ভালোবাসি বুঝে নাও ৩ পর্ব-৭+৮+৯

0
389

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৭
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
সারাদিন অনেক আনন্দ করে কাটলো সন্ধ্যার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হবে গায়ে হলুদ উপলক্ষে সবাই শাড়ি পড়েছে কিন্তু আমি পড়িনি কেননা একেতেই অচেনা জায়গা সেখানে আবার শাড়ি পড়লে লোকে কি বলবে তারচেয়ে বড় কথা আমি শাড়ি আনিনি তাই আমি বিছানায় বসে সবার রেডি হওয়া দেখছি সবাই শাড়ি পড়েছে কেবল আমিই একমাএ যে কিনা লাল রঙের একটা থ্রী পিস পড়ে বসে আছি। আমার বসে থাকা দেখে মেঘলা আপু আমার কাছে এসে বলল, কিরে তুই এখনো রেডি না হয়ে এভাবে বসে আছিস কেনো?

আমি তো রেডি মেঘলা আপু।

মানে তুই শাড়ি পড়বি না?

না মেঘলা আপু আমি এভাবেই ঠিক আছি আর আমি তো শাড়ি আনিনি তাই পড়বো না।

আরে ও যখন পড়তে চাইছে না তখন তুই ওকে এতো জোর করছিস কেনো থাক না, পাশ থেকে মীরা বলল।

কেনো তা হবে কেনো আমরা সবাই শাড়ি পড়েছি তখন মাহিও শাড়ি পড়বে কিন্তু আমার কাছে তো হলুদ শাড়ি নেই তুই বরং এই লাল শাড়িটা পড় তাহলে তোকে অনেক সুন্দর লাগবে।

আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে পড়িয়ে দাও৷

মেঘলা খুশি হয়ে মাহিকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো তারপর মাহি নিজে নিজেই সেজে নিলো চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে মাথায় টিকলি কানে দুল গলায় হার দুহাত ভর্তি চুড়ি আর মুখে হালকা মেকাপ। মেহরাব ও আজকে হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে পাঞ্জাবির হাতা কনুই পযন্ত গুছিয়ে রেখেছে ডান হাতে ঘড়ি আর গলায় ক্যামেরা ঝুলানো কেননা মীম বলেছে ওর গায়ে হলুদ থেকে বিয়ের সব ছবি যেনো মেহরাব তোলে মেহরাব এর ছবি তুলার হাত নাকি অনেক ভালো। সোফায় একটা পিচ্চি কে বসিয়ে তার ছবি তুলছিলো মেহরাব তখনি সিঁড়ি থেকে ঝুমুর ঝুমুর আওয়াজ আসলো মেহরাব সেদিকে তাকাতেই যেনো হ্যাঁ হয়ে গেলো কেননা সব মেয়েরা সিঁড়ি বেয়ে নামছে সবাই হলুদ শাড়ি পড়া আর ওদের মাঝখানে মাহি লাল খয়েরী শাড়ি পড়ে একহাত দিয়ে শাড়ির কুঁচি ধরে আর আরেক হাতে চুল কানে পিছে গুজতে গুজতে মাহি নিচে নামছে এতো গুলো হলুদের মাঝে মাহির লাল শাড়িটা ফুঁটে উঠেছে যেনো হাজারো হলুদের মাঝে সদ্য ফোঁটা এক লাল টকটকে গোলাপ মেহরাব এক ধ্যানে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা মেহরাব এর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে মেহরাব মাহির দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা দুষ্টু হেসে মেহরাব এর কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,, ভাইয়া আমরা সবাই মাহিকে এখানে রেখে চলে যায়? কি বলিস।

তাহলে তো অনেক ভালো হবে, আনমনে বলল মেহরাব পরক্ষণেই হুশ ফিরতেই কাশি দিয়ে বলল, হ্যাঁ কি বললি মেঘলা ঠিক শুনতে পাইনি।

