মরীচিকা না ধ্রুবতারা পর্ব-০১

0
1616

#ধারাবাহিক_উপন্যাস
#মরীচিকা_না_ধ্রুবতারা
#প্রথম_পর্ব
#সামাজিক_প্রেমধর্মী_সচেতনতামূলক
#প্রাপ্তমনস্কদের_জন্য
#তমালী
©Tamali Pal Burman

(সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র লেখিকার কল্পনাপ্রসূত।এর সাথেবাস্তবের কোনো মিল থাকলে তা কাকতালীয়।)

-“মা তুমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছো?কই বাবা কিছু বললো না তো আজ তুমি আসবে?আমি তাহলে যেতাম তোমায় আনতে”।

– …….।

-“কি হলো কি দেখছো মা!কথা বলছো না কেন?তুমি তো একদম সুস্থ হয়ে গেছো।তাহলে বাপি কাল রাতে ওরকম চুপ করে বসেছিল কেন স্টাডিতে।আমি তোমার কথা জিজ্ঞেস করতেই আমায় জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো।ও মা কথা বলছো না কেন?”

– ………।

-“আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাওনা একটু।তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে না তুললে আমার ঘুম ভাঙতো না।রোজ কত্ত আদর করে ঘুম ভাঙাতে তুমি।বাবা রাগাতো।আর এখন আমি নিজে এলার্ম দিয়ে উঠি।বাবাও কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে।আমার সাথে কথাও বিশেষ বলে না।ও মা মা।….”

– ……….

-“মা কোথায় যাচ্ছো?ও মা,মা……”।…….

“রাই দিদি ওঠো ওঠো।ও রাই দিদি।সব্বোনাস হয়ে গেছে গো দিদি….”,ঘুমের ঘোরে প্রথমে সব কিছু গুলিয়ে যায়,আস্তে আস্তে স্বপ্নের ঘোর কাটতে থাকে চোদ্দ বছর বয়সী মেয়েটার।
এই শীতের দিনে এত সকালে মিনুদিদি ডাকছে কেন?
মা’ই বা কোথায় চলে গেল?মা’কে ছাড়া ওর একদম ভালো লাগেনা কিছু।কতদিন হয়ে গেল মা বাড়িছাড়া।

মিনুদিদির গলা আবার…।এবার ধড়মড় করে উঠে বসে নিজের বিছানায় রাই, রাইমা চ্যাটার্জী।ডাক্তার জয়ন্ত চ্যাটার্জী আর রেশমি খানের একমাত্র মেয়ে।

“কি হয়েছে মিনুদিদি।এরকম করছো কেন”,দুদিকে বেনি বাঁধা মেয়েটা চোখ কচলাতে কচলাতে বলে।বাইরে তখনও আলো ফোটেনি।
“হাসপাতাল থেকে ফোনে এয়েছিলো।কাকু বেইড়ে গেল এক্ষুনি।কাকিমার অবস্থা ভালো নয়কো।আমার বড্ড ভয় করতিছে গো রাই দিদি।” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে দুহাত জড়ো করে কপালে ঠেকায় মিনু,রাইদের বাড়ির চব্বিশ ঘন্টার কাজের মেয়ে।
ও ইদানীং রাইয়ের ঘরেই শোয়,নিচে গদি পেতে বিছানা করে।

রাইয়ের মা অসুস্থ হতে ওর বাপি মিনুকে নিয়ে এসেছিল হাসপাতাল থেকে,আয়ার কাজ করতো ও ওখানে।
রাইদের বাড়িতে এখন ওই গিন্নি,দুটো মানুষকে সব সময় আগলে রেখে দেয় এখন ও।
রেশমি যতদিন বাড়িতে ছিলো,ওকেও যথেষ্ট যত্ন করেছে মিনু।মাসখানেক আগে ওকে হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।যাওয়ার দিন মিনুর হাত দুটো ধরে মেয়েটার দায়িত্ব দিয়ে গেছিল ও,সেই থেকে মিনু রাতেও রাই কে একা ছাড়েনা।ওর খাটের পাশে মেঝেতে বিছানা করে শোয় এই শীতের রাতেও।

মিনুর কথায় রাইয়ের বুকে এক অব্যক্ত চাপা কষ্ট শুরু হয়।ওর হঠাৎ মনে পড়ে যায় স্বপ্নের কথা।’মা তাহলে কি….না না।ওর মা ভালো আছে।মা বলে গেছে ফিরে আসবে খুব তাড়াতাড়ি।’

