ভালো থেকো তুমিও পর্ব-০১

0
454

গল্প: ভালো থেকো তুমিও
Sumon Al-Farabi
#১ম_পর্ব

হঠাৎই আব্বু কল করে জানতে চাইলো আমার কোনো পছন্দ আছে কি না! আব্বুর এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ নিরব থাকলাম।
– চুপ করে আছো যে! তোমার কি কোনো পছন্দ আছে?
দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করার পর আমি এক শব্দে উত্তর দিলাম – না।
– তোমার আম্মু তো অসুস্থ বাসায় সারাদিন একা থাকে তাই ও চাচ্ছিল তোমায় বিয়ে দিতে।
– আমার তো এখনো অনার্স কম্পিলিট হয়নি।
– সমস্যা নেই তুমি তোমার মতো পড়বা। তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। তুমি তার সাথে একবার দেখা করো পছন্দ হলেই বিয়ের দিন ঠিক করবো।
– আপনারা মেয়েকে দেখেছেন?
– আমি আর তোমার আম্মু গিয়ে দেখে এসেছি।
– আপনাদের পছন্দ হইছে?
– আমাদের তো পছন্দ হইছে। কিন্তু সংসার তো তুমি করবা তাই তোমার পছন্দ হওয়াটা বেশি জরুরি।
– আপনাদের পছন্দ হইছে এটাতেই হবে আমার দেখতে হবে না। তবে আমি মেয়েটার সাথে একটু কথা বলতে চাই।

সামনে পরীক্ষা তাই এসব নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার বিন্দু মাত্র আগ্রহ কাজ করছে না। কিন্তু কোথাও একটা শূন্যতা কাজ করছে।

পরদিন বিকেল পাঁচটা।
অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কয়েক বার কল আসছে। দুপুরে ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে পড়ছি তাই বুঝতে পারিনি।
ফ্রেশ হয়ে হোস্টেলের ছাঁদে গিয়ে কল করলাম।
কল রিসিভ হলো আমি কিছু বলার আগে ওপাশে থেকে সালাম দিলো।
– ওয়ালাইকুমুসসালাম।
– কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ। আপনাকে তো চিনতে পারলাম না। আপনার পরিচয়!
-আমি মায়া। আপনার আব্বু আমায় আপনার নাম্বার দিয়েছে।
– আব্বু নাম্বার দিয়েছে! কিন্তু কেন!
– আপনি নাকি আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন তাই।
– ওহ! আমি একদম ভুলেই গেছি। কেমন আছেন আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ।
– আপনি কি বিয়েতে রাজি? কোনো সমস্যা থাকতে সংকোচ ছাড়াই আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন। যদি আপনার কোনো পছন্দ থাকে সেটাও।
– আমার তেমন কোনো পছন্দ নেই।
– আপনি কি আমায় দেখেছেন! আমি কিন্তু একদম হ্যান্ডসাম না।
– আপনার একটা ছবি দেখেছি।
– আমার সম্পর্কে আপনার কিছু জানার আছে! থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
– আব্বু বললো আপনাদের পরিবার অনেক ভালো তাই আপনার পারিবারিক শিক্ষা ভালো আছে। এইজন্য আমার কিছু জানার নেই।
– আচ্ছা। আমি শুধু আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো।
– কি প্রশ্ন?
– বিয়ের পর আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারবো?
– অবশ্যই।
– বিয়ের দিন দেখা হচ্ছে। ভালো থাকবেন ।

নিজের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আবার ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।

কয়েক দিন পেরোতেই আম্মু কল করে বিয়ের তারিখ জানিয়ে দিলো।

আমি ঠিক বিয়ের দুই দিন আগে বাসায় আসলাম। বাসায় সব আত্মীয় এসে ভরে গেছে। আমায় দেখেই বড় আন্টি বললো- কথাটা অনেকটা এমন হয়ে গেলো না ” যার বিয়ে তার খবর নাই প্রতিবেশীর ঘুম নাই”
– কেন?
– তোর বিয়ে তুই আসলি আজ অথচ আমরা গতকাল থেকে আছি।
– আমার বিয়ে কিন্তু আনন্দ তো তোমরা করবা তাই তোমরা তাড়াতাড়ি আসছো।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম।

