যদি আমার হতে পর্ব-৫+৬

0
927

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৫
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

মুগ্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে, আদ্রিশার বলা কথাগুলো কি বলবে?উজ্জল শ্যাম বর্ণের মেয়েটাকে নীল শাড়িতে অপ্সরাই লাগছিলো! গোলগাল চেহারায় সাজবিহীন লজ্জারাঙা মুখ, চোখের কাজল আর ঠোঁটের লিপ্সটিক! এতোটুকুই তো যথেষ্ট মায়াবতী উপাধির জন্য! মুগ্ধর জায়গায় অন্য যেকোনো ছেলে থাকলেও যে আদ্রিশার দিক থেকে চোখ ফেরাতো না। তারপরও কেউ মানবে, প্রথম দেখাতেই ওকে পছন্দ হয় নি বললে!? আর সবাই মানলেও মালিহা ইয়াসমিন মানবেন বলে মনে হচ্ছে না মুগ্ধর। আদ্রিশার সাথে কথা বলার আগেই তার মা তাকে বলেছিলেন, ” মেয়েটা খুব মিষ্টি,বল! আমারতো খুব ভালো লেগেছে মেয়েটাকে। এবার আর অপছন্দের তালিকায় ওকে স্থান দিস না! ও মোটেও অপছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে নয়!” কথাগুলো ভেবেই মুগ্ধ বাঁকা হেসে মনে মনে কিছু একটা আওরিয়ে সোফায় বসে পড়লো। সবার দৃষ্টি এখন তার দিকেই।

মুগ্ধ বসার ঘরে যাওয়ার পর থেকেই আদ্রিশা নিজের ঘরের দরজা থেকে উকিঝুকি মারছে। উদ্দেশ্য মুগ্ধ কি বলছে তা শুনা। সবাই খুব ধীর আওয়াজে কথা বলছেন। বিধায় ওদের দেখা গেলেও কারো কোনো কথা শুনা যাচ্ছে না। আদ্রিশা বেশ কয়েকবার ঘর থেকে বেরুতে গিয়েও বেরুচ্ছে না। দ্বিধা – দ্বন্দে ভুগছে। বিরক্ত হয়ে ঘরেই পাইচারি করছে। তখনই ঘরে প্রবেশ করলেন রুমানা আহমেদ আর জেসমিন। তাদের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। আদ্রিশা এগিয়ে এসে মাকে জিগ্যেস করলো, ” কি হয়েছে মা?” মেয়ের কথার উত্তর না দিয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন, “মুগ্ধকে কেমন লাগলো তোর? কি সিদ্ধান্ত নিলি? ”
আদ্রিশা মনে মনে হাজারটা ধন্যবাদ দিলো মুগ্ধকে। মুগ্ধ যদি আগে ওকে না বলতো তবে ও এখন বলে দিতো মুগ্ধকে মোটেও পছন্দ হয়নি তার। বিয়েই করতে চায় না। ভাগ্যিস ছেলেটা বলে দিয়েছিলো! আদ্রিশা মুখটা নিচু করে হালকা হেসে বললো, ” আমার পছন্দ হয়েছে মা। বাকিটা তোমাদের ইচ্ছা।আমার কোনো অসুবিধা নেই মা। তোমরা যা ভালো বুঝো করো।” কথাটা শুনেই জেসমিন আর রুমানা আহমেদের চোখ উজ্জল হয়ে উঠলো। আদ্রিশা ওদের এই প্রতিক্রিয়া আশা করে নি। ভেবেছিলো মুখটা কালো হয়ে যাবে, চোখে পানি আর অসহায় চেহারায় তার দিকে তাকাবেন। তা না, দেখে মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন! ব্যাপারটা বুঝার জন্য আদ্রিশা বললো,” মা, ওদের কি আমায় পছন্দ হয় নি? না হলে না হোক। এতো ভেবো না তো। পাত্রের কি অভাব পরেছে না কি!দরকার হলে আরো হাজারখানেক পাত্র দেখে বিয়ে করবো। কি বলো!?” রুমানা আহমেদ হেসে বললেন, ” আমার চোখ মুখ দেখে তোর এসব মনে হচ্ছে বুঝি! তোর জন্য আর কোনো পাত্র দেখতে হবে না। লাখে একটা জামাই পেয়েছি!” কথাগুলো বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। মায়ের সব কথা আদ্রিশার মাথার উপর দিয়ে গেলো। জেসমিন হেসে আদ্রিশার কাধ ঝাকিয়ে বললো, “বুঝলে না কিছু?”আদ্রিশা মাথা নাড়লো। জেসমিন আবার বললো, ” মানে হলো, তোমার যেমন মুগ্ধ ভাইয়াকে পছন্দ হয়েছে তেমনি উনি আর ওনার পরিবারও তোমায় পছন্দ করেছে। পাত্র-পাত্রী আর দুটো পরিবারই সম্মতি দিয়েছে এই বিয়েতে! ”