মা কে ছাড়া রাই বছর খানেক আগে অবধি ঘুমোতে পারতোনা।এত বড় মেয়ে মায়ের বুকে মুখ গুঁজে মায়ের গায়ের যে গন্ধ পেতো, তাতে ঘুম হত সুন্দর।
ওই রোগটাই তো সব উলটে পাল্টে দিলো ওদের জীবনে।
রোগটা ধরা পড়ার পর থেকেই মা ওর কাছে শুতোনা।একা শোয়ার অভ্যেস হয়েছিল সেই থেকে।

মায়ের বুকে কি একটা লাল মত হলো,রাই কেই প্রথম দেখিয়েছিল ওর মা।সেই থেকে শুরু হলো মায়ের শরীর খারাপ।
খাওয়া কমে গেল,রোগা হতে শুরু করলো।একদম শুকিয়ে যেতে লাগলো মা।সে ও তো প্রায় দুবছর আগের কথা।তখন সবে ক্লাস সিক্সে উঠেছে রাই।

এরপর রাই কতবার বলতে চেয়েছে ওর বাপিকে,কিন্তু মা কিছুতেই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা ওর ডাক্তার বাপিকে কিছু বলতে দেয়নি।খালি বলতো ও কিছুটা,কোনো কষ্ট তো নেই আমার।কিন্তু ওই গোল স্পটটা বাড়তে লাগলো দিনদিন।
বাপির নজরে আসে মায়ের পরিবর্তন বছর খানেক আগে।ততদিনে রোগটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে।বাপি যেদিন সব শোনে খুব চেঁচামেচি করেছিল।ওর শান্ত বাপিকে এর আগে কোনোদিন মায়ের ওপর রাগতে দেখেনি রাই, প্রচন্ড অবাক হয়েছিল।তার সাথে ভয়ও পেয়েছিল কিছুটা।নিশ্চই সিরিয়াস কিছু,নাহলে বাপি তো এভাবে রিয়াক্ট করতো না।

রাই এখন ক্লাস এইটে পড়ে।খুব ছোট আর নেই।ছমাস আগে মায়ের মুখে শুনেছিল ওর মা বাপির অসম বিয়ের কথা,যার কারণে ওরা নিজেদের পরিবার চ্যূত।আর বেশি কিছু বলেনি মা।কিন্তু সেদিন হঠাৎ কেন ওকে এটুকুও বলেছিল ভেবে পায়নি রাইমা।চুপ করে শুধু শুনেছিল।

ও ছোট থেকে দেখতো ওর নাস্তিক বাবা কখনো মন্দিরে না গেলেও ওর মা ওকে নিয়ে যেত।বাইরে থেকে প্রণাম করতো ঠাকুরকে।আবার বাড়িতে সময় সময় নামাজও পড়তো।

ওর মা বাবা দুজনেই নিজেদের গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিল কবে রাই নিজেও ঠিক জানেনা।এখন কলকাতা শহরে ঠিক না,ওরা থাকে কিছুটা ভেতরে,দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একটু গ্রামের দিকে,ওর বাবার হাসপাতালের কোয়ার্টারে।এখানে গ্রামীন হাসপাতালে বাবা মেডিসিনের ডাক্তার।তাছাড়া সন্ধ্যের দিকে চেম্বারও একটা আছে।

মায়ের রোগ ধরা পড়তে বাবা ছুটেছিল বাবার মেডিকেল কলেজের বন্ধু ঋষি আঙ্কেলের কাছে,কলকাতার নামি হসপিটালের অঙ্কোলজিস্ট ডাক্তার ঋষি মুখার্জী।

বাবা, মা কে যে হসপিটালে রেখেছে ওদের কোয়ার্টার থেকে প্রায় ঘন্টা খানেক।বাবা চেয়েছিল বেসরকারি ক্যান্সার হসপিটালে রাখতে,কিন্তু মা নাকি যেতে চায়নি।ঋষি কাকুও বাবাকে বারণ করেছিলো।স্পেশাল পারমিশন নিয়ে বাবার ওই বন্ধু মা কে এই হসপিটালে এসে দেখে যায়।

রাই জানে নিজের পরিবার ছেড়ে চলে আসা বাবা অনেক দায়িত্ব সামলে,কষ্ট করে সংসারটা দাঁড় করিয়েছে।ওদের অভাব নেই ঠিকই,কিন্তু হিসেবের বাইরে অত্যাধিক খরচ দিনের পর দিন করার ক্ষমতাও নেই।তাই মা বেসরকারি হসপিটালে যেতে চায়নি।কিন্তু ঋষি কাকুও কেন বারণ করেছিলো সেটা রাই আজও বুঝতে পারেনি।

রাই উঠে পড়ে বিছানা ছেড়ে।মায়ের গায়ে দেওয়ার চাদরটা ও এ বছর শীতে ব্যবহার করছে,একটা মা মা অনুভূতি পায় চাদরটা গায়ে জড়িয়ে।চাদরটা টেনে গায়ে জড়ায় ও।তারপর গিয়ে দাঁড়ায় ওর পড়ার টেবিলের সামনে।

