#রঙতুলির_ক্যানভাস
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_০৫
“একজন বিবাহিত পুরুষকে এভাবে জড়িয়ে ধরার মানে কি রুবি?” শক্ত কণ্ঠে বললো নোভা!
রোদ্দুর আপ্রাণ চেষ্টা করে রুবি কে নিজের কাছে থেকে সরালো।রুবি নোভার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,”দেখো না রোদ্দুর,আজকে এ বাড়িতে বেড়াতে এসেছি আর সবাই বলে রোদেলা আর তোমার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে!এরকম মশকরার মানে হয়?তোমাদের সম্পর্ক তো সা’পে নেউ’লের!যদিও তুমি সা’প ,নে’উল কোনোটাই নও!”
রোদেলা ভ্রু কুঁচকে বললো,”এক্সকিউজ মি!তুমি কি আমাকে কিছু মিন করছো?”
রুবি বিরক্তির চোখে তাকালো।
“তোমার সাথে কথা বলছি কি আমি?”
রোদেলা রাগ সংবরণ করে বললো,”আমার জামাইকে বলা মানেই আমাকে বলা!”
“তোমার জামাই মানে?রোদ্দুর ও কি বলছে এসব?”
রোদেলা বাঁকা হেসে রোদ্দুরের বাহু জড়িয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,”মিট মি অ্যান্ড মাই হাজবেন্ড রোদ্দুর!”
রুবি অবাক হয়ে তাকালো।
রোদেলা হামি তুলে বললো,”দেখি সর তো, হানিমুন ট্রিপে খুব একটা ঘুম হয়নি!এখন একটু ভিতরে গিয়ে ঘুমাবো!”
নোভা আর রোদ্দুর ওদের আড়ালে হাসছে। মুমেন্ট টা যথেষ্ট মজার।
রোদেলা রুবিকে সরিয়ে রোদ্দুর কে টেনে উপরে নিয়ে গেলো।রুমে গিয়ে দুইজন দরজা বন্ধ করে দিল।
নোভা গলা ঝেড়ে রুবিকে বললো,”ওদের ডিস্টার্ব করো না।অনেক ক্লান্ত ওরা!ওকে?”
রুবি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।ওদিকে উপরে রোদেলা রোদ্দুর পেট চেপে হাসছে।রুবির রিয়াকশন দেখার মত ছিল।
“ইয়ার,তুই পারিস ও!বেচারি কেমনে চুপসে গেলো।”
“এই গায়ে পড়া মেয়েকে আমার একদম সহ্য হয় না।আর দেখিস না কথায় কোথায় কেমন ঢং করে,লাইক – ‘ ভাভু খাইসো, ঠুমি না খেলে হামিও খাবো না ‘ নেকা ষষ্ঠী”
রোদ্দুর রোদেলার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে আরো হাসতে লাগলো।
“ওরে আমারও পছন্দ না,ভাবছি তোরে ডিভোর্স দিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারি আরেকটা বিয়া করমু!”
মুহূর্তেই রোদেলার হাসি থেমে গেলো।আবারও অস্থির লাগছে ওর। ও কেন পারছে না খুশি হতে!নিজেকে সামনে ঠাট্টার সুরে বলল,”যারেই বিয়ে করিস,এই রোদেলার মত পাবি না!রুবিরেই পাবি!”
“তুই কি এক পিস নাকি!”
“ইয়াপ”
“ইহ ঢং”
“বাড়ির সবাইকে কিভাবে মানাবি?”
রোদ্দুর এবার সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বসলো।
“দেখ ওরা পারে না আমাদের এভাবে জোর করে আটকে রাখতে,একজন পারফেক্ট পার্টনার সেই ই হয় যে অপরজনকে বুঝবে!সেখানে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন!তাই তাদের মানতেই হবে!থাক তুই,ফ্রেশ হয়ে আসি!”
রোদেলা ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো,”আমি কি তোকে বুঝি না রোদ্দুর?”
