মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-০৪

0
2824

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ০৪

অভি রায়হান একে অপরের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

বাড়িতে পৌছে অভি, রায়হান ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে বসে।
রায়হানের নিজের ফ্লেট আছে তবে অভি রায়হান কে সেখানে থাকতে দেয় না। অভি রায়হানকে সব সময় পাশে রাখতে চায়। তবে রায়হান মাঝে মাঝে অভির সাথে রাগ করলে বা ইচ্ছে করলে অভিকে না বলে সেখানে চলে যায়। অভিকে বললে অভি কোনোদিন যেতে দেবে না তাই।
ডিনার শেষে অভি, রায়হান কিছু দরকারি কথা বলে, কথা শেষ করে ক্লান্ত থাকায় দুজন যার যার রমে চলে যায়। অভি প্রচন্ড ক্লান্ত হলেও রুমে এসে ফোন নিয়ে রুহির নাম্বারে কল করে।

রুহি খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ফোনে রিং হতেই শব্দ শুনে রুহি ঘুম থেকে উঠে পরে।টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে অভি ফোন করেছে। রুহি বিরক্তি নিয়ে কলটা কেটে পাশে রেখে দেয়।

কলটা কাটায় অভি রেগে যায়। রুহির নাম্বারে মেসেজ অপশনে গিয়ে ” quickly pic up the call. Otherwise i will kill you. টাইপ করে কয়েকটা angry emoji দিয়ে সেন্ড করে দেয়।

ফোনে মেসেজের শব্দে রুহি আবার ফোন হাতে নেয়। অভির মেসেজ দেখেই ঢোক গিলে। সেকেন্ডের মাঝে আবার কল আসে। রুহি ভয় পাচ্ছে রিসিভ করতে যদি বকাটকা দেয় সেজন্য।

একটু সাহস নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই অভির রাগি গলাটা শুনতে পায়।
” তুমি কি আমাকে তোমার সাহস দেখাতে চাইছো নাকি এভোয়েড করতে চাইছো ?? ভালো করে বলোতো !! শুনে রাখো যাই করার চেষ্টা করো না কেনো আমার থেকে কোনোদিন ছাড়া পাবে না আর আমাকে তোমার সাহস দেখাতে আসবে না বুঝেছো ??”

রুহি ভেংচি দিয়ে রেগে ঝাঁঝালো গলায় বলে
” হ্যা হ্যা সব বুঝেছি আর বুঝাতে হবে না। এই রাতের বেলায় অসভ্য দের মতো ফোন দিয়েছেন কেনো সেটা বলুন ??”

অভিদকে অসভ্য বলায় অভি একটু রেগে যায় তাই ধমক দিয়ে বলে
” চুপ বেয়াদব মেয়ে । এভাবে কি নিজের হবু বরের সাথে কেউ কথা বলে !! কে শিখিয়েছে এসব তোমাকে ?? আমার শশুর, শাশুরি, শালি সবাই তো খুব সুন্দর করেই কথা বলে। তোমার তো দেখি সব শিক্ষা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কার সাথে কেমন আচার – আচরণ করতে হয় সেটাও ভুলে গিয়েছো ”

রুহি কোনোদিন কারও সাথে এভাবে কথা বলেনি তাই নিজেও অপরাধ বোধ করলো নিজের বলা কথায়।
চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। ভাঙা গলায় বললো
” সরি আমি এভাবে বলতে চাইনি। মুখ থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে। আর কোন দিন এভাবে বলবো না সত্যি বলছি। আমি সত্যি এভাবে বলতে চাইনি।” বলে ফুফিয়ে কেদে দেয়।

অভি অবাক হয়ে গিয়েছে রুহির কান্নার আওয়াজ শুনে।মনে মনে বলে
“ছোট ছোট কথাও কাদা লাগে মেয়েটার। যাই হোক খুব মিষ্টি লাগছে কান্নার আওয়াজটা শুনতে। আমার ভবিষ্যৎ বউ এর গলাটা কই মিষ্টি ” এসব ভেবে অভি নিঃশব্দে হেসে দেয়।

অভি একটু আবেকময় গলায় বলে
” আরে পাগলি কাদছো কেনো এভাবে ?? কান্না বন্ধ করো। আমি তো এমনি বলেছি আর তুমি কান্না শুরু করে দিলে ??”

রুহি আস্তে আস্তে কান্না থামিয়ে নিচু সরে বলে
” সরি আমি আপনাকে এভাবে বলতে চাইনি।”
অভি হেসে বলে
” it’s ok, বাবা। আচ্ছা বলো কাঁদলে কেনো??”

