যদি আমার হতে পর্ব-৩+৪

0
1179

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৩
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

—-তোমার নাম কি মা?(মালিহা ইয়াসমিন)
—-ইফতিকা আহমেদ আদ্রিশা।(আদ্রিশা)
—-পড়াশুনা কতদূর করেছো?(শওকত শাহ)
—-জিহ, অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট আমি।(আদ্রিশা)
—-ওহহ,,, আচ্ছা, রান্নাবান্না জানো?(মালিহা ইয়াসমিন)
—-মোটামোটি জানি।( আদ্রিশা)

এইসময়ের মধ্যে আদ্রিশা একবারো চোখ তুলে তাকায় নি। ওদের সামনে আসার পর থেকেই মাথা নিচু করে বসে আছে। ছেলের বাবা মায়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া বাড়তি কোনো কথা বলে নি আদ্রিশা। ছেলের বাবা মা একে অপরকে কিছু ইশারা করে মুগ্ধর দিকে তাকালেন। ফিসফিসিয়ে কিছু কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে। হামিদুর আহমেদ আর রুমানা আহমেদের এদিকে বুক কাঁপছে। তখনই শওকত শাহ বললেন, ” ছেলে মেয়ে যদি আলাদা কথা বলে নিতো তাহলে ভালো হয় আরকি!”

কথাটা শুনে আদ্রর মনে পরে গেলো আগের বারের কথা। এতোক্ষন পাত্রপক্ষের অপজিটে চেয়ারে বসে ছিলো মেয়েকে নিয়ে। এখন অসহায় মুখে বাবা মায়ের দিকে তাকাচ্ছে আর নিজের কাধে হাত বুলাচ্ছে। তাদেরও অবস্থা খুব একটা ভালো না। মুখটা কালো করে চুপচাপ একে অপরকে দেখছেন আর চোখে ভাসছে দু মাস আগের কথা।
,,,,,,,,,,,,,
সেবার পাত্রকে নিয়ে আদ্রিশা নিজের ঘরে গেছিলো। যদিও ওদের সামনে বসার বিন্দু মাত্র ইচ্ছ ছিলো না তবুও সবার জোড়াজোড়িতে বসতে হয়েছিলো। আলাদা কথা বলবে বলেই নিজের ঘরে নিয়ে যাওয়া। নিজের কুকর্ম ছেলেকে শুনাচ্ছিলো জোর গলায়।
——বসুন না! (আদ্রিশা)
——আপনিও বসুন। ( পাত্র)
——নাহ বসবো না আমি।( আদ্রিশা)
——কেনো? কোনো সমস্যা?(পাত্র)
——তা আর বলতে! আমার বসতে একদম ভালো লাগে না। বাইরে সবার সামনে কতোক্ষন বসতে হলো বলতো!!(আদ্রিশা)
——তো আপনি কি সারাদিন দাড়িয়ে থাকেন না কি?(পাত্র)
——এ মা , না না। দাড়াবো কেনো। শুয়ে থাকি তো। আচ্ছা আমার কথা ছাড়েন, বলছি আপনি রান্না পারেন?( আদ্রিশা)
——না আমি পারি না।(পাত্র)
——কিহ!? রান্না পারেন না আর বিয়ে করতে চলে এলেন!( আদ্রিশা)
——ও মাহ,, রান্না আমায় কেনো জানতে হবে? আপনার জানা উচিত। আফ্টার অল, বিয়ের পর রাঁধবেন আপনি!(পাত্র)
আদ্রিশা হঠাৎই হাসতে শুরু করেদিলো। পাত্র অবাক হয়ে আদ্রিশা কে দেখছে। আদ্রিশা হাসি থামিয়ে বললো,” কি যে বলেন না! আমি ঘুম থেকে উঠিই দুপুরে অর্থাৎ ব্রেকফাস্ট আর লান্চের রান্নার সময় নেই। আর রাতে পার্টি করে ড্রিংস করার পর বাসায় আসার হুশ থাকলে হয়! আবার রান্না! সো, আপনাকেই সব করতে হবে!” পাত্র বেশ রেগে গিয়ে বললো, ” মানে কি এসবের! আপনি পার্টি করেন? আপনার পরিবার তো কিছু বলে নি আমাদের! এন্ড ওয়ান মোর থিং, আমার সাথে বিয়ে হলে এসব করা যাবে না! গট ইট?”

