রাজকন্যা হূরিয়া পর্ব-১৮+১৯+২০

0
189

#রাজকন্যা_হূরিয়া🌸🤍
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
[১৮]

রাজকুমারের রাজ্যে যুদ্ধ ঘোষনা হওয়ার পর সিরাজদি রাজ্য থেকে তার সাহায্যের জন্য সেনা পাঠানো হয় মোট আড়াই হাজার। আর তাদের মধ্যে যুদ্ধে জয়লাভ করে রাজ্যে ফিরে আসে মোট দু’হাজার আট শত আট জন। বাকি সেনারা নিখোঁজ। শোনা যায় এই যুদ্ধে বেশিরভাগ আহত হলেও কোনো সেনারই মৃত্যু হয়নি। তবে? তারা ফিরলো না কেন? কার হাতে বন্দী হলো? যুদ্ধের এতোগুলো দিন পেরিয়ে গেলো অথচ এই খবর রাজকন্যা জানেইনা। চাচাজান কিংবা মন্ত্রী মশাই কেউই তাকে এই খবর দেননি! এর পেছনে কার হাত আছে? চাচাজান? নাকি মন্ত্রী মশাই?

ঠাস করে এক চড় পড়লো রেদোয়ানের গালে। রেদোয়ান থতমত খেয়ে তাকালো চড় খেয়ে। অপমানে লজ্জায় মাথা নীচু হয়ে গেলো তার। ভেতরে রাগ হলেও দুঃসাহস হয়নি সরদারের চোখে চোখ রাখার।

“অধম! তোমার মতো মূর্খের উপর ভরসা করাই বোকামো হয়েছে আমার। আর ছোট রাজা.. আপনাকে দেখলে তো আমার রীতিমতো হাসি পায়। এতখানি বয়স বেড়ে গেলো কিন্তু বুদ্ধি? হাঁটুর গোড়ায়।”

চাচাজান ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকালেন আয়াসের দিকে। কিন্তু তাতে আয়াসের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নিজের ভাবনায় বিভোর। ঐ লোকটা যদি আর এক মুহুর্তও বেঁচে থাকতো, তবে নির্ঘাত রাজকন্যা আজ সবটা জেনে যেতো। আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের পর্দা ফাঁস হয়ে যেতো। এতদিনের সাজানো গোছানো পরিকল্পনায় মুহুর্তেই জল মিশে ঘোলা হয়ে যেতো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বন্দী ছাড়া পেলো কেমন করে? ওমন অবস্থা থেকে বের হলো কেমন করে?

“শোনো আয়াস, তুমি এবং তোমার আব্বাজান রাজকন্যাকে যতই দুর্বল আর বাচ্চা মেয়ে ভাবোনা কেন? ও কিন্তু তোমাদের চেয়েও একধাপ উপরে চলে। তাই বলছি, তোমরা যে পরিকল্পনায় এগোচ্ছে তা ওর সামনে ফিকে পড়তে এক দন্ডও সময় লাগবে না। রাজকন্যা সাধারণ নয় আয়াস। ওকে সাধারণ ভেবে ভুল করিও না।”

আয়াসের মস্তিষ্কে চিনচিনে এক ব্যাথার আবির্ভাব হয়। সে জানে রাজকন্যা সাধারণ নয়। রাজকন্যা সাধারণ হতেই পারেনা। এসব নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। সে ভাবছে অন্যকিছু। যার ভয় দিনে দিনে তাকে গ্রাস করে গিলে নিচ্ছে। একটু একটু করে গিলে নিচ্ছে।

“ঐ জ্বীনটা এখনও বেঁচে আছে?”

আয়াস জিজ্ঞেস করে। রেদোয়ান মাথা নাড়ে। মুখে বলে,

“হ্যাঁ সরদার। ওকে বাঁচিয়ে রেখেছি। ওকে বাঁচিয়ে রাখলে আমাদের অনেক কাজে আসতে পারে।”

“হু, এক কাজ করো, ওকে মুক্ত করো।”

আয়াসের বানীতে চমকে ওঠে রেদোয়ান। ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,

“সরদার এ আপনি কি বলছেন? ওকে মুক্ত করলে যে আমাদের খেল এখানেই খতম। ওকে মুক্ত করলে ও নিশ্চয়ই রাজকন্যার কাছে গিয়ে সবটা প্রকাশ করে দেবে। ত্ তারপর কি হবে ভাবতে পারছেন সরদার।”

“এসব ভাবনা আমার! তোমাকে যা বলেছি তাই করো।”

রেদোয়ান ঢোক গেলে। রাজকন্যার হাতে মৃত্যুর দৃশ্য চোখের সামনে ভাসতেই শরীর কাঁপে তার। সরদার যে পাগল হয়ে গেছে রাজকন্যার ভালোবাসায়। আর সেটা সে বেশ বুঝতে পারছে। কিন্তু নাকচ করেও কি হবে? কোনো লাভ নেই তো। এখানে না করলে সরদারের হাতে মরতো হবে আর ওখানে জ্বীনকে মুক্ত করলে রাজকন্যার হাতে মরতে হবে। এ যে শাঁখের করাতে গলা দেওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।

“আয়াস,এই ভুল করিওনা পুত্র। রাজকন্যার জ্বীনকে যখন বন্দী করেছো হয় ওকে মেরে ফেলো নয়তো ওকে এভাবেই চির বন্দী রাখো। কেননা,রাজকন্যা যদি একবার জানতে পারে ওর জ্বীনের সাথে এই অন্যায় কে বা কারা করেছে তবে নিশ্চিন্তে থাকো তোমরা, তোমাদের কাল এলো বলে।”

আয়াস মলিন হাসে। মনেমনে কিছু একটা ভাবে। অতঃপর বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে গলা পরিস্কার করে গম্ভীর গলায় বলে,

“মনোযোগ দিয়ে শোনো রেদোয়ান, জ্বীনটাকে আহত অবস্থায় তুলে নিয়ে যাবে নগর রাজ্যে। ঠিক রাজ্যের মাঝপথে ওকে ফেলে দিয়ে আসবে। যেন খুব সহজেই লোকের নজরে পড়তে পারে। তবে হ্যাঁ, ওকে দেখার জন্য একমাত্র ব্যক্তি যেন রাজকন্যাই হয়। বাকি যত পথিক থাকবে সবাইকে সরিয়ে দিবে ওখান থেকে। রাজকন্যা এতক্ষণে নিশ্চয়ই নগর রাজ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে। ঐ সেনার মৃত্যু হওয়ার পর রাজকন্যা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। বাকি নিখোঁজ সেনাদের খোঁজে সে নগর রাজ্যে যাবে। আর রাজকন্যা যেন রাজ্য অব্দি পৌঁছাতে না পারে তারই একটা বড় বাঁধা হবে তার জ্বীন। রাজকন্যা ওকে এমতাবস্থায় দেখে নিশ্চয়ই রাজ্যের কথা ভুলে ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। স্বাভাবিক ভাবেই জ্বীনের চিকিৎসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। আর এই সুযোগে আমরা বাকি প্রমানগুলোও মুছে ফেলতে পারবো।”

