ভালোবাসি বুঝে নাও ৩ পর্ব-১০+১১+১২

0
383

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_১০
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
খাওয়া শেষ করে মেহরাব আর মেঘ বেরিয়ে গেলো আর মাহি ওর বাসায় চলে গেলো আবার রাতে আসবে। সারাদিন মেহরাব বাইরে ছিলো মেঘ এর সাথে দুপুরের দিকে বাসায় এসে গোসল করে খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে মাহিও সারাদিন ওর বাড়িতেই ছিলো সন্ধ্যার দিকে মেহরাবদের বাড়ি চলে আসলো দরজায় এসে কলিং বেল চাপতেই মেঘলা তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিয়েই আবার চলে গেলো কেননা সে এখন কমরে ওড়না গুজে রান্না করায় ব্যাস্ত। কি করছো আপু? মাহি রান্না ঘরে এসে দেওয়াল এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল।

দেখতে পারছিস না রান্না করছি আর তোর সারাদিন পর এখন আসার সময় হলো কেনো আরো আগে আসলে কি হতো শুনি সারাদিন আমায় একা একা থাকতে হলো আর আমার গুনধর ভাই সেই যে দুপুরে এসে ঘুমিয়েছে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর একটু পর মাগরিবের আযান দিবে সেদিকে তার কোনো হুশ নেই।

মাহি বেশ বুঝতে পেরেছে যে মেঘলা ভীষণ রকম খেপে আছে তাই আস্তে করে নরম সূরে বলল, আপু তুমি কি রাগ করেছো?

না রাগ করবো কেনো আমি তো এখন ধৈই ধৈই করে নাচবো আমার মনে চাচ্ছে তোদের দুটোকে ধরে উত্তর মাধ্যম কয়টা দিই কিন্তু সেটা তো পারবে না কেননা একজন আমার বড় ভাই আর আরেকজনকে তো কিছুই বলা যাবে না কেননা তাকে কিছু বললে অপরজন এর আবার খুব কষ্ট হবে।

মেঘলার কথা মাহি কিছুই বুঝতে পারলো নাহ তাই বলল, আপু তুমি কিসের মধ্যে কি বললে আমি তো কিছুই বুঝলাম নাহ।

তোর কিছুই বোঝা লাগবে নাহ তুই এখানে বকবক করে আমার মাথা না খেয়ে দয়া করে গিয়ে আমার কুম্ভকর্ণ ভাইটাকে একটু ডেকে উঠা।

কিন্তু আপু মেহরাব ভাই যে রাগি ওনার ঘুম ভাঙ্গালে যদি আবার আমায় বকা দেয় তাহলে।

সেই ভয়েই তো আমি যাচ্ছি নাহ কিন্তু তুই যা তুই গিয়ে ডাকলে কিছু বলবে নাহ যা তারাতরি যা এখনি আযান দিয়ে দেবে তো।

আমি? কিন্তু, আমতা আমতা করে বলল মাহি।

আরে কোনো কিন্তু নাহ যা আমার তরকারি পুড়ে যাচ্ছে যলদি যা তো।

মাহি আর কিছু বলতে পারলো না গুটিগুটি পায়ে সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে চলে গেলো। মেহরাব এর রুমের দরজার সামনে গিয়ে দেখলো ওটা বন্ধ আছে মাহি আস্তে করে হাত দিতেই দরজাটা খুলে গেলো ভিতরে অন্ধকার হয়ে আছে আর অনেক ঠান্ডা হয়ত এসি ছাড়া আছে তাই জন্য। মাহি হাতড়ে সুইচ খুঁজে বের করে সুইচ চাপতেই পুরো রুম আলকিত হয়ে গেলো।সারারুমে একবার চোখ বুলিয়ে মাহি খাটে শুয়ে থাকা মেহরাব এর দিকে তাকালো উপর হয়ে দুই হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে মাহি আস্তে করে মেহরাব এর মাথার কাছে গিয়ে মেহরাব কে দুইবার ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ এলো নাহ তাই নিচু হয়ে যেই আবার ডাকতে যাবে তখন মাহির চোখ পড়ল মেহরাব এর ঠোঁটের উপর কি সুন্দর একটা অপরটার মধ্যে ঢুকে আছে মাহি এক ধ্যানে মেহরাব এর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে কি মনে করে যেনো আস্তে আস্তে মেহরাব এর ঠোঁটের দিকে হাত বারাতে গেলো। মাহির হাত মেহরাব এর ঠোঁট ছুঁই ছুঁই তখনি মেহরাব চোখ বন্ধ রেখেই বলল,, ওখানেই থেমে যা হাত সামনে বারানোর চেষ্টা ও করবি নাহ।

মেহরাব এর কথা শুনতেই মাহি তড়িৎ গতিতে সোজা হয়ে দাঁড়ালো তারপর নিজের মাথায় হাত দিয়ে একটা চড় মেরে নিজেকে বকতে লাগলো। মেহরাব শুয়া থেকে উঠে বসে হাত দিয়ে সামনে আসা চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে বলল,, এভাবে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে কেনো এসেছিস সেটা বল।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনি আযান দিবে আপনি এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন তাই আপু আমাকে পাঠালো আপনাকে উঠানোর জন্য।

হুম তো আমিতো এখন উঠে গেছি তাও এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো কিছু বলবি?