হুম পাবি কীভাবে তোর মন কি আর এখানে আছে, বলছি কি যে আমাদের ছবি তুলে দে।

আমাকে কেমন লাগছে মেহরাব ভাই,, মীরা বলল।

ভালোই লাগত যদি মুখে আটা ময়দা একটু কম করে মাখতি তাহলে এখন চল সবাই ওদিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে৷ সবাই বাগানে চলে গেলো মেঘলা গিয়ে মীম এর পাশে বসল আর সবাই গিয়ে বসে পড়ায় আর জায়গা নেই তাই মাহি মেঘলার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল একটু পরেই মেহরাব গিয়ে মাহির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো তাও একদম মাহির গা ঘেষে। কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো একটু সরে দাঁড়ান।

তার আগে বল এই ব্লাউজ তুই কোথায় পেয়েছিস পিঠের অর্ধেক তো বার হয়ে আছে চুল সামনে থেকে পিছনে আন। আর এমন ব্লাউজ যদি আর কখনো পড়া দেখি তাহলে টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। রেগে বলল মেহরাব।

আরে এটা আমার ব্লাউজ নাকি এটা তো মীরা আপুর ব্লাউজ আমার বড় হয়েছে আমি তো শাড়ি ব্লাউজ কিছু আনিনি তাই ওনার থেকে নিয়েছি।

ভালো করে চুল পিছনে দিয়ে আঁচল দিয়ে পিঠ ঢেকে রাখ নয়ত কিন্তু আমি ফুপিকে বলে দেবো, এভাবে খানিকক্ষণ মাহিকে শাসিয়ে মেহরাব ওখান থেকে চলে গেলো সবার ছবি তুলে দিতে হবে তাই। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় অনেক রাত হয়ে গেছে মাহির ভালো লাগছে না তাই মেঘলা কে বলে রুমে আসলো কিন্তু রুমে এসে দেখল সেখানেও মানুষ তাই অগত্যা ছাদে চলে আসলো ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে তখনি পিছন থেকে কেউ বলল,, সত্যি তুমি তো দেখছি অনেক ইউনিক যেখানে আজকে সবাই হলুদ রঙ পরেছে সেখানে তুমি পুরটাই ভিন্ন লাল রঙে নিজেকে রাঙিয়েছো আর সবার দৃষ্টি নিজের দিকে নিয়ে নিয়েছো।

মাহি পিছনে তাকিয়ে দেখল রনি, ও আপনি আসলে আমি বরাবরই এমন তবে আজকে আমিও হলুদই পরতে চেয়েছিলাম কিন্তু ছিলো না বিধায় লাল পড়তে হলো।

আমি তো পুরো অনুষ্ঠানে লাল পিচ্চি টাকেই দেখে গিয়েছি শুধু তবে তোমার সাথে যতবারই কথা বলতে গিয়েছি শুধু মেহরাব চলে এসেছে আচ্ছা মেহরাব একটু বেশিই করছে নাহ? এভাবে তোমার মতের বিরুদ্ধে তোমাকে জোর করে তুমি কিছু বলো না কেনো নাকি ভয় পাও আচ্ছা তুমি যদি বলো তাহলে আমি মেহরাব এর মায়ের সাথে এ ব্যাপারে বলতে পারি।

কেনো জানি ওনার মুখে মেহরাব এর নামে খারাপ কথা শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগছে নাহ তাই কিছু বললাম না শুধু শুধু বলে কি লাভ কথাই কথা বাড়বে তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখনি কোথা থেকে মেহরাব ঝড়ের বেগে এসে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল, নিচে চল খাওয়া জন্য ডাকছে।

ওনি আমার হাত এতোটাই শক্ত করে ধরেছে হয়ত যেখানে ধরেছে সেখানে রক্ত জমে গেছে আলো কম তাই দেখতে পাচ্ছি না বেথ্যায় আমার চোখের কোণে পানি জমে গেছে তবুও অনেক কষ্ট বললাম,, আমি বেথ্যা পাচ্ছি।

