মেঘের ওপারে পর্ব-০২

0
257

#মেঘের ওপারে
#পর্ব:২
#অন্তরা_দেবযানী

অদ্রি থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করে,
— আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না যে!কেমন আছো তুমি? আঙ্কেল কেমন আছেন?আর আন্টি?
শ্রেয়ানের বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে আসে। খানিকটা রাগীভাবে বলে,
— ভালো লাগছে না।যা এখান থেকে।

অদ্রি আবার শ্রেয়ানের হাতটা টেনে ধরল। মৃদু আওয়াজে বলল, তুমি এমন করছ কেন শান ভাইয়া?
শ্রেয়ান পুনরায় হাত ছাড়িয়ে বলে,ডোন্ট টাচ মি।এখান থেকে যা।
পাশ থেকে শ্রেয়ানের আরেকজন ফ্রেন্ড বলে উঠে,এই শ্রেয়ান ঠিক করে বলতো এটা কে?তোর,,,
বাকি কথা শেষ করে না।তার আগেই সবাই বিকৃতভাবে হেসে ওঠে। শুধু একজনের মুখে হাসি নেই।শ্রেয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিদ্ধির মুখে।

সূর্যের আলোয় অদ্রির চোখের পানি চিকচিক করছে। হঠাৎ অদ্রি রাগী গলায় বলে,টাচ্ করব না মানে?একশবার করবো।বলে শ্রেয়ানের হাত ধরতে যায় তখনই রিদ্ধি তাকে জোরে ধাক্কা দেয়।
অদ্রি টাল সামলাতে না পেরে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে পড়ে যেতে নেয়।অদ্রি অনুভব করছে কেউ তাকে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। অদ্রি খুশি হয়।ভাবে,তার শান ভাইয়া হয়ত ধরেছে। কিন্তু চোখ খুলে দেখে শ্রেয়ান তার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।তাহলে কে ধরল তাকে?

অদ্রি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আয়ান ধরে আছে। আয়ানকে দেখা মাত্র অদ্রি ভয়ে চুপসে গেল।
আয়ান অদ্রিকে সোজা করে দাঁড় করায়।রিদ্ধির দিকে তাকাতেই রিদ্ধি এগিয়ে এসে বলে,আসলে ভাইয়া ও অনেকক্ষন ধরে আমাদের ডিস্টার্ব করছিল।তাই,,,,,
আয়ান রাগি দৃষ্টিতে অদ্রির দিকে তাকায়।অদ্রি মাথা নিচু করে পায়ের পাতার দিকে তাকিয়ে আছে।

অদ্রি আস্তে করে চোখ উঠিয়ে দেখে আয়ান তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অদ্রি ফ্যাকাসে হেসে বলে,ও মিথ্যে কথা বলছে ভাইয়া।আমি তো শান ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম।ও এসে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।

আয়ান শ্রেয়ানের নাম শুনে অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে তাকায় অদ্রির দিকে।
অদ্রি ইশারায় শ্রেয়ানকে দেখায়।শ্রেয়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান থমথমে গলায় ডাকে, শ্রেয়ান!
শ্রেয়ান আয়ানের দিকে তাকিয়ে চড়া গলায় বলে,আমি ওকে চলে যেতে বলেছিলাম।ও শুনে নি। রিদ্ধি চল।এই তোরা চল।
শ্রেয়ান রিদ্ধি আর তাদের ফ্রেন্ডরা চলে গেল।

আয়ান কিছুটা অপমানিত বোধ করল। শক্ত করে অদ্রির হাত চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরায়। ততক্ষণে অদ্রি কেঁদে দেয়।নাক টেনে টেনে বলে, ভাইয়া শান ভাইয়া কেন আমার সাথে এমন করছে?
আয়ানের ভীষণ রাগ হলো।ধমক দিয়ে বলে,তোকে কি এজন্য আমি এখানে ভর্তি করিয়েছি?তোকে যাওয়ার সময় কি বললাম,,,এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছিস তাই না?
অদ্রি আয়ানের ধমকে কান্না থামায়।সে তো ভুলেই গেছে সে ভার্সিটিতে আছে এই মুহূর্তে।এমন জায়গায় কান্না করা, তাও এতো বড় মেয়ে হয়ে! তার উপর আবার আয়ানের বকা!অনেক লজ্জাজনক পরিস্থিতি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকেই তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অদ্রি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ফেলে।আয়ানকে বলে ,সরি ভাইয়া!

আয়ান রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রি তাকে থামিয়ে দিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইতস্তত করে বলে, ভাইয়া তোমার পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে তুমি নিশ্চয়ই কথা বলতে যাবে, আমিও ঠিক শান ভাইয়াকে দেখে কথা বলতে গিয়েছিলাম।তো,, আমি কি আর জানতাম শান ভাইয়া এমন পাল্টে গেছে!

