মেঘের ওপারে পর্ব-০৩

0
188

#মেঘের_ওপারে
#পর্ব:৩
#অন্তরা_দেবযানী

হাতের কাছের বইগুলো একঘন্টা যাবৎ নেড়েচেড়ে দেখছে অদ্রি।মাঝে মাঝে বারান্দায়ও উঁকি দিচ্ছে। বারান্দায় মহুয়া এখনো ফোনে কথা বলছে। মহুয়া অদ্রির রুমমেট।৩য় বর্ষে পড়ে।সেই কখন থেকে ফোনে কথা বলে যাচ্ছে,রাখার নাম নেই। অদ্রি বুঝে না,এতো কথা কোথায় পায়। অদ্রি হাত দিয়ে ঠেলে বইগুলোকে দূরে সরিয়ে দিল। ফোনটা হাতে নিল।আজই রাজের থেকে শ্রেয়ানের ফোন নম্বর নিয়েছে।শ্রেয়ানের নাম্বারে কল করল।
ফোন ক্যান নট বি রিচড।
অদ্রি দীর্ঘশ্বাস ফেলে এলোমেলো বইগুলোকে কাছে টেনে নিয়ে গুছাতে লাগল। খোলা জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস এসে অদ্রিকে কাঁপিয়ে তুলছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।আয়ান ফোন করেছে। অদ্রি মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নেয়।
আয়ান জিজ্ঞেস করে, কোথায় আছিস?

অদ্রি হাসে।বলে, হোস্টেলে! রুমে আছি।এত রাতে কোথায় থাকবো? হঠাৎ ফোন দিলে যে!

— এমনেই।ভালো লাগছিল না।
— কেন?
— মন খারাপ।

অদ্রি হেসে দেয়।বলে,তাহলে মনকে চলন্ত ট্রেনের মতো ছোটানোর চেষ্টা কর।ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু।

— অদ্রি!কাল আমার সাথে দেখা করতে পারবি?
— হুম, কিন্তু কেন?
— সারপ্রাইজ আছে তোর জন্য।
— সারপ্রাইজ!কি সারপ্রাইজ আছে?
— গাধী! আগে থেকে বলে রাখলে কি সারপ্রাইজ হয়?
— দিলে তো!দিলে তো আমার রাতের ঘুম নষ্ট করে!এবার যতক্ষণ না জানতে পারব সারপ্রাইজটা কি ততক্ষন ঘুমই আসবে না।

আয়ান হাসে। অদ্রি শুনছে সেই হাসির শব্দ।আয়ান বলে,পাগলিটা।কাল বিকেল ৪টার দিকে করিমকে পাঠিয়ে দেব

— আচ্ছা।রাখছি।
— হুম।

অদ্রি ফোন কেটে দেয়। মহুয়াও রুমে আসে। মহুয়ার সাথে এখন পর্যন্ত অদ্রির ভালোভাবে কথা হয়নি। অদ্রি বলেনি।আর মহুয়াও বলতে চায়নি।
অদ্রি গুছানো বইগুলোকে এক সাইডে রেখে দিল। ফোনটা নিয়ে আবারো শ্রেয়ানকে কল করল।দুইবার বাজার পর শ্রেয়ান রিসিভ করল। অদ্রি খুশি হয়।বলে,
— কি করছ শান ভাইয়া?

শ্রেয়ান বুঝতে পারে অদ্রি কল করেছে।বলে, আমার নাম্বার তুই কোথায় পেলি?
— তোমার ঐ বাজে বন্ধুটার থেকে।
— কে?নাম কি?
— রাজ মনে হয়।জানো ঐ ছেলেটা বলেছে তুমি নাকি আমার মতো মেয়েদের সাথে মিশো না।জানো,আমাকে মিডল ক্লাসও বলেছে।ও মিথ্যে বলেছে তাই না?
— না।
শ্রেয়ান ফোন কেটে দেয়।
অদ্রি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনের দিকে তাকায়।মনে মনে বলে, তুমি আমাকে ইগনোর করছো!ভালো।আর কল করব না তোমাকে।তুমিই আমাকে কল করবে।

☆☆☆

আয়ান বলেছিল চারটার দিকে গাড়ি পাঠাবে।এখন চারটা বেজে তেরো মিনিট হয়ে গেল।এখনো গাড়ি আসে নি। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেল অদ্রি।এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ভীষণ বিরক্তিকর।
কিছুক্ষণ পর অদ্রির সামনে সাদা রঙের একটা গাড়ি এসে থামল।
অদ্রি গাড়ির হ্যান্ডেল চাপ দিতেই বেকায়দায় হাত কেটে গেল। অদ্রি ‘আহহ’ শব্দ করে উঠল।হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।

