শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০২

0
1070

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_২
#Ornisha_Sathi

রাত ১১ টা বেজে ছাপ্পান্ন মিনিট। কাঁথা মুরি দিয়ে ফোন ঘাটছে আনিতা। পাশেই ওর ছোট বোন অনিমা ঘুমোচ্ছে। এফবি স্ক্রল করছিলো আনিতা তখনই একটা নোটিফিকেশন আসে। আনিতা নোটিফিকেশনটা চেক করে দেখে “আদৃত আহমেদ” নামে একটা আইডি থেকে ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছে। নোটিফিকেশন দেখে আনিতা বেশ অবাক হলো। এই ছেলেকে ও কবে রিকুয়েষ্ট দিলো? হয়তোবা টাচ লেগে চলে গিয়েছিলো। এটা নিয়ে আর বেশি মাথা ঘামালো না আনিতা। আবারো এফবিতে গল্প পড়ায় মনোযোগ দিলো। অনলাইনে থাকা অবস্থায় আনিতা সারাটা সময় গল্প পড়েই কাটায়। এটা আনিতার খুব বাজে একটা নেশা। একবার গল্প পড়া শুরু করলে আশেপাশের আর কিছুতেই খেয়াল থাকে না আনিতার।

বেশ কিছুক্ষণ পর মেসেঞ্জারে একটা ম্যাসেজ আসে। স্ক্রিন থেকে আনিতা সেই আইডিটা রিমুভ করে আবারো গল্প পড়ায় মনোযোগ দেয়। আবারো ম্যাসেজ আসে। এবার আনিতা ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়েই ম্যাসেজটা অন করে। আইডির উপর ইংলিশ ফ্রন্টে “Adrit Ahmed” নামটা জ্বলজ্বল করছে। নামটা বেশ ভালো লাগে আনিতার। আদৃত ছেলেটা পরপর দুটো ম্যাসেজ করেছে,

–“এক্সকিউজ মি মিস।”

–“ইউ নো মি?”

ম্যাসেজের রিপ্লে করতে ইচ্ছে করছিলো না। তবুও নামটা ভালো লাগাতে রিপ্লে করলো আনিতা।

–“নাহ ভাইয়া আমি চিনি না আপনাকে।

–“ওহ আচ্ছা। আপনি রিকুয়েষ্ট দিয়েছেন তাই ভাবলাম হয়তোবা চিনেন আমাকে।”

–“আসলে ভাইয়া___রিকুয়েষ্টটা কিভাবে গিয়েছে আমি নিজেও জানি না। মেবি টাচ লেগে চলে গিয়েছিলো।”

–“ইট’স ওকে।”

এভাবেই একটা দুটো ম্যাসেজ করতে করতে আনিতা আর আদৃত পরিচিত হয়ে নেয়। আনিতার বেশ ভালোই লেগেছে আদৃতের বিহেভ গুলো। আনিতা আদৃতের প্রোফাইল ঘেটে একটা ছবিও পায়নি ওর। কিন্তু আইডিটা দেখে ফেইকও মনে হচ্ছে না। আনিতা আর আদৃতের ছবির উপর তেমন ইন্ট্রেস্ট দেখায়নি। কিন্তু আদৃতের বিহেভে খুব মুগ্ধ হয়েছে। এভাবেই আর কিছুক্ষণ কথা বলে অফলাইন হয়ে যায় দুজনেই।

চারদিন পর সকালে তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে আনিতা। কলেজে যেতে হবে কিন্তু কতটা লেট হয়ে গেলো। আধ ঘন্টার মধ্যে রেডি হয়ে বের হতে হবে আনিতাকে। তাই তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে বোরখা পড়ে স্ক্রার্ফ বাঁধছে আনিতা। তখন ওর ছোট বোন এক বাটি নডুলস এনে ওকে খাইয়ে দিতে লাগলো। কয়েক চামোচ খেয়ে পানি খেয়ে নিলো আনিতা। নডুলস আনিতার পছন্দের খাবার কিন্তু হাতে এখন একদম সময় নেই তাই আর খেলো না। স্কার্ফ দিয়েই নিকাব বেঁধে আনিতা ওর আম্মুকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

বাসা থেকে বেরিয়ে আনিতা কলেজ ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো তাসকিয়াকে ফোন করার জন্য। কন্টাক্টে গিয়ে তাসকিয়ার নাম্বার খুজছে আর হাঁটছে। এমন সময় আনিতার সামনে কেউ একজন এসে দাঁড়ালো। আনিতা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তন্ময়ও আছে। আর আহিয়ান ছেলেটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে। ফাইয়াজ আনিতাকে বলে,

–“কোথায় যাচ্ছিস?”

