রঙতুলির ক্যানভাস পর্ব-০৪

0
276

#রঙতুলির_ক্যানভাস

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পর্ব_০৪

গালে ঠান্ডা পানির বোতল ধরে বসে আছে নিশাত!রোদেলার থা’প্পড়গুলোর ই ইফেক্ট।

রোদেলা ফোঁস ফোঁস করছে।

“তোর জন্য আজকে আমাদের এক রুমে থাকতে হয়।কেন এমন করলি?” বেশ চেঁচিয়ে বললো রোদেলা।

নিশাত করুন দৃষ্টিতে তাকালো।

” আরে আমি তো শুধু চেয়েছি তোরা একসাথে থাক!”

“এক সাথে মাই ফুট!”

রেগে হন হন করে বেরিয়ে গেলো ও।নিশাত অসহায় হয়ে বসে রইলো।
তুলি নিশাতকে উদ্দেশ্য করে বলল,”খুব কি দরকার ছিল ওদের সাথে এমন করার?”

গাল থেকে পানির বোতল নামিয়ে বললো,”হয়তো ওরা এখন বুঝবে না।কিন্তু একটা সময় ঠিক ই বুঝবে,এরা একে অপরকে ছাড়া অসহায়!”

তুলি দীর্ঘশ্বাস ফেললো,আদো কি নিশাতের ধারণা ঠিক নাকি ভুল তা ও বুঝতে পারছে না।

নিজের রুমে বসে আছে রোদেলা।মনটা তার ভীষণ খারাপ,এমন একজন যার সাথে প্রতি নিয়ত ঝগড়া হয়,কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না!সেখানে সারাজীবন এক সাথে কি করে থাকবে?

এমন সব ভাবনায় বিভোর তখনই রোদ্দুর এলো।

“তোকে নিচে ডাকছে।”

“কেনো?”

“আমাদের হানিমুনে পাঠাবে!”

রোদেলার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

“এভাবে না তাকিয়ে জলদি এসে আটকা!”

_______

গম্ভীর ভাব বজায় রেখে রোদেলা রোদ্দুর এর সামনে দাড়িয়ে আছে করিম।

গাম্ভীর্যতা বজায় রেখেই বললো,”তো নিজেদের একটু সময় দেয়ার জন্য তোমরা কোথাও ঘুরে আসো।”

রোদেলা ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো,”এ কেমন কথা,যখন খুশি ধরে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো,এখন আবার ধরে ঘুরতে পাঠাচ্ছো , মগের মুল্লুক নাকি!”

রফিক ধমকে বললো ,”রোদ”

“আরে ধমকাও কেনো?আমি কোথাও যাচ্ছি না।তুমি যাও!”

“আমি যাচ্ছি বাবা!”

দাত কেলিয়ে বললো রোদ্দুর।রোদেলা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

করিম গলা ঝেড়ে বললো,”ডিসিশন ফাইনাল!”

রোদেলা প্রতিবাদী গলায় বললো,” আমার মতের কোনো মূল্য নেই?ওর যেতে মন চাইলে চম্পাকে নিয়ে যাক!”

চম্পা এটা শুনে লাজুক হাসলো।মাথায় ওড়না টেনে বললো,”আর(আমার) কোনো আপত্তি নাই কো!”

রোদ্দুর নাক ছিটকে বললো,”সর,বউ থাকতে তোকে নিয়ে যাবো কেনো?”

বলেই রোদেলার বাহু জড়িয়ে কাছে টেনে নিল।রোদেলা এবার বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো,এর আবার কি হলো।
_____

রোদ্দুর রুমে ঢোকার সাথে সাথে ওর গলা চেপে ধরে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ধরলো রোদেলা।

“শয়’তান,কু’ত্তা!খুব ঘুরতে যাওয়ার শখ তোর তাই না?”

“আরে ছাড়, মা’রবি নাকি!”

“মে’রেই ফেলবো তোকে আজ!”

“শা’লী আগে প্ল্যান তো শুন!”

রোদেলা ছেড়ে দিল।রোদ্দুর বড় বড় নিঃশ্বাস নিলো!

“কিসের প্ল্যান?”

“দেখ না তুই আমার সাথে থাকতে পারবি ,না আমি!তাই আমাদের উচিত ডি’ভোর্স নেয়া!”

