শূন্যস্থানে তুমি পূর্ণতা পর্ব-০৫+০৬

0
282

#শূন্যস্থানে তুমি পূর্ণতা
#পর্বঃ০৫+০৬
#ফারজানা_আক্তার

“কিভাবে কি হলো মানে কি? ঘুম সম্পূর্ণ হয়নি তাই আবুল তাবুল বকছো হয়তো।”
ড্রাইভ করতে করতে গম্ভীর গলায় বলে সিয়াম।

“শুনুন আমি মোটেও আবুল তাবুল বকছি না। আপনি তো রাতে বলেছেন গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে তাহলে এখন এতো সকাল সকাল মিস্ত্রি পেলেন কোথায় গাড়ি ঠিক করার জন্য?”
নিকাব টা বাঁধতে বাঁধতে বলে কথাগুলো বলে রাইসা। সিয়াম একটুখানি রাইসার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে “ম্যাজিক”।
রাইসা আর কিছু বলেনা। এই মানুষটাকে ভীষণ বিরক্ত লাগছে রাইসার কিন্তু আফসোস সারাজীবন ওকে এই বিরক্তিকর মানুষটার সাথেই কাটাতে হবে।
একটা বিশাল বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থামে। রাইসা চোখ বুলিয়ে চারপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। গাড়ি গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই দারোয়ান একটানে গেইটটা লাগিয়ে দেয় আবার। সিয়াম গাড়ি থেকে নেমে রাইসার সাইডে এসে গাড়ির দরজাটা খুলে দেয়। রাইসা গাড়ি থেকে নেমে শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, শুধু শ্বশুড়বাড়ি বলে দৌড়াতে আর লাফালাফি করতে পারছেনা। একটা বাড়ি এতো সুন্দর হতে পারে কল্পনার বাহিরে ছিলো রাইসার। রাইসা একটু সামনে এগিয়ে ডানপাশে তাকাতেই দেখে একটা বিশাল বাগান যেখানে ফুটে রয়েছে নানা ধরনের ফুল, রাইসার ইচ্ছে করলো সূর্যমুখী ফুল টা একটু ছুঁয়ে দেখেতে প্রিয় ফুল বলে কথা।

*
ঘরে প্রবেশ করতেই রাইসা যেনো আর বড় ধাক্কা খাই, সে যা আশা করেনি তার থেকেও বেশি পাচ্ছে এতে খুশি হবে নাকি কাঁদবে ভাবতে পারছেনা। সবাই এখনো ঘুমিয়ে আছে। ঘরের চাবি একটা সবসময়ই সিয়ামের কাছে থাকে, সিয়াম দরজা খুলে সোজা নিজের সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রাইসার কাপড়ের ব্যাগটাও সে নিলোনা। সিয়ামের এমন কান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাইসা। হঠাৎ করে বুকের ভেতর কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠে রাইসার, কষ্ট হচ্ছে খুব। রাইসার মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হলো কেনো সিয়াম বিয়েটা করেছে? সিয়ামের আচার-আচরণে ভীষণ অসন্তুষ্ট রাইসা। রাইসা কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে কোনো মতে সিঁড়ি পর্যন্ত যায় তারপর থেমে থেমে এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি বেয়ে উঠে উপরের দিকে। রাইসার রাগও হচ্ছে খুব সিয়ামের উপর কিন্তু কিছু করার নেই তার এই মুহুর্তে। প্রায়ই অনেকক্ষন পর রাইসা সিঁড়ি ছেড়ে উপরে উঠে, কেমন জানি হাঁপিয়ে গেছে সে, খুব তৃষ্ণা পেয়েছে রাইসার কিন্তু এখন পানি পাবে কোথায় সেটা ভাবছে। উপরে উঠে দেখে অনেকগুলো গলি, একেকটা একেক দিকে, সিয়ামের রুম কোন দিকে খুঁজবে কিভাবে চিন্তায় পরে যায় রাইসা। রাইসা সেখানে একটা টুল দেখতে পেয়ে সেখানে বসে নিঃশ্বাস নিতে থাকে জোরে জোরে, খুব ক্লান্ত লাগছে ওর।
রিয়া ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে সকালের হালকা বাতাসের ঘ্রাণ নেয়। তারপর ড্রয়িংরুমে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হয়ে একটু আগাতেই খেয়াল করে রাইসাকে।
“আরে ভাবি তোমরা চলে এসেছো?”
একগাল হেঁসে বলে রিয়া। কিছুটা মুচকি হাসির সাথে রাইসা বলে “হু”। রাইসার কন্ঠ শোনে রিয়ার বুঝতে বাকি রইলোনা যে রাইসা বেশ ক্লান্ত, রিয়ার দৌড়ে পাশের রুমে যেয়ে সেখান থেকে ঠান্ডা পানি এনে রাইসাকে খাইয়ে দেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে ” ভাইয়া কোথায় আর তুমি এখানে কেনো বসে আছো?”

