শুধু তুমি আমার পর্ব-১৫

0
448

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১৫
#Fariba_Ahmed

কিছুক্ষণ পরেই সূর্য মামার দেখা পাওয়া গেলো।শুভ্রেরও এই দৃশ্যটা দেখতে খুব ভালো লাগছে।আস্তে আস্তে পুরো পদ্ম বিল সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়ে গেলো।প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্য শুভ্র আর মেঘ দুজনে মিলেই উপভোগ করছে।কিছুক্ষণ পর মেঘ ছুটে বিলের কাছে গেলো।পদ্ম বিলের ধারে বসে পানিতে হাত দিয়ে পদ্ম ফুল নড়াচড়া করছে।তার সারা মুখ জুড়ে হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে।শুভ্র প্রকৃতির দৃশ্য দেখা বাদ দিয়ে তার ভালোবাসা তার মেঘকে দেখছে।মেঘকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।সূর্যের আলো মেঘের মুখে এসে পড়েছে।তাতে যেনো মেঘের সৌন্দর্য হাজার গুণ বেড়ে গেছে শুভ্রের কাছে।মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।মেঘের মায়ায় পড়ে যাচ্ছে।আলতো বাতাসে মেঘের চুলগুলো উড়ছে।সূর্যের আলো মেঘের মুখকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।শুভ্রের খুব ইচ্ছে জাগছে মেঘের দুইগালে হাত রেখে খুব কাছ থেকে তাকে দেখতে।শুভ্র মনে মনে ভাবছে সময়টা এখানেই থেমে যাক।মেঘকে দেখেই যেনো সে তার সময় কাটিয়ে দিতে পারবে।শুভ্র ফোন বের করে মেঘের কিছু ছবি তুলে নিলো মেঘের অজান্তেই।আর মেঘ সে তো এই মুহূর্তটা উপভোগ করছে।শুভ্র যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।শুভ্র অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,

–মায়াবিনী,আমার মায়াবিনী।

এই কথাটা মেঘের কানে এলো কিন্তু মেঘ বুঝতে পারেনি ঠিক কি কথা বলেছে।মেঘ পিছন ফিরে শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করলো,

–জ্বি কিছু বলেছেন?

শুভ্র ঘোর থেকে বের হয়ে বলে উঠলো,

–না কিছু না।

–এখন বলুন কেমন লাগলো এই দৃশ্যটা?

–হুম খুব সুন্দর।অনেক অনেক সুন্দর।আমি আগে কখনো নিজের চোখের সামনে এরকম দৃশ্য দেখিনি।থেংক্স মেঘ আমাকে এখানে আনার জন্য।

–ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।আচ্ছা এখন চলুন।

–ঠিক আছে চলো।

দুজনে হেঁটে শুভ্রের গাড়ির কাছে চলে এলো।শুভ্রের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।শুভ্রের যেনো মন চাচ্ছে না মেঘকে ছেড়ে যেতে।তার ইচ্ছে করছে সারাক্ষণ মেঘের সাথে থাকতে।শুভ্র মনে মনে বললো,

–তোমাকে অনেক তাড়াতাড়ি নিজের কাছে নিয়ে যাবো মেঘ।তখন সব সময় তোমার কাছাকাছি থাকতে পারবো।তোমাকে যখন খুশি তখন দেখতে পারবো।

–তো মিস্টার শুভ্র আসি।আপনি সাবধানে যাবেন।

–ইয়াহ।বাই আর কেয়ারফুল থেকো।আজ ভার্সিটি যেও না।

–আচ্ছা তাই হবে।বায়।

–ওকে।

বলে শুভ্র গাড়িতে গিয়ে বসে।গাড়িতে রাখা একটা প্যাকেটের দিকে শুভ্রের নজর যায়।শুভ্র গাড়ি থেকে বের হয়ে মেঘকে ডাক দেয়।

মেঘ ঘুরে চলে যেতে নিলে শুভ্রের ডাকে পিছনে ফিরে তাকায়।পিছনে ফিরে মেঘ শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করে,

–জ্বি কিছুটা বলবেন আপনি?

–হুম।এই নাও এটা।(হাতের প্যাকেটটা মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে)

–কি এটা?

–ধরো আগে।

মেঘ শুভ্রের কাছ থেকে প্যাকেটটা নিলো।

–কিসের প্যাকেট এটা?

–এখানে তোমার মেডিসিন আছে।কালকে ডাক্তার লিখে দিয়েছিলো।

–ওও আচ্ছা।কিন্তু এই মেডিসিন আপনি কোথায় পেলেন?

মেঘের কথা শুনে শুভ্র কি বলবে বুঝতে পারছে না।

–আসলে মেঘ,(আমতা আমতা করে)

–আসলে কি?

–ইয়ান।

–মানে?

–ইয়ানের কাছে তো তোমার প্রেসক্রিপশন ছিলো।ওর মেডিসিন দিতে মনে ছিলো না তোমাকে।তাই আমিই ওকে বললাম যে তোমার সাথে তো দেখা করতে যাচ্ছি তাহলে আমিই মেডিসিন গুলো তোমাকে দিয়ে দেই।

–ওও আচ্ছা।ধন্যবাদ আপনাকে।

–আর শুনো।

–বলুন।

–আই এম সরি মেঘ।

–কেনো?

–আমার কারণে তোমার রাতে মেডিসিন খাওয়া মিস হয়ে গেলো।

–আপনার কারণে মানে?

