যদি আমার হতে পর্ব-৯+১০

0
713

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৯
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

চারদিকে রাতের অন্ধকার ছেয়ে আছে। আশেপাশের ফ্ল্যাট থেকে হালকা আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। নিস্তব্ধ শহরে কাছে পিঠে কোথা থেকে ঝিঝিপোকার আওয়াজ ভেসে আসছে। ব্যালকনির রেলিং ধরে তারায় ভরা দূর আকাশের দিকে স্থীরদৃষ্টি দিয়ে দাড়িয়ে আছে আদ্রিশা। ঝিরিঝিরি বাতাসে তার খোলা চুল উড়ছে। আচমকা ফোনের আওয়াজে কিছুটা চমকে উঠলো আদ্রিশা। মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় রাখা ফোনের দিকে একপলক দেখে হাতের দিকে তাকালো সে। বা হাতের আঙটিটা জলজল করছে তারার আলোয়!তাচ্ছিল্যমাখা হাসি হেসে আবার‌ও তারা দেখায় মন দিলো সে।

__________
ভার্সিটি থেকে বাড়ি এসেই শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পড়ে রেডি হতে হয় তাকে। মুগ্ধ আর তার পরিবারের সামনে বসতে হবে তো! ভেবেছিলো আরো একবার মুগ্ধর সাথে কথা বলবে। এট লিস্ট যে কথা বাকি ছিলো সেটাই না হোক হবে। কিন্তু সেই সুযোগ হয়ে ওঠে নি। ড্রয়িং রুমে গিয়ে ভরকে যায় আদ্রিশা। সেদিন মাত্র তিনজন এলেও আজ ঘর ভর্তি মানুষ! ‌মুগ্ধর মা আদ্রিশাকে সবার সাথে আলাপ করাচ্ছিলেন। তবে সেদিকে তার কোনো খেয়াল‌ই ছিলো না। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। ছোট্ট একটা চেষ্টা! হয়তো মুগ্ধকে বোঝাতে সক্ষম হবে! আলাপ পরিচয় শেষ হতেই এক বৃদ্ধা আদ্রিশার পাশে মুগ্ধকে টেনে বসিয়ে দিলেন। আদ্রিশা মুগ্ধর কানে কানে বলছিলো কিছু বলতে চায় সে। মুগ্ধ বোধহয় খেয়াল করে নি অথবা শুনেও না শুনার ভান করেছিলো। তাইতো মালিহা ইয়াসমিন আর ফুফু মনোয়ারা বেগমের এক কথায় আদ্রিশার হাতে আঙটি পরিয়ে দিলো! আদ্রিশা শুধু ভাবলেশহীন হয়ে বসে ছিলো। বিয়ের ডেট‌ও ফিক্স করা হয় তারপর। দু সপ্তাহ পর‌ই বিয়ে! যদিও রুমানা আহমেদ ও হামিদুর আহমেদ মেয়ের বিয়েতে তাড়াহুড়ো করতে চান না তথাপি রাজি হতে হলো। যার মূখ্য কারন, মুগ্ধর দীদা আর ফুফু। মনোয়ারা বেগম মুগ্ধর বিয়ে উপলক্ষেই দেশে আসেন। তিনি লন্ডন প্রবাসী। তার ফিরে যাওয়ার তারিখ এগুচ্ছে! যেহেতু নিজের ছেলের মতোই প্রিয় মুগ্ধর বিয়েতে এসেছেন সুতরাং বিয়ে শেষ হ‌ওয়ার পর পর‌ই চলে যাবেন। অপরদিকে মুগ্ধর দীদা নিজের বাড়ি শেরপুর থেকে এতোদূর এসেছিলেন মুগ্ধর ব‌উ দেখতে। একবার ফিরে গেলে আবার ঢাকায় আসা তার স্বাস্থ্যের পক্ষে সম্ভব না। বিধায় যতোদিন তিনি এখানে আছেন তার মধ্যেই বিয়েটা সম্পন্ন করতে চান। এদিকে মেয়ের জন্য উপযুক্ত ছেলে আর পরিবার পেয়ে হাতছাড়া করতে অনিচ্ছুক হামিদুর আহমেদ রাজী হন। এতে দু পরিবারের‌ই খুশির অন্ত নেই।

