমাদের গাড়ি ফেরিতে আর ফেরিও চলতে শুরু করেছে। তাই বেশি কথা না বলে চুপ করে বসে থাকলাম।

অবশেষে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের দিকে আমরা গিয়ে পৌঁছোলাম। বাস থেকে নেমে দেখি চারিদিকে দোকান পাট আলো জলছে ওখানে ছোট মামা আর মামাত ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখেই এগিয়ে আসলো তারপর অটো ঠিক করে অটোতে উঠে আমরা চলে গেলাম। কিন্তু সম্যসা বাঁধলো এক জায়গায় আজকে এদিকে নাকি অনেক বৃষ্টি হয়েছ আর মামাদের বাড়ি টা একটু ভিতরে আর ভিতরের রাস্তাটা মাটির বৃষ্টি হয়ে কাঁদা হয়ে আছে বলে অটো গেলো না অগত্যা আমাদের মোড়ে নামতে হলো।

সামনে তো কাঁদা আমরা যাবো কীভাবে?

আমার কথা শুনে মেহরাব ভাই বলল, জুতু মাথায় নিয়ে খালি পায়ে হাঁটা দেখবি বাড়ি পৌঁছে গিছিস।

মেহরাব ভাই এর কথা শুনে সবাই হেসে উঠল আমি রেগে মুখ ফুলালাম। সারাদিন বৃষ্টি হয়ে এখন বেশ ভালোই জোসনা উঠেছে। সত্যি সবাই জুতু খুলে হাতে নিলো আর মেহরাব ভাই নাহিদ ভাইয়া রিফাত ভাইয়া রাতুল ভাই অভ্র ভাইয়া সবাই জুতু খুলে প্যান্ট গুছিয়ে নিলো এরা সবাই মেহরাব ভাই এর বন্ধু। আমি একহাতে জুতু ধরে আরেক হাতে আব্বুর হাত ধরে পা টিপে টিপে হেঁটে যাচ্ছি যাতে পড়ে না যাই। কিছুদূর যাওয়ার পরেই ধপাস করে শব্দ হলো পাশে তাকিয়ে দেখি মনির কাঁদার মধ্যে পড়ে গেছে। পড়ে যাওয়াটা ব্যাপার না তবে ও ভীষণ লজ্জা পেয়েছে এতোগুলো মানুষের সামনে পড়েছে। আব্বু ওকে একহাতে তুলে হাঁটতে লাগল।

মেহরাব ভাই আর ওনার বন্ধুরা কাঁদার মধ্যে হাঁটছে আর মজা করছে। এ ওকে ধাক্কা দিচ্ছে তো ও ওকে এভাবে করতে করতে ওনাদের গায়েও কাঁদা লেগে গেছে। বাড়ি যেতে যেতে রাত নয়টা বেজে গেছে নানুতো মেহরাব ভাইদের দেখে সে কি আফসোস করতে লাগল। আহারে আমার এতো সুন্দর নাতিটার গায়ে কাঁদা লেগে কি অবস্থা হয়েছে।একদম কালা হয়ে যাবে। এই ঈশিতা(ছোট মামার মেয়ে) কল পাড়ে গিয়ে পানি তুলে দে তোর ভাইরা গোসল করে নিক।

হ্যাঁ দাদু গোসল করতেই হবে সারা গায়ে কাঁদা লেগে গেছে।

ওনারা গিয়ে গোসল করে নিলো আমরাও হাতমুখ ধুয়ে সবাই খেয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম এতোটা রাস্তা এসেছি ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।

সকালে সবার আগে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখি মেঘলা আপু মীরা আপু আর ঈশিতা ঘুমাচ্ছে। ঈশিতা অবশ্য আমার সম বয়সী আমি বিছানা থেকে উঠে বাইরে আসলাম। ছোট মামা চাষ বাষ করে মাঠে অনেক জমি আছে। মামাদের বাড়িটা ফুল ওয়াল করে উপরে ছাঁদ দেওয়া অনেকগুলো রুম একসাথে আর অনেক বড় বারান্দা। আর রুম থেকে বেরিয়ে আড়মোড়া ভেঙে আশে পাশে তাকালাম আম্মু মামী মণি সবাই উঠে গেছে। মামা চাষী হওয়াই বাড়িতে প্রায় সময়ী বতর লেগেই থাকে। আমি ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পিছনের দিকে পুকুরের পাড়ে গেলাম। গিয়ে তো আমার চোখ ছাড়াবড়া কেননা পুকুরের ঘাট শান করা উপরে বসার জায়গা আছে। আর পানিতে নামতে গেলে সিঁড়ি আছে। আর সেই বসার জায়গা মেহরাব আর ওনার সব বন্ধুরা মিলে লুঙ্গি পড়ে বসে আছে।

চলবে…..

