ভয়ংকর সে পর্ব-০৯

0
212

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৯
#M_Sonali

চাঁদনী কে কোলে নিয়ে বাসায় ফিরে ওকে বিছানার উপর শুইয়ে দিলো শ্রাবণ। পাশে বসে কিছুক্ষণ এক নজরে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। আজকে যেন একটু বেশিই মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে। হয়তো নিজের ভালোবাসা টা পুরোপুরি প্রকাশ পেয়েছে বলেই এত বেশি মায়াবী লাগছে তাকে। নয়তো এতদিন হয়তো সেভাবে ওর দিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি তার। তাই ওর এই মায়াময় চেহারাটা নজরে আসেনি। শ্রাবনের যেন ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে। জীবনের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে ওর জীবনটা ধন্য করে দিতে।

মুহূর্তে নিজের ভ্যাম্পায়ার হওয়ার কথাটা মনে পরতেই মুখটা শুকনো হয়ে যায় শ্রাবনের। মনে মনে ভাবে, চাঁদনী তাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেল। সে কি মেনে নিবে ওকে? ওকে কি ভালবাসবে সে? কথাগুলো ভেবে সে মনে মনে ঠিক করে চাঁদনীর স্মৃতিশক্তি ভুলিয়ে দেবে সে। সে যেন কোনোভাবেই মনে করতে না পারে শ্রাবণ একটি ভ্যাম্পায়ার। কথাগুলো ভেবে ওর মাথায় হাত রাখতে গিয়ে ও হাতটা সরিয়ে নিল সে। মনে মনে ভাবলো সে এই কাজটা করলে চাঁদনীর সত্যিকারের ভালবাসা কখনোই পাবে না।

কিন্তু সেতো চায় তার মতো করে চাঁদনীও তাকে একইভাবে ভালোবাসুক। তাই কথাগুলো ভেবে সেখান থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। বেশ কিছুক্ষণ ওর দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল। তখনই ওর কানে কোন একটা কথা ভেসে এলো। সে এদিক ওদিক ফিরে তাকিয়ে দ্রুত উড়াল দিয়ে জানালা দিয়ে বেরিয়ে কোথাও যেন চলে গেল।
,
,
,
বন-জঙ্গল পিরিয়ে বিশাল এক প্রাসাদের সামনে গিয়ে নামল শ্রাবণ। সে এখন পুরোপুরি ভ্যাম্পায়ারের রূপে আছে। অসম্ভব হিংস্র এবং ভয়ঙ্কর লাগছে দেখতে তাকে। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল প্রাসাদের ভেতর দিকে। আশেপাশে থাকা সকল ভ্যাম্পায়ার গুলো তাকে দেখে একদম স্তব্ধ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। সামনে এগিয়ে যেতেই একটি ভ্যাম্পায়ার রূপী বৃদ্ধ লোক বসে থাকা অবস্থাতেই বলে উঠলো,

“ওখানেই দাঁড়াও। আর সামনে এগিয়ে আসবে না।”

উনার কথার উত্তরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পরল শ্রাবণ। সন্দেহের দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকালো। লোকটি এবার কিছুটা গর্জে ওঠে বলে উঠলো,

“কি করছো তুমি শ্রাবণ? আমি সৈন্যদের কাছে কি শুনছি এসব?”

উনার কথার উত্তরে শ্রাবন তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কোন উত্তর দেয় না। লোকটি এবার নিজের জায়গা থেকে উঠে ওর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

“ওই মেয়েটিকে তুমি ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছ কেন? আমার সৈন্যরা দেখেছে তুমি ওর সাথে এমন আচরণ করছো যেন ও সত্যিই তোমার বউ। তুমিও কি তোমার বাবার মতো একই ভুল করতে যাচ্ছ নাকি? তুমি জানো এর ফলাফল কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে? আর তাছাড়া ওই মেয়েটি আমাদের শক্তির উৎস। সেটা কি ভুলে যাচ্ছো তুমি?”