_________

বর্তমানে আদ্রিশার ভাবনার সুতো ছিড়লো আবার‌ও ফোন বেজে ওঠায়। বিছানা থেকে ফোন উঠিয়ে বিছানার কোনা ঘেসে মেঝেতে বসে ফোন রিসিভ করলো সে। কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে ওপাশ থেকে ভেসে এলো কর্কশ কন্ঠ,
—–বিয়ে করছো তাহলে!?(রবিন)
—–হুম করছি!(আদ্রিশা)
—–হোয়াট দ্যা হ্যাল! তুমি জানো তুমি কি বলছো?( চিৎকার করে বলে উঠলো রবিন)
—–অবশ্য‌ই! তুমি কি আশা করছো?( আদ্রিশা)
—–আদু,,,, আই লাভ ইউ! তুমি আমাকে নিয়ে এভাবে খেলতে পারো না!(রবিন)
—–সিরিয়াসলি!!আমি তোমায় নিয়ে খেলছি? হাহা,,, হাসালে! (তাচ্ছিল্য হেসে বললো আদ্রিশা)
—–হাসছো কেনো?(রবিন)
—–তো কি করবো? আমার জীবনটা যে গেইম শো হয়ে গেছে! না হেসে কি পারি! তুমিই বলো না কি করা উচিত আমার!(আদ্রিশা)
—–(নিশ্চুপ )
—–তুমি বলছো, আমি তোমায় নিয়ে খেলছি! কি করে? বাবা মার কাছে তোমার কথা বলতে নিষেধ করেছো তুমি! আবার বলছো ইউ লাভ মি!(আদ্রিশা)
—–আদু আমি কেনো নিষেধ করেছি সেটা তো তোমার অজানা নয়! ‌আজ তোমার বাবা মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ওরা যে আমায় পুলিশে দেবে না, তোমায় জোড় করে অন্য কোথাও বিয়ে দেবে না , তার কোনো সিওরিটি আছে কি?(রবিন)
—–পুলিশে কেনো দিতে যাবে তোমায়?(আদ্রিশা)
—–কে,,,নো,,, আবা,,,র কোনো একটা কেইস যদি করে বসে তখন!! আমাদের আলাদে করতে আরকি এসব করতেই পারে!(আমতা আমতা করে বললো রবিন)
—–কিন্তু রবি,,,,(আদ্রিশা)
—–‌একটা কথা বলো, তুমি বিয়েটা আটকাতে পারলে না!?(‌আদ্রিশাকে থামিয়ে দিয়ে বললো রবিন)
—– আমি বিয়েটা কি করে আটকাবো বলতে পারো!? কি বলতাম আমি? কেনো বিয়ে করতে চাইছি না? কেনো পাত্রপক্ষের সামনে যেতে নাকোচ করছি? উত্তর ছিলো আমার কাছে?(রাগান্বিত কন্ঠে বললো আদ্রিশা)
—–তাহলে আগের বার কি করে ভেঙেছিলে?!(রবিন)
—–রবিন!! আমি আমার বাবা মাকে আর কষ্ট দিতে পারবো না। বিয়ে ভাঙার পর বাতাসের মতো খবর ছড়াচ্ছিলো চারদিকে। তুমি জানো ঐ ঘটনার পর থেকে বাবা মাকে কত কথা বলেছে লোকজন!? ভাইয়ার অফিসেও নানান কথা উঠছিলো আমাকে নিয়ে! সবাই বলা বলি করছিলো আমার মধ্যে দোষ আছে তাই বিয়ে ভেঙেছে। আমাকে নিয়ে অনেক বাজে কথাও বলেছিলো! ভাইয়ার মারামারিও হয় ওদের সাথে! এরপর‌ও তুমি বলছো ওসব করার জন্য! (‌আদ্রিশা)
—–ঠিক আছে! ওসব না করলে! অন্য কিছু করতে পারো নি? ছেলেকে বলে দিতে তুমি বিয়ে করতে চাও না, অন্য একজনকে ভালোবাসো! সেটা মুখ দিয়ে বেরোয় নি?(রবিন)
—–ফালতু বকো না তো! বলেছিলাম আমি ওকে! কিন্তু গিরগিটির মতো রঙ বদলায় ঐ ছেলে। আমায় বললো বিয়েটা আটকাবে আর সবার সামনে বলে দিলো আমাকে পছন্দ হয়েছে! শয়তান কোথাকারের!!তারপর‌ও ভেবেছিলাম যদি আবার কথা বলে কিছু বুঝানো যায়! তাইতো ক্যাফেতেও গেছিলাম মিট করতে! কিন্তু কে শুনে কার কথা?তার উপর কোথা থেকে ভাইয়াও ওখানে,,,,,,,(আদ্রিশা)

