শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা পর্ব-০৮

0
375

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৮)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

ইন্সপেক্টর রাকিব হাওলাদার এর থেকে অনুমতি নিয়ে তার আলিফ কে নিয়ে একদিনের ট্যুরে বের হয় কায়েস।

ট্যুরের প্রোগ্রাম টা আলিফ এর ইচ্ছা ছিল।তায়েস অবশ্য জিজ্ঞাসা করেছে, তুমি ট্যুর পছন্দ করো?

আলিফ খুশিতে আটখানা হয়ে বলে ভিশন করি। তুমি আমাকে নিয়ে যাবে?
তায়েস তখন বলেছিল, নিয়ে যাবো তবে তোমাকে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে! দিবে?

আলিফ ঠোঁট উল্টে বলে, আগে বলো ইংলিশ থেকে করবে নাকি বাংলা থেকে?
তায়েস হেসে বললো, কোনটা থেকে করলে তোমার সুবিধা হয়?

আলিফ ঠোঁট প্রশারিত করে হেসে বললো, অবশ্যই ইংলিশ থেকে।
তায়েস বললো, আচ্ছা আমরা যেতে যেতে এসব নিয়ে আলোচনা করবো এখন ঝটপট তৈরি হয়ে আসো। আমি এখানে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

আলিফ মাথা কাত করে সম্মতি দিয়ে, তার মা’কে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে চলে যায়।
.
.
আলিফ আর তায়েস,তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্কের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে।
পার্কটি পুরো সবুজের সমারোহ। পার্কের প্রবেশ মুখেই নানান জাতের গাছগাছালি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো নার্সারি। সেখান থেকে চাইলে গাছের চারাও সংগ্রহ করা যায়।

প্রায় এক একর জায়গায় গড়ে ওঠা এই পার্কে রাইড গুলোর মধ্যে আছে রোলার কোষ্টার,মনোরেল, ওয়ান্ডার হুইল, হানিসুইং, বৈদ্যুতিক মিনি ট্রেন, সোয়ান অ্যাডভেঞ্চার, মেরি গো রাউন্ড, স্পেস শাটল, নাগর দোলা ও কিডস রাইড।

সাঁতার কাটার জন্য ভেতরে আছে সুইমিংপুল

তুরাগ নদীর পাড় ঘেঁষে এ পার্ক গড়ে ওঠায় এখানে তুরাগের মনোরম দৃশ্যের পাশাপাশি ফুরফুরে বাতাস ও পাওয়া যায়। নদীর ধারে বসে গল্প করে সময় কাটানোর জন্য আছে ডালিয়া, সূর্যমুখী, রজনীগন্ধা সহ বিভিন্ন বাহাড়ী নামের টং বা ছাউনির নিচে বসার ব্যবস্থা।

হৈ হুল্লোড় করে কিংবা নদীর ধারে বসে প্রকৃতির ছবি আকঁতে আকঁতে মনের অজান্তে ক্ষুধা লেগে গেলেও কোন সমস্যা নেই এখানে উদরপূর্তির জন্য আছে আধুনিক মানের রেস্তোরাঁ যেখানে সকাল ও বিকালের নাস্তার সাথে দুপুরের খাবারও পাওয়া যায়।

পার্কের ভেতরের রেস্তোরাঁয় চটপটি, নুডলস থেকে শুরু করে কাবাব, লুচি, ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাইসহ নানান পদের খাবার পাওয়া যায়।

আলিফ গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে চলে গেল তায়েস গাড়ি চালক কে ভাড়া মিটিয়ে দ্রুত পায়ে আসে।
আলিফ বায়না করো এখানে যতগুলো রাইড আছে সব গুলোতে সে চড়বে।তায়েস সম্মতি দিলে প্রথমে বৈদ্যুতিক মিনি ট্রেনে উঠে আলিফ।

তারপর সুইমিং পুলের কাছে গেলে আলিফ বললো,
-“তুমি আমাকে সুমদ্রের কাছে নিয়ে যাবে?
তায়েস বললো,
-“হঠাৎ সমুদ্র? এখানে আর ভালো লাগছে না?
আলিফ বললো,
-“আপ্পি সমুদ্রের কথা বলেছিল। খুব সুন্দর দেখতে সমুদ্র সৈকত।

তায়েস বললো,
-“আপ্পি আর কি বলেছে তোমায়?
আলিফ একটু ভেবে বললো,
-“ওখানে লুকোচুরি খেলার জন্য পারফেক্ট।

তায়েস সন্দিহান হয়ে বললো,
-“আর কি কি বলেছে?
-“তোমার মাথা! এতো প্রশ্ন করো কেন তুমি? এতো প্রশ্ন আমার ভালো লাগে না। তুমি জানো না? এবার চলো ঐ সূর্যমুখী টং এর ভিতরে যাই।

তারপর সে একাই দৌড়ে চলে গেল। তায়েস আলিফ এর বলা কথা গুলো মিলানোর চেষ্টা করে আলিফ এর কাছে যায়।
.
.
ফাইজা আলো কে রুমে নিয়ে এসে ফুল স্পীডে ফ্যান চালু করে দিয়ে বললো,
-“ভাবী মনি বোরকা খুলে নিন। এখানে গায়রে মাহরাম পুরুষ আসবে না।

ফাইজার কথায় আশ্বস্ত হয়ে, নিঃসংকোচে আলো বোরকা খুলে টলি ব্যাগ থেকে ওরনা দিয়ে শরীরে জরিয়ে নিল। সবাই এখন আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।রিনু তো বলেই ফেললো,
-“নতুন ভাবি আন্নে মাশাল্লা মেলা সুন্দর!তাই ক‌ই ভাইজান কি এমনে এমনে কাউরে না ক‌ইয়া আন্নেরে বিয়া ক‌ইরা নিয়ে আইছে?

ফাইজা রিনুকে ধমকে বললো,
-“রিনু আপা তুমি প্রয়োজনের বেশি কথা বলো।

রিনু মুখশ্রী মেঘের মতো করে বললো,
-“বড় আফা আমি কি মিছা কিছু ক‌ইছি?
-“মিথ্যা বল নাই ঠিক আছে শেষের কথা গুলো অহেতুক বলেছো। এবার যাও ভাবী মনির জন্য ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর শরবত তৈরি করে নিয়ে আস।
-“আইচ্ছা আফা যাইতাছি।

রিনু যাওয়ার পর ফাইজা আলো কে বললো,
-“আমার ভাইয়ার পছন্দ আছে স্বিকার করতেই হবে।মা শা আল্লাহ সত্যি আপনি অনেক সুন্দর ভাবী মনি।

আলো লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো,
-“আলহামদুলিল্লাহ আপু।
-“হুম ঠিক বলেছেন প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য যিনি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।

রামিসা চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে, ভাইয়ার সাথে রাগ করে ভাবীর সাথে কথা বলছে না। তবে মনে মনে সে সন্তুষ্ট হয়েছে আলো কে দেখে।

আলো গারো সবুজ রঙের সুতির থ্রিপিস পরেছে।ফর্সা গায়ের রঙে সবুজ রঙটা বেশ মানিয়েছে। ঠোঁটের কোণে ছোট কালো তিলটা খুব আকর্ষণীয়।ঘন কালো পাপড়ি গুলোর মাঝে নেত্রজোড়া মাঝারি সাইজের।নাকে ছোট্ট এক পাথরের ফুল কানে ছোট ইয়ারিং।এ ছাড়া আর কোন সাজের প্রয়োজন পড়ে না।

আলো কে হাসলে খুবই চমৎকার লাগবে কিন্তু মেয়েটার সরু চিকন ঠোঁটে বিন্দুমাত্র হাসির রেখা নেই।
.
.
রিনু আলো কে শরবত দিয়ে,ড্রয়িং রুমে এসে বললো,
-“ছোড আম্মা দুঃখ ক‌ইরেন না আন্নে কিন্তু জিতছেন!

সবাই তেড়া চাহনিতে তাকায় রিনুর দিকে।রিনু তারা দিয়ে বললো,
-“দুঃখ না ক‌ইরা নতুন ভাবিরে দেইক্কা যান ভাইযান একটু ফুল তুইল্লা লইয়া আইছে!

এবার সবাই বুঝতে পারে রিনু নতুন ব‌উ এর সুন্দর্যৌ নিয়ে এভাবে বলছে।
ফয়জান মুচকি হাসে।আলো কে যেদিন প্রথম দেখেছিল সেদিন ই ফয়জান এর আঁখিপল্লব দুটো এক মুখশ্রী তে আটকে গিয়েছিল। বিদেশে অনেক সুন্দর নারী দেখেছে সে কিন্তু কারো ফেইসে এতোটা মায়া জড়ানো ছিল না।

কায়েস কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে ফিরেছে। ফিরে এমন একটা সু-খবর শুনবে সে কখনোই কল্পনা করেনি।
ফয়জান কে মস্করা করে বললো,
-“ভাই তুমি তো অনেক ভাগ্য নিয়ে জন্মেছো! বিয়ে ঠিক হ‌ওয়ার পরেও এখনো অবধি বিয়ে করতে পারছি না।আর তুমি কিনা হুট করেই বিয়ে করে নিলে?

ফয়জান হেসে বললো,
-“চিন্তা করো না ভাই তোমার মনের আশা পূরণ হবে খুব শীঘ্রই ইনশা আল্লাহ।

আয়েশা অনেক বলে কয়ে ফাহমিদা কে নিয়ে ব‌উ দেখতে মেয়েদের রুমে এলো।আলো বসা থেকে দাঁড়িয়ে তাদের বসতে বললো। আয়েশা বললো,
-“আমার পাশে বসো?

আলো বসলে আয়েশা জিজ্ঞাসা করলো,
-“তোমার নাম টা জানা হয়নি এখনো,কি নাম তোমার?
-“জ্বি,আলো ইসলাম।

ফাহমিদা খাতুন তাকিয়ে আছেন কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। আয়েশা আরো টুকটাক কথা জিজ্ঞাসা করলেন।জানা গেল আলো ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী আর রামিসা ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী। তারমানে এক বছরের সিনিয়র আলো।
.
.
রাত সাড়ে বারোটার দিকে ফাইজা আলো কে নিয়ে আসে ফয়জান এর রুমে। এসে বললো,
-“আমাদের বাসা কমপ্লিট না হ‌ওয়া পর্যন্ত এটা তোমার রুম।

আলো চোখ তুলে এক নজর রুমটা দেখে নিল। তখন ফয়জান বেলকনি থেকে আসতে চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের।
আলো মাথা নিচু করে নেয়।
ফাইজা বললো,
-“আচ্ছা তুমি থাকেন,কিছুর প্রয়োজন হলে বলবেন।আমি রিনু আপা কে দিয়ে আপনার টলি ব্যাগটা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

এই বলে চলে গেল ফাইজা। ফয়জান একটু এগিয়ে এসে বললো,
-“আলো তোমার ব‌ইপত্র গুলো আগামীকাল নিয়ে আসার ব্যাবস্তা করবো। পড়াশোনা আবার কনটিনিউ করবে।

আলো নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,
-“জ্বি স্যার।

ফয়জান মুচকি হেসে বললো,
-“বাসায় ফর্মালিটির দরকার নেই। কলেজে আমি তোমার টিচার আর বাসায়..

এতটুকু শুনেই আলোর ভিতরটা মুচড়ে উঠলো। ফয়জান আলো’র অবস্থা বুঝতে পেরে বাকি কথা আর শেষ করলো না।

রিনু দরজায় কড়াঘাত করে বললো,
-“নতুন ভাবী আন্নের বেগ

আলো ভিড়ানো দরজা খুলে দিলে,রিনু ব্যাগটা ভিতরে রেখে হেসে চলে গেল।

ফয়জান এসে দরজা লক করে দিল ভিতর থেকে। আলো ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায়।যা ফয়জান এর চোখ এড়ালো না। খানিকটা কাছে এসে বললো,
-“আলো তোমার চোখ দুটো এতো লাল কেন?
কি হয়েছে বলো? চোখে কিছু পরেছে?

এই বলে ফয়জান আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে আলো দ্রুত বললো,
-“মাথা ব্যথা করছে। সেই জন্যই হয়তো।

ফয়জান থেমে গিয়ে বললো,
-“ফাইজা কে বলবো ম্যাসেজ করে দিতে?
-“লাগবে না এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
-“আচ্ছা শুয়ে পরো। ঘুম হলে ভালো লাগবে।

আলো গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় খাটের কাছে। তারপর কোন রকম জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পরে।
ফয়জান লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। তারপর নিজে গিয়ে আলোর পাশে আধশোয়া হয়ে বসলো।
ফয়জান এর উপস্থিতি টের পেয়ে আলো নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয়। চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে।
আকস্মিক ফয়জান এর ছোঁয়া অনুভব করে আলো চোখ খুলে পাশ ফিরে তাকায়। ফয়জান বললো,
-“চোখ বন্ধ করো। আমি কপালে মৃদু ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।

আলো কিছু বলতে চাইলে, ফয়জান বললো,
-“কোন কথা নয়। চোখ বন্ধ করো।
.
.
গভীর রাত,
ফয়জান আলো’র কপালে হাত রেখেই আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে পরেছিল।আরাম করে না শোয়ার কারণে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠতে নিলে,ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় দেখতে পেলো আলো ফয়জান এর কোমর জড়িয়ে পেটের দিকটায় মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে।
ফয়জান ঘুম ঘুম চোখেই মুচকি হেসে খুব সন্তর্পণে ঠিক হয়ে শুয়ে পড়ল যেন আলোর ঘুম ছুটে না যায়। এবার ফয়জান ঠিক হয়ে শোয়াতে আলোর মুখশ্রী ফয়জান এর বোকের বাঁ পাশে গুঁজে আছে….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।