মেঘের ওপারে পর্ব-০১

0
304

#মেঘের_ওপারে
#পর্ব:১
#অন্তরা_দেবযানী

“বিছানার কোনে ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে অদ্রি।এখনি হয়ত শ্রেয়ান এসে তাকে ধরে ফেলবে।ভয়ে চুপসে গেল অদ্রি।মনে মনে দোয়া করছে শ্রেয়ান যেন তাকে না খুঁজে পায়।

হঠাৎই নিজের পেছনে কারো উপস্থিতি অনুভব করে অদ্রি।সে ভালো করেই বুঝতে পারছে মানুষটা শ্রেয়ান ছাড়া কেউ নয়। নড়েচড়ে উঠতেই খোপা করা চুলগুলো খুলে সারা পিঠে ছড়িয়ে পড়ল।
শ্রেয়ান অদ্রির চুলের গোছা ধরে টান মারল। রাগে ফেটে পড়ে বলল,বেদ্দপ মেয়ে কোথাকার!ইয়ার্কির জায়গা পাস না?
দেখতে না দেখতে অদ্রির চোখজোড়া পানিতে টলমল করে উঠে।শ্রেয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানার উপর বসে পড়ল। ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,, আমি কি করলাম?
শ্রেয়ান রাগী গলায় বলে,আমার ঘড়ির টাইম স্লো কে করল?
— আজব!আমি কিভাবে জানবো?গাল ফুলিয়ে বলে অদ্রি।
— আব্বু নিজের ঘড়ি না দেখে বললে না বললে তো আমি জানতামই না। কত্তো লেট হয়ে গেল।
শ্রেয়ানের কথায় অদ্রি না জানার ভান করে চুপ করে বসে থাকে।
শ্রেয়ান আবারো বলে, পাক্কা ৩ঘন্টা টাইম স্লো!
শ্রেয়ানের কথা শুনে অবাক হয় অদ্রি।শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে দ্রুততার সাথে বলে, কিন্তু আমি তো মাত্র ২ঘন্টা স্লো করেছি! দাঁত দিয়ে জিভ কাটে অদ্রি।
অদ্রির কথা শুনে হেসে উঠে শ্রেয়ান। অদ্রি তা দেখে ভেংচি কাটে।
শ্রেয়ান অদ্রির কাছে এসে নাক টেনে বলে,ধরা পড়ে গেলি তো?
পরক্ষনেই শ্রেয়ান গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই এমনটা কেন করলি?বাই দা ওয়ে,তুই আমাদের বিল্ডিংয়ের ভিতরে গেলি কিভাবে?গার্ডসরা আটকায় নি?
— উহুম!আটকাবে কি করে? আমি তো দুপুরে গিয়েছি।তারা তো তখন ঘুমে ঝিমুচ্ছিল।বলে হাসতে থাকে অদ্রি।
হঠাৎ খুশিতে ভরে গেল মুখ।বলে,
— তোমার না ফ্লাইট লেইট হয়ে যাচ্ছে?যাও!এখন ৮টা বাজে। এখন রওনা দিলেও ৯টার আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে পারবে না।এবার তুমি কিভাবে যাবে লন্ডন?হুম!
শ্রেয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,অদ্রি!তোকে একটা কথা বলি?
— বল,বল!
— আমার ফ্লাইট ৯টায় না ১০টায়।তোকে মিথ্যে বলেছি।
— তুমি আমাকে মিথ্যে বললে!
ম্লান হয়ে যায় অদ্রির মুখ।
— পাগলামি করিস না অদ্রিজা! মায়ের শরীর ভালো না। মাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।ক্লাস সেভেনে পড়িস।এখনো পাগলামি করবি?অনুনয়ের কন্ঠে বলল শ্রেয়ান।
অদ্রির চোখজোড়া পানিতে টলমল করছে।বলে,
–কবে আসবে?
— বাবা বলেছে ওখানে পড়াশোনা করাবে।
— শান ভাইয়া!
অদ্রির চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
— আরে আরে, চার বছর পর আসবো। কাঁদছিস কেন?আমি তো এমনেই বলেছি।
— তুমি আমাকে ভুলে যাবে না তো।
— নাহ্। আমি ওখান থেকে এসে সবার আগে তোর সাথে দেখা করতে চলে আসব।
— কিন্তু চার বছর তো অনেক সময়!পরে এসে দেখবে আমার বিয়েই হয়ে গেছে।
শ্রেয়ান খানিকটা হাসে।বিরবির করে বলে,সেই,,আমি না আসলে তোর বিয়ে হবে কার সাথে?
বিরবির করে বললেও অস্পষ্টভাবে তা শুনতে পায় অদ্রি। ভেংচি কেটে গাল ফুলিয়ে বসে।”

— কিরে অদ্রি! কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি?ভিতরে যাবি না?