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_১৭
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
আমার এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেহরাব ভাই বা হাতে লুঙ্গির এক কোণা ধরে ডান হাতে ব্রাশ করতে করতে আমার সামনে এসে বলল, কিরে আজকে এতো সকাল সকাল উঠে পড়েছিস?তা এখানে কি? আর এভাবে হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

ওনার কথায় আমার হুশ ফিরলেও আমি অবাক হয়ে ওনাকে জিগাস করলাম। আপনারা এসব কি পড়ে আছেন? দেখতে কেমন অদ্ভুত লাগছে। আমার কথা শুনে পিছন থেকে অভ্র ভাইয়া উঠে এসে বলল, কেনো মাহি আমাদের দেখতে ভালো লাগছে না? আরে আমরা তো জাতীয় পোশাক লুঙ্গি পড়ে আছি।

অভ্র ভাইয়ের দেখাদেখি রিফাত ভাইয়া ও এসে বলল, আরে ভাবি আপনি দেখি কিছুই জানেনন নাহ। এটা পড়া কতটা আরামদায়ক জানেন? সব খান দিয়ে বাতাস ঢোকে আর তারপর শুধু ঠান্ডা আর ঠান্ডা।
রিফাত ভাইয়ার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় ওনার দিকে তাকালাম বেটা বলে কি? আমার তাকানো দেখে মেহরাব ভাই বলল, এই অভ্র এই রিফান্নারে ধরতো ওর কথার কোনো ব্রেক নাই যেখানে সেখানে কিসব কথা বলে ফেলে।

কেনো ভাই আমিতো ঠিক কথায় বলছি। আচ্ছা আপনিই বলেন আপনার বাতাস যাচ্ছে না? রিফাত ভাইয়ার এই কথাটা বলতে সবাই এসে ওনার লুঙ্গি ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো। কি একটা অবস্থা এখন তো দেখছি এখানে থাকাটাই মুশকিল এদের লজ্জা সব ঢাকাতে ফেলে এসেছে নাকি? আমি জলদি করে ওখানে থেকে চলে আসলাম।নইলে আমাকে লজ্জায় পড়তে হতো।

কলের পাড়ে এসে মুখ ধুয়ে রুমে চলে গেলাম গিয়ে দেখি সবাই উঠে গেছে। তারপর খাওয়া শেষ করে চুল আঁচড়ে নিয়ে রেডি হয়ে নিলাম। কেননা এখন সবাই মিলে গ্রাম দেখতে বের হবো। ইশিতা আগে আগে হাঁটছে আর আমরা পিছনে এতো সরু রাস্তা দিয়ে কি হাঁটা যায় আমার পা তো শুধু বেঁকে যাচ্ছে।

আমার কথা শুনে ঈশিতা বলল, আরে মাহি এটাকে অ্যাঁল বলে তোর হাঁটার অভ্যাস নেই তাই এমন হচ্ছে।

আচ্ছা আমরা এখন বার হলাম কেনো? এতো রোদ রোদের তাপে তো মুখ পুড়েই যাচ্ছে। বিকেলের দিকে বেরোলে ভালো হতো না?

হ্যাঁ মীরা ঠিকি বলেছে অনেক রোদ চল এখন বাড়ি ফিরে যায় আবার বিকেলের দিকে বেরবো। মেঘলা আপুর কথা মতো আমরা আর এগোলাম নাহ ওখান থেকেই আবার বাড়িতে চলে আসলাম। তবে সারাদিন আর মেহরাব ভাই আর ওনার বন্ধুদের কাউকেই দেখলাম নাহ। কি জানি কোথায় গিয়েছে।দুপুরে একটু ঘুমিয়ে গোসল করে বিকেলের দিকে রোদ একটু কমলে আমরা বেরোলাম।

আপু ওই যে দূরে কলা বাগান দেখছো ওটা আমাদের ওখানে আর যাবো নাহ ওটা অনেক দূরে। তারচেয়ে বরং চলো তোমাদের আম বাগানে নিয়ে যায় । ওখানে বসার জন্য চরাট পাতা আছে বসে বসে আম খাওয়া যাবে। ইশিতার কথামত আমরা সবাই আম বাগানে চলে গেলাম অনেক বড় বড় কয়েকটা গাছ আছে। আর বাকি গুলা ছোট আমরা চড়াটে বসতেই উপর থেকে কেউ আমাদের উপর আম ছুঁড়ে মারলো আমিতো ভয়ে চেঁচিয়ে চরাট থেকে উঠে মেঘলা আপুর কাছে চলে গেলাম।

এমনটা কে করলো রে? আমিতো শুনেছি গ্রামে নাকি ভূত থাকে তাহলে কি ভূত নাকি?

