যদি আমার হতে পর্ব-১১+১২

0
639

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ১১
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

মুগ্ধ হালকা হেসে রুমালটা নিয়ে বললো, “হ্যাঁ, আমার‌ই! পকেট থেকে পরে গেছে মে বি!” স্নিগ্ধ মাথা নেড়ে আদ্রিশার দিকে তাকালো। হাসি মুখে বললো, “কেমন আছেন ভাবি?” আদ্রিশা খানিক হাসার চেষ্টা করে মুগ্ধর দিকে তাকাতেই মুগ্ধ বললো, “ও ভালোই আছে! তুই এখানে কেনো? সেটা বল। দেখিস না আমরা কথা বলছি!” স্নিগ্ধ পাশ থেকে মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরে বললো, “কি কথা? শুনি!” মুগ্ধ গলা থেকে স্নিগ্ধর হাত সরিয়ে তাকে বললো, “ভাই ভাবির কথা শুনে তোর কি কাজ? ‌আমাদের ব্যাক্তিগত কথা তোকে কেনো বলতে যাবো!” স্নিগ্ধ আদ্রিশা আর মুগ্ধর চারদিক প্রদক্ষিণ করে মুগ্ধর কাছে দাড়িয়ে এক ভ্রু উচু করে বাকা হেসে বললো, “ওহহো,,,, ইউ মিন সিক্রেট!” মুগ্ধ মাথা নাড়লো। আদ্রিশার কোনো হেলদোল নেই। ও মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধ‌ও তার জায়গা থেকে নড়ছে না। মুগ্ধ ভাবছে ওকে কিভাবে এখান থেকে সড়ানো যায়! ‌তখন‌ই কোথা থেকে রুহি এসে আদ্রিশার গা ঘেষে দাড়িয়ে পরলো। স্নিগ্ধকে উদ্দেশ্য করে বললো, “এই যে! মিয়া বিবির মাঝখানে আপনি কি করেন, হা! চলুন তো! ওদের কথা বলতে দিন।” স্নিগ্ধ হাত দুটো প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বড় বড় পা ফেলে রুহির কাছে এসে দাড়ালো। তবে ও যাবে বলে মনে হচ্ছে না। যেনো জমে গেছে! রুহি খুব বিরক্ত হচ্ছে এতে। কত সুন্দর করে বললো ও আর এই ছেলে না কিছু বলছে আর না ওদের একা ছাড়ছে। রুহি আবার‌ও বললো, “ভাইয়ার সাথে এভাবে আঠার মতো লেগে আছেন কেনো?” স্নিগ্ধ একটু নড়ে চড়ে দাড়িয়ে বললো, ” আঠার মতো মানে?” রুহি এবার স্নিগ্ধর সামনা সামনি দাড়িয়ে বললো, “মানে হলো এই যে, যখন থেকে শপিংএ এসেছি আপনাকে সারাক্ষন ভাইয়ার সাথেই ঘুরঘুর করতে দেখছি! এই যে দেখেন, ভাইয়া তার হবু ব‌উ এর সাথে একা কথা বলতে এলো আপনিও কেমন চলে এলেন! বলি ওদের একটু একা ছাড়েন!” স্নিগ্ধ মুখ বাকিয়ে বললো, “হবু বর ব‌উ এর আবার একা কিসের কথা!? আর আমি বরের ছোট ভাই। আমার থেকে লুকিয়ে কেনো