আদ্রিশার যেনো মাথায় বাজ পরলো। এটা কি হলো! কোথায় ভেবেছিলো, মুগ্ধ সবাইকে বলবে, মেয়ে পছন্দ হয় নি।বিয়ে টা ভেস্তে যাবে।কেউ আদ্রিশাকেও সন্দেহ করবে না। কিন্তু মুগ্ধ তো বিয়ে ফাইনাল করছে! জেসমিন আদ্রিশাকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানিয়ে হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু ওতো জানে না, আদ্রিশা বিয়ের জন্য খুশি নয়। আদ্রিশার গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পরছে। ওতো সপ্নেও ভাবে নি এমনটা হবে। নিজের ভালোবাসা, রবিনের জায়গা অন্য কাউকে দিতে যে সে পারবে না। বেঁচে থেকেও যে সে মরে যাবে। এখন তার নিজের উপরই প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। কেনো যে মুগ্ধকে বিশ্বাস করতে গেলো আর কেনো মুগ্ধর কথামতো বলতে গেলো। একবার যদি বলে দিতো মুগ্ধকে তার পছন্দ না হয়তো কথাবার্তা এগুতো না। ওর পছন্দের দাম কি ওর বাবা মা দিতেন না! এখন গিয়ে বললেও কি কেউ শুনবে না ওর কথা। কিন্তু মুগ্ধ! ও এমন কেনো করলো? এর কারনটা যে জানতেই হবে! চোখের পানি মুছে দরজার দিকে এগুতেই আদ্রকে দেখা গেলো তার দরজার বাইরে দাড়িয়ে। আদ্র ভেতরে আসতে আসতে তাড়া দিয়ে বললো,”বোন ওরা চলে যাচ্ছে! চল, আয় আমার সাথে। ওদের বিদায় জানাতে হবে তো! তোর ভাবি আরুকে নিয়ে ঘরে গেছে। জ্বর এসেছে আবার ওর!” আদ্রিশা চুপচাপ ওখানেই দাড়িয়ে আছে। আদ্রিশার কোনো হেলদোল না পেয়ে আদ্র আদ্রিশার মাথায় আঁচল টেনে তার হাত ধরে বাইরে নিয়ে এলো। আদ্র আদ্রিশাকে নিয়ে বাইরে আসতেই মুগ্ধর মা মালিহা ইয়াসমিন আদ্রিশার থুতনি ধরে মুখ উচু করেন। আদ্রিশার চোখ ছলছল করছিলো তখন। মালিহা ইয়াসমিন বলেন,”এই দেখো , বোকা মেয়ে! কাঁদছো কেনো? এখনইতো বিয়ে হচ্ছে না! আমরা দুদিন পর আবার আসবো, তখন তোমায় আঙটি পরিয়ে বিয়ের তারিখ টাও ঠিক করে ফেলবো!” যে হাত দিয়ে আদ্রিশার থুতনি ধরেছিলেন সেই হাত আবারও আদ্রিশার থুতনিতে ছুইয়ে হাতে ঠোঁট ছোয়ালেন। তারপর আদ্রিশার হাতে জোড় করে গুজে দিলেন দু হাজার টাকার নোট। সালামি হিসাবে। ওরা বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আদ্রিশা আড় চোখে একবার মুগ্ধকে দেখলো। মুগ্ধ বেশ স্বাভাবিক ব্যবহার করছে। আদ্রিশার চাহনি দেখে মুগ্ধ মুখটা প্রশস্ত করে হেসে আদ্রিশাকে বললো,”আসি তাহলে আজ! দেখা হবে!” আদ্র দুষ্টুমি করে বললো, “হ্যাঁ হ্যাঁ, এখন তো যখন ইচ্ছে দেখা করতে পারবেন! উডবি ওয়াইফ বলে কথা।” আদ্রর কথায় মুগ্ধ মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে হাসলো। সবার মুখেই হাসি লেগে আছে। তবে আদ্রিশার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে! খুব রাগ হচ্ছে তার। আবারো চোখটা ভিজে যাচ্ছে তার। চোখ ভর্তি অশ্রু নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো আদ্রিশা। হাতের টাকাটা ছুড়ে ফেললো মেঝেতে।শাড়ি না পাল্টেই বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন পর দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেলো আদ্রিশা। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ১০ টা হতে চললো। বুঝলো খাবার জন্যই ডাকছে তাকে। অনেক্ষন কাঁদার জন্য মাথা ব্যাথা করছে তার। সাথে দূর্বলতাও দ্বিগুন। চিৎকার করেই বললো,”খাবো না আমি! খিদে নেই। ঘুমাবো। বিরক্ত করো নাতো!” আরো দু এক বার কড়া নাড়ার আওয়াজ পাচ্ছিলো আদ্রিশা। ঘুমের কারনে কারো ডাক কানে এলেও কে ডাকছে, বা কি বলছে বুঝতে পারছে না সে। কথাগুলো তার কানের পাশে এসেই মিলিয়ে যাচ্ছে। শরীর অবশ মনে হচ্ছে তার কাছে। তাই আর কোনো কথা না বলে ওভাবেই শুয়ে রইলো।
_____________

