মায়ার জালে পর্ব-০১

0
701

#গল্প:#মায়ার_জালে।
#লেখক #পাপন
#পর্ব::০১

বউ সেজে বাসর ঘরে বসে আছে অনু। চোখে মুখে যেন চিন্তার চাপ। কি ভাবছে তার নিজেরও অজানা। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ আসলো। লোকটি দরজা বন্ধ করে অনুর সামনে এসে বসলো। কিন্তু অনুর কোনো হেলদোল নেই। একেবারে ফ্রিজ হয়ে বসে আছে। লোকটি অনুকে দুবার ডাকলো কিন্তু অনু ঠিক একই ভাবে আছে। এবার লোকটি একটু জোরেই ডাক দিল। অনু এবার একটু চমকে উঠলো। সামনে বসা দেখলো লোকটিকে।(লোকটি লোকটি কেন করছি ,,লোকটির নাম আয়ান ।) অনু তাড়াতাড়ি পিছিয়ে গিয়ে বসলো। এবার আয়ান বললো,,,,,,,,,,,

/

আয়ান— দেখো আমি জানি তোমার উপর দিয়ে অনেক বড় ঝড় চলে গিয়েছে। শুধু তোমার না দুই পরিবারের উপরেই ঝড় বইছে। আমি জানি না আকাশ ভাইয়া কেন তোমার সাথে এমন করলো।তাছাড়া পরিবারের কথাও চিন্তা করলো না।

/

আকাশ নামটা শুনতেই অনুর চোখে পানি চলে এলো।অনু এবার জোরেই কান্না করে দিল। আয়ান কি করবে বুঝতে পারছে না। অনুকে জড়িয়ে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করবে সে অধিকারও তার নেই।

অনু এবার কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বললো,,,

অনু— আপনি আমার এতো বড় সর্বনাশ কেন করলেন।

আয়ানের কাছে এর কোন উওর নেই। সেও এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। কি বলবে সে বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণ নিরব থেকে সে বললো,,,,

আয়ান— চিন্তা করো না। ভাইয়া কখনো ফিরলে আমি নিজে থেকে সরে যাবো। তোমাদের পথের কাঠা হবো না।

/

কথাটা বলেই আয়ান ওয়াশ রুমে চলে গেলো।সারাদিন অনেক দখল গেছে তার উপর। মাথাটা ভনবন করছে। যদি গোসল করলে একটু ভালো লাগে।

এদিকে অনু অঝরে কান্না করছে।।

আপনারা এখনো বুঝতে পারছেন না কাহিনী কি। চলুন ফ্ল্যাশব্যাক দেখে আসি,,,,,,,,,

/

ভার্সিটিতে ঢুকতেই অনু ধাক্কা খেলো কারো সাথে। ধাক্কাটা এমন বেগতিক ছিল যে অনু তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল । যার সাথে ধাক্কা খেলো সে হলো আকাশ । দেখতে একদম তামিল হিরো। সে ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হতেই ধাক্কাটা লাগলো। অনু দাড়িয়েই বললো ,,,,,

অনু—- কোন কানা রে। দেখে চল,,,,(অনু আর বলতে পারলো না । আকাশকে দেখেই বড়োসড়ো একটা ক্রাশ খেলো।তাকিয়েই আছে আকাশের দিকে ।)

আকাশ—এভাবে হাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন।(অনুর মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে ।)

অনু একটু লজ্জা পেলো । আর মনে মনে বললো,,কি করছিলি অনু। এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে। হ্যান্ডসাম বলেই কি তাকাতে হবে। অনু ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে এসে বললো,,,,

অনু—- সরি।

আকাশ— সরি কেন?

অনু— ওইযে ধাক্কা দেওয়ার কারনে।

আকাশ— আরে ঐটাতে আমারও দোষ ছিল। আসলে আমি খেয়াল করি নি। আমি সরি।

অনু—it’s ok.. friend’s (হাত বাড়িয়ে)

আকাশ— হুম ( হাত মেলালো)

তারপর তারা দুজন গেলো ক্লাস করতে। তারপর থেকে শুরু হলো তাদের বন্ধুত্ব । এই বন্ধুত্ব একসময় ভালোবাসায় রূপ নেয় । অনু যেন আকাশ ছাড়া কিছুই বোঝে না। আকাশের ও একই অবস্থা । একবার কফি শপে অনু আর আকাশ দেখা করেছিল,, তাদের সাথে আয়ানও ছিল। তখন থেকে তারা পরিচিত ।