তো বেথ্যা পেলেও কিছু যাই আসে না চল আমার সাথে।

এটা কি ধরনের বাজে ব্যাবহার মেহরাব তুই মাহির সাথে এভাবে কথা বলতে পারিস না ওর হাতটা ছাড় দেখছিস না ও বেথ্যা পাচ্ছে আর তোর এতো কিসের অধিকার ওর উপর ভাই আছিস ভায়ের মতো থাক ছাড় ওর হাতটা।

কেনো তোর এতো লাগছে কেনে আমি ছাড়বো না ওর হাত আর এতো কথা বলার তুই কে,, মেহরাব রেগে রনিকে ধাক্কা দিয়ে বলল। মেহরাব একহাতে মাহির হাত ধরে রেখেছে আর আরেক হাতে রনির পাঞ্জাবির কলার ধরে রেখেছে। কি করছিস কি মেহরাব ছাড় বলছি, রনি চেঁচিয়ে বলল।

ওদের ঝগড়ায় মাহি খুব ভয় পেয়ে গেছে তবে এটা ও ভালো করেই বুঝতে পরেছে ঝগড়াটা ওকে নিয়েই মাহি শুকনো একটা ঢোক গিলে মেহরাব এর হাত ধরে টানতে লাগল, মেহরাব কি করছেন কি ছাড়ুন ওনাকে আর রনি ভাইয়া আপনি কিছু মনে করবেন না তবে আপনার এভাবে ওনার সাথে কথা বলা মোটেও ঠিক হয়নি মেহরাব ভাই মোটেও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাহ।

মাহি তুমি কি ওকে ভয় পাচ্ছো? আরে ওকে ভয় পাওয়া কোনো দরকার নাই তুমি সত্যিটা বলো শুধু একবার বলো মেহরাব তোমায় জোর করে তারপর দেখো আমি কি করি বলো কোনো ভয় নেই আমি আছি তো। রনির কথা শুনে মেহরাব তো পুরো রেগে আগুন হয়ে গেছে ফর্সা মুখটা লাল টকটকে হয়ে গেছে যেনো এখনি রনিকে খুন করে ফেলবে মাহি অবস্থা বেগতিক দেখে বলল,, আপনি ভুল ভাবছেন রনি ভাইয়া এমন কিছুই নয় আর আপনারা শুধু শুধু নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করছেন প্লিজ যান এখান থেকে। মাহির কথা শুনে রনি ওখান থেকে চলে গেলো মাহি মেহরাব কে কিছু বলবে তার আগেই মেহরাব মাহির হাত ঝাড়া দিয়ে ও চলে গেলো মাহি মেহরাব এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল আবার কোন নতুন ঝড় আসতে চলেছে ওর জীবনে।

চলবে,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৮
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
সেদিন রাতে আর মেহরাব ভাই এর সামনে গেলাম না কেননা ওনি যে হারে রেগে আছে না জানি আমাকে সামনে পেলে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে তাই কোনোমতে খেয়ে শুয়ে পরছিলাম। বিছানায় শুয়েই শুনতে পাচ্ছি বাইরে পাখি ডাকছে হয়ত সকাল হতে আর বেশি বাকি নেই একটু পরেই সবাই উঠে পরবে কেননা আজকে বিয়ে কাথাটা ভালোমতো গায়ে জড়িয়ে শুয়ে আছি আমার দুপাশে মেঘলা আপু আর মীরা আপু নিচে ফ্লোরে যে আর কয়জন আছে তার হিসাব নেই। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতেই বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলো তখনি মনে হচ্ছে আমার পায়ের কাছের কাথাটা ধরে কেউ টানছে আমি ভাবলাম হয়ত নিচে যারা ঘুমাইছে তাদের মধ্যে কেউ ভুল করে টেনছে ওতটা পাত্তা না দিয়ে পা গুছায়ে নিলাম কিন্তু পরক্ষণেই আবার কেউ কাথা ধরে টানছে এবার বেশ বিরক্তই হলাম তাই উঠে বসলাম দেখার জন্য যে কে এভাবে কাথা ধরে টানাটানি করছে। উঠে বসতেই সামনে তাকাতেই দেখি লম্বা মতো কেউ খাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে ভালো আলো ফুঁটিনি তাই মুখ দেখা যাচ্ছে না আমি ভয় পেয়ে চিৎকার দেবো না কাউকে ডাকবো সেটাই ভুলে গেছি আমার তাকানো দেখে সামনে দাঁড়ানো লোকটা বলল,, কীরে এভাবে বলদের মতো বসে আছিস কেনো সেই কখন থেকে ডাকছি কথা কানে যাই না আর ফোন কই তোর গাধী একটা।

