ভালোবাসি বুঝে নাও ৩ পর্ব-৪+৫+৬

0
467

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৪
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
মেয়েটা এসেই মেহরাব এর হাত ধরে টানাটানি করতে লাগল আমি চিনিনা বিধায় কিছু না বলে ওনার থেকে একটু সরে বসলাম আর এতে যেনো মেয়েটার লাভ হলো হুট করে আমার আর মেহরাব এর মাঝখানে বসে পড়ল। আহ মীরা কি করছিস কি এখানে জায়গা নেই দেখছিস না আর আমরা তো নামছিলামই।

আরে তোমার পাশে কীভাবে জায়গা করে নিতে হয় সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে এই মেয়ে ওই দিকে একটু চেপে বসো তো।

আরে গাধী এই পাশে যে আর একজন বসে আছে সেটা চোখে পড়ছে না আর কীভাবে চেপে বসব আজব নিজের বাড়িতে হলে এই কথাগুলো ঠিকি মুখের উপর বলে দিতাম কিন্তু এখানে তেমন কাউকেই চিনি না তার উপর আবার আব্বু আম্মু ও নেই যদি কোনো বেয়াদবি হয়ে যায় তাহলে আব্বুর মান সম্মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলবে আমার আব্বু আমাকে শিক্ষা দিতে পারিনি তাই নরম সুরে বললাম,, আসলে আপু এই পাশে আর জায়গা নেই এখানে মেঘলা আপু আছে।

তোর এখানে বসতে ইচ্ছে হচ্ছে তো ওকে তাহলে তুই বস আমিই নেমে যাচ্ছি, কথাটা বলে মেহরাব ওই মেয়েটার ধরে রাখা হাতটা ছেড়ে দিয়ে উঠে নেমে গেলো। আর মেহরাব ভাই এর পিছনে পিছনে মেয়েটাও নেমে গেলো।

বসার রুমে সবাই একসাথে বসে গল্প করছে আমি এখানে কাউকেই চিনি নাহ তাই মেঘলা আপুর সাথে বসে আছি সবাই আমাকে দেখিয়ে জিগাস করছে আমি কে মামী মণি সবাইকে আমার সাথে পরিচয় করায়ে দিচ্ছে সবাই খুশি হলেও মামী মণির বোনকে দেখে মনে হলো ওনি খুশি হয়নি আমার দিকে তাকিয়ে চুখ মুখ কুঁচকে চলে গেলো ওনি হয়ত আমার আসা পছন্দ করেনি না করুক তাতে আমার কি আমি কি আসতে চেয়েছি নাকি মেহরাব ভাইই তো আনলো কিন্তু ওনি কোথায় গাড়ি থেকে নেমে তো আর ওনাকে দেখলামই নাহ। আমি চারপাশে তাকিয়ে মেহরাব কে খোঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু ওনাকে কোথাও দেখলাম না একটু পরে দরজার দিকে তাকাতেই দেখি ওনি ওনার সমবয়সী আর ওনার থেকে বয়সে কিছুটা ছোট ছেলে পেলের সাথে ভিতরে ঢুকছে কথা বলতে বলতে মেহরাব কে দেখেই মীরা দৌড়ে মেহরাব এর কাছে গিয়ে বলল,, এই মেহরাব ভাই চলো না আমরা হাঁটতে যায় রাতের বেলায় হাঁটতে অনেক মজা লাগে।

তোর ইচ্ছে হলে তুই যা এখানে মেহরাব কে টানছিস কেনো? পাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠল।

আহ অনিক তুই চুপ করত আর হ্যাঁ একটু হাঁটতে গেলে মন্দ হবে নাহ সারাদিন অনেক জার্নি করেছি আবার কালকে কাজও করতে হবে এখন একটু হাঁটলে ভালোই লাগবে মেহরাব এর কথা শুনে মীরা যেনো চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো তাই খুশিতে বলল, তাহলে চলো?

তুই দ্বারা এখানে এই বলে মেহরাব মাহির কাছে চলে গেলো, এই মেঘলা তোদের খাওয়া হয়েছে রাতে?

হ্যাঁ কেনো?

