#শুধু_তুমি_আমার
#সূচনা_পর্ব
#Fariba_Ahmed
হাতে একটা জুসের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে।চোখ দুটো তার ভীষণ লাল হয়ে আছে।ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার কয়েকজন বডিগার্ড।তারা ওকে দেখে ভয়ে কাঁপছে।
–স্যার কেউ একজন আপনার আঁকা ছবিগুলো নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে।এখন খবরের শিরোনামে শুধু তার নাম।সবাই বিশ্বাসও করে নিয়েছে যে সেই হলো আপনার আর্ট করা ছবির আসল মালিক।
কথাটা শুনে ছেলেটি তার হাতে থাকা জুসের গ্লাসটিকে জোরে চেপে ধরলো।যার ফলশ্রুতিতে গ্লাসটা ভেঙে তার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।কিন্তু সেদিকে তার কোনো হুশ নেই।তার বডিগার্ডরা তার এই দৃশ্য দেখে আরো ভয় পেয়ে গেছে।তারা জানে ছেলেটি রেগে গেলে কতটা ভয়ংকর হয়ে যায়।
–হোয়াট আর ইউ সেয়িং?কার এতো বড় সাহস যে আমার আঁকা ছবিকে তার বলে দাবি করছে?ড্যাম ইট।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি তার ডিটেইলস চাই।সে জানে না যে সে কার লেজে পা দিয়েছে।গো নাও।কালকের মধ্যে আমার সব ডিটেইলস চাই।গট ইট?(চিৎকার করে)
–ইয়েস স্যার, কালকের মধ্যে সব ডিটেইলস পেয়ে যাবেন স্যার।স্যার আপনার হাত কেটে রক্ত পড়ছে।
–সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।আমি যে কাজ দিয়েছি সেটা কমপ্লিট করো। নাও গো।যে আমার আঁকা ছবিকে তার নিজের বলে দাবি করছে তাকে অনেক পস্তাতে হবে।তাকে এর দাম দিতেই হবে।সে জানে না আমি কে?নাও জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।(বলেই বাঁকা হাসে)
–ওকে স্যার।
–আর হ্যাঁ টিকিট বুক করো,আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশ যাবো।
–আচ্ছা স্যার।
ছেলেটি তার আলমারি থেকে তার আঁকা একটা ছবি বের করলো,
“কোথায় তুমি মায়াবিনী?এতো খুঁজেও কেনো তোমাকে আমি পাচ্ছি না?বারো বছর হয়ে গেছে তোমাকে হারিয়েছি আমি।আমি জানি আমার মায়াবিনী তুমি বেঁচে আছো।আমি খুব শীগ্রই তোমার কাছে আসছি।তোমাকে খুঁজে বের করার জন্যই আমার ছবি আঁকা যেটা আমি দশ বছর আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম।তোমার মিস্টার আর্টিস্ট খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে খুঁজে বের করবে।”
________________
–এই যে মিস্টার আর্টিস্ট,এতো লুকোচুরি কেন খেলছো তুমি?তুমি কি বোঝনা কতটা ভালোবাসি আমি তোমাকে।জানো তোমাকে সামনাসামনি খুব দেখতে ইচ্ছে করে।তোমার আঁকা ছবিগুলোর প্রেমে পড়েছি।কেন দেখা দাও না তুমি?
ভার্সিটির মাঠে বসে নিজের হাতে থাকা একটা ছবির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল মেঘ।মেঘের সাথে মেঘের বান্ধুবী মুক্তা বসে ছিল,মেঘের বেস্ট ফ্রেন্ড।সে মেঘের কথা শুনে বলল,
–না রে তোর মিস্টার আর্টিস্ট বোঝেনা তোর ভালোবাসা।যে ছেলেকে আজ পর্যন্ত কেউ দেখলো না,শুধু তার আঁকা ছবি দেখেই তার প্রেমে পড়লি তুই।চেহারা না দেখেই।এটা সম্ভব?