ওনার কথা শুনতেই আমি বালিশের নিচে থেকে ফেনটা বার করে দেখি মেহরাব ভাই এর অনেক গুলো মিসকল উঠে আছে আমি বুঝে গেলাম সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেটা কে,, আপনি এখানে কি করছেন?

এতো প্রশ্ন না করে জলদি উঠে বাইরে আয় কথা আছে বাড়িতে ঘুমানোর জায়গার অভার পরেছে সবগুলো এখানে কেমন মরার মতো পরে আছে। কথা গুলো বলতে বলতে ওনি সাবধানে পা ফেলে বাইরে চলে গেলো। আমি আর কি করবো আমিও চুলটা হাত খোঁপা করে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিচে নামলাম কিন্তু ভুল বসত কার হাতের উপর যেনো পাড়া দিয়ে ফেললাম কিন্তু সে গভীর ঘুমে ছিলো বিধায় কোনো সাড়া শব্দ করলো না আমিও যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম নিঃশব্দে রুম থেকে বেরোতেই মেহরাব আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।

একি এভাবে আমায় টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তাও এতো সকালে আরে সবাই এখন উঠে পরবে তো ছাড়ুন। কিন্তু কে শোনে কার কথা ওনি কোনো কথা না বলে আমায় নিয়ে সোজা গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো।এখন আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি হালকা আলো ফুঁটতে শুরু করেছে ওনি আমার হাত ছেড়ে দিয়েছেন আমি ওনার সাথে সাথে হেঁটে চলেছি। অনেক্ক্ষণ নিরবতার পর আমি জিগাস করলাম,, এবার তো বলুন আমরা কোথায় যাচ্ছি।

কেনো তুই না বলেছিলি যে তোর এখানকার জায়গাটা ঘুরে দেখার অনেক সখ আবার কবে আসবি তার ঠিক নেই এই জন্যই তো তোকে নিয়ে আসলাম।

কিন্তু তাই বলে এতে সকালে? এখন সবাই উঠে যদি আমায় আর আপনাকে খুঁজে না পাই তাহলে তো চিন্তা করবে আমরা বিকেলের দিকে আসতাম সবাই মিলে তাহলেই তো ভালো হতো।

এই জন্যইতো তোকে আমি গাধী বলি আজকে বিয়ে শেষে বউকে উঠায়ে দিয়ে তোর বাপ কি তোকে রেখে যাবে? সাথে করে নিয়ে যাবে তখন কীভাবে আসতি আর কেউ খোঁজার আগেই আমরা বাড়িতে ফিরে যাবো।

সত্যি ওনার কথায় যুক্তি আছে তাই আমিও আর বেশি কথা বাড়ালাম না ওনার সাথে সকালের এই অপরূপ সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। ওনার সাথে অনেক দূর পযন্ত হাঁটলাম ওনি আমায় হাত দিয়ে এটা ওটা দেখাচ্ছিলে প্রায় অনেকটা সময় পর ঘড়িতে দেখলাম সাতটা বেজে গেছে আর এখন দু একটা গাড়িও চলছে তাই আমরা আর দেরি না করে রিকসায় উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম সত্যি আজকের সকালটা ভীষণ সুন্দর ছিলো। রিক্সা থেকে নেমে ওনি আমায় আগে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো আমি ভয়ে ভয়ে গেট দিয়ে ভীতরে ঢুকলাম দেখলাম প্রায় সবাই উঠে পরেছে বাড়ির উঠানের এক সাইটে খিচুড়ি রান্না হচ্ছে মেঘলা আপুসহ মীরা আপু তার কাজিনরা চেয়ারে বসে ব্রাশ করছে আমি মেঘলা আপুর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই আপু জিগাস করলো,, কিরে এতো সকালে উঠে কই গিছিলি? তাও একা একা?