আমরা হাঁটতে যাচ্ছি চাইলে তোরাও যেতে পারিস আর হ্যাঁ এই যে এই গাধীটার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখবি নয়ত হারিয়ে গেলে আবার ওর বাপ বলবে আমরা ওনার মেয়ের খেয়াল রাখতে পারিনি, কথা গুলো বলে মেহরাব চলে গেলো।

দেখেছো মেঘলা আপু তোমার ভাই সবসময় শুধু আমার আব্বু কে নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে আচ্ছা তুমিই বলো আমার আব্বু ওনার ফুপা হয়না ফুপাকে নিয়ে কেউ এভাবে বলে?

রাগ করে না সোনা তুই তো জানিস ও এমনি মন খারাপ করিসনা চল আমরা যাই দেখ ওরা চলে যাবে নয়ত।
,,,,
নয়টার বেশি বেজে গেছে তাই বাইরে হালকা হালকা ঠান্ডা পড়ছে আমি ওড়নাটা ভালো ভাবে গায়ে জড়িয়ে নিলাম মেহরাব ভাই মীরা আর একটা ছেলে সবার আগে হাঁটছে মেহরাব একমনে ফোন টিপতে টিপতে হাঁটছে আর মীরা মেহরাব এর সাথে হেঁটে পারছে না বিধায় রীতিমতো দৌড়াচ্ছে আর মেহরাবদের পিছনে মাহি আর মেঘলা মেহরাব এর কথামত মেঘলা মাহির হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আর মাহিদের পিছনে তখনকার সব গুলো ছেলে সোজা হেঁটে আসছে ডানে বামে তাকাচ্ছে না ফোন ও টিপছে না এমন ভাবে হাঁটছে যেনো মাহির জন্য ওদের বডিগার্ড রাখা হয়েছে। মাহি শুধু বার বার পিছনে তাকিয়ে ছেলে গুলোকে দেখছে।

আচ্ছা মেঘলা আপু ওই ছেলেগুলো এভাবে আমাদের পিছনে পিছনে আসছে কেনো? ওদের তো মেহরাব ভাই এর সাথে থাকার কথা।

আহ তুই এতো কথা বলিস কেনো ওরা আমাদের পিছনে আছে থাক না তাতে সম্যসা কি আরো ভালো হচ্ছে নয়ত আমরা সবার পিছনে থাকলে কখন শিয়াল এসে পিছন থেকে টেনে নিয়ে যাবে বুঝতেই পারবি নাহ।

বলো কি এখানে শিয়াল ও আছে নাকি, মাহি আরো শক্ত করে মেঘলার হাত চেপে ধরল। সবাই হাঁটতে হাঁটতে একটা ব্রিজের উপর এসে থামলো রাত হয়ে যাওয়াই এখানে তেমন কেউ নেই তবে অনেক জোরে ঠান্ডা বাতাস বইছে সবার গায়ে চাদর থাকলেও মাহি চাদর পরতে ভুলে গেছে তাই এখন বুঝতেছে পাতলা ওড়নায় কি আর শীত যায়। মাহি মেঘলার পাশ থেকে সরে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো নিচে পানিটা কেমন চকচক করছে তার উপর আবার চাঁদ টাও পানির মধ্যে কি সুন্দর ঝলমল করছে দূশ্যটা অনেক মনোমুগ্ধকর। মাহি এক মনে পানির দিকে তাকিয়ে আছে তখনি পাশ থেকে কেউ একজন ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো মাহি টু শব্দ ও করতে পারলো নাহ তবে যখনি চিৎকার করতে যাবে তখনি সামনে তাকিয়ে দেখলো ওটা আর কেউ না বরং মেহরাব।

একি মেহরাব ভাই এভাবে আমায় টেনে আনলেন কেনো জানেন আমি কতটা ভয় পেয়েছি আর আমরা কোথায় যাচ্ছি?