ক্লাস ফোরে পড়তে ও শিবরাত্রি করার বায়না করেছিল,বন্ধুদের শুনে শখ হয়েছিল খুব।
হিন্দু ধর্ম,সংস্কার, পুজো সম্পর্কে আনাড়ি ওর মা’ও ওকে যোগ্য সঙ্গত করেছিল।দুজনের আবদারে ওর নাস্তিক বাবা একটা শিবলিঙ্গ এনে দিয়েছিল বাজার থেকে।
বন্ধুদের থেকে শিখে আসা গ্রাম বাংলায় প্রচলিত মন্ত্র পড়ে নিজেরা পুজো করেছিল,জল ঢেলেছিলো শিবের মাথায়।কৌতূহলী মা কেও শিখিয়ে দিয়েছিল মন্ত্রটা।

‘শিল শিলাটন শিলের বাটন
শিব আছেন ঘরে।
স্বর্গ থেকে মহাদেব বলে
পার্বতী কিসের ব্রত করে?
আকন্দ ফুল,বিল্ব পত্র
তোলা গঙ্গার জল।
তাই পেয়ে তুষ্ট হলো
ভোলা মহেশ্বর।’

তারপর থেকে আজ অবধি প্রতি বছর ও আর ওর মা এই মন্ত্র আর গঙ্গা জল,বেলপাতা দিয়ে শিবরাত্রি করে এসেছে।
ওদের তো এবাড়িতে আলাদা কোনো ঠাকুরঘর নেই,তাই শিবলিঙ্গটা রাখা ছিল ওর টেবিলে।ছোট রাই সেই ক্লাস ফোরের পর থেকে যখনই কোনো ভয় পেয়েছে বা আনন্দ হয়েছে সবটা গিয়ে জানিয়েছে শিব ঠাকুরকে।

আজও পায়ে পায়ে গিয়ে দাঁড়ায় ওর ভোলা মহেশ্বরের সামনে।দূর থেকে হাত জোড় করে প্রার্থনা করতে থাকে।একমনে ডাকতে থাকে ওর ঠাকুরকে।
ও জাত বোঝেনা,বোঝেনা ধর্ম। ও শুধু জানে একমনে ডাকলে ঠাকুর হোক বা আল্লা কথা শোনে।ওর মা ওকে শিখিয়েছে। রাইও মানে,কারণ ও আগেও ফল পেয়েছে।
আসলে ওর একার জীবনে শিবঠাকুর খুব ভালো বন্ধু।

হয়তো ওর মা মুসলিম,বাবা হিন্দু বলে কোয়ার্টারে বিশেষ কেউ ওদের সাথে মেশেনা, মিশতে দেয়না নিজের ছেলে মেয়েদের।তাই রাই একাই ঘুরে বেড়ায়।স্কুলে দু একজন বন্ধু থাকলেও সেই বন্ধুত্ব স্কুলের বাইরে আসেনি কখনো,হয়তো তাদের মা-বাবাও পছন্দ করেনা।ক্লাস এইটে পড়া বয়ঃসন্ধির রাইমা এতোটাও আর বাচ্ছা নেই।তাই ছোটবেলার মত এখন এসব নিয়ে আর বায়না করে না। নিজের মত করে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে সবটা।

“রাই দিদি তোমায় একটু দুধ গরম করে দি। খেয়ে নাও।দাদাবাবু নিশ্চই পৌঁছে সব দেখে শুনে ফোন করবে। উঠেই যখন পড়েছ,খালি পেটে থেকো না কো।” মিনু উঠে যায় রাইয়ের ঘর থেকে।
বরাবর সব মেনে নেওয়া রাই কথার পিঠে কথা কখনোই বলেনা। তাই ওয়াশরুমে ঢুকতে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য,এই সময়ই হঠাৎ বেজে ওঠে ওদের বাড়ির ফোনটা।
ছুটে গিয়ে ফোনটা ক্রেডেল থেকে তুলে নেয় ও। মিনুও পাশে এসে দাঁড়ায়।