না না আমি কি বলবো এইতো আমি এখনি যাচ্ছি এই বলে নাহি ফুরুত করে দৌড়ে বেরিয়ে চলে গেলো আর মেহরাব মাহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে মুচকি হসলো।
,,,,,,
মাহি বকবক করছে আর মেঘলা মাহির পাশে চুপচাপ করে হেঁটে যাচ্ছে কেননা ও এখন গভীর ভাবনায় মগ্ন কেননা কিছুদিন ধরে একটা অচেনা নাম্বার থেকে প্রায়ই কেউ মেসেজ দিচ্ছে মেঘলা পরবর্তী তে ওই নাম্বারে কল দিলে কেউ ফোনটা ধরে নাহ উল্টো ফোন বন্ধ করে রেখে দেয়।

ওই মেঘলা আপু আমি কি বলছি শুনেছো সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে তুমি তো কিছুই বলছো নাহ। মেঘলাকে ঝাঁকিয়ে বলল মাহি।

মাহি তুই কিন্তু একটু বেশিই বকবক করিস আমি তো দেখছি ভবিষ্যৎতে তোর কপালে খুবিই দুঃখ আছে তুই তো চড় খেতে খেতে তোর গাল আর গাল থাকবে নাহ পুরো খাল হয়ে যাবে।

কিহ বলছো এসব কিছুই তো বুঝলাম নাহ।

তুই বুঝিস নাহ কেনো বলতো নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকিস আর, মেঘলা আর কিছু বলতে পারলে নাহ তার আগেই ওদের সামনে পুলিশের গাড়ি এসে থামলো আচমকা এভাবে পুলিশের গাড়ি এসে থামায় দুজনেই একটু ভয় পেয়ে গেলো তারপর দেখল গাড়ি থেকে মেঘ নেমে ওদের সামনে দাঁড়ালো,, এভাবে কেউ সামনে এসে গাড়ি থামায়? যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো, রেগে বলল মেঘলা।

আমি ওতোটাও কাঁচা ড্রাইভ করি না যে এক্সিডেন্ট করব তবুও যদি মাঝে মধ্যো হয় সেটা ব্যাপার নাহ।তবে জেনে শুনে কেউ নিশ্চয়ই নিজের ক্ষতি করবপ নাহ। মেঘের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে না পেরে মেঘলা বলল, এই কি বললেন আপনি?

সেটা তোমার না বুঝলেও চলবে ওকে আর আমি মোটেও তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই হ্যাঁ তো আমি কি বলছিলাম মাহি তোমরা নিশ্চয়ই কলেজে যাচ্ছো আমিও ওদিকেই যাচ্ছি চলো তোমাদের পৌঁছে দেই।

মেঘের কথা শুনে মাহি কিছু বলবে তার আগেই মেঘলা বলল, কোনো প্রয়োজন নাই আমাদের কাছে কলেজ পযন্ত যাওয়ার জন্য যথেষ্ট টাকা আছে আর টাকা না থাকলেই বা আমাদের দুটো পা তো আছে সেটা দিয়ে অনায়াসেই আমরা চলে যেতে পারবো সো আপনাকে এতো কষ্ট করে আমাদের পৌঁছে না দিলেও চলবে ওকে এই মাহি চল।

ও হ্যালো মিস আমি আপনার সাথে কথা বলছি না ওকে সো আপনি আগ বারিয়ে অনধিকার চর্চা না করলেই খুশি হবো।

মেঘের কথা শুনে মেঘলার রাগ হয়ে গেলো তাই বলল, আপনার খুশি দিয়ে আমি কি করবো আমি তো বলছিই আমরা আপনার সাথে যাবো না সো যাবো না এতো কথা বলার কি আছে আমি বুঝতেছিনা।

একটা অন ডিউটি পুলিশ অফিসার এর সাথে এভাবে উঁচু গলায় কথা বলতে তোমার ভয় করছে নাহ? তাও আবার মাঝ রাস্তায়।

একজন অন ডিউটি পুলিশ অফিসার মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে যদি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে পারে তাহলে আমারও উঁচু গলায় কথা বলতে ভয় করবে কেনো?

মেঘ আর মেঘলার মাঝে তুমুল ঝগড়া লেগে গেছে আর মাহি শুধু ওদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একবার মেঘ এর দিকে তাকাচ্ছে তো আবার মেঘলার দিকে তাকাচ্ছে কীভাবে দুজন প্রাপ্তঃবয়স্ক ছেলেমেয়ে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছে তবে মাহির কাছে দেখতে বেশ ভালোই লাগছে কীভাবে বাচ্চাদের মতো দুজন ঝগড়া করছে মাহির ভীষণ ইচ্ছে করছে দুজনকে ধরে বিয়ে করিয়ে দেই তারপর সারাদিন দুজন মিলে ঝগড়া করবে। মাহি মুচকি হেসে ওখান থেকে হেঁটে চলে আসলো একটু সামনে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পরতে পরতে বেঁচে গেলো।

এই আপনি কানা নাকি সাথে এতো বড়বড় দুটো চোখ থাকতেও ধাক্কা দেন কেনো?

চলবে,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_১১
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
ধাক্কা আমি দিয়েছি নাকি তুই রাস্তা দিয়ে চলার সময় মন কই থাকে তোর? মেহরাব এর কথা শুনে মাহি যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো একেতে নিজে ধাক্কা দিয়েছে তার উপর আবার আমার দোষ দিচ্ছে মাহি রেগে আঙুল উঁচু করে বলল, দেখুন রাস্তার মাঝে এভাবে আমায় ধমকাবেন নাহ আমি মোটেও আপনাকে ধাক্কা দেয়নি।

আঙুল নিচে আর চোখ নামিয়ে কথা বল দিন দিন অনেক সাহস বেড়ে যাচ্ছে তোর বড়দের সাথে বুঝি এই ভাবে কথা বলতে হয় তোর এতো উন্নতি হয়েছে তা ফুপি কি জানে?