চোখে সূর্যের কিরণ লাগায় ঘুম হালকা হয়ে আসে আদ্রিশার। ভ্রু কুঁচকে চোখ আধো আধো করে খোলে। মাথাটা ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে বুঝলো, রাতে জানালা ঠিক করে লাগায়নি সে। ভিজিয়ে রেখেছিলো মাত্র। তাই এই সকাল বেলার সূর্য তার ঘরে উকি দিলো । শাড়ি পড়ায় অভ্যস্ত না হওয়ায় মাঝরাতেই কাপড় পাল্টে ঢোলা জামা পড়েছিলো সে। এখন তেমন অস্বস্তি হচ্ছে না। মাথাটাও ভার লাগছে না আর। তবে খিদে পেয়েছে প্রচুর। কাল দুপুরের দিকে খেয়েছিলো, তাও গাজর। ঐ সময় পেট ভরলেও দের দু ঘন্টা পর খিদেও পেয়েছিলো তার। টেনশনে আর খায় নি। আর তারপর যা হলো, তাতে খাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে গেছে। কিন্তু এখন তো আর সহ্য হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে সোজা রান্নাঘরে ছুটলো আদ্রিশা। জেসমিন ব্রেকফাস্ট তৈরি করছিলো। তাকে সাহায্য করছে শিমু।পাশেই রুমানা আহমেদ দুধ গরম করছেন। আদ্রিশা তাদের দিকে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরের সেল্ফ থেকে চানাচুরের কৌটো নিয়ে চলে গেলো। রুমানা আহমেদ ওকে কিছু জিগ্যেস করবেন তার সুযোগটাও দেয় নি। আদ্র সোফায় বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। হামিদুর আহমেদ পেপার পড়ছেন । আর ওনার ঠিক সামনে টেবিলের উপর বসে অংক কষছে আরিয়া। আদ্রিশা ধপ করে এসে সোফায় বসে কৌটো খুলে চানাচুর খাচ্ছে।চুলা থেকে দুধ নামিয়ে আদ্রিশার পেছন পেছন এলেন রুমানা আহমেদ। ব্রেকফাস্টের সময় ব্রেকফাস্ট না করে চানাচুর খাওয়া দেখে চোখে মুখে ভীষন বিরক্তি ফুটে উঠে তার। আদ্রিশার এই হঠাৎ করা আজগুবি কাজে বেশ বিরক্ত হন মা। তবে বাবাকে এই বিরক্তি স্পর্শই করে না। বাবারা হয়তো এমনি! মেয়ের কোনো কাজেই বিরক্তি আসে না তাদের বরং ভালো লাগে।