_______
মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেসিনের আয়নায় তাকালো ও,নিজের কথাটা নিজেই উপলব্ধি করলো।”একে অপরকে বুঝা” এই কথাটা ওর কানে বার বার বাজছে।রোদ ছাড়া ওকে আর কেউ ভালো বুঝে কি?
______
“এটা কি মামা?তুমি মাকে বললেও না ওদের বিয়ের কথা?” বেশ জোরেই করিম সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো রুবি।
“বিয়েটা হুট করেই দেয়া,তাই বলা হয় নি রে মা!”
“তাই বলে একবার জানাবেও না?”
রোদেলা আর রোদ্দুর তখন নিচে নামছিল।
“ইস চাচ্চু,বেচারি বিয়ের রোস্ট পোলাও খুব মিস করছে! চম্পা!ওই চম্পা,আব্বে ওই ময়দা আর্টিস্ট!”
চম্পা তরী ঘড়ি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
“জি আপামুনি?”
“আজকে রাতের জন্য পোলাও রোস্ট রাধিস তো!”
“কেন আপা?”
“রুবি খাবে!”
“ও আচ্ছা বুবী মেম সাহেব খাইবো?”
রুবি রেগে বললো,”স্টুপিড,ওটা রুবি!”
“আহা রাগো কেনো মিস বুবি!থুক্কু রুবি?”
বলেই দাত কেলালো!
“মামা দেখছো?”
রফিক রোদেলাকে ধমক দিলেন!
“আহ,রোদ কি করছিস?”
“আমার কাজ!”
“রোদ!”
নোভা মাঝ থেকে বলে উঠলো,”তুমি রোদেলা আর রোদ্দুরের বোনের মতো!আমারও!একটু মজা করতে পারবে না বুঝি?”
রুবি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো।
নোভা রোদেলার কাছে গিয়ে বলল,”এই মেয়ে বেশি বেড়েছে!টাইট করতে হবে!”
রোদেলা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,”তাতো হবেই আপু!যেই না কাবলি,নাম তার ভেবলি!”
“এটার মানে কি?”
“জানি না,ছন্দ মিলালাম আরকি!”
বলেই দাত কেলালো!নোভা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।একে বোঝা ওর বড় দায়!
“আপু নাইট শো দেখবে?”
রোদ্দুর পাশ থেকে বলে উঠলো,”আমাকেও নিতে হবে!”
রোদেলা দাত কেলিয়ে বললো,”ফুল বাড়ি দেখবে এই শো!”
নোভা ফিসফিস করে বললো,”নাম কি শো এর,যে সবাই দেখবে?”
“লুচি দা বুবি”
রোদ্দুর আর নোভা একসাথে বলে উঠলো,”অ্যা?”
__________
রাতে মাথায় চাঁদর মুরো দিয়ে সিড়ির কাছে যাচ্ছে রুবি!ওর রুম নিচে!উদ্দেশ্য রোদ্দুরের রুম!সিড়ির কাছে যেতেই পিঠে ঝাড়ুর বারি পড়লো,আর চম্পার চিৎকার শুনতে পেলো।
“রোদ আফামুনি, চোর আইছে , চোর!সাহেব চোর আইছে!ধরো এরে!”
বলেই ঝাড়ু দিয়ে মারছে!আর চোর চোর বলে চেচাচ্ছে।
ইতোমধ্যে সবাই এসে গেছে।নোভা গিয়ে লাইট জ্বালালো!
রুবি ফেসেছে,না পারছে বলতে,না পারছে সইতে।এখন মুখ থেকে চাঁদর সরালে সবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।
রোদেলা মিটমিট করে হাসছে!
“সাহেব দেহেন চো’র ধরছি!মোরে কিন্তু বকশিস দিতে হইবো!”
“আগে এর মুখের কাপড় সরা চম্পা!”
করিম সাহেবের কথায় চম্পা চাঁদর সরালো।
“একি, বুবি মেম সাহেব আপনে?”
