সম্পর্কের অধিকার পর্ব-১০+১১+১২ + বোনাস পর্ব

0
430

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১০

ইন্দুঃ তাতে কি, আমি কোথায় থাকলাম বা না থাকলাম তাতে আপনার কি? এই গাঁইয়া মেয়েটার কথা আপনাকে এতো ভাবতে হবেনা। আমি তো দুদিনের অতিথি মাত্র। আমাকে নিয়ে ভাবাটা বন্ধ করে নিজের ভবিষ্যতকে নিয়ে ভাবুন। আগামীতে যে আপনার লাইফ পার্টনার হিসেবে আসতে চলেছে তাকে নিয়ে ভাবুন এতে আপনারই লাভ।
অনেকটা কষ্ট বুকে চেপে, মাথা নিচু করে কথাগুলো বললো ইন্দু।

রিয়ন রেগে ইন্দুকে বলে এই শুনুন, আমি কাকে নিয়ে কখন ভাববো কি ভাববোনা সেটা আপনাকে বলে দিতে হবেনা। আর আপনি কখন কোথায় থাকবেন কি থাকবেন না এতে আমার কি, মানেটা কি হু? আপনি এ বাসায় আমার পরিচয়ে আছেন। এ বাসায় যতদিন থাকবেন ততোদিন আমার রেসপনসেবলিটি। তাই কোথায় থাকবেন কি থাকবেন না সেটা আমিই ডিসাইড করে দিবো অন্য কেউ নয়। আপনি গাঁইয়া হোন বা দুদিনের অতিথি সেটা তো পরের কথা।

যদিও ইন্দু কথাগুলো ঠিকই বলেছে তবুও রিয়ন সেটা মেনে নিতে পারছেনা। কেন যেন এটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে রিয়নের।

ইন্দু ফ্লোরে বিছানা করছে রিয়ন গিয়ে বাঁধা দিয়ে বলে, আজ থেকে ফ্লোরে নয় বেডে ঘুমাবেন চলুন।

ইন্দু ফ্লোরে বসেই ঘাড় ঘুরিয়ে রিয়নকে বলে বউয়ের অভিনয় করছি বলে, বেড শেয়ার করতে বলবেননা প্লিজ! সেটা আমি করতে পারবোনা।

রিয়ন ফ্লোরে এক হাটু মুড়ে বসে ইন্দুকে বলে ওকে বেড শেয়ার করতে না পারেন একা তো বেডে থাকতে পারবেন।

ইন্দুঃ মানে?
রিয়নঃ মানে, আপনি বেডে ঘুমান আমি সোফায় ঘুমিয়ে পরছি।
ইন্দুঃ তার প্রয়োজন হবেনা। আপনার বাসা, আপনার রুম, আপনার বেড, এর সবকিছুতেই আপনার অধিকার। সবকিছুতে তো অযাচিতভাবেই ভাগ বসিয়েছি আপনার থেকে সবকিছুই কেড়ে নিয়েছ। বেডটা আর কেড়ে নিতে চাইনা ওটা আপনার ই থাক ।

রিয়নঃ আপনি উপরে গিয়ে ঘুমাবেন নাকি আমি ফ্লোরে ঘুমোবো?

ইন্দুঃ আপনি এমন কিছু করলে আমি রাইয়ের রুমে যেতে বাধ্য হবো।

রিয়ন কিছু না বলেই চুপচাপ বেডে গিয়ে শুয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকে এই মেয়েটা না বড্ড অভিমানী। জানিনা একে কি করে সামলাবো আমি।

রিয়ন আজ একা একা নিচে চলে এসেছে নাস্তা করতে। ইন্দু রিয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে। আপনি নিচে নামতে গেলেন কেন? আমি তো খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম উপরে।

রিয়নঃ তার কোন প্রয়োজন হবেনা। আমি যখন কাউকে নিয়ে ভাবতে পারবোনা, তখন আমায় নিয়েও কাউকে ভাবতে হবে না। আমি নিজের কাজ নিজে করে নিতে পারবো।

ইন্দুঃ একটু মুচকি হেসে খাবার দিতে দিতে বললো যাক, একটু হলেও নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো। আপনার ওষুধ আছে। আমি নিয়ে আসছি।
রিয়নঃ লাগবেনা আমি নিজেই নিয়ে নিতে পারবো।