অদ্রির গলাটা অদ্ভুত শোনায় আয়ানের কাছে।
আয়ান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পার্কিং সাইডে দাঁড়ানোর ফলে অনেকের প্রবলেম হচ্ছে।আয়ান অদ্রির হাত ধরে সাইডে নিয়ে এলো।
ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,দেখ অদ্রি! আম্মু জানে তোকে আমি গ্রামে দিয়ে এসেছি। কিন্তু আমি তোকে এই ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। প্লিজ এমন কিছু করিস না যাতে কোনো প্রবলেম হয়।
অদ্রি চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ে।
হঠাৎই চোখ খুলে আয়ানের দিকে তাকায়।বলে, তুমি না চলে গিয়েছিলে!
— হুমম! ভাবলাম তোর হয়ত সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তুই নিজেই দেখি সমস্যা বাধিয়ে ফেলেছিস।
অদ্রি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,আমি কি করলাম?
আয়ান উল্টো দিকে ঘুরে যায়।
— বুঝলাম,তোর কোনো দোষ নেই। কিন্তু যা বললাম মাথায় রাখিস।এমন কিছু করিস না যাতে আমার বা তোর মান সম্মান নষ্ট হয়।বলে আয়ান হাঁটা শুরু করল।
অদ্রিও ক্লাসের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।

☆☆☆

ক্লাসরুমে গালে হাত দিয়ে বসে আছে শ্রেয়ান। ক্লাস চলছে। কিন্তু শ্রেয়ানের মনোযোগ নেই।তার মাথায় অনেক চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে।সে যতটুকু জানে অদ্রির এই ভার্সিটিতে পড়ার মতো সামর্থ্য নেই।যদি ধরে নেয় অদ্রি স্কলারশীপ পেয়েছে!নাহ্। অদ্রি পড়াশোনায় বরাবরই বেশ দুর্বল।তার পক্ষে স্কলারশীপ অসম্ভব। পরক্ষনেই নিজের উপর নিজেরই ভীষণ রাগ হল। অদ্রি যেভাবেই এই ভার্সিটিতে চান্স পাক না কেন এতে তার কি? অদ্রিকে সে এখন সহ্য করতে পারে না। অদ্রির কথাবার্তা,বাচ্চামো স্বভাবগুলোর কথাগুলো মনে পরলেই অসহ্যকর লাগে।তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, অদ্রি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে।অদ্রির সাথে মিশতে তার আনইজি ফিল হয়।

পাশ থেকে শ্রেয়ানের ফ্রেন্ড রাজ শ্রেয়ানের অন্যমনস্কের ব্যাপারটা লক্ষ্য করে।হাত বাড়িয়ে ধাক্কা দেয়।
হঠাৎ শ্রেয়ানের ভাবনায় ব্যঘাত ঘটায় রেগে যায় সে।রেগে গিয়ে বলে,
— প্রবলেম কি?
— না কিছু না।ওই আরকি।আমতা আমতা করে বলল রাজ।
রাজের কথায় শ্রেয়ানের রাগ আরেকধাপ বেরে গেল। আপাতত রাগ কন্ট্রোল করে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল।

☆☆☆

ভার্সিটির পাশেই ছোট একটা পুকুর। পুকুর পাড়ে বসে আছে অদ্রি। পুকুরের পানিরাশির দিকে তাকিয়ে আছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখজোড়া বন্ধ করে নিল।ভাবছে,শ্রেয়ান কেন এমন করছে? কতকিছু ভেবে রেখেছিল সে।কতদিন পর দেখা হবে তার শান ভাইয়ার সাথে!কত গল্প জমে আছে! কিন্তু তার শান ভাইয়া তো পাল্টে গেছে। সত্যিই কি পাল্টে গেছে?হয়ত পাল্টায়নি।
হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করে অদ্রি। খুশি হয়ে বলে, আমি জানতাম শান ভাইয়া তুমি আমাকে সরি বলতে আসবে! আমি তোমার সাথে কথা বলব না। খুব পঁচা হয়ে গেছো তুমি।

— শান!কে শান?আমি তো রাজ।

অদ্রি চোখ খুলে তাকালো।তার পাশে রাজ নামক ছেলেটাকে এক পলক দেখে নিল।তেজি গলায় বলল, তুমি!তুমি তো ঐ ছেলেগুলোর মধ্যে একজন যে ওই সময় আমাকে নিয়ে হাসছিলে।এখানে কেন এসেছো?
অদ্রি খানিকটা দূরে সরে বসে।
রাজ অদ্রিকে দূরে সরে বসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।বলে,শান কে?
— শান ভাইয়া হলো শ্রেয়ান ভাইয়া তোমাকে কেন বলব? অদ্রি মুখ ঘুরিয়ে বলে।
রাজ অদ্রির কথা শুনে আড়ালে মুখ টিপে হাসে।উঠে গিয়ে অদ্রির গা ঘেষে বসে।
অদ্রি বেশ বিরক্তিবোধ করে।
— প্রবলেম কি তোমার? চলে যাও।নাহলে,,,
— নাহলে কি!বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে রাজ।
অদ্রি ব্যাগ থেকে কলম বের করে রাজের সামনে ধরে। বলে,এটা দেখছো?
— হ্যাঁ,কলম।
— এটা দিয়ে আপনাকে গুতা দিব।
রাজ অবাক হয়।একটু আগে তুমি এখন আবার আপনি।
রাজকে চুপ থাকতে দেখে অদ্রি আবার বলে,এখনো যাননি!
রাজ ছোট ছোট চোখ করে তাকায় অদ্রির দিকে।
— কেন আমি থাকলে কি সমস্যা?
— আপনাদের জন্য শান ভাইয়া আমার সাথে এমন করেছে।
— ওহ রিয়েলি!শ্রেয়ান তোমাদের মতো মিডেল ক্লাস মানুষের সাথে মিশে না। ভ্রু উঁচিয়ে কথাগুলো বলে রাজ।
অদ্রি রেগে গিয়ে বলে, তুমি বেশি বকবক কর।তোমার,,,
অদ্রি চুপ হয়ে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখজোড়া বন্ধ করে নিল।মনে মনে কিছু বললো। ঠোঁট নড়লো। কিন্তু আওয়াজ বেরোল না।

চলবে,,