বেশি কথা না বলে চুপচাপ আমার সাথে আয় নয়ত এখানে একা রেখে চলে যাবো। আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না কেননা ওনার কোনো বিশ্বাস নেই যদি সত্যি আমাকে এখানে রেখে চলে যায় তাহলে আমি কি করবো যদিও ওনি এই কাজটা করবে না তবুও সাবধানের মার নেই। ওনি আমায় নিয়ে একটা বাগানের মধ্যে চলে আসলো তারপর আমাকে সামনে দাঁড় কড়ায়ে ওনি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,, সামনে তাকিয়ে দেখ।

আমি ওনার কথা অনুযায়ী সামনে অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে থাকলাম কেননা সামনে অনেক গুলো জোনাকি পোকা উড়াউড়ি করছে আমি একটু সামনে গিয়ে হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করলাম কিন্তু একটাও হাতে আসছে না অবশেষে মেহরাব ভাই দু হাতের মুটো ভর্তি করে জোনাকি পোকা নিয়ে আমার সামনে দাঁড়ালো আমি ওনার হাত থেকে পোকাগুলো নিজের হাতের মধ্যে নিতেই হাতে কেমন যেনো সুরসুরি লাগছিলো তাই আমি হাতের মুঠো খুলতেই ওগুলো আমার হাত থেকে উড়ে গেলো আমি তাকিয়েই আছি তখনি ওনি পিছন থেকে ওনার জ্যাকেটটা খুলে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন।

এখন চল যাওয়া যাক অনেক সময় হলো বেরিয়েছি বাসায় যাওয়া উচিত এভাবে অচেনা জায়গায় বেশিরাত থাকা উচিত নয় বিপদ হতে পারে।

ওনি আমার হাত ধরে আবার সেই ব্রিজের ওখানে নিয়ে আসলো দেখলাম সবাই নিচে বসে আছে ফোন টিপছে আর মশা মারছে আমাদের কে দেখেই মীরা দৌড়ে আমাদের কাছে চলে এলো।

তুমি ওকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলে মেহরাব ভাই?

আরে আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম তাই তোদের খুঁজে পেতে দেরি হলো।

বাহ কি সুন্দর ওনি মিথ্যা কথা বলছে নিজেই আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো আর এখন কিনা বলছে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলো এই ছেলেটা এতো মিথ্যা কীভাবে যে বলে, আমি মনে মনে কথাগুলো বললাম। আমার গায়ে ওনার জ্যাকেট দেখে মীরা আপু কিছু বলতে যাবে তখনি মেঘলা আপু বলল,, চল তো বাসায় যাই আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আর এখানে অনেক মশা।

তারপর আমরা সবাই বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

চলবে,,,,,???

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৫
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
পাখির কিচিরমিচির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে পাশে তাকালাম দেখলাম মেঘলা আপু নেই হয়ত উঠে গেছে কিন্তু অপর পাশে তাকাতেই দেখি মীরা আপু হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে হা করে ঘুমিয়ে আছে ওনার এভাবে ঘুমানো দেখে আমার বেশ হাসিই আসলো। কালকে রাতে মীম আপুর সাথে কথা হলো মীরা আপুর বড় বোন যার বিয়ে ওনি অনেক ভালো কি সুন্দর করে কথা বলে। টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে সময় দেখে ফোনটা আবার টেবিলে রেখে বিছানা থেকে নেমে ব্যালকণিতে গিয়ে দাঁড়ালাম কি সুন্দর মিষ্টি সকাল নিচে সবাই কাজ করছে কালকে গায়ে হলুদ আর পরশো বিয়ে আমি হাত দিয়ে চুল গুলো একপাশ করে রেখে নিচে তাকাতেই দেখি মেহরাব ভাই ও কাজ করছে ওনাকে এই অবস্থায় দেখতে বেশ ভালোই লাগছে এক ধ্যানে ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখনি ফট করে ওনি উপরে তাকালো আর ওনার সাথে আমার চোখাচোখি হলেই আমি চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালা।

উফ কি গরম এই কেউ এসি চালারে বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে ডলতে ডলতে বলল মেহরাব।

কি হয়েছে মেহরাব ভাই তোমার তুমি এখনি তো ঠিকি ছিলে হঠাৎ বুকে হাত রেখে এমন করছো কেনো বুকে বেথ্যা করছে নাকি রেস্ট নেবে?