মীরা আপুর কথা শুনেই মেঘলা আপু বলল, ধূর ভূত বলে কিছু নাই ছাগলী তবে জ্বীন আছে হয়ত জ্বীনে আম মারছে। চল দৌড়ে দিই নইলে ঘাড়ে চেঁপে বসবে।

যেই কথা সেই কাজ আমরা সবাই কেবলি দৌড় দেবো তখনি উপর থেকে কেউ বলল, এই ভীতুর দল দাঁড়া বলছি দিনে দুপুরে এরা জ্বীন ভূত নিয়ে টানাটানি করছে।

আমরা কথা শুনে উপরে তাকাতেই দেখি মেহরাব ভাই আর ওনার সব বন্ধুরা গাছে উঠে আম খাচ্ছে। একি ভাইয়া আপনারা গাছে উঠে আম খাচ্ছেন কেনো আমে তো পোকা লাগবে।

ঈশিতার কথা শুনে অভ্র ভাইয়া বলল, তাতে কি তোমার বাপে তো এমনিতেও আমে ফরমালিন মিশায়ে কাঁচা আম পাকা করে বিক্রি করে। তাহলে পোকা লাগলে সম্যসা কি উপরে রঙ করে বিক্রি করে দিতে বলবা।

শুনুন আমার আব্বু না মোটেও এমন করে না ওকে। ও মেহরাব ভাই দেখছেন আপনার বন্ধু কি বলছে।

এই তুই আমার মামার নামে এসব বলছিস কেনো? ওকে বকে দিয়েছি আর বলবে নাহ। ওনারা সবাই গাছ থেকে নেমে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন সবার হাতে আম। ওনাদের আম খাওয়া দেখে আমার ও আম খাইতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওনাকে পেরে দিতে বলবো নাহ বললে হাজারটা কথা শোনাবে আবার ভাব বেড়ে যাবে। তাই চুপ করে তাকিয়ে আছি। কিরে লাল পড়ছে আম খাবি?

আমার মোটেও লাল পড়ছে নাহ ওকে আর আমি কারো দেওয়া জিনিস খাই না নিজে পেরে খেতে জানি।

তাই নাকি আচ্ছা তাহলে তুই বরং পেরেই খা এই সবাই চল। কথাটা বলে ওনারা সবাই চরাটের উপর গিয়ে বসলেন। আর সবাইকে আম দিলো মেঘলা আপু আমাকে দিতে আসলে মেহরাব ভাই নিষেধ করে দিলো। কিরে মেহরাব তুই মাহিকে আম দিলি না কেনো ছোট মানুষ কীভাবে ওখানে একা দাঁড়িয়ে আছে।

নাহিদ ভাইয়া কথাটা বলতেই অভ্র ভাই বলল, আরে বোকা তুই তো দেখি কিছুই বুঝিস না। আচ্ছা এদিকে আয় তোর কানে কানে বলছি। অতঃপর অভ্র ভাইয়া নাহিদ ভাইয়ার কানে কানে কিছু একটা বলল আর ওনি সেটা শুনতেই সেকি হাসি যেনো পেপসুডেন্ডট এর এড করছে।

আমি মুখ ফুলায়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ এই নাকি ওনি আমায় ভালোবাসে সবার সামনে কীভাবে বলল। আর দেখো কীভাবে আম খাচ্ছে যেনো জীবনে আম খাইনি। রাগে আমার মাথা ফেঁটে যাচ্ছে সিদ্ধান্ত নিলাম এবার আমি গাছে চড়েই ছাড়বো। কিন্তু এতো বড় গাছে উঠবো কীভাবে? আশেপাশে তাকায়ে ছোট গাছ খুঁজলাম একটু দূরে একটা গাছ দেখলাম ডালপালা ছড়ানো মুটামুটি উটতে পারবো বলে মনে হলো। আমি উড়নাটা কমড়ে শক্ত করে বেঁধে নিলাম গাছে তো উঠেই ছাড়বো। তারপর গাছটার কাছে গিয়ে ডালটা ধরার চেষ্টা করলাম কিন্তু না নাগাল পাচ্ছি না। আজকের দিনে আর একটু লম্বা হলে ঠিক ধরে ফেলতাম। আমি সমানে লাফিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ধরতে পারছি না তখনি কমরে ঠান্ডা কিছুর উপস্থিতর টের পেলাম। আরে আমি একা একা উপরে উঠছি কীভাবে? পিছনে তাকিয়ে দেখি মেহরাব আমার কমর শক্ত করে ধরে উপরের দিকে তুলে দিয়েছে।