কথা বলতে হবে!” রুহির ইচ্ছে করছে ছেলেটার সবচুল ছিড়ে ফেলতে। সাধারন কথাটা বুঝতে পারছে না! কোনোরকম রাগটাকে ধামাচাপা দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো, “বর ব‌উ রোমান্টিক কথাও তো বলতে পারে না কি!? বা ফিউচার প্ল্যানিং, অথবা এই ধরুন দু দিনের কতো জমানো কথা এসব আরকি! কিন্তু আপনি এমন ভাব করছেন মনে হচ্ছে ভাইয়া আর আদুর বাসর ঘরেও পৌছে যাবেন, ছোট ভাইয়ের অধিকারের দোহাই দিয়ে! ” রুহির কথাতে স্নিগ্ধ ঘাবড়ে গিয়ে গলা খাকরি দিয়ে বললো, “তা কেনো হতে যাবে!? আমি তো এমনিই মজা করছিলাম!” মুগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “তোর মজা নেয়া শেষ!?” স্নিগ্ধ ভেঙচি কেটে বললো,” হুহ,, যাচ্ছি যাচ্ছি! ব‌উ পেয়ে ভাইকে ভুলে গেলে! এর সুধ আমি তুলবো দেখে নিও। এই যে মিস লেকচারার, আপনিও চলুন। কাবাব মে হাড্ডি হতে চান না কি?” রুহি চোখ বড় বড় করে রেগে বললো, “নো ওয়ে! আমাকে কি আপনার মতো পেয়েছেন না কি!? সরুন তো যেতে দিন আমায়!” রুহি স্নিগ্ধকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু স্নিগ্ধ দৌড়ে রুহির কাছে গিয়ে পাশাপাশি হাটতে লাগলো। রুহি একবার তার দিকে বিরক্তিমাখা চোখে তাকিয়ে রুমানা আহমেদের কাছে গিয়ে কাপড় দেখায় মনোযোগ দিলো। আর স্নিগ্ধ তার বোন স্নেহার সাথে দুষ্টুমি করতে লেগে গেছে। কি আর করবে, এতো মহিলাদের সাথে মাত্র দুটো ছেলে এসেছে। যার মধ্যে একজন ব‌উ নিয়ে ব্যাস্ত , আর বেচারা স্নিগ্ধ দুষ্টুমি করে সময় কাটাচ্ছে। রুহি আর স্নিগ্ধ চলে যাওয়ার পর‌ও কথা হয় নি মুগ্ধ আদ্রিশার। ট্রায়াল রুমের পাশে দাড়ানোটাই ভুল ছিলো তাদের। কেউ না কেউ বার বার আসছিলো সেখানে। বাধ্য হয়ে কথা বলার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ খুজতে গিয়ে ফেঁসে যায় মুগ্ধ। জেসমিন আর মনোয়ারা বেগম কয়েকটা শেড়ওয়ানি নিয়ে মুগ্ধ শরীরে জড়িয়ে দেখছেন কেমন লাগছে তাকে। মালিহা ইয়াসমিন‌ও ডেকে নেন আদ্রিশাকে অন্যান্য পোশাক পছন্দ করার জন্য। অগত্যা তাকেও চলে যেতে হয় হবু শাশুড়ি মায়ের সাথে। আবার‌ও ব্যার্থ হতে হয় তাদের। আদ্রিশার অনেক কথা মুগ্ধ শুনলেও মুগ্ধর হাজার‌ও না বলা কথা আদ্রিশার অগোচরেই রয়ে যায়!