বুকে তো বেথ্যা করছেই রে অনিক তবে এ বেথ্যা সে বেথ্যা নয় তোকে যে কি করে বোঝাই এটা প্রেমের বেথ্যা, মাহির দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল মেহরাব।

কি সব বিরবির করছো মেহরাব ভাই তোমার কথা তো আমি কিছুই বুঝতেছি নাহ।

তোর এতো বোঝা লাগবে নাহ যাহ কাজ কর।

ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলাম এদিকে অনেকটা বেলাও হয়ে গেছে প্রায় আটটা বেজে গেছে ক্ষিধের চোটে পেটের মধ্যে গুরগুর করছে বাড়ি ভরা মানুষ কিন্তু কাউকেই বলতে পারছি না যে আমার ক্ষিধে লেগেছে এই জন্যই হয়ত বলে মা ছাড়া কোথাও গেলে নিজেকে কেমন এতিম এতিম লাগে অসহায় চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে মেঘলা আপু কে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু তাকে পেলে তো কোথায় গিয়ে বসে আছে কে জানে। সারা বাড়ি মেহমান ভর্তি আমায় কেউ চেনেনা বিধায় সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে অবশেষে মেঘলা আপুকে পেলাম মীম আপুর সাথে গল্প করছে গুটি গুটি পায়ে মেঘলা আপুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম সবাই জমিয়ে গল্প করছে কিন্তু এদিকে আমি ক্ষিধেই পাগল হয়ে যাচ্ছি অনেকসময় ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি নয়টা বেজে গেছে আর সয্য করতে না পেরে মেঘলা আপুর কানে কানে বলেই দিলাম,, আপু আমার না অনেক ক্ষিধে লেগেছে।

আমার কথা শুনে আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, সেকিরে তুই এখনো খাসনি? আমারি ভুল আমার তো মনেই ছিলো নাহ আচ্ছা তুই রুমে গিয়ে বস আমি দেখি খাওয়ার কিছু পায় কি না।

যাক অবশেষে হয়ত এবার খাবার পাবো আমি খুশি মনে রুমে গিয়ে পা ঝুলিয়ে খাটে বসলাম মীরা আপু উঠে গেছে রুমে বর্তমানে আমি একাই শুধু মাঝে মাঝে কয়েকটা বাচ্চা দৌড়ে আসছে আবার যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর আপু হাতে একটা প্লেট নিয়ে আসল,, সরিরে বাবু ভাত ফুরাই গেছে আসলে অনেক মানুষ তো তাই এখনি আবার ভাত চুলায় বসানো হয়ছে তুই বরং এখন এই মুড়ি আর মিষ্টি টা খা ভাত রান্না হলেই আমি তোকে এনে দেবো ওকে?

কি আর করা যাবে পেয়েছে ভাতের ক্ষিধে মুড়ি খাইলে কি আর হয় তবুও শুকনো একটা হাসি দিয়ে আপুর থেকে প্লেট টা নিলাম।

আচ্ছা শোন তুই বরং খা আমি বাইরে যাচ্ছি খাওয়া হলে নিচে চলে আসবি ঠিক আছে? আর পানি টেবিলের উপর রাখলাম। কথাগুলো বলে মেঘলা আপু চলে গেলো আমি আর কি করবো বসে বসে মুড়ি চিবায় খুব কান্না পাচ্ছে মন চাইছে এখনি দৌড়ে বাড়ি চলে যায় ধূর ভালো লাগে না কেনো যে আসতে গেলাম সব দোষ ওই মেহরাব ভাই এর নিজে হয়ত এতোক্ষণে গান্ডে পিন্ডে গিলে বসে আসছে আর আমি ক্ষিধেয় মরছি, তখনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ল।

ভিতরে আসতে পারি?

আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি কালকের ওই অনিক বলে ছেলেটা হাতে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিজেকে ভালোমতো দেখে নিলাম ওড়না ঠিক আছে কি না সব ঠিকঠাক দেখে ওনাকে বললাম, জি ভিতরে আসুন দরজা খোলায় আছে।

আপনি তো মাহি এইটা মেহরাব ভাই আপনাকে দিতে বলল, প্লেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে।

কি আছে এতে? আমি প্লেটটা হাতে নিয়ে দেখি ভাত আর একপাশে এক টুকরো মাছ আর ভাজি ব্যাস এটা দেখেই আমার মন খুশি হয়ে গেলো আমি মাথা তুলে ওনাকে কিছু বলবো কিন্তু ওমা এখানে তো কেউ নেই যাকগে তাতে আমার কি আমার পেট ভরলেই হলে।
,,,,,,,
বিকেলের দিকে আমি বাগানের দিকে গেলাম দেখলাম ওখানে গায়ে হলুদের জন্য পান্ডেল বানানো হয়েছে দেখতে বেশ ভালোই লাগছে আমি দৌড়ে গিয়ে ওখানে বসে ফটাফট নিজের কয়েকটা ছবি তুলে ফেললাম মেঘলা আপুর মাথা বেথ্যা করছে বিধায় ওরুমে শুয়ে আছে। আমি সামনে তাকিয়ে দেখি বেশ কয়েকটা মেয়ে আর মীরা আপু হয়ত মেয়েগুলো মীরা আপুর কাজিন হবে তো বিয়ে উপলক্ষে এসেছে সবাই মিলে মেহরাব ভাইকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমি উঠে ওদের দিকে গিয়ে মীরা আপুকে জিগাস করলাম,, কোথায় যাচ্ছো তোমরা?

আমরা ঘুরতে যাচ্ছি, মীরা আপু বলল আর মেয়েগুলো আমার দিকে তাকায় ছিলো হয়ত চেনে না বলে কিছু বললো নাহ।

তাই তাহলে চলো আমিও যাবো তোমাদের সাথে অবশ্য আমার একা একা ভালো লাগছে নাহ সবাই মিলে ঘুরতে গেলে ভালোই মজা হবে। আমার কথা শুনে মীরা আপু কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহরাব ভাই বলল,, না তোর কোথাও যেতে হবে নাহ চুপচাপ মেঘলার কাছে গিয়ে বসে থাক৷

কিন্তু আপনারা তো সবাই যাচ্ছেন আমি গেলে কি সম্যসা হবে আর আপুর মাথা বেথ্যা করছে বলে রুমে শুয়ে আছে আমার তো আর হয়ত এখানে আসা হবে না তাই একটু ঘুরে দেখতে চাইলাম নিন না প্লিজ।

বলছি তো নেবো নাহ তারপরেও এমন ছেঁচড়ামী করছিস কেনো এই চল সবাই।

মেহরাব ভাইরা সবাই চলে গেলো আর আমি মন খারাপ করে দাড়িয়ে থাকলাম তবে মনে মনে খুশি হলাম সেদিনকার মতো হয়ত মেহরাব ভাই একটু পর এসে আমায় নিয়ে যাবে তবে তা আর হলো নাহ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো তবুও ওনি এলেন না অনেক খারাপ লাগল ওনি আমার সাথে এমন না করলেও পারতো এখানে এসেও কীভাবে সবার সামনে কেমন করে কথা বলল আমি মন খারপ করে মেঘলা আপুর পাশে বসে ফোন টিপছিলাম আপু অবশ্য বার বার জিগাস করছিলো কি হয়েছে তবে আমি কিছু বলিনি বলেই বা কি হবে। একটু পর মীরা আপুসহ ওর সবগুলো কাজিন আমাদের রুমে আসলো তবে সবার মুখ কেমন গোমরা হয়ে আছে তা দেখে মেঘলা আপু বলল,, কিরে তোরা কোথায় গিয়েছিলি? আর সবার মুখ এমন গোমরা করে রেখেছিস কেনো?