“রণ ওঠে পড়। কতবার ডাকবো তোকে? সামনে তোর প্রথম বোর্ড এক্সাম। এখনও সকাল সাতটা অবধি ঘুমোচ্ছিস?আমি বেরোচ্ছি। রমাকে বলা আছে,ব্রেকফাস্ট রেডি….”,নিজের মোবাইলের রিংয়ে কথা থেমে যায় জয়িতার,কলকাতা শহরের স্বনামধন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জয়িতা মুখার্জীর।
হসপিটালে বেরোনোর আগে ছেলেকে ঘুম থেকে তুলতে এসে কথার সাথে সাথে হাত চালিয়ে ছেলের ঘরটা ভদ্রস্থ করার চেষ্টা করছিল জয়ি। হঠাৎ ফোন বাজায় দুটো কাজেই বাধা পরে।
প্রায় ছুটে গিয়ে ছেলের বেডসাইড টেবিল থেকে ফোনটা তুলে নেয় ও। ঠিক বুঝতে পেরেছে ঋষি,সেই ভোররাতে জয়ন্তর ফোন পেয়ে বেরিয়ে গেছে। দুরু দুরু বুকে ফোনটা রিসিভ করে কানে দেয়।
জয়িতার তাড়াহুড়ো করে ফোন ধরা, কম্বলে মুখ ঢাকা রণজয়ও বুঝতে পারে,কম্বলটা চোখের নিচে নামিয়ে পিটপিট করে তাকায় মায়ের দিকে। অবাক হয় ওপাশের কথায় মায়ের মুখের আলো ক্রমশ কমতে থাকায়।
ডাক্তারদের সহজে মানসিকভাবে ভাঙতে নেই, রণ তাই দেখে এসেছে ছোট থেকে। কিন্তু এই প্রথম ওর ডাক্তার মায়ের চোখ দুটো জলে ভরে উঠতে দেখে ও, ফোনের অন্যপ্রান্তের কথা শুনে।
কিছুক্ষন পর ফোন রেখে শাড়ির আঁচলে চোখদুটো হালকা চাপ দিতে দেখে কম্বল কোমরে নামিয়ে উঠে বসে ও বিছানায়।
জয়িতা ভাবেনি ছেলে ওকে নজর করছে, একটু হকচকিয়ে যায় ও। কিন্তু রণর চোখে প্রশ্ন উপেক্ষা করে ভাঙা গলায় বলে,”উঠে পড়েছিস যখন নীচে চ, আমি একেবারে খেতে দিয়ে বের হই।”
“কি হয়েছে মম!! তোমার চোখে জল!! কার ফোন ছিল?” রণ লুকোতে পারেনা নিজের অবাক হওয়াটা।

কিছুক্ষন চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জয়ী।আগের ভাঙ্গা গলাতেই বলে,”তোর বাবার ফোন ছিল। পরে তোকে বলবো সব কথা,এখন বেরোতে হবে। নে দেরি হয়ে গেছে আজ, নীচে আয়”, ছেলের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় ও।

নিজের জায়গায় কিছুক্ষন বসে থেকে ঠোঁট উল্টে চেপে রাখা বিস্ময় প্রকাশ করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরে রণজয়।অন্যমনস্ক ভাবে টেবিলে রাখা নিজের ফোনটা তুলে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।
যদিও সবে ক্লাস টেন, কিন্তু আজকাল তো ফোন বাচ্ছা বয়স থেকেই সঙ্গী, বিশেষ করে রণর মতো ‘টেক-স্যাভি’র কাছে ফোনটা তো খুব সাধারণ ব্যাপার।

রণর জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষা সিবিএসই র ক্লাস টেনের বোর্ডের পরীক্ষার আর মাস দুই বাকি আছে। এমনিও ওর মত এক কথায় জিনিয়াস ছেলে বেশিক্ষন বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকেনা, তাও রাতের পড়াটা ভালো হয় বলে সকালে উঠতে একটু দেরিই হয়ে যায়। আজ আবার প্রাইভেট নেই বলে কাল একটু বেশি রাত অবধি টেস্ট পেপার সলভ করেছে ও। মায়ের ডাকে উঠে পড়লেও কমোডে বসে ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটু দেরি হয়ে যায় নীচে নামতে। নেমে দেখে মা বেরিয়ে গেছে,রমা পিসি ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে দেয় ওকে।
ওদের বাড়িতে প্রথম থেকেই হেভি ব্রেকফাস্ট আর হালকা ডিনারের চল।লাঞ্চও খুব আহামরি কোনোদিনও হয়না।আর হয়েই বা কি হবে,আজকাল স্টাডি লিভ চলছে বলে রণ বাড়ি আছে।নাহলে ওরা তিনজন কেউই তো বাড়ি থাকেনা দুপুরে সাধারণত।ছুটির দিন গুলো,মানে যে রবিবারগুলো বাবা মা দুজনেই বাড়িতে থাকে একমাত্র সেইসব দিনে মা আর রমা পিসি মিলে জমিয়ে রান্না করে আর সবাই মিলে কব্জি ডুবিয়ে খায়।

রণ যখন হেভি করে বানানো স্যান্ডুইচ শেষ করে জুসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে শুনতে পেল রমা পিসি নিজের মনেই বলছে,’কিছু মুখে না দিয়ে বেরিয়ে গেল। কে জানে সারাদিন কি পেটে দেবে?’