আর বলতে পারলো না আদ্রিশা। রবিন কট করে ফোনটা কেটে দিলো। কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ ফোন রেখে দেওয়ায় বেশ অবাক হয় আদ্রিশা। পর মুহূর্তে বুঝতে পারে এর কারন। কথায় কথায় মুগ্ধর সাথে ক্যাফেতে যাওয়ার কথাটা বলে ফেলেছিলো সে। রবিন আদ্রিশার জন্য এতোটাই পসেসিভ যে একটা ছেলের সাথে কথা বলাটাও তার রাগের কারন হতে পারে। আর এখানে আদ্রিশা তো ক্যাফেটেরিয়ায় গেছিলো। কথাটা ভেবেই মাথায় চাটি মেরে নিজেকে বকতে লাগলো আদ্রিশা। কখন কোথায় কি বলবে সেটাও জানে না সে। তবে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠে এটা ভেবেই যে, রবিন কতোটা ভালোবাসে তাকে। এই জেলাসি, পসেসিভন্যাসটাই যথেষ্ট আদ্রিশাকে স্পেশাল ফিল করানোর জন্য। নিজেকে একটা ধন্যবাদ‌ও দিলো তারপর। ভাগ্যিস মুগ্ধ যে ওর হাত ধরেছে সেই কথাটা বলে নি! না হলে আজ রবিন যে কি করতো আল্লাহ‌ই জানে!

চলবে,,,,,,,

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ১০
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

কেটে গেছে আরো দুটি দিন। এই দুদিনে আদ্রিশা আর রবিনের মাঝে ঝগড়া ছাড়া কোনো কথাই হয় নি। বিয়ের দিন যত এগুচ্ছে তত‌ই রবিন আর আদ্রিশার সম্পর্কের ব্যাঘাত ঘটছে। আদ্রিশার বাড়িতে বিয়ের তোড়জর চললেও এখনো তেমন আত্মীয়রা আসে নি। তবে মুগ্ধর বাড়িতে আত্মীয় পরিজনের সমাগম বেড়েই চলেছে। আঙটি পড়ানোর আগের দিন‌ই ফুফু আর ফুফাত ভাই, বোন রা এসেছিলো। আর আঙটি পড়ানোর দিন দীদা। আর এই দুদিনে মাশাআ’ল্লাহ সবাই চলে এসেছে। মুগ্ধর বাবার বাড়ির আত্মীয়রা এবং মায়ের বাড়ির আত্মীয়রা মিলে এক হৈ হৈ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বাকি রয়েছে শুধু মুগ্ধর বন্ধু-বান্ধব আর কলিগ্স।যারা বিয়ের আগেই উপস্থিত হবে! সবার কাছে ব্যাপারটা উৎসব মুখর হলেও মুগ্ধর কাছে বিশৃঙ্খলাময়‌ই মনে হচ্ছে! তার মতে, “বিয়ের এখন ঢের দেরি আছে! এতো আগে আয়োজন কেনো করতে হবে? দু সপ্তাহ আগে থেকেই জমজমাট পরিবেশে কোনো কাজ‌ই ঠিক ঠাক হয় না।” কিন্তু তার মায়ের কোনো ভাবান্তর নেই। ওনার কথা হলো, একমাত্র ছেলের বিয়ে ধুমধাম করে হবে। আর আত্মীয় স্বজনরা বিয়ের কিছুদিন আগে না এলে বিয়ে বাড়ি বলে মনেই হয় না। বেচারা মুগ্ধ নিজের কাজটুকুও করতে পারছে না। মানুষজন বেশি হ‌ওয়ায় ঘুমানোর সমস্যাটা বেড়ে গেছে। মুগ্ধর রুমে ও ছাড়াও ৪জন থাকছে। বিছানায় ৩জন,সোফাতে ১জন আর মেঝেতে তোশক বিছিয়ে বেচারা মুগ্ধকে ঘুমোতে হয়!