আসলে আপু আমার ঘুম ভেঙ্গে গিছিলো তাই আশপাশ দিয়ে হাঁটতে গিছিলাম আর কি। ভয়ে মিথ্যা কথাটা বললাম।

আচ্ছা ঠিক আছে যা ফ্রেশ হয়ে নে এখনি রান্না হয়ে যাবে। আমিও মেঘলা আপুর কথা অনুযায়ী রুমে চলে গেলাম তবে মীরা আপু কেমন করে যেনো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। রুমে গিয়ে ব্রাশ নিতেই ফোনটা বেজে উঠলে হাতে নিয়ে দেখি মেহরাব ভাই কল দিয়েছে আমি ফেনটা রিসিভ করতেই ওনি বলল ,, কিরে রুমে পৌঁছেছিস?

হম কিন্তু আপনি কোথায়?

সেটা তোর না জানলেও হবে। কথাটা বলেই ওনি ফোনটা কেটে দিলো আমিও ফোনটা রেখে ব্রাশ করায় মন দিলাম।
,,,,
বর আসতে আসতে প্রায় বিকেল হয়ে গেলো তারপর সব ঝামেলা শেষে বিয়ে পড়ানো হলো সবাইকে খাইয়ে মেয়ে তুলে দিতে দিতে মাগরিব ওয়াক্ত পাড় হয়ে গেছে বাইরে অন্ধকার কিন্তু বাড়িতে সব জায়গায় লাইট দেওয়ায় চারিদিকে আলোয় ভরে আছে দুপুরের দিকে আব্বু আম্মু সহ ছোট ভাই এসেছে। বর্তমানে আমি এখন বারান্দার এক কোণে নিজের লেহেঙ্গা খাঁমচে ধরে দাঁড়িয়ে আছি বাকিরা মেয়েকে গাড়িতে তুলে দিতে গেছে এতো আমেজে মজে থাকা বিয়ে বাড়িটা এখন কান্নায় ভরপুর আমারও কেমন জানো কান্না পাচ্ছে তাই ভিরের মধ্যে না গিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছি আমার থেকে কিছুটা দূরে চেয়ার পেতে মেহরাব ভাই বসে আছে বেচারা হাঁপিয়ে গেছে কাজ করতে করতে। রনি ভাইয়া ব্যাগটা দিয়ে এসে মেহরাব এর পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে বসল নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে আমার জন্যই বোধহয় ওনাদের সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে গেলো একেতে সবার কান্না দেখে কান্না পাচ্ছে তার উপর এসব কথা মনে পড়ে আরো বেশি কান্না পাচ্ছে। মীম আপুকে গাড়িতে তুলে দিয়ে সবাই বাড়ির দিকে আসছিলো আপুর মা তো কান্না করতে করতে প্রায় অসুস্থ হয়ে গেছে তাই ওনাকে চেয়ারে বসায়ে বাতাস করছে আর সবাই বোঝাচ্ছে যে মেয়ে তো কালকেই আবার চলে আসবে আমি ওইদিকে তাকিয়ে ছিলাম তখনি হঠাৎ করে কারেন্ট চলে গেলো ব্যাস মুহুর্তেই হইচই শুরু হয়ে গেলো সব ডাকাডাকি করছে আলো আনার জন্য আমি অন্ধকারে ভয়ে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি তখনি কেউ ঝড়ের গতিতে এসে আমার মুখের দুপাশে হাত রেখে কপালে পরপর দুটো চুমো দিলো আর দুগালে দুটো দুটো করে মোট চারটে চুমো দিলো আর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,, ঠোঁটের টা সময় হলেই পেয়ে যাবা ওখানে পৌঁছানোর অধিকার আপাতত এখনো পাইনি, কথাটা বলেই সেই ব্যাক্তিটা আবার ঝড়ের গতিতে চলে গেলো আমি শুধু হাবার মতো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম অন্ধকার হওয়ার মুখটা দেখতে পাইনি। কিছুক্ষণ পর কারেন্ট আসলে আমি গালে হাত রেখে সামনে তাকালাম এই আকামটা কে করলো সেটা দেখার জন্য কিন্তু আমি বুঝবো কীভাবে?
মেহরাব এর দিকে তাকাতেই দেখি ওনি সেভাবে চেয়ারে বসে নিজের পাঞ্জাবি দিয়ে বাতাস নিচ্ছে আর রনি ভাইয়া ও নিজের ফোন টিপছে তাহলে এই কাজটা করলো কে রনি ভাইয়া? নাউজুবিল্লাহ ওনি কেনো হবে ছিঃ ছিঃ তাহলে কি মেহরাব ভাই? আস্তাগফিরুল্লাহ এসব কি ভাবছি আমি ওনি কেনো এটা করবে তাহলে করলো টা কে?