অবাক রণ পিসির দিকে তাকিয়ে বললো,”কার কথা বলছো পিসি?”
“তোমার মা। ওপর থেকে নেমে এসে বললো,’রমা আমি কিছু খাবোনা। রণকে তুমি ব্রেকফাস্ট দিয়ে দিও’,বেরিয়ে গেল তারপর। কোনো প্রশ্ন করারও সময় দিলোনা।” এমনিতে ক্লাস টেন পাস করা রমা পিসি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। বাবার জন্মভূমি হুগলী জেলার কোনো প্রত্যন্ত গ্রামে বাপের বাড়ি ছিল।অল্প বয়সে বিধবা পিসির কোনো পিছুটান না থাকায়, মা রণ হওয়ার পর নিয়ে চলে আসে সঙ্গে করে। পিসি আর কোনোদিনও গ্রামে ফেরেনি,আর রণ দেরও এতগুলো বছরে গ্রামের বাড়ি বিশেষ যাওয়াই হয়নি।

রণ এমনিতে খুব জমিয়ে রাখা ছেলে। পড়াশোনায় তুখোড় হলেও তাই বন্ধুর অভাব নেই। বাবা মার সাথেও সম্পর্ক বন্ধুর মত। মা তাই সব কিছুই ওকে বলে। সেই মা এরকম আচরণ কেন করছে কিছুই মাথায় ঢোকেনা ওর। নিজের খাওয়া শেষ করে স্টাডি রুমে চলে যায় ও নিঃশব্দে। সংসারের ওদের সবার অভিভাবিকা রমা পিসিকে একা গজগজ করতে দিয়ে।

পড়ার টেবিলে বসেও পড়ায় মন দিতে পারেনা রণ, কি হলো মায়ের! বাবা কি এমন বললো যাতে মা ব্রেকফাস্ট না করে তাড়াহুড়োতে বেরিয়ে গেল! বাবাও আজ কত সকালে বেরিয়ে গেছে,নাকি ফেরেনি কাল রাতে?
সমস্ত ধরণের অদ্ভুত চিন্তা মাথায় জট পাকাতে লাগলো। ওর সাধারণত এরকম হয়না। যখন ও এই পড়ার টেবিলে এসে বসে সমস্ত চিন্তা ভাবনা গুলোকে ঘরের বাইরে রেখে আসার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ওর। আজ প্রথমবার ও পারছেনা পড়ার টেবিলে মনটাকে চিন্তামুক্ত করতে।

কদিন আগে বাবা মাকে কোন এক রেশমি বলে ভদ্রমহিলাকে নিয়ে আলোচনা করতে শুনেছিল ও।সেই প্রসঙ্গে শুনেছিল জয়ন্ত বলে একজনের নাম।
স্মৃতিতে আবছা একটা মুখ উঁকি দিয়েই মিলিয়ে গেছিল,বাবার ফটো অ্যালবামে দেখা।
বছর খানেক আগে পুরোনো অ্যালবাম ঘাঁটছিল রণ।বাবা মার কলেজ লাইফের একটা ছবিতে দেখেছিল,ওদের দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে খুব নিরীহ একটা ছেলে।কৌতূহলী মন মা কে প্রশ্ন করতে প্রথমে এড়িয়ে গেলেও,বাবার গল্প বলার সময় এসে বসেছিল পাশে।
বাবা মা দুজনেরই খুব কাছের বন্ধু ছিল জয়ন্ত চ্যাটার্জী।কিন্তু রণ কেন তাকে কোনোদিনও স্বচক্ষে দেখেনি,কেন তিনি এতগুলো বছরেও একবারও তাদের বাড়ি আসেননি সেই প্রশ্ন দুজনেই এড়িয়ে গেছিলো সযত্নে।

“তাহলে কি সেই বন্ধুর কিছু….”,এই ভাবনায় এসে স্থির হয় রণ।
ওঁর স্ত্রীর নাম রেশমি,সেদিন ওদের কথায় ও এটুকু বুঝেছিলো,আর কানে এসেছিল ‘লাস্ট স্টেজ’ কথাটা।

এবার বুদ্ধিমান রণ দুয়ে দুয়ে চার করতে পারলো ওর মনের ভাবনা গুলোকে। বাবা মার কাছের বন্ধু,তাই একটা খারাপ লাগা মনে উঁকি দিলেও শান্ত মাথা পড়াতে মনোযোগ দিলো এবার। ধীরে ধীরে ও ডুবে গেল নিজের জগতে।

