যদি আমার হতে পর্ব-১৩+১৪

0
589

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ১৩
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

বরের বাড়ি থেকে অতিথিরা এসে পৌঁছেছেন। শুধু বর আর তার বন্ধুরা বাকি আছে। কিছুক্ষনের মধ্যে তারাও উপস্থিত হবে। এদিকে কনে পার্লারে। সাথে আছে বান্ধবী নীলা। রুহি সকালে আসবে বললেও এখনো আসে নি। আদ্রিশা স্টেজে উঠার আগেই এসে পরবে সে। তুহিন এখনো দৌড়ের উপরে আছে। মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ির সব কাজ তার ঘাড়েই।

পার্লারে আদ্রিশাকে সাজানো হচ্ছে হলুদের সাজে। হলুদ আর কমলার মিশ্রণে শাড়ি, গারো মেক আপ , গলায় ফুলের হার, কানে ফুলের এয়ারিং, নাকের নথ , টিকলি আর হাতের চুড়িও ফুলে সাজানো। দেখে মনে হচ্ছে আস্ত ফুলের গোডাউন তার শরীর! ‌পাশের চেয়ারটায় সাজছে নীলা। বাইরে গাড়ি দাড়ানো বলে এখনো পালানোর সুযোগ পাচ্ছে না আদ্রিশা। আবার ভাবছে সেজেই পালাবে , আজ‌ই তো বিয়ে করবে রবিনকে! বিনা সাজে কনে বরকে দেখতে মোটেও ভালো লাগবে না। হোক না হলুদের সাজ! ‌ব‌উ ব‌উ তো লাগবে, সেই অনেক। বাড়ি থেকে আসার আগে একটা চিঠি লিখে বিছানার কর্নারে বালিশের নিচে রেখে এসেছিলো আদ্রিশা। যেখানে স্পষ্ট লিখা ও মুগ্ধকে বিয়ে করতে চায় না। রবিন নামের একজনকে খুব ভালোবাসে, বিধায় ওকেই বিয়ে করবে। আর তাই বাধ্য হয়ে পালাতে হচ্ছে তাকে। খোঁজার দরকার নেই খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে তারা। আর শেষটায় বাবা মার থেকে ক্ষমা চেয়ে দু লাইন লিখেছে। ভয় হচ্ছে এই ভেবে ও পালানোর আগেই না চিঠিটা কেউ পরে নেয়।

পার্লারের ভেতর পুরুষ আসার অনুমতি নেই। তাই ড্রাইভার কাদির আদ্রিশাকে ফোন করলো।স্ক্রিনে “কাদির ভাই” লেখা দেখে ঝটপট ফোন কানে লাগিয়ে শুধু বললো, “কাদির ভাই, আমাদের সাজা তো শেষ হয় নি! দেরি হবে! তুমি চলে যাও, ফোন করে ডেকে নেবো।” তারপর ফোনটা কেটে নীলার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে চোখের পাতা হালকা করে ঝাপটালো। এর অর্থ হলো ,সময় হয়ে গেছে!তবে সাজ এখনো কম্প্লিট নয়। ফাইনাল টাচ দিতে গিয়ে সময় লাগছে খুব।আদ্রিশার দুহাতের উল্টো পিঠে আলতা দিয়ে রাঙানো হচ্ছে, আঁকানো হচ্ছে নানা ডিজাইন।এরপর চুল বাধার পালা। খোপা করে মাথায় ফুলের মালা লাগিয়ে ওরনা মাথায় দিয়ে উঠে দাড়ালো আদ্রিশা। নীলার সামনে ফোনটা রেখে দিলো যাতে পালানোর পর কেউ ট্রেস না করতে পারে।একজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,”আমি একটু আসছি! ড্রাইভার চলে যাচ্ছে কি না দেখে আসি। ওর তো মোটামোটি শেষ! কনের বন্ধু বলে কথা সুন্দর করে সময় নিয়ে সাজান। নীলা আসছি আমি!” নীলা মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। আদ্রিশা পার্লার থেকে বেরুচ্ছে । বুকটা ঢিপঢিপ করছে তার। কেউ জেনে গেলে কি হবে কে জানে। যদিও নীলা তুহিন আর রুহি সব‌ই জানে তবুও মুখ ফসকে না বলে দেয় ওরা কোথায় যাচ্ছে। তাহলে সব শেষ। আর যদি কেউ জানে এই তিন জন‌ই আদ্রিশার পালানোর কথা জানতো তাহলে তো রক্ষে নেই।