আয়াসের মুখে কথা গুলো শুনে ধরে প্রাণ ফিরে এলো রেদোয়ানের। একই সঙ্গে চাচাজানেরও। দু’জনেই একসাথে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চাচাজান নিশ্চিন্ত মনে বললেন,

“যাক, ভুল মানুষের উপর বিশ্বাস রাখিনি তবে।”

আয়াস বাঁকা হাসলো। এক ভ্রু উঁচিয়ে মনেমনে ভাবলো কিছু একটা। অতঃপর বলল,

“সাপও মরলো আর লাঠিও ভাঙল না। আয়াসকে ধরা এতো সহজ নয় রাজকন্যা। এতো সহজ নয়।”

একটু সামনেই জিন্নাতের আহত শরীরটা লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে দাঁত খিঁচিয়ে চিঁহি চিঁহি করে দাঁড়িয়ে পড়লো সুফি। রাজকন্যা শক্ত হাতে সুফিকে ধরে নিজেকে সামলালো। খানিক বিরক্ত স্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

“সুফি এসব কি অভদ্রতা। চলতে চলতে হঠাৎ থেমে গেলে কেন?”

সুফি জবাবে আবারও চিঁহি চিঁহি করে ডেকে উঠলো। তাতে রাজকন্যা আরও বিরক্ত হলো। এই মুহুর্তে সুফির সঙ্গে আলাপচারিতা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার। ভোর থেকে সবটা শোনার পর সে আর এক দন্ডও বসে থাকতে পারছিলো না। তাই বাধ্য হয়েই নগর রাজ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। যত রহস্য সব এই রাজ্যেই লুকিয়ে আছে। আর আজ সে সব রহস্যের উদঘাটন করবেই করবে। কিন্তু মাঝপথে এই সুফির আবার কি হলো?

সুফির পিঠ থেকে নেমে পড়লো রাজকন্যা। কোনো সমস্যা তো নিশ্চয়ই হয়েছে, নয়তো সুফি এমন করার ঘোড়া নয়।

“সুফি? কি হয়েছে তোমার! কিছু বলতে চাও?”

রাজকন্যার প্রশ্নে এবার আর ডাকলো না সুফি। রাজকন্যাকে রেখেই ছুট্টে গেলো সামনের দিকে। রাজকন্যা সুফির কান্ড দেখে হকচকিয়ে গেলো। হতবিহ্বল হয়ে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে পিছু ডাকতে নিলেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো সে। তার কন্ঠনালি থমকে গেলো এক মুহুর্তেরও অনেক পূর্বে। বুকের ভেতরটা কেমন চিৎকার পেড়ে উঠলো জিন্নাতকে দেখে। কেবল জিন্নাতকে দেখে নয়,তার এমন মর্মান্তিক অবস্থা দেখে। রাজকন্যা পারলো না নিশ্চুপ থাকতে। গলা ফাটিয়ে জিন্নাত বলে হাহাকার তুললো। পাগলের মতো ছুট্টে গেলো জিন্নাতের বরফ শীতল শরীরটার কাছে। ও কি বেঁচে আছে? মনটা প্রশ্ন করল! নিজের প্রশ্ন নিজেই কুঁকড়ে পড়লো রাজকন্যা। না! জিন্নাতের কিছু হতে পারেনা।

“জিন্নাত! এই জিন্নাত.. কি হয়েছে তোমার? চোখ খোলো জিন্নাত? আ্ আমি.. আমি তোমার রাজকন্যে.. এই যে দেখো আমায়? আমি চলে এসেছি তোমার কাছে। তোমার এই অবস্থা কি হলো? ও জিন্নাত.. দয়াকরে চোখ খোলো..”

ভুবন কাঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রাজকন্যা। বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরলো জিন্নাতের বরফ শীতল শরীরটা। কে করছে তার এতো বড় সর্বনাশ? তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোকে কেন এতো পীড়া সহ্য করতে হচ্ছে? প্রথমে আব্বাজান তারপর আম্মাজান আর আজ? আজ জিন্নাতকেও ওরা ছাড় দিলো না।

“ইয়া খোদা.. দয়াকরুন আমার উপর! দয়াকরুন আমার জিন্নাতের উপর। ওকে বাঁচিয়ে দিন প্রভু! ওকে বাঁচিয়ে দিন! জিন্নাতের কিছু হয়ে গেলে আমি নিঃশ্ব হয়ে যাবো প্রভু। আমাকে দয়াকরুন.. জিন্নাতকে আমার থেকে কেঁড়ে নিবেন না। দয়াকরুন!”

কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করলো রাজকন্যা। তার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। জিন্নাত যে নিঃশ্বাস অব্দি নিচ্ছেনা। জিন্নাতের মৃত্যু রাজকন্যা সহ্য করতে পারবেনা। একটু একটু করে যত্ন করে এই চেহারা সে দিয়েছিলো জিন্নাতকে। সেই চেহারার যে সবটাই ঝলছে গেছে। শরীরের সব মাংস নরম হয়ে গেছে। একটু জোরে টান লাগলেই সবটা খুলে আসবে যেন। জিন্নাতের এমন মর্মান্তিক অবস্থা সহ্য করতে পারছেনা রাজকন্যা।