“প্লিজ জয় কথা বল।এরকম চুপ করে থাকিসনা।তুই তো জানতিস এই দিনটা একদিন না একদিন আসবেই।হয়তো বড্ড তাড়াতাড়ি এসে গেল।কিন্তু আমাদের তো সত্যি কিছু করার ছিলোনা।ব্রেস্ট ক্যান্সার আজকাল কোনো রোগ যদি সময়ে ধরা পড়ে!!রেশমি কেন যে চেপে থাকলো এতদিন।ফার্স্ট স্টেজে ট্রিটমেন্ট হলে এত সহজে ওটা এমবিসি(MBC-Metastatic breast cancer)তে কনভার্ট করতো না।যখন রোগটা ধরা পড়লো আর কিছু করারও ছিলোনা।তাও তো তুই যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছিলি।…”,ডাক্তার ঋষি মুখার্জী এরকম কেস দেখে দেখে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে।প্রায় পনেরো বছর হয়ে গেল এসব দেখতে দেখতে।

প্রথম দিকে খালি মনে হত কেন এরকম রোগের ওপর স্পেশালাইজেশন করলো যার সারভাইভাল রেট প্রায় নেই আমাদের পোড়া দেশে,বড়জোর কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা ছাড়া।তারপর আস্তে আস্তে অনুভব করেছে কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব গুলো নিতেই হবে।যদি সবাই এড়িয়ে যায় রোগটা যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে,আর মৃত্যু জিতে যাবে।

ঋষি,জয় আর জয়ি মেডিকেল কলেজের প্রথমদিন থেকে তিনজনের বন্ধুত্বের শুরু।মুখার্জী না চ্যাটার্জি কার সাথে জয়িতা মজুমদারের বেশি হৃদ্যতা আলাদা করতে পারতোনা কেউই।শুধুই সরল বন্ধুত্ব নাকি কোনো সম্পর্ক আরো গভীর সেই নিয়ে আলোচনার শেষ ছিলোনা সহপাঠীদের মধ্যে।

ঋষিরা ছিল সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবার,ওর বাবা কাকার ছিল তেলের ব্যবসা।ছোট থেকে ঐশ্বর্যের মধ্যে মানুষ হলেও ওর মনটা ছিল খুব বেশি সহজ সরল।তাই ডাক্তার বাবার মেয়ে জয়িতার একটা চাপা ভালোলাগা ছিল ঋষির প্রতি।
জয়ন্ত ওদের তুলনায় ছিল নিতান্তই মধ্যবিত্ত।তিনজনই মেধার জোরে ডাক্তারি সুযোগ পেলেও জয়ন্ত এসেছিল স্কলারশিপ নিয়ে।তবে উড়ণচন্ডী ঋষি না,জয় ই ছিল জয়ির বেস্ট ফ্রেন্ড।
আর এই বন্ধুত্ব নিয়ে ছিল অনেকের আলোচনা।
সবাই জয়ন্ত কে জয়িতার ভবিষ্যৎ ভাবলেও সত্যিটা জানতো জয়ন্ত নিজে।অর্থ বা প্রতিপত্তি না জয়িতা ঋষির সারল্যে মুগ্ধ ছিল।নিজের প্রিয় বন্ধু তাই ওর কাছে নিখাদ ভালো বন্ধু ছিল,যার কাছে ও নিজেকে মেলে ধরতে পারতো স্বচ্ছন্দে। ওর মধ্যবিত্তের অস্বস্তি বা হীনমন্যতা ওকে ঘিরে ধরতো না ওই দুজনের সাথে।

জয়ন্তর উদ্যোগে ঋষি-জয়ির সম্পর্ক যখন দানা বাঁধলো,ততদিনে ঋষির অনেক ঘাটেই জল খাওয়া হয়ে গেছে।ওর শেষ তিন সপ্তাহের সম্পর্কের ব্রেক আপ হতে আর রিস্ক না নিয়ে জয়ি নিজেই বলে দেয় মনের কথা।প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি ও,ভেবেছিল জয় আর জয়ি মজা করছে।এরপর বদলাতে শুরু করে ঋষির জীবন।

ওদের বিয়ের পরও জয়ন্ত ব্যাচেলর জীবন কাটাচ্ছে দেখে ওরা দুজন যখন নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে মেয়ে দেখা শুরু করেছে,তখন খবরটা দেয় জয়ন্ত,রেশমির খবর।
ঋষি বুঝতে পারেনি আনন্দ করবে না চিন্তা।জয়ন্তর গোঁড়া পুরোহিত বাবা যে কোনোদিনও এটা মেনে নেবেনা সেটা ঋষির থেকেও ভালো জয়ন্ত জানতো।তাহলে কেন জড়ালো ও এরকম অসম সম্পর্কে?!!