পার্লার থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় উকি দিয়ে দেখে নিলো গাড়ি আছে কি না। না গাড়ি নেই এখানে। ড্রাইভার কাদির গাড়ী নিয়ে চলে গেছে দেখে আদ্রিশার নাচতে ইচ্ছে করছে। এতো সহজে পালাতে পারবে ভাবে নি সে। তবে এখনো কাজ শেষ নয়। সরু গলিটা দিয়ে বেরিয়ে পেছনের রাস্তায় উঠতে পারলেই রবিনকে পেয়ে যাবে সে! গলিটা বেশ অন্ধকার! শাড়ি , সাজ সবকিছুই অস্বস্তিকর লাগছে এখন। ফুলের ভারে যেনো নুইয়ে পরছে আদ্রিশা। প্রায় দু মিনিট পর গলি থেকে বের হতে পারলো সে। আশেপাশে তাকিয়ে রবিনের দেখা পেলো না আদ্রিশা। আরেকটু এগোলেই বড় রাস্তা। রবিন বোধহয় রাস্তার কিনারায় গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে তার। এই ভেবে এগিয়ে যেতেই সামনে একটা বড় গাড়ি থামলো। আদ্রিশা রবিন ভেবে খুশি হয়ে গাড়ির দরজার পাশে দাড়াতেই দেখলো মুগ্ধ আর আদ্র। মুগ্ধ ড্রাইভিং সিটে আর আদ্র তার পাশেই বসে আছে। আদ্রিশা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। ও ভাবছে চিঠিটা কি কেউ এখনি পরে ফেললো! আগে পালিয়ে যেতো তার পর নাহয় পরতো! এখন কি হবে!? ভাবনার মাঝেই আদ্র আদ্রিশার হাত ধরে ঝাকিয়ে বললো, “তুই এদিকে ক‌ই যাস? আর নীলা কোথায়?” ‌

আদ্রিশা আদ্র আর মুগ্ধর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো খুব স্বাভাবিক আছে তারা। এখনো সত্যিটা সামনে আসে নি তাহলে। হালকা হেসে আদ্রিশা বললো, “ভাইয়া তুমি এদিকে কেনো? তাও আবার ওনার গাড়িতে!”

আদ্র ভ্রু নাচিয়ে বললো, “কেনো রে তোর বরের গাড়িতে উঠেছি বলে রাগ লাগছে না কি হিংসে হচ্ছে!?”

আদ্রিশা আদ্রর বুকে হালকা বারি মেরে বললো, “ওসব কিচ্ছু হয় নি! তুই বল না!”

আদ্র বললো, “বলছি বলছি, কাদির ভাই একটু আগে বাড়িতে গেছে। আমি কিছু জিনিস কিনতে বাইরে ছিলাম। তো বাবা ফোন করে বললো গাড়ি বাড়িতে তোরা কিভাবে ফিরবি! দেড়ি না হয় আবার, সবাই অপেক্ষাও করছে।এদিকে তোর বর একা ড্রাইভ করে অনুষ্ঠানে আসছেন। রাস্তায় ওনাকে পেয়ে ভাবলাম একসাথেই গিয়ে তোদের নিয়ে আসি। আর মুগ্ধ‌ও রাজি হয়ে গেলো। ঐ রাস্তায় এলে আধঘন্টা লাগতো কিন্তু এই রাস্তায় মাত্র ১৩ মিনিটে পৌছে গেছি। ব্যাস চলে এলাম, তোরা রেডি তো!”