–কেন সম্ভব নয়?তুই মিস্টার আর্টিস্ট এর আঁকা ছবি গুলোতো দেখেছিস।একদম জীবন্ত মনে হয়।আর এই ছবিটা(হাতের ছবিটা দেখিয়ে)আমি প্রথম দেখেই তার প্রেমে পড়ে যাই।জানিস কেন জানি মনে হয় এই ছবিটা আমি আগেও দেখেছি।
–তুই এই ছবি আগে কীভাবে দেখবি?এটা শুধু আঁকা একটা ছবি।আর এই ছবিতে শুধু ছোট দুটো ছেলেমেয়ে আছে।তোর কি মনে হয় এই মেয়েটা তুই?
–না,সেটা নয়।কিন্তু মুক্তা…আহ..
–কি হলো?
–মাথাটা আবার ব্যাথা করছে মুক্তা।
–করবেই তো।তোকে কতবার বলেছি এই ছবিটা তুই দেখিস না।এই ছবিটা দেখলেই তোর মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়।কিন্তু তুই তো আমার কথা কানেই দিস না।তোকে বারবার বলার পরেও এই আঁকা ছবিটা তুই নিজের কাছেই রাখিস।
–এই ছবিটা আমার কাছে থাকলে মনে হয় আমার আপন, খুব কাছের কেউ আমার কাছেই আছে।যেনো আমি তাকে অনুভব করতে পারছি।এই ছবিটা না দেখলে আমার চারপাশ অগুছালো মনে হয়।নিজেকে খুব একা একা মনে হয়।
–হুম সব বুঝলাম।আচ্ছা বাবা বাদ দে।আমার এসব প্রেম ভালোবাসার গল্প বোরিং লাগে।আই ডোন্ট বিলিভ ইন লাভ।ছেলেদের উপরও আমার কোনো ভরসা নেই।
–যেদিন তোর জীবনে ভালোবাসা আসবে সেদিন তুই ঠিকই বলবি আই বিলিভ ইন লাভ।
–ইম্পসিবল মেঘু।বাসায় চল।
–আমার একটা কাজ আছে,লাইব্রেরিতে যাবো।তুই বাসায় চলে যা।
–আচ্ছা বাই,সাবধানে যাস।
……….
ইন সুইজারল্যান্ড….
–শুভ্র তোর হাত কাটলো কীভাবে?
কারো গলা শুনে পিছনে ফিরে তাকায় শুভ্র।
–ইয়ান আয় বস।একটু কাজ করছিলাম তখন বেখেয়ালিতে হাতটা কেটে গেলো।
–হাত ব্যান্ডেজ করিসনি কেন?
–করতে হবে না।
–হাতটা দে,ব্যান্ডেজ করে দেই।
–নো নিড।
ইয়ান জোর করে শুভ্রর হাত নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
–তোর উপর জোর না খাটিয়ে কোনো কাজ করা যায় না।আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড, আমার কথাও তুই শুনিস না।
— শুভ্র নীল চৌধুরী নিজের মর্জি মতো চলে।
–একদিন কেউ আসবে যার কথা তুই শুনবি মিলিয়ে নিস।
–ইম্পসিবল।
–পসিবল বন্ধু।
–যার কথা শুনতাম সে অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।
ইয়ান শুভ্রর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে ফেলে।
–আচ্ছা ফোন করে বললি আসতে কি দরকারি কথা বলবি?
–আমি বাংলাদেশে যাচ্ছি ইয়ান।
–সুইজারল্যান্ড থেকে হঠাৎ বাংলাদেশে কেন?
–বিজনেসের কাজে।ওইখানে আমাদের যে কোম্পানি আছে সেটা আমি এখন থেকে দেখাশুনা করবো।আর তুইও আমার সাথে যাবি।
–আংকেল জানে কিছু?আংকেল কি তোকে যেতে দিবে?
— পাপাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।তুই আমার সাথে গেলে পাপা অমত করবে না।
–আচ্ছা ঠিকাছে।কিন্তু দোস্ত বাংলাদেশে চলে গেলে আমি ফ্লার্ট করবো কার সাথে?ইয়ে মানে..
–সাট আপ ইয়ান।তোর এই অভ্যাস আর গেলো না।মজা করা বাদ দে।
–দেখ আমি মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করি ঠিকই কিন্তু কারো ফিলিং নিয়ে কখনো খেলিনি।আজ পর্যন্ত মনের মতো কাউকে পেলাম না যাকে ভালোবাসতে পারবো।আমার ফুটা কিসমাত রে।মন চায় এক গ্লাস পানিতে ডুব দিয়ে মরি।
–হয়েছে আর ড্রামা করতে হবে না।যা রেডি হয়ে নে।
–আচ্ছা দোস্ত, বাই।আর হ্যাঁ দোস্ত ওই ছবি…
ইয়ানকে থামিয়ে দিয়ে শুভ্র বললো,
–ওটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না ইয়ান।
–তার মানে তোর বাংলাদেশ যাওয়ার আসল কারণ এটা।
–হুম ঠিক ধরেছিস।
–তোর কি মনে হয় তুই পাবি খুঁজে?
–অবশ্যই পাবো,আমাকে পেতেই হবে।শুভ্রনীল চৌধুরী যা ভাবে তাই করে।
–বেস্ট অফ লাক শুভ্র।
🌼 🌼
“বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আর্টিস্ট যে এতদিন সবার চোখের আড়ালে ছবি আঁকতো সে আজ সবার সামনে ”
কথাটা শুনে চমকে উঠে মেঘ।ওর হার্টবিট ফাস্ট হয়ে যায়।মনে হচ্ছে কেউ জোরে জোরে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।কথাটা অনুসরণ করে ফিরে তাকায় মেঘ।রাস্তার পাশের দোকানের টিভিতে চোখ যায় মেঘের।লাইব্রেরি থেকে কিছু দরকারি বই নিয়ে বাড়ি ফিরছিল মেঘ।তখনই খবরটা শুনে ও।দোকানে হাজারো মানুষের ভিড়।আর ভিড় হবেই না কেন,যার আঁকা ছবি এতো সুন্দর আর জীবন্ত মনে হয় সে আজ সবার সামনে।মেঘ তার স্বপ্নের রাজকুমারকে দেখার জন্য পাগলের মতো ছটফট করছে।কিন্ত ভিড়ের কারণে দেখতেও পাচ্ছে না।অনেক কষ্টে সে দোকানের ভিতরে ঢুকলো।ঢুকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।সে তার মিস্টার আর্টিস্টকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।কিন্তু টিভি তে দেখানো মানুষকে দেখে মেঘের মুখের হাসি যেন মূহুর্তের মধ্যেই বিলীন হয়ে গেলো।কেনো বিলীন হলো মেঘ সেটাও জানে না।এক মুহূর্তও সেখানে আর দাঁড়ালো না মেঘ।ছুটে বাসায় চলে গেলো।
মেঘকে ছুটে বাসায় ঢুকতে দেখে অবাক হলো মেঘের মা।
–কি রে মেঘ মা,কি হয়েছে তোর?
–কিছু না আম্মু।
–তাহলে এভাবে ছুটে আসলি কেন?
–কিছু হয়নি আম্মু।খুব খিদে পেয়েছে খেতে দাও।
–আচ্ছা আয়।
মেঘ উপরে চলে গেলো নিজের রুমে।
–এটা কি করে হতে পারে?এই ছেলেটা আমার মিস্টার আর্টিস্ট হতেই পারে না।এমন নোংরা মানসিকতার ছেলে এরকম সুন্দর ছবি কি করে আঁকতে পারে?
চলবে…
#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২
#Fariba_Ahmed
মেঘ উপরে চলে গেলো নিজের রুমে।
–এটা কি করে হতে পারে?এই ছেলেটা আমার মিস্টার আর্টিস্ট হতেই পারে না।এমন নোংরা মানসিকতার ছেলে এরকম সুন্দর ছবি কি করে আঁকতে পারে?
মেঘের ভাবনার মাঝেই ওর ফোন বেজে উঠে।নিজের ভাবনা থেকে ফিরে আসে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে মুক্তা ফোন দিয়েছে।
–হুম মুক্তা বল।
–এসব কি শুনছি মেঘ?তুই দেখেছিস?এসব ছবি ওই রাহুল লুচ্চাটার আঁকা?
–আমিও টিভিতে দেখে অবাক হয়েছি।রাহুল আমার মিস্টার আর্টিস্ট হতেই পারে না।ওর মতো এমন নিচু মানসিকতার মানুষ এমন জীবন্ত সুন্দর ছবি কখনোই আঁকতে পারে না।
–আমারো তাই মনে হয়।আচ্ছা আমি এখন রাখি।কালকে ভার্সিটিতে দেখা হবে।কালকে এটা নিয়ে কথা বলবো।
–ওকে বাই।
–আমার মন বলছে রাহুল আমার মিস্টার আর্টিস্ট নয়।তুমি কোথায় মিস্টার আর্টিস্ট?আমি জানি তুমি আসবে।(বলে মুচকি হাসে মেঘ)
এবার মেঘের পরিচয়টা দিয়ে নেই।মেঘের পুরো নাম মেঘালয়া ইসলাম।এবার সে ভার্সিটির প্রথম বর্ষে পড়ে। মেঘের ছোটবেলায় মেঘের বাবা মারা যায়।মেঘের মা ই ওর পৃথিবী।মেঘের মা একটা স্কুলের টিচার।মেঘ দেখতে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর আর ভালো মনের একটা মেয়ে।
–মেঘ নিচে আয়,খাবি না?
–হুম আম্মু আসছি।
মেঘ খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যায়।
–আম্মু
–হুম বল।
–আচ্ছা ছোটবেলায় কি আমরা কখনো সাজেক ঘুরতে গিয়েছলাম?
মেঘের মা খাবার বারছিলেন,মেঘের কথা শুনে উনার হাত থেকে চামচ পড়ে যায়।
–কি হয়েছে মা?
–কিছুনা।তুই হঠাৎ এই কথা কেন জিজ্ঞাসা করছিস?
–না এমনি।বলো গিয়েছিলাম কখনো?
–না আমরা কেন যাবো।যাইনি,যাইনি।(আমতা আমতা করে)নে খেয়ে নে(ধমক দিয়ে)
–হুম খাচ্ছি।আম্মু হঠাৎ রেগে গেলো কেন?আমিতো শুধু একটা সাধারণ কথা জিজ্ঞাসা করেছি।(মনে মনে)
পরেরদিন সকালে,,
মেঘ ঘুম থেকে উঠে সোজা ভার্সিটি চলে গেছে।কাল সারারাত মেঘ ভালো করে ঘুমাতেও পারেনি।ভার্সিটির কাঠগোলাপ ফুলের গাছের নিচে বসে আছে মেঘ।কাঠগোলাপ ফুল মেঘের খুব পছন্দের।মেঘ গাছের নিচে পড়ে থাকা কিছু কাঠগোলাপ নিয়ে কানে গুজে দেয়।মেঘের এটা নিত্যদিনের কাজ।কানে কাঠগোলাপ গুজে দিয়ে মেঘ আনমনে বলে উঠে,
অবাধ্য এই শহরের বুকে
যদি ভালোবাসা নেমে আসে চুপ করে
কাঠগোলাপের আঙিনা জুড়ে আলসে রোদের ঘর
প্রেয়সী এখন একলা ভীষণ
শরীর জুড়ে নাম না জানা জ্বর।(সংগ্রহীত)
কথাটা বলে আনমনেই হেসে উঠে মেঘ।মেঘ নিজেও জানে না কেন মেঘের কাঠগোলাপ এতো প্রিয়।কাঠগোলাপ দেখলেই মেঘের মন ভালো হয়ে যায়।শুভ্র কাঠগোলাপের মায়ায় যেন প্রশান্তি খুঁজে পায়।
দূর থেকে মেঘকে কাঠগোলাপ গাছের নিচে বসে থাকতে দেখে ছুটে আসে মুক্তা।
–মেঘু তুই এখানে আর আমি তোকে পুরো ভার্সিটি খুঁজে বেড়াচ্ছি।জানিস কি হয়েছে?