প্রশ্নের উত্তরটা পেলো জয়ন্তর রেজিস্ট্রির দিন।পরের দুঃখে প্রাণ কাঁদা, চঞ্চল ছটফটে মেয়েটাকে হয়তো যে কেউ ভালোবেসে ফেলতে বাধ্য।বিশেষ করে জয়ের মতো সেনসিটিভ ছেলে।ওর কাছে পেশেন্ট হয়ে এসেছিল রেশমি।তারপর অনেকবার এসেছে ওর এনজিওর জন্যে।বয়স্ক মানুষদের জন্য কাজ করতো ও।
জয়ন্ত আর রেশমির গভীর প্রেম ওদের তখন আলাদা করতে পারেনি।অনাথ রেশমির জন্যে জয় পরিবার ছেড়েছিল,ছেড়েছিল নিজের গ্রাম।কলকাতা শহর ছাড়লেও ঋষিদের সাথে যোগাযোগ ছিল,অল্প হলেও।

সেই যোগাযোগ আবার গাঢ় হলো একটা ভয়ঙ্কর খবরের মধ্যে দিয়ে। উদ্ভ্রান্ত,প্রায় পাগল জয় ছুটে এসেছিল ঋষির কাছে,ঋষিই ছিল ওর একমাত্র ভরসা ওই বিপদে।রেশমির ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়েছিল আজ থেকে বছর খানেক আগে,কিন্তু রোগটা বাসা বেঁধেছিল তারও বেশ কবছর আগে।
ঋষি বুঝেছিলো হাতের বাইরে চলে গেছে ব্যাপারটা। কিন্তু বন্ধুকে সেই মুহূর্তে বলতে পারেনি,কিন্তু জয়ন্ত নিজেও যে ডাক্তার ঋষি সেটা ভোলেনি বলেই সবসময় সিঁটিয়ে থাকতো। ওদের ফুটফুটে মেয়েটার কথা ভেবে নিজেরই কান্না পেয়ে যেত বারবার। কিন্তু ডাক্তারদের যে কাঁদতে নেই। তাই আশা নেই জেনেও চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছিল বন্ধু পত্নীর।
ঋষি জানতো রেশমি খুব বুঝদার মেয়ে,সেদিন আরও শিওর হলো যখন রেশমি সরকারি হাসপাতাল ছাড়তে চাইলো না।ঋষিও জোর করলো না,উল্টে ও স্পেশাল পারমিশন নিয়ে ওখানেই শুরু করলো রেশমির চিকিৎসা।

জয়ন্ত আজ সকালে যখন ফোন করলো ঋষি বুঝেই গেছিল ভালো খবর হয়তো আর কাউকে দিতে পারবে না।কাল রেশমি এমনিও আর রেসপন্স করছিল না।শুধু নিজের মেয়েটাকে অবচেতনেও খুব মিস করছিল,বুঝতে পেরেছিল ঋষি। মেয়েটাকে একবারই দেখেছে ও,খালি ওর কথাই মনে হচ্ছে। জয়ন্ত কিকরে সবটা সামলাবে কিছুই মাথায় আসছেনা ওর।

জয়িকে ভোররাতেই হিন্টস দিয়ে বেরিয়েছিল,একটু আগে ফোন করে দিলো। ও জানে জয়ি ঠিক পৌঁছে যাবে জয়ের বাড়ি। আজকের মত সামলে নেবে সবটুকু। রেশমিকে ও খুব ভালোবাসতো। জয় বিয়ের পর যে ক্ষীণ সম্পর্ক রেখেছিলো, সেটাও রেশমির কারণেই। জয়ি-রেশমি যোগাযোগ রেখেছিলো নিজেদের মধ্যে। জয়ের মেয়েও পৃথিবীর আলো দেখেছিল জয়ির হাত ধরেই। তারপরই যোগাযোগ কমে যায়,বেড়ে যায় শারীরিক দূরত্ব।জয়ের বদলি হয়ে যায় শহরতলিতে।

রেশমির খবর কঠিন মনের জয়িতাকেও প্রথমদিন কাঁদিয়ে দিয়েছিল। ওর স্ত্রী যে এভাবে কাঁদতে পারে জানা ছিলোনা ঋষির। অবাক হলেও বুঝেছিলো রেশমির প্রতি ওর টানটা।

কিন্তু জয়ন্ত সেই যে চুপ করেছে আর মুখ খোলেনি। কাঁদা দূরের কথা একটাও কথা বলেনি কারোর সাথে। এরকম ঘটনায় ডিপ্রেশন অস্বাভাবিক কিছু না,কিন্তু অভিজ্ঞ ঋষির এবার রীতিমত ভয় লাগছে। ওরা জানে রেশমিকে কি পরিমান ভালোবাসতো এই আপাত চুপচাপ ছেলেটা। রেশমিকে কারোর কথার আঁচড় অবধি লাগতে দেয়নি।জন্মদুঃখী মেয়েটাকে ও আগলে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো চুপচাপ। রেশমির চাচা চাচী কেও মুখ খোলার সুযোগ দেয়নি।