মেহরাব এর কথা শুনে মাহি যেটুকু সাহস সঞ্চয় করেছিলো তাও হাওয়া হয়ে ফুস করে উড়ে গেলো আস্তে করে নিচু গলায় বলল, দেখুন আপনি মোটেও এমন কিছু বলবেন নাহ আর এখানে আম্মু কে বলার মতো কি হয়েছে শুনি।

এতো বুঝে দরকার কি তোর আর তুই একা কেনো মেঘলা কই? আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি আর তোর না সামনে এইচএসসি পরীক্ষা ভালো করে পড়াশুনা কর ওকে আর হ্যাঁ এরপর থেকে আমার সাথে মোটেও আঙুল তুলে কথা বলবি নাহ তাহলে আঙুল টা আর আঙুল এর জায়গায় থাকবে নাহ। কথাগুলো বলে মেহরাব সামনে চলে গেলো আর মাহি সেখানে দাঁড়িয়েই মনে মনে মেহরাব কে বকা দিচ্ছে তখনি মেঘলা ওর পাশে এসে দাঁড়ালো।

অবশেষে আসলে তুমি ঝগড়া শেষ হলো? আচ্ছা আপু তোমরা দুই ভাইবোন এতো ঝগড়াটে কেনো বলোত এই যে এখনি তোমার ভাই নিজে এসে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টো নিজেই আমাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে দিয়ে গেলো আরো সাথে শাসিয়ে ও গেলো এটা কোনো কথা বলো? মাহি একা একাই বকবক করছে কিন্তু মেঘলার কোনো হেলদুল নেই ওতো গালে হাত রেখে হা করে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘলার এভাবে গালে হাত রেখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহি বলল, একি আপু তুমি এই ভাবে গালে হাত দিয়ে রেখেছো কেনো? ও বুঝেছি ঝগড়া করতে করতে গাল বেথ্যা হয়ে গেছে বুঝি? কথাটা বলতেই মেঘলা রেগে চোখ বড় করে মাহির দিকে তাকালো।
তাও নাহ তাহলে কি হয়েছে আচ্ছা কোনো ভাবে ওই ভাইয়া তোমাকে চড় মারিনি তো? হায় হায় তাহলে তো এটা অনেক বড় একটা অপরাধ এতো বড় সাহস ওনার ওনি তুমাকে চড় মেরেছে দাঁড়াও আমি এখনি ওনাকে দেখাচ্ছি মজা।

এই বলে মাহি পিছনের দিকে হাঁটতে লাগল যেখানে মেঘ দাঁড়িয়ে ছিলো কিন্তু ওখানে গিয়ে মাহি মেঘ কে পেলো নাহ আশে পাশে ও খুঁজলো কিন্তু মেঘ এর টিকি টাও পেলো নাহ তাই আবার মেঘলার কাছে ফিরে এসে বলল, পেলাম নাহ গো মনে হয় পালিয়েছে তবে ওনাকে আমি ছাড়বো নাহ কত বড় সাহস আমার মেঘলা আপুকে চড় মেরেছে।

আহ মাহি তোর বকবক টা এবার একটু থামাবি সেই কখন থেকে নিজের মতো বকবক করেই যাচ্ছিস।

সেকি আপু ওনি তোমায় চড় মারল আর আমি কিছু বলবো নাহ বলছো?

আমি কি তোকে একবার ও বলছি যে ওনি আমায় চড় মেরেছে, মেঘলা রেগে বলল।

মারিনি বলছো? তাহলে এভাবে হুদাই গালে হাত দিয়ে রেখেছো কেনো শুধু শুধু আমি কতটা রেগে গেলাম হুর এখন বসে বসে রাগ কমাতে হবে। আচ্ছা বাদ দাও ওই ভাইয়া যদি তোমায় চড় না মারে তাহলে তুমি এভাবে গালে হাত দিয়ে রেখেছো কেনো?

আরে চড় মারলে তবুও সহ্য করা যেতো কিন্তু ওনি কি করেছে জানিস? ওই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার সাথে ঝগড়া করতে করতে ফট করে আমার গালে একটা চুমো দিয়ে চলে গেলো কত বড় বিয়াদপ ভাব ওনি পুলিশ হয়ে যদি এভাবে রাস্তা ঘাটে মেয়েদের চুমো দিয়ে বেড়ায় তাহলে সাধারণ জনগন কি করবে।

কি আবার চুমো? মাহি অবাক হয়ে বলল।

আবার চুমো মানে? মেঘলা বুঝতে না পেরে বলল।

আরে আপু ওইদিন মীম আপুর বিয়েতে গিয়ে তারপর মাহি সবটা মেঘলা কে খুলে বলল যদিও মেঘলা সব টা জানে কিন্তু মাহিতো আর সেটা জানে মাহ তাই আফসোস করে বলল,, তুমি তাও জানো যে তোমায় কে চুমো দিয়েছে কিন্তু আমিতো তাও জানি না আপু অন্ধকারে টুপ করে চুমো দিয়েই দৌড় মেরেছে।