___________

গোধূলি লগ্ন শুরু হলো মাত্র। পাখিরাও নীড়ে ভিড়ছে। ব্যাস্ত রাস্তাটা অনেকটাই জনশুন্য! পথচারি নেই বললেই চলে। অনেকে কাজ থেকে ফিরছে তো কেউ কেউ রাস্তার পাশের দোকানে বসে চা খাচ্ছে। ছাদ থেকে দূরের বড় রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ। কোলাহলহীন পরিবেশ পাবার আশায়‌ই ছাদে ওঠা তার। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলতে বিছানায় গা এলিয়েছিলো শুধু, কোথা থেকে মামা জাফর হোসেন আর চাচাতো ভাই ইমরান ঘরে ঢোকে পরলো। মুগ্ধকে জাগিয়ে বললেন মুগ্ধর মা তাকে ডাকছেন। মুগ্ধকে রুম থেকে বের করে দিয়ে তারা দিব্বি শুয়ে আছে। মালিহা ইয়াসমিন ছেলেকে ডেকেছিলেন কোনো এক দরকারে। পরে তিনি তা ভুলে যান।মুগ্ধকে ফিরে আসতে হয় মায়ের ঘর থেকে। বিশ্রাম নিতে আবার ঘরে গিয়ে বিছানা খালি না পাওয়ায়, ছাদে এসে দাড়িয়েছে সে। কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে পেছন ঘুরে স্নিগ্ধকে আবিষ্কার করলো মুগ্ধ। স্নিগ্ধকে দেখলেই ভাবনা শুরু হয়ে যায় মুগ্ধর।ও ভাবনার বিষয় হলো, স্নিগ্ধের নাম।’স্নিগ্ধ’ নামটায় কেমন যেনো পবিত্র পবিত্র ভাব আছে। যদিও নামটা মুগ্ধর নামের সাথে মিলিয়েই রাখা হয়েছিলো। তবুও মুগ্ধর ধারনা স্নিগ্ধ নামটা তার হলেই ভালো হতো। খুব পিওর টাইপ মনে হয়। যা স্নিগ্ধ একেবারেই নয়। ভাবনার মাঝেই স্নিগ্ধ মুগ্ধর পাশে গিয়ে ছাদের রেলিংএ ভর করে বসে পরলো।
——কি ব্যাপার হঠাৎ ছাদে? (মুগ্ধ)
——কেনো আসা বারণ না কি?(স্নিগ্ধ)
——না তা না। তবে মাঝরাত ছাড়া কখনো তোকে ছাদে আসতে দেখি নি!(মুগ্ধ)
——হুম তা ঠিক। তোমায় খুঁজছিলাম। বড় মামি বললো তুমি এখানে তাই এই সন্ধ্যে বেলা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাদে এলাম!(স্নিগ্ধ)
——তোর কি হয়েছে বলতো!? আজ সারাদিন আমার সাথেই আছিস। কারন কি? কি এমন কথা যে আমাকে খুঁজে মহাশয় ছাদে এলেন! তাও গোধুলি বেলায়! ভুতের ভয় নেই না কি?(কথাটা মুগ্ধ দুষ্টুমি করে বললো)এ কথা বলার কারন হলো স্নিগ্ধ ছোটবেলায় ভুতে ভয় পেতো খুব। তার ধারনা ছিলো সন্ধ্যের এই সময়টাই ভুত আশেপাশে থাকে।এতো বছরে সেই ভয়টা পুরোটা কাটে নি তার। তবে মাঝরাতে একা ছাদে আসতেও ভয় হয় না।

——-হাহা,,,, কাম অন ব্রো! যে আমি মাঝরাতে ছাদের কার্নিশ ঘেসে দাঁড়াতে ভয় পাই না, সেই আমি না কি সন্ধ্যের সময়টাকে ভয় পাবো! হাসালে!!(স্নিগ্ধ)
স্নিগ্ধ হেসে হেসে কথাটা বললেও মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব পুড়াচ্ছে তাকে। হাসিতেও কেমন দুখী দুখী ভাব। মুগ্ধ স্নিগ্ধর হাত ধরতেই স্নিগ্ধ বললো, “ভাবি কোনো ও কথা বলছিলো ভাই?” মুগ্ধর হাত হালকা হয়ে আসলো। অবাক হয়ে স্নিগ্ধকে দেখছে সে। তার মানে কি স্নিগ্ধ সব শুনেছে!