“ডি’ভোর্স?”

“হুমম,এই জন্য আমাদের আগে এখান থেকে দূরে যেতে হবে।নাইলে এরা কিছুতেই এটা হতে দিবে না।”

“আইডিয়া মন্দ না!”

“তো ডিল?”

রোদেলা হেসে বললো,”ডিল”…

______
সকাল ১০ টায় রওনা হলো ওরা।যাওয়ার পথে করতে গেলো।ডিভোর্স অ্যাপ্লিকেশন করতেই তারা ছয় মাসের সময় দিলো।দুই জনেরই মুড অফ।

“ছয় মাস ইজুকালটু একশো তিরাশি দিন!এত দিন একসাথে এত দিন তাও তোর সাথে কেমনে?”

আফসোসের সুরে বলল রোদেলা।
রোদ্দুর বিরক্তি নিয়ে বললো ,”আমারও শখ নেই তোর সাথে থাকার।”

“তোর শখের গু’ষ্টির ষষ্ঠী!”

“বেশি পক পক করলে এখানেই তোরে নামিয়ে চলে যাবো।”

পুরোটা রাস্তা দুইজন ঝগড়া করতে করতে আসলো ।আর ড্রাইভার এর অবস্থা,”আমি পারি না,আর পারি না।আমি কেন ম’রি না!” টাইপ…

অবশেষে দুইজন পৌঁছালো।

“ওয়াও ইয়ার,কি সুন্দর কক্সবাজার স্পট!”

প্রচণ্ড এক্সাইটমেন্ট এ কথাটি বললো রোদেলা।রোদ্দুর হামি তুলতে তুলতে বললো,”ঘুরাঘুরি পরে,আগে ঘুম!”

“রিসোর্ট এ যাবি না ?”

“তো কি রাস্তায় ঘুমামু?”

“সোজা কথা সোজা করে কইতে পরস না?”

“আমি ব্যাকা মানুষ,তাই সোজা কথা কইতে পারি না!”

“ব’জ্জাত ”

“ব’জ্জাতনী”

“বা’ন্দর”

“বা’ন্দরনী”

“হুঁহ”

“ফুহ ”

“থু”

“ছি”

“হুশ…তুই কী জানিস? তুই একটা গা’ধা”

“তুই কি কোনোদিন গাধা দেখছিস?”

“অবশ্যই। এই তো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে”

“রোদেলার বাচ্চা!”

“ব্যা” বলে ভেঙিয়ে দিল।

________
বিকেলে দুইজন ঘুরতে বের হলো!

” কই কথা ছিল সুন্দরী বউ নিয়ে হানিমুনে আসবো,কিন্তু আসতে হলো এক সাত চু’ন্নি নিয়ে।”
আফসোসের সুরে বলল রোদ্দুর।রোদেলা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো!

“এখন সাথে একটা হ্যান্ডু জামাই থাকতো,আসলাম কোন উগান্ডার সাথে!”

রোদ্দুর রোদেলার চুল টেনে বললো,”আমাকে তোর উগান্ডা লাগে?”

রোদেলা ওর পায়ে পাড়া মেরে বললো,”আমাকে তোর চু’ন্নি লাগে?”

“তুই তো চু’ন্নি ই ”

“তুই কি?উগান্ডা কোথাকার!”

“উগান্ডা মানে কি?”

রোদেলা থত মত খেয়ে গেলো। ও তো জানেই না উগান্ডা কি!এমনি মনে আসে তাই বলে।
কিছু না বলেই হাঁটতে লাগলো।রোদ্দুর বুঝলো তীর সঠিক জায়গায় লেগেছে! ও আবার রোদেলার কাছে গেলো!

“কিরে বল!”

“আমি কমু না,তোর সমস্যা?”

রোদ্দুর বাঁকা হেসে বললো,”বলবি না,নাকি জানিস না?”

“মোটেও তেমন কিছু না!”

“মোটেও তেমন কিছুই”

“রোদের বাচ্চা”

“আমি কিছু করছি নাকি যে তোর বাচ্চা হবে?”

মুহূর্তেই রোদেলা থমকে গেলো, গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়লো।

“অ’সভ্য”

রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বললো,”ওয়েট ওয়েট,তুই লজ্জা পাচ্ছিস?সিরিয়াসলি, দা গ্রেট রোদু লজ্জা পাচ্ছে?”