অদ্রির মৃদু চিৎকারে করিম ড্রাইভার অদ্রির দিকে তাকায়।সেই সাথে মুখ টিপে হাসে।

সে হাসি অদ্রির চোখের অগোচর হয় না। অদ্রির মন খারাপ হয়। গাড়িতে উঠে বসে।
মানুষগুলো এমন কেন?অন্যের দুঃখে হাসে। অদ্রি ব্যথা পেয়েছে,আর লোকটা কিনা হাসছে!সব মানুষই কি এমন!হয়ত না।যদি হতো তাহলে হয়ত অদ্রি যখন এক্সিডেন্ট করেছিল,তখন আয়ান হন্তদন্ত হয়ে তাকে হসপিটালে ভর্তি করাতো না।বড় আম্মুর কথার অবাধ্য হয়ে তাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করাত না।
কিন্তু আয়ানের মতো মানুষ কেন সবাই হয় না।আয়ান অদ্রিকে একদম নিজের বোনের মতো ভালোবাসে।
অদ্রি হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।এখনো রক্ত পরছে। অদ্রির চোখের সামনে ড্রাইভারের হাসি ভেসে উঠল।রাগে গা জ্বলে উঠল।
আয়ান বলেছিল,এসব ব্যাপার ইগনোর করবি। পাত্তা দিবি না। সহনশীল হতে শিখ।
কিন্তু একজন মানুষের কতটুকু সহনশীল হওয়া দরকার।জানে না অদ্রি।

☆☆☆

রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আধ ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে আয়ান। অন্যান্য সময় হলে আয়ান বিরক্ত হতো। কিন্তু আজ বিরক্ত হচ্ছে না‌।আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে।

পেছন থেকে ডাক এলো।
— আয়ান ভাইয়া!

আয়ান ঘুরে তাকায়। অদ্রি এসেছে।আয়ান অদ্রির নাক টেনে বলে, এতক্ষণে এসেছিস তাহলে!
অদ্রি ছোট করে বলে,হুম।
— চল ভিতরে।
— চলো।

আয়ান অদ্রিকে নিয়ে ভেতরে যায়।
আয়ান অদ্রিকে ইশারায় সামনে তাকাতে বলে।
অদ্রি সামনে তাকায়।দেখে, একটা মেয়ে মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

অদ্রি খুশি হয়ে যায়।ডাক দেয়, শ্রেয়া আপু!
অদ্রি দৌড়ে জড়িয়ে ধরতে যায়। শ্রেয়া শ্রেয়ানের ছোট বোন। অদ্রির দুই বছরের বড়।
শ্রেয়ার কাছে গিয়ে অদ্রি থেমে যায়।ভাবে,শ্রেয়া আপুও কি তাকে শ্রেয়ানের মতো দূরে সরিয়ে দেবে?তার কথা বার্তায় বিরক্ত হবে?

অদ্রির চিন্তার মধ্যে দিয়েই শ্রেয়া এসে অদ্রিকে জরিয়ে ধরে।বলে,কেমন আছিস অদ্রি?
— ভালো। তুমি?
— ভালো।
অদ্রি শ্রেয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আয়ানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
আয়ান অদ্রির চোখের ভাষা বুঝতে পারে। বলে, তোর হবু ভাবি।
অদ্রি খুশি হয়ে যায়। মুখে হাসি। অদ্রি আবারও শ্রেয়ার কাছে দৌড়ে যায়। বলে,শ্রেয়া আপু না শ্রেয়া ভাবি।
শ্রেয়া হাসে। অদ্রির হাত ধরে একটা টেবিলে বসিয়ে দেয়।আজ সাত বছর পর দেখা।কত গল্প জমে আছে তাদের মধ্যে।
অদ্রি শ্রেয়ার আচরণে অবাক হয়।শ্রেয়ানের সাথে যেন শ্রেয়ার কোনো মিলই নেই।
হঠাৎ আয়ানের ফোনে কল আসে।আয়ান একটু দূরে গিয়ে কল এটেন্ড করে।
— বলুন!
অপর পাশ থেকে কেউ কিছু একটা বলে।আয়ান রেগে যায়। রেগে গিয়ে বলে,
— একদম না।আমার ঐ ফাইলটা এখনি চাই।আপনি এখুনি আমার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
আয়ান কল কেটে দেয়। পিছনে ফিরে দেখে অদ্রি দাঁড়িয়ে আছে।আয়ান অদ্রিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,কি হয়েছে?

অদ্রি আমতা আমতা করে বলে, তুমি আমাকে বকা দাও ঠিকই,রেগেও কথা বল। কিন্তু কখনো অন্য কারো সাথে রেগে কথা বলো না। তাহলে এখন কার সাথে এভাবে কথা বলেছো?

আয়ান হেসে বলে, অদ্রি যে যেমন মাঝে মাঝে তার সাথে তেমন ব্যবহার করতে হয়।দেখনা আমার পিএ সকাল থেকে বলছি অফিসের একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল দিয়ে যেতে। কিন্তু একটু পরে একটু পরে করতে করতে এখনো আনে নি।কাজেও ফাঁকি দেয়।জানিস একদিন,,,,,,

অদ্রি আয়ানের কথার দিকে মনোযোগ নেই।সে আয়ানের প্রথম কথাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে লাগলো।

চলবে,