আদ্রিশা মাথা নাড়াতেই আদ্র বললো,” ঐ বললি না এদিকে কি? পালাচ্ছিস না তো আবার! বর পছন্দ হয় নি!?”

শেষের কথা দুষ্টুমি করে বললেও মুগ্ধ আর আদ্রিশা কেপে উঠেছিলো। আদ্রিশাকে এদিকে একা দেখেই মুগ্ধ কিছু আঁচ করতে পেরেছে। আদ্রিশা কথা কাটিয়ে বললো, “উফফ,,,, যতসব ফালতু কথা। পালাবো কেনো। ঐদিকে গাড়ি নেই তো তাই এই রাস্তায় গাড়ি থাকতে পারে ভেবেই এলাম! নীলা ভেতরে সাজছে!”

আদ্র হা করে বললো,”কি!! কনে তৈরি হয়ে গাড়ি খুঁজছে আর বান্ধবী ভেতরে আয়েশ করে সাজছে!”

আদ্রিশা আদ্রকে থামিয়ে বললো, ” আমাকে আগে সাজানো হয়েছে বলেই ওর সাজতে দেরি হচ্ছে। আর ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলে হলুদের অনুষ্ঠানের ১২ টা বাজতো আর দাদীও ছেড়ে কথা বলতো না। তাই,,,,,,,”
মুগ্ধ কথা ঘুরিয়ে বলে উঠলো ,” ভাইয়া চলুন না এখানে কতোক্ষন দাড়াবো আর! ‌আদ্রিশা আপনিও গাড়িতে উঠুন, পার্লারের সামনে থেকে নীলাকেও পিক আপ করতে হবে। রাত ৮ টায় অনুষ্ঠান সাড়ে ৭ টা বাজতে চললো! ” আদ্রিশা মাথা হেলিয়ে পেছনের সিটে বসে পরলো। আদ্র মুগ্ধকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো, “আপনার তো তরই স‌ইছে না ! বিয়েতে কিন্তু এখনো একদিন বাকি!”

মুগ্ধ মুখ টিপে হেসে কপালে ডান হাত ঘসে বললো, “জিহ না ভাইয়া, মাত্র আজকের রাতটা!”

আদ্র গলা ঝেড়ে জিবে কামর দিয়ে গাড়ীতে উঠলো। আর যাই হোক ছোট বোনের বরের সাথে রসিকতা মানায় না!

এদিকে দূরের গাছের আড়াল থেকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে কেউ। যাকে আর কেউ না দেখলেও আদ্রিশার চোখ এরায় নি। বুকটা ধুক করে উঠলো আদ্রিশার। এতোটা কাছে থেকেও আজ কত দূরে তারা। পালাতে পারলো না। এক হতে পারলো না। ওদের কি আলাদা হতেই হবে! ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার। চোখে জল আসার আগেই নিজেকে সামলে কাচের জানলার ভেতর থেকে হাত নাড়িয়ে কিছু ইশারা করলো সে। রবিন বুঝতে পারলো কি না কে জানে। খুব রাগ লাগছে তার। তার‌ই চোখের সামনে তার প্রেয়শীকে অন্য কারো সাথে যেতে হচ্ছে! তাও আবার বিয়ের উদ্দেশ্যে! কথাটা ভেবেই হাত মুঠো করে গাছে জোরে আঘাত করলো রবিন!