চলবে,,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৯
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
গাড়িতে বসে গালে হাত রেখে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে ভাবছি আসলে আমায় চুমুটা কে দিলো তাও একটা দুইটা না মোট ছয়টা কে হতে পারে একবার তারে হাতের কাছে পায় কাঁচা চিবিয়ে খাবো। এক গাড়িতেই আমরা সবাই বাসায় ফিরছি মেহরাব ভাই এর সামনে পরিক্ষা আর মেঘলা আপুর ও ক্লাস আছে এই জন্য ওরা দুজন আমাদের সাথে চলে আসছে মামী মণি আর মামা দুইতিন দিন পরে আসবে। আমি মেঘলা আপুর কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছি আর সামনে ডাইভার এর পাশে মেহরাব ভাই বসেছে মাঝখানে আব্বু আম্মু আর মনির(ছোট ভাই) রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে আমরা বাসায় এসে পৌঁছালাম মেঘলা আপু একা থাকবে তাই আমি আপির কাছে থাকবো যতদিন না মামী মণি আসছে। কোনো রকমে এলোমেলো পায়ে আপুর রুমে গিয়েই ধপাস করে শুয়ে পরলাম।

কিরে এসেই শুয়ে পরলি কেনো জামা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নে নয়ত জামা নষ্ট হয়ে যাবে।

হুর আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমি জামা টামা চেঞ্জ করতে পারবো নান,, শুয়ে থেকেই ঘুম ঘুম গলায় বললাম। আমার কথা শুনে আপু আমার কাছে এসে আমাকে টেনে তুলতে লাগল কিন্তু আমিও নাছোরবান্দা কিছুতেই উঠবো নাহ তাই গাপটি মেরে পরে থাকলাম আপু আমায় টানতে লাগল তখনি মেহরাব ভাই দরজায় এসে আপুর নাম ধরে ডাকতে লাগল,, মেঘলা দরজা খোলত ঘুমিয়ে পরেছিস নাকি।

মেহরাব ভাই এর গলা শুনে আমি চট করে উঠেবসে ভালো করে গায়ে ওড়না জরিয়ে নিলাম আপুও নিজেকে ঠিক করে দরজা খুলে দিলো, কি হয়েছে ভাইয়া কিছু বলবি?

বলছি যে তোরা কি রাতে কিছু খাবি?