নিজেকে স্বাভাবিক করার বৃথা চেস্টা করে বললো,”কোন কথা বলছিস তুই?” স্নিগ্ধ লাফ দিয়ে রেলিং থেকে নেমে বললো,”আই এম সরি! আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছুই শুনিনি! ওইপাশে দাড়িয়ে ছিলাম, তোমার রুমাল ছিটকে আমার পায়ের পাশেই পরে। তাই রুমালটা তুলে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে তোমাদের। আর শুনতে পাই ভাবির শেষ কথাটুকু। ভাবি বলছিলো,যেভাবেই হোক সে বিয়েটা ভাঙবেই ! এসবের মানে কি ভাই!বিয়েটা কি ভাবির অমতে হচ্ছে?” মুগ্ধ কপালের ঘাম বা হাতের উল্টো পিঠে মুছে বললো,”স্নিগ্ধ! ‌এই কথাগুলো যেনো আর কেউ না জানে!” স্নিগ্ধ শক্ড হয়ে গেছে মুগ্ধর কথায়। মুগ্ধর কাধ ধরে ঝাকিয়ে বললো,”তুমি কি বিয়েটা করছো?” মুগ্ধ সম্মতি জানিয়ে বললো,” বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে আর সবাই কে ইনভাইট‌ও করা শেষ। বিয়ে না করার প্রশ্ন‌ই উঠছে না।” স্নিগ্ধ নিজের মাথা ধরে উল্টো ঘুরে জোড়ে নিশ্বাস টেনে বললো,”হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ইউ ভাই! ভাবি তোমায় বিয়ে করতে চায় না আর তুমি তাকেই বিয়ে করতে চাও। কেনো? ভাই প্লিজ, আমি ঐ মেয়েটাকে কাঁদতে দেখেছি তখন! ‌এভাবে ওকে কষ্ট দিও না! দরকার হলে আমি তোমার হয়ে সবার সাথে কথা বলবো। বিয়েটা করে না ভাবি খুশি হবে আর না তুমি খুশি হতে পারবে!” মুগ্ধ আকাশের দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” তুই বলছিস যেনো বিয়েটা না করি আবার সেই মেয়েকেই ভাবি বলে সম্মোধন করছিস! স্ট্রেইন্জ!! ” স্নিগ্ধ কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে। মুগ্ধ আবার‌ও বলতে লাগলো, ” আমি জানি আদ্রিশা আমায় বিয়ে করতে চায় না! কিন্তু বিয়েটা করতেই হবে। এই বিয়েতেই ওর, আমার , সবার কল্যাণ। বিয়েটা না হলে আনন্দ পাবে ঠিক‌ই তবে সেটা হবে ক্ষণিকের। আমি চাই আমার মতোই ওর সারাজীবন সুখে, আনন্দে কাটুক। আর তাই আমার সাথে বিয়ে হ‌ওয়া জরুরি। ট্রাস্ট মি, আদ্রিশা কষ্ট পাবে না। আমিই ওর কষ্ট লাঘব করবো!” মুগ্ধ আর একমুহুর্ত না দাড়িয়েই নিচে চলে গেল। স্নিগ্ধর জন্য রেখে গেলো এক রাশ রহস্য! স্নিগ্ধ মুগ্ধর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবছে, মুগ্ধর মনে কি চলছে! কেনো মুগ্ধ জেনে শুনে একজনকে বিয়ে করছে, যে মেয়েটা বিয়েতে রাজি নয়? কি এমন কল্যাণ হবে বিয়ে করলে? কষ্ট‌ই বা কিভাবে লাঘব হবে আদ্রিশার? তাকে কষ্ট দিয়ে সুখ কেড়ে নিয়ে সারাজীবনের আনন্দ, সুখ কিভাবে ফিরিয়ে দেবে মুগ্ধ!

