শুধু তুমি আমার পর্ব-০৩

0
692

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_৩
#Fariba_Ahmed

ডিসেম্বর মাসের কনকনে শীতের মধ্যেও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।ছাতা হাতে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ।মুক্তার জন্য অপেক্ষা করছে।ডিসেম্বর মাসের এই বৃষ্টিটাকে খুব উপভোগ করছে মেঘ।

–এই ছেলে, এই আপনি কানা নাকি,দেখেন না চোখে।রাস্তায় কীভাবে গাড়ি চালাতে হয় তা না জেনেই গাড়ি চালান নাকি?

রেগে কথাগুলো বলে মেঘ।মেঘের কথা শুনে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে শুভ্র।চোখে সানগ্লাস,সিল্কি চুলগুলো কয়েকটা কপালে ছড়িয়ে আছে।দেখেই ছোটখাটো একটা ক্রাশ খেলো মেঘ।

–না মেঘ না,তুই ক্রাশ খেতে পারিস না।এসব বড়লোক ছেলেরা ভালো হয় না

বলে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ মেলে রাগি চোখে শুভের দিকে তাকালো।শুভ্র দেখলো তার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পুরো জামা কাদা দিয়ে ভরা।বুঝতে পারলো মেয়েটি কেন তার উপর এতো রেগে আছে।রাস্তার পাশে একটা বড় কাঠগোলাপ ফুলের গাছ দেখে ফুল নিতে ছুটে যায়।রাস্তায় পড়ে থাকা ফুলগুলো বসে বসে তুলতে থাকে।আর তখনই শুভ্রের গাড়ি যাচ্ছিল।বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কাদা আর পানি জমে ছিল।শুভ্র জোরে গাড়ি চালানোর কারণে সেই কাদা এসে লাগে মেঘের গায়ে।

–সিরিয়াসলি মিস,তা তুমি যখন চোখে দেখো তাহলে তোমার এরকম অবস্থা কেন?

শুভ্রের কথা শুনে মেঘ আরো রেগে গেলো।

–নিজে দোষ করে এখন আমাকে কথা শুনাচ্ছেন?

–দোষ আমার নয়।তোমার কি কমন সেন্স নেই?কেউ এভাবে রাস্তায় বসে ফুল তুলে?

–আমার ইচ্ছা,আমি যেভাবে মন চাইবে আমি সেভাবে ফুল তুলবো।

–তোমাকে বাঁচানোটাই আমার ভুল হয়েছে।

–এক্সকিউজ মি,আপনি আমাকে কখন বাঁচালেন?উল্টো আমার সারা শরীর কাদা দিয়ে মেখে দিছেন।এই শীতের মধ্যে আমাকে আবার গোসল করতে হবে।(চোখ দুটো ছোট করে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বললো)

মেঘকে একটা ছেলের সাথে ঝগড়া করতে দেখে ছুটে আসে মুক্তা।মেঘকে দেখে বলে,

–কি রে মেঘু তোর এই অবস্থা কি করে হলো?কাদায় গোসল করেছিস নাকি?(বলে উচ্চস্বরে হাসতে থাকে মুক্তা)

–তুই হাসছিস?এই হনুমান দেখ আমার অবস্থা কি করেছে?(কাদো কাদো গলায়)

–এক্সিউজমি মিস,তুমি কাকে হনুমান বলছো?

–কানে শুনেন না নাকি?চোখের পাশাপাশি কানটাও গেছে?আপনাকে বলেছি।

–এইটুকু পুঁচকে মেয়ে তুমি আমাকে হনুমান বলছো?এই শুভ্রনীল চৌধুরীকে?আমাকে কোন দিক দিয়ে তোমার হনুমান মনে হয়?জানো কত মেয়ে আমার জন্য পাগল।

–হুম মিস্টার শুভ্র নাকি গুভ্র।জানেন তো পচা খাবারে মাছি একটু বেশি ভনভন করে(ভেঙচি কেটে)

–হাউ ডেয়ার ইউ?(রেগে)

–সাহসের এখনো কিছুই দেখেননি আপনি।

–মেঘু থাম প্লিজ।আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না ভাইয়া(শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে)।মেঘু চল।

–তোমার বান্ধুবীকে বোঝাও।দোষ আমার নয়।ও রাস্তায় বসে ফুল তুলছিল।আমি ছিলাম বলে গায়ে শুধু কাদা লেগেছে।অন্য কেউ হলে ও এখন হাসপাতালে থাকতো।

–আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।মেঘু চল।

মুক্তা মেঘকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।

–তুই আমাকে এভাবে নিয়ে আসলি কেন?

–ছেলেটার তো কোনো দোষ নেই।দোষ হলো তোর।তুই রাস্তায় বসে ফুল তুলছিলি কেন?

–তুই তো জানিস কাঠগোলাপ ফুল আমার অনেক ভালো লাগে।ফুল তুলতে তুলতে কখন রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি।মাকে কিছু বলিস না।চিন্তা করবে।

–ঠিকাছে বলবো না।সাবধান থাকবি।

–আচ্ছা।তোর আসতে এতো দেরি হলো কেন?আর আইস্ক্রীম কোথায়?

–আরে আর বলিস না,দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে যখন টাকা দিতে যাবো তখন একটা ছেলে এসে ধাক্কা দেয়।ধাক্কা খেয়ে আইসক্রিম হাত থেকে পড়ে গেছে।

–তারপর?

–তারপর আর কি?টাকা দিয়ে চলে আসছি।

–তাহলে আইসক্রিম কোথায়?