চলবে,,,,,,,,

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৬
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

মেয়েকে এই অসময়ে চানাচুর খেতে দেখে হামিদুর আহমেদের কোনো ভাবাবেগ নেই। রুমানা আহমেদ আদ্রিশার দিকে এগিয়ে কিছু বলতে নিলেই ও চানাচুরের কৌটোটা সোফার ওপর রেখে হাত ঝেড়ে খাবার টেবিলে বসে পড়ে। শিমু টেবিলে ব্রেকফাস্ট রাখতে এলেই আদ্রিশা বলে উঠে, “ঐ শোন! কৌটোটা রান্নাঘরের সেল্ফে রাখ তো! আর তারাতারি রুটি আন। খিদে পেয়েছে !” শিমু সোফা থেকে কৌটোটা নিয়ে রান্নাঘরে গেলো। জেসমিন রুটি টেবিলে রেখে সবাইকে খেতে ডাকলো। আদ্রিশা অবশ্য কারো অপেক্ষা না করেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। আদ্র শয়তানি করে বললো, “আস্তে খা! এমন ভাবে খাচ্ছিস, যেনো কতো বছরের অভুক্ত!” আদ্রিশা রুটি চিবোতে চিবোতে বললো,”চুপ করতো। কাল থেকে কিছু খাই নি আমি, সে খেয়াল আছে তোর!?” জেসমিন একটা প্লেটে রুটি তরকারি নিয়ে আরিয়াকে খাওয়াতে গেলো।সোফায় বসে আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো, “কেনো লাগছো ওর সাথে? খিদে পেয়েছে বলেই খাচ্ছে! তুমিও তো খাও না কি!” আদ্র মাথা নেড়ে বললো, ” হুম,,আমি খাই, তবে ওর মতো না! দেখো কেমন রাক্ষসের মতো খাচ্ছে! এভাবে খেলে কিন্তু মুগ্ধ তোকে বিয়ে করবে না, এই বলে দিলাম!” আদ্রিশা ততক্ষনাৎ বলে দিলো,”না করলে করবে না। আমিও ওকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছি না।” আদ্রিশার কথায় কেউ মাথা না ঘামালেও রুমানা আহমেদ ধমক দিয়ে বসেন,”এসব কি কথা আদু? যা নয় তাই বলে চলেছো! বিয়ে করবে না মানে কি?” মায়ের এমন হঠাৎ রিয়েক্টে আদ্রিশা সহ সবাই অবাক হলো। আদ্র ব্যাপারটা সামলাতে বললো,”মা, ওতো এমনিই বলছিলো। এতো সিরিয়াসলি নেয়ার কি আছে!?” রুমানা আহমেদ ছেলেকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন। হামিদুর আহমেদ এখনো নিশ্চুপ। যদিও উনি খুব রাগি মানুষ তবে এই কদিন খুব নিরবতা পালন করছেন। নিজের বিরক্তিও প্রকাশ করছেন না। সারাক্ষন ভেবে চলেছেন কিছু না কিছু। সেই ভাবনার ও কোনো কূল পাচ্ছেন না তিনি। পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে বা নিজের ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে জেসমিনের উদ্দেশ্যে বললেন, “আরুর, জ্বর কমেনি?” জেসমিন শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে বললো, “কমেছে বাবা। রাতে অনেকটাই ছিলো, তবে শেষরাতের দিকে জ্বর ছেড়েছে।” জেসমিনের কথার মাঝখানেই আরু দৌড়ে তার বাবার কাছে চলে গেলো। আদ্র মেয়েকে কোলে তুলে বললো, “কি হয়েছে মামনি?” আরিয়া আদ্রকে জড়িয়ে ধরে বললো, “খাবো না বাবাই! বাজে খেতে।” আদ্র বুঝলো মাত্রই জ্বর ছেড়েছে তাই মুখে স্বাদ পাচ্ছে না। এখন কিছু বলেও খাওয়াতে পারবে না। তখন আরিয়াকে বাইরের খাবার তথা ওর পছন্দের পিজ্জা আর স্যান্ডুইচের লোভ দেখিয়ে কোনো রকম একটা রুটি খাওয়ানো গেলো। হামিদুর আহমেদ খেতে খেতে বললেন,”আদু! মুগ্ধ চাচ্ছিলো তোর সাথে দেখা করতে।” আদ্রিশা বুঝলো না, কথাটাকি বাবা বললো না কি যাবে কি না জিগ্যেস করলো। আদ্রিশা বাবার দিকে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালো।বাবা আবারও বললেন, “আমি যদিও মানা করেছিলাম, কিন্তু তোর মা বললো তুই যেতে চাইলে যা। আর তাছাড়া শওকত সাহেব আর ভাবিরও কোনো আপত্তি নেই। দেখ না হয় গিয়ে। দেখা করতে তো সমস্যা নেই। হয়তো কিছু বলার বা জানার আছে।” আদ্রিশার যেতে মোটেও ইচ্ছে করছিলো না, কিন্তু মুগ্ধর থেকে জবাব পেতে হলে ওকে আজ যেতেই হবে। মুগ্ধকে ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আদ্রিশা সায় দিয়ে বললো, ” হুম ঠিক আছে। কোথায় দেখা করবেন উনি?” রুমানা আহমেদ চোখ উজ্জল করে বললেন, ” তুই ওর নাম্বারটা নে। নিজেই জিগ্যস করিস।” আদ্রিশা মায়ের দিকে না তাকিয়ে বললো, ” আমি নাম্বার নিয়ে কি করবো! তোমরাই জানিয়ে দাও আমি যাবো। খালি সময় আর জায়গাটা আমায় জানিয়ে দিও।” বলেই উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো। রুমানা আহমেদ হাসি মুখে মালিহা ইয়াসমিন কে ফোন করছেন। হামিদুর আহমেদের মুখে হাসি নেই। তার কাছে আদ্রিশার ব্যবহার খটকা লাগছে। যে মেয়ে আগের বারের সম্মন্ধ ভাঙার জন্য এতো কিছু করলো সেই মেয়ে এবারে খুশি মনে সব মেনে নিচ্ছে? খুশি মন তো বলা যাচ্ছে না, কারন ওকে খুশি দেখায় নিই। তবে কি মাথায় কিছু চলছে। এক অজানা ভয় ক্রমশ গ্রাস করে চলেছে তাকে।