তুই গাধী তাই এখনো বুঝতে পারিসনি কেন তোকে চুমো দিয়েছে কথাটা মনে মনে বলল মেঘলা বলল, তবে ওনি যাই হোক না কেনো আজকে ওনি আমার সাথে যেটা করেছে তার জন্য ওনাকে শাস্তি পেরেতেই হবে।

কি করবে গো আপু মেহরাব ভাইকে বলে ওনাকে মার খাওয়াবে? তাহলে আমিও মেহরাব ভাই কে বলব আমাকেও একজন চুমো দিয়েছে তাকেও যেনো খুঁজে বার করে আচ্ছা করে কয়েকটা দেয়।

মাহির কথা শুনে মেঘলা কপালে হাত রেখে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল থাক বোন তোকে আর কিছু বলতে হবে নাহ যার যেটা বোঝার সে ঠিকই তারটা বুঝে নেবে এখন চল যাই দেরি হয়ে যাচ্ছে। মেঘলা মাহিকে টানতে টানতে ভার্সিটির দিকে চলে গেলো মেঘলা আর মাহির কলেজ পাশাপাশি তাই মাহি ওর কলেজে চলে গেলো আর মেঘলাও ভার্সিটির ভিতর চলে গেলো।
,,,,
কলেজ শেষে মাহির বন্ধু আর বান্ধবীরা সবাই ঠিক করল যে আজকে সবাই মিলে ফুচকা খাবে আর ঘুরবে কেননা আর কয়েকদিন ক্লাস হবে তারপর বিদায় অনুষ্ঠান আর তারপর পরিক্ষা এই জন্য আজকের দিনটা সবাই মিলে মজা করে কাটাবে। কথামতো সবাই গেট দিয়ে বেরিয়ে রাস্তার উপাশে ফুচকাওয়ালার কাছে গেলো এক এক করে সবাইকে ফুচকা দিলো শেষে মাহি বলল ওরটা বেশি ঝাল দিতে মাহির কথামতো প্লেটে করে ফুচকা দিলো মাহি কেবলি ফুচকাটা মুখে দিতে যাবে তখনি পাশ থেকে কেউ ওর হাত টেনে ধরল আর ফুচকাটা মুখে নেওয়া হলো নাহ মাহি রেগে পাশে তাকিয়ে দেখল মেহরাব রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মাহি একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আরে মেহরাব ভাই আপনি এখানে।

কেনো এখানে এসে বুঝি তোকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম কলেজ শেষে বাড়ি না গিয়ে এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেদের সাথে হাসাহাসি করছিস এতো সাহস তোকে কে দিয়েছে? ফুপি কি এসব জানে?

আর কয়দিন পর আমাদের কলেজ শেষ হয়ে যাবে তাই আজকে সবাই বলল যে একসাথে ফুচকা খাবে তাই জন্য আসলাম আমি তো এখনি বাড়ি চলে যেতাম।

হুমম দেখছি তো কীভাবে ছেলেদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে ঢলাঢলি করছিস এটা কি আজকেই নাকি প্রতিদিনই এসব চলে,, মেহরাব রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

এবার যেনো মাহির রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেলো পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর বন্ধু বান্ধবীরা সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে আর আশে পাশের মানুষ ও তাকিয়ে আছে তাই মাহি রেগে বলল, আমার হাতটা ছাড়ুন মেহরাব ভাই।

কেনো ছাড়বো যাতে তুই এই মাঝ রাস্তায় ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করতে পারিস? কিন্তু তোর সেই আশা পূরণ হবে নাহ এখন তুই আমার সাথে যাবি আর আমি ফুপিকে জিগাস করবো যে তার মেয়ের দিন দিন কতটা অধপতন হচ্ছে সেকি সেটা জানে নিশ্চয়ই জানে নাহ তাকে তো জানানো লাগবে।

মাহি মেহরাব এর হাত থেকে নিজের হাতটা জোরে টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে বলল, যান না যান গিয়ে যা ইচ্ছে বলুন তাতে আমার কিছু যায় আসে না কেননা আমি জানি আমি কি করছি আর আমি কেমন। আচ্ছা আমি কি আপনাকে বিনা পয়সার আমার বডিগার্ড রেখেছি? না চাইতেও সব সময় চলে আসেন আর এভাবে অভদ্রর মতো ব্যবহার করেন। আপনি না শিক্ষিত তাহলে এভাবে অশিক্ষিত এর মতো ব্যবহার করেন কেনো? আর আপনি আমার কোনো গার্জিয়ান নই যে এভাবে আমার প্রতিটা কাজে নাক গলাবেন, আমি না অতিষ্ঠ হয়ে গেছি আপনার এই অনধিকার চর্চায় প্লিজ আমাকে আমার মতো থাকতে দেন আর আপনিও আপনার মতো থাকুন না শুধু শুধু আমায় কেনো বিরক্ত করেন। একদমে কথাগুলো বলে মাহি থামল।

মেহরাব চারিদিকে একবার তাকিয়ে আবার মাহির দিকে তাকিয়ে রেগে ধুপধাপ পা ফেলে ওখান থেকে চলে গেলো।