নাহ এখন আর কিছু খাবো না এখন সোজা শুয়ে পড়বো।

আচ্ছা ঠিক আছে আর ওইটা ওভাবে খাটাশ এর মতো বসে আছে কেনো ওটাকে বল এভাবে বসে না থেকে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়তে আর তোর ফোনের চার্জারটা দে আমারটা ওখানে গিয়ে হারিয়ে গেছে।

মেহরাব ভাই আর রুমে ঢুকলো নাহ মেঘলা আপু চার্জারটা দিতেই ওনি সেটা নিয়ে চলে গেলো আমিও চেঞ্জ করে মুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়লাম।
,,,,,,,,,,
গতরাতে অনেক রাত করে ঘুমিয়ে যাওয়ায় সকালে কেউ ঠিক পাইনি তিনজনই পরে পরে ঘুমাচ্ছে আজকে শুক্রবার বিধায় কেউ আর সকালে উঠেনি শুধু উঠে নামাজটা পড়ে আবার ঘুমিয়ে গেছে। সকাল নয়টার দিকে মেঘলা উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো নয়টা বেজে গেছে পাশে তাকিয়ে দেখে মাহি চার হাতপা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে মাহিকে দেখে মেঘলা মুচকি হেসে বলল,, এই ছোট্ট মেয়েটা নাকি আমার ভাবি হবে ভাবা যায় আমার ভাইটা যে ঘাড় তেড়্যা কি আছে তোর কপালে আল্লাহ জানে। তুই না জানলেও আমি জানি আমার ভাই তোকে কতটা ভালোবাসে কিন্তু তুই যে বোকা সেটা বুঝতেই পারিস না তবে আমার ভাই জানে না আমিও তার বোন কাল অন্ধকারে ভালোই সুযোগ নিলো। মেঘলা মনে করলো কালকে সবাই যখন মীমকে গাড়িতে তুলে দিতে গেলো তখন মেঘলা ওর ফোন নিতে রুমে এসেছিল ফোন নিয়ে টিপতে টিপতে রুম থেকে বেরোচ্ছিলো কারেন্ট ছিলোনা তাই ফোনের আলোয় সামনে এগোচ্ছিলো তখনি দেখলো বারান্দার এককোণে কেউ দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা ভালো করে তাকিয়ে দেখল ওটা মাহি মেঘলা মাহির কাছে যাচ্ছিলো তখনি কেউ দ্রুত গতিতে মাহির কাছে গেলো কে গেলো সেটা ভালো করে বুঝতে না পারলেও যখন সেই ব্যাক্তি চলে যাওয়ার সময় ওর সামনে দিয়ে গেলো তখন ফোনের হালকা আলোয় নিজের ভাইকে দেখে পুরো কাহিনীটা বুঝে গিয়েছিলো আর এই বোকা মেয়েটা এখনো ভেবেই যাচ্ছে ওর সাথে এটা কে করলো ও কি বোঝেনা আমার ভাই থাকতে কোনো ছেলে ওর কাছে তো দূর ওর সীমানায়ও আসতে পারবে নাহ। মেঘলা মুচকি হেসে কাথাটা মাহির গায়ে টেনে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো। ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে কেবলি মুখের মধ্যে নিয়েছে তখনি কলিং বেল বেজে উঠল মেঘলা মুখের মধ্যে ব্রাশ নিয়েই গেলো দরজা খুলতে দরজা খুলতেই দেখলো মেঘ দাঁড়িয়ে আছে।

মেহরাব এর সাথে দেখা হয়না প্রায় কয়েকদিন আজকে ছুটি থাকায় মেহরাব এর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু দরজা খুলতেই এমন একটা দৃশ্য দেখবো কখনোই ভাবিনি মুখে ঘুমের রেশ এখনো কাটিনি এলোমেলো চুল মুখের মধ্যে ব্রাশ আমি যেনো তাকে দেখেই অন্য জগতে হারিয়ে গেছি। কি হলো কাকে চাই?

মেহরাব আছে?