চলবে,,,,,,,,

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ১৪
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

আদ্রিশার বাড়ি খুব সুন্দর করে জমকালো ভাবে সাজানো হয়েছে। ছোট বাচ্চারা স্টেজে উঠে ছবি তুলছে। স্টেজ বাগানের দিকে তৈরি হলেও বর ব‌উ না আসায় অতিথিরা বাড়ির সামনের দিকটায় হাটাচলা করছিলেন। মুগ্ধর গাড়ি বাড়ির গেটে আসতেই উৎসুক অতিথিরা তাকিয়ে র‌ইলেন গাড়ির দিকে।তুহিন আর আদ্রিশার চাচাতো, ফুফাতো ভাইয়েরা এগিয়ে আসে বর কে নিতে। মুগ্ধ আর আদ্র গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। আদ্রিশা পেছনের দরজাটা খুলে বাইরে আসতে উদ্যোত হলো, অমনি নীলা হাত দিয়ে ওকে আটকে দিলো। যার প্রধান কারন হলো গায়ে হলুদের দিন হবু বর ব‌উ এক গাড়িতে এসেছে, ব্যাপারটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না! কিন্তু আদ্রিশা শুনলে তো! পালাতে পারে নি বলে রেগে তো ছিলোই তার‌উপর নীলার কথায় মাথা গরম হচ্ছে তার। নীলাকে আর তার কথাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো আদ্রিশা। রুহি অনেকটা দূরেই দাড়িয়েছিলো, আদ্রিশাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে তার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। কেননা ও জানতো আজ হলুদের ফাংকশনে আদ্রিশা থাকছে না! কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না রুহি। তবে তুহিনের কোনো ভাবাবেগ নেই! ও ওর মত‌ই মুগ্ধকে আপ্যায়নে ব্যাস্ত। আদ্রিশাকে মুগ্ধর সাথে এক গাড়িতে দেখে শুধু রুহিই নয় চমকেছেন ওখানে উপস্থিত অতিথিরাও। সাথে আদ্রিশা মুগ্ধর পরিবার! কেউ কেউ হাসছে, তো কেউ আবার টিটকারি মারছে, কেউ কেউ তো অবাকের চুড়ান্ত সীমায়! সবার তাকানো হাসি টিটকারি কে উপেক্ষা করে আদ্রিশা গট গট করে ঘরে চলে গেলো! ঘরে ঢুকতেই প্রশ্নের ঢালা সাজিয়ে বসলেন আদ্রিশার চাচি, সানা বেগম। তার হরেক রকম প্রশ্নের মধ্যে একটি ছিলো মুগ্ধর সাথে কি করে এলো! আদ্রিশার উত্তরের অপেক্ষা না করেই বড় দাদি বললেন,”আদু, তোর কি জামাইর সাথে যোগাযোগ ছিলো!? এতো করে বলার পরেও তুই আমার কথা শুনলি না! তা ওর সাথে দেখা করতেই কি বাইরে সাজার ইচ্ছে জেগেছিলো না কি?” আদ্রিশা রেগে থাকলেও অবাক চোখে দাদিকে আর তার পরিবারকে দেখছে! কিসব জিগ্যেস করছে তারা! একটুও কি বিশ্বাস নেই তার উপর!? পরক্ষনেই মুখটা ছোট হয়ে গেলো আদ্রিশার। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে বসলো,কেনো এই বিশ্বাস আশা করছে সে? আজ যদি পালিয়ে যেতো তবে কি ও ওর পরিবারের বিশ্বাস ভাঙতো না!! সানা বেগম মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, “আজকালকার ছেলে মেয়ে বলে কথা! এসব কি আর মানে খালা! দেখুন‌ই না আপনার কথা অব্দি রাখলো না মেয়ে! আপা, মেয়েকে সামাল দেওয়া, বুঝানো এসব তো আপনার করার কথা! আমার মেয়েরা তো আমার একটা কথাও ফেলে না। আর তা যদি হয় তাদের বড় দাদির তাহলে তো প্রশ্ন‌ই উঠে না।” বড় দাদি ঝংকার দিয়ে বললেন, “আহ,, ছোট ব‌উ! থামো এবার!” ‌তখন‌ই ঘরে ঢুকলো আদ্র। ড্রয়িং রুমে সবার আদ্রিশাকে ঘিরে রাখার অবস্থা দেখেই সবার মাঝে ঢুকে দিলো এক ধমক। বোনকে সোফায় বসিয়ে জেসমিনকে পানি আনতে বললো। সবার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বললো। কথাগুলো শুনে চুপসে গেলেন সানা বেগম। বড় দাদিও বেশ লজ্জায় পরলেন। রুহি দরজার কাছ টায় দাড়িয়েই শুনছিলো সব। বুঝতে পারলো আদ্রিশার এখানে উপস্থিত হ‌ওয়ার কারন। আদ্রিশা থম মেরে বসে আছে। শুধু ভাবছে বরের সাথে এক গাড়িতে হলুদ সন্ধ্যায় আসায় যদি এতো কাহিনি হয় তাহলে পালাবার পর কি কি হবে!!