ইন্দু কিছু না বলে সবাইকে খাবার দিচ্ছে। এতোদিন পরে রিয়ন সবার সাথে খাবার খাচ্ছে এতে সবাই খুব খুশি।বিশেষ করে রিয়ন নিজে থেকেই চলাফেরা করছে নিজের কাজ নিজেই করতে পারছে এটা দেখে আশফাক খান তো মহা খুশি।

সারাদিন কেটেছে ইন্দু বেশি রিয়নের পাশে যায়নি। রিয়নও সারাদিন নিজের কাজগুলো নিজেই করেছে।অবশ্য এতে রিয়নের একটু ঝামেলা হয়েছে কারণ চার মাস পার হতে চললো ইন্দু রিয়নের সব কাজ নিজে করে দেয়। রিয়নকে কিছু করতে দেয়না।

সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় আশফাক খান ইন্দুর জন্য কিছু শপিং করে নিয়ে আসে। ইন্দুর হাতে সেগুলো দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই, রিয়ন ইন্দুকে বলে আপনার ড্রেস লাগবে সেটা আমায় বললেই পারতেন।

ইন্দুঃ ড্রেসগুলো হাত থেকে নামিয়ে রেখে রিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার কখন কি লাগবে আমি নিজেই জানিনা, আপনাকে কি করে বলবো। বাবাইকে আমি কিছু বলিনি নিজে থেকেই এগুলো এনে দিয়েছে। অজ পাড়াগাঁয়ে বড় হয়েছি চাহিদাটা বরাবরই অতি সামান্য আর সাধারণ। আপনার পছন্দের সাথে আমার পছন্দ কখনোই মিলবেনা।
ইন্দু বিছানা ঠিক করে দিতে দিতে বলে, নিজের কাজ তো নিজেই করতে পারছেন খুব সুন্দরভাবে এবার তো আমর ছুটি।

রিয়নঃ এবার আপনার ছুটি মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?

ইন্দু ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বলে কিছু না। কিছুই বলছিনা আমি। কফি লাগবে কি আপনার? কফি করে দিবো?

রিয়নকে চুপ থাকতে দেখে ইন্দু বলে তাহলে কি আমি বুঝে নিবো, নিরবতা সম্মতির লক্ষ্মণ?

কিছুক্ষণ পরে ইন্দু কফি এনে দেয় রিয়নকে। রিয়ন বসে কফি খাচ্ছে । কফি খেতে খেতে বেলকনিতে গিয়ে বসে রিয়ন। ভাবছে বিন্দুটা কেন ছুটির কথা বললো হঠাৎ করে। বিন্দু কি কিছু লুকোচ্ছে?

এদিকে ইন্দু রুমে বসে সবকিছু গুছিয়ে নেয়। আগামীকাল সকাল সকাল বেরিয়ে পরবে সে। লাগেজ একপাশ করে রেখে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই যে যার রুমে চলে যায়। ইন্দুও রুমে চলে এসেছে। আজ আর কারও রুমে যায়নি সে। সারাদিন সবার সাথে খুব মজা করেছে আড্ডা দিয়েছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে ইন্দু। আনমনে কিছু একটা ভাবছে সে। কাল চলে যাবে এ বাড়ি ছেড়ে। হয়তো আর কখনো ফেরা হবেনা। এ বাড়ির প্রতি আলাদা একটা মায়া পরে গিয়েছে তার। বাড়ির প্রতিটা মানুষকে আপন করে নিয়েছে। তাদের ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হবে ইন্দুর। খুব মিস করবে এই চেনা অতি প্রিয় মুখগুলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে চলে আসে ইন্দু।

রুমে এসে দেখে রিয়ন পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পরেছে। ইন্দু ধিরে ধিরে বেডে গিয়ে বসে রিয়নের পাশে। একদৃষ্টিতে রিয়নের দিকে কিছুসময় তাকিয়ে থেকে উঠে যেতেই হাতে টান অনুভব করে ইন্দু। পেছনে ঘুরে তাকাতেই ইন্দুর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কারণ রিয়ন ইন্দুর হাত ধরে আছে। তারমানে কি রিয়ন এখনো ঘুমায়নি?

ইন্দুঃ কি করছেন? হাত ধরেছেন কেন?
রিয়নঃ তার আগে আমায় একটা কথা বলুনতো বিন্দু! আপনি আমার কাছ থেকে কি লুকচ্ছেন?

