শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০৫

0
775

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৫
#Ornisha_Sathi

–“আ’ম রিয়েলি সরি আনিতা। আসলে তখন তোমার সাথে ওরকম বিহেভ করাটা আমার একদম ঠিক হয়নি। একটা বিষয়ে টেন্সড ছিলাম তা___”

–“ইট’স ওকে। আমি তখন একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম। সো এখানে আপনার সরি বলার কিছু নেই।”

–“আনিতা শুনো___”

–“এটা বলার জন্যই এখানে নিয়ে এসেছিলেন? বলা শেষ। এখন আ্ আমাকে ছেড়ে দূর্ দূরে সরে দাঁড়ান প্লিজ। অ্ অস্বস্তি হচ্ছে আমার।”

আনিতার কথায় আহিয়ান একবার নিজের দিকে তাকালো। আহিয়ান আনিতার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। দুজনের মাঝে ইঞ্চি দুয়েকের ফারাক হবে। আহিয়ান আনিতার বাহু ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গেই আনিতা সেখান থেকে চলে গেলো। আনিতা ওর ফুপ্পির সাথে দেখা না করেই বাসায় চলে আসে৷

পরদিন আনিতা কলেজ থেকে ফিরে ফোন হাতে নিতেই দেখে আদৃত ওকে একটা মেসেঞ্জার গ্রুপে এড করেছে। আনিতাকে অনলাইনে দেখে সাথে সাথেই আদৃত ম্যাসেজ করে,

–“বাসায় ফিরেছো?”

–“হ্যাঁ। কি করছো?”

–“এইতো আপাতত কোনো কাজ নেই তাই বসে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে গ্রুপ ম্যাসেজ করছি।”

–“ওহ আচ্ছা।”

–“তোমাকে একটা গ্রুপে এড করেছি।”

–“হ্যাঁ দেখলাম।”

–“সরি তোমার পারমিশন নেইনি।”

–“সরি বলার কিছু নেই। তাছাড়া দেখলাম ওখানে আমার পরিচিত একটা ফ্রেন্ডও এড আছে।”

–“কে?”

–“জেরিন রহমান।”

–“ও তোমার ফ্রেন্ড?”

–“হ্যাঁ ফাইভ অব্দি একসাথেই পড়াশুনো করেছি মাঝে ৫ বছর আলাদা স্কুলে ছিলাম এখন আবার একই কলেজে একই গ্রুপে আছি।”

–“ওহ তাহলে তো হলোই। নিজেকে আর একা লাগবে না।”

–“বাকী দুজনকে তো চিনি না।”

–“রাতুল আর আরহান দুজনেই আমার ফ্রেন্ড। রাতুল আর আমি একসাথে জব করি। আরহানও আমাদের সাথেই জব করতো তবে মাস খানেক আগে ছেড়ে দিয়েছে।”

–“ওহ আচ্ছা। তো এখন রাখছি গোসল করবো।”

–“ওকেহ।”

আনিতা ফোন রেখে কাবার্ড থেকে জামা বের করে গোসল করতে চলে গেলো। গোসল সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় শুতেই ঘুমে তলিয়ে গেলো আনিতা। সন্ধ্যার কিছুটা আগে আনিতার মেজো কাকির ডাকে ঘুম ভাঙে আনিতার।

আলসেমি ভেঙে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় আনিতা। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে সোজা ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় বসে। আনিতা ওর আম্মুকে ডেকে বলে,

–“আম্মু এক মগ কফি দিও তো মাথাটা খুব ধরেছে।”

আনিতার আম্মু কিচেন থেকে হাঁক ছেড়ে বলে,

–“সারাদিন রাত ফোন টিপলে মাথা তো ধরবেই। আরো বেশি করে ফোন টিপ মাথা ধরা কমে যাবে।”

–“ভালো কথা বলেছো আমি বরং ফোনই টিপি তাহলেই আমার মাথা ধরা কমে যাবে।”

এই বলে আনিতা রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে এসে আবার সোফায় বসে। আনিতার আম্মু এখনো আসছে না দেখে আনিতা নিজেই যায় কিচেনে। ওর আম্মু রাতের খাবার রান্না করছিলো আনিতাকে দেখতে পেয়ে বলে,

–“একটু দাঁড়া হাতের কাজটা শেষ করেই কফি দিচ্ছি।”

–“আমিই বানিয়ে নিচ্ছি। তুমি কাজ করো।”

এই বলে আনিতা নিজেই কফি বানিয়ে নেয়। কফির মগ হাতে নিয়ে আনিতা ছাদে চলে যায়। ছাদে গিয়ে আনিতা দেখে ওর মেজ চাচ্চুর ছেলে জারাফ খেলছে। জারাফের বয়স ৫ বছর। এ বাড়ির সব থেকে ছোট সদস্য হলো জারাফ। আনিতাকে দেখেই জারাফ দৌড়ে ওর কাছে এসে বলে,

–“আপ্পি খেলবে আমাদের সাথে?”

আনিতা জারাফের সামনে বসে ওর গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বলে,

–“না ভাই তুমিই খেলো। আপ্পির মাথা ধরেছে।”

জারাফ মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানায়। তা দেখে আনিতাও মুচকি হেসে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে,

–“নিচে যাও ভাই। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তো। নিচে গিয়ে খেলা করো।”

আনিতার কথায় জারাফ বল হাতে নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। আনিতার আব্বুরা ৩ ভাই। ওর আব্বুই বড়। আনিতার আব্বু আর দুই চাচ্চু তিনজনেই প্রবাসী। আনিতার ছোট চাচ্চু এখনো বিয়ে করেনি। আনিতার দাদাভাই বেঁচে নেই। দাদু আম্মু আব্বু দুই চাচ্চু কাকি বোন আর ছোট্ট জারাফকে নিয়েই ওদের পরিবার।

আর আনিতার একমাত্র ফুপ্পি হলেন ফাইয়াজের আম্মু। সবার বড় তিনি। ফাইয়াজের আর কোনো ভাইবোন নেই সেই সুবাদে আনিতা অনিমা জারাফ ওদের সকলের প্রান। আনিতার দাদাভাইয়ের খুব আদরের ছিলেন আনিতার ফুপ্পি৷ মেয়েকে যাতে তার থেকে দূরে যেতে না হয় সেজন্যই তার নিজের ভাইয়ের ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সবসময় পাশাপাশি বাড়িতেই ছিলেন।

*

আনিতা কফির মগে চুমুক দিয়ে মগটা ছাদের রেলিংয়ে রাখলেন। ফোন হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে যেতেই আনিতা দেখলো গ্রুপে ম্যাসেজ হচ্ছে। আদৃত তখন আনিতাকে ম্যাসেজ দিয়ে গ্রুপে যেতে বললে আনিতা গ্রুপের ম্যাসেজ সিন করে। তখনই জেরিন বলে,

–“আনিতা তুই? চিনিস ওদের?”

–“আদৃত আর তুই ছাড়া আপাতত আর কাউকে চিনি না।”

–“তোমরা দুজন দুজনকে চিনো?”

রাতুলের প্রশ্নে আদৃত রিপ্লাই করলো। আদৃত রাতুল আর আরহানকে জানালো আনিতা আর জেরিন একসাথেই পড়াশুনো করে। আর বাসাও কাছাকাছি। এরপর আদৃত নিজেই আনিতার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। জেরিন তখন ওর ক্লোজ ফ্রেন্ড আমিরাকে কে এড করে। আদৃতের মতো ওর বাকি ফ্রেন্ড দুজনও খুব মিশুক টাইপের। খুব অল্পতেই ওদের সবার খুব ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়।

কেটে যায় আরো একটা দিন। আজকে বিকেলেই আহিয়ান তন্ময় ওরা চলে যাবে ঢাকায়। আহিয়ানরা যে কদিন এখানে ছিলো বেশ কয়েকবার ফাইয়াজের সাথে আনিতার বাসায় এসেছিলো ওরা। বিকেলে আনিতা ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো। তখনই আহিয়ান এসে আনিতার পাশে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ থাকার পর আনিতা নিজেই বলে,

–“সেদিনের জন্য সত্যি সরি।”

–“সরি বলার কিছু নেই তো। উলটো আমি সরি বলবো তোমার সাথে ওরকম রুড বিহেভ করার জন্য।”

–“একদম না। আপনি আপনার জায়গায় সম্পূর্ণ ঠিক ছিলেন। আপনার জায়গায় আমি থাকলেও এমনই করতাম। আমার জন্যই তো রাইসা আপুর সাথে আপনার রিলেশন ব্রেক হলো।”

–“এটা কোনো ম্যাটার না। এমন অনেক মেয়ে আমার লাইফে আসে যায়। তাছাড়া এটা নতুন কিছু না। আমি ভালোবাসতাম না রাইসাকে৷ ইভেন কাউকেই ভালোবাসি না আমি। জাস্ট এমনিতেই রিলেশন করি।”

–“কিন্তু মেয়েগুলো যে আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে।”

–“সবাই না। দু তিন জন আছে যারা আমি বলতে পাগল।”

–“তাহলে তাদের থেকে একজনকে কেন বেছে নিচ্ছেন না? কেন একসাথে এত মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ান? কেন ভালোবাসেন না কাউকে?”

আনিতার প্রশ্নে আহিয়ান একবার আনিতার দিকে তাকালো। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

–“জানি না।”

প্রতিউত্তরে আনিতা আর কিছুই বলল না। আবারো বেশ কিছুটা সময় দুজনেই চুপ ছিলো। এবার নিরবতা ভেঙে আহিয়ান বলে,

–“তোহ মিস আসছি তাহলে? আর এতদিন তোমাকে জ্বালানোর জন্য সরি।”

–“সরি বলার কিছুই নেই। আর তাছাড়া আপনি আর আমাকে কি জ্বালিয়েছেন? আমিই তো সবসময় আপনাকে জ্বালাতন করেছি।”

আনিতার কথায় আহিয়ান ক্ষানিকটা হাসলো। মুখের হাসিটা বজায় রেখেই আনিতার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো আহিয়ান। আনিতার দিকে তাকিয়েই আহিয়ান বলে,

–“দাওয়াত রইলো তোমার। আমাদের ওখান থেকে ঘুরে আসার জন্য। এখন তো যেতে পারবে না। নেক্সট টাইম ফাইয়াজ বাসায় আসলে ওর সাথে যেও।”

আনিতা কিছু না বলে আহিয়ানের কথায় শুধু হাসলো। বেশ ক্ষানিকটা সময় আবারো দুজন চুপ করে রইলো। আহিয়ান আর মিনিট দুয়েক সেখানে দাঁড়িয়ে উলটো ঘুরে হাঁটা দিলো। আনিতা পিছন থেকে আহিয়ানকে ডেকে বলে,

–“আবার আসবেন কিন্তু। এরপরের বার আর পিছু লাগবো না। বেশ ভালোভাবেই অতিথি আপ্যায়ন করবো।”

আনিতার কথায় আহিয়ান দাঁড়িয়ে যায়। তারপর পিছু ঘুরে আনিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। হাসিমুখেই আনিতার কথার জবাব দেয় আহিয়ান,

–“অবশ্যই চেষ্টা করবো। তবে আপ্যায়নের থেকে পিছু লাগাটাই বেশি ইঞ্জয় করবো মনে হচ্ছে।”

আহিয়ানের কথায় আনিতা কিছুটা শব্দ করেই হাসলো। আনিতার হাসির দিকে আহিয়ান মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আহিয়ান মৃদু হেসে আনিতার থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে গেলো। আহিয়ান যাওয়ার পর আনিতাও নিচে নেমে আসে। আনিতা উঠোনে যেতেই দেখে ফাইয়াজ তন্ময় আর আহিয়ান তিনজনেই ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সবার থেকে বিদায় নিচ্ছে।

আনিতা সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই তন্ময় আনিতার কাছে এসে দাঁড়ায়। তন্ময় আর ফাইয়াজ আনিতার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায় গেট দিয়ে। আহিয়ান যাওয়ার আগে একবার আনিতার দিকে তাকিয়ে ইশারায় “যাচ্ছি” বলে। উত্তরে আনিতাও ইশারায় সম্মতি জানায়।

এর মাঝে অনেকগুলো দিন কেটে যায়। ফাইয়াজের সাথে আনিতার মাঝে মধ্যেই কথা হয়। সাথে তন্ময় এর সাথেও কথা হয় আনিতার। কিন্তু আহিয়ানের সাথে একবারো কথা হয়নি ওর। ফাইয়াজের সাথে কথা বলার সময় প্রায়ই আহিয়ান আর তন্ময় পাশে থাকে। তন্ময় ফাইয়াজের থেকে ফোন নিয়ে আনিতার সাথে কথা বললেও আহিয়ান কখনো বলেনি। আনিতাও নিজে থেকে বলতে চায়নি কথা।

এতদিনে আদৃত আনিতা রাতুল আরহান জেরিন আমিরা ওদের ছয় জনের ফ্রেন্ডশিপটা খুব গভীর হয়েছে। রাতুল প্রায়শই আনিতার সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করে। গ্রুপের পাশাপাশি আরহান আর রাতুলের সাথে আনিতার ইনবক্সে মাঝে মধ্যে কথা হয়।

আদৃতের উপর কেমন যেন একটা টান অনুভব করে আনিতা। যদিও সেটা আনিতা ছাড়া অন্য কেউই জানে না। এমনকি আনিতা আদৃতকে সেটাও বুঝতে দেয় না। একটা অদৃশ্য মায়ায় জরিয়ে ফেলেছে ছেলেটা ওকে। যে ছেলেটাকে এখনো কিনা আনিতা দেখলোই না সে ছেলেটার জন্য মাঝে মধ্যেই আনিতার মন যেন কেমন করে ওঠে। ওই আদৃত নামক অচেনা ছেলেটাই প্রায় সময় আনিতার মন খারাপের কারন হয়। আবার সেই আদৃত নামক ছেলেটাই আনিতার মন ভালো করার একমাত্র মেডিসিন।

*

আনিতা আজকে কলেজে যেতেই জেরিন এসে দাঁড়ায় ওর সামনে। জেরিন আর আনিতা কলেজের করিডোর দিয়ে হাঁটছে আর নানান কথা বলছে। কথায় কথায় এবার জেরিন আদৃতের কথা তুলে। আদৃতকে নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে জেরিন বলে,

–“আদৃত কাল রাতে আমায় প্রপোজ করেছে আনিতা।”

জেরিনে কথায় আনিতা চমকে তাকায় ওর দিকে। হঠাৎই আনিতা ওর বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে। চোখদুটো মূহুর্তেই ছলছল করে উঠলো আনিতার। আনিতা পরপর বড় দুটো শ্বাস নিয়ে হাসিমুখে জেরিনকে বলে,

–“ভালো তো। তাহলে হ্যাঁ বলে দে আদৃতকে।”

–“আরেহ কি যে বলিস না ঢাকাইয়া ছেলে কত মেয়ের সাথে রিলেশন করে ঠিক আছে নাকি? মজাও তো করতে পারে।”

–“আমার সাথেও খুব মজা করে আদৃত। তবে মজা করে প্রপোজ কখনো করেনি। ঢাকার ছেলে বলে ভুল ভাবিস না। হয়তো বা সত্যিই ভালোবাসে তোকে।”

–“আচ্ছা বাদ দে এসব__”

জেরিন আর কিছু বলবে তার আগেই তাসকিয়া আর রোদেলা চলে আসে ওদের কাছে। তাই জেরিন আর কিছু বলল না। অন্য বিষয়ে কথা বলতে বলতে চারজনেই ক্লাসে চলে গেলো।

দুপুরে কলেজ থেকে এসে কিচ্ছু খায়নি আনিতা। গোসল করেই ভেজা চুলে শুয়েছে। সেই যে দুপুরে ঘুমিয়েছে এখন বিকেল সাড়ে চারটায় ঘুম ভাঙলো আনিতার। ভেজা চুলে ওভাবে শুয়ে থাকায় আনিতার মাথা ব্যাথা করছে খুব। কড়া করে এক মগ কফি বানিয়ে ছাদে চলে গেলো আনিতা।

জেরিনের সাথে কথা বলার পর থেকেই আনিতার মুড অফ ছিলো। আদৃত বেশ কয়েকবার আনিতাকে ফোন আর ম্যাসেজ করেছিলো কিন্তু আনিতা ফোন ধরেনি আর রিপ্লাই ও করেনি। এখন ছাদে এসে আনিতার মুড পুরোপুরি ঠিক না হলেও কিছুটা ঠিক হয়েছে। কফিটা শেষ করে আকাশের দিকে তাকায় আনিতা। চোখের পলক ফেলতেই আনিতার গাল বেয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কেন এমন হলো সেটা নিজেও জানে না আনিতা। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই আনিতা হঠাৎই একটা রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে উঠে,

“কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে___কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে। তোমারে দেখিতে দেয় না, মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না___মোহমেঘে তোমারে অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না।

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না___মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে, তোমায় যবে পাই দেখিতে___ওহে ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে, তোমায় যবে পাই দেখিতে।

ওহে হারাই-হারাই সদা হয় ভয়___হারাই-হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে।

আশ না মিটিতে হারাইয়া, পলক না পড়িতে হারাইয়া, হৃদয় না জুড়াতে হারাইয়া ফেলি চকিতে।

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না___মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

ওহে কি করিলে বলো পাইবো তোমারে, রাখিবো আঁখিতে আঁখিতে___ওহে কি করিলে বলো পাইবো তোমারে, রাখিবো আঁখিতে আঁখিতে।

ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাবো না, এত প্রেম আমি কোথা পাবো না, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।

আমার সাধ্য কিবা তোমারে, দয়া না করিলে কে পারে, তুমি আপনি না এলে, কে পারে হৃদয়ে রাখিতে?

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না___মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

ওহে আর কারো পানে চাহিবো না আর করিবো হে আমি প্রানপন___ওহে আর কারো পানে চাহিবো না আর করিবো হে আমি প্রানপন।

ওহে তুমি যদি বলো এখনি করিবো___তুমি যদি বলো এখনি করিবো, বিষয় বাসনা বিসর্জন দিবো, শ্রীচরণে বিষয় দিবো, অকাতরে বিষয় দিবো, তোমার লাগি বিষয় বাসনা বিসর্জন।

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না___মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে___কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না। মোহমেঘে তোমারে অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না।

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না___মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না???”

আনিতা রবীন্দ্রসংগীত শেষ করে চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে পিছু ঘুরতেই দেখতে পায় অনিমাকে। আনিতার থেকে এক হাত দূরত্বেই অনিমা দাঁড়িয়ে আছে আনিতার ফোন হাতে। আনিতা অনিমার দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–“কখন এসেছিস?”

–“যখন গান শুরু করলি তখনই।”

–“ওহ। তাহলে ডাকলি না কেন?”

–“আদৃত ভাইয়া না করেছিলো।”

অনিমার কথায় আনিতা ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে। অনিমার কথা বুঝতে না পেরে আনিতা বলে,

–“মানে?”

–“আদৃত ভাইয়া ফোন করেছে। ফোন দেওয়ার জন্য ছাদে এসে তোকে ডাকতে গেলেই আদৃত ভাইয়া বারন করে আমায় তোমে ডাকতে৷ বলে গান শেষ হলে ডেকো। এখনো লাইনে আছে নে।”

এই বলে অনিমা আনিতার দিকে ফোন এগিয়ে দেয়। আনিতা অনিমার হাত থেকে ফোন নিয়ে বলে,

–“তুই যা আমি আসছি।”

আনিতার কথায় অনিমা বিনাবাক্যে ছাদ থেকে নেমে যায়। এখনো সন্ধ্যা হয়নি। ফোনের ওপাশ থেকে আদৃত আনিতাকে ডেকে যাচ্ছে। আনিতা ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে আদৃত বলে,

–“কি হয়েছে তোমার? এতগুলো ফোন দিয়েছি ধরলে না। ম্যাসেজগুলোও সিন করে রেখে দিয়েছো রিপ্লাই করছো না।”

–“এমনি ভালো লাগছিলো না।”

–“মন খারাপ?”

–“নাহ তো।”

–“সত্যি বলছো?”

–“মিথ্যে বলবো কেন?”

–“আচ্ছা সেটা আমি পরে দেখে নিবো। বাই দ্যা ওয়ে তোমার গানের গলাটা কিন্তু বেশ সুন্দর আনি।”

–“এতটাও সুন্দর না। তো শুনলাম কাল নাকি জেরিনকে প্রপোজ করেছেন?”

আনিতার কথায় আদৃতের এবার বেশ হাসি পেলো। এতক্ষণে আদৃত বুঝতে পারলো আনিতা আজ সারাদিন কেন ওকে এভোয়েড করেছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে আদৃত হেসে ফেলল। আদৃতের হাসি সবসময় আনিতার ভালো লাগলেও আজ বেশ রাগ হলো ওর। আদৃত বলে,

–“হ্যাঁ প্রপোজ করেছি তো।”

–“তো জেরিন কি বলল?”

–“এখনো কিছু বলেনি তবে হ্যাঁ বলতে আর কতক্ষণ বলো?”

–“তাহলে তো এখন আপনি আমার জিজু হয়ে গেলেন। আজ থেকেই জিজু ডাকা শুরু করি? কি বলেন?”

–“কেন?”

–“বাহ রে! এই যে আপনি আমার ফ্রেন্ডকে প্রপোজ করলেন। দুদিন পর তার সাথে রিলেশনে যাবেন তাহলে তো আমি জিজু বলে ডাকবোই?”

–“এই একদম না। জিজু বলে ডাকবে না আমাকে।”

–“নাহ আমি তো জিজু বলেই ডাকবো।”

–“বারন করছি না জিজু বলতে?”

–“কেন জিজু?”

আদৃত এবার রাগ করে ফোন কেটে দিলো। আনিতাও পালটা আর ফোন করেনি। এখনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে তাই আনিতা ছাদ থেকে নেমে গেলো।



চলবে