মুক্তার গলা শুনে বাস্তবে ফিরে এলো মেঘ।ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে,
–কি হয়েছে মুক্তা?
–রাহুল লুচ্চা ভার্সিটিতে এসেছে।সব মেয়েরা তো ওকে ঘিরে ধরেছে।আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে ছবিগুলো সব ওর আঁকা।
–চল গিয়ে দেখে আসি।ওর মতো নিকৃষ্ট মনের মানুষ কখনোই এতো ভালো ছবি আকতে পারে না।
মেঘ আর মুক্তা চলে যায়।রাহুল হলো ওদের ভার্সিটির প্রিন্সিপালের ছেলে।খুবই নোংরা মানসিকতার ছেলে। মেয়েদের ইউজ করাই ওর প্রধান উদ্দেশ্য।মেঘ দোকানে টিভিতে রাহুলকেই দেখেছিল,তাই ও তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে চলে আসে।
মেঘ আর মুক্তা গিয়ে দেখে রাহুল সবাইকে অটোগ্রাফ দিচ্ছে।মেঘকে দেখে রাহুল মেঘের দিকে এগিয়ে আসে।
—-
–পাপা আমি কালকে বাংলাদেশ যাবো।ওখানে আমাদের যেই কোম্পানিটা আছে ওটা আমি সামলাবো।
–কি বলছো এসব তুমি?কালকে তুমি বাংলাদেশ যাবে আর আজকে আমাকে বলছো?
–হুম পাপা।এটাই আমার ডিসিশন।
–কিন্তু শুভ্র আমি তোমাকে বাংলাদেশ যেতে দিতে চাই না।তোমার অতীত আবার তোমার সামনে আসবে।অতীত নিয়ে কি বাঁচা যায় শুভ্র?
–এই অতীত নিয়ে আমি বেঁচে আছি পাপা।নয়তো আরো কয়েক বছর আগেই মারা যেতাম।
–ঠিকাছে তোমার যা ইচ্ছা তাই করো।তবে খুব সাবধানে থাকবে।
–চিন্তা করো না পাপা,আমার সাথে ইয়ানও যাচ্ছে।
–সাবধানে যেও।
–ওকে পাপা।
শুভ্রর পুরো নাম শুভ্রনীল চৌধুরী।বাবার নাম সোভন চৌধুরী আর মায়ের নাম দিয়া বেগম।শুভ্রের বাবা অনেক বড় ব্যবসায়ী।শুভ্র দেখতে খুব সুন্দর।পড়াশুনা শেষ করে বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছে শুভ্র।শুভ্রের বন্ধু ইয়ান শুভ্রের ছোট চাচার ছেলে।দুজনেই সমবয়সী।
—-
–স্যার যে আপনার ছবি নিজের বলেছে তার সব খবর নিয়ে এসেছি।
— গুড, বলো।
–ছেলেটির নাম রাহুল,রাহুল খান।ভার্সিটির প্রিন্সিপাল আরিফ খানের ছেলে।এই ফাইলটাতে সব ডিটেইলস আছে।
–ওকে তুমি যেতো পারো।
–ওকে স্যার।
আরিফ খান আর রাহুল খানের নাম শুনেই কিছু একটা আন্দাজ করে ছেলেটি।ফাইলে রাহুলের সব ডিটেইলস দেখে ছেলেটির চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে।ফাইলটাকে জোরে চেপে ধরে বলে,
“তোর এত বড় সাহস কি করে হলো রাহুল খান।বারো বছর আগে আমার হাত থেকে তো তুই বেঁচে গিয়েছিলি কিন্তু এখন আর কেউ তোকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না।তোর জন্যই আমার মায়াবিনী আমার থেকে আজ এতো দূরে।এবার সব কিছুর শোধ নেওয়ার সময় এসে গেছে।”
—–
–হাই মেঘ,কেমন আছো তুমি?