ইন্দুঃ ক ক কই। ক কি লুকোবো? আমি ক্ কিছু লুকচ্ছিনা তো। আর আপনি এতো রাত অবধি ঘুমাননি কেন? আপনার শরীর কিন্তু এখনো ঠিক হয়নি।আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়। অনেক রাত হলো, এবার আমিও ঘুমিয়ে পরি যাই।
ইন্দু রিয়নের সামনে থেকে এসে বিছানা করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। যেন রিয়ন আর ইন্দুকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না পায়।
রিয়ন ও আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পরে।

সকালে নাস্তা করে সোফায় বসে আছে সবাই। ইন্দু নাস্তা করে উপরে চলে যায়।
আশফাক খান বের হচ্ছে অফিসের উদ্দেশ্যে।
রিয়ন আশফাক খানকে বলে পাপা আমি এখন সুস্থ আগামীকাল থেকে আমি অফিস জয়েন করবো।

আশফাক খানঃ তুমি এতোটাও সুস্থ হওনি যে অফিস যেতে পারবে। তাই আমি চাই আরও কয়েকটা দিন তুমি রেস্ট নাও তারপর অফিস জয়েন করো। তবুও বলবো আজ সারাদিন ভেবে দেখো, তারপরে নাহয় সিদ্ধান্ত নিও অফিস যাবে কি যাবেনা। আশফাক খান অফিসে চলে গেলো।

এর মাঝেই রুপক রেডি হয়ে রিয়নের আর দাদুর মাঝের সিটে বসে তার মমকে জিজ্ঞেস করলো মিষ্টি ভাবি কই? এখনো রেডি হয়নি নাকি?

রিয়নের মমঃ এইতো রেডি হলেই নিচে চলে আসবে। রেডি হতেই তো গেলো। রাই গিয়ে দেখতো মা, তোর ভাবির রেডি হতে এতো লেট হচ্ছে কেন?

রুপক আর তার মমের কথা শুনে রিয়ন কিছুই বুঝতে পারলোনা।রুপককে জিজ্ঞেস করলো কেথায় যাবি? বিন্দুই বা রেডি হবে কেন?

দাদুঃ ওহ্ বড় দাদুভাই তোমাকে তো বলাই হয়নি ইন্দু আজ তার বাবার বাড়ি যাবে। ওর বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছিল।

রিয়নঃ হোয়াট! সোফা উঠে থেকে দাঁড়িয়ে। কি বলছো দাদু? বিন্দু বাড়ি যাবে মানে? আমাকে কেউ বলোনি কেন? আর ওকে বাড়ি যাওয়ার পারমিশন টা দিয়েছে কে?

দাদুঃ ইন্দুকে এ বাড়ির বউ করে এনেছে যে, যাওয়ার পারমিশনটাও দিয়েছে সে। আর ইন্দু গেলে তোমার কি তুমি তো আগামীকাল থেকে অফিস জয়েন করবে। সারাদিন ওখানেই কেটে যাবে কোন সমস্যা হবে না।

দাদু আর রিয়নের কথার মাঝেই ইন্দু সিঁড়ি দিয়ে নামছে সাথে রাই।
রিয়ন ওদিকে তাকাতেই চোখ আটকে চায়। দামি শাড়ি গহনা আর হালকা মেকআপে তার বিন্দুকে তো অসাধারণ লাগছে। ইন্দু সবসময় সিম্পলভাবে থাকে। তাই আজ অন্যদিনের তুলনায় একটু আলাদা লাগছে ইন্দুকে।

রিয়নের হঠাৎ মনে হলে রাতে ইন্দুর বলা কথাগুলো। তবে কি ইন্দু আজ চলে যাবে বলেই রাতে কথাগুলো বলেছিলো যে, ইন্দুর এখন ছুটি। আর এজন্যই কি এতোটা অন্যমনস্ক ছিলো সে?

ইন্দু সবার কাছে বিদায় নিয়ে রিয়নের দাঁড়িয়ে বলে সাবধানে থাকবেন, নিজের খেয়াল রাখবেন।

রিয়নঃ কোথায় যাচ্ছেন?
ইন্দুঃ আস্তে আস্তে রিয়নকে বলে, কোথায় যাচ্ছি সেটা ভাববার বিষয় নয়। ভেবে নেন আপনার পথের কাঁটা সরে গেলো। এবার থেকে আপনি মুক্ত। সৃজাকে এবার নিজের করে পাওয়ার রাস্তাটা সহজ হবে আপনার।

ইন্দু বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রিয়ন হাত ধরে ফেলে। এক টান দিয়ে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন তখন থেকে। আপনাকে যেতে দিচ্ছে কে? আপনার কোত্থাও যাওয়া চলবেনা। এখানেই থাকবেন।