ক্যামেরা ম্যান রা তাড়া দিচ্ছে অনুষ্ঠান শুরুর জন্য। রুহি আর জেসমিন আদ্রিশার শাড়ির কুচি, মাথার ওড়না এসব ঠিক করছে! স্টেজে উঠাতে হবে। রুহি আর নীলা আদ্রিশার দু পাশে দাড়ালো। ক্যামারা ম্যানদের ইন্সট্রাকশন ফলো করে তারা এগুচ্ছে স্টেজের দিকে। এক জায়গায় দাড়িয়েই হাজারটা পোজ দিয়ে ছবি তুলতে হচ্ছে, ধীরে ধীরে হাটতে হচ্ছে যা সব কিছুই বেশ বিরক্তিকর লাগছে আদ্রিশার কাছে। নীলা ফুল অন এনজয় করছে। কিন্তু রুহির মোটেও আনন্দ লাগছে না। যার মূল কারন স্নিগ্ধ। এখানে আসার পর থেকেই স্নিগ্ধ নানা ভাবে বিরক্ত করছে তাকে। যদিও এটাকে ফ্লার্টিং বলে তবে রাগ লাগছে রুহির। কোনো পোজ দিয়ে ছবি তুলতে গেলেই কোথা থেকে স্নিগ্ধ এসে পরে সামনে। রুহির দিকে তাকিয়ে হাসছে তো কখনো হাত নেড়ে ইশারায় তাকে সুন্দরী বুঝাচ্ছে, কখনো কখনো আবার ভেঙাচ্ছেও! রুহি কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফিসফিস করে আদ্রিশাকে বললো, “দোস্ত তোর দেওর খালি ফ্লার্ট করে কেনো?” নীলা রুহিকে দুষ্টুমি করে বললো, “তোর জলে না কি?” রুহি রেগে বললো, “গাধী ও আমার সাথে ফ্লার্ট করছে! আসার পর থেকে এক দন্ড‌ও শান্তি দেয় নি!” নীলা বড় বড় চোখ করে বললো, “কি বলিস! সত্যি না কি? তাইলে আদুর পর তোর আর আদুর দেওরের বিয়ে ফাইনাল করি!?” আদ্রিশা চুপচাপ সব শুনলেও এবার মুখ ঘুরিয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে বললো, “হারামী, তুই কি চাচ্ছিস আমি বিয়েটা করি?” আদ্রিশার তাকানো দেখে নীলা ঢোক গিলে বললো, “এমন করে তাকাস না তো! ভয় করে। ছাড় না ওসব! পোজ দে পোজ! কত্তো সুন্দর ছবি উঠছে দেখ!”

বসে বসে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে আদ্রিশার। মুগ্ধর‌ও এক‌ই হাল। ৮ টার দিকে স্টেজে উঠেছিলো তারা এখন রাত ১১ টা বাজতে চললো! সেই কখন থেকে একের পর এক অতিথিরা এসে গায়ে হলুদ লাগাচ্ছে। থামার নাম‌ই নেই। আর এই ফটোগ্রাফাররাও কেমন! ৩ ঘন্টায় ও ক্লান্তি অথবা বিরক্তি ধরা দিচ্ছে না তাদের চোখে মুখে! এদিকে স্নিগ্ধ রুহিকে এক মুহুর্তের জন্য‌ও ছাড়ছে না। হ্যাবলার মতো রুহির দিকে তাকিয়ে আছে সারাক্ষন।যেখানে রুহি যাচ্ছে ঠিক সেখানেই স্নিগ্ধ যাচ্ছে। রুহি দাড়ালে সেও দাড়াচ্ছে রুহি বসে পরলে সেও বসছে। এমনকি রুহি যখন চেয়ার না পেয়ে ছোট্ট টোলটায় বসলো স্নিগ্ধ ফট করে নিচে কার্পেটের উপর বসে পরলো। সে কি লজ্জা! আড় চোখে মুগ্ধ‌ও দু তিন বার লক্ষ্য করলো তাদের। সবার মাঝে থাকায় কিছু বলতেও পারছে না রুহি।