আদ্রিশা হঠাৎই হাইপার হয়ে চিৎকার করে বসে। ওর চিৎকার ড্রয়িং রুমে বসা সবাই শুনেছে। সবাই প্রায় দৌড়ে ওর ঘরের দরজায় দাড়িয়ে ওদের ডাকতে থাকে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।আদ্রিশার হঠাৎ করা চিৎকারে পাত্র অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। দরজা খুলতে এগিয়ে যেতেই আদ্রিশা ছেলেটার কলার ধরে হেচকা টানে বিছানায় ফেলে দেয়। চোখ বড় বড় করে ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়ে ছেলের দিকে এগুচ্ছে আদ্রিশা। বিড়বিড় করে বলছে ‘ আজ তুই শেষ খান্ত’! ছেলেটা এবার বললো, ‘ মিস আদ্রিশা, আমি খান্ত নই শান্ত!’ আদ্রিশা যেনো আরো রেগে গেলো। শান্তর চুল ধরে টেনে বলতে লাগলো, ” আমার ভুল ধরিস তুই! কোন সাহসে? এবার তোকে খান্ত নয় জ্যান্ত , দান্ত বলে ডাকবো। খুশি!?” শান্ত মাথায় বেশ ব্যাথা পাচ্ছে তবে বলতে পারছে না। কোনো ভাবে বললো, ” কি হয়েছে আপনার? এমন অদ্ভুত ব্যবহার কেনো করছেন?” আদ্রিশা যেনো আরো সুযোগ পেলো নিজেকে বদ্ব- উন্মাদ প্রমাণ করার জন্য। শান্তর চুল ছেড়ে দিয়ে শাড়িটা কোমরে গুজে, খাটের তলা থেকে ইয়া বড় এক লাঠি বের করে উরাধুরা লাঠি চালাতে শুরু করে। এদিকে বাইরে সবাই অনবরত ডেকে চলেছে। ভেতরের হট্টগোলের আওয়াজে খুব ভয়ে আছে সবাই। শান্ত ছাড়া পেয়েই বেরিয়ে যেতে উদ্যোত হলো। অমনি আদ্রিশা তার শার্টের হাতা ধরে টান দিলো। হাতা ছিড়ে আদ্রিশার হাতে আর অবলা শান্ত মাটিতে গিয়ে পরলো। আদ্রিশা এবার পাগলামো শুরু করেছে। শান্ত কে ঐ লাঠি দিয়েই মেরে চলেছে সে। যদিওবা প্রতিটি বারি শান্তর গায়ে লাগে নি তবে ভয়ে , ঘেমে নেয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে তার। খুব কষ্টে দরজা খুলে হুমরি খেয়ে বাইরে পরলো শান্ত। বেচারার চোখ মুখ আর শরীরের অবস্থা দেখে কারো বুঝতে বাকি নেই ভেতরে কি হয়েছে। শান্তর বাবা মা কিছু বলবে তার আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো আদ্রিশা।ওকে দেখে পাগল ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না। হাহা,,,করে হাসতে হাসতে নিচে পরে কাঁপতে শুরু করে দিলো আদ্রিশা। ওর বাবা মা খুব লজ্জায় পরে গেছেন। আদ্র আদ্রিশাকে টেনে দাড় করিয়ে বলতে লাগলো কি হয়েছে, কেনো করছে এমন। এর মাঝেই আদ্রিশা করে বসলো আরেক কান্ড। ভাইয়ের কাধে জোরে কামর বসিয়ে দিলো। আচমকা এমন হওয়ায় জেসমিন কাঁদতে শুরু করলো। পাত্রপক্ষ কোনোভাবে পালিয়ে বাঁচে। আরিয়া সেদিন পাশের ফ্লেটের ছোট্ট তিন্নির সাথে খেলতে পাশের মাঠে যায়। সাথে আদ্রিশাদের গৃহ পরিচারিকা শিমুও ছিলো। ফলে ঘরে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ থেকে সে বেঁচে যায়। না হলে বেশ ভয় পেতো বেচারি। পাত্রপক্ষ চলে যেতেই হাসিতে লুটোপুটি খেতে শুরু করে আদ্রিশা। এমন কাজে বেশ বিস্মিত হয়েছিলো তার পরিবার। পরে অবশ্য সবাই জানতে পারে বিয়ে করবে না বলেই ওদের তাড়াতে করেছিলো এই ধরনের কাজ। ফলস্রুতিতে পাত্রপক্ষ যারা এসেছিলো তারা ফোন করে অনেক কথাই শুনিয়েছে হামিদুর আহমেদ কে।
,,,,,,,,,,,,,,
এই দু মাসে এবার এলো এই সম্মন্ধ । যা কোনো ভাবেই হাতছাড়া করতে চান না হামিদুর আহমেদ আর তার স্ত্রী। আদ্রিশা মুগ্ধকে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে এগুচ্ছে। আদ্র মেয়েকে নিচে নামিয়ে বোনের সামনে এসে দাড়ায়। ফিসফিসিয়ে বললো, ” আগের বারের মতো কিছু করবি না তো! বিশ্বাস কর বোন, এখনো ঐ কামরের কথা মনে পরলে ব্যাথা করে।” আদ্রিশা মুখ টিপে হেসে এগিয়ে গেলো। ভাইবোনের কথা স্পষ্ট শুনা না গেলেও অনেকটা আন্দাজ করতে পারছে মুগ্ধ।

