শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০৪

0
773

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৪
#Ornisha_Sathi

কেটে গিয়েছে কয়েকটা দিন। আর দুদিন পরই আহিয়ান আর তন্ময় ঢাকায় ফিরে যাবে। সাথে ফাইয়াজও যাচ্ছে। এর মাঝে আহিয়ান আর তন্ময় বেশ কয়েকবারই আনিতাদের কলেজে গিয়েছিলো। এ কদিনে আহিয়ান আর আনিতা দুজনেই দুজনের পিছু লেগে ছিলো। আবার সম্পর্কটাও আগের থেকে ভালো হয়েছে। প্রথম প্রথম তো আনিতা আহিয়ানকে সহ্যই করতে পারতো না। সময়ের সাথে সেটা কেটে গিয়েছে।

এদিকে আদৃতের সাথেও আনিতার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। আনিতার মন খারাপের মূহুর্তে নিমিষেই আনিতার মন ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা ছেলেটার আছে। মাঝে মধ্যে আনিতার মন খারাপের কারনটাও আদৃতকে ঘিরেই হয়। কেন এমন হয় এই প্রশ্নের উত্তর হাজার খুজেও আনিতা পায় না। আনিতা একবার আদৃতকে দেখতে চেয়েছিলো। আদৃত ছবি দিয়েছিলো কিন্তু ফেস বোঝার কোনো উপায় ছিলো না। এতে আনিতা বুঝে যায় যে আদৃত নিজেকে ওর থেকে আড়াল করে রাখতে চায়। আনিতাও আর জোর করেনি আদৃতকে। থাকুক না কিছু ভালো লাগার মানুষ আড়ালে ক্ষতি কি তাতে?

সন্ধ্যার কিছুটা পরে আনিতা ছাদে বসে আহিয়ান আর আদৃতের কথাই ভাবছিলো। তখনই আহিয়ান ছাদে আসে। ফাইজাদের আর আনিতাদের ছাদ পাশাপাশি হওয়াতে সহজেই এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে যাওয়া যায়। সেটারই সৎ ব্যবহার করেছে আহিয়ান। আহিয়ান আনিতার পাশে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

–“আকাশের দিকে তাকিয়ে কি করছো? তারা গুনছো? ওয়েট আমি গুনছি তোমার সাথে।”

কথাটা বলে আহিয়ান আঙুল উঁচু করে তারা গুনতে শুরু করে। তা দেখে আনিতা একপলক আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকায়। ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনিতা বলে,

–“আমি একদম মজা করার মুডে নেই।”

আনিতার কথা শুনে আহিয়ান তারা গুনা অফ করে আনিতার দিকে ফিরে বসে। আনিতা তখনও এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান আনিতার হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলে,

–“মন খারাপ?”

–“উঁহু।”

–“বলতে পারো আমাকে।”

–“এমনি ভালো লাগছিলো না।”

–“লুকিয়ে যাচ্ছো?”

আহিয়ানের কথায় আনিতা ক্ষানিকটা হাসলো। কেন হাসলো আনিতা নিজেও সেটা জানে না। শুধু হাসলো। আনিতা প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য বলে,

–“আর দুদিন পরই তো চলে যাবেন তাই না?”

–“হ্যা, এবার তো খুশি তাই না? আমি চলে গেলে তোমাকে আর কেউ জ্বালাবে না।”

–“মিস করবো খুব।”

কথাটা শুনে আনিতার দিকে ফিরে তাকালো আহিয়ান। আনিতা আহিয়ানের এমন চাহনী দেখে বলল,

–“আপনার পিছু লাগাটা সত্যি খুব মিস করবো।”

আহিয়ান এবার চোখ নামিয়ে নিলো। হয়তো অন্য কিছু আশা করেছিলো আনিতার থেকে। আহিয়ান হেসে রেলিং থেকে নেমে গেলো। আনিতাও নেমে দাঁড়ালো। আহিয়ান আনিতার থেকে এক হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

–“আবার আসবো জ্বালাতে চিন্তা করো না।”

এই প্রথম আনিতার এতটা কাছে কেউ আসলো। আহিয়ানের এতটা কাছে আসাতে আনিতার বুকটা কেমন যেন করে উঠলো। আহিয়ান সরে দাঁড়াতেই আনিতা এক পা পিছিয়ে গেলো।