–“বিএফ এর সাথে ডেটে যাচ্ছি। যাবা?”

–“সোজাসাপ্টা উত্তর দিতে পারিস না?”

–“তো জানো না এসময় আমি কলেজ ছাড়া আর কোথায় যাবো?”

ফাইয়াজ কিছু বলবে তার আগেই আনিতার ফোন বেজে উঠলো। আনিতা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে তাসকিয়ার ফোন। আনিতা রিসিভ করে ফোন কানে নেওয়ার আগেই ফাইয়াজ ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নেয়। ফাইয়াজ হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে তাসকিয়া ফোন কেটে দিলো। ফাইয়াজ গোমড়া মুখ করে ফোনটা আনিতার হাতে দিয়ে বলে,

–“যাহ বাবা! কেটে দিলো। এই তোর ফ্রেন্ডটা এমন কেন রে? শুধু শুধু রাগ করে আমার উপর।”

–“তুমি রাগাইতে পারবা আর আমার ফ্রেন্ড রাগলেই দোষ তাই না? সরো তো এখন আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।”

কথাটা বলে আনিতা চলে আসে ওখান থেকে। আহিয়ানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আহিয়ান আনিতাকে দেখেই সিগারেটের বাকি অংশটা মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে আগুনটা নিভিয়ে দেয়। আনিতা একবার বিরক্তি মাখা চোখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে।

আনিতা দু/তিন মিনিট হেঁটে মেইন রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখে তাসকিয়া আর রোদেলা অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর জন্য। আনিতা গিয়ে অটোতে উঠার আগেই তাসকিয়া অটো চালককে বলে চলে যেতে। আনিতা আহাম্মক এর মতো ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। কি হলো ব্যাপারটা? এভাবে আমাকে রেখেই চলে গেলো? এসব ভেবে আনিতা পিছন ঘুরে দেখে ফাইয়াজ দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আনিতা এবার বুঝতে পারলো কেন ওরা ওকে রেখেই চলে গেলো। আনিতা তেড়ে গিয়ে ফাইয়াজকে মারতে গেলেই ফাইয়াজ দৌড়ে একটা রিকশায় উঠে পড়ে। সাথে তন্ময়ও চেপে বসে রিকশায়। ফাইয়াজ রিকশা চালাতে বলে আনিতার দিকে তাকিয়ে আনিতাকে বলে,

–“আনি বুড়ি আহিয়ানকে তোর সাথে করে কলেজে নিয়ে আসিস। আমার হাতে সময় নেই আমি গেলাম। মহারানীর রাগ ভাঙাতে হবে। টাটা।”

এই বলেই ফাইয়াজ আর তন্ময় রিকশা নিয়ে চলে গেলো। আনিতা এবার চরম বিরক্তি নিয়ে আহিয়ানের দিকে একবার তাকালো। ফোনে টাইম দেখে নিলো একবার। এখন যদি না যায় তবে অনেক লেট হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে রিকশাও তো একটা। এই ছেলের সাথে আনিতা কিছুতেই যাবে না। তাই মিনিট দুয়েক দাঁড়ালো অন্য রিকশার জন্য। আহিয়ান ততক্ষণে রিকশায় চড়ে বসেছে। আহিয়ান আনিতার দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শিস বাজাতে লাগলো। আনিতা আর কোনো উপায় না পেয়ে রিকশায় উঠে বসলো। আহিয়ানের গা থেকে সিগারেটের গন্ধ আসছে এতে আনিতার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। আহিয়ান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পকেট থেকে চুইংগাম বের করে মুখে দিয়ে চিবুতে লাগে।

রিকশা কলেজের অপজিটে এসে দাঁড়ায়। আনিতা ভাড়া দেওয়ার আগেই আহিয়ান রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দেয়। আনিতা বেশ কয়েকবার ভাড়া দিতে চাইলেও আহিয়ান ভাড়া দিতে দেয়নি। আনিতা এবার বেশ বিপাকে পড়লো। মেইন রোড এত এত গাড়ি চলছে এতে ও রাস্তা পার হবে কি করে? তাসকিয়া বা রোদেলাও ওর সাথে নেই যে আনিতাকে রাস্তা পার করে দিবে।