চলবে,,,,,??
ভ#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_১২
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
সেদিনের পর থেকে সবকিছু কেমন যেনো হঠাৎ করেই নিস্তব্ধতায় ভরে গেছে মাঝখানে পার হয়ে গেছে আরো তিনটে দিন এর মধ্যে মাহির সাথে মেহরাব এর তেমন দেখা হয়নি যদিও দেখা হয়েছে কিন্তু প্রতিবারই মেহরাব মাহিকে ইগনোর করে গেছে। বন্ধ রুমে বিছানার উপর লম্বা হয়ে শুয়ে আছে মাহি চোখ দুটো তার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানের উপর মাথায় চলছে হাজারও চিন্তার ঝাঁক,, আচ্ছা আমার এতো বেশি কষ্ট কেনো হচ্ছে আমি কি একটু বেশিই ওনাকে বলে ফেলেছি? হ্যাঁ বেশিই হবে আমার ওভাবে ওতোগুলো মানুষের সামনে তাকে ওভাবে অপমান করা ঠিক হয়নি। আর ওনি তো ঠিকি বলেছিলো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওতোগুলো ছেলেদের সাথে হেসে হেসে ফুচকা খাওয়া মোটেও ঠিক হয়নি যদি চেনা কেউ দেখে আব্বুকে আমার নামে উল্টো পাল্টা কিছু বলতো তাহলে আব্বু অনেক কষ্ট পেতো কিন্তু আমার কি দোষ ওনি ওভাবে আমার সাথে ওই রকম ব্যবহার করলো বলেই তো আমি রেগে গেলাম। কথাগুলো মনে মনে ভাবছে মাহি হঠাৎ করেই ওর হাত চোখে চলে গেলো একি আমি কাঁদছি? কিন্তু কেনো মেহরাব ভাই আমার সাথে কথা বলছে না বলে? কিন্তু ওনি আমার সাথে কথা না বললে তাতে আমার কি? হঠাৎই অনুভব করলাম বুকের মধ্যে কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কি যেনো নেই। আমার আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝেই রুমের দরজায় কেউ অনবরত কড়া নাড়ছে চোখের পানি মুছে চুলগুলোকে হাত খোপা করে দরটাজা খুলে দিলাম।

কিরে এই ভর সন্ধ্যা বেলায় রুমের দরজা বন্ধ করে কি করছিস আর চোখ মুখের কি অবস্থা করে রেখেছিস বলতো।

কিছু না আপু এমনিতেই ভালো লাগছে না আর মাথাটাও কেমন যেনো বেথ্যা করছে তাই শুয়ে আছি তুমি হঠাৎ এই সময় কিছু হয়েছে?

কি হয়েছে সেটা তো তোরা বলবি আমি না তোদের ঠিক বুঝতে পারি নাহ তোদের সম্যসাটা কোথায় বলতো? একজন তো পন করে আছে সে নিজে কিছুই বলবে না আর কাউকে কিছু বলতেও দিবে না আর আরেকজন তো মনে হয় প্রতিঙ্গা করে আছে যে আমাকে তোমরা হাজার বোঝালেও আমি বুঝবো না দেখি তোমরা আমায় কি করে বোঝাও।

মেঘলা আপুর কথা আমি কিছুই বুঝলাম না আপুর সব কথাই যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো, আচ্ছা আপু তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো বলতো আমি তো বুঝতে পারছি নাহ।

আচ্ছা মাহি আজকে সত্যি করে একটা কথা বলতো আমায় তুই কি সত্যিই কিছু বুঝিস নাহ নাকি বুঝেও না বুঝার অভিনয় করিস। আর তুই কিন্তু এতোটাও ছোট নয় যে তোকে কোলে বসিয়ে হাতে কলমে ধরে একটা একটা করে বুঝিয়ে দেবো বোঝার মতো যথেষ্ট বয়স হয়েছে তোর তার পরেও এমন করিস কেনো বলতো কেনো এতো জ্বালাস আমার ভাইটাকে তুই জানিস না ও কতো জেদি তারপরেও তুই কেনো এতোটা অবুঝ হলি বলত এখন তো তুইও কষ্ট পাচ্ছিস সেও কষ্ট পাচ্ছে।

আপু তুমি ঠিক কি বুঝতে বলছো আমায় আমি সত্যি বুঝতে পারছি নাহ তবে কষ্ট তো আমারও হচ্ছে অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমি চাইনি ভুলটা করতে তবুও কীভাবে যে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম নাহ।

মাহি একটা ছেলে কখন একটা মেয়েকে আগলে রাগে তাকে সব খারাপ জিনিসের থেকে দূরে রাখে নিজের সব খুশি দিয়ে হলেও সেই মেয়েটাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে? আমি জানি তুই জানিস একটু ভাব তাহলেই সব কিছু বুঝতে পারবি আর যদি বুঝতে না পারিস তাহলে তুই সত্যিই একটা গাধী আমি গেলাম এখন রাত হয়ে যাচ্ছে। কথাটা বলে মেঘলা চলে গেলো আর মাহি সেতো এখন হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত।
,,,,,,,,
বাইরে কাঠ ফাঁটা রোদ উঠেছে রোদের এতো তাপ যেনো সব কিছুই মুহুর্তের ঝলসে দেবে উতপ্ত দুপুরে ওড়নার এক অংশ মাথায় আর আরেক অংশ গায়ে জরিয়ে সামনে হেঁটে চলেছি উদ্দেশ্য মেহরাব ভাইদের বাড়ি আজকে তো ওনাকে আমার সাথে কথা বলতেই হবে। মামী মণি দরজা খুলে দিতেই আমি ভিতরে গিয়ে সোফায় বসে মাথা থেকে ওড়নাটা খুলে গায়ে জড়ালাম,, মামী মণি এক গ্লাস ঠান্ডা পানি হবে আজকে অনেক বেশি গরম পড়েছে।