–ওখানেই রেখে চলে আসছি।

–সিরিয়াসলি মুক্তা?আচ্ছা একটা কথা বল।তুই কি শুধু ওই ছেলেটার সাথে ধাক্কা খেয়েছিস নাকি আরো কিছু হয়েছে?না মানে তুই তো আবার কাউকে ছাড় দিস না,সে তুই কিনা ছেলেটাকে কিছু না বলেই চলে আসলি?

–আসলে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়ার সময় ছেলেটা আমার কোমড় আকরে ধরে।ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।তার তাকানো দেখে আমার কেমন একটা লজ্জা লাগছিল।তাই টাকা দিয়ে তাড়াতাড়ি করে চলে এসেছি।

–তাই তো বলি ডাল মে কুচ কালা হে।তুই লজ্জা পেয়েছিস?আমার তো মনে হয় সামথিং সামথিং।নয়তো তুই ছেলেটাকে কিছু বললি না কেন?

–আরে ওরকম কিছু না।চল তো।বাদ দে।

আচ্ছা চল।সত্যি কথার দাম নাই আজকাল।চল চল।৷

মেঘের কথা শুনে মুক্তা রাগী চোখে ওর দিকে তাকালো।সেটা দেখে মেঘ একটা ইনোসেন্ট হাসি দিল।

–ধুর বিডি তে আসতে না আসতেই ঝামেলা।পাগল মেয়ে।রাস্তায় বসে ফুল তুলছে।আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলো।হাউ ডেয়ার সি?আমাকে হনুমান বলে।আমিও তোমাকে দেখে নিবো মিস ঝগড়ুটে।(রেগে)

বাসার ভিতর ঢুকে শুভের এসব কথা শুনে ইয়ান বুঝে যায় শুভ্র অনেক রেগে আছে।শুভ্র আর ইয়ান একি সাথে বাংলাদেশে এসেছে।ইয়ানের একটা কাজ থাকায় ইয়ান শুভ্রের সাথে একসাথে বাসায় আসেনি।

–কি ব্যাপার শুভ্র এতো রেগে আছিস কেন?আর কার সাথেই বা ঝগড়া করেছিস?

তারপর ইয়ানকে শুভ্র সব খুলে বলে।

–সিরিয়াসলি শুভ্র,তোর সাথে ঝগড়া করেছে তাও একটা মেয়ে?(হেসে)

–হাসিস না ইয়ান।(রেগে)

–আচ্ছা হাসবো না।

–তোর কাজ হয়েছে?এতো জামা কাপড় থাকতেও তোর আরো মার্কেট করতে হয়।

–হুম রে দোস্ত।তুই বুঝবি না।বাংলাদেশের মেয়েগুলো একদম আলাদা,তাদের চোখে মুখে আলাদা মায়া আছে।(বলতে বলতে কোনো কিছু ভাবতে থাকে ইয়ান)

–ঠিক বলেছিস,একদম আলাদা।নয়তো কি অচেনা একটা মানুষের সাথে এভাবে গায়ে পড়ে ঝগড়া করতো?মায়া টায়া কিচ্ছু নেই বুঝেছিস।আচ্ছা তোর আলাদা বলার কারণ কি?এই ইয়ান এই,কি রে?কি হয়েছে তোর?ইয়ান(ইয়ানকে ধাক্কা দিয়ে)

–হুম বল,কি হয়েছে?(চমকে বলে)

–আমার কি হবে?তোকে ডাকছিলাম তুই তো শুনছিলি না।

–ও কিছু না।কি বলছিলি?

–বললাম যে এদেশের মেয়েদের আলাদা বলার কারণ কি?

–পরে একদিন বলবো বন্ধু।এখন ফ্রেশ হয়ে নিই।তুইও ফ্রেশ হয়ে নে।

–আচ্ছা,যা।আমি একটু বাইরে যাবো।

–কোথায়?

–যে কাজের জন্য এসেছি।

–আমিও যাবো তোর সাথে।

–না,আমি একাই যেতে পারবো।

–ঠিকাছে সাবধানে যাস।

ইয়ান চলে যাওয়ার পর শুভ্র কাউকে ফোন করে বাইরে চলে গেলো।
——

ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই ছেলেটি।মুখে মাস্ক,কিছু চুল কপাল পর্যন্ত এসে ঠেকেছে,চোখে সানগ্লাস।মুখটা বুঝার কোনো উপায় নেই। সাথে রয়েছে তার কিছু বডিগার্ড।

–স্যার এই হলো আরিফ খানের ভার্সিটি।রাহুল খান কোনো স্টুডেন্ট নয়।বাবার ভার্সিটি যখন খুশি আসে আর যায়।মেয়েদের ইউজ করাই ওর কাজ।মেয়েদের টানেই এই ভার্সিটিতে আসে রাহুল।

–রাহুল খানের উপর নজর রাখবে।সে এস.এন এর আঁকা ছবির দিকে হাত বাড়িয়েছে।সত্যি ওর অনেক সাহস।যেমন বাবা তার তেমন ছেলে।(বলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।

ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে এসএন।ঢুকার সময় তার চোখ যায় কাঠগোলাপ গাছের দিকে।গাছের নিচে পড়ে থাকা কিছু কাঠগোলাপ নিজের হাতে তুলে নেয়।

–এই শুভ্র কাঠগোলাপ দেখলেই তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার কথা মনে পড়ে যায় মায়াবিনী।আমি এসে গেছি মায়াবিনী।খুব তাড়াতাড়ি তোমাকেও খুঁজে বের করবো আমি।তোমাকে নিজের করে নেবো,তখন কেউ আর তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।(মুচকি হেসে)

চলবে…..