উনার কথার কোনো রকম উত্তর দেয় না শ্রাবণ। রাগে দাঁত কটমট করে কর্কশ গলায় বলে ওঠে,

“আপনি কি এই কথাগুলো বলার জন্য আমাকে এখানে ডেকেছেন? অন্য কোন দরকার থাকলে বলতে পারেন। আমাকে দ্রুত ফিরতে হবে।”

এবার লোকটি বেশ রেগে যায়। ওর সামনে এগিয়ে এসে চিৎকার করে বলে,

“তুমি কি ভুলে যাচ্ছ আমি তোমার কে হই? ভুলে যেও না তোমার গুরুজন বলতে একমাত্র আমি আছি। তাই আমার সাথে কথা বলতে অবশ্যই সংযত ভাবে কথা বলবে। তোমাকে আমি এ কথাগুলো বলার জন্যই ডেকেছিলাম। সাবধান করতে দিচ্ছি নিজের বাবার মত ভুল তুমিও করো না। এর জন্য অনেক দাম দিতে হবে তোমায়। ভুলে যেও না তুমি এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের হবু রাজা। সব চাইতে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান ভ্যাম্পায়ার।”

“আমি কোন কিছুই ভুলিনি। আর নিজের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবো আমি। কিন্তু এখন আমাকে যেতে হবে।”

কথাটি বলেই লোকটিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে উড়াল দিয়ে চলে গেল শ্রাবণ। ওর চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে রাগে দাঁত কটমট করতে লাগল লোকটি। লোকটি আর কেউ নয়, সে হোলো শ্রাবণের দাদা। সে ভাল করেই জানে নিজের নাতির রাগ সম্পর্কে। তারা যত কিছুই করুক না কেন সে যদি একবার কিছু একটা মনস্থির করে নেয়, তাকে সেই জায়গা থেকে সরানো কঠিন। তাই তিনি ভীষণ চিন্তায় আছেন। শ্রাবণ আবার এমন কিছু করে না বসে যার জন্য তাকে অনেক বেশি পস্তাতে হয়। তার বাবার মত।
,
,
ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে চাঁদনী। চারপাশে তাকিয়ে ভালো করে খেয়াল করে দেখে আশেপাশে কেউ নেই। সে দ্রুত উঠে বিছানায় বসে। শ্রাবণের ভ্যাম্পায়ার রুপটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ভয়ে তার শীরদাড়া বেয়ে শীতল শ্রোত বয়ে যায়। এতদিন সাহস করে ওর সাথে কথা বললেও, আজকে ওর আসল রূপ দেখার পরে সব সাহস যেন হারিয়ে ফেলেছে সে। আর একবার ওই রুপে ওকে সামনি দেখলে হয়ত হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবে সে। মৃত্যু ভয়ে যেন মনটা একদম ব্যাকুল হয়ে আছে চাঁদনীর। সে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। এখান থেকে পালানোর মত যে কোন রাস্তা নেই। সেটা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছে চাঁদনী। তাই বসে বসে কান্না করতে লাগল সে। আর বলতে লাগল,

“বাবা দাদি তোমরা কোথায়? আমাকে বাঁচাও। এখান থেকে নিয়ে যাও প্লিজ। ঐ রাক্ষসটা আমায় মেরে ফেলবে। আমি বাঁচতে চাই।”

এতোটুকু বলতেই শ্রাবণ এসে সামনে দাঁড়ায় তার। এবার যেন অন্তরাত্মা বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা গুলো তার। সে দ্রুত পিছনে যেতে যেতে খাটের সাথে একদম আটকে গেল। পাশে থাকা বালিশটা হাতে নিয়ে নিজের সামনে ধরে কান্না করতে করতে বলল,

“প্লিজ আমাকে মারবেন না। আমাকে আমার বাবার কাছে যেতে দিন। আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। তাহলে কেন এখানে আমাকে মেরে ফেলতে নিয়ে এসেছেন। আপনি একটা রাক্ষস। আপনি কোন মানুষ নন। খুব ভয়ংকর আপনি। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না। আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না। প্লিজ আমাকে আমার বাবার কাছে যেতে দিন। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।”

কথাগুলো বলেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগল চাঁদনী। ওর কান্না যেন শ্রাবণের বুকে গিয়ে বিধল। বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা শুরু হলো তার। সে এক পা সামনে এগিয়ে আসতেই চাঁদনী আবারও চিৎকার করে বললো,