জানিস মেঘলা তোর ভাই সত্যি অনেক খারাপ বিকেলে আমরা বললাম যে মেহরাব ভাই আমাদের ঘুরতে নিয়ে চলো বেশ ভালো ওনি রাজি হলো কিন্ত কি করলো গেট থেকে বেরিয়ে বলল ওনার নাকি কাজ আছে এই বলে সেই যে গেলো আর এলো না অগত্যা আমাদের একা একা ঘুরতে হলো এখন বাড়ি এসে দেখি ওনি নিচে লাইট সেট করছে বলত কেমন লাগে।

মীরা আপুর কথাশুনে আমার বেশ হাসি পেলো তবে হাসলাম না বহু কষ্টে হাসিটা পেটের মধ্যে চেপে রেখে মনে মনে বললাম৷ মেহরাব ভাই সত্যি আপনি বড্ড বদ ছেলে।

চলবে,,,,,???

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৬
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
সন্ধ্যা ছাড়িয়ে রাত নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে চারিদিকে অন্ধকার তবে বিয়ে বাড়ি বিধায় বাড়ির চারিপাশে শুধু আলোর রসনায় অনেক দূর পযন্ত লাইটিং করা হয়েছে কালকে গায়ে হলুদ এই জন্য সবাই কালকের খাবারের মশলাসহ পিয়াজ রসুন কেটে রাখছে আর ছোটরা সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে কেউ কেউ আবার খেলছেও এটা আমার চেনা কারো বাড়ি হলে আমিও ওদের সাথে খেলতাম। মেহরাব তার বয়সী কিছু ছেলেদের সাথে মিলে চেয়ার টেবিল ঠিক করছে সত্যি বিয়ে বাড়ি মানেই শুধু কাজ আর কাজ তবে আমার কোনো কাজ নাই আমি মেহমান তো তাই। মেঘলা আপুর সাথে ছাদে বসে ছিলাম সেখানে অবশ্য আরো অনেকেই ছিলো মেঘলা আপুর ফোন আসায় আপু একটু সাইটে গেলে এতোগুলো অচেনা মেয়েদের মাঝে একা নিজেকে কেমন বলদ বলদ লাগছিলো তাই ওখান থেকে উঠে এসে একটু কোণার দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম পুরো ছাঁদে লাইটিং করা হয়েছে কিন্তু এই দিকটাই আলো একটু কম।

অচেনা লাগছে নতুন নাকি আগে তো কখনো দেখিনি।

হঠাৎ পিছন থেকে পুরুষ কন্ঠ শুনে আমি তরিঘরি করে পিছনে তাকালাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে লম্বায় মেহরাব ভাই এর সমান দেখতেও বেশ কিন্তু এনি আবার কে আমি চিনিনা বিধায় বললাম,, আমাকে বলছেন?

এখানে আপনি ছাড়া মানুষ বলতে তো আর কেউ নেই তবে আছে এই যে লাইট আছে দেওয়াল আছে ছাঁদের রেলিং ও আছে কিন্তু এদের তো আমার জীবন নেই যে তাদের বলবো যেহেতু আপনি আছেন তাই আপনাকেই বলছি।

আপনি তো বেশ রসিকতা করতে পারেন সরাসরি বললেই তো হয় যে আমায় বলছেন এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার কি আছে। আমি হলাম মাহি মেঘলা আপুদের সাথে এসেছি আমি মেঘলা আপুর ফুপাত বোন।

আর এই অধমের নাম রনি মীম এর কাজিন, হমম এই জন্যই আপনি না আপনার সাথে কেন যানো আপনি টা যাচ্ছে না তুমি করে বলি?

আপনি টা যতই না যাক তবুও প্রথম দেখায় কাউকে তুমি বলাটা কেমন অভদ্রতা দেখায় না? আমি কথাটা বলতেই আমাদের পিছন থেকে কেউ গম্ভীর সরে বলল, এখানে কি হচ্ছে? আমি পিছনে তাকাতেই দেখি মেহরাব এইরে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই বুঝি সন্ধ্যা হয় আজকে বুঝলাম আমি ভয়ে কি বলবো বুঝতে পারছি না ওনি যে মানুুষ যদি আম্মুকে ভুলভাল কিছু বলে তাহলে তো আমি শেষ আমার ভাবনার মাঝেই রনি বলে ছেলেটা মেহরাব ভাই কে বলল,, আরে মেহরাব নাকি আয় তুই এই সময় এখানে?