“তোকে আমি..”

বলেই নিচে ভেজা বালু ওর দিকে ছুঁড়ে মা’রল।

“কি করছিস”

রোদেলা কিছু বললো না। ও ওর কাজে ব্যাস্ত!রোদ্দুর ও আবার পাল্টা জবাব দিতে লাগলো!এক সময় দুইজন পানিতে নেমে পানি ছিটা ছিটি শুরু করলো।এভাবেই হাসি মজায় বিকেল ভ্রমণ স্বার্থক।

রাতে রোদ্দুরের গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো।রোদেলা ওর মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলো। কি মনে করে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুর জ্বর এ কাহিল হয়ে ঘুমে মগ্ন।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রোদেলা!সবাই বলে মেয়েদের নাকি মায়াবী লাগে।কিন্তু রোদ্দুরের মুখে অসম্ভব মায়া আছে।সবচেয়ে ভালো লাগে ওর চোখ দুটি।এই পুরুষটি ওর স্বামী ভাবতেই অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলো।কেনো?সেটা অজানা!হুট করেই মন খারাপ হয়ে গেলো রোদেলার।কয়েক মাস পরেই ডিভোর্স!কিন্তু এতে তো ওর খুশি হওয়ার কথা।এত খারাপ লাগছে কেন ওর?অস্থির হয়ে লাগলো ও।এক পর্যায়ে উঠে পায়চারি করতে লাগলো।আবার বেডের কাছে ঘেষে বসে ওর হাত মুঠিতে নিলো।জানে না ও কেন এত অস্থির লাগছে।কিন্তু ওর ভালো লাগছে না।হুট করেই কেঁদে উঠলো ও।এমন ব্যাকুলতা কিসের ?অজানা ওর!ওইভাবেই ঘুমিয়ে পড়ল।

সকাল হতে নিজের হাত ঘুমন্ত রোদেলার হাতের মুঠিতে দেখে অবাক হলো।পাশেই জল পট্টি দেখে বুঝল ওর জ্বর এসেছিল।আর রোদেলা জল পট্টি দিয়েছে।এটা নতুন না!প্রত্যেক জ্বরেই রোদেলাই খেয়াল রাখে।কিন্তু আজকের টা ভিন্ন!এতদিন যে ছিল,সে ওর চাচাতো বোন।আর এখন যে সে ওর স্ত্রী!রোদ্দুর খেয়াল করতেই দেখলো রোদেলার মুখ কেমন মলিন হয়ে আছে!নিজেকে ছাড়িয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।তারপর উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।রুমে আসতেই দেখলো রোদেলা নিজের জায়গায় নেই।একটু খুঁজতেই পেলো রোদেলাকে,বেলকনিতে উদাস মনে সমুদ্র দেখছে।

“রোদ!”

রোদেলা নিরুত্তর।রোদ্দুর গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালো।

“কি হয়েছে তোর?”

“জানি না,কিছু ভালো লাগছে না!”

“ঘুরতে যাবি?”

“তুই অসুস্থ রেস্ট নে!”

“আরে ছাড় তো, চল নিচে যাই”

“ভাল্লাগছে না!”

রোদ্দুর এবার অবাক,রোদেলার হুট করে কি হলো বুঝলো না।ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গালে হাত রেখে বলল,”কি হয়েছে বল আমায়?”

“জানি না কিছু আমি,কেমন একটা অস্থির লাগছে।মনে হচ্ছে সব চেয়ে অসহায় আমি।কেনো ? তা একদম অজানা!”

রোদ্দুর আর কিছু বলল না,ওকে টেনে নিয়ে নিচে চলে গেলো।নাস্তা করে বেশ অনেক্ষণ ঘুরল।রোদেলার মুড ও ভালো হয়েছে।এভাবেই ঝগড়া খুনসুটিতে কেঁটে গেলো পুরো সাতটা দিন!আজ ওরা বাড়ি ফিরে এসেছে।বেল বাজাতেই কেউ একজন ঝড়ের গতিতে দরজা খুলে রোদ্দুর কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।রোদেলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।রোদ্দুর অস্ফুট স্বরে বলল,”রুবি?”

রোদেলা দাঁত কির মির করে বললো,”হাজির দা গ্রেট লু’চু বুবি!”

#চলবে