ফ্রিজ থেকে একটু কষ্ট করে বের করে নেনা মা আমার হাতে ময়দা লেগে আছে।

একি তুমি এই ভর দুপুরে রান্নাঘরে কি করছো তাও এই গরমে।

আর বলিস না আমার কি শান্তি আছে। ছেলের আমার নাকি আলুর পরটা খেতে মন চাইছে তাই এই দুপুর বেলা রান্না ঘরে যেতে হলো আমায়।

বলো কি এটা আবার কেমন কথা গরমে দুপুর বেলা মানুষ ঠান্ডা কিছু খাই যাতে শরীল মন মাথা সব কিছু ঠান্ডা থাকে কিন্তু তোমার ছেলের তো দেখছি পুরোটাই উল্টো আচ্ছা চলো আমিও তেমাকে সাহায্য করছি। বতল থেকে পানিটা খেয়ে আবার ফ্রিজে রেখে মামী মণির সাথে চলে গেলাম রান্নাঘরে সাহেব এর জন্য পরোটা বানাতে অবশেষে পরটা বানিয়ে তাকে দেওয়ার দায়িত্বটাও আমার ঘাড়েই পড়লো।ধীর পায়ে তার রুমের সামনে গিয়ে দরজাটা ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখি সে টিশার্ট আর থ্রী কোয়ার্টার পান্ট পরে চেয়ারে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে আর তার দুই আঙুলের ফাঁকে কলমটাকে চেপে ধরে ঘুরাচ্ছে আবার সেটা ঠোঁটের মাঝে দিয়ে গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে যেনো আইনস্টাইনের নাতি ছেলে। প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে ওনার পাশে দাঁড়ালাম কিন্তু ওনার মাঝে কোনো হেলদুল নেই প্লেট থেকে পরোটা মুখের মধ্যে নিয়ে চিবাচ্ছে আমায় একটু সাধা তো দূর তাকালো না পযন্ত।

আসলে হয়েছে কি মেহরাব ভাই আমি না আপনাকে সরি বলতে এসেছি সেদিন আমার ওভাবে বলা মোটেও ঠিক হয়নি, সরি।

আমার সরিতে যেনো ওনার পাথর হয়ে থাকা রিদয়টা গললো না আগের মতোই বসে আছে কিন্তু আমিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নই বেশ কয়েকবার একাধারে সরি বললাম আমার ভাবখানা এমন যেনো আজকে সরি বলে সরির বৃষ্টি তে ওনাকে ভাসিয়ে দেবো আর ওনি তাতে হাবুডুবু খাবেন কিন্তু সেটা মনে হয় হবে না কেননা আমি সরি বলতে বলতে আমার যৌবন পার করে দেওয়ার মতো অবস্থা কিন্তু তাতে ওনার কিছুই যায় আসে না আমার সরিকে পাত্তা না দিয়ে কী সুন্দর করে আরামে বসে আছে।

এটা কেমন কথা মেহরাব ভাই আমি এতো করে সরি বলছি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না?

আমি কি তোকে সরি বলতে বলেছি নাকি হুদাই কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান না করে প্লেটটা নিয়ে নিচে যা আমার পরিক্ষা আছে অনেক পড়তে হবে।

আপনার পরিক্ষা আছে তাতে কি আপনি শুধু একবার আমার সরিটা গ্রহন করে নেন দেখবেন আমি ঠুস করে প্লেটটা নিয়ে ঠাস করে নিচে চলে যাবো। কিন্তু না ওনি সেটা করবে না কেননা ওনি এক নাম্বারের ঘাড় তেড়্যা অগত্যা আমিও ওনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম ওনি সরি গ্রহন না করা অবধি আমিও নড়বো নাহ। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা বেথ্যা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওনি কিছুই বলছেন নাহ অবশেষে হয়ত ওনার একটু দয়া হলো ওনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন তারপর আলসি ভেঙে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দরজার দিকে চলে গেলো আমি যে এখানে এক অবলা নারী সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি তার কোনো হুশ নেই।

দরজার সামনে গিয়ে কিছু একটা ভেবে ওনি আবার আমার কাছে ফিরে এলেন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার পা থেকে মাথা অবধি দেখলেন আশ্চর্য আমাকে এভাবে দেখার কি আছে। কি সম্যসা এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো?

ওনি আমার কথার উত্তর দিলেন না আমার চারপাশে একবার গোল গোল ঘুরে আমার ঠিক পিছনে আমার গা ঘেষে দাঁড়ালেন আমি ওনার অস্তিত্ব আমার খুব কাছে অনুভব করছিলাম আচমকায় ওনি আমার চুলগুলো মুঠো করে ধরলেন। আহ কি করছেন মেহরাব ভাই আমি বেথ্যা পাচ্ছি তো ছাড়ুন।

চুল ধরলে বেথ্যা তো লাগবেই, এইটুকু বলে ওনি আর কিছু বললেন নাহ শক্ত হাতে আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে গেলো তারপর ডান গালে আস্তে করে ওনার ঠোঁট ছুইয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে পকেটে হাত রেখে ভাব নিয়ে গুনগুন করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আর আমি গোল গোল চোখে হাবলার মতো ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলাম।