“উনার সাথেই তো এসেছি কিন্তু উনি উপরে উঠে দ্রুত পায়ে কোনদিকে চলে গেলেন লক্ষ করতে পারিনি তাই এখানে বসে ছিলাম।”

রাইসার কথা শুনে রিয়া মুচকি হেঁসে ওকে সিয়ামের রুমে নিয়ে যায়। সিয়াম তখন ওয়াশরুমে ছিলো। রিয়া রাইসাকে কাপড় চেঞ্জ করতে বলে চলে যায় সেখান থেকে। রিয়া চলে গেলে রাইসা বোরকা খুলে জোরে জোরে শ্বাস নেয়, এই অতিরিক্ত গরমে এতো সময় ধরে বোরকা পরে থাকাটা সহজ ছিলোনা, অনেক ধৈর্য্য নিয়ে ছিলো এতক্ষণ সে। রিয়া এসি ছেড়ে দিয়ে গিয়েছে, আর বসে থাকতে পারছেনা রাইসা, সে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। খানিকবাদে শাওয়ার ছেড়ে সিয়াম রুমে আসতেই দেখে রাইসা শুয়ে আছে বিছানায়, সিয়াম কিছু বললো না, চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে উপভোগ করলো ঘুমন্ত কালো পরিটাকে তারপর উচ্চস্বরে মিউজিক বাজিয়ে দিয়ে হালকা ডান্স করতে করতে কাবার্ড থেকে শার্ট বের করতেছিলো তখন রাইসা লাফ দিয়ে উঠে বসে কারণ সে মিউজিক শুনেনা। রাইসা উঠে বসে কানে হাত দিয়ে চিল্লিয়ে বলে “প্লিজ বন্ধ করুন এসব, আমার সহ্য হচ্ছে না।”

সিয়ামের মুখে দুষ্টু হাসি, ও এমন ভাব নিয়ে আছে যেনো রাইসার কথা তার কানেই যাচ্ছেনা অথচ সে সব শুনতেছে এবং দেখতেছে। রাইসা এখনো সিয়ামকে দেখেনি। রাইসা আবারো বলে সিয়ামকে মিউজিক বন্ধ করার জন্য কিন্তু সিয়াম না শোনার ভান ধরে আছে। এবার রাইসা কান থেকে হাত নামিয়ে চোখ জোড়া খুলে বিছানা থেকে নেমে যায়, তারপর এদিক ওদিক তাকাতেই বামদিকে সিয়ামকে দেখতে পাই, সিয়ামকে দেখেই চোখজোড়া আবার বন্ধ করে নেয় কেননা সিয়ামের পরনে ছিলো শুধুমাত্র টাওয়াল, বেশ লজ্জা পেয়ে যায় রাইসা, ও আর এক মুহুর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিয়াম অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে।