*

তন্ময় অনেকটা সময় আহিয়ানকে দেখতে না পেয়ে ফাইয়াজের সাথে ছাদে এসে দাঁড়ালো। পাশের ছাদে চোখ যেতেই ওরা দুজন আনিতা আর আহিয়ানকে একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে। তন্ময় ক্ষানিকটা হাসলো। তন্ময় জানে আহিয়ান মুখে যতই না বলুক না কেন আনিতার প্রতি ওর একটা উইকনেস কাজ করে। কিন্তু পাগলটা স্বীকার করতে চাচ্ছে না। হয়তোবা আহিয়ান একসাথে অনেকগুলো রিলেশনে আছে বলেই কথাটা স্বীকার করতে চাচ্ছে না।

নিজেকে খারাপ ছেলে বলেই মনে করে আহিয়ান। কিন্তু ওর এই লাইফটার জন্য তো আহিয়ান নিজে একাই দায়ী না। ওর খারাপ হওয়ার পিছনে তো একটা গল্প আছে। আগে তো আহিয়ান এমন ছিলো না। আগে তো একসাথে অনেক গুলো মেয়ের সাথে রিলেশন করা দূরে থাক অন্য নজরে চোখ তুলেও তাকাতো না। মনে প্রানে শুধু একজনকেই তো ভালোবাসতো ও। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো? এত ভালোবেসেও ছেলেটা শেষ অব্দি কি পেলো? কিচ্ছু না। এতটা পাগল থাকার পরও ওকে ছেড়ে গেলো। সেই থেকেই তো মেয়েদের উপর থেকে আহিয়ানের বিশ্বাস উঠে যায়। সেই থেকেই আহিয়ান প্লে বয় টাইপ ছেলে হয়। এত স্মোক করে শুধু মাত্র ওই একটা মেয়ের জন্য।

আনিতা আহিয়ানের সাথে কথা বলছিলো। তখনই আনিতার চোখ যায় তন্ময় আর ফাইয়াজের উপর। আনিতা ওদের দুজনকে ডাকতেই তন্ময় ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে। তারপর হাসি মুখেই এগিয়ে আসে আনিতার দিকে। ফাইয়াজ ততক্ষণে আনিতার ছাদের চলে গিয়েছে। তন্ময় আহিয়ানের পাশে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,

–“কি ব্যাপার মামা? এই সন্ধ্যায় দুজনে কি করছিলে শুনি?”

–“তোর মাথা আর মন্ডু। সবসময় মাথায় আজাইরা চিন্তা তাই না?”

তন্ময় এর পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে আহিয়ান উপরের কথাটা বলল। তন্ময় আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে,

–“শালা হারা____”

তন্ময় কে পুরো কথা বলতে না দিয়েই আহিয়ান শিস বাজাতে বাজাতে ছাদের অন্য সাইডে চলে গেলো। ফাইয়াজ তন্ময় আনিতা তিনজন মিলে এবার গল্পের ঝুলি খুলে বসেছে। এর মাঝে আহিয়ানের ফোন বেজে উঠে। আহিয়ান একপলক ওদের দিকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে নেয়। আনিতা আহিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে তন্ময় কে জিজ্ঞেস করে,

–“তোমার বন্ধু সারাদিন কার সাথে কথা বলে গো? প্রেম-টেম করে নাকি?”

–“আরে কি বলো? শুধু কি প্রেম? একেবারে সংসার সাজিয়ে নিয়েছে। একটা দুইটা প্রেম নাকি? কতগুলো প্রেম করে ওর নিজেরও জানা নেই।”

–“তাহলে একটা সংসার ভাঙলে তো আর কিছু হবে না তাই না? কারন আরো অনেক গুলো আছে। ওয়েট আমি আসছি।”

কথাটা বলেই আনিতা দৌড়ে আহিয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আহিয়ান তখন ওর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলো। আনিতা গিয়ে আহিয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে আহিয়ানের কাঁধে মাথা রাখতেই আহিয়ান চমকে আনিতার দিকে তাকায়। আনিতা হাসিমুখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে ফোনের দিকে তাকায়। আহিয়ান তখনো আনিতার দিকে হা করেই তাকিয়ে আছে। আহিয়ানের গার্লফ্রেন্ড তখন রেগে চিৎকার করে বলে,

–“হেই স্টুপিড গার্ল তোমার সাহস কি করে হলো আহিয়ানকে এভাবে ধরার?”