কিরে হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে ডালটা ধর আমার হাত লেগে যাচ্ছে।

আমি কি আপনাকে বলেছি যে আমাকে উঁচু করে ধরুন তাহলে এখন ধরে এমন করছেন কেনো? থাক আপনাকে আমায় ধরা লাগবে না। নামিয়ে দিন আমি একাই উঠতে পারবো।

এক চড় দিয়ে সবকটা দাঁত ফেলে দেবো জলদি করে ডালটা ধর বলছি। ওনার ধমকে আমার আরো বেশি রাগ হলো তবুও নিজেকে কোনো রকমে শান্ত রেখে ডালটা ধরার চেষ্টা করছি। কিন্তু ধরতে পারছিনা দেখে ওনার দিকে তাকালাম কিন্তু একি ওনিতো আমার কমরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। হাত উঁচু করায় আমার জামা কমর থেকে সরে গেছে আর ওনি এই ফাঁকে আমার কমরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি রেগে ওনাকে ডাকলাম, মেহরাব ভাই আমায় নামান বদ লোক একটা।

হুম নামাবো, আমার কমরের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।

আরে কি হলো কথা কানে যায় না আমায় নামিয়ে দিন বলছি। জোরে বলতেই ওনার হুশ আসলো আর ওনি তড়িঘড়ি করে আমায় নামিয়ে দিলো। কি হলো এভাবে চেঁচাছিস কেনো?

আপনি এইমাত্র কি করলেন?

কি আবার করলাম তোকে ডালটা ধরতে সাহায্য করছিলাম আজব। এই জন্য বলে মানুষের উপকার করতে নেই৷ থাক তুই আমি গেলাম কথাটা বলে ওনি চলে গেলো আর আমি অবাক চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি কি বদ লোক দোষ করে উল্টো রাগ দেখিয়ে কীভাবে বেরিয়ে গেলো।

চলবে…..

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_১৮
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
মাঠ থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিছিলো অনেক ক্লান্ত লাগছিলো তাই এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বাইরে কথার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে বিছানাই উঠে বসে পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখি নয়টা বেজে গেছে। সেই সন্ধ্যায় ঘুমিয়েছি আর এখন উঠলাম অনেকটা সময় ঘুমিয়েছি কিন্তু সবাই কোথায়? রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি সব জায়গায় লাইট জ্বালানো তারমানে কারেন্ট নেই। আমাকে বেরোতে দেখে নানু তার কাছে ডাকল আমি গিয়ে বসতেই ওনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, কিরে ঘুম হলো?খাওয়া লাগবে না?

মেঘলা আপুরা কোথায়?

ওরা তো সবাই বারান্দায় ওই পাশে মাদুর বিছিয়ে গল্প করছে কারেন্ট চলে গেছেতো তাই। আয় তুই বরং খেয়ে নে।

নাহ আমি এখন খাবো নাহ পরে খাবো আমি তাহলে ওদের কাছে যায়৷ আমি পা টিপে টিপে ওরা যেখানে বসে গল্প করছে সেখানে গেলাম। সবাই গোল হয়ে বসে আছে আড্ডা দিচ্ছে আর মেহরাব ভাই এর পাশেই মীরা আপু কেমন সেটে বসে আছে৷ কখনো হিংসা না করা আমি মুহূর্তেই মনের মধ্যে মীরা আপুর জন্য ডজন খানিক এর থেকেও বেশি হিংসা অনুভব করলাম। কিন্তু কেনো? শুধু মীরা আপু মেহরাব ভাই এর পাশে বসেছে এই জন্য নাকি ওনি ওনার পাশে মীরা আপুকে বসতে দিয়েছে তার জন্য। নাকি আমি ওনাকে ভালোবাসি এই জন্য? ভালোবাসি? হ্যাঁ আমিতো ওনাকে ভালোইবাসি কথাটা মনের মধ্যে উচ্চারণ করতেই সারা শরীরে কেমন শিহরণ বয়ে গেলো। কিন্তু ওই ভালোলাগা টাকে এক পাশে রেখে আমি হিসাব করতে লাগলাম আসলে আমার হিংসার মূল কারণ টা কি? আমার এসব আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝেই মেঘলা আপু আমায় ডাক দিলো৷ আর আপুর ডাকে সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো আমি এলিয়েন ভুল করে আমার দেশ থেকে পৃথিবীতে চলে এসেছি। হালকা একটু কাশি দিয়ে আমি গিয়ে মেঘলা আপুর পাশে বসলাম। কিন্তু আড় চোখে ঠিকি মীরা আপুর দিকে তাকিয়ে আছি। মেহরাব ভাই এর দিকে তাকাতেই দেখি ওমা ওনিতো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে মুহুর্তেই একরাশ লজ্জা ভর করলো আমার উপর। তবুও আমি নিজেকে সংযত রেখে একটা ভেংচি কেটে ওনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। পরক্ষণেই তাকাতে দেখলাম ওনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। থাকুক তাকিয়ে তাতে আমার কি? তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওনার চোখে ছানি পরে যাক তবুও আমি আর তাকাবো নাহ।