আর বসে থাকা যাবেনা। জিন্নাতের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এতদূরে এসে কি করে জিন্নাতের চিকিৎসা করবে? তাকে রাজ্যে ফিরতে হলেও যে কম করে দুই প্রহর লেগে যাবে। ততক্ষণে জিন্নাত বাঁচবে কি না সন্দেহ। জিন্নাতকে নিয়ে আর কোনো রকম ঝুঁকি নিতে পারবেনা সে। যা করার এখানেই করতে হবে। রাজকন্যা পাঁজা কোলে তুলে নিলো জিন্নাতকে। জিন্নাতের শরীর নেতিয়ে এসেছে। অনেকটা কাপড়ের মতো। যেন ভাজ করে রেখে দেওয়া যাবে। আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই। আছে কেবল রাশিরাশি জঙ্গল। রাজকন্যা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই জঙ্গলই আজ তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হবে। জিন্নাতকে নিয়ে সে জঙ্গলের ভেতর রওনা হলো। সঙ্গে সুফিও যাচ্ছে। সুফি জানে এই মুহুর্তে তাকে তার রাজকন্যার পিছু নিয়েই থাকতে হবে। তাই আদেশ পাওয়ার পূর্বেই সে পিছু নিলো মালিকের। রাজকন্যা গভীর জঙ্গলে ঢুকে গেছে। এখান থেকে বাইরেটা পরিমাপ করা অসম্ভব প্রায়। ভেতরটা বেশ অন্ধকার। রাজকন্যা মাটির বুকে শুয়ে দিলো জিন্নাতকে। অতঃপর জিন্নাতের পাশে বসলো। কিছুক্ষন দৃষ্টি বোলালে আহত জিন্নাতের দিকে। ফের চোখ বন্ধ করে অনবরত সূরা পড়তে আরম্ভ করলো। মুলত জ্বীনদের আহবান করছে সে। খানিকটা সময় পেরোতে আশেপাশে ভরে গেলো শতাধিক জ্বীনে। রাজকন্যা চোখ মেলে দেখলো তাদের। তারা সালাম দিলো রাজকন্যাকে। রাজকন্যা হাসিমুখে সালামের উত্তর দিয়ে অনুনয়ী সুরে বলল,

“আমি খুব বিপদে পড়েছি। আমার আপনাদের সাহায্যের প্রয়োজন।”

একজন চিকন স্বরে বলল,

“আদেশ করুন রাজকন্যা হূরিয়া। আমরা আপনাকে সাহায্য করবো।”

রাজকন্যা অশ্রুসিক্ত নয়নে জিন্নাতকে দেখলো একবার। অতঃপর কান্না জড়ানো গলায় বলল,

“আপনারা আমার জিন্নাতকে নিয়ে যান। ওকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিন। ওকে সুস্থ করে ফিরিয়ে দিন আমার নিকটে। আমি জানি ওর চিকিৎসা আমার এই জগতে নেই। নয়তো আমি ওকে এক্ষনি নিয়ে যেতাম। ওকে সুস্থ করতে হলে আপনাদের হেফাজতেই দিতে হবে। তাই আপনাদের ডাকা হয়েছে। আমি কখনও কারোর কাছে হাত জোর করে কিছু চায়নি। আজ চাচ্ছি। দয়াকরে আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না আপনারা।”

“কিন্তু রাজকন্যা! ও যে আপনার পালিত। আর মনুষ্য জগতের পালিত জ্বীনকে আমরা কখনোই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারিনা। এটা আমাদের নিয়মের বাইরে।”

রাজকন্যা আহত হলো। আবারও হাত জোর করলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“দয়াকরুন আপনারা। আমি আপনাদের কাছে হাত জোর করছি। ওকে চিকিৎসা দিন। নয়তো ও মরে যাবে!”

“ক্ষমা করবেন রাজকন্যা। এ অসম্ভব। আপনি আমাদের নিকট অন্যকিছু…”

“না। আমি আমার জিন্নাতকে ছাড়া আর কিছু চাইনা। আমি আমার জিন্নাতের প্রান ভিক্ষা চাইছি। আপনারা আমাকে এটুকু দয়াকরুন!”

রাজকন্যার অশ্রুসিক্ত নয়নে মন গলে একজনের। সে বাকিদের থামিয়ে দিয়ে বলে,

“ঠিকাছে রাজকন্যা। আমরা নিয়ে যাবো জিন্নাতকে। তবে একটা শর্তে?”

রাজকন্যার দম আঁটকে আসে আনন্দে। সে আনন্দে হৈহৈ করে উঠে বলে,

“হ্ হ্যাঁ হ্যাঁ! ব্ বলুন না কি শর্ত?”

“আমরা আমাদের নিয়মের বাইরে এই জ্বীনকে নিয়ে যাচ্ছি। এতে আমাদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই আমি চাই আমরা যদি কখনও সেই ক্ষতিপূরণের দাবী হিসেবে এই জ্বীনকে বরাবরের নিয়ে যেতে চাই তবে আপনি আমাদের বাঁধা দিতে পারবেন না। আপনাকে হাসি মুখে ওকে আমাদের সঙ্গে বিদায় দিতে হবে।”

“আ্ আমি রাজি। আমি ওর জীবনের বদলে সব কিছু করতে রাজি। আপনারা দয়াকরে ওকে নিয়ে যান। ওকে বাঁচিয়ে তুলুন।”

“যথাআজ্ঞা রাজকন্যা।”

সকল জ্বীন একসাথে জয়ধ্বনি করে জিন্নাতকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। রাজকন্যা চোখের জল ছেড়ে দিয়ে মোনাজাত ধরলো।

“হে প্রভু! জিন্নাতকে আপনি বাঁচিয়ে দিন। দয়াকরে বাঁচিয়ে দিন।”

ফের হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছলো। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে উঠে বসলো সুফির পিঠে। এখন যাত্রা শুরু হবে নগর রাজ্যে। রাজকন্যা সুফির পিঠে দু’বার চাপড় দিয়ে বলল,

“চলো সুফি। রহস্য খুঁজতে যাওয়া যাক।”

সুফি দাঁত খিঁচিয়ে চিঁহি চিঁহি করে ডেকে বাতাসের গতিতে ছুটলো নগর রাজ্যের পথে। রাজকন্যা শক্ত হাতে ধরলো হাতের বাঁধনটা।

#চলবে_____

#রাজকন্যা_হূরিয়া🍁🌸
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
[১৯]

রাজকন্যার তলোয়ার আরহামের ঘাড়ে। ইচ্ছে করলে এক্ষনি তার মাথাটা আলাদা করে দিতে পারে রাজকন্যা। কিন্তু তাতে কি হবে? রহস্য কি কমবে? কবিরাজ মশাই কি ফিরে আসবে? আরোভি কি ফিরে আসবে? আসবেনা! কেউ ফিরে আসবে না। বরং রহস্যের বিশাল সমুদ্র আরেকটু দীর্ঘ হবে। আর সেই সমুদ্রের জল আরেকটু ঘোলা হবে।

“র্ রাজকন্যা…”

“কে তুমি? কি তোমার পরিচয়?”