“প্লিজ আর সামনে এগোবেন না। আপনি আমাকে রক্ত চুষে মেরে ফেলতে চান তাইতো? আমি আপনার সবকিছু বুঝে গেছি। প্লিজ আমাকে মারবেন না। আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। কথা দিচ্ছি আমাকে বাবার কাছে যেতে দিলে আমি আপনার কথা কাউকে বলব না। আমি একদম চুপ করে লক্ষী মেয়ের মত ঘরে বসে থাকব। আমাকে ছেড়ে দিন। আমার বড্ড ভয় করছে এখানে। আমি হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাব এখানে থাকলে।”

কথাগুলো বলে আবারও ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠল চাঁদনী। এবার আর শ্রাবণ চুপ থাকতে পারলো না। দ্রুত ওর কাছে এগিয়ে এলো। ওর হাতটা খপ করে ধরে ফেলে বলতে লাগল,

“এভাবে ভয় পাচ্ছ কেন তুমি আমায় দেখে? আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। আমি তোমাকে ভালোবাসি চাঁদপাখি। তুমি কেন বুঝতে পারছনা তোমার কোন ক্ষতি করলে এতদিন এখানে এত যত্নে রাখতাম না।”

“না আপনি মিথ্যা বলছেন আমি জানি। আপনি সবকিছু বানিয়ে বলছেন। আপনি আমায় ভালবাসেন না। কোনো রাক্ষস ভ্যাম্পায়ার কখনো কোনো মানুষকে ভালবাসতে পারে না। বরং আমাবস্যা রাতে আপনি আমাকে খুন করবেন বলে এত যত্নে রেখেছেন। আমি ছোটবেলা অনেক ভূত-প্রেতের এবং ভ্যাম্পায়ারের গল্প পড়েছি। আমি জানি তারা এমনটাই করে। আপনি আমাকে অমাবস্যার রাতে মেরে ফেলবেন তাই না? প্লিজ আমাকে মারবেন না। আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। দেখুন আমার মত এমন সাদাসিধে মেয়েকে মেরে আপনি কি লাভ পাবেন? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।”

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ আর কিছু বলল না। সে বুঝতে পারছে চাঁদনী ওকে দেখে অসম্ভব ভয় পাচ্ছে। এখন ওকে কোনো কিছু বুঝিয়ে লাভ হবেনা। তাই মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিল সে। এবার উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি শান্ত হও। আমি রাতেই তোমাকে নিয়ে তোমার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসব। কথা দিচ্ছি তোমার কোন ক্ষতি হবে না। তবে একটা কথা মনে রেখো আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি চাঁদপাখি। কখনো যদি আমার জন্য তোমার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। তখন আমাকে স্মরণ করো। আমি তোমার কাছে পৌঁছে যাব। আর হ্যা তোমার হাতে থাকা ওই পালকটা কখনোই হারিও না। বা নিজের থেকে দূরে সরাইও না। ওটা তোমায় রক্ষা করবে সব বিপদ থেকে।”

কথাগুলো বলেই সে রুম থেকে বেরিয়ে অন্য রুমে চলে গেল। চাঁদনী ওর কথায় যেন কিছুটা আশ্বস্ত হলো। কিন্তু বুকের মধ্যে কার ভয়টা যেন এখনও কাটেনি। সে জড়োসড়ো হয়ে বালিশ নিয়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগল বাড়িতে যাওয়ার জন্য। প্রায় আধঘণ্টা পর শ্রাবণ ফিরে এলো ওর রুমে। অন্য দিকে তাকিয়েই গম্ভীর গলায় বলল,

“তোমার আগের কাপড় গুলো পড়ে রেডি হয়ে নাও। তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে দিয়ে আসব।”

কথাটি বলতে দেরি চাঁদনী বিছানা থেকে উঠতে দেরি হয়নি। সে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে ফেলল। তারপর তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে হোচট খেয়ে পরে যেতে নিলো। তখনই শ্রাবণ মুহুর্তের মাঝে দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে ফেললো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,