আদ্র এসে ঘোষনা করলো হলুদ সন্ধ্যার সমাপ্তির। সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকা হলো। লাইটিং আর ফটোশুট‌ও অফ হলো এতক্ষনে। কেউই এখন আর স্টেজের দিকে তাকাচ্ছে না। মুগ্ধ সুযোগ বুঝে আদ্রিশার দিকে ঘুরে বসলো। আদ্রিশার পুরো মুখে হলুদ মেখে তাকে ভুতের মতো লাগছে। সমস্ত মেক আপ‌ই বেকার গেলো। আদ্রিশার ঐ অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে ফেললো মুগ্ধ। এক‌ই সোফায় একসাথে এতো সময় থাকার পর‌ও কেউ কারো দিকে তাকায় নি। অস্বস্তিও হচ্ছিলো তাকাতে। এখন ওদের দিকে কেউ তাকাবে না ভেবেই আদ্রিশাকে কিছু বলার উদ্দেশ্যে ওর দিকে তাকায় মুগ্ধ। হাসির আওয়াজ কানে যেতেই মুগ্ধর দিকে তাকালো আদ্রিশা। মুগ্ধর হঠাৎ হাসার কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছে না আদ্রিশা। মুগ্ধ হাসি থামিয়ে বললো, “ভেরি সরি। একচুয়েলি আপনাকে এই বেশে দেখে ভীষন হাসি পাচ্ছে। আই কান্ট কান্ট্রোল!” বলেই আবার হাসতে শুরু করলো সে। আদ্রিশা বোকার মতো এখনো তার দিকে তাকিয়ে। সে বুঝতে পারছে না কি অবস্থার কথা বলছে মুগ্ধ। আদ্রিশার তাকানোর ভাব ভঙ্গি দেখে মুগ্ধ ভাবলো নিশ্চয় আদ্রিশা বুঝতে পারে নি তার কথা। ন‌ইলে রেগে যাওয়ার কথা ছিলো আদ্রিশার। অবশ্য বুঝবেই বা কিভাবে! নিজেকে তো দেখার কোনো উপায়‌ও নেই! মুগ্ধ নিজের ফোন বের করে টপাটপ কয়েকটা ফটো তুলে নিলো আদ্রিশার। আদ্রিশা দাঁত কড়মড় করে বললো, “হোয়াট দ্যা হ্যাল!আপনি আমার ফটো কেনো তুলছেন?” মুগ্ধ ফোন টা ঘুরিয়ে আদ্রিশার মুখের সামনে ধরলো। স্ক্রিনে নিজের ভয়াবহ চেহারা দেখে চিৎকার করতে গিয়েও থেমে যায় আদ্রিশা। এখন চিৎকার করলে মুগ্ধ ওকে নিয়ে হাসার নতুন সুযোগ পাবে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করে মুগ্ধকে বললো, “তো হাসার কি আছে! গায়ে হলুদে হলুদ মাখবে না বুঝি!” মুগ্ধ হাসি চেপে বললো, “হুম,, মাখবে তো ভালো কথা! ভুত সাজানোর কি দরকার?আমায় তো হলুদ মাখিয়েছে ক‌ই আমায় তো ভুত লাগছে না!” মুগ্ধ ফোনের স্ক্রিনে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে আবার‌ও আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললো,”সি, আমাকে কত্তো হ্যান্ডসাম লাগছে! সুপার কিউট, ইজন্ট ইট! ‌আর আপনাকে দেখুন চোখ মুখ সব ঢেকে গেছে!” বলেই আবার হাসতে লাগলো মুগ্ধ। আদ্রিশার রাগ বাড়ছে! ওরা নাহয় হলুদ মাখলোই ও কি আটকাতে পারতো