চলবে,,,,,,,

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ১২
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

কাল গায়ে হলুদ! আদ্রিশার বাড়ি এখন বিয়ে বাড়ির রুপ ধরেছে। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবে ঘর ভর্তি। বন্ধুদের মধ্যে নীলা আর তুহিন এসে পৌঁছেছে । রুহি এসাইনমেন্টের অজুহাতে হলুদের দিন সকাল বেলা এসে উপস্থিত হবে বলেই জানিয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমানে কারো কথা শুনার‌ও উপায় নেই। যাই বলতে হয় চিৎকার করেই বলতে হচ্ছে। গলার অবস্থাও একপ্রকার কাহিল সবার! তবু উচ্ছাস কমছে না। তুহিন অবিরাম কাজ করে চলেছে। যদিও এসেছিলো বিয়ে ভাঙবে বলে তবে সেটা হবে বলে মনে হচ্ছে না। এদিকে আদ্রিশাও মুগ্ধর সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু সম্ভবপর হয় নি। এবার বাধ সাধলেন আদ্রিশার বড় দাদি। অর্থাৎ দাদির বড় বোন। আদ্রিশার দাদা দাদি অনেক আগেই পৃথিবী ছেড়েছেন। সবাই বড় দাদিকে সম্মান করে আর তার কথাতেই হয় সব কিছু। পুরনো ধাচের মহিলা তিনি। বিয়ের আগে ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশা মোটেও পছন্দ নয় তার। এক‌ই কথা বলে চলেছেন চারদিন ধরে ছেলের সাথে কোনোপ্রকার কথা বার্তা যেনো না হয়। এতে ভালোবাসা বাড়বে। এখন কথাটতা বললে বিয়ের পর কি বলার থাকবে। তাই এখন থেকেই দূরত্ব। ফোনটাও নিয়ে নেন আদ্রিশার থেকে যদি মুগ্ধর সাথে ফোনালাপ হয় এই ভয়ে! নীলা থাকায় অনেক সাহায্য পেয়েছে আদ্রিশা। নীলার ফোন থেকেই রবিনের সাথে কথা বলেছে এই কদিন। কেনো যেনো তুহিনের ব্যাবহার খুব উদ্ভট লাগছে আদ্রিশার কাছে। না হলে যে ছেলে কাল পর্যন্ত বিয়ে ঠেকাতে ব্যাস্ত ছিলো সেই ছেলে বিয়ে বাড়ি আসার পর থেকে বিয়ের তোরজড়ে লেগে আছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর প্রধান কাজটাই হলো আদ্রিশার বিয়ে। এতোটাই কাজে বিজি যে আদ্রিশার সাথে কথা অব্দি বলছে না। এই ছেলে বিয়ে ভাঙতে এসেছে না কি বিয়েতে যেনো কোনো কমতি না হয় তাই এসেছে! বুঝা মুশকিল আদ্রিশার ।জেসমিন তুহিন, নীলা আর বাকি সবাইকে মুগ্ধর ছবি দেখিয়েছিলো! দেখা মাত্র‌ই তুহিন তার প্ল্যান ঘুরিয়ে নেয়। রুহিও বলেছিলো ছেলে বেশ ভালো দেখতে। তবে এতোটা ভদ্র আর ভালো লাগবে সেটা বুঝে নি নীলা তুহিন। মুগ্ধ আর রবিনের মধ্যে বিনা সংকোচে ওরা মুগ্ধকেই বাছাই করবে। ওদের ধারনা,যেখানে মুগ্ধ জানে রবিনের সাথে আদ্রিশার সম্পর্ক রয়েছে তথাপি বিয়ে করতে চায় সুতরাং নিশ্চয় মুগ্ধ আদ্রিশাকে ভালোবাসে। আর তাই শত বাধা পেরিয়েও আদ্রিশাকে নিজের করতে চায় মুগ্ধ। যার কিছুই আদ্রিশা জানে না। তুহিন উপর উপর আদ্রিশাকে বলছে তার সাথে আছে তবে মন থেকে চায় যেনো মুগ্ধর সাথে বিয়ে হয়। ওর মন বলছে এই ছেলেটাই বেস্ট আদ্রিশার জন্য। মন থেকে কাজ গুলো করছে সে!