কেনো এসে বুঝি বিরক্ত করলাম।

আরে নাহ বিরক্ত করবি কেনো আমি তো তোর বোন এর সাথে কথা বলছিলাম আর কি।

বোন? কিন্তু মেঘলা তো এখানে নেই তাহলে তুই মেঘলার সাথে কথা বলছিলি কীভাবে?

আরে আমি কি বলেছি নাকি আমি মেঘলার সাথে কথা বলছিলাম আমি তো তোর বোন মাহির সাথে কথা বলছিলাম।

রনির কথা শুনে মেহরাব মাহির দিকে রেগে তাকিয়ে বলল, তুই ওকে বলেছিস আমি তোর ভাই?

মেহরাব এর তাকানো দেখেই আমি শেষ আর আমি আবার কখন এই ছেলেকে বললাম মেহরাব আমার ভাই এই ছেলেটা তো দেখছি বড্ড বেশি বোঝে আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ছেলেটা বলল, আরে ও কেনো বলবে আমিই বলছি আর মাহি তো তোর ফুপাত বোন আর তুই ওর মামাত ভাই তাহলে তো সেই একি হলে তোরা ভাই বোন।

আমরা মোটেও ভাই বোন নই আর মাহি আমার ফুপাত বোন আপন বোন নয় ওকে, আর মাহি তোকে আমি ফুপির কাছ থেকে এখানে এনেছি রাতের বেলা এসব রং তামাশা করার জন্য? যদি জানতাম তোর মনে এসব আছে তাহলে আমি মোটেও তোকে এখানে আনার জন্য জোর করতাম নাহ কেননা এই মেহরাব পরের জন্য নিজের মান সম্মান এ দাগ লাগতে দেয় না। কথাটা বলে মেহরাব রেগে ওখান থেকে চলে গেলো।

ওনিতো আমায় ভুল বুঝল ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক বেশি রেগে গেছে চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়য়ে পড়তেই আমি হাত দিয়ে তা মুছে নিলাম ওখান থেকে চলতে আসতে যেতেই পিছন থেকে রনি আমায় ডেকে বলল,, আসলে আম সরি আমি সত্যি বুঝতে পারিনি আমার জন্য মেহরাব তোমাকে এতোগুলো কথা বলল তবে তুমি যদি চাও আমি মেহরাব এর সাথে কথা বলে ওকে সত্যিটা বলে দেবো?

আমি কিছু বললাম না শুধু পিছন ফিরে ওনার দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা হাসি দিয়ে চলে আসলাম। নিচে এসে সারাবাড়ি মেহরাব কে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও ওনাকে পেলাম না এই রাতের বেলায় হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো পরে মেঘলা আপুকে জিগাস করতেই আপু বলল মেহরাব ভাই নাকি কালকে গায়ে হলুদে সাজানোর জন্য ফুল আনতে গেছে কিন্তু তাই বলে এই রাতের বেলা যেতে হবে।

সকালে মায়ের ফোনের শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গল অনেক রাতে ঘুমিয়েছি তাই সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেছে তবে রাতে আর মেহরাব ভাইকে দেখেনি কি জানি কোথায় গেছে। মায়ের ফোন রিসিভ করতেই এক গাদা বকা শুনতে হলো আমি জানি নিশ্চিত মেহরাব মাকে কিছু বলেছে এই জন্য আমাকে বকা শুনতে হলো। ফোন রেখে আমি নিচে গেলাম সবাই কাজে ব্যাস্ত আমি সারাবাড়ি খুঁজেও মেহরাব কে পেলাম না পরে বাগানে এসে দেখি ওনি আর বাকি সব ছেলে মিলে ফুল দিয়ে হলুদের স্টেজ সাজাচ্ছে আর মীরাসহ তার বাকি কাজিনরা পাশে বসে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে আমি সোজা গিয়ে মেহরাব ভাই কে বললাম,, এটা কি হলো আপনি আম্মু কে কি বলেছেন?