আনিতা মুখ টিপে হেসে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ভাবে বলে,

–“আহিয়ান ওই মেয়েটা আমাকে স্টুপিড বলছে আর তুমি চুপ করে আছো?”

আহিয়ান এখনো অবাক হয়ে আনিতার দিকে তাকিয়ে আছে। আনিতা আহিয়ানকে তুমি বলাতে আহিয়ান যেন আরো বেশি ঝটকা খেয়েছে। আহিয়ানের গার্লফ্রেন্ড তখন আগের তুলনায় আরো বেশি চিৎকার করে বলে,

–“এই এই তুমি আমার সাথে কথা বলো। আহিয়ান তোমাকে কি বলবে হ্যাঁ? লজ্জা করে না তোমার অন্যের বিএফ এর সাথে এত ঘেঁষাঘেঁষি করো। নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার।”

–“বিহেভ ইউরসেল্ফ রাইসা।”

রাইসার কথায় আহিয়ান বেশ রেগেই কথাটা বলল। এদিকে আনিতা মুখ টিপে হাসছে। রাইসা কিছুটা কাঁদোকাঁদো ফেস করে বলে,

–“আহিয়ান ওই মেয়েটার জন্য তুমি আমাকে ঝাড়ি মেরে কথা বললে? ভুলে যেও না আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড। ভালোবাসি আম____”

আহিয়ান পুরো কথা না শুনেই লাইন কেটে দিলো। রাইসা আবারো ফোন করে। এবারও আহিয়ান ফোন কেটে দেয়। একের পর এক ফোন দিয়েই যাচ্ছিলো রাইসা। শেষে কিছুটা বিরক্ত হয়েই আহিয়ান ফোন রিসিভ করে ঝাঁজালো কন্ঠে বলে,

–“ডোন্ট ডেয়ার ডিস্টার্ব মি নেক্সট টাইম। তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না আমি এটা বুঝো না? আর একবার ফোন দিয়েছো তো জানে মেরে ফেলবো।”

কথাটা বলেই আহিয়ান লাইন কেটে দিয়ে সবকিছু থেকে রাইসাকে ব্লক করে দেয়। আনিতা ভাবেনি এমন কিছু হবে। এবার ওর নিজের কাছেই বড্ড খারাপ লাগছে। আহিয়ান ঝামটা মেরে আনিতার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

–“নাউ হ্যাপি? এটাই চেয়েছিলে না? যাও তোমার চাওয়া পূর্ন করে দিলাম। এরপর থেকে আমার সাথে আর এমন কিছু করার কথা কল্পনাতেও ভাববে না বলে দিলাম।”

এই বলে আহিয়ান ওখান থেকে রেগে হনহন করে চলে গেলো। আনিতার চোখ বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ফাইয়াজ আর তন্ময় এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। আহিয়ান চলে যেতেই ওরা আনিতার কাছে আসে। ফাইয়াজ আনিতার কাঁধে হাত রাখতেই আনিতা চোখের পানিটা মুছে হাসিমুখে বলে,

–“হ্যাঁ বলো কিছু বলবে?”

তন্ময় আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে আনিতার হাতদুটো ওর নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

–“সরি কিউটিপাই। ওর হয়ে আমি কানে ধরছি এই যে দেখো। ও এমনই ওর কথায় কিছু মনে করো না প্লিজ। কোনো কারনে মেবি আপসেট ছিলো তাই ওরকম বিহেভ করেছে তোমার সাথে। রাগ কমলে নিজে থেকে এসে সরি বলবে দেখো।”

–“না না তুমি কেন সরি বলছো? উনি তো ভুল কিছু বলে নি। আমি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম। আমার উচিত হয়নি এমনটা করার।”

–“আনি বুড়ি শো_____”

ফাইয়াজের ডাক না শুনেই আনিতা দৌড়ে ছাদে থেকে নেমে যায়। রুমে গিয়ে দরজা অফ করে দিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকে ক্ষানিকটা সময়। আনিতা ঠিক করে নিয়েছে যাই হয়ে যাক না কেন ও আর কখনো আহিয়ানের সাথে কথা বলবে না। আহিয়ান নিজে এসে কথা বলতে চাইলেও কথা বলবে না।