সকালে ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমের অবস্থা দেখে মুগ্ধর মাথা চাপড়াতে মন চাচ্ছে! মেঝে, সোফা সব খানে কেউ না কেউ শুয়ে। পা রাখার জায়গাটুকুও নেই। এই অবস্থা আরো কিছুদিন জারি হলে মুগ্ধ সন্যাস নিতেও পিছপা হবে না বলেই মনে হচ্ছে! রাতে অফিসের কাজ শেষ করতে না পারায় সকালে করবে ভেবেছিলো সে। রুমে করা সম্ভব নয়, বাধ্য হয়ে নিচে এসেছিলো। এখানে তো দাঁড়ানোর জায়গা নেই, বসবে কি ভাবে। বিরক্তি নিয়ে বাইরে গাড়িতে গিয়ে বসলো। আন‌ইজি লাগলেও গাড়িতেই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। না হলে আজ আর করা হয়ে উঠবে না। এর মধ্যেও ঘরের ভেতর থেকে নানান আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। সবাই না উঠলেও অনেকের ঘুম শেষ!

বেশ কিছুক্ষন পর অফিসের কাজ সামলে ঘরে প্রবেশ করলো মুগ্ধ। চুপচাপ সিড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা দিলো। ঘরটা এতোক্ষনে খালি হ‌ওয়ায় খুশি মনে ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য তৈরি হলো। নিচে নামতেই সবাই ঘিরে ধরলো তাকে। এদের পাশ কাটিয়ে আসা অসম্ভব। তাই নাস্তা করতে বসলো। শুধু ওই বসে নাস্তা করছে! বাকিরা দাড়িয়ে আছে! মুগ্ধ লক্ষ্য করলেও নিজের খাবার খেয়ে উঠে পরলো। আবারো সবাই ঘিরে আছে তাকে। চোখ ঘুরিয়ে মায়ের দিকে তাকাতেই তিনি হাসলেন। অর্থাৎ আজ মুগ্ধ শেষ! তার বুঝতে বাকি নেই এখন কি হতে চলেছে। ইনোসেন্ট ফেস করে ফুফুর দিকে তাকিয়ে বললো,
” ফুপি, প্লিজ! আজ আমার সময় নেই! অফিসের অনেক কাজ বাকি। মিটিং পোস্টপোন করা যাবে না, ট্রাস্ট মি! ” মনোয়ারা বেগম মুগ্ধর কাধে হাত রেখে বললেন, “লক্ষী বাবাটা! এমন কেনো করিস! ‌এতো কাজ কাজ করিস না তো! নিজের বিয়েতে এনজয় করবি। তা না কাজ ফাজ নিয়ে বসে আছিস!যা করার পরে করবি। এখন আমি কোনো কথা শুনছি না! সবার কতো ইচ্ছে বল! নিয়ে চল‌ই না!” সবার কথা ফেলতে পারলেও ফুফুর কথা কোনো কালেই মুগ্ধ ফেলে নি। তার উপর ভাই বোন সবকটা আশা করে বসে আছে মুগ্ধ আজ তাদের শপিংএ নিয়ে যাবে! কি করে তাদের কষ্ট দেয়! তাই মাথা নেড়ে রাজি হলো সবার জন্য। তবে মুশকিল কম নয়। এক গাড়িতে কখনোই এই পল্টনের জায়গা হবে না! ফলশ্রুতিতে বরযাত্রীর মতোই গাড়ি ভরে শপিংএ যেতে হবে! ভেবেই মুগ্ধর কান্না পাচ্ছে।