_____________

ক্যাফেটেরিয়ার একটা চেয়ারে বসে আছে আদ্রিশা। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে মুগ্ধর জন্য। এখনো আসার নাম নেই তার। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এসবের মানে হয়। বিকেল থেকে একা চেয়ারে বসা, সবাই কেমন তাকাচ্ছেও, ওয়েটারও এ পর্যন্ত ৫ বার অর্ডার নিতে এসেছে। প্রত্যেকবার তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে আদ্রিশা। এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে তার। মায়ের কথা শুনে যদি মুগ্ধর নাম্বারটা নিয়ে আসতো, তাহলে ফোন করে জিগ্যেস করতে পারতো, কখন আসছে। এতোক্ষন বসিয়ে রাখার মানেই হয় না। আদ্রিশা ভাবছিলো এখনও কি তার মুগ্ধর জন্য বসে থাকা উচিৎ। কিন্তু ও চলে যাওয়ার পর যদি মুগ্ধ আসে তখন! এভাবে ওকে না জানিয়ে চলে গেলে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। আবার মুগ্ধও তো ঠিক করছে না। সন্ধ্যে হতে চললো, এখনো আসে নি।একটা মেয়ে আর কতোক্ষন বসে থাকবে। আদ্রিশার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। চেয়ার থেকে উঠতেই কেউ একজন তার সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ে। সামনে তাকিয়ে মুগ্ধকে দেখে রাগটা বেড়ে যায় তার। ওখানে দাড়িয়েই প্রশ্ন করতে শুরু করে দিলো,”এসবের কি মানে, মিস্টার মুগ্ধ? আপনার আসার কথা কখন ছিলো, আর আপনি কখন এসেছেন? আমাকে এভাবে বসিয়ে রাখার মানে কি? কি ভেবেছেন নিজেকে?আমি কিন্তু এখানে আপনার কথা রাখার বা কথা শুনার জন্য আসি নি! এসেছি কিছু প্রশ্নের উত্তর নিতে! আপনি নিজেকে খুব ব্যাস্ত বুঝাতে চাচ্ছেন বুঝি! আমিও কিন্তু অবসর বসে নেই! বিকেল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত একা একটা,,,,,” এতোটুকু বলতেই মুগ্ধ থামিয়ে দিলো আদ্রিশাকে। আর বললো, “উফফফ,,, কুল কুল, মিস আদ্রিশা। এতো হাইপার হবেন না!এতোগুলো প্রশ্ন একসাথে! কোনটার উত্তর আগে দেবো? এক এক করে করুন। আমিও এখানে আপনার উত্তরগুলো দিতেই এসেছি। আসলে মিটিং এ খুব বিজি ছিলাম তাই আসতে দেরি হয়ে গেলো। আ’ম সো সরি। আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড! ” মুগ্ধর কথায় আদ্রিশা কিছুটা শান্ত হলো। মুগ্ধ আবার‌ও বললো, “বসুন না প্লীজ!” আদ্রিশা বসতেই আবার আগের ওয়েটার অর্ডার নিতে এলো। একে তো আদ্রিশার মাথা গরম তার উপর এই ওয়েটার এতোটাই বিরক্ত করেছে তাকে যে আবার সে আসাতে চোখ বড় বড় করে তাকায় তার দিকে। ছেলেটা শুকনো ঢোক গিলে মুগ্ধর দিকে তাকালে মুগ্ধ তাকে দুটো কফির অর্ডার দেয়। ওয়েটার চলে যেতেই মুগ্ধ বললো, ” হুম তো শুরু করুন।” আদ্রিশা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,”কি শুরু করবো?” মুগ্ধ ভ্রু কুঁচকে মৃদু হেসে বললো, “ওমা,,,, একটু আগেই না হাজারটা প্রশ্ন জিগ্যস করছিলেন! উত্তর চাই না নাকি?” মুগ্ধর এই হাসিতেও যেনো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে আদ্রিশার। তবুও নিজের রাগ আর অসহায়ত্ব লুকিয়ে মুগ্ধর থেকে উত্তর চাইলো।
—–কেনো করলেন এমন?(আদ্রিশা)
—–তার উপযুক্ত কারন ছিলো। আমি আপনাকে তখনই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু,,,,,,(মুগ্ধ) আর বলতে পারলো না। তার আগেই অর্ডার করা কফি হাজির। আর যাই হোক অপরিচিত কারো সামনে ব্যাক্তিগত বিষয় চর্চা করা উচিৎ নয়। তাই মুগ্ধ চুপ করে যায়। ছেলেটা কফি রেখে যেতেই বলতে লাগলো আদ্রিশা,
—–আপনি কি বলতে চেয়েছিলেন আর কি বলতে চান সেটা শুনতে আমি আসি নি। আমি শুধু শুনতে চাই কেনো করলেন আপনি এমন?আমিতো আপনাকে সত্যিটা বলেছিলাম, তার পর‌ও কি করে করতে পারলেন এমন!? আমি যদি চাইতাম তাহলে শান্ত আর তার পরিবারের সাথে যা করেছিলাম আপনার সাথেও তেমন করতে পারতাম, আপনাদের পরিবারের সম্মান‌ও নষ্ট হতো তাতে ! বিয়েটাও হতো না!কিন্তু আমি এসব কিছুই করি নি, মুগ্ধ! তাহলে আমার অসহায়ত্বের সুযোগ কেনো নিলেন আপনি? বলুন!(‌আদ্রিশা)
মুগ্ধ অসহায় মুখে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। আদ্রিশার চোখের দিকে তাকিয়ে আচমকা তার হাত দুটো ধরে ফেলে মুগ্ধ। এতে আদ্রিশাও বেশ অবাক হয়।

চলবে,,,,,,,,