দাদুঃ ওকে যেতে হবে দাদুভাই। যেতে দাও ওকে।ওর যাওয়াটা খুব প্রয়োজন। দুদিন আগে আর পরে ওকে তো যেতেই হবে।

রিয়নঃ আমি অতশত বুঝিনা দাদু, বিন্দু যাবেনা মানে যাবেনা। ওকে এখানেই থাকতে হবে। আর ওর যদি বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে বাবা ময়ের জন্য মন খারাপ করে, তাহলে আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। সবার সাথে দেখা করিয়ে নিয়ে আসবো।

দাদুঃ তোমাকে নিয়ে যেতে হবে কেন ইন্দু একাই যেতে পারে। আর তুমি ওর সাথে গেলেই বা কি হবে বলোতো দাদুভাই? তুমি কি ওকে আগলে রাখতে পারবে?

রিয়ন ইন্দুর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো এখানে ওয়েট করেন আমি আসছি।
রিয়ন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। কিছু সময় পরে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। রুপকের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো জলদি আসবেন আমি গাড়িতে ওয়েট করছি।

চলবে……

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১১

ইন্দু আর কোন উপায় না পেয়ে, রিয়নের রুমের দিকে ছুটলো। কিছু ড্রেস আর ওষুধপত্র নিয়ে লাগেজ গুছিয়ে নিচে নেমে আসে। রুপক ইন্দুর হাত থেকে লাগেজটা নিয়ে বলে, মিষ্টি ভাবি তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো, আমি লাগেজটা গাড়িতে তুলে দিচ্ছি।

ইন্দুকে গাড়িতে তুলে দিয়ে বিদায় জানালো সবাই। কিন্তু সবার মুখই গম্ভীর। রাই তো প্রায় কান্নাই করে দিয়েছিল। রাই ইন্দুকে জরিয়ে ধরে বলে মিষ্টি ভাবি তুমি কিন্তু খুব তারাতারি ফিরে আসবে।তোমায় ছাড়া বাসাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। তোমায় খুব মিস করবো।

ইন্দু গাড়িতে বসে ভাবছে রিয়ন তো সাথে যাচ্ছে বাড়ির কি অবস্থা সেটা তো জানিনা। মা বাবা তো জানে না রিয়ন যাবে।
এসব ভাবনার মাঝেই ইন্দুর ফোন বেজে ওঠে। ইন্দু ফোন রিসিভ করতেই তিশা বলে ওঠে কিরে আপু কখন আসবি?
ইন্দু বললো এইতো রে পাখি গাড়িতে আছি দুপুরে পৌঁছাবো।

তিশাঃ বলছি দুলাভাই আসছে?
ইন্দুঃ হুম। এখন ফোন রাখ বাসায় এসে কথা বলবো, বলেই ফোন রেখে দেয়।

রিয়নঃ কে ফোন করেছিল?
ইন্দুঃ আমার ছোট বোন তিশা। জিজ্ঞেস করলো রওয়ানা হয়েছে নাকি।

রিয়নঃ আচ্ছা ! আমি আপনার সাথে আসাতে আপনি খুশি হননি? এমন গম্ভীর হয়ে আছেন কেন? কোন কথা বলছেন না?

ইন্দুঃ তেমন কিছু না, আসলে আমি ভাবছিলাম আপনি এতো মডার্ন, এতোটা স্মার্ট আপনার শহুরে চলাফেরা এগুলো তো গ্রামে গিয়ে পাবেননা। আপনাকে অনেক সমস্যায় পরতে হবে ওখানে গিয়ে। আপনি গ্রামের পরিবেশে চলতে পারবেন না। কষ্ট হবে ওখানে থাকতে।
সৃজা জানতে পারলে আরও ঝামেলা করবে আপনার সাথে। তাই বলছিলাম আপনি আমায় পৌঁছে দিয়ে আগামীকাল ঢাকায় ফিরে আসতে পারেন।

রিয়নঃ আমাকে নিয়ে এতোটা ভাবার জন্য ধন্যবাদ। আমি গ্রামের পরিবেশে চলতে পরবোনা সেটা আপনাকে কে বললো? আর আপনিই তো একটু আগে বললেন আমি নাকি স্মার্ট। তাহলে তো আপনার এটাও জানার কথা স্মার্টরা সব পরিবেশেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
আর আপনি সৃজার কথা বলছেন তো? তাহলে শুনুন, আমি না এই মুহুর্তে সৃজাকে নিয়ে ভাবছি না আর ভাবতেও চাইছিনা। আমি চাই আপনিও সৃজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
কথা বলতে বলতে গাড়ি ব্রেক করে, সাইড করে রাখে।

