মায়ার জালে পর্ব-০২

0
416

#গল্প::#মায়ার_জালে
#লেখক #পাপন
#পর্ব::০২

কারন আয়ান দেখলো অনু ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আয়ান ওয়াশ রুমে যাওয়ার পর অনু কাঁদতে থাকে । এক সময় কাঁদতে কাঁদতে অনুর মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায় । তারপর হঠাৎ করে অনু ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।

/

আয়ান তাড়াতাড়ি অনুর কাছে যায় । আয়ান সাতপাচ না ভেবে অনুকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয় । তারপর তার মাকে ডাক দেয় । আয়ানের ডাকে তার মা বাবা তাড়াতাড়ি আয়ানের রুমে আসেন। রুমে ঢুকে দেখতে পান অনু বিছানায় শুয়ে আছে আর আয়ানের চোখে মুখে যেন রাজ্যের চিন্তা ভর করেছে। আয়ানকে চিন্তিত থাকতে দেখে আয়ানের মা বলেন,,,,,,

আয়ানের মা—কি হয়েছে বাবা।(চিন্তিত হয়ে)

আয়ান— অনু আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে মা।

আয়ানের বাবা— দাঁড়াও আমি ডাক্তারকে call করছি।

তারপর আয়ানের বাবা নিচে যান ডাক্তারকে call করতে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলো। অনুকে দেখার পর ডাক্তার বললো,, যে সারাদিন তেমন কিছু খায়নি, তাছাড়া অনেক বেশি চিন্তিত ছিল । তাই এমনটা হয়েছে । রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। তারপর ডাক্তার চলে গেলেন । একে একে রুম থেকে সবাই চলে গেলো। কিন্তু আয়ানের চোখে ঘুম নেই। অনুর পাশে বসে আছে। এই অল্প সময়ে মুখটা অনেক শুকিয়ে গেছে। আর মনে মনে ভাবছে যে কয়েক ঘণ্টা আগেও কতো হাসিখুশি ছিল সবাই। আর সব থেকে বেশি খুশি সেই ছিল। কারন ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। কতো ইনজয় করবে । কিন্তু একমুহূর্তে সব পাল্টে গেলো। এসব ভাবতে ভাবতে আয়ান বেলকনিতে গেলো। আকাশে থাকা একমুঠো চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে সে। আজকের চাঁদকে ও তার কাছে মলিন মনে হচ্ছে ।

আয়ানের বাবা মা পুলিশকে inform করেছেন আকাশকে খূঁজার জন্য । আকাশ নিজে থেকে পালিয়েছে না তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তা সকলের অজানা। আকাশ অনেক নম্র ভদ্র একটা ছেলে। তার সাথে কার শত্রুতা থাকতে পারে। কারো মাথায় ই ঢুকছে না।

হঠাৎ আয়ানের মনে হলো অনু রুমে আছে। তাই সে বেলকনি থেকে রুমের দিকে পা বাড়ালো। গিয়ে বসলো অনুর পায়ের পাশে। আয়ানের চোখে ও ঘুম ভর করেছে। তাকাতেই পারছে না। তাই সে ঘুমিয়ে পড়লো।

/

সকালের পাখির ডাকে অনুর ঘুম ভাঙলো । অনু হাই তুলে বিছানায় উঠে বসলো ঘুম ঘুম চোখে । হঠাৎ পাশে তাকাতেই আয়ানকে দেখে ঘাবড়ে গেল অনু। তাড়াতাড়ি করে বিছানার এক কোনে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে ঘটনাটা বুঝতে চেষ্টা করলো। যখন বুঝতে পারলো তখন সে নিজের দিকে তাকালো। এখনও বিয়ের শাড়ি রয়েছে তার গায়ে। তাই সে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে গেল। এক ঘণ্টা শাওয়ার নিয়ে বের হলো।

বের হয়ে দেখলো আয়ান এখনও উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আয়ান প্রতিদিন ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠে। ছোটবেলা থেকেই সকাল সকাল উঠা তার অভ্যাস । কিন্তু কাল সারারাত ঘুমাতে পারেনি তাই আজ ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে পারে নি।
/