হঠাৎই আনিতার আদৃতের কথা মনে পড়ে। আজকে একবারও আদৃতের সাথে কথা হয়নি আনিতার। সারা দিনে অনলাইনেও আসেনি আর সাথে ফোনও অফ ছিলো। সেজন্য আনিতার মন কিছুটা খারাপও ছিলো। আদৃতের সাথে কথা বলতে বলতে অভ্যেসে পরিনত হয়েছে আনিতার। কেমন যেন একটা অদৃশ্য মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে আদৃত আনিতাকে।

মন ভালো করার জন্যই বিকেল থেকে সন্ধ্যা অব্দি ছাদে বসে ছিলো আনিতা। আহিয়ানের সাথে কথা বলে যা ও একটু মুড ঠিক হয়েছিলো তাও শেষ হয়ে গেলো। এখন মন খারাপ ভাবটা কিছুতেই যেন কাটতে চাইছে না আনিতার।

ফোনটা হাতে নিতেই আনিতার ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ইংলিশ ফ্রন্টে “আদৃত” নামটা জ্বলজ্বল করছে। এবার বেশ অভিমান হলো আনিতার। সারাটা দিনে একটা খোঁজ নিলো না এখন আসছে ফোন করতে। এই ভেবে আনিতা ঠিক করলো কথা বলবে না আদৃতের সাথে। আদৃত বেশ কয়েকবার ফোন করলেও আনিতা ফোন রিসিভ না করে বিছানায় রেখে দিলো। সাথে সাথেই ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আনিতা ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ ওপেন করে,

–“সরি আনি। একটু ব্যস্ত ছিলাম সাথে মুড অফ ছিলো কিছুটা তাই ফোনটা অফ ছিলো। নেক্সট টাইম আর এমন হবে না প্রমিস করছি। এরপর ফোন অফ থাকলেও আগে থেকে জানিয়ে দিবো সত্যি বলছি। প্লিজ লক্ষীটি ফোন রিসিভ করো।”

আদৃতের ম্যাসেজ দেখে আনিতার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। বার বার ম্যাসেজটা পড়ছে আর মুচকি হাসছে আনিতা। আবারো ফোন বেজে উঠলো আনিতার। এবার যেন আনিতার রাগটা গলে পানি হয়ে গেলো। আনিতা ফোন রিসিভ করে কন্ঠে ক্ষানিকটা গাম্ভীর্যের ভাব এনে বলে,

–“কে বলছেন আপনি? কাকে চাই?”

–“সরি সরি আনি প্লিজ রাগ করে থেকো না।”

–“এক্সকিউজ মি? আনি কে? আপনি মনে হয় ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন।”

–“লক্ষী সোনা রাগ করে না, একটু হাসো প্লিজ। ভাল্লাগে না আর হবে না করছি যে প্রমিস।”

এই প্রথম আদৃতের কন্ঠে গান শুনলো আনিতা। আদৃতের গানের গলাটাও বেশ। আদৃতের ভয়েসের উপর আনিতা বরাবরই ক্রাশ। এবার যেন আরো বেশিই পাগল হয়ে গেলো আনিতা। গান শুনে আনিতা মৃদু হাসলো। ওর হাসির আওয়াজ পেয়ে আদৃত খুশিতে হালকা চিৎকার করে বলে,

–“ইয়েএএএ আমার আনি পাখি হেসেছে। রাগ কমে___”

–“ওয়েট ওয়েট কি বললে? তোমার আনি?”

–“ক্ কোথায়? ভু্ ভুল শুনেছো তুমি।”

–“আমার তো মনে হচ্ছে আমি একদম ঠিক শুনলাম।”

–“না ভুল শুনেছো তুমি।”

–“আচ্ছা বাদ দাও কি করো?”

–“সত্যি বলবো নাকি মিথ্যে?”

–“যেটা বলে খুশি হও সেটাই।”

–“উমম স্মোক করছি।”

–“কি? ঠিক শুনলাম আমি?”

–“ওই তো মাঝে মধ্যে___”

–“ওকে বাদ দাও তুমি কি করবে না করবে সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার।”

–“তুমি চাইলে তোমার ব্যাপারও হতে পারে।”

–“কিছু বললে?”