রুহি মাথা নিচু করে নিচু সরে বলে
” আসলে এভাবে কারও সাথে কথা বলিনি তাই খারাপ লেগেছে আর কান্না পেয়েছে ”

অভি মুচকি হেসে আবার গম্ভীর গলায় বলে
” ঠিকাছে। আর শোনো এরপর থেকে ছোট ছোট কারণে কাঁদবে না বুঝেছো ছিদ কাঁদুনি !! অভিদ রায়জাদার বউ তুমি। কথায় কথায় কাঁদলে মানুষ ভাববে আমি একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছি ”

রুহি নাক ফুলিয়ে বলে
” এহ, আমি বাচ্চা নই আর আপনি আমাকে ছিদ কাঁদুনি কেনো বলেছেন ”

অভি শান্তভাবে বলে
” তোমাকে তো কালকে থেকে কাদতে দেখলাম তাই তোমাকে ছিদ কাঁদুনি মনে হচ্ছে ”

রুহি হুহ বলে ভেঙায়। অভি হালকা হাসে। অভির মুখে কালকের কথা শুন্তেই রুহি কালকের কথা খেয়াল আসে। রুহি হালকা কেশে বলে
” আচ্ছা একটা কথা বলবো ”

অভি তার বিছানায় ধপ করে শুয়ে বলে
” হুম একটা কেনো হাজারটা কথা বলো। পারমিশন নেয়ার কিছু নেই ”

রুহি মিনমিন গলায় বলে
” কালকে সেই লোকটাকে কেনো মেরে ফেলে ছিলেন ”

অভি বাকা হেসে বলে
” সেটা পরে জানতে পারবে। এখন আমি অনেক ক্লান্ত রেস্ট নেবো। অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমিয়ে পরো নাহলে অসুস্থ হয়ে পরবে। আচ্ছা ডিনার করেছো তো ”

রুহি নিশ্বাস ফেলে বলে
” হুম। good night.
অভি মোবাইলে শব্দ করে চুমু দিয়ে বলে
” love you. And happy good night, বউ ”
বলে ফোন কেটে দেয়। অভির শান্তির হাসি দেয়। রুহির সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগছে। অভি ফোন রেখে লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পরে।

রুহির এখনও ফোন কানে নিয়ে রেখেছে। অভিদের বউ ডাক টা শুনে রুহির মনে শিহরণ বয়ে গিয়েছে। কিছু মুহুর্তের জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো। অভি ফোন কাটে দেওয়ায় রুহির একটু মন খারাপ হয়ে গেলো। রুহি মন খারাপ করে পাশে ফোনটা রেখে শুয়ে পরে।

সকালে রুহি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একেবারে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে আসে। টেবিলে বসে খেতে খেতে টিভির দিকে তাকাচ্ছে। রাইমা টিভি অন করে কার্টুন দেখছিলো হাতে রিমোট থাকায় হাত লেগে অন্য একটা চ্যানেল এসে পরে। সেটা news channel ছিলো। রাইমা চ্যানেল পাল্টাতে নিতে নিলেই একটা news শুনে রুহি বলে উঠে
” দাড়া এক মিনিট, একটু এই খবরটা শুনে নেই, প্লিজ ” রাইমা রিমোট রেখে মোবাইল নিয়ে বসে।

হেডলাইন : মিস্টার মিরাজ, বিজনেসম্যান অভিদ রায়জাদার কোম্পানির একজন কর্মচারি ছিলো। পরশু দুপুরে সে তার কোনো এক গোপন কাজের জন্য তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। এবং বিকেল দিকে রোডের পাশে সেই গাড়ি ব্লাস্ট হতে দেখা যায়। কয়েকজন লোকজন দেখে পুলিশকে ফোন করে সব জানানো হয়। পুলিশ এসে মিস্টার মিরাজের লাশ উদ্ধার করে। গাড়ি ব্লাস্টের কারণে মিস্টার মিরাজ এর লাশটা ক্ষত বিক্ষত এবং জঘন্য ভাবে পুরে গিয়েছে। লাশ দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে এটা কার লাশ। ইনভেস্টিগেশন করে জানানো হয়েছে এটা মিস্টার মিরাজের লাশ।

টিভিতে মিস্টার মিরাজের ছবি দেওয়া হয়। রুহি সেটা দেখে ভয় পেয়ে যায়। কারন অভিকে সেদিন যাকে খুন করেছিলো সেটাই মিস্টার মরাজ।

২ হেডলাইন : কালকে রাতে খান কোম্পানির গোডাউনে আগুন লাগানো হয়েছিলো। গোডাউনের ভেতর মিস্টার মিলাদ কে পাওয়া গিয়েছে মৃত অবস্থায়। হাতে, পায়ে গরম রড দিয়ে চেপে রাখা হয়েছিলো তারপর পানিতে কারেন্ট দিয়ে তাতে মিস্টার মিলাদকে সেখানে ফেলে মারা হয়েছে। গোডাউনের বাইরে আরও কয়েকজন লোক কে পাওয়া গিয়েছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে তাদেরকে কেউ মেরেছে। গোডাউনে অসংখ্য ড্রাগস পাওয়া গিয়েছে। খান কোম্পানির মালিকের বিসস্ত্য মানুষ ছিলো মিস্টার মিলাদ। তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে মিস্টার মিলাদ গোপনে খান কোম্পানির মালের সাথে ড্রাগস সাপ্লাই করে। সেটা এখন থেকে নয় অনেক আগে থেকেই। রহমান গ্রুপ অফ কোম্পানিতেও ড্রাগস সাপ্লাই করতো এবং সেটা আখিল রহমান জানতে পেরে তাকে অফিস থেকে বের করে দেয়। তাই সে এভার খান কোম্পানিতে একই কাজ শুরু করে।
মিস্টার মিলাদের কর্মকান্ডর কথা জানতে পেরে সবাই বুঝতে পেরেছে মিস্টার মিলাদকে মাফিয়া কিং অভিদ রায়জাদা মেরেছে।