ঘরে যেতেই মুগ্ধর প্রথম প্রশ্ন ছিলো, ” আপনার ভাই আপনাকে কি না করতে বলছিলেন?” আদ্রিশা বুঝতে পারলো ছেলেটা খুব চালাক। তাই কথা না ঘুরিয়ে সোজাসোজি বলতে লাগলো,” পাগলামো করতে মানা করছিলো!” মুগ্ধ বেশ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করলো, “আপনি পাগল? দেখে তো মনেই হয় না!” আদ্রিশা চোখ গরম করে বললো,” আমি পাগল কে বললো আপনাকে?” মুগ্ধ ভাব নিয়ে বললো, “এই যে এই মাত্র আপনি বললেন আপনার ভাই আপনাকে পাগলামো করতে মানা করেছে!” আদ্রিশা বুঝলো ওকে যতো চালাক ভেবেছে ও তার থেকেও বেশি চালাক। ভেবেছিলো ছেলেটা বোকার মতো মানে জানতে চাইবে আর ও গরগর করে সব বলে পাত্রকে ভয় দেখিয়ে তাড়াবে। কিন্তু তা আর হলো কই? এ তো তাকেই পাগল বলছে।

চলবে,,,,,,,,,

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৪
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

আদ্রিশা মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে মুগ্ধ তখনই বললো,” মিস আদ্রিশা, আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই!” আদ্রিশা মুগ্ধকে থামিয়ে দিয়ে সাথে সাথে বলে উঠলো,”না! আমি বলবো আগে। আপনি শুনুন ।পরে যা বলার বলবেন!” মুগ্ধ চুপ করে গেলো। আদ্রিশা বললো,” আগের বার যারা আমাকে দেখতে এসেছিলো তাদেরকে আমি অনেক ভয় দেখিয়ে তারিয়েছি! ভাইয়া একটু আগে ঐসব করতেই মানা করেছিলো। আমার ঐ রুপ মনে পরলে ও না কি এখনো ভয়ে শিউড়ে উঠে!” আদ্রিশা মুখ চেপে হাসি আটকালো! কিন্তু মুগ্ধর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আদ্রিশা হাসি থামিয়ে আবার বলতে লাগলো, “আসলে আমি বিয়ে করতে চাই নি! জোড় করে পাত্রপক্ষের সামনে বসানো হয় আমায়। আর তাদের শত শত প্রশ্ন! যদিও আপনার বাবা মা অনেক কম আর উপযুক্ত প্রশ্ন করেছেন, তবে এর আগে যারা এসেছিলো তারা উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করছিলো। এই যেমন ধরুন, আমাদের ফ্লাটে কয়টা ঘর, বাবার জমি জমা আছে কি না, বিয়ের সময় কি কি ফার্নিচার চাই তাদের সেসবের লিস্ট এখানে বসেই বানাচ্ছিলো। ভাবা যায়! আবার বলে কি না বিয়ের পর আমায় পড়তে দেবে না! মগের মুল্লুক না কি? হাহ!”

মুগ্ধ খানিক হেসে বললো,” আপনি কি করলেন তারপর?” আদ্রিশা বেশ আয়েস করে বললো, ” কি আর করবো! তেমন কিছু না তবে উদুম কেলানি দিয়েছিলাম!” মুগ্ধ ঘাবরে গিয়ে বললো, “মানে?”

আদ্রিশা তার আগের কর্মকান্ড গুলো একের পর এক বলে চলেছে। বলছে বললে ভুল হবে, ওতো এক্টিং করেও দেখাচ্ছে। শান্ত কোথায় বসেছিলো, শান্ত কিভাবে রিয়েক্ট করেছিলো সব। তবে মুগ্ধ আর তার চুল রক্ষা পেয়েছে। আদ্রিশা নিজের কোলবালিশ কে শান্ত বানিয়ে ওর সাথে যুদ্ধ করছে। মুগ্ধ অসহায় মুখ করে কোলবালিশের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মনে হচ্ছে আজ বেচারা বালিশটার শেষ দিন। আদ্রিশা হাঁপিয়ে উঠেছে এতোক্ষনে। বিছানায় বসে আঁচল দিয়ে মুখটা মুছে মুগ্ধর দিকে তাকালো। মুগ্ধও ওর দিকে তাকিয়ে। আদ্রিশা আঙুলে তুরি বাজিয়ে বললো,” তো! কি ভাবছেন? ভয় পাচ্ছেন বুঝি? উহুম,,,,,,পাবেন না। আমি আপনার সাথে এমন কিছুই করবো না। আসলে করতে চাই না বলেই সবটা আপনাকে বললাম।”

মুগ্ধ গলা ঝেড়ে বললো, ” আমি তো ভয় পাই নি মিস!”
আদ্রিশা মুখটা কালো করে তাকালো। মুগ্ধ বললো, “আসলে আমি ক্লান্ত। আপনার এই ঘোরার মতো লাফালাফি ঝাপাঝাপি দেখে ভীষন ক্লান্ত লাগছে।” আদ্রিশা উঠে দাড়িয়ে বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো, “আমি লাফালাফি করছিলাম?” মুগ্ধ মাথা নাড়লো অর্থাৎ না। তারপর বললো,” এটাকে লাফালাফি বলে না। বলে ঘোরার মতো লাফালাফি।” আদ্রিশা নিজের রাগ কন্ট্রোল করছে। আজ কিছুতেই রাগ দেখানো যাবে না। রাগলে এদের তাড়ানো গেলেও ঘরে তার জায়গা হবে না।