ইন্দু কিছু বলার আগেই রিয়ন গাড়ি থেকে নেমে ইন্দুর জানালার পাশে এসে বলে, ফ্রেশ হতে যাবেন? ইন্দু ডানে বামে মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলো।
রিয়ন তখন ইন্দুকে বললো, চুপচাপ বসে থাকুন তাহলে আমি এক্ষুনি আসছি।

প্রায় দশ পনেরো মিনিট, ইন্দু গাড়িতে বসে আছে একা একা। একটু ভয় ভয় ও করছে তার। মনে মনে ভাবছে, আর নিজেকে নিজেই বকাবকি করছে। কেন যে রিয়নের সাথে গেলিনা ইন্দু! আসলে তুই একটা মাথা মোটা। এখন তো ঠিক ই ভয় পাচ্ছিস।

এসব ভেবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই তো ইন্দুর চোখ কপালে উঠে যায়। একি করেছে পাগলটা!
রিয়ন এক গাদা জিনিস এনে হাজির। রিয়নের সাথে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে হাতে কয়েকটা মিষ্টির প্যাকেট আর কয়েকটা ফলমূলের প্যাকেট নিয়ে। দেখে বোঝা যাচ্ছে কোন দোকানের কর্মচারী হবে হয়তো।
রিয়ন একটা মিডিয়াম সাইজের কেক, পানির বোতল, অনেকগুলো চকলেট, আইসক্রিম, কুকিজ, একটা কোকাকোলা ইন্দুর হাতে দিলো। আর ফলমূল, মিষ্টি, নিয়ে পেছনের সিটে রেখে দিলো।
রিয়ন ছেলেটাকে ট্রিট দিতেই ছেলেটি চলে যায়।

ইন্দু রিয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে এতোকিছু কেন নিলেন? এসবের কোন প্রয়োজন ছিলনা।

রিয়নঃ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলে, প্রথবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি কি কিনবো, কি কিনবোনা সেটাও আপনি ডিসাইড করে দেবেন?

ইন্দু প্যাকেটগুলো সামনে রেখে দিতে দিতে বলে, তা বলে এতোকিছু!

রিয়নঃ ওগুলো নামিয়ে রাখছেন কেন? আপনার জন্য এনেছি খেয়ে নিন।

ইন্দু প্যাকেট খুলে এতোকিছু দেখে অবাক হয়ে যায় । কেননা রিয়ন যা কিনেছে সব ইন্দুর পছন্দের জিনিস। মনে মনে খুব খুশি হলেও ভাবছে, একটা মানুষ একজনের পছন্দ অপছন্দ না জেনে কিছু কিনলে এতোটা মিল কিভাবে হতে পারে? আর ইন্দু সবথেকে বেশি অবাক হয়েছে কারণ সে তার পছন্দের কথা কখনো রিয়নকে বলেইনি। তাহলে রিয়ন কিভাবে জানলো?
ইন্দুযে অবাক হয়েছে সেটা ওর মুখ দেখলেই যে কেউ বুঝতে পেরে যাবে।

রিয়ন একটু বাঁকা হাসি দিয়ে গতকালের কথাটা ভাবছে আর নিজেকে নিজেই থ্যাঙ্কস জানাচ্ছে। বিড়বিড় করে বলছে ভাগ্যিস গতকাল দাদুর রুমের সামনে গিয়েছিলি! তা না হলে তো জানতেই পারতিসনা তোর বিন্দু পাখির কি কি পছন্দ।

ফ্ল্যাশব্যাক-

ইন্দু গতকাল সারাদিন রিয়নের পাশে ঘেষেনি। দাদুর রুমে বসে সবার সাথে আড্ডা দিয়েছে। রিয়ন যখন ইন্দুকে খুঁজতে দাদুর ঘরের দিকে যাচ্ছিল তখন শুনতে পায়,ইন্দু রাইকে বলছে কি কি তার পছন্দের খাবার। কারণ তখন তাদের মধ্যে পছন্দের খাবার নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।
রিয়ন এটা শুনে ফিরে রুমে চলে যায়। তাই ইন্দু বুঝতে ও পারেনা যে তার বলা কথাগুলো রুমের বাইরেও অন্য কেউ শুনেছে। যে কিনা ইন্দুকে সারপ্রাইজ দিতে পারে।

বর্তমানে-

ইন্দুঃ এতোকিছু কিনে এনেছেন, এতোকিছু খেতে পারি নাকি আমি?
রিয়নঃ না জানার ভান করে বলে, কেন? আপনি বুঝি এগুলো পছন্দ করেননা? আমি আরও ভাবলাম এগুলো হয়তো আপনার পছন্দের খাবার, তাইতো নিয়ে এলাম।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু অবাক হয়ে বললো আপনি খাবেন না?