রুহি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে টিভির দিকে আর রাইমা খুশিতে নাচছে। রুহি রাইমার নাচ দেখে আরও অবাক হয়ে গিয়েছে। অবাক হয়ে রাইমাকে বলে
” তুই এভাবে নাচছিস কেনো। ”

রাইমা এসে রাইকে নিয়ে নাচতে নাচতে বলে
” দেখেছিস আপু আমার দুলাভাই টা কত্তো ভালো। একটা খারাপ লোককে মেরে ফেলো। এন্ড আমি 90% সিউর ওই মিস্টার মিরাজকেও ভাইয়াই মেরেছে। সবাই যদি জানতে পারে অভিদ রায়জাদা আমার আপুর হবু হাজবেন্ড তাহলে তো সবাই তোকেও ভয় পাবে। আর আমি গর্বের সাথে সবার সাথে কথা বলবো যে অভিদ রায়জাদা আমার দুলাভাই।

রুহি ঝারা মেরে রাইমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে
” মানে তোরা কি ?? বুঝতে পারছি না আমি। ওই লোকটা মানুষ খুন করবে আর তুই গর্ব করবি !! লাইক রিয়েলি !! এই খুনির সাথে আমার বিয়ে কেনো ঠিক করেছে আমার মাথায় ঢুকছে না”

রাইমা ভ্রু কুচকে বলে
” খুনি মানে কি ?? ভাইয়া যে একটা ড্রাগস পাচারকারি লোককে মেরে ফেলেছে এতে তো সবারই লাভ হলো। রুমি দেখো অনেকেই ভাইয়ার ভয়ে ড্রাগস পাচার করা বন্ধ করে দেবে বা ভাইয়া ড্রাগস ব্যাবসা করতে দেবে না। আর ছোট, বড় ছেলেমেয়েরা ড্রাগস নেওয়া থেকে মুক্তি পাবে। ভাইয়া কতো ভালো কাজ করলো আর তুমি খুনি বলছো ?? হুহ” বলে রাইমা টিভি অফ করে রুমে চপে যায় কলেজে যাবে তাই রেডি হতে।

রুহি খাবার রেখে বেড়িয়ে যায়। রিকশায় উঠে ভাবতে থাকে। সত্যি অভি একটা ভালো কাজ করেছে। তবে সেইদিন মিস্টার মিরাজকে কেনো খুন করলো বুঝতে পারছে না। এসব ভাবতে ভাবতে ভার্সিটিতে এসে পৌছায়। রুহিকে দেখে মিশু রুহির কাছে আসে। দুজন কিছুক্ষণ গল্প করে ক্লাসে চলে যায়।

ক্লাস শেষে রুহি, মিশু ক্লাস শেষ করে ভার্সিটির গেটের সামনে আসতেই সেখানে অনেক ভির দেখতে পায়। রুহি, মিশু একে অপরের দিকে তাকায়। দুজনের কেউ বুঝতে পারছে না সেখানে এতো ভির কেনো। রুহি আর মিশু সেখানে গিয়ে কিছুই দেখতে পায় না। দেখতে পাবে কি করে ভার্সটির অর্ধেক মেয়ে ভির করে রেখেছে। মিশু রুহিকে নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখে অভিদ মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে,সাথে রায়হানও। তবে রায়হান ওদের দেখে আগে ভাগেই গাড়িতে উঠে গিয়েছে । পাশে বডিগার্ড গুলো মেয়েদেরকে সরানো চেষ্টা করছে কিন্তু কয়েকটা বেহায়া মেয়ে সরছেই না।

মিশু রুহিকে নিয়ে অভিদের কাছে গিয়ে দাড়াতেই বডিগার্ড অন্য মেয়েদের সরাতে আরও বেস্ত হয়ে পরে। রুহি, মিশুকে বডিগার্ড কিছু না করায় কিছু মেয়ে রুদ্ধ নজরে তাকিয়ে আছে। অভিদ রুহিকে দেখেই মন ভোলানো হাসি দিয়ে রুহিকে টান দিয়ে কাছে এনে জড়িয়ে ধরে। সব গুলো মেয়ের যেন চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। সবাই রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আর মিশু, রায়হান মিটমিট করে হাসছে।

চলবে… Wait for next part….

টাইপিং এ ভুল করে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিবেন।