যদি আমার হতে পর্ব-৭+৮

0
799

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৭
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

আদ্রিশাকে আর‌ও এক ধাপ অবাক করে মুগ্ধ করুণ গলায় বললো, ” বললাম তো সরি! এতোটা দেরি হয়ে যাবে বুঝতে পারি নি! আমি জানি আপনার একা একা এখানে বসে থাকতে ভালো লাগে নি। কিন্তু মিটিং ছেড়েও যে আসতে পারছিলাম না। আই প্রমিজ আর কখনো এমন হবে না। বিয়ের পর আপনাকে আমার জন্য কখনো অপেক্ষা করতে হবে না। বরং যখন‌ই আপনার আমার কথা মনে পরবে, বান্দা হাজির হোগা!” কথাগুলো বলার সময় মুগ্ধর মুখে হাসি ছিলো। অথচ আদ্রিশা অবাকের চূড়ান্ত সীমায়। আদ্রিশা ভাবছে মুগ্ধর হলোটা কি? এভাবে হাত ধরে উল্টো পাল্টা বকছে কেনো। ওদের মধ্যে যা কথা চলছিলো মুগ্ধ সেই কথা থেকে সম্পূর্ণ অন্য কথায় ঝাপ দিলো! কেনো? ভুতে ধরেনি তো আবার! ‌ওর কথাবার্তায় মনে হচ্ছে মুগ্ধ আর আদ্রিশার মধ্যে সব কিছু স্বাভাবিক। ভাব এমন যেনো , বিয়ের আগে হবু স্বামী- স্ত্রী তাদের হানিমুন ডেস্টিনেশন ডিসাইড করতে এসেছে।আদ্রিশা মুগ্ধর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। মুগ্ধ খুব শক্ত করে হাত দুটো ধরেছে, যেনো ছাড়লেই পালাবে! তীব্র বিরক্তি নিয়ে আদ্রিশা বললো,”কিসব বলে চলেছেন! হাত ছাড়ুন! পাগল হয়ে গেলেন না কি!? আমি বলছি এক আর আপনি বলছেন আরেক!” মুগ্ধ ইনোসেন্ট ফেস করে বললো, “আপনার এতো রাগ! বিয়ের পরতো আপনার মান ভাঙাতে ভাঙাতেই আমি বুড়ো হয়ে যাবো!” আদ্রিশা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো, “আবার ফালতু কথা! এই আপনি ঠিক আছেন তো! দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু! আমি যা জানতে চাচ্ছি সেটা বলুন!” মুগ্ধ আদ্রিশার পেছনের দরজার দিকে একপলক দেখে তাকে কিছু ইশারা করলো। মুগ্ধর ইশারা বুঝতে ব্যার্থ আদ্রিশা পেছনে তাকাতে নিলেই মুগ্ধ আদ্রিশার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো , ” আরেহ! ভাইয়া আপনি! এখানে?” আদ্রিশা বুঝলো না মুগ্ধ কাকে ভাইয়া বলছে! তাদের কথার মাঝখানে অন্য একজনকে যেচে টেনে আনার মানে কি!? আদ্রিশা মুখ ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। তাদের দিকে হাসি মুখে এগিয়ে আসছে আদ্র!আদ্রিশার এবার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! তার মনে হচ্ছে আজ “বিশ্ব অবাক দিবস”! তা না হলে বার বার সেই কেনো অবাক হচ্ছে! কখনো মুগ্ধর কথায়, কখনো মুগ্ধর কাজে, কখনো ক্যাফেটেরিয়ায় নিজের ভাইকে দেখে! তার ভাবনার মাঝেই আদ্র তাদের টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ালো। আদ্রিশা অবাক হলেও মুগ্ধর চোখে মুখে অবাক হ‌ওয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। হাসি মুখে দাড়িয়ে আদ্রকে বসতে বললো সে। আদ্র চেয়ার টেনে বসে আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো,”কি জানতে চাচ্ছিস তুই?”

আদ্রিশা হাসার চেষ্টা করে বললো,”আসলে, উনি অনেকটা দেরি করে এলেন তো, তাই জানতে চাইছিলাম কেনো দেরি হলো!”

আদ্র মেকি হাসি দিয়ে বললো,” না তো, মুগ্ধতো নিজেই এর উত্তর দিলো, ওর মিটিং ছিলো তাই দেরি হয়েছে! এরপর তুই কিছু জানতে চাইছিস বললি! আমি শুনলাম তো!”

আদ্রিশা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আদ্রিশাকে ভাবতে দেখে মুগ্ধ‌ই বলতে লাগলো,”আসলে ভাইয়া আদ্রিশা লজ্জা পাচ্ছে আপনাকে বলতে। যত‌ই হোক আপনি ওর বড় ভাই!”

আদ্র আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো,”কিহ! তুই লজ্জা পাচ্ছিস!? কেনো কেনো? ভাইয়ের কাছে বোনের লজ্জা পেতে হবে কেনো!” চোখ সরিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো, “মুগ্ধ তুমি বলোতো ব্যাপারটা কি! কি এমন কথা যা আমায় বলা যায় না!?”

আদ্রিশা মুগ্ধর দিকে কাঁদো কাঁদো মুখে তাকালো। ও কিসের লজ্জার কথা বলেছে সেটা তার নিজের‌ই মনে পরছে না।ওদের মধ্যে যেসব কথা হচ্ছিলো তাও লজ্জার ছিলো না। মুগ্ধ এবার কি বলবে কে জানে! আবার না ফাঁসিয়ে দেয়!

মুগ্ধ মাথা নিচু করে লজ্জা লজ্জা চেহারায় বললো, “আদ্রিশা জানতে চাইছিলো আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো! আর,,,”

আদ্র আদ্রিশার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, “আর?”
আদ্রিশা ভাই আর মুগ্ধর দিকে তাকাচ্ছে। এই কথাতেই তার মাথায় রক্ত উঠে গেছে এখন আবার কি বলবে সেটাই ভাবছে সে। মুগ্ধ আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো, ” ও জানতে চাইছে আমরা বেবি কয়টা নেবো!? প্রথম সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে!? নাম কি রাখবো!? এইসব আরকি!”

মুগ্ধর কথায় আদ্র বোকা বনে গেলো, সাথে লজ্জাও পাচ্ছে তার। বোন আর বোনের হবু বরের হানিমুন আর ফ্যামিলি প্ল্যানিং শুনছিলো সে! ছি ছি! কিভাবে কথাটা ঘুরাবে এখন!? ‌এদিকে আদ্রিশার চোখ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে যেনো! মুগ্ধ তাকে একের পর এক অপমান করে চলেছে, সবার সামনে লজ্জিত করে চলেছে, আর সে চুপচাপ মাথা পেতে সব মেনে নিচ্ছে! কিন্তু এখন কথা না ঘুরালে যে মুগ্ধ আবার কোনো বেফাঁস কথা বলে ফেলবে, তা বেশ বুঝে গেছে আদ্রিশা। নিজের লজ্জা আর রাগ কে মাটি চাপা দিয়ে আদ্রকে বললো,”তুই হঠাৎ এখানে কেনো এলি ভাইয়া?” আদ্রিশার প্রশ্নে আদ্র হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো, “আরুর জন্য আসতে হলো। সকালের ঘুসটা তো দিতে হবে তাকে, নাকি!” মুগ্ধ তাদের কথার আগামাথা না বুঝে জিগ্যেস করলো, “মানে?”

আদ্র হেসে বললো, ” আসলে আরুর খুব জ্বর ছিলো কদিন ধরে। আজ কমেছে। সকালে খেতে চাইছিলো না, মুখে স্বাদ পাচ্ছে না। তাই খাওয়ানোর জন্য ঘুস হিসেবে ওনাকে পিজ্জা আর স্যান্ডুইচ দেবো বলেছিলাম। তার সেসব এখন‌ই চাই! সন্ধ্যে হয়ে গেছে এখন আর পিজ্জা পাওয়া যাচ্ছে না আমাদের ওখানের রেস্টুরেন্টে। বাধ্য হয়ে এদিকটায় এলাম। মা বলেছিলো আদুও এই ক্যাফে তে আছে, ভাবলাম আপনাদের কথা শেষ হলে, ওকে আমার সাথে নিয়ে যাবো!”

মুগ্ধ বললো,”ওহহ,,, পেয়েছেন পিজ্জা এখানে?”

আদ্র বললো,”হুম অর্ডার দিয়েছি। প্যাক করছে। আপনাদের কথা শেষ!? না আসলে, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে! আমার সাথেই নিয়ে যেতাম।”

আদ্রিশার তো মুগ্ধর সাথে কোনো কথাই হলো না। যার জন্য এলো সেটাই করতে পারলো না। অযথা সময় নষ্ট হলো! মুগ্ধ ঠান্ডা কফিটায় এক চুমুক দিয়ে বললো,” অবশ্য‌ই! যদিও নিজের কফিটা উনি শেষ করেন নি, বাট ইটস ওকে! কফির কাপ খালি করতে আরো একবার দেখা করা যেতেই পারে! তাই না আদ্রিশা?” আদ্র হেসে বাই বলে প্যাক করা পিজ্জার বিল মেটাতে গেলো, আদ্রিশা নাক ফুলিয়ে ব্যাগ থেকে কফির বিল মিটিয়ে ভাইয়ের পিছনে এগিয়ে গেলো। মুগ্ধ‌ও নিজের ভাগের টাকা দিয়ে দরজার দিকে এগুলো। আদ্র কাউন্টারের সামনে দাড়িয়ে আর আদ্রিশা ঠিক তার পেছনে। মুগ্ধ তাদের পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে আদ্রিশার কানে কানে বললো, “পরের বার দেখা করলে সিওর বাচ্চাদের নাম ঠিক করে ফেলবো!” আদ্রিশা রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাতেই মুগ্ধ অন্যদিকে ফিরে চলে গেলো।

ক্যাফে থেকে বেরিয়ে ফুটপাত ধরে হেটে গাড়ি পর্যন্ত এলো মুগ্ধ। গাড়ির দরজা খুলে পেছন ফিরে তাকিয়ে আদ্র আর আদ্রিশার যাওয়ার দিকে তাকাচ্ছে সে। মিটিমিটি হেসে ভাবলো, কেনো এই মেয়েটাকে জ্বালাতে এতো ভালো লাগে তার। ক‌ই সে তো এমন নয়! গম্ভীর প্রকৃতির মুগ্ধ আদ্রিশার সাথেই ফাজলামো করে খুব। তাকে বার বার রাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।আবার ভাবছে, ও কোনো ভুল করছে না তো। নিজের প্ল্যান মাফিক এগুচ্ছে ঠিক, কিন্তু আদ্রিশা! কোনোভাবে তার সাথে অন্যায় হবে না তো! হাবিজাবি কতো কিছু ভেবে গাড়িতে বসে ড্রাইভ করে চলেছে বাড়ির উদ্দেশ্যে। একদিনে এতো ভাবনা মাথায় কুলোচ্ছে না তার। একটু শান্তির প্রয়োজন। যা হবে দেখা যাবে! মুগ্ধর প্ল্যানে কখনো গড়বড় হতে পারে না এটা ভেবেই একটা দুষ্টু হাসি হেসে এগিয়ে চলেছে মুগ্ধ।

চলবে,,,,,,,,,

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৮
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঘাসের উপর বসে আছে আদ্রিশা। তাকে কেন্দ্র করে গোল হয়ে বসেছে রুহি, তুহিন,আর নিলা। এই ৪ জন‌ই কলেজ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড। এদের মধ্যে রুহি , রবিন আর আদ্রিশার সম্পর্কের ব্যাপারে প্রথম থেকে জানলেও, তুহিন আর নিলা কয়েক মাস পর‌ই জানতে পেরেছিলো। সবাই মুখ গোমরা করে চিন্তিত ভাব নিয়ে বসে চর্চা করছে। চর্চার বিষয় ছিলো, আদ্রিশার বিয়েটা কিভাবে আটকাবে! সবাই ই চায় যেনো আদ্রিশা খুশি থাকে। আর তার খুশি রবিনের সাথেই। রুহি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, “আদু! আমার মাথায় কিছু আসছে না!” তুহিনও দুখী দুখী চেহারা নিয়ে বললো,”হ্যাঁ রে দোস্ত! মাথাটা ফাকা ফাকা লাগছে!ঐ নিলা কোনো আইডিয়া পেলি?” সেও না বোধক মাথা নাড়লো। রুহি আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো, “কি ভাবছিস?” আদ্রিশা রুহির দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,”ভাবছি রবিনকে কি বলবো!” রুহি আর তুহিন একসাথে বলে উঠলো,”কিহ! ” ‌নিলা বোকার মতো বললো,”তোরা কানে কম শুনিস না কি? ও বলেছে, ভাবছে রবিনকে কি বলবে! শুনেছিস?” তুহিন নিলার মাথায় চাটি মেরে বললো,” বুদ্ধু! কিহ, বলার মানে এই না যে আমরা শুনি নি! কিহ, বলেছি কারন, ও এখনো ভাবছে রবিন কে কি বলবে?আজব! তোর ওকে জবাবদিহি কেনো করতে হবে?”
——এক্সেক্টলি! ও তো ভাবছে না, তোর কথা! যদি ভাবতো তবে তোকে পাত্রপক্ষের সামনে বসতে হতো না!(রুহি)
——ওর তো কোনো দোষ নেই রুহি। কোনো ছেলে যদি শুনে তার গার্লফ্রেন্ড অন্য ছেলের সামনে সেজে গুজে বসে আছে, বিয়ে করার উদ্দেশ্যে! তাহলে রাগ করাটা কি জায়েয নয়?(আদ্রিশা)
——রাগ হ‌ওয়া স্বাভাবিক আদু। কিন্তু ওতো রীতিমতো তোকে এভোয়েড করছে! না তোকে ফোন, মেসেইজেস করছে আর না তোর ফোন রিসিভ করছে। মোটকথা তোর সাথে যোগাযোগ‌ও রাখছে না!(রুহি)
——তুই ভাবছিস ওকে কি বলবি, কিন্তু তুই সিওরিটি দিয়ে বলতে পারবি ও এখন তোর কথাই ভাবছে?(তুহিন)
——মানে?(আদ্রিশা)
——মানেটা খুব সোজা। ও কি একবার‌ও ভেবেছে তোর কেমন ফিল হচ্ছে? অচেনা অজানা একটা ছেলের সামনে বসে থাকতে তোর কি ভালো লেগেছে? নিজের ভালোবাসাকে বাঁচাতে তুই যা করছিস ওও কি ঠিক তাই করতো বা করছে? ইগো দেখিয়ে হুটহাট তোর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করছে, আর তুই তার জন্য‌ই চোখের পানি ফেলছিস!( তুহিন)
——আদু, আমরা বুঝি তুই রবিনকে ছাড়া ভালো থাকবি না। এটাও জানি তুই রবিনকে খুব ভালোবাসিস! তবে রবিনের ব্যাপারটা বলতে পারবো না।(নিলা)
——তোরা কি বলতে চাইছিস!? রবিন আমায় ভালোবাসে না!(আদ্রিশা)
——আমরা এসব কিছুই বলছি না, তবে সিওর‌ও হতে পারছি না! দেখ, তুই যতোটা ওকে ভালোবাসিস ততোটাই কি,,,,,! কথাটা বলার পর্যাপ্ত কারন আছে বলেই বলছি। ওকি পারতো না তোর বাবা মায়ের সামনে এসে দাঁড়াতে? তোকে যখন এতোটাই ভালোবাসে , তোকে যদি বিয়ে করতেই চায় তাহলে পরিবারের থেকে লুকাচ্ছে কেনো? (রুহি)
——সব জেনেশুনে তোরা কি করে এসব বলতে পারিস? রবিন বেকার! বাবা মা কখনোই একটা বেকার ছেলের হাতে আমায় তোলে দেবে না। আমাদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে আজ‌ই জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিবে! এতকিছুর পর‌ও আমি বাবা মার সামনে রবিনকে নিয়ে যেতে পারবো বলে তোদের মনে হয়?(‌আদ্রিশা)
——তোর বাবা মা যে তোদের মেনে নেবে না তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? হতেও তো পারে আদ্র ভাইয়া নিজের অফিসে রবিনকে কোনো জব দিলো! পারে না কি? বোনের খুশির জন্য যে ভাই সব করতে পারে সেই ভাই এই ছোট্ট সাহায্য করবে না!?(নিলা)
আদ্রিশা ছলছল চোখ নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যিই তো, এসব তো ও ভাবেনি! একটা চেষ্টাতো করতেই পারতো। তখন‌ই আদ্রিশার ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। মায়ের ফোন দেখে বিরক্ত হয়েই ফোনটা তুলে।
—–হ্যালো! বলো কি বলবে।
—–,,,,,,,,,,,,,,,
—–উফফফ,,, মা! আমি ক্যাম্পাসে বসে আছি। কি বলবে বলো না!
—–,,,,,,,,,,,,,,,
—–আজ,, এখন,,,,,!!? মা ওরা তো বলেছিলো,,! আমি আসতে পারবো না।
—–,,,,,,,,,,,,,
—–তুমি মা , নাকি ব্ল্যাকমেইলার!? যখন তখন ব্ল্যাকমেইল করো! রাখছি আমি!