চলবে,,,,

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_১২
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
সেদিনের পর থেকে সবকিছু কেমন যেনো হঠাৎ করেই নিস্তব্ধতায় ভরে গেছে মাঝখানে পার হয়ে গেছে আরো তিনটে দিন এর মধ্যে মাহির সাথে মেহরাব এর তেমন দেখা হয়নি যদিও দেখা হয়েছে কিন্তু প্রতিবারই মেহরাব মাহিকে ইগনোর করে গেছে। বন্ধ রুমে বিছানার উপর লম্বা হয়ে শুয়ে আছে মাহি চোখ দুটো তার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানের উপর মাথায় চলছে হাজারও চিন্তার ঝাঁক,, আচ্ছা আমার এতো বেশি কষ্ট কেনো হচ্ছে আমি কি একটু বেশিই ওনাকে বলে ফেলেছি? হ্যাঁ বেশিই হবে আমার ওভাবে ওতোগুলো মানুষের সামনে তাকে ওভাবে অপমান করা ঠিক হয়নি। আর ওনি তো ঠিকি বলেছিলো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওতোগুলো ছেলেদের সাথে হেসে হেসে ফুচকা খাওয়া মোটেও ঠিক হয়নি যদি চেনা কেউ দেখে আব্বুকে আমার নামে উল্টো পাল্টা কিছু বলতো তাহলে আব্বু অনেক কষ্ট পেতো কিন্তু আমার কি দোষ ওনি ওভাবে আমার সাথে ওই রকম ব্যবহার করলো বলেই তো আমি রেগে গেলাম। কথাগুলো মনে মনে ভাবছে মাহি হঠাৎ করেই ওর হাত চোখে চলে গেলো একি আমি কাঁদছি? কিন্তু কেনো মেহরাব ভাই আমার সাথে কথা বলছে না বলে? কিন্তু ওনি আমার সাথে কথা না বললে তাতে আমার কি? হঠাৎই অনুভব করলাম বুকের মধ্যে কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কি যেনো নেই। আমার আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝেই রুমের দরজায় কেউ অনবরত কড়া নাড়ছে চোখের পানি মুছে চুলগুলোকে হাত খোপা করে দরটাজা খুলে দিলাম।

কিরে এই ভর সন্ধ্যা বেলায় রুমের দরজা বন্ধ করে কি করছিস আর চোখ মুখের কি অবস্থা করে রেখেছিস বলতো।

কিছু না আপু এমনিতেই ভালো লাগছে না আর মাথাটাও কেমন যেনো বেথ্যা করছে তাই শুয়ে আছি তুমি হঠাৎ এই সময় কিছু হয়েছে?

কি হয়েছে সেটা তো তোরা বলবি আমি না তোদের ঠিক বুঝতে পারি নাহ তোদের সম্যসাটা কোথায় বলতো? একজন তো পন করে আছে সে নিজে কিছুই বলবে না আর কাউকে কিছু বলতেও দিবে না আর আরেকজন তো মনে হয় প্রতিঙ্গা করে আছে যে আমাকে তোমরা হাজার বোঝালেও আমি বুঝবো না দেখি তোমরা আমায় কি করে বোঝাও।

মেঘলা আপুর কথা আমি কিছুই বুঝলাম না আপুর সব কথাই যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো, আচ্ছা আপু তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো বলতো আমি তো বুঝতে পারছি নাহ।

আচ্ছা মাহি আজকে সত্যি করে একটা কথা বলতো আমায় তুই কি সত্যিই কিছু বুঝিস নাহ নাকি বুঝেও না বুঝার অভিনয় করিস। আর তুই কিন্তু এতোটাও ছোট নয় যে তোকে কোলে বসিয়ে হাতে কলমে ধরে একটা একটা করে বুঝিয়ে দেবো বোঝার মতো যথেষ্ট বয়স হয়েছে তোর তার পরেও এমন করিস কেনো বলতো কেনো এতো জ্বালাস আমার ভাইটাকে তুই জানিস না ও কতো জেদি তারপরেও তুই কেনো এতোটা অবুঝ হলি বলত এখন তো তুইও কষ্ট পাচ্ছিস সেও কষ্ট পাচ্ছে।

আপু তুমি ঠিক কি বুঝতে বলছো আমায় আমি সত্যি বুঝতে পারছি নাহ তবে কষ্ট তো আমারও হচ্ছে অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমি চাইনি ভুলটা করতে তবুও কীভাবে যে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম নাহ।

মাহি একটা ছেলে কখন একটা মেয়েকে আগলে রাগে তাকে সব খারাপ জিনিসের থেকে দূরে রাখে নিজের সব খুশি দিয়ে হলেও সেই মেয়েটাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে? আমি জানি তুই জানিস একটু ভাব তাহলেই সব কিছু বুঝতে পারবি আর যদি বুঝতে না পারিস তাহলে তুই সত্যিই একটা গাধী আমি গেলাম এখন রাত হয়ে যাচ্ছে। কথাটা বলে মেঘলা চলে গেলো আর মাহি সেতো এখন হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত।
,,,,,,,,
বাইরে কাঠ ফাঁটা রোদ উঠেছে রোদের এতো তাপ যেনো সব কিছুই মুহুর্তের ঝলসে দেবে উতপ্ত দুপুরে ওড়নার এক অংশ মাথায় আর আরেক অংশ গায়ে জরিয়ে সামনে হেঁটে চলেছি উদ্দেশ্য মেহরাব ভাইদের বাড়ি আজকে তো ওনাকে আমার সাথে কথা বলতেই হবে। মামী মণি দরজা খুলে দিতেই আমি ভিতরে গিয়ে সোফায় বসে মাথা থেকে ওড়নাটা খুলে গায়ে জড়ালাম,, মামী মণি এক গ্লাস ঠান্ডা পানি হবে আজকে অনেক বেশি গরম পড়েছে।