প্রায় অনেকক্ষন আড্ডার পর কারেন্ট চলে আসলো আর আমরাও যে যার মতো রুমে যেতে লাগলাম। আপুরা আগে আগে যাচ্ছে আমি ওদের পিছনে হঠাৎই কেউ আমার হাত টেনে পাশের দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল। আমি চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেলাম কেননা আমার মুখ তো চেপে ধরে আছে।

আহ এতো ছটফট করছিস কেনো আমি তোকে খেয়ে ফেলবো নাকি?

ওমমমম ওমমমম।

কিরে বোবা হয়ে গেলি নাকি কথা বলছিস না কেনো?

আজব লোক তো মুখ ধরে রাখলে কথা বলবো কেমনে? আমি চোখের ইশারায় ওনাকে বললাম আমার মুখের উপর থেকে হাত সরাতে ওনি বুঝতে পেরে হাতটা সরিয়ে নিলো৷ আমিও যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে তেজী কন্ঠে বললাম। এই ভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে? একটুর জন্য শ্বাস আটকে মরে যেতাম। তখন কালকের খবরের কাগজে হেডলাইন এ বড় বড় করে লেখা উঠত শ্বাসরুদ্ধ করে এক যুবক এক যুবতী মেয়েকে রাতের অন্ধকারে মেরে ফেলেছে।

সব সময় তুই তোর বাপের মতো এক লাইন বেশি বুঝিস কেনো বলত? কি খেয়ে যে আমার একমাএ ফুপিকে তোদের পরিবারে বিয়ে দিয়েছিলাম কে জানে।

আরে আজব আপনার ফুপিকে বিয়ে দেওয়ার সময় কি আমি ছিলাম নাকি আমার পরিবারে? আর কথায় কথায় আমার বাপকে টানেন কেনো? ওনি আপনার কি করেছে শুনি?

কিছু করেনি তবে করবে না এমন তো কথা নেই হয়ত ভবিষ্যতে করতেও পারে। আচ্ছা বাদদে তুই আগে বল তখন আমায় ভেংচি কাটলি কেনো?

ক কখন? আর কেটেছি বেশ করেছি তাতে আপনার কি? আমার মুখ আমি কাটবো হাজারবার কাটবো।

আমার কথা শুনে ওনি আমার গালের একপাশে ওনার বৃদ্ধ আঙুল আর অপর পাশে বাকি চার আঙুল দিয়ে চেপে ধরে ওনার মুখটা আমার মুখের সামনে এনে বললেন। আবার যদি ওভাবে তোকে ভেঙ্গাতে দেখি তাহলে তোর খবর আছে তোর।

আমি চোখ ছোট ছোট করে ওনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। তখনি ওনি আমার গালায় শক্ত করে একটা কাঁমড় বসালেন। বেথ্যায় আমার চোখে পানি চলে আসছে হয়ত রক্ত বার হয়ে গেছে। পরের বার এমন করলে শাস্তিটা আরো বেশি হবে বুঝলি। কথাটা বলে ওনি কাঁমড় দেওয়া জায়গায় আলতো করে চুমো দিয়ে চলে গেলো।

সালা খচ্চর লোক একটা জীবনে মনে হয় গোশত খাইনি ইস আমার ঘাড় থেকে একমন গোশত তুলে ফেলছে মনে হয়৷ জ্বলে যাচ্ছে ওনাকে বকতে বকতে আমি ঘাড় ডলতে ডলতে রুমে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে নাহ তাই আমিও গিয়ে একপাশে শুয়ে পড়লাম।

সকালে

উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছে ঘুমে ডুলতে ডুলতে বিছানায় উঠে বসে দেখি ওরা সবাই উঠে বসে রেডি হচ্ছে। আমাকে বসে থাকতে দেখে মীরা আপু আমার কাছে এসে চোখ মুখ কুঁচকে বলল, এই মাহি তোমার গলায় কি হয়েছে? ওমন কালচে দাগ হলো কীভাবে?