–“নাহ তো।”

এভাবে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে আনিতা ফোন রেখে দেয়। আনিতার মন এবার বেশ ফুরফুরে লাগছে। আদৃতের সত্যি অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। মূহুর্তেই কি ভাবে আনিতার মন খারাপ ভাব কাটিয়ে দিলো। মুচকি হেসে আনিতা ফোনটা পাশে রেখে শুয়ে পড়লো বিছানায়।

একটু বাদেই দরজায় নক করে অনিমা। আনিতা উঠে দরজা খুলতেই অনিমা হাই তুলতে তুলতে বিছানায় গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। আনিতা বিছানার কাছে যেতেই অনিমা বলে,

–“ফুপ্পি তোকে ডেকেছে। এক্ষুনি যেতে বলেছে।”

অনিমার কথা শুনে আনিতা ফোন হাতে নিয়ে একবার টাইম দেখে নিলো। ৯ঃ৫৪ বাজে এসময় হঠাৎ ফুপ্পি ডাকলো কেন সেটাই ভাবছে আনিতা। অনিমার দিকে আর একবার তাকিয়ে আনিতা জিজ্ঞেস করলো,

–“এখনি যেতে হবে? সকালে গেলে হবে না?”

–“নাহ ফাইয়াজ ভাইয়া তো বলল এখনি যেতে বলেছে।

আনিতা আর কিছু না বলে বিছানা থেকে উড়নাটা নিয়ে মাথায় ঘোমটা দিতে দিতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। আনিতা ওর আম্মুর রুমে গিয়ে ওর আম্মুকে বলে সদর দরজা খুলে বের হতে গেলেই ওর মেজো চাচ্চু ডেকে উঠলেন। আনিতা ওর মেজো চাচ্চুর ডাক শুনে পিছু ঘুরে তাকাতেই ওর চাচ্চু বললেন,

–“এসময় কোথায় যাচ্ছো আম্মু?”

–“ফুপ্পি নাকি ডেকেছে আমায় সেজন্যই যাচ্ছিলাম।”

–“যেতে পারবে নাকি আমি আসবো সাথে?”

–“না চাচ্চু আমি যেতে পারবো।”

–“আচ্ছা তাহলে যাও। তাড়াতাড়ি চলে এসো।”

এই বলে আনিতার চাচ্চু তার রুমে চলে গেলেন। আনিতাও বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ফাইয়াজদের বাসায় ঢোকার পরই কেউ একজন হাত দিয়ে আনিতার মুখ চেপে ধরে সিড়ি বেয়ে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদে যাওয়ার পর আনিতার মুখ ছেড়ে দিতেই আনিতা হাঁপাতে থাকে। আনিতা কিছু বলার জন্য সামনে তাকাতেই দেখে আহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আহিয়ানই ওকে এভাবে টেনে ছাদে নিয়ে আসলো? এতক্ষণে আনিতা ব্যাপারটা বুঝলো। আনিতা উলটো ঘুরে চলে আসতে নিলেই আহিয়ান আনিতার হাত চেপে ধরে। আনিতা হাত ছুটানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে। কিন্তু কিছুতেই নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না। আহিয়ান শান্ত গলায় বলল,

–“কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে। একটু শান্ত ভাবে দাঁড়াও কথাগুলো শেষ হলেই তোমাকে যেতে দিবো।”

–“আমার সাথে আপনার কোনো কথা থাকতে পারে না তো।”

–“আনিতা প্লিজ বলতে দাও আমাকে।”

আনিতা ঝামটা মেরে আহিয়ানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। আনিতা কিছুটা মৃদু চিৎকার করেই বলে,

–“বললাম না আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।”

এই বলে আনিতা চলে যেতে নিলেই আহিয়ান আনিতার বাহু চেপে ধরে চিলেকোঠার দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয় ওকে। আহিয়ান এক হাত দেয়ালে রেখে অন্য হাত দিয়ে শক্ত করে আনিতার বাহু চেপে ধরে। আহিয়ান শক্ত করে বাহু চেপে ধরাতে আনিতার বেশ ব্যাথা লাগছে। আহিয়ান রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

–“আমি যখন বলেছি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে তখন তোমাকে আমার কথা শুনতে হবে। মানে শুনতে হবেই বুঝেছো?”



চলবে।

[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]