/

একসময় দুই পরিবারের লোকজন জেনে যায় তাদের ভালোবাসার কথা। এবং তারা মেনেও নেয় । বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে যায় । দুজনেই অনেক খুশি ছিল।

বিয়ের দিন আকাশ দের বাড়িতেই অনুষ্ঠান হয় । আয়ান ছিল আকাশের রুমে ।তখন আয়ান বললো,,,,

আয়ান— ভাইয়া তর কিন্তু হেব্বি চয়েস । কতো সুন্দর একটা ভাবি পাবো।

আকাশ— আমার চয়েস সবসময়ই ভালো(একটু ভাব নিয়ে)

আয়ান— ওইছে আর ভাব দেখাতে হবে না। আমি নিচে যাই তুই তাড়াতাড়ি আয় । সবাই অপেক্ষা করছে।

আয়ান নিচে যাওয়ার একঘন্টা পরও আকাশের আসার নাম নেই।আয়ান গেস্ট দের দেখাশোনা করছে। হঠাৎ আয়ানের বাবা+মা আয়ানকে ডাক দিলো । আয়ান তাদের কাছে যাওয়ার পর আয়ানের মা বললেন,,,

আয়ানের মা— বাবা আকাশকে পাওয়া যাচ্ছে না।(চিন্তিত হয়ে)

আয়ান— আরে দেখ ওয়াশ রুমে হবে হয়তো।

আয়ানের বাবা— কোথাও নেই। আমরা সব জায়গা খূজেছি।

আয়ান— হোয়াট?? এখন উপায় । আর ভাইয়া কোথায় গেলো। আমি ফোন দিয়ে দেখি।

কিন্তু ফোন দেওয়ার পর দেখলো ফোন সুইটস অফ দেখাচ্ছে । অনুর বাবা মাও জানতে পারে আকাশকে পাওয়া যাচ্ছে না। এবার সবার চোখে মুখে চিন্তার চাপ। অনু এখনও কিছু জানতে পারে নি। হঠাৎ অনুর বাবা বলে উঠলেন,,,,,,

অনুর বাবা— বাবা আয়ান তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করে নাও।

আয়ান— আপনি এসব কি বলছেন আংকেল। যাকে ভাবির স্থানে বসিয়েছি তাকে বিয়ে করবো কিভাবে ।

অনুর বাবা— প্লিজ বাবা তুমি না করো না। তাছাড়া দুই পরিবারের মান-সম্মানের ব্যাপার।

আয়ান— তাই বলে,,,,,,, আমি পারবো না আংকেল।

আয়ানের বাবা— আয়ান তুমি এই বিয়ে করবে মানে করবে। তৈরি হয়ে এসো।

আয়ান— কিন্তু বাবা???

আয়ানের বাবা— কোনো কিন্তু না।

আয়ান তার বাবার উপর কোনো দিন কথা বলে নি। তাছাড়া অনেক ভয়ও পায়। তাই কোনো উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে গেলো।

আয়ান— কিন্তু অনু কি মানবে ??

অনুর বাবা— অনুকে জানাবো না আমরা।

আয়ান— বিয়ের পর তো জানবে।

আয়ানের বাবা— সেটা পরে দেখা যাবে ।

তারপর বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয় । অনু জানেই না তার পাশে কে বসে আছে। কাজী সাহেব অনুকে কবুল বলতে বলেন। অনুও কবুল বলে দেয়। কাজী যখন আয়ানকে কবুল বলতে বলে। আয়ান কিছুক্ষণ নিরব থেকে কবুল বলে দেয়। কন্ঠ শোনা মাএই অনুর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় । অনু ঘোমটা তুলে আয়ানের দিকে তাকায়। তারপর বলে,,,, আয়ান তুমি। এটা বলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় ।

/

আয়ানকে এখন নিজের কাছে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে । অনুর মুখে পানি ছিটানো হয় । কিছুক্ষণ পানি ছিটানোর পর অনুর জ্ঞান ফিরে।তারপর সব ঘটনা শুনতে পায়। অনু তখন থেকে ফ্রিজ হয়ে বসে আছে কোনো কথা বলছে না।তার মনে একটাই চিন্তা আকাশ কেন এমন করলো।তারপর আয়ানের মা অনুকে বাসর ঘরে বসিয়ে দেন। তার মাঝে কোনো হেলদোলই নেই। পরের কাহিনী তো আপনারা জানেনই ।

আয়ান শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে যা দেখলো তার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিল না। মুহুর্তেই আয়ানের চোখে মুখে চিন্তা ভর করেছে। কারন আয়ান দেখলো,,,,

চলবে,,,,,,

(গল্প কেমন হয়েছে বলবেন। ভুল ক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। )