ফোন টা রেখেই মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো আদ্রিশা। সাথে সাথে দাঁড়ালো তার গ্যাঙ। আদ্রিশা সবার উদ্দেশ্যে বললো,”যেতে হবে আমায়। ওরা এখন আসছে।” সবাই একসাথেই বলে উঠলো,”কারা আসছে?” আদ্রিশা বললো,” কারা আবার, যারা আমাকে দেখতে এসেছিলো!” বন্ধু-বান্ধবের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছিলো বেচারারা কিছুই বুঝে নি। আদ্রিশা শ্বাস টেনে বললো,”বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে মে বি!” কথাটা শুনা মাত্র নিলা আর তুহিন ধপ করে আবার বসে পরলো। রুহি ওদের দিকে না তাকিয়ে আদ্রিশাকে বললো,”তুই কি বিয়েটা করছিস?” আদ্রিশা দৃঢ় কন্ঠে বললো,”নো ইয়ার। পাগল না কি! সবে তো বিয়েটা ঠিক হচ্ছে, বিয়ে হবে কি না সেটা পরে দেখা যাবে।” তুহিন চট করে বললো,”বিয়ের ডেট ঠিক হ‌ওয়ার পর কিছু কি করতে পারবি!? তার চেয়ে আঙ্কেল কে বলে দেখ না! রবিনের কথা নাই বা বললি, বল এই বিয়েতে তোর মত নেই। তাহলে কথাও এগুবে না আর,,,,,” আদ্রিশা তুহিনকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “আরে নাহ। বাবাকে কিছু বলা যাবে না।” নিলা ভ্রু কুঁচকে বললো, “কেনো বে? আঙ্কেল তো তোর সাপোর্ট সিস্টেম!” আদ্রিশা মাথা নেড়ে বললো, “হুম,, কিন্তু কি জানিস, আমার সাপোর্ট সিস্টেম এখন আর সাপোর্ট করে না রে! বাবা খুব চুপচাপ হয়ে গেছে। খালি কিসব জানি ভাবে। বাবার কথা শুনা যায় শুধু আরু আর ভাবির সাথে। মায়ের সাথেও ঝগড়া করে না।” তুহিন লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, “বলিস কি! মিস্টার এঙ্গরি ম্যান ঝগড়া করে না! হাও স্ট্রেন্জ!” আদ্রিশা তুহিনের পেটে গুতা দিয়ে বললো,”হোয়াট ডু ইউ মিন!?” তুহিন পেটে হাত দিয়ে বললো,”আস্তে দোস্ত!লাগে তো। আমি কিছু মিন করি নি তো! খালি বললাম আরকি, আঙ্কেল কি কিছু আঁচ করতে পেরেছে, না কি?” রুহি বললো, “কি আঁচ করবে শুনি?” নিলা জামা ঝেড়ে তুহিনের পাশে দাড়িয়ে বললো, “আই থিংক হি ইজ রাইট! ‌আঙ্কেল যা রাগি আর উপদেশ দানে মাস্টার সেখানে তুই বলছিস তিনি চুপচাপ, কথা বলছে না, কিছু ভাবছে! আমার কি মনে হয় জানিস,,,,” তুহিন নিলার কথার মাঝখানে বলে দিলো,”তিনি ভাবছেন তার গুণধর মেয়ে পূর্ববর্তী ছেলেপক্ষকে যেভাবে তাড়ালো, তারপর বর্তমান পক্ষকে খুব সহজে মেনে নিলো! শুধু তাই নয়, ড্যাং ড্যাং করে ছেলের সাথে দেখা করতেও গেলো! অর্থাৎ ডাল মে কুছ কালা হে!!” আদ্রিশা দাঁতে দাঁত চেপে তুহিনকে তাড়া করতে গেলেই ও ছুটে গেটের দিকে যেতে যেতে বললো, “অল দ্যা বেস্ট আজকের জন্য!” আদ্রিশা থেমে গেলো। কিন্তু তার চিন্তা থেমে নেই। তুহিন যা বলে গেলো সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে, মুগ্ধকেই কি বিয়ে করতে হবে ওর? সুখ, ইচ্ছে, ভালোবাসা এভাবে সবকিছু ত্যাগ করতে পারবে!? রুহি আর নিলার দুটো ক্লাস বাকি ছিলো। তাই আদ্রিশাকে বিদায় দিয়ে তারা ডিপার্টমেন্টের দিকে যাচ্ছে। আদ্রিশার ফোন আবার‌ও বেজে উঠলো। স্ক্রিনে “মা” লেখাটা দেখে ফোন না উঠিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা দিলো সে।

চলবে,,,,,,,,