আয়ানের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে অদ্রি।আজ তার ভার্সিটির প্রথম দিন। ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে।এই ভার্সিটিতে পড়ার মূল উদ্দেশ্য তার শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে দেখা করা।চার বছর পর শ্রেয়ান বাংলাদেশ এসেছিল ঠিকই কিন্তু গ্রামে যায়নি। এমনকি অদ্রির সাথেও যোগাযোগ হয়নি। দেখতে দেখতে পরপর সাতটা বছর কেটে গেছে। অদ্রির শ্রেয়ানের সাথে দেখা হয়নি। সেজন্য অদ্রির মনে অভিমানের কালো মেঘ জমে আছে।সে ঠিক করে রেখেছে,তার শান ভাইয়া তাকে দেখে তার সাথে কথা বলতে চাইলেও সে বলবে না।শ্রেয়ানকেই তার অভিমান গুলো ভাঙ্গাতে হবে।
আয়ানকে বলে,ভাইয়া তুমি চলে যাও।বড় আম্মু যদি জানে তুমি আমার সাথে এখানে এসেছো তাহলে খুব বকবে।
আয়ান অদ্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, এতকিছু চিন্তা করিস না। পড়াশোনার দিকে ফোকাস কর।
অদ্রি মুচকি হেসে বলে, আচ্ছা।আসি তাহলে।
— হুম।
অদ্রি ধীর পায়ে গেট দিয়ে প্রবেশ করে। অনেক খোঁজ নিয়ে শুনেছে শ্রেয়ান এই ভার্সিটিতে মাস্টার্সে পড়ে।তাই অনেক কষ্টে আয়ানকে এই ভার্সিটিতে ভর্তি করানোর জন্য রাজী করায়।
পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ফেলল। কিন্তু শ্রেয়ানকে দেখতে পেল না।চোখজোড়া পানিতে টলমল করছে তার। এখুনি বোধহয় কেঁদে ফেলবে।

হঠাৎ তার চোখ যায় পার্কিং সাইডে।বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রেয়ান। পাশে আরো কয়েকজন ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সাথে কথা বলছে শ্রেয়ান। মাঝে মাঝে হাসছে।
খুশি হয়ে যায় অদ্রি। কতদিন পর দেখছে তাকে। আগের থেকে অনেক বদলে গেছে শ্রেয়ান।

অদ্রি গাল ফুলিয়ে ইচ্ছে করে গিয়ে তাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আড়চোখে দেখল শ্রেয়ান তার দিকে তাকাচ্ছে কিনা।নাহ্! তাকাচ্ছে না। ভীষণ রাগ হল তার।
উল্টোদিকে ঘুরে জোরে জোরে পায়ের আওয়াজ করে হাঁটা শুরু করল। আড়চোখে তাকাতেই হুট করে শ্রেয়ানের চোখে চোখ পড়ে। লজ্জা পায় অদ্রি।ভাবে,এখন হয়ত শ্রেয়ান এসে বলবে,কেমন আছিস অদ্রি?
কিন্তু নাহ্!শ্রেয়ান আবার নিজের মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
তখনই একটা মেয়ে এসে শ্রেয়ানের হাত জরিয়ে ধরে।অদ্রির বেশ রাগ হল।আচ্ছা!শ্রেয়ান কী তাকে চিনে নি?হয়ত।তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে হয়ত চিনতে পারে।আগে চিনুক।তারপর না হয় অভিমান।
অদ্রি শ্রেয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।বলে,
— কেমন আছ শান ভাইয়া?
শ্রেয়ান কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বিরক্তি নিয়ে বলে,
— অদ্রিজা!তুই?
— অদ্রি থেকে অদ্রিজা করে দিলে! আচ্ছা তুমি আর গ্রামে যাওনি কেন?
— প্রয়োজন হয় নি তাই! কিন্তু তুই এখানে?বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল শ্রেয়ান।
— আমি এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।
— ওহ্।
— তুমি খুশি হওনি?
শ্রেয়ান চড়া গলায় বলে, হয়েছি।
অদ্রি শ্রেয়ানের হাত টেনে ধরে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি খুশি হওনি।

শ্রেয়ান এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে রেগে বলে,কেন রে,যদি বলি খুশি হইনি তাহলে কি তুই ভার্সিটি ছেড়ে দিবি?
আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রেয়ানের ফ্রেন্ডরা কিটকিটিয়ে হেসে।একজন বলে ওঠে,এই গেঁয়োটা কেরে শ্রেয়ান?
শ্রেয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,আমার পরিচিত।
অদ্রির মুখ কালো হয়ে যায়। চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।শ্রেয়ান কেন তার সাথে এমন করছে?তবে কি তার শান ভাইয়া পাল্টে গেল?

চলবে।