এদিকে ড্রয়িং রুমে মুগ্ধর বাবা মা আর আদ্রিশার বাবা মা টুকটাক কথা বলছেন। সোফার সামনের টেবিলটায় হরেক রকম নাস্তা রাখা। জেসমিন একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে আর খানিক পর পরই বলছে, “নিন না কিছু! খাচ্ছেনই তো না।” মুগ্ধর বাবা মা একটু আধটু খাচ্ছেন আর অপেক্ষা করছেন কখন মুগ্ধ তার সিদ্ধান্ত জানাবে। হামিদুর আহমেদ বারবার আদ্রিশার ঘরের দিকে তাকাচ্ছেন। ঘরের দরজাটা ভেজানো বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। রুমানা আহমেদ অনেকটা চিন্তামুক্ত। বেশ গল্প করছেন মুগ্ধর পরিবারের সাথে। আদ্রর ফোন আসায় ও বাইরে যায়। মেয়েটা রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারে নি, জ্বর এসেছিলো! দুপুরেও ঘুম হয় নি ঠিকমতো। এখন চোখটা ঘুমুঘুমু করছে তার। আদ্র আরিয়া কে জেসমিনের কোলে দিয়ে ফোন এটেন্ড করতে যায়। মালিহা ইয়াসমিন আরিয়াকে নিজের কাছে ডাকেন। আরিয়া খুব মিশুক। এক ডাকেই ওনার সামনে উপস্থিত। মালিহা ইয়াসমিন আরিয়াকে কোলে তুলে জিগ্যেস করলেন , ” কি নাম তোমার?” আরিয়া বললো,” আমি আরিয়া। মাম বাবাইয়ের প্রিন্সেস!” আদ্রিশার পরিবারের অভ্যাস আছে এসবের তবে ওর কথা শুনে মুগ্ধর পরিবার হেসে ফেললো! শওকত শাহ বললেন, ” তুমি তো খুব মিষ্টি! ওর বয়স কতো?” কাওকে বলতে না দিয়েই আরিয়া ভাব নিয়ে হাত দিয়ে কাধ অব্দি চুলকে ঝাড়া দিয়ে বললো, “সবাই বলে আমি মিষ্টি!” আরেকবার হাসির রোল পরে গেলো। জেসমিন বললো,”সারে চার বছর। আর কয়েকমাসেই ৫ বছর হবে।” মালিহা ইয়াসমিন মজা করে বললেন, “সেকি,,,, আমি তো ভাবলাম বুড়ি! ” আরিয়া ঠোঁট উল্টে বললো,”আমি ছোট, তোমার মতো বুড়ি না!” ওর কথা শুনে যেনো এবার সবাই খুব মজা পেলো। আরিয়ার ঘুমটাও কেটে গেছে ততক্ষনে । সবার হাসি দেখে সেও খিলখিল করে হেসে উঠলো।

মুগ্ধ আদ্রিশাকে বললো,”আপনি বিয়ে করতে চান না, সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু কারন?” আদ্রিশা অনেকটা অস্বস্তিবোধ করছে। তার এই অস্বস্তিবোধ মুগ্ধর চোখ এড়াচ্ছে না! কিন্তু কারনটা জানার জন্য সে আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে আছে। ও যে আদ্রিশার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে তার কোনো রিয়েকশন দেখাচ্ছে না মুখে। এইসময়টাতে যা বুঝেছে ,মেয়েটা যদি একবার বুঝে যায় মুগ্ধ তার অস্বস্তি দেখে নিজেও হেজিটেট করছে তবে ও মুগ্ধর ঘাড়ে চেপে বসবে। বলবে তো নাই। আবার, ব্ল্যাকমেইল ও করতে পারে।

আর আদ্রিশা মনে মনে বলছে,’ব্যাটা বজ্জাত! চোখে দেখিস না, মুখ ফুলিয়ে বসে আছি! আরে আমার দিকে ঠিক করে তাকালেও বুঝবি আমি আনকম্ফরটেবল ফিল করছি। উফফফ! এখন কি একে সব বলতে হবে? কাউকে বলবে না তো!’ আদ্রিশার ভাবনার জগতকে তছনছ করে মুগ্ধ বললো,”বলবেন আপনি!” কথাটা মিনতি অর্থে ছিলো না, ছিলো রাগি অর্থে। বেচারি বুঝে গেছে একে বলতেই হবে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই বললো,”আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। ”

মুগ্ধ শান্ত গলায় বললো,”আপনার পরিবার জানে?” আদ্রিশা মাথা নাড়িয়ে বললো,”না ওদের বলতে পারি নি! আসলে আমার বয়ফ্রেন্ড কোনো জব করে না। এখন ওর কথা বাবা মা জানলে জোড় করে আমার অন্য কারোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। বিশ্বাস করুন। প্লিজ, আমায় হেল্প করুন!”
মুগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বললো,”আমি এখানে কি হেল্প করতে পারি!? সামহাও আপনি কি চাচ্ছেন, আপনার বাবা মাকে ঐ ছেলের কথা আমি বলি আর আপনার বয়ফ্রেন্ডকে জবও আমি দি?” আদ্রিশা চোখ বড় বড় করে বললো, “এ মা,,, না না! ওর কথা বলার হলে আমিই বলতাম। আপনি কেনো বলতে যাবেন হ্যাঁ! আর এক্সকিউজ মি, আমার রবিনের সাধ্য আছে, ও নিজের ট্যালেন্টেই চাকরি খুঁজে নেবে। আপনি শুধু বিয়েটা ভেঙে দিন।” মুগ্ধ বললো,”কি করে বিয়েটা ভাঙবো, শুনি?” আদ্রিশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,”বলবেন আমাকে পছন্দ হয় নি!” মুগ্ধর যেনো উত্তরটা একদম মনে ধরে নি। বললো,”যদি কারো বিশ্বাস না হয়?” আদ্রিশা এবার মুখটা মুগ্ধর দিকে ঘুরিয়ে বললো, “না হওয়ার কি আছে! আর বিশ্বাস না হলে বলে দিয়েন, আমার সাথে এতোক্ষন কথা বলে আপনার ভালো লাগে নি। আমাদের কোনো ম্যাচই নেই। ব্যাস আর কি লাগে!” মুগ্ধ বললো,” একি কথা তো আপনিও বলতে পারেন।”

আদ্রিশা না বুঝার ভান করে তাকালো। মুগ্ধ আবার বললো,” আপনিও তো বলতে পারেন আমাকে পছন্দ হয়নি!” আদ্রিশা যেনো উত্তর রেডিই রেখেছিলো। বলতে না বলতেই ও মাথা ডানে বায়ে ঘুরালো। তারপর বললো,” আমি বললে আমার পরিবার ঠিক বুঝে যাবে, যে আমি বিয়ে না করার জন্য এমন করছি! কিন্তু আপনি বললে ব্যপার ভিন্ন!” মুগ্ধ এক ভ্রু উচু করে বললো,”ওহ, তার মানে আপনি সবার কাছে আমাকে খারাপ করতে চান!” আদ্রিশা দাঁত কেলিয়ে হাসলো। মুগ্ধ বেরিয়ে যাচ্ছিলো, আবার ফিরে এসে আদ্রিশার সামনে দাঁড়ালো। বললো,”তবে আমার কথা সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে আপনাকেও কিছু করতে হবে!নাহলে সবাই বুঝে যাবে প্ল্যান আপনার।” আদ্রিশা ইনোস্যান্ট ফেস করে বললো,”কি করতে হবে?” মুগ্ধ ওর কানের কাছে মুখ এনে বললো,” আমি ওখানে যাওয়ার কিছুক্ষন পর হয়তো আপনার পরিবার আপনার কাছে সিদ্ধান্ত জানতে চাইবে। তখন আপনি বলবেন, আপনার আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে!” আদ্রিশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে মুগ্ধর দিকে তাকাতেই মুগ্ধ বললো,”আরে বাবা, আপনি এভাবে না বললে আঙ্কেল- আন্টি ভাববে আপনিই এসবের মূলে! এবার বলুন কি করবেন? আপনার যা ইচ্ছা বলতে পারেন, কিন্তু বিয়েটা না আটকালে আমি দায়ি নই!” আদ্রিশা কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে মুগ্ধর কথায় সায় দিলো।

চলবে,,,,,,,