ফ্রিজ থেকে একটু কষ্ট করে বের করে নেনা মা আমার হাতে ময়দা লেগে আছে।

একি তুমি এই ভর দুপুরে রান্নাঘরে কি করছো তাও এই গরমে।

আর বলিস না আমার কি শান্তি আছে। ছেলের আমার নাকি আলুর পরটা খেতে মন চাইছে তাই এই দুপুর বেলা রান্না ঘরে যেতে হলো আমায়।

বলো কি এটা আবার কেমন কথা গরমে দুপুর বেলা মানুষ ঠান্ডা কিছু খাই যাতে শরীল মন মাথা সব কিছু ঠান্ডা থাকে কিন্তু তোমার ছেলের তো দেখছি পুরোটাই উল্টো আচ্ছা চলো আমিও তেমাকে সাহায্য করছি। বতল থেকে পানিটা খেয়ে আবার ফ্রিজে রেখে মামী মণির সাথে চলে গেলাম রান্নাঘরে সাহেব এর জন্য পরোটা বানাতে অবশেষে পরটা বানিয়ে তাকে দেওয়ার দায়িত্বটাও আমার ঘাড়েই পড়লো।ধীর পায়ে তার রুমের সামনে গিয়ে দরজাটা ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখি সে টিশার্ট আর থ্রী কোয়ার্টার পান্ট পরে চেয়ারে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে আর তার দুই আঙুলের ফাঁকে কলমটাকে চেপে ধরে ঘুরাচ্ছে আবার সেটা ঠোঁটের মাঝে দিয়ে গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে যেনো আইনস্টাইনের নাতি ছেলে। প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে ওনার পাশে দাঁড়ালাম কিন্তু ওনার মাঝে কোনো হেলদুল নেই প্লেট থেকে পরোটা মুখের মধ্যে নিয়ে চিবাচ্ছে আমায় একটু সাধা তো দূর তাকালো না পযন্ত।

আসলে হয়েছে কি মেহরাব ভাই আমি না আপনাকে সরি বলতে এসেছি সেদিন আমার ওভাবে বলা মোটেও ঠিক হয়নি, সরি।

আমার সরিতে যেনো ওনার পাথর হয়ে থাকা রিদয়টা গললো না আগের মতোই বসে আছে কিন্তু আমিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নই বেশ কয়েকবার একাধারে সরি বললাম আমার ভাবখানা এমন যেনো আজকে সরি বলে সরির বৃষ্টি তে ওনাকে ভাসিয়ে দেবো আর ওনি তাতে হাবুডুবু খাবেন কিন্তু সেটা মনে হয় হবে না কেননা আমি সরি বলতে বলতে আমার যৌবন পার করে দেওয়ার মতো অবস্থা কিন্তু তাতে ওনার কিছুই যায় আসে না আমার সরিকে পাত্তা না দিয়ে কী সুন্দর করে আরামে বসে আছে।

এটা কেমন কথা মেহরাব ভাই আমি এতো করে সরি বলছি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না?

আমি কি তোকে সরি বলতে বলেছি নাকি হুদাই কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান না করে প্লেটটা নিয়ে নিচে যা আমার পরিক্ষা আছে অনেক পড়তে হবে।

আপনার পরিক্ষা আছে তাতে কি আপনি শুধু একবার আমার সরিটা গ্রহন করে নেন দেখবেন আমি ঠুস করে প্লেটটা নিয়ে ঠাস করে নিচে চলে যাবো। কিন্তু না ওনি সেটা করবে না কেননা ওনি এক নাম্বারের ঘাড় তেড়্যা অগত্যা আমিও ওনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম ওনি সরি গ্রহন না করা অবধি আমিও নড়বো নাহ। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা বেথ্যা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওনি কিছুই বলছেন নাহ অবশেষে হয়ত ওনার একটু দয়া হলো ওনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন তারপর আলসি ভেঙে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দরজার দিকে চলে গেলো আমি যে এখানে এক অবলা নারী সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি তার কোনো হুশ নেই।

দরজার সামনে গিয়ে কিছু একটা ভেবে ওনি আবার আমার কাছে ফিরে এলেন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার পা থেকে মাথা অবধি দেখলেন আশ্চর্য আমাকে এভাবে দেখার কি আছে। কি সম্যসা এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো?

ওনি আমার কথার উত্তর দিলেন না আমার চারপাশে একবার গোল গোল ঘুরে আমার ঠিক পিছনে আমার গা ঘেষে দাঁড়ালেন আমি ওনার অস্তিত্ব আমার খুব কাছে অনুভব করছিলাম আচমকায় ওনি আমার চুলগুলো মুঠো করে ধরলেন। আহ কি করছেন মেহরাব ভাই আমি বেথ্যা পাচ্ছি তো ছাড়ুন।

চুল ধরলে বেথ্যা তো লাগবেই, এইটুকু বলে ওনি আর কিছু বললেন নাহ শক্ত হাতে আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে গেলো তারপর ডান গালে আস্তে করে ওনার ঠোঁট ছুইয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে পকেটে হাত রেখে ভাব নিয়ে গুনগুন করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আর আমি গোল গোল চোখে হাবলার মতো ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলাম।

চলবে,,,,?