সদ্য ঘুম থেকে উঠেছি তাই মীরা আপুর কথাটা ঠিক মাথার মধ্যে ঢুকছে নাহ৷ চোখ বন্ধ করে আবার কাল রাতে ফিরে গেলাম তখনি মনে পড়ল আরে এখানেতো মেহরাব ভাই কাঁমড় দিয়েছিলো তাহলে সেটার জন্য দাগ হয়নি তো? তাহলে তো আমি শেষ এখন কি বলব। চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখি মেঘলা আপু আর ঈশিতাও মীরা আপুর কথা অনুযায়ী আমার দিকে শকুনের মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে। আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে ওরনা দিয়ে দাগটা ঢাকার চেষ্টা করতে করতে কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে বললাম, আ আসলে কালকে গাছে উঠতে গিয়ে একটু ছিলে গিছিলো তাই দাগ হয়ে আছে।

কি জানি ওরা আমার কথা বিশ্বাস করলো কি না। এখনো কেমন করে তাকিয়ে আছে মীরা আপু চোখ কুটি কুটি করে বলল, গাছে উঠতে গিয়ে গলায় দাগ ব্যাপারটা কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে আমার কাছে।

মীরা আপুর কথার সাথে তাল মিলিয়ে মেঘলা আপুও বলল, কারেট আমারও কেমন যেনো এখানে অন্য কোনো রহস্যর গন্ধ পাচ্ছি।

হ্যাঁ আমিও তো ছোট বেলা থেকে গাছে উঠি কই আমার তো কখনো গলায় এমন দাগ হয়নি। ঈশিতার কথা শুনে আমি ওর মাথায় চাটি মেরে বললাম। তোর দাগ হয়নি বলে কি আর কারো দাগ হবে না? আর মেঘলা আপু কি গন্ধ গন্ধ করছো তুমি কি শুকুন নাকি যে মরা গরুর গন্ধ পাবে। গলায় না হয় সামান্য একটা দাগই হয়েছে তাতে পুলিশের মতো এতো জেরা করার কি আছে আজব। কথাগুলো বলে কোনো রকমে ওখান থেকে ওঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

কিন্তু এখানে একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। মীরা আপু ভাবতে ভাবতে বলল।

গলার সাথে ভালোমতো ওরনা পেঁচিয়ে সবার সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি। নয়ত এই দাগ দেখলে সবাই আবার হাজারটা প্রশ্ন করবে৷ মন চাচ্ছে মেহরাব ভাই কে লবন মরিচ ছাড়ায় কাঁচা চিবিয়ে খাই। আমাকে বিপদে ফেলে দিব্যি হাসি খুশি ঘুরে বেড়াচ্ছে এর শোধতো আমাকে তুলতেই হবে। সবাই আগে আগে হাঁটছে আমি আর মেঘলা আপু পিছনে সেই কখন থেকে মেঘলা আপু কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছে। বার বার একি কথা বলছে এই মাহি সত্যি করে বলতো দাগ টা কিসের?

আজব তো বলছিতো গাছে উঠতে গিয়ে ছিলে গেছে।

নাহ আমার মোটেই বিশ্বাস হচ্ছে নাহ। সত্যি সত্যি বল আচ্ছা কোনো ভাবে ভাইয়া কি তোর গলায় লাভ বাইট দিছে? বাহ তাহলে তো মজাই মজা এই বলনা বলনা।

মেঘলা আপুর কথা শুনে আমার চোখতো কপালে আমি চোখ বড় বড় করে আপুর দিকে তাকিয়ে আবার মনে মনে ভাবলাম। এই সারছে আপু জানলো কীভাবে? আমি আপুকে কিছু বলার আগেই সামনে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম।

এবার আসবে আসল মজা সব সময় শুধু আমার পিছে লাগো তাই না? একবার সামনে তাকিয়ে দেখো।

আমার কথা শুনে আপু কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে সামনের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো।

চলবে….