খুবই শান্ত অথচ জোড়ালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করে রাজকন্যা। আহরাম মৃত্যু ভয়ে ঢোক গেলে। যদিও সে জানেনা কি তার অপরাধ তবুও রাজকন্যার ধারালো তলোয়ারের নীচে যখন গর্দান এসে পড়েছে তখন সে নিশ্চয়ই কিছু করেছে। আর যেটা পাকাপোক্ত ভাবে সনাক্ত করে বের করে ফেলেছে রাজকন্যা। রাজকন্যার চারপাশে প্রহরীরা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। রাজকন্যার আদেশ পাওয়া মাত্রই প্রহার করবে আরহামের উপর।

“রাজকন্যা আ্ আমি কিছু করিনি! দয়াকরে আমাকে মারবেন না।”

ভয়ে শরীর হাত পা কাঁপতে থাকে অনবরত। সেই সঙ্গে গলার আওয়াজও কিছুটা ডেবে ডেবে আসতে লাগলো। রাজকন্যা হঠাৎ হাসলো। কেমন রহস্যময়ী হাসি। যা দেখতেই আহরামের প্রাণপাখীটা হাঁকডাক পেড়ে উঠলো ভেতর থেকে। এক্ষনি সে ছুটি চায় যেন। আরহাম ঢোক গেলে। আকুতি মিনতি করতে করতে পূনরায় বলে,

“কসম আল্লাহর! আমাকে মারবেন না রাজকন্যা। আমি সত্যি কিছু করিনি।”

“সেনাপতি মশাই? নিয়ে আসুন ওকে।”

রাজকন্যা ঝরঝরে কন্ঠে ডেকে উঠলো কাউকে একটা। আরহাম চেনেনা এই ব্যক্তিকে। দেখেনি আগে কখনও। সে তো কেবল মহামন্ত্রীর কথাই জানতো। উনি আবার কে?

সেনাপতি আতাউল ভেতরে প্রবেশ করে। তার পেছন পেছন ভেতরে প্রবেশ করে আরও দু’জন প্রহরী। তবে তারা একা নয়। তাদের সঙ্গে আরও একজন আছে। যাকে দেখতেই চমকে ওঠে আরহাম। ভয়, বিস্ময় সবটা মিলিয়ে মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ওকে রাজকন্যা কি করে উদ্ধার করলো? এ যে অসম্ভব।

আরহামের ঠিক দু’হাত সামনেই দাঁড়িয়ে আছে হুবহু তারই মতো দেখতে এক ব্যক্তি। তার অবস্থা শোচনীয়। কা’টা’ছেঁ’ড়া শরীর, র’ক্তা’ক্ত, বি’ধ্ব’স্ত!

আরহাম ভয়ে পিছিয়ে পড়ে দু’কদম। মুখ থেকে অস্পষ্ট স্বরে বের হয় ‘এ অসম্ভব’। কেউ না শুনলেও আরহামের এই অস্পষ্ট বলা কথাটা শুনতে পায় রাজকন্যা। এক ঠোঁটে হাসে রাজকন্যা। যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার হাসি। অতঃপর শীতল গলায় বলে,

“চিনতে পারছো আরহাম? ভালো করে দেখো তাকিয়ে। ঠিক তোমার মতোই দেখতে তাইনা?”

আরহাম কেঁপে ওঠে আরেকদফা। ভয়ে,দুঃশ্চিন্তায় তার শরীরেও প্রতিটি শিরা-উপশিরায় র’ক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। দম আঁটকে আসে ক্ষণকালেই।

“সন্দেহ তো আমার সেদিনই হয়েছিলো, যেদিন তুমি বলেছিলো তোমার আব্বাজানের শরীর ভালো নয় তাই তোমাকে যেতে হয়েছিলো। অথচ, আরহামের আব্বাজানতো সেই যুদ্ধেই শহীদ হন যে যুদ্ধে নগর রাজ্যের রাজা শহীদ হয়েছিলেন। কি ভেবেছিলে? রানীমার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়ে চিরকালের মতো রানীমাকে পথ থেকে সরিয়ে দেবে? একের পর এক.. একের পর এক তোমার এই কুকর্মের মাশুল কত গুলো মানুষকে দিতে হয়েছে জানো? তুমি কবিরাজ মশাইকে খু’ন করলে, আরোভিকে খু’ন করলে, আর তারপর.. তারপর আমার রাজকুমারের উপর প্রহার করলে! যেন রাজকন্যার ধ্যান বেড়ে যায় তার রাজকুমারের উপর। আর আমি যেন অনায়াসে আমার দলবল নিয়ে এই রাজ্য গ্রাস করতে পারি। রাজ বংশের প্রত্যেকটা মানুষকে এভাবে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে আরামসে সবটা গ্রাস করতে পারি। (মৃদু হেসে) এতো সহজ নয়! রাজকন্যাকে হারানো এতো সহজ নয় আরহাম।”

রাজকন্যার অনর্গল বলে চলা কথা গুলো কাটার মতো বিঁধে গেলো আরহামের শরীরে। রাজকন্যা এতো কিছু জেনে গেছে আর সে? একটু আচ অব্দি পেলো না। শেষ অব্দি বাস্তবের আরহামকেই খুঁজে নিয়ে এলো এই তুচ্ছ মেয়েটা।

“এবার বলো কে তুমি? নয়তো এক কো’পে তোমার..”

আক্রোশ ভরা গলায় চেঁচিয়ে ওঠে রাজকন্যা। আরহাম মৃত্যু ভয়ে চুপসে যায় একদম। উপায়ন্তর না পেয়ে কাঁপতে কাঁপতে পা জড়িয়ে ধরে রাজকন্যার। বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করে বলে,

“র্ রাজকন্যা আপনি রুষ্ট হবেন না। দয়াকরে আমাকে সবটা বলার সুযোগ দিন? আ্ আমি সবটা বলতে চাই রাজকন্যা।”

পাখি তবে ধরা দিলো খাঁচায়। রাজকন্যা সন্তর্পণে তলোয়ারটা নামিয়ে নিলো। ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“সবটা স্বীকার করার জন্য কেবল একটাই সুযোগ পাবে তুমি। ফের কোনোরকম বোকামিতে জড়িয়োনা নিজেকে।”

আরহাম কম্পিত কণ্ঠে আওড়ায়,

“আমি বিশ্বাস করে নিয়েছি রাজকন্যা, আমার জীবনের আজই শেষ দিন। তাই আজ অন্তত মিথ্যে বলবোনা।”

“হু। বলো? কি বলতে চাও?”