বিকেলে আদ্রিশাকে বিছানায় বসিয়ে তার চারদিকে গোল হয়ে বসে গল্পে মেতেছে আদ্রিশার কাজিনরা। আর বড়রা পাশের রুমে আগামী কালের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মাঝে রবিন দু বার ফোন করেছে আদ্রিশাকে। কাজিনদের সামনে ফোন হাতে নেওয়াটাও দুষ্কর! কিন্তু রবিনের সাথে কথা হ‌ওয়াটাও জরুরি। তাই রুহির সাথে কথা বলবে বলে নীলার ফোন নিয়ে ঘর থেকে বের হয় আদ্রিশা। ডায়াল লিস্টে গিয়ে রবিনের নাম্বারটা ডায়াল করা মাত্র‌ই বড় দাদির আওয়াজ কানে এলো। তিনি এদিকেই আসছেন! দৌড়ে কোনোরকম ছাদের চিলেকোঠায় লুকিয়ে পরে আদ্রিশা। ফোনের ওপাশ থেকে আওয়াজ শুনা যাচ্ছিলো। তাড়াতাড়ি ফোনটা কানে লাগিয়েই কাঁদতে লাগলো আদ্রিশা। ওপাশ থেকেও ফুঁপাচ্ছিলো রবিন।

_____________

সকাল হতে না হতেই অনুষ্ঠানের আমেজ বেড়ে গেছে।হলুদের অনুষ্ঠান কনের বাড়িতেই হবে। বিকেলের দিকে বরের বাড়ির আত্মীয়রা আসবে।বাড়ির পেছনের বাগানে স্টেজ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে তদারকি করছেন আদ্রিশার ফুফা আর ফুফাত ভাইয়েরা।অতিথিদের বসার জায়গা স্টেজের সামনে করা হয়েছে। বাড়িতে সকালের খাবার হিসেবে খিচুরি রান্না হয়েছে। মানুষজন‌ও কম না! যত সময় যাচ্ছে তত‌ই বেড়ে চলেছে তাদের আনাগোনা।