আজ বড্ড অসহায় লাগছে জয়কে। ঋষি নিজেও অসহায় বোধ করছে। হয়তো জয়িকে এখানে আসতে বললেই ভালো হত। হঠাৎ নজরে এলো সেই ছেলেটাকে,রেশমির চাচার ছেলে। এই চাচা ওর বাবার নিজের ভাই না,ওকে পালন করেছিল,বাবার দূরসম্পর্কের ভাই। আর তাই ওদের নিয়ম মত এই ছেলেটা চেয়েছিল রেশমিকে বিয়ে করতে।কিন্তু আধুনিক মনস্ক রেশমি ছোট থেকে ভাইয়া বলে আসা ঈশান কে অন্য কোনোভাবে দেখতে রাজি হয়নি।সমস্যা শুরু হয়েছিল সেই নিয়ে। রেশমি ভরসা করেছিল সেই প্রথমবার জয়ন্তর ওপর। সেই শুরু ওদের সম্পর্কের।

কিন্তু এদের কেন খবর দিতে গেল জয়ন্ত!!! জয়ির কাছে শুনেছিল ঋষি আজ বহুবছর তো রেশমিই সম্পর্ক রাখেনি এদের সাথে।
চোয়াড়ে মার্কা ছেলেটা জয়ন্তকে দেখতে পেয়ে ছুটে এলো ওর দিকে।
“এই হারামজাদা,আজ তোর জন্যে রেশমির এই অবস্থা।আল্লার কোপে পড়লো ও। না তোকে শাদী করতো না ওই বেটির এই হাল হত।ওর পাপের শাস্তি …….”,আর বলতে পারলো না কথা। জয়ন্ত হঠাৎ পাগলের মত ওর টুঁটি টিপে ধরে ঠেলতে ঠেলতে ওকে উল্টো দিকের দেয়ালে নিয়ে যেতে লাগলো।
ঘটনাটা এমন আকস্মিক ঘটে গেল যে ঋষি হতভম্ব হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ডের জন্যে। জয়ন্ত এটা করবে ও বুঝতেও পারেনি। যতক্ষন ছুটে গিয়ে ও আর কয়েকজন মিলে ছেলেটাকে জয়ের হাত থেকে ছাড়ালো ওর নিঃশ্বাস প্রায় আটকে গেছে।কাশতে কাশতে নিজেকে একটু সামলিয়েই গালিগালাজ করতে করতে হাসপাতাল গেটের দিকে ছুটলো ও।
জয়ন্তর দিকে তাকিয়ে অবাক ঋষি দেখলো ওর চোখ দিয়ে তখনও আগুন ঝরছে। কোনো কথা না বলে ওকে বুকে চেপে ধরলো ঋষি। জয়ন্ত কোনো কথা না বলে নিজের মুখটা গুঁজে দিলো ঋষির ঘাড়ে।ঋষি শুধু অনুভব করলো জয়ের পিঠের উপর রাখা ও হাতটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।আর খুব আস্তে কানে এলো কান্না ভেজা গলায় জয়ন্তর বিড়বিড়ানি।
“তোমায় কোনোদিনও ক্ষমা করবো না রেশম…কোনোদিনও না…কথা রাখলে না তুমি…কোনোদিন ভালোইবাসনি আমায়।ঠকিয়েছ তুমি,ঠকিয়েছ।….”,বাকি কথা হারিয়ে যায় কান্নার আড়ালে।
আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরলো ঋষি ওর জীবনের একমাত্র বন্ধুকে। আগলে রাখতে চাইলো যেন এই নিষ্ঠুর সত্যিটা থেকে। শুধু জয়ন্ত না,ওর মনেও রাগ জন্মাতে থাকে ওই সদ্যমৃত মেয়েটার বিরুদ্ধে। ‘কেন এরকম করলি রেশমা!বিয়ের দিন আমায় দাদা ডেকেছিলি। কেন মনে পড়লো না তোর এই দাদাটার কথা। কষ্ট গুলো উড়িয়ে না দিয়ে যদি সময়ে গুরুত্ব দিতিস তোর মত তোর মেয়ের জীবনটা মাতৃহারা কাটতো না। ভালো থাক বোন,যেখানেই থাক ভালো থাক”।

বন্ধুকে জড়িয়ে বন্ধু দাঁড়িয়ে থাকলো আগামী কঠিন ভবিষ্যতের অপেক্ষায়।

ক্রমশ….