আরহাম একবার ঢোক গেলে। অতঃপর মুখ উঁচিয়ে একবার তাকায় তার হুবহু চেহারার অধিকারী ব্যক্তিটির দিকে। এ যে আর কেউ নয় তারই জমজ ভাই। খুব ছোট বেলা থেকেই ও আরহামকে অপছন্দ করতো। এর মূখ্য কারন ছিলো ওর সব বিষয়ের পারদর্শিতা। যেকোনো পরীক্ষায় আহরাম থাকতো সবার প্রথমে। আর তারপর সে। স্বাভাবিক ভাবেই আব্বাজান আরহামকে প্রশংসায় প্রশংসায় ভরিয়ে তুলতেন। আর তার ভাগ্যে? অপমান আর লাঞ্ছনা ছাড়া কিছুই জোটেনি। এসব অতি তুচ্ছ কারনেই সে ঘর ছেড়েছিলো। তখন বয়স আর কতই বা হবে? ১০ ১২? হ্যাঁ অনেকটা অমনই। জেদ করে ঘর ছাড়ে ঠিকই তবে তার সামনের পরিকল্পনা ছিলো নিতান্তই শূন্য। আগে কি করবে, কোথায় থাকবে,কার কাছে থাকবে.. এসব সে জানতো না। ঠিক তখনই তার দেখা হয় ডাকাতদের ওস্তাদজী সাথে।

“আমি রেদোয়ান। আরহামের জমজ ভাই।”

এক লাইন বলে থামে রেদোয়ান। ঢোক গেলে। নিজেকে ধাতস্থ করে। অতঃপর আবারও বলতে শুরু করে,

“এই রাজ্য আমার লক্ষ্য। আজ থেকে নয় প্রায় পনেরো বছর আগে থেকে। আর আমার এই লক্ষ স্থীর করে দিয়েছিলো আমার ওস্তাদজী। তিনি একজন ডাকাত সরদার ছিলেন। সরদার থেকে পদবী মুছে উনি ওস্তাদজী হন। আমাদের সবার গুরু। প্রায় অনেক দিন পূর্বে ওস্তাদজী আমাকে বলেন আমাকে নগর রাজ্যের রাজপুত্র সাদ্দাতের বন্ধু আরহাম সেজে সিরাজদি রাজ্যে যেতে হবে। সার্বক্ষণিক রাজকুমারের সঙ্গে না থাকলেও রাজকন্যার প্রতি মুহুর্তের খবর তার চাই। রাজকন্যা কখন কি করবে, কখন কোথায় যাবে,কখন কার সাথে কথা বলবে? একদম গুনেগুনে খবর দিতে হবে। আমি তাই করলাম। ওস্তাদজীর কথা মতো নিজের ভাইকে কাপুরুষের মতো বেধরাম মেরে বন্দী করে দিলাম নিজের রাজ্যের গুপ্ত-কারাগারে। কেউ জানতেও পারলোনা আরহামের জায়গায় রেদোয়ান চলে এসেছে। আমি হয়ে গেলাম আরহাম। রাজকুমারের প্রানপ্রিয় বন্ধু। চলে এলাম লক্ষকেন্দ্রে। আর পিছু নিতে শুরু করলাম আপনার। এই রাজ্যে কখন কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে সব খবর পৌঁছাতে লাগলাম ওস্তাদজীর কাছে। এমনকি আপনার রাজসিংহাসনে বসার খবরটাও আমিই দিয়েছিলাম। আর তাই ওস্তাদজী আপনাকে একেবারে খতম করতে সেদিন রজনীতেই গুপ্তচর পাঠিয়ে আপনার উপর আক্রমণ করায়। আর আমার এই পায়ের চোট কোনো পাহাড় থেকে পড়ে হয়নি। এই চোট হলো সেদিনের,যেদিন কালাপাহাড়িয়ার কারাগারে আপনি শেষ বারের গিয়েছিলেন কবিরাজ মশাইয়ের সাথে দেখা করতে। আর গিয়ে দেখলেন নৃশংস অবস্থায় মরে পরে আছে কবিরাজ মশাই। উনার এই দশা আমি এই নিজ হাতে করেছিলাম। আর পাহাড়ের পেছনে আপনি যাকে আঘাত করেছিলেন সে আর কেউ নয় আমিই ছিলাম। এই ক্ষতও সেটারই। আরোভিকেও আমিই মা’রি। যদি আরোভিকে সেদিন না মা’র’তা’ম তবে সেদিনই আমার শেষ দিন হতো। কেননা,আরোভি সবটাই জানতো। আর আপনি যদি ওকে ওর এই অবস্থার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেন তাহলে ও নিশ্চয়ই সবটা বলে দিতো আপনাকে। স্বাভাবিক ভাবেই ওও মুখিয়ে ছিলো আপনাকে সবটা বলার জন্য। তাই আরোভিকে খু’ন করি। হ্যাঁ, আপনার সন্দেহ হয়তো আমার উপরেও আসতে পারতো তাই মিথ্যে বলতে হঠাৎ বলেছিলাম আমি রাজ্যেই ছিলাম না। আব্বাজানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আর আপনার এসব বিষয়ে যেন কোনো সন্দেহই না হয় তার জন্য আমি রাজকুমারের উপর আক্রমণ করাই।”

কথা গুলো অনবরত বলে গেলো রেদোয়ান। রাজকন্যা রুষ্ট চাহনিতে তাকিয়ে রইলো রেদোয়ানের দিকে। ক্ষেপা কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

“এতো বড় স্পর্ধা তোমার! এর মাশুল তোমায় গুনতে হবে রেদোয়ান। সেই একই সঙ্গে মাশুল গুনবে তোমার পুরো ডাকাত বংশের। রাজকন্যা হূরিয়া কথা দিচ্ছে.. এতোবড় স্পর্ধাকারী ডাকাতের বংশকে উৎখাত করবো আমি। আমি।”

রাজকন্যার বজ্রকন্ঠে চারদেয়ালও যেন হুংকার ছাড়লো। প্রতিধ্বনি তুললো রাজকন্যার প্রতিটি বাক্যের। রাজকন্যা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।

“সেনাপতি মশাই, বন্দী করুন এই বিশ্বাসঘাতককে। আর বার্তা পাঠান ওস্তাদজীকে, রাজকন্যা হূরিয়ার তলোয়ারের নীচে গর্দান দিতে যেন প্রস্তুত থাকে সে। কেননা, তার মৃ/ত্যু তো অনিবার্য।


বার্তা পৌঁছে গেলো ডাকাতদের কুঠুরিতে। তবে তা ওস্তাদজীর হাতে পড়ার আগে আয়াসের হাতে পড়লো। সে পড়লো এই বার্তা। একবার নয়, বারবার পড়লো। পড়তে পড়তে ব্যুত হয়ে রইলো অদৃশ্য নেশায়। কি যেন জাদু আছে রাজকন্যার মাঝে। কেননা সে ঐদিকে তাকে মৃ’ত্যুর আহ্বান করছে আর সে স্ব-ইচ্ছায় মাথা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন পাগল হলে কি করে চলবে?

রাজকন্যা নগর রাজ্যে পৌঁছানোর পূর্বে তারা আসল লোককে ঠিকই সরিয়ে দিতে পেরেছিলো কিন্তু তাড়াহুড়ো আর সময়ের স্বল্পতায় আরহামকে সরাতে পারলো না। আর রাজকন্যা ঠিকই উদ্ধার করে ফেললো আরহামকে। এই কন্যা সত্যিই স্বাভাবিক নয়। কিছু তো একটা আছে তার মাঝে।

” সরদার? রেদোয়ানকে বন্দী করেছেন রাজকন্যা।”

বলে উঠলো লতিফ। আয়াস ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল,

“জানি।”

“তাকে উদ্ধার করা উচিৎ সরদার। নয়তো রাজকন্যা তাকে মেরে ফেলবে।”

“মারবে না লতিফ। দুশ্চিন্তা করিস না।”

লতিফের মনে ভয়। রাজকন্যার পরের স্বীকার হওয়ার। তার গলা কাঁপছে। কম্পিত স্বরেই পূনরায় বলল,

“আপনি এতো নিশ্চয়তা দিয়ে কি করে বলছেন সরদার?”

আয়াস হাসে। চমৎকার হাসি। রাজকন্যার পাঠানো বার্তায় আরেকবার নেশালো দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,

“কারন আমি তাকে চিনি।”

লতিফ ভয়ে গুটিয়ে যায়। সরে আসে আয়াসের পেছন থেকে। এই সরদার না এক্কেবারে পাগল। যদি এই ডাকাত কুঠুরিতে কখনও ধ্বংস আসে তবে নির্ঘাত এই পাগলের জন্যই আসবে।

আয়াস উঠে দাঁড়ায়। বার্তাটি খুব যত্ন করে রেখে দেয় পোশাকের ভাঁজে। মুচকি হাসতে হাসতে তলোয়ারটা হাতে উঠিয়ে লতিফকে উদ্দেশ্য করে বলে ,

“আব্বাজান ফিরলে বলবি তার প্রানপ্রিয় বন্ধু যেন আজ থেকে এই কুঠুরিতেই থাকে। ওখানটা তার জন্য নিরাপদ নয়। রাজকন্যা যখন তখন পৌঁছে যেতে পারে সেখানে। আর তাকে আঁটকানো এতো সহজ হবেনা। কারন সে জ্বীন নয়।”

“আজ্ঞে সরদার।”

নশতির করে বলে লতিফ। আয়াস বড়বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় রাজ্যের উদ্দেশ্যে।

#চলবে___

#রাজকন্যা_হূরিয়া🌸🍁
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
[২০]

রাজকুমার আহত দৃষ্টিতে একপলক দেখে নিলো আরহামকে। আরহামের শরীরের বিভিন্ন ক্ষ/ত জায়গাগুলোয় র’ক্ত জমাট বেঁধে আছে এখনও। কবিরাজ মশাই একটু একটু করে পরিষ্কার করছেন সবটা। কবিরাজ মশাইকে সাহায্য করছে আদিম। কক্ষে আরও উপস্থিত আছে তিনজন প্রহরী। তাদেরকে রাখা হয়েছে আরহামকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য। কেননা রাজকন্যা জানে,রেদোয়ানকে বন্দী করার পর ডাকাতের ওস্তাদ চুপ করে বসে থাকার লোক নয়। নিশ্চিয়ই কোনো হামলা হবে। আর সেটা হবে আরহামের উপর। কেননা,আরহাম আর রেদোয়ানকে আলাদা করে বাছাই করা খুব একটা সহজ নয়। বলা যায়, ওস্তাদজী আগের পরিকল্পনা মাফিক আরহামকে পূনরায় বন্দী করে রেদোয়ানকে পূনরায় পাঠিয়ে দিতে পারেন এখানে।

রাজকন্যার বুক চিঁড়ে তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। তার রাজকুমারের জন্য বেশি খারাপ লাগছে। রাজকুমার অনেক বড় আঘাত পেয়েছে আরহামের এমন অবস্থা দেখে। আর সবটা শোনার পরতো ভেঙেই পড়েছে। নিজের উপর রাগ হচ্ছে তার, কেমন বন্ধু হয়েছে সে? বন্ধুর এমন বিপদে সে তাকে বাঁচাতেই পারলোনা! এমনকি চিনতে পর্যন্ত পারলোনা। চরম রাগ আর ঘৃনা হচ্ছে নিজের উপর।

“রাজকুমার?”

রাজকন্যা হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে রাজকুমারের হাতটা শক্ত করে ধরলো। রাজকুমারের অক্ষিপটে স্থির দৃষ্টি রেখে ভরসা দিয়ে বলল,

“আরহাম এখন আমার হেফাজতে থাকবে। আর আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, ও অতিদ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। ঠিক আগের মতো।”

রাজকুমারের অসহায়ত্ব মুখটা অনেকটা স্বাভাবিক হলো। তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গুমোট বাঁধা গলায় বলল,

“আরহাম আমার প্রানপ্রিয় বন্ধু ছিল রাজকন্যা। হিসেব নেই ঠিক কতটা করেছে আরহাম আমার জন্য। কিন্তু আমি? ওর বিপদে ওর পাশে দাঁড়াতে পারলাম না। ভুলে গেলাম ওকে।”

“নিজেকে দোষারোপ করবেন না রাজকুমার। এ আপনার দোষ নয়। এ যে চোখের ধোঁকা। আমি নিজেই তো প্রথমে ওকে দেখে ভড়কে যাই। মাথাটা কেমন ফাঁকা হয়ে আসছিলো। যে আরহামকে আমি সুস্থ সবল অবস্থায় রাজপ্রাসাদে দেখে এলাম! সেই আরহামের এই অবস্থা কি করে হয়েছে? আর ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও এখানে আজ থেকে নয়,বরং অনেকদিন আগে থেকেই বন্দী হয়ে আছে।”

“আমি রেদোয়ানের সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই রাজকন্যা।”

রাজকন্যা আতংকিত নয়নে তাকায়। রাজকুমার তাকে ভরসা দেয়।

“চিন্তা করবেন না। ও কারাগারে বন্দী থেকে আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।”

রাজকন্যা নিজেকে সামলায়। চোখের পলক ঝাপটে দু’জন প্রহরী ডাকে।

“রাজকুমারকে নিয়ে যাও বন্দীর কাছে। যতক্ষণ উনি সেখানে থাকবেন তোমরাও সঙ্গে থেকো।”

“যথাআজ্ঞা রাজকন্যা।”

প্রহীরা নতশির করে রাজকন্যার হুকুম পালনে রাজকুমারকে নিয়ে চলে গেলো বন্দীর কাছে। রাজকন্যা তাদের যাওয়ার পানে কয়েক মুহুর্ত স্থীর দৃষ্টি রেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। অতঃপর আকস্মিক কিছু মনে পড়তেই পেছন মুড়ে তাকালো। আদিমের দিকে সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হঠাৎ ডাকলো তাকে।

“আদিম?”

আদিম পাশ ফিরে তাকালো রাজকন্যার দিকে।

“কিছু বলবে রাজকন্যা?”

“তোমাকে একটা কাজ করতে হবে?”

“আদেশ করো?”

“তোমার আব্বাজানকে বন্দী করতে হবে। আর তার পাহাড়ায় থাকবে স্বয়ং তুমি।”

আদিমের দৃষ্টি বিস্ময়ে ভরে ওঠে। প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে বলে,

“কি করেছেন আব্বাজান?”

“বিশ্বাসঘাতকতা!”

রাজকন্যা দৃড় কন্ঠে বলে ওঠে। আদিম চকিতে তাকিয়ে থাকে। তবে সে জানে, রাজকন্যা হয়তো ভুল বলেনি।

ফুপুআম্মা নামাজের পাটিতে বসে আছেন। এই অবেলায় কিসের নামাজ পড়ছেন তিনি জানেনা রাজকন্যা। তবুও অপেক্ষা করলো তার নামাজ শেষ হওয়ার। নামাজ শেষ হতেই ছুটে গেলো তার পানে। হাঁটু ভাজ করে লুটিয়ে বসলো ফুপুআম্মার সামনে। ফুপুআম্মা প্রথম দফায় চমকে উঠলেন। দোয়াটুকু পড়ে চটজলদি হাত রাখলেন রাজকন্যার মাথায়। ভীতিকর বিস্ময় নিয়ে আওড়ালেন,

“কি হয়েছে রাজকন্যার?”

রাজকন্যা ফুপুআম্মার হাতদুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। আকুল কন্ঠে বলে,

“ফুপুআম্মা, আজ আপনাকে নিজের স্বামীর সম্পর্কে আমাকে সবটা খুলে বলতে হবে! আমি খুব বিপদে পড়েছি ফুপুআম্মা!”

ফুপুআম্মা হকচকিয়ে উঠলেন। তার ভীতিকর বিস্ময়ে মোড়ানো চোখ জোড়ার রঙ বদলে গেলো ক্ষনকালেই। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সে চোখে ভর করলো আক্রোশের ছাপ। কেমন করে তাকালেন তিনি। রাজকন্যা শঙ্কিত মনে দেখলো ফুপুআম্মাকে। তিনি কেমন ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলছেন।

“কেন শুনবে তুমি ঐ অপ্রকৃতিস্থ মানবের ইতিহাস। ও যে মানবজাতের ছিলো না। ও যে.. ও যে ছিলো আস্ত এক দানব!”

রাজকন্যার বুক কাঁপে। ফুপুআম্মার হাত জোড়া আরেকটু শক্ত করে ধরে। ব্যাকুল হয়ে বলে,

“দয়াকরে আমাকে সবটা খুলে বলুন ফুপুআম্মা। আমায় যে সবটা জানতেই হবে।”

ফুপুআম্মা কেঁপে ওঠেন। অতীতকে ভুলে গিয়ে সে তো ভালোই ছিলো। কিন্তু আর বোধহয় ভালো থাকা হলো না। রাজকন্যার মুখ চেয়ে তিনি পারলেন না নীরব থাকতে। অতীতে ডুব দিয়ে পাতা উল্টালেন বিষাদসিন্ধুর।

“আব্বাজান আমায় জোর করে বিবাহ দিয়েছিলেন এক ডাকাতের সঙ্গে। নাম তার নাজিমউদ্দীন। তার নিত্যকার কাজ ছিলো মানুষ মে/রে তার সমস্ত ধনসম্পদ ভোগ করা। তবে তার এই অপকর্মের মাত্রা প্রথম দিকে একটা পরিসীমায় থাকলেও এই বিশাল রাজ্যে পা রেখে তা যেন তরতর করে বেড়ে গেলো। লোভ,লালসা,প্রতিহিংসা.. কিচ্ছুই যেন আর বাঁধ মানলোনা। কিন্তু হুট করেই তো সে আর এই রাজ্যের রাজা হয়ে যেতে পারেনা। আর সেটা সম্ভবও ছিলোনা। কেননা আব্বাজান আমাকে সর্বদাই অপছন্দের তালিকায় রাখতেন। আর আমার স্বামী ছিলো একজন ডাকাত। আব্বাজান যদি পারতেন তাহলে আমাদের দু’জনকেই বনবাসে পাঠিয়ে দিতেন। তোমার আব্বাজান আমায় সবসময় আগলে আগলে রাখতো। এই রাজ্যের একমাত্র কন্যা সন্তান হিসেবে আমি যা পায়নি তা পেয়েছিলাম তোমার আব্বাজানের বড় বোন হওয়ার সুবাদে। সিরাজউদ্দীন আমায় মাথায় তুলে রাখতো। আব্বাজানের চোখের আড়ালে আমাকে কতকি দিয়েছে আমার ভাইটা। কিন্তু সে সুখও সইলো না আমার কপালে। যেদিন সিরাজউদ্দীনের রাজসিংহাসনে বসার দিনক্ষন ঠিক হলো সেদিনই সিরাজউদ্দীনকে অপহরণ করা হলো। নির্মমভাবে পি/টি/য়ে হ/ত্যা/র চেষ্টা হলো সিরাজউদ্দীনের। আব্বাজান ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। কে বা কারা করছে এমন কাজ?
আমি বুঝে গিয়েছিলাম এই কাজ করার পেছনে কার হাত থাকতে পারে? মিললোও তাই। নাজিমুদ্দিন সিরাজকে হ/ত্যা/র চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। সিরাজউদ্দীন কোনো মতে নিজের জীবন বাঁচায়। সেখানে ছোটখাটো একটা যুদ্ধও হয়। তবে যারা সিরাজউদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তার ম/রা/র আগমুহূর্ত পর্যন্ত নিজেদের পরিচয় গোপন রাখে। আর নাজিমউদ্দিন সবার আড়ালেই থাকে। তাই আর জানা হলোনা সিরাজউদ্দীনের এই হ/ত্যা কান্ডের পেছনে কার হাত ছিলো। আমি তখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, আমি সবটা খুলে বলব সিরাজউদ্দীনকে। নাজিমউদ্দিন বোঝার পূর্বে আমি একবার আব্বাজানের সঙ্গে সবটা বলার প্রয়াস করি। কিন্তু আব্বাজান আমার একটা কথাও শোনেনি। তখন আমি নয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নাজিমউদ্দীন আমার গলায় তলোয়ার ধরে,আমাকে হুমকি দেয় যদি আর কখনও তার আসল রূপ কারোর সামনে প্রকাশ করতে যাই তবে, তবে সে আমায় নিজ হাতে খু/ন করবে। আমি তোয়াক্কা করিনি। আমি জেদি কন্ঠে বলি, ‘আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে এই অন্যায় কিছুতেই সহ্য করবো না। আমি সব সত্যি সবাইকে বলে দেবো।’ এ কথা শুনে নাজিমউদ্দিন হিংস্র দানবের মতো আচরণ করতে লাগলো। আমাকে বেধরাম পিটিয়ে অচেতন করে ফেলল। আমি ভেবেছিলাম আমি বোধহয় আর বাঁচব না। কিন্তু ওমন মুহুর্তে ফেরেশতার মতো এসে হাজির হয় আমার ভাই। সঙ্গে তোমার আম্মাজানও ছিলো। আমার ওমন অবস্থায় তৎক্ষনাৎ চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। কবিরাজ মশাই আমার এমন অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায়। তিনি বলেওছিলেন মা এবং সন্তান দু’জনেই শঙ্কায়। বাঁচবে কিনা বলা মুশকিল। আল্লাহ’র অশেষ কৃপায় বেঁচে গেলাম আমি। বেঁচে গেলো আমার সন্তানও। রাজ্যের কয়েকজন দাসীরা নাজিমউদ্দীনের এমন ব্যভিচার এবং স্বীকারোক্তির সাক্ষী ছিলো। সিরাজউদ্দীন আচমকাই সবটা জেনে গেলো। তৎক্ষনাৎ ঘোষনা করা হলো নাজিমউদ্দিনের খোঁজ যে দিতে পারবে তাকে অনেক বড় পুরষ্কার দেওয়া হবে। অচেতন অবস্থায় কানে ঠিক শুনেছিলাম আমার পুত্র সন্তান হয়েছিল। সে কাঁদছিলো৷ কিন্তু যখন চোখ খুলি তখন মৃত এক পুত্র সন্তানের মুখ দেখতে পাই। কেউ কোনোদিন জানলোও না আমার সন্তান হয়েছিলো কিনা। আর যারা জেনেছিলো তারা জানতো আমি মৃত সন্তানের জন্ম দিয়েছি। আব্বাজান বললেন,’তোর মতো পোড়ামুখী কলঙ্ক ছাড়া আর কিই বা দিতে পারবি?’ আমি আবারও অপয়া হয়ে রইলাম। কিছুদিন পর খবর এলো কারা যেন মে/রে ফেলেছে নিজামউদ্দিনকে। আমার খুশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি খুশি হতে পারিনি। আমি উপরওয়ালার কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করেছিলাম-‘আল্লাহ যেন তার সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন।”