এখন রাত।
অনেক দিন হলো গিটার প্লে করা হয় না। গিটার টা হাতে নিয়ে ছাঁদে আসলাম। ছাঁদের গেইট লক করে দিলাম যাতে কেউ ছাঁদে আসতে না পারে।
পকেটে থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট জ্বলালাম। বাসার ছাঁদে আসলেই কতশত অতীত স্মৃতিতে খেলা করে। কারণ এই সময়টা আমি একদম একা হয়ে যাই।

সিগারেট শেষ করে টিউন তুলে আনমনে গাইতে শুরু করলাম। খুব ভালো না গাইলেও মোটামুটি পারি।

ডিসেম্বরের শহরে গানটা একটু গাইতেই মোবাইলের বিরক্তিকর টোন টা বেজে উঠলো।
– আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
– নাম্বার কি ডিলিট করে দিছেন?
– নাম্বারটা সেইভ নেই। পরিচয় দিলে ভালো হতো।
– আমি মায়া। এবার চিনতে পারছেন?
– হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ।
– কি করছেন?
– ছাঁদে বসে আছি।
– আপনাকে একটা কথা বলার জন্য কল করছি।
– কি কথা?
– জানেন গতকাল আমি আপনাকে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি আপনার হাত ধরে হাঁটছি।
– আমায় না দেখেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিলেন!
– আমি আপনাকে দেখেছি তো। আর আপনার ছবি সব সময় আমার সাথেই থাকে। আমি তো আপনাকে সব সময় দেখি। অদ্ভুত এক মায়া আছে আপনার চোখে।
– আপনি আমার চোখে কি করছেন শুনি!
– বুঝি নি।
– আপনি তো বললেন যে আমার চোখে অদ্ভুত এক মায়া আছে। মায়া তো আপনি ।
মেয়েটা এবার বুঝতে পেয়ে হাসতে শুরু করলো।
– রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন।
– আপনি কখন ঘুমাবেন!
– কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে ঘুমিয়ে যাবো।
– আমায় নিয়ে কিন্তু রাতে হাটতে বের হতেই হবে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে।
– আর কি কি ইচ্ছে আছে!
– অনেক ইচ্ছেই তো আছে তবে সময় হলে সব বলবো।
– আচ্ছা এখন রাখি। আল্লাহ হাফিজ।

মানুষের ইচ্ছার কোনো শেষ নেই। শুধু আমার ইচ্ছেরাই মরে গেলো বড্ড অসময়ে সবকিছুর অগোচরে।
ভোর বেলা আচমকাই ঘুম ভেঙে গেলো। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালাম।
চারদিকে হালকা কুয়াশার আবেশে জড়িয়ে আছে পরিবেশ। এমন পরিবেশে ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হাটলে মন্দ হয় না। বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম।

রাস্তার পাশে অদ্ভুত এক পোশাকে একজনকে বসে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে লোকটা গুনগুন করে কিছু একটা বলছেন। আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছি তাই ঠিক বুঝতে পারছি না। কিছুটা এগিয়ে যাবো কি!
কে না কে আবার। না থাক। আমি বরং আমার রাস্তায় চলি।

উনাকে ওখানে রেখেই আমি কিছুটা এগিয়ে আসলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে লোকটার কোনো সাহায্য দরকার তার কাছে যাওয়া উচিত। তাই আবার ফিরে আসলাম। কিন্তু যাখন ফিরে আসলাম তখন লোকটা সেখানে ছিলোই না।
এইটুকু সময়ে লোকটা কোথায় উধাও হয়ে গেলো?
পিছনে থেকে কাঁধে হাত দিয়ে কেউ বললো- তুমি কি আমায় খুজছো?
আমি পিছনে ফিরে তাকে দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।

চলবে।