–ভালো আছে।
–তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি মুক্তা।তুমি কেন বলছো?বাই দা ওয়ে,মেঘ নিজের মিস্টার আর্টিস্টকে চিনতে পারছো?যার জন্য তুমি এতো পাগল সে আজ তোমার সামনে।
–আমি বিশ্বাস করি না।কারণ সত্যিটা আমি জানি।
মেঘের কথা শুনে ঘাবড়ে যায় রাহুল।
–কি সত্যি জানো তুমি?
–এটাই যে এই ছবি গুলো আপনার আঁকা নয়।আপনার মতো মানুষ কখনোই আমার মিস্টার আর্টিস্ট হতে পারে না।এই আঁকা ছবিগুলো দেখলেই বুঝা যায় যে একটা মানুষের কল্পনা,মন কতটা সুন্দর হলে এতো সুন্দর করে, নিখুঁতভাবে ছবি আঁকতে পারে।
–তুমি ভুল ভাবছো মেঘ।এগুলো আমারই আঁকা ছবি।সেদিন যখন জানতে পারলাম তুমি আমার আঁকা এই ছবি গুলোর প্রেমে পড়েছো তখনই সিদ্ধান্ত নেই যে আমি আমার পরিচয় সবাইকে বলে দেবো।তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
–তাই নাকি?তাহলে আপনি এক্ষুনি মেঘুর সামনে একটা ছবি এঁকে দেখান।আপনার অবস্থা হয়েছে বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার মতো হয়েছে।
–সাট আপ মুক্তা। আমার হাতে অনেক ব্যাথা।বাথরুমে পড়ে গিয়ে হাতে অনেক ব্যাথা পেয়েছি।মেঘ আমার একটা জরুরি কাজ আছে।তোমার সাথে পড়ে কথা বলবো।বাই।তোমার জন্য আমি ছবি এঁকে নিয়ে আসবো।
–আমি তোকে আগেই বলেছিল না রাহুল আমার মিস্টার আর্টিস্ট নয়।
–হুম।ও শুধু তোকে ইমপ্রেস করার জন্য এসব করছে।তুই সাবধানে থাকিস মেঘু।
–হ্যাঁ চিন্তা করিস না।তবে আমার মনে হয় না রাহুলের এসব করার পেছনে শুধু আমাকে ইমপ্রেস করার কারণ আছে।
–তুই বলতে চাচ্ছিস যে ওর অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।
–হুম।আমার তো তাই মনে হয়।যাই হোক বাদ দে।মিস্টার আর্টিস্ট নিশ্চয় এতোক্ষণে জেনে গেছে এই খবর,দেখবি উনিই কিছু করবে।
–হুম,ক্লাসে চল।অনেক দেরি হয়ে গেছে।
–চল।
রাহুলের নজর মেঘের উপর অনেক আগে থেকেই।মেঘকে রাহুল প্রোপোজও করেছিল।কিন্তু মেঘ না করে দেয়।তাই রাহুলের জেদ চেপে যায় যে করেই হোক মেঘকে তার চাই।রাহুল মেঘকে সবসময় ফলো করতো।রাহুল জানতে পারে মেঘ তার মিস্টার আর্টিস্টকে খুব ভালোবাসে।এটা ভেবে রাহুল এক পৈশাচিক হাসি হাসে।হয়তো নিজেকে এসব আঁকা ছবির মালিক দাবি করার পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে?
চলবে…..