*
হুসনা এক মগ কফি নিয়ে বেলকিতে যেতেই দেখে ওর বাবা বাগানে হাঁটাহাটি করছেন, এই বাবা নামের মানুষটাকে দেখলেই হুসনার মাথা ঠিক থাকেনা সে কফি না খেয়েই তৈরি হয়ে বেরিয়ে যায় আর যাওয়ার সময় জাহানারা বেগম কে বলে যান “মা আমি যাচ্ছি, টিউশন শেষ করেই কলেজ চলে যাবো, ক্লাস শেষ করে আবার দুটো টিউশন করে ফিরবো।” এটা বলেই হুসনা বেরিয়ে যায়, বাগানের পাশ দিয়েই হুসনা হেঁটে যায় কিন্তু বাগানের দিকে আঁড়চোখেও সে তাকালো না। একটা মানুষ নিজের বাবাকে এতোটা ঘৃণা কিভাবে করতে পারে? ইমতিয়াজ হোসেন হুসনাকে যেতে দেখলেও কিন্তু কথা বলার সাহস পেলোনা, নিজের মেয়ের কাছে নিজেকে এতোটা ছোট হয়ে থাকতে হবে কখনো ভাবেননি উনি। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে সব মেয়েকে নিয়ে একসাথে বসে আনন্দের সাথে খাবার খেতে হাঁসতে হৈচৈ করতে কিন্তু উনার ভাগ্যে আল্লাহ তায়ালা এই সুখ রাখেননি। হুসনা চলে যায় নিজের মতো করে, অসহায়ের মতো ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকেন ইমতিয়াজ হোসেন। হুসনা এক পার্কে এসে বসে থাকে একা, কোথাও কেউ নেই, সকালের ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাসে শিতল হচ্ছে সে আর সাথে ঝাপসা চোখের কোণা থেকে জল মুছে ভাবতে থাকে “জীবনটা তো অন্যরকমও হতে পারতো”

*
রাইসা শাওয়ার ছেড়ে এসে দেখে পুরো রুম ফাঁকা, কোথাও কেউ নেই। এখন একটু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে রাইসার, এক কাপড়ে এতোসময় থাকা সত্যিই খুব অস্বস্তিকর তাও আবার বিয়ের শাড়িতে।দরাইসা আয়নার সামনে গিয়ে মাথায় প্যাঁচানো টাওয়াল টা খুলে চুল মুছে নিলো তারপর নিজেকে খুঁটে খুঁটে দেখতে লাগলো কারণ এই প্রথম রাইসা গোল্ডেন পাড়ের মধ্যে লাল শাড়ি পরিধান করেছে তাও নিজে নিজে, কোথাও কোনো ভুল হলো কিনা শাড়ি পরায় সেটাই দেখছে সে। রাইসার ব্লাউজ টা একদম কোমর অব্ধি তাই সে নিশ্চিন্তে যেমন ইচ্ছে শাড়িটা পরতে পেরেছে যদিও সে ঠিক করেছে আজকের পর কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া সে আর শাড়ি পরিধান করবেনা।
নিজেকে ঠিকটাক মতো তৈরি করে রাইসা পুরো রুমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো আর ভাবছে “মানুষটা অগোছালো হলেও রুমটা কিন্তু বেশ গুছানো। কিন্তু উনি গেলেন কোথায় এই সময়ে?”

এসব ভাবতে ভাবতে রাইসা একটা দরজা দেখতে পেলো রুমের মধ্যে, দরজাটা কিসের দেখতে গিয়েই আরো বড়সড় সারপ্রাইজ পাই সে কারণ এতো সুন্দর বেলকনি সরাসরি দেখার সুযোগ কখনোই হয়নি ওর। রাইসা একগাল হেঁসেই বেলকনিতে গিয়ে খেলো আরেক ঠাস্কি। বেলকনিতে দোলনায় বসে সিয়াম যা করতেছে তা দেখে তো রাইসার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়___________

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

#শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা
#পর্বঃ০৬
#ফারজানা_আক্তার

“এই যে কি করছেন কি এসব আপনি? সিগারেট খাওয়া হারাম জানেননা?”
কথাটি বলতে বলতে রাইসা সিয়ামের কাছাকাছি যেয়ে দেখে একটা মেয়ের সাথে সিয়াম ভিডিও কলে কথা বলছে। এটা দেখে তো রাইসার রাগ উঠে যায় তবুও নিজেকে শান্ত রাখে সে। সিয়াম রাইসার এমন কথা শুনে দোলনা থেকে উঠে ভিডিও কলের মেয়েটাকে বলে “একটু পর কল করছি তোমায়, ওয়েট প্লিজ”। এটা বলেই কল কেটে দিয়ে রাইসার দিকে ফিরে তাকায় সিয়াম, আর সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে ” কে বলেছে তোমায় সিগারেট খাওয়া হারাম?”

“শরীয়তের বিধানের সকল কিছুর স্পষ্ট দলীল নেই। আর না থাকলে কোন জিনিস যে হালাল, তা নয়। শরীয়তের স্পষ্ট উক্তিসমুহ থেকে ফকীহগন এমন কিছু নীতি নির্ণয় করেন, যার দ্বারা বলা যায় কোনটা হালাল, আর কোনটা হারাম। যে সকল নীতির মাধ্যমে বিড়ি-সিগারেটকে হারাম করা হয়, তার কিছু নিম্নরুপঃ-

(ক) এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়। আর ইসলামে অপচয় হারাম।
(খ) এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম।
(গ) বেশি পরিমাণ পান করলে, তাতে জ্ঞানশূন্যতা আসতে পারে। আর যাতে নেশা, মাদকতা ও জ্ঞানশূন্যতা আসে, ইসলামে তা হারাম।
(ঘ) এতে দুর্গন্ধ আছে। এর দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা কষ্ট পায়। সুতরাং তা পবিত্র জিনিস নয়। আর ইসলাম পবিত্র জিনিস খাওয়াকে হালাল এবং অপবিত্র জিনিস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছে।”

একদমে কথাগুলো বলে থামে রাইসা, সিয়াম বিরক্তিকর কন্ঠে বলে “এসব জ্ঞান আমাকে দিতে এসোনা প্লিজ, তুমি নিজের মতো থাকো আর আমাকেও নিজের মতো থাকতে দাও।”
রাইসার মনে হলে সে যেনো এক অবুজ শিশুর সাথে কথা বলছে এতক্ষণ, কেনো বুঝেনা মানুষটা? এসব চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় রাইসা।
রাইসা আর কিছু না বলে চুপচাপ বাগান বিলাশ করতে থাকে, বেলকনির একপাশে দোলনা আর অন্যপাশে ছোট্ট ছোট্ট বেতের টেবিল চেয়ার রয়েছে যা দেখতে মনোমুগ্ধকর, রাইসা এই বাড়িটার প্রতিটি কোণা যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে।

*
মাহিন টিউশন শেষ করে ঘরে ফিরে কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে তখন ওর মা সেনুয়ারা বেগম বলেন “বাবা আসার সময় আমার জন্য ঔষুধ নিয়ে আছিস”। কথাটা শুনে বুকটা কেঁপে উঠে মাহিনের কারণ এটা মাসের শেষ অংশ এখন হাতে টাকা পয়শা তেমন নেই। তবুও মাহিন ওর মাকে হাসিমুখে বলে “আচ্ছা মা নিয়ে আসবো, এখন খেতে দাও তো খুব খিদে লেগেছে।”
সেনুয়ারা বেগম এক কাপ চা আর কিছু মুড়ি নিয়ে আসলো মাহিনের সামনে, এসব খেতে খেতে কেমন জানি একটা বিরক্তি চলে এসেছে এসবের উপর তবুও মায়ের সামনে তৃপ্তির সাথে সে খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মাহিন আর ভাবছে আজকে কলেজ থেকে হেঁটে আসতে হবে বাসায় নয়তো মায়ের ঔষুধ কেনায় টাকা কম পরতে পারে। এসব ভেবে ভেবে সে একটা লোকাল বাসে উঠে যায়, জীবনটা অন্যরকম হতো যদি আজ বাবা নামক মানুষটা বেঁচে থাকতেন। ক্লাসের সময় হয়ে এসেছে তাই মাহিন বাসে করে যাচ্ছে নয়তো সে এখনো হেঁটেই চলে যেতো কলেজে, হেঁটে যাওয়া আসা করতে ১ঘন্টার মতো সময় লাগে। লোকাল বাসে বসার কোনো সুযোগ নাই, মাহিন দাঁড়িয়ে আছে অন্য সবার মতোই। অবশেষে কলেজ চলে আসলে মাহিন টাকার জন্য ব্যাগে হাত দিলে দেখে টাকা যা ছিলো ওর থেকে এখন তার দিগুণ রয়েছে৷ মাহিনের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই টাকা ওর মা সেনুয়ারা বেগম-ই রেখেছেন। এইটুকুতেই মাহিন তৃপ্তির সাথে মুচকি হাসেন, গরিবদের জীবনটাই এমনই, তারা অল্পতেই সীমাহীন সুখ খুঁজে নিতে জানেন।
মাহিন কলেজ এসে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে রিয়াকে খুঁজলো একবার কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি। রিয়া কেনো কলেজে আসেনি সে জানেনা, রাইসাকেও দেখতে পারছেনা শুধু দেখছে হুসনা একা একা বসে আছে ক্লাসে। মাহিন চিন্তা করতে থাকে হুসনার কাছে গিয়ে রিয়ার কথা জিজ্ঞেস করবে নাকি, একবার এগিয়ে যায় হুসনার দিকে আবার কি যেনো ভেবে পেঁছনে চলে আসে। নিজেকে কন্ট্রোল করে মনে মনে ভাবতে থাকে রিয়ার কথা সে আর ভাববে সে এখন শুধু পড়ালেখা নিয়েই থাকবে, মায়ের স্বপ্ন টা যে পূরণ করতেই হবে।
হুসনার একা একা ভালো লাগছেনা তাই সে রাইসাকে কল দিয়ে কথা বলে। রাইসা আর রিয়া একই ঘরে একসাথে আছে শুনে হুসনারও ইচ্ছে জাগে তাদের সাথে গিয়ে সময় কাটাতে কিছুক্ষণ কিন্তু সে সময় হুসনার নেই কারণ ও কলেজ শেষ করে আবার টিউশনে যায়। নিজের খরচ নিজেকে চালাতে হলে সময়ের অপচয় করা যাবেনা মোটেও। হুসনা কোনো কিছুর অপচয় মোটেও সহ্য করতে পারেনা সে জিনিসটা যতই মূল্যহীন হোক না কেনো।

*
রাইসা সবার সাথে খাবার টেবিলে বসে আছে। লজ্জা পাচ্ছে সে নাস্তা করতে, হাজার হলেও নতুন বউ বলে কথা। নতুন মানুষগুলোকে একদম অচেনা মনে হচ্ছে না রাইসার কারণ সবাই রাইসাকে বেশ আপন করে নিয়েছে। রাইসা খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে আর লজ্জামাখা চেহারায় মুচকি হাসছে কিন্তু সেদিকে কোনো ধ্যান নেই সিয়ামের, সিয়াম আপন মনে খেয়ে যাচ্ছে, শাহিল খেয়াল করে রাইসাকে আর জিজ্ঞেস করে “ভাবী লজ্জা পেওনা আমরা আমার-ই তো খেয়ে নাও, খুব মজা হয়েছে আজকের ব্রেকফাস্ট টা।”

শাহিলের কথায় সবাই হেঁসে ফেলে। রিয়া বলে “আমি যেমন এই ঘরের মেয়ে তুমিও তেমন আজ থেকে এই ঘরের মেয়ে। একদম লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই। আচ্ছা ভাইয়া আজ তো আমরা কেউ কলেজে যাবোনা, আজ তো বৌভাতের অনুষ্ঠান আছে।”