–মানে ইয়ানের কারণে।

–ওওহ,ইটস ওকে।একবেলা না খেলে কিছু হবে না।আসি তাহলে।

–ওকে,ঠিক মতো মেডিসিনগুলো খেও মেঘ।

–আচ্ছা।বায়।

বলে মেঘ চলে যায়।শুভ্র মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ পর সেও চলে যায়।শুভ্র গাড়ি চালাতে চালাতে মেঘের সাথে কাটানো মুহূর্তের কথাগুলো ভাবতে থাকে।মেঘের সাথে কাটানো মুহূর্তের কথা ভাবতেই শুভ্রের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।

মেঘ ঘরে ছোট ছোট পা ফেলে ঢুকে।মেঘ তার ঘরে গিয়ে দেখে তার মা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।তা দেখে মেঘ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।মেঘ গিয়ে চুপটি করে তার মায়ের পাশে সুয়ে পড়ে।আর আজকে সকালে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটা ভাবতে থাকে।মেঘের কেনো যেনো সন্দেহ হচ্ছে শুভ্রকে।মনে হচ্ছে শুভ্র কিছু একটা লুকাচ্ছে।মেঘ মনে মনে ভাবলো আমি বের করেই ছাড়বো আমি যা ভাবছি তা ঠিক নাকি।কিন্তু তা যদি ঠিক হয় তাহলে উনি এরকম কেনো করছেন?মেঘের মনে হাজার হাজার প্রশ্ন জমা হয়ে আছে।কিন্তু আগে তাকে সিউর হতে হবে শুভ্র আসলে কে?এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘ ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো।

মুক্তা এসেছে মেঘকে দেখতে।কালকে কিছু কাজ থাকায় রাতে আর আসতে পারেনি মেঘকে দেখতে।তাই সকাল সকাল চলে এসেছে।মেঘের বাসায় এসে দেখলো মেঘের মা রান্না করছেন।মেঘ অসুস্থ থাকায় আজকে মেঘের মা স্কুলে যায়নি।মুক্তা মেঘের মা কে সালাম দিয়ে উপরে মেঘের রুমে চলে গেলো।গিয়ে দেখলো মেঘ ঘুমিয়ে আছে।মুক্তা মেঘের ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো।সূর্যের আলো এসে পড়লো মেঘের মুখে।সূর্যের আলো পড়তেই মেঘ চোখ মুখ খিঁচে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নিলো।

মুক্তা জানালার পর্দা সরিয়ে এসে মেঘের পাশে বসলো।মেঘ মুক্তাকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো।মেঘকে জড়িয়ে ধরলো মুক্তা।

–কেমন আছিস মেঘু?তোর শরীর এখন কেমন আছে?

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আমি একদম ঠিক আছি। তুই কেমন আছিস?তোর গলাটা এরকম শোনাচ্ছে কেন?কান্না করেছিস মুক্তা?

–ভালো আর থাকতে দিলি তুই কখন?জানিস কালকে আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।অনেক কান্নাও করেছিলাম।তাই গলার এই অবস্থা।

–আমার তো কিছুই হয়নি।এখন দেখ তুই অসুস্থ হয়ে গেলি।

–আমি অসুস্থ হয়নি।আর হবোও না।আচ্ছা রাতে তুই মেডিসিন খেয়েছিস তো?

–না রে।

–কেনো?মিস্টার এসএন কি তোকে মেডিসিনগুলো এনে দেয়নি। (রেগে)

–মিস্টার এসএন কেনো দিবে এনে?

–উনার কাছেই তো তোর প্রেসক্রিপশন ছিলো।

–না তোর ভুল হচ্ছে।মিস্টার ইয়ানের কাছে ছিলো।

–কে বলেছে তোকে?ইয়ানের কাছে ছিলো না।ডাক্তারের সাথে তো মিস্টার এসএন সব কথা বলেছেন।উনার কাছেই ছিলো।

–ওওহ।

মেঘের কাছে সব গুলিয়ে যাচ্ছে।যদি মুক্তার কথাই সত্যি হয় তাহলে শুভ্র তাকে কেনো মিথ্যা কথা বললো।

–মেঘ ফ্রেশ হয়ে আন্টি খাবার নিয়ে আসছে খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি।

–ঠিক আছে।

–আমি তাহলে আসি।ভার্সিটি যাবো।ভার্সিটি থেকে আসার পথে তোর সাথে দেখা করে যাবো।

–আচ্ছা,সাবধানে যাস।

–ওকে মেঘু।

মুক্তা চলে যায়।মেঘও ফ্রেশ হতে চলে যায়।
_ _ _ _ _ _
ঘুমিয়ে ছিলো এসএন।তখনই তার ফোনে কল আসে।ফোন ধরে ওপাশের মানুষের কথা শুনে বলে উঠে,

–হোয়াট?কি বলছো এসব তুমি?তোমার কোনো ভুল হচ্ছে না তো?

–নো স্যার।এটা একদম ঠিক খবর।

–ওকে।

ফোন রেখে দেয় এসএন।রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।বেডের পাশে থাকা গ্লাস সজোরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।গ্লাসের টুকরা গুলো ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে।নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো।

–ড্যাম ইট?রাহুল খানের এতো বড় সাহস কি করে হলো?রাহুল খান যা করার করে নাও।তুমি যত কিছুই করো না কেন তুমি জিততে পারবে না।আর্ট কমপিটিশন এর দিন যত ইচ্ছা পেছাও তুমি,আজ না হোক একদিন তো সত্যিটা সবাই জানবে।রাহুল খান খেলাটা তুমি শুরু করেছিলে,শেষটা আমি করবো।
মাইন্ড ইট।

চলবে…..