অনু আয়ানকে ডাকবে কি ডাকবে না বুঝতে পারছে না। তারপর না ডেকেই নিচে চলে যায় । সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অনুর চোখ যায় আয়ান আর আকাশের একসাথে উঠা একটা ছবির দিকে। সাথে সাথে অনুর চোখ ছলছল করে উঠে। আকাশের কথা মনে পড়ে যায় । অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,,,,, আকাশ তুমি কোথায় । কেন করলে আমার সাথে এরকমটা ।

/

রানা ঘর থেকে আয়ানের মা অনুকে কান্না করতে দেখে তাড়াতাড়ি অনুর কাছে গেলেন। অনুর দিকে তাকাতেই দেখলেন অনু আকাশের ছবির দিকে তাকিয়ে কান্না করছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি অনুকে বললেন ,,,,

আয়ানের মা— আরে অনু তুমি এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেছো। আয়ান উঠেনি।

অনু— না। ((চোখ মুছে আস্তে করে বললো কথাটা)

আয়ানের মা— ছেলেটা তো এতো লেট করে না। তুমি ওকে তুলে দাও। আমি তোমাদের জন্য টেবিলে নাস্তা দিচ্ছি ।

অনু— আচ্ছা । (বলেই আয়ানকে ডাকতে চলে গেলো।)
অনু চলে যেতেই আয়ানের মা কাজের লোককে আয়ান আর আকাশের ছবিটা আকাশের রুমে নিয়ে রাখতে বলেন।

/

অনু রুমে ঢুকে পড়লো এক বিপাকে। আয়ানকে কিভাবে ডাকবে সে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে গুটি গুটি পায়ে আয়ানকে গেলো ডাকতে। অনু আয়ানকে দু-তিন বার ডাক দিলো । কিন্তু আয়ানের সাড়া শব্দ নেই। তাই অনু কাঁপা কাঁপা হাতে আয়ানকে টেলা দিলো । আয়ান তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো। মনে হচ্ছে যেন ভয় পেয়েছে । আয়ানের তাড়াতাড়ি ওঠা দেখে অনুও ভয় পেয়ে দাড়িয়ে গেলো। অনুর শাড়ির আঁচলটা নিচে পড়ে গেলো। আয়ান তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে যেতে নিলে অনুর শাড়ির সাথে পা পেছিয়ে পড়ে যায় । অনুও আয়ানের উপর পড়ে যায় ।

দুজন দুজনের দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়ান নিচে ফ্লোরে পড়ে আছে আর অনু আয়ানের উপর। অনুর মুখ আয়ানের মুখের এতো কাছে ছিল যে ,, অনুর ঘন নিশ্বাস আয়ানের মুখে পড়তে লাগলো। নিজের অজান্তেই আয়ানের একহাত অনুর কোমরে চলে যায়। আয়ানের হাতের স্পর্শ পেয়ে অনু কেঁপে উঠে। অনুর ঠোঁট কাঁপতে থাকে । ধীরে ধীরে আয়ানের ঠোঁট অনুর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায় ।

হঠাৎ অনুর খেয়াল হয় । তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে সে। শাড়ির আঁচল ঠিক করে নেয় । সাথে সাথে আয়ানও দাড়িয়ে যায় । মনে মনে ভাবতে থাকে কি অপরাধ করতে যাচ্ছিল সে। অনু ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। আয়ান কিছু স্বাভাবিক হয়ে বললো ,,,,,

আয়ান—- সরি। আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না। ভুল বুঝো না। I’m really sorry.

অনু— মা নিচে ডাকছে। ( অনু আস্তে করে বললো কথাটা।)

আয়ান ওয়াশ রুমে চলে যায় । অন্যদিকে অনু একমনে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বিছানা ঠিক করতে যায় । আয়ান আধঘণ্টা পর বাইরে আসে । পরনে একটা টাওয়াল । অনু সাথে সাথে ঘুরে দাড়ায়।তারপর বলে,,,,

অনু— আপনি এভাবে কখনও রুমে আসবেন না। (অন্যদিকে মুখ করেই)

আয়ান— সরি খেয়াল ছিল না। আমি কাপড় নিয়ে ভিতরে যাচ্ছি ।( তারপর আয়ান কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।)

কিছুক্ষণ পর আয়ান বের হলো। তারপর দুজনে একসাথে নিচে গেল।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অনু সামনের দিকে তাকালো। তাকানো মাএই অনু দাড়িয়ে যায় । সাথে সাথে আয়ানও দাড়িয়ে যায়,,,,,,,

চলবে,,,,