ডাইনিং-এ পরিবারের অনেক সদস্য একসাথে খাচ্ছিলেন। আদ্রিশা খাওয়ার মাঝখানেই বড় দাদিকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ বসে র‌ইলো। অনেক্ষন যাবত কিছু না বলায় বড় দাদিই বললেন কি হয়েছে তার। আদ্রিশা বললো, “আমার একটা আবদার রাখবে!?” আদ্রিশার এই কথাটা খুব করুণ শুনাচ্ছিলো। দাদি আদ্রিশার গাল টেনে বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ রাখবো। বল দেখি কি চাই আমার আদুর!” ‌আদ্রিশা জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো, ” আজ হলুদের সাজের জন্য পার্লারে যাবো!” সবার মনযোগ খাওয়া ছেড়ে এখন আদ্রিশাতে আটকেছে। দাদি মুখটা কালো করে বসে আছেন। তার কারন হলো হলুদের সাজের জন্য পার্লার থেকে মেয়ে আনানো হচ্ছে। বিয়েতেই পার্লারে সাজার কথা। হঠাৎ করে সন্ধ্যের সময় বাইরে গিয়ে সাজতে হবে কেনো, ভাবছেন দাদি। বড় দাদিকে আবার‌ও জড়িয়ে ধরলো আদ্রিশা। তার কাধে মাথা রেখে বললো, “বিয়েতে আমি ঘরেই সেজে নেবো। পার্লারেও যেতে হবে না আর না মেকাপ আর্টিস্ট আনতে হবে। প্লিজ দাদি, আমার খুব ইচ্ছে হলুদের সাজ পার্লারেই সাজবো।” কথাগুলো কেমন যেনো হজম হচ্ছে না দাদির। উপস্থিত সবাইও কেমন করে তাকিয়ে আছে। আদ্রিশা মাথা তুলে দাদির মুখোমুখি বসেছে এবার। অসহায় মুখে টলমল চোখে বললো,”কাল তো চলেই যাবো বলো! আর কোনো আবদার‌ও করবো না। এই বাড়ি তখন পর হয়ে যাবে না! অন্য বাড়ির ব‌উ হবো! তখন কি আর এমন আবদার করবো! আমার শেষ আবদার ভেবেই রাজি হয়ে যাও না দাদি!” আদ্রিশার কথা শুনে রুমানা আহমেদের বুক ছ্যাত করে উঠে। সত্যিই তো তার মেয়ে যে কাল পর হবে। হামিদুর আহমেদ ছেলের সাথে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম দেখছিলেন মেয়ের কথায় তার চোখের পাতা খানিক ভিজে যায়। পান্জাবির হাতা দিয়ে চোখ মুছে বাইরের দিকে এগোন। আদ্র‌ আদ্রিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দাদির দিকে তাকায়। তিনি আদ্রিশাকে বুকে টেনে নেন। আর বলেন, “এমন বলিস না আদু। তুই কখনো পর হবি না! এ বাড়ির মেয়েই থাকবি। আর শেষ আবদার কেনো বলছিস,হা! যতদিন আমি বেঁচে আছি তোর আবদার করার অধিকার আছে। তোর যখন ইচ্ছে পার্লারে যাবি যা! আমি মানা করবো না। আমি শুধু বলছিলাম রাতের বেলা বাইরে যাওয়া ঠিক হবে কি না!” আদ্র মুচকি হেসে বললো, “ওসব আমার উপর ছেড়ে দাও। দরকার পরলে আমি নিয়ে যাবো আর নাহয় গাড়ি তো আছেই! ওর সাথে নাহয় নীলা চলে যাবে। কি বলো!” নীলা হাবোধক মাথা নাড়লো। অমনি বাকি কাজিনগুলোর মুখ চুপসে গেলো। আদ্র সামান্তার মাথায় চাটি মেরে বললো,”পার্লার থেকে যে মেয়েদের আনাচ্ছি তোরা ওদের কাছে সেজে নিস। এক‌ই তো কথা!” এতে সবাই খুশি খুশিই সায় দিলো!

আদ্রিশার রাস্তা এখন ক্লিয়ার। কাল রবিনের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা পালাবে! প্রথম প্রথম আদ্রিশা না মানলেও রবিন বুঝিয়েছে। আদ্রিশা চেয়েছিলো বাবা মায়ের সামনে রবিনকে দাড় করাতে। ওদের উপস্থিতি আর দোয়াতেই বিয়েটা করতে। কিন্তু রবিনের এক কথা, বেকার বলে মেনে নেবে না আদ্রিশার পরিবার। তাই আগে পালিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হবে। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে সবাই মেনে নেবে। যদি পালাতে না পারে তবে হারাতে হবে রবিনকে, নিজের ভালোবাসাকে! আদ্রিশার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া খুব কঠিন ছিলো। ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য পরিবারের সম্মান, বাবা মায়ের বিশ্বাসের এই প্রতিদান দেবে! কিন্তু রবিনকেও যে হারাতে পারবে না। বাধ্য হয়ে পালিয়ে যাওয়াকেই একমাত্র পন্থা হিসেবে গ্রহণ করে আদ্রিশা। প্ল্যান অনুযায়ি পার্লারের পেছনের রাস্তায় রবিন গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবে। গাড়িতে করে সিরাজগন্জ রবিনের দাদু বাড়ি যাবে তারা। ওখানেই বিয়ে সম্পন্ন করে ফিরে আসবে আদ্রিশার বাড়ি। তারপর যা হয় দেখা যাবে। এখন শুধু সন্ধ্যের অপেক্ষা। তারপর এক হয়ে যাবে তাদের ভালোবাসা!

চলবে,,,,,,