রুবি কি বলবে বুঝছে না!
“ছি!নিজের মামার বাসায় আপনি চু’রি করেন?”
রোদেলা এবার জোড়ে হাসতে নিলেই রোদ্দুর ওর মুখ চেপে ধরে ।রোদেলার পিঠ রোদ্দুরের বুকে ঠেকানো!তাও ও হাসছে।
“এসব কি মা?তুমি এভাবে চো’রের মত ঘুরছ কেনো?”
“ইয়ে মানে পানি খেতে এসেছিলাম!”
“এ, মিছা কথা! আপনে সিড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছিলেন!”
রুবি দাঁত কিড়মিড় করে তাকালো!
সবাই জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
“আসলে ,ঘুম আসছে না!তাই ভাবলাম ছাঁদে গিয়ে ঘুরে আসি!”
নোভা ফোরণ কেঁটে বললো,”তুমি জানো না,রাতে ছাদ তালা দেয়া থাকে??”
রুবি আমতা আমতা করে বলল,”আসলে খেয়াল ছিল না।”
“কইলেই হইলো,আপনে চু’রি করতেছিলেন তাই না?”
“চম্পা!”
করিম সাহেব ধমকে বললেন!রোদেলা এখনও হাসছে।রোদ্দুর ওর মুখ চেপে রাখা সত্বেও!
“সবাই যাও ঘুমাতে!”
রুবি চম্পার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,”রা’বিশ!”
তারপর নিজের রুমে চলে গেল।
রোদ্দুর রোদেলাকে টেনে রুমে নিয়ে এলো! নোভাও ওদের সাথে গেলো।
“এটা ছিল তোর নাইট শো?”
নোভার কথায় রোদেলা আবারও হাসলো।
“এ কখন থেকে এভাবেই হেসে যাচ্ছে আপু!”
“রোদ বল কিছু!”
“ওয়েট ওয়েট,হাসি টা থামাই!”
বলেই থামলো কিন্তু আবার ফিক করে হেসে দিল।
“লাফিং গ্যাস খাইছিস?”
বিরক্ত নিয়ে বললো রোদ্দুর!
“আচ্ছা শোন!”
ফ্ল্যাশব্যাক
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে!
“এই ময়দা আর্টিস্ট শোন!”
“জি রোদ আফামুনী, কন!”
“দেখ শুনেছি আমাদের এলাকায় নাকি চো’রের উৎপাত বাড়ছে!সেদিন মকবুল আংকেলের বাসায় চু’রি হয়েছে।তুই রাতে পাহারা দিস একটু!”
“আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আফামুণী!এই চম্পা থাকতে কেউ একটা জিনিস ও নিতে পারবো না!”
রোদ বাঁকা হাসলো,কারণ ও জানে কোন না কোন ভাবেই রুবি রোদ্দুরের কাছে আসতে চাইবে!তাই ভাবলো একটু মজা নেয়া যাক!
চম্পা কথা মত নিজের কাজ করে ঘুমাচ্ছিল।কিন্তু হুট করে ড্রয়িং রুমে কারোর পদধ্বনি শুনতে পেয়ে ঝাঁটা নিয়ে হাজির হলো।বাকি কাহিনী জানাই!
“এন্ড অফ ফ্ল্যাশব্যাক”
বলেই আরেক দফা হাসলো,বাট এবার একা না।নোভা আর রোদ্দুর ও যোগ দিল।
“সিরিয়াসলি,আমি এতটাও ভাবি নী! শেষ মেষ ঝাঁটার বারি?”
বলে আবারও হাসলো সবাই!
“গরমে যায় প্রাণ,
চম্পার ঝাঁটার দান!
চোরের বোঝা নিলো বুবি!
লুচি দ্যা রুবি বুবি!
আচ্ছা হে!”
তিনজন আরেক দফা হাসলো।বিনোদনে ভরপুর ভাই!
#চলবে…