না তাদের! মুগ্ধর মুখে অল্প অল্প হলুদ লাগানো আর তার মুখে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। কিছুটা ভাব দেখিয়ে সেও বললো, “আসলে কি বলুন তো মেয়েদের সুন্দর্য বলে একটা ব্যাপার আছে, যেটা ছেলেদের নেই! বিয়েতে যেনো সৌন্দর্য হাজার গুন বেড়ে যায় তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা!” মুগ্ধ এতোক্ষন মুখ চেপে হাসলেও এবার হো হো করে হেসে উঠলো। আদ্রিশা চারদিকে আড়চোখে দেখছে। সবার দৃষ্টি এখন তাদের দিকেই। মুগ্ধ হাসতে হাসতেই বললো, “ইউ মিন, মেয়েদের সৌন্দর্যের জন্য হলুদ দিয়ে ভুত বানানো প্রয়োজন! দ্যাট মিনস আপনি সুন্দর নয় আর তাই আপনাকে সুন্দর দেখানোর জন্য হলুদ মাখানো হলো! এন্ড আমার সুন্দর্যের দরকার নেই কারন আমি ওলরেডি সুন্দর, হ্যান্ডসাম , কিউট , ড্যাশিং!” আদ্রিশা নিজের কথায় নিজেই বোকা বনে গেলো। কি ভেবে এই কথাটা বললো সে নিজেও জানে না। কথা কাটানোর উদ্দেশ্যে বললো,”সে যাই হোক, ফার্স্ট টেল মি হোয়াই ডিড ইউ ক্লিক মাই পিকচার? এখনি ডিলিট করুন ওটা। আমার ছবি আপনার কাছে কেনো থাকবে!?” মুগ্ধ ফোন টা বুক পকেটে ঢুকিয়ে বললো, “নো, আমি তো ডিলিট করছি না! তাছাড়া ইউ আর মাই উড বি ওয়াইফ! আপনার ছবি আমার কাছে থাকতেই পারে! ভুলে যাবেন না কাল থেকে আপনি আমার আর তাই আজ আপনার ছবি আমার কাছে থাকলে কোনো সমস্যা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে না! ওলসো, আজকের রাতটা তো কাটাতে হবে না কি? আপনার ছবিই নাহয় আমার আজকের সঙ্গী হোক!” কথাগুলো বলে মুগ্ধ চোখটিপ মারলো। আদ্রিশার চোখ টলমল করছে পানিতে। কাল কি সত্যি ও মুগ্ধর হয়ে যাবে ! চাইলেও কি কিচ্ছু করার নেই! মুগ্ধর কথাগুলো শুধু আদ্রিশা নয় শুনেছেন অতিথিরাও! সবাই করতালি দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার সিটিও বাজাচ্ছে। আদ্রিশাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে ঘরে নেয়া হচ্ছে। আদ্রিশার হঠাৎ হুশ হলো তার লেখা চিঠির কথা! বাড়ি আসার পর থেকে এখনো নিজের ঘরে পৌঁছতে পারে নি সে। ও পৌঁছনোর আগেই যদি কারো হাতে ঐ চিঠি খানা পরে যায় তাহলে এই বিয়ে আটকাতে পারবে না। নিজের ভালোবাসার সাথে কি করে বিশ্বাসঘাতকতা করবে সে! জেসমিনের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে নিজের ঘরের দিকে গেলো আদ্রিশা! এই আশায় , যদি চিঠিটা ওখানেই থাকে, কারো হাতে না লাগে!

চলবে,,,,,