আহিয়ান কিছুদূর গিয়ে পিছু ঘুরে দেখে আনিতা এখনো আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে আহিয়ান আবার আনিতার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেয়। কলেজ গেটের সামনে গিয়েই আহিয়ান আনিতার হাত ছেড়ে দেয়। আনিতা আহিয়ানকে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে কলেজে ঢুকে যায়।

*

দুটো ক্লাস করে আনিতা আর ওর ফ্রেন্ডরা মিলে তিন তালার একটা ফাঁকা ক্লাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আনিতা দরজার দিকে পিঠ করে হাই বেঞ্চের উপর বসে বসে পা ঝুলাচ্ছে। তখনই পিছন থেকে কেউ একজন আনিতার পিঠে ধুম করে ব্যাগ দিয়ে বারি দেয়। আনিতা “বাবাগো” বলে মৃদু চিৎকার করে পিছু ঘুরতেই দেখে শুভ দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা তাসকিয়া রোদেলা আর শুভ এই চারজনে বেস্ট ফ্রেন্ড। তবে শুভ আর আনিতার বন্ধুত্বটা অনেক গভীর। ক্লাস ওয়ান থেকে ওরা দুজন একসাথে পড়াশুনো করে। আর তাসকিয়া আর রোদের সাথে ক্লাস এইটে ফ্রেন্ডশিপ হয় ওদের।

আনিতা ওর জুতোটা খুলে শুভর দিকে ছুড়তেই শুভ সেটা ক্যাচ করে নেয়। তারপর জানালা দিয়ে কলেজের পেছন সাইডের একটা পুকুরে ফেলে দেয়। আনিতা চিৎকার করে উঠে। আনিতা বাকি জুতোটাও খুলে শুভর দিকে ছুড়ে মারে। এবার শুভ উলটো দিকে ঘুরে থাকায় জুতোটা গিয়ে শুভর পিঠে লাগে। বেশ কিছুক্ষণ দুজনে মিলে ঝগড়াঝাটি করে একসময় ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়।

আনিতারা বসে বসে তেতুল খাচ্ছে। তখনই ওদের দুজন ক্লাসমেট এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে। তারপর সবাই মিলে আবার আড্ডায় মেতে উঠে। হুট করেই ফাইয়াজ তন্ময় আর আহিয়ান এসে দাঁড়ায় সেই রুমে। ফাইয়াজকে দেখে তাসকিয়া বের হয়ে যায় রুম থেকে। ফাইয়াজ আহিয়ান আর তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“তোরা আনিতা আর ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দে। আমি আসছি।”

কথাটা বলেই ফাইয়াজ তাসকিয়ার পিছু নিলো। আহিয়ান আর তন্ময় শুভর পাশে গিয়ে বসে পড়লো। আনিতা একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে তেতুল খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। এর মাঝেই আনিতার ক্লাসমেট জারা আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে ফিসফিস করে বলে,

–“ইয়ার ছেলেটা কে রে? ইশ্ কি কিউট।”

–“এখানে তো দুজন আছে তুই কার কথা বলছিস?”

–“আরে ওই তো সবুজ শার্ট পড়া ছেলেটা যার সাথে তুই কলেজে আসলি।”

আনিতা আহিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার জারার দিকে তাকায়। আনিতা জারার দিকে ক্ষানিকটা ঝুকে বলে,

–“ফাইয়াজ ভাইয়ার ফ্রেন্ড। ঢাকা থেকে এসেছে।”

–“একটু সেটিং করিয়ে দে না ইয়ার।”

আনিতা জারার কথা না শুনার ভান করে আবারো আড্ডায় মেতে উঠে। আনিতা এখনো হাই বেঞ্চে বসে বোরখা খানিকাটা উঁচু করে পা ঝুলাচ্ছে। আহিয়ানের চোখ হুট করেই আনিতার পায়ের দিকে যায়। ফর্সা পায়ে কালো পাথরের সিম্পল ডিজাইন করা নুপুর জোরা বেশ লাগছে দেখতে। তন্ময় আহিয়ানকে কাঁধ দিয়ে হালকা ভাবে ধাক্কা দিয়ে বলে,

–“ওভাবে দেখো না বৎস প্রেমে পড়ে যাবে তো।”

আহিয়ান রাগী চোখে তাকাতেই তন্ময় মুখটা কাচুমাচু করে ফেলে। আহিয়ান এবার আনিতার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই ফাইয়াজ তাসকিয়ার রাগ ভাঙিয়ে ওকে সাথে করে নিয়ে আসে। ফাইয়াজ আনিতার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

–“ওদের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিস?”

আনিতা ফাইয়াজকে পালটা একটা থাপ্পড় মেরে বলে,

–“উফস ভাইয়া___তোমার ফ্রেন্ড তুমি পরিচয় করিয়ে দাও। তাছাড়া আমগো মতো বাচ্চা পোলাপাইনদের সাথে পরিচিত হয়ে তোমার বুড়ো ফ্রেন্ডগুলো কি করবে শুনি? তাসকিয়ার রাগ ভাঙানো শেষ এবার যাও এখান থেকে একদম বিরক্ত করবা না। দেখছো না কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি আমি।”

আনিতা কথাটা বলে ওর হাতের শেষটুকু তেতুল মুখে দিতে গেলেই শুভ সেটা কেড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে। তারপর আনিতার মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বলে,

–“হ তেতুল খাওয়া তোমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাই না? আজাইরা যা সর এখান থেকে।”

বেঞ্চে রাখা পানির বোতলটা হাতে নিয়ে আনিতা শুভর দিকে ছুড়ে মারে। বোতল গিয়ে সোজা শুভর বুকে লাগে। শুভ বুকে হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বলে,

–“আহ ডাইনী! তোর কপালে একটা রাক্ষস জামাই জুটবো দেহিস।”

–“জুটলে জুটবে তাতে তোর কি?”

আনিতা আর শুভর এমন ঝগড়া দেখে আহিয়ান আর তন্ময় চোখ বড় বড় করে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে তাসকিয়া ক্ষানিকটা হেসে বলে,

–“আসলে ভাইয়া ওরা দুজন এমনই সারাক্ষণ ঝগড়া করেই কাটিয়ে দেয়।”

তাসকিয়ার কথা শুনে আহিয়ান আর তন্ময় মৃদু হাসে। ফাইয়াজ একে একে সবার সাথে তন্ময় আর আহিয়ানের পরিচয় করিয়ে দেয়। আহিয়ান তন্ময় এর দিকে ঘুরে বলে,

–“এতো দেখছি পুরাই ধানী লঙ্কা।”

আহিয়ানের কথাটা শুনে সকলেই হেসে উঠে। আর আনিতার কানে যেতেই ও চোখ পাকিয়ে আহিয়ানের দিকে তাকায়। তা দেখে আহিয়ান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়। আর তন্ময় মুখ টিপে হেসে আহিয়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

–“কি ব্যাপার মামা? যেখানে তোর চোখ রাঙানোতে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে শুরু করে তোর গার্লফ্রেন্ডরা অব্দি চুপ হয়ে যায়। সেখানে তুই কিনা এই পুচকে মেয়ের চোখ রাঙানো তে একেবারে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গেলি?”

আহিয়ান ফোন রেখে তন্ময় এর দিকে তাকাতেই তন্ময় ভ্রু নাচিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করে৷ আহিয়ান তন্ময়কে কিছু বলবে তার আগেই তন্ময় কথা ঘুরানোর জন্য আনিতাকে বলে,

–“হেই কিউটিপাই তোমার পা খালি কেন? জুতো কোথায়?”

আনিতা বসে বসে আদৃতের সাথে ম্যাসেজ করছিলো। এ চারদিকে আদৃতের সাথে আনিতার বেশ ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গিয়েছে। আদৃত ছেলেটার অন্যরকম একটা ক্ষমতা আছে। অল্পতেই সবার মন জিতে নেয়। তন্ময় এর কথা শুনে আনিতা আদৃতকে বাই বলে ফোনের পাওয়ার অফ করে। একবার তন্ময় এর দিকে তাকায়। তারপর আবার শুভর দিকে তাকিয়ে বলে,

–“কুত্তায় নিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছে।”

আনিতার কথায় তাসকিয়া আর রোদেলা হেসে উঠে। শুভর মুখটা একদম ফাটা বেলুনের মতো হয়ে যায় আনিতার কথা শুনে। আহিয়ান ফাইয়াজ তন্ময় তিনজনেই শুভর দিকে তাকিয়ে বিষয়টি বুঝতে পেরে ওরাও হেসে দেয়। শুভ মুখ ভার করে ফাইয়াজকে বলে,

–“ভাই আপনিও হাসছেন? আপনাকে দিয়ে এটা আশা করি নাই। কোথায় ওরে একটু গালি টালি দিবেন তা না উলটো হাসছেন। খারান আপনের আর তাসকিয়ার সংসারে আমি আগুন লাগামু।”

তাসকিয়া শুভর পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে,

–“আমারে টানস কেন? আমি কি করসি তোরে?”

শুভ কিছু বলবে তার আগেই আনিতা বেঞ্চে থেকে লাফ দিয়ে নেমে শুভর জুতো টেনে ওর পায়ে থেকে খুলে নিয়ে দৌড় লাগায়। শুভও ওর পিছু নেয় কিন্তু আনিতা ততক্ষণে শুভর জুতো পায়ে দিয়ে ফেলেছে। আনিতা মাঠে দিয়ে হাটছে পাশেই শুভ খালি পায়ে ওর পিছু পিছু যাচ্ছে আর জুতো দিতে বলছে।

আনিতা শুভকে নিয়ে পাশের একটা মলে গিয়ে জুতোর শপে ঢুকলো। আনিতা ওর পছন্দ মতো জুতো নিবে আর শুভ বিল দিবে। আনিতা রোদেলাকে ম্যাসেজ দিয়ে সেখানে আসতে বলে। আনিতা ঘুরে ঘুরে জুতো দেখছে তখনই রোদেলা আর তাসকিয়া আসে। আনিতা একটা জুতো কিনে পায়ে দিয়ে বের হয়ে যায় মল থেকে। আনিতার পিছু পিছু বাকি তিনজনও বের হয়ে আসে।

ফাইয়াজদের কাছে এসে আনিতা আহিয়ানকে দেখতে পেলো না। আনিতার সেটা নিয়ে তেমন কোনো মাথা ব্যাথাও নেই। গল্পগুজব করতে করতে এক পর্যায়ে তন্ময় এর সাথে আনিতার বন্ডিংটা বেশ ভালো হয়ে যায়। কথা বলছিলো সবাই মিলে তখনই আনিতার ফোন বেজে উঠে। আনিতা একটু দূরে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে। সাত-পাঁচ ভেবে আনিতা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বলে,

–“কেমন আছো আনি?”

–“আদৃত?”

–“চিনলে কিভাবে?”

–“একমাত্র তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে আনি বলে ডাকে না। আমার এক ভাইয়া ডাকে তবে আনি বুড়ি বলে।”

আনিতার কথা শুনে আদৃত হেসে উঠলো। আদৃতের হাসি শুনে আনিতা কেমন যেন থমকে গেলো। মনে মনে ভাবলো “ইশ্ কি সুন্দর করে হাসে ছেলেটা”। আদৃত ওপাশ থেকে বলে,

–” আনি বুড়ি? বাহ! বেশ তো নামটা। আমিও এই নামে ডাকি তোমাকে?”

–“একদম রাগাবে না আমাকে বলে দিলাম।”

–“আচ্ছা বাবা সরি। আনি বুড়ি বলছি না হ্যাপি তো?”

–“হুম।”

–“কোথায় আছো এখন?”

–“কলেজে।”

–“আচ্ছা তো বাসায় যাও পরে কথা হবে। রাখছি কেমন?”

–“ওকে।”

কথাটা বলে আনিতা ফোন কেটে পিছু ঘুরতেই সামনে আহিয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ক্ষানিকটা চমকে উঠে। ভয় পেয়ে বুকে হাত দিয়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়। আহিয়ান আনিতার দিকে এক পা এগিয়ে এসে বলে,

–“বিএফ এর সাথে কথা বলছিলে বুঝি?”

–“যার সাথেই বলি সেটা আপনাকে বলবো কেন?”

এই বলে আনিতা ফাইয়াজদের কাছে চলে যায়। তারপর আরো কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসে সবাই।



চলবে।

[ রি-চেক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং।🥰 ]