___________

শপিং মলের এক কোণায় দাড়িয়ে আছে মুগ্ধ আর তার ফুফাতো ভাই স্নিগ্ধ। বরযাত্রী শপিংএ ব্যাস্ত। কাপড়ের ভিড়ে সবাই কে দেখাও যাচ্ছে না। মুগ্ধর জন্য শেড়ওয়ানি কেনা হয় নি! এখনো মহিলারা নিজেদের জন্য কেনা কাটা করছে। মুগ্ধর মনে হচ্ছে একদিনে হবে না, আরো দু তিন দিন আসতে হবে এদের নিয়ে। মহিলাদের ভীড়ে অসহায় লাগছে নিজেকে। যদিও স্নিগ্ধ সাথে আছে তবুও অসহায় ভাব টা কমছে না তার। এদিকে আবার আদ্রিশার বাড়ি থেকে আদ্রিশা, জেসমিন, রুমানা আহমেদ, রুহি আর আদ্রিশার খালাতো বোন সামান্তা শপিংএ এসেছে। মালিহা ইয়াসমিন ফোন করে ওদের‌ও ডেকে আনেন শপিঙের উদ্দেশ্যে। দু পরিবার একসাথে শপিং করবেন। আদ্রিশা সবার মাঝখানে পুতুলের মতো বসে আছে। একের পর এক শাড়ি তার শরীরে জড়ানো হচ্ছে। কোনো শাড়িই পছন্দস‌ই হচ্ছে না। আদ্রিশা লক্ষ্য শাড়ির দিকে নয় তার চোখ মুগ্ধকে খুজে চলেছে। কাল রাতে রবিনের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে রবিন বলেছে মুগ্ধকে পালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতে। এতে যদি মুগ্ধকে বুঝানো যায়। আদ্রিশার বিরক্তিভাব, চারদিকে তাকানো সব‌ই দূর থেকে মুগ্ধ দেখছে। এগিয়ে এসে লাল আর গোল্ডেন কালারের ভারি লেহেঙ্গার ওড়না আদ্রিশার মাথায় পড়িয়ে দিলো মুগ্ধ। আদ্রিশার মা আর মুগ্ধর ফুফু দুজনেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন। আদ্রিশা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। জেসমিন তাড়াহুড়ো করে কাপড়ের নিচ থেকে লেহেঙ্গাটা বের করলো। বেশ সুন্দর! জেসমিন বললো, “বাহ মুগ্ধ ভাইয়ার তো পছন্দ আছে বলতে হবে!” মনোয়ারা বেগম মুচকি হেসে বললেন, “তা তো আমাদের কনে কে দেখলেই বুঝা যায়!” মুগ্ধ অনেক সংকোচবোধ করে শেষে বললো,”আমি একটু আদ্রিশার সাথে কথা বলতে চাইছিলাম!” রুমানা আহমেদ বললেন,” হ্যাঁ অবশ্য‌ই! আদু যা!” আদ্রিশা এই সময়টার অপেক্ষায়‌ই ছিলো। বলা মাত্র চট করে দাড়িয়ে গেলো। মুগ্ধ সামনে আর আদ্রিশা মুগ্ধকে ফলো করে তার পেছন পেছন চলছে। ট্রায়াল রুমের পাশটায় গিয়ে মুগ্ধ দাড়ায়। সাথে আদ্রিশাও।

মুগ্ধ আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখে পানি। এখন‌ই গাল বেয়ে পরবে! মুগ্ধ তার রুমাল এগিয়ে দিয়ে বললো,”আরে, আপনি কাঁদছেন কেনো? দেখুন আদ্রিশা, আমি বুঝতে পারছি আপনি বিয়েটা মেনে নিতে পারছেন না! কিন্তু আমার কথা শুনুন প্লিজ! বিলিভ আমার সম্পূর্ণ কথা শুনা আর বুঝার পর আপনি নিজেও বিয়েতে সম্মতি দিবেন।” আদ্রিশা মুগ্ধর এগিয়ে আসা হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলো। এতে তার হাতে থাকা রুমাল ছিটকে দূরে পরে গেলো। আদ্রিশা চোখের পানি ফেলে বললো,”কি ভাবেন আপনি আমাকে? আমার ভালোবাসা এতো সস্তা নয় মিস্টার মুগ্ধ! ‌আপনার কোনো কথা শুনা বা বুঝার ইচ্ছে আমার নেই। আমি শুধু জানি এই বিয়েটা আমি করছি না! সে যেভাবেই হোক আমি এই বিয়ে ভাঙবোই!” মুগ্ধ আদ্রিশার উদ্দেশ্যে কিছু বলবে তার আগেই কেউ বলে উঠলো,”ভাই!?” মুগ্ধ পাশ ফিরে স্নিগ্ধকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যায়। আদ্রিশাও চট করে চোখের পানি মুছে বিস্ফোরিত চোখে স্নিগ্ধকে দেখছে! স্নিগ্ধ যে কখন এসে দাড়িয়েছে সেটা তাদের অজানা। কি কি শুনেছে আর কতটা বুঝেছে সেটাও বুঝতে অক্ষম । মুগ্ধ হালকা হেসে বললো,”তুই?কিছু বলবি??” স্নিগ্ধ এগিয়ে এসে মুগ্ধর হাতে রুমালটা দিয়ে বললো,”এটা তোমার না? ওখানে পরেছিলো!” স্নিগ্ধ স্বাভাবিক ভাবেই বলেছে কথাটা। অর্থাৎ সে কিছুই শুনে নি!এতে আদ্রিশা আর মুগ্ধ স্বস্তি পেলো!

চলবে,,,,,,,,