রিয়ন ইন্দুর দিকে না তাকিয়ে, সামনের দিকে তাকিয়েই বলে,আমি তো ড্রাইভ করছি খাবো কি করে?

ইন্দুঃ গাড়ি একপাশে রেখে খেয়ে নিন তা হলেই তো হয়।
রিয়নঃ আর ইউ ম্যাড! এমনি আমার শরীর ভালোনা তার উপর গাড়ি ব্রেক করে খেতে হলে তো আরও বোর হতে হবে। আপনি খেয়ে নিন। আমার খাওয়া লাগবেনা।

ইন্দু কিছু না বলে একটু কেক নিয়ে রিয়নের মুখের সামনে ধরে।
রিয়ন একবার ইন্দুর দিকে, একবার ইন্দুর হাতের কেকের দিকে তাকায়। একটু হেসে কেকটা মুখে নেয়।
যেতে যেতে ইন্দু কেক, আইসক্রিম খাচ্ছে আর রিয়নকে খাইয়ে দিচ্ছে।

খাওয়া শেষ করে রিয়ন ড্রাইভ করছে। কিন্তু ইন্দু থেমে নেই তার মুখ তো চলছেই। ঐ যে, রিয়ন চকলেট এনে দিয়েছে অনেকগুলো! সেগুলোই বসে বসে সাবার করছে বাচ্চাদের মতো। রিয়ন গাড়ি ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে ইন্দুকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। কিন্তু ইন্দুর তো সেদিকে খেয়াল ই নেই একমনে চকলেট খেয়েই যাচ্ছে।

রিয়নের গাড়ি জেলা শহরে ঢুকে পরেছে আর মাত্র পঁচিশ কিলোমিটার পথ বাকি। তারপর ইন্দুর বাড়ির মোড়। কিন্তু প্রবলেম হলো অন্য জায়গায়, রিয়ন তো ইন্দুর বাড়ি চিনেনা। তাই গাড়িটা ব্রেক করে ইন্দুকে বলে এই যে ম্যাম, আপনার কি চকলেট খাওয়া হলো?

ইন্দুঃ কেন? আপনিও খাবেন নাকি?

রিয়নঃ নাহ্ আমি খাবোনা তবে আপনার খাওয়া শেষ হলে, যদি দয়া করে বলতেন কোন রাস্তায় যেতে হবে তাহলে তাহলে আমি কৃতার্থ হই আর কি!

এতোক্ষণে ইন্দুর হুশ ফিরলো, এবার বুঝতে পারলো যে সে এতোক্ষণ ধরে কি করছিল!
রিয়নকে বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দেয়। ইন্দুর খুব লজ্জা লাগছে আবার খুব হাসিও পাচ্ছে নিজের কর্মকান্ডের জন্য।

পয়ত্রিশ মিনিট পরে ইন্দুর বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে। আশেপাশের বাচ্চা পোলাপান সবাই গাড়ি দেখে দৌড়ে আসে। ইন্দু তাদের হাতে একটা করে চকলেট দিতেই তারা খুশিতে লাফাতে থাকে। গাড়ির শব্দে ইন্দুর দুই বোন এশা আর তিশা বেরিয়ে আসে। ইন্দুকে জড়িয়ে ধরে দুই বোন কান্না জুড়ে দেয়।সাথে ইন্দুও কান্না শুরু করে।

তিন বোনের এমন অবস্থা দেখে রিয়ন গলা খাকড়ি দিয়ে বলে এই যে আমার আধা ঘরওয়ালি পাশে যে আমি ও আছি। আমাকেও তো একটু দেখো!
নাকি বোনকে পেয়ে আমাকে আর চোখে পড়ছেনা?

রিয়নের কথা শুনে তিশা বলে, কি বলছেন দুলাভাই! এমন স্মার্ট বয় চোখে পরবেনা