“তো এই মেয়েলি অনুষ্ঠানে আমি কি করবো?”
ভ্রু নাচিয়ে বলে সিয়াম।

“তুমি কি করবে মানে? তোমাকেও তো যেতে হবে ভাবীর সাথে, জানোনা তুমি?”
একটু বোকা ভাব এনে বলে রিয়া।

“এই পুচকি চুপ কর তো তুই। আমাকেও যেতে হবে মানে কি হ্যাঁ? কোথায় যেতে হবে?
বিরক্তিকর ভাব এনে বলে সিয়াম।

“এমা ভাইয়া তুমি তো দেখি কিছুই জানোনা, আরে আজকে বৌভাত। আজ ভাবীকে দেখতে আসবে ভাবীর বাপের বাড়ি থেকে তারপর তাদের সাথে তোমাকে আর ভাবীকেও নিয়ে যাবে। তারপর দুইদিন ওখানে থেকে চলে আসবে ব্যাস।”

“কালেকে আসলো আর আজকে দেখতে আসবে চলে যাবে এসব কি? এখনো তো ২৪ঘন্টা হয়নি ওর এই বাসায় আসার, ২৪ঘন্টা তো দূরের এখনো তো ৫ঘন্টাও হয়নি।”

ওদের এসব কথাবার্তা শুনে রাহেলা খাতুন হাসলেন তারপর বললেন “এই চুপ তোরা দুজন আর একটা কথাও বলবিনা। আর সিয়াম শোন আজ তোর শ্বশুড়বাড়ি থেকে লোকজন আসবে তাদের সাথে রাইসা মাকে নিয়ে তুই যাবি এবং দুইদিন থেকে আসবি আর কিছু শুনতে চাইনা। তুই বিয়ে করতে চেয়েছিস তোর কথা আমরা শুনেছি এবার তোকেও আমাদের কথা শুনতে হবে।”

মায়ের কথার উপরে আর কোনো কথা বললোনা সিয়াম। সিয়ামের মনে একটাই চিন্তা বাসর কবে হবে তাদের তাহলে, প্রথম রাতটাও রাস্তায় কাটাতে হলো আজ আবার শ্বশুড়বাড়িতে। উফ্স অসহ্য লাগছে সিয়ামের সবকিছু, সে আজ রাতেই রাইসাকে নিজের করে নিতে চাই কিন্তু শ্বশুড়বাড়িতে কিভাবে সম্ভব হবে সেটা ভেবেই বিরক্ত হয়।

রাইসা চুপচাপ বসে শুধু সবার কথা শুনছে। নতুন বউয়ের কি বা আর কাজ। খাওয়া দাওয়া শেষে রিয়া রাইসা কে নিয়ে সিয়ামের রুমের দিকে এগুই। রুমে এসেই রিয়াকে এক গাদা বকা দেয় রাইসা কারণ সে সিয়ামকে ওর সাথে ওদের বাসায় যেতে বলেছে কিন্তু রিয়া বলতেছে এটা তো সে ভুল কিছু বলেনি তবুও ওকে কেনো বকতেছে? তখন রাইসা বলে সিয়াম হলো বড়লোক বাবার আয়েশ করা ছেলে সে তাদের মধ্যবিত্ত টিনের বাসায় থাকতে পারবেনা দুই দিন তারউপর এখন যে হারে গরম পরতেছে সিয়াম তো সেখানে পাগল হয়ে যাবে কারণ ওখানে তো আর এসি নাই। রাইসার কথা শুনে রিয়া বলে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে যখন বিয়ে করেছে তখন তাদের মতো করেও বাঁচতেও শিখতে হবে। রিয়ার কথা শুনে হেঁসে ফেলে রাইসা।_________

#চলবে_ইনশাআল্লাহ