হুম আছে আর আপনি সেই দিনের সেই পুলিশ না? শুনুন আমি কিন্তু সেদিন মোটেও আপনাকে ভয় পেয়ে সরি বলিনি নিহাত ভাইয়া বলেছিলো তাই বলেছি আপনি পুলিশ এই জন্য ভয়ে বলিনি ওকে।

তাই নাকি তুমি তো দেখি অনেক সাহসী তুমি কি জানো আমি মেহরাব এর থেকে বয়সে বড় যদিও আমরা বন্ধু তবু ও কিন্তু আমায় সম্মান দিয়ে কথা বলে আর তুমি এইটুকুনি একটা মেয়ে হয়ে বলছো আমায় ভয় পাও না? বাহ এটা তো খুবি ভালো কথা।

ক, কি মনে করেছেন আপনার এই কথাশুনে আমি ভয় পাবো মোটেও নাহ।

ভয় পাও না সেটাতো ভালো কিন্তু তুমি এভাবে তোলাচ্ছো কেনো?

মেঘলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে মাহি চোখ ডলতে ডলতে বলল, কার সাথে কথা বলছো মেঘলা আপু।

একটু সাইট প্লিজ, মেঘলা কে কথাটা বলে মেঘ ভিতরে ঢুকে মাহির কাছে গিয়ে বলল৷ এই যে মিষ্টি বোনটি তোমার মেহরাব মানে মেহরাব কোথায়?

ওনিতো উপরে ওনার রুমে ঘুমাচ্ছে।

আচ্ছা ঠিক আছে, কথাটা বলে মেঘ মেঘলার দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে চলে গেলো। মেঘলাও দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে মাহিকে বলল, ফ্রেশ হয়ে এসে রান্নায় আমাকে সাহায্য কর সেই কালকে কখন খেয়েছি ক্ষিদেয় পেটের মধ্যে ছুঁচোই ডন মারছে।

ঠিক আছে আপু আমি এখনি আসছি। তারপর দুজনে মিলে রান্না সেরে ফেলল মেঘলা রান্না শেষ করে হাতমুখ ধুতে গেছে আর মাহি সব খাবার ডাইনিং টেবিলে এনে রাখছে তখনি মেহরাব আর মেঘ সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নামলো। কিরে রান্না হয়েছে? মেহরাব মাহির চুল টেনে বলল।

আহ এভাবে চুল ধরে টানছেন কেনো আমার বুঝি বেথ্যা লাগে নাহ, মাথা ডলতে ডলতে বলল মাহি।

ঠিকিতো মেহরাব তুই এভাবে আমার বোন এর চুল ধরে টানতে পারিস না এটা ভারি অন্যায়।

বোন? মাহি আবার কবে তোর বোন হলো। বুঝতে না পেরে বলল মেহরাব।

আরে বুঝলি না মাহি যদি তোর ওই যে ওইতা হয় তাহলে তো ও আমার বোনই হবে তাই না।

আপনারা ইশারায় আমাকে নিয়ে কি বলছেন? মাহি কমরে হাত রেখে বলল।

সেটা তোর বুঝতে হবে না সর দেখি, তারপর মেহরাব আর মেঘ টেবিলে বসে পড়ল মেঘলা আসতেই মাহি ও মেঘলা দুজনেই টেবিলে বসে পড়ল মেঘলা খেতে খেতে আড়চোখে মেঘের দিকে তাকাতেই দেখল মেঘ আগে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে দুজনের চোখাচোখি হতেই মেঘলা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। ওদিকে মাহি খাচ্ছে আর গালে হাত রেখে ভাবছে কালকে ওকে কে চুমু দিলো মাহিকে এভাবে ভাবতে দেখে মেঘ বলল, কি হয়েছে মাহি তুমি খাচ্ছো না কেনো? আর ওভাবে গালে হাত দিয়ে রেখেছো কেনো তোমার গালে কি কেউ কিছু করেছে?

মেঘ এর এই কথা শুনতেই মেহরাব এর বেশম লেগে গেলো মেহরাব কাশতে লাগল,, কিরে তোর আবার কি হলো নে পানি খা পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বলল মেঘ।

চুপ করে খাবি খাওয়ার সময় এতো বেশি কথা বলিশ কেনো তোরা আর মাহি গাল থেকে হাত নামা গালে হাত রেখে খেতে নাই। মাহিকে ধমকে কথাটা বলতেই মাহি গাল থেকে হাত নামিয়ে খেতে লাগল।

চলবে,,,,??