ফুপুআম্মা থামলো। তার শরীর ভেঙে আসছে। থরথর করে কাঁপছেন তিনি। রাজকন্যা খেয়াল করে দেখলো ফুপুআম্মার অশ্রুসিক্ত নয়ন। কেন যেন তার খুব করে জানতে ইচ্ছে করল, “দানব জেনেও ফুপুআম্মা কি কখনও ভালোবেসেছিলেন ঐ মানুষটাকে?”

“তার কয়েক বছর পর আবারও অপহরণ হয় সিরাজউদ্দীনের। তবে আগেরবারের মতো আর ফিরে আসেনি সিরাজউদ্দীন। বরাবরের মতো হারিয়ে গেলো সে। বরাবরের মতো।”

মুখে আঁচল চাপলেন ফুপুআম্মা। তার বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে ভেঙে যাচ্ছে। একদিকে নিজের স্বামী, পুত্র আর অন্যদিকে নিজের ভাই! সব হারিয়ে আজ তিনি নিঃশ্ব। একেবারে নিঃশ্ব।

সুফি এসে থামলো ঘন জঙ্গলটার সামনে। রাজকন্যা ওর পিঠ থেকে নেমে ওর পিঠে হাত চাপড়ালো। কোমল স্বরে বলল,

“আমার জন্য অপেক্ষা করিও। যদি দেখো আমি না ফিরি তবেই এই জঙ্গলে প্রবেশ করবে। নয়তো নয়।

সুফি চিঁহি চিঁহি করে ডাকলো। রাজকন্যা মিষ্টি হাসলো। অতঃপর নিজেকে প্রস্তুত করে প্রবেশ করলো জঙ্গলে। নাজিমউদ্দীনের খোঁজে।

ভরাট জঙ্গলে এসে থামলো আয়াস। সঙ্গে রেদোয়ান। সে উদ্ধার করতে পেরেছে তাকে। তবে খুব সহজে নয়, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়ে তাকে। কারাগারের সঙ্গে সরাসরি যোগ আছে পাতালঘরের কারাগারের। সে সেখান থেকে পৌঁছেছে রেদোয়ানের কাছে। গভীর রাতে একটা পিঁপড়েও জেগে ছিলোনা। আর জেগে থাকবেই বা কেমন করে? সে তো পানিতে নিদ্রাবিষ মিশিয়ে ছিলো। যা খেতেই সব ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে।

“সরদার? এই ভরাট জঙ্গলে আমরা কেন এলাম?”

কৌতুহলী স্বরে জানতে চায় রেদোয়ান। আয়াস হাসে। দূরে একটা কুঠির নির্দেশ করে বলে,

“ওখানে অতিথি আপ্যায়ন করবো। চলো জলদি।”

রেদোয়ান হোঁচট খায়।

“অতিথি?”

“হু।”

“কে সরদার?”

“উফফ রেদোয়ান! তুমি কবে থেকে এতো প্রশ্ন করতে আরম্ভ করলে?”

“ক্ষমা করবেন সরদার!”

রেদোয়ান করুন গলায় বলে। আয়াস সগতোক্তি হেসে কাঁধে হাত রাখে রেদোয়ানের।

“ভয় পেয়োনা। তোমার সব প্রশ্নের জবাব ঐ কুঠিরেই আছে।”

রেদোয়ান শুধু মাথা নাড়ে। আর কিছু বলেনা। তারা কুঠিরের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজাটা ভেজিয়ে রাখা। আয়াস হালকা ধাক্কা দিয়ে খুলে দেয় দরজাটা। রেদোয়ান কৌতূহল নিয়ে ভেতরে দেখতেই ঝটকা খায়। ভীতিকর বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে,

“আরহাম!”

আয়াস সশব্দে হেঁসে ওঠে। রেদোয়ানের বুক কেঁপে ওঠে। আবার কোন প্রলয় শুরু হবে? রাজকন্যা কি এবার আর চুপ করে থাকবেন?

#চলবে____