আমি আবার কি বলবো ফুপি কে তবে তার মেয়ে যে তার চোখের আড়াল হলেই কি সব করে বেড়ায় সেটা ফুপি কে জানানো এটা আমার মৌলিক অধিকার তাই তাকে জানিয়েছি,, ফুল লাগাতে লাগাতে বলল মেহরাব।

দেখুন আপনি কিন্তু এটা মোটেও ঠিক করেননি এভাবে আপনি না জেনেশুনে আম্মু কে ভুলভাল বলতে পারেন না আর আমি কি আপনাকে এসব বলার জন্য আমার কাজে রেখছি? কিছু হলেই আপনি আম্মু কে বলে দিন।

মেহরাব কিছু বলার আগেই মীরা চেয়ার থেকে উঠে এসে মাহির সামনে দাঁড়িয়ে বলল, এই মেয়ে তুমি তো দেখছি বড্ড অসভ্য এভাবে কেউ কারো সাথে কথা বলে আর মেহরাব ভাই তোমার থেকে অনেক বড় তুমি ওনার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস পাও কোথা থেকে আর তুমি যদি খারাপ কিছু করে বেড়াও তাহলে তো সেটা মেহরাব বলবেই বাবা তুমি করলে দোষ নাই অথচ মেহরাব ভাই বললেই দোষ।

মীরা আপুর কথা শুনে ওখানে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো সবাই জিগাস করছিলো আমি কি করেছি নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছি এমন অবস্থায় কখনো পড়েনি তাই মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে আসলাম তবে আসতে আসতে ঠিকি শুনতে পেলাম আমায় নিয়ে কিছু খারাপ কথা ওখানে আলোচনা করা হচ্ছে। এজটু ফাঁকা জায়গা পেলে খুব ভালো হতো কিন্তু কি আর করা যাবে বিয়ে বাড়ি সব খানে মানুষ ভর্তি ছাদেও অনেক মানুষ অবশেষে এক রুমের ব্যালকণিতে গিয়ে দাঁড়ালাম ওখানে মানুষ নেই নিচে তাকাতেই দেখলাম সবাই কত ব্যাস্ত আকাশটা আজ অনেক পরিষ্কার কিছুক্ষণ পর মনে হলো আমার পাশে কেউ আছে তাকিয়ে দেখি মেহরাব গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

মন খারাপ?

ওনার কথার কোনো উত্তর দিলাম না শুধু একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম তারপর শুধুই নিস্তব্ধতা কিছুক্ষণ পর ওনি বলে উঠলেন,, এতো বেশি ভাবা বন্ধ কর সত্যি তুই শুধু হাতে পায়েই বড় হলি বুদ্ধি টা বাড়লো নাহ, এই যে এখন সবাইকে কথাটা কে জানাল আমি নাকি তুই? হ্যাঁ এটা সত্যি যে ফুপিকে আমি বলেছি তাই বলে তুই সবার সামনে আমায় এভাবে বলবি সবাইকে জানিয়ে কি হলো বলদ একটা, পরে আমাকে একা বললে কি হতো।

আপনাকে তো রাত থেকে খুঁজেই পেলাম না,, আমি অভিমানী কন্ঠে বললাম।

সত্যি তোর বাপের কপালে অনেক দুঃখ আছে রে কেননা বিয়ের পর তো তুই আমার হাতে শুধু চড় খাবি উঠতে বসতে আর আমার শশুর শুধু একবার এবাড়ি তো আবার ওবাড়ি করবে কেননা তোকে মারব তুই রেগে তোদের বাড়ি যাবি আবার আমি গিয়ে তোকে আনবো আর তুই তোর বাপকে ফোন করে বলবি যে তোকে নিয়ে যেতে, আহারে আমার শুশুর টা।

আমার আব্বুর সাথে আপনার শশুরের কি সম্পর্ক? ঠিক বুঝতে পারলাম না৷ আমি বুঝতে না পেরে বললাম।

তোকে এতো বুঝতে হবে না হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নে নয়ত সেদিনের মতো আবার খাবার পাবি না বুঝলি, এই বলে ওনি আমার মাথায় একটা চাটি মেরে চলে গেলো আর আমি মাথায় হাত দিয়ে ডলতে ডলতে ভাবতে লাগলাম আমার আব্বুর সাথে ওনার শশুর এর ঠিক কোন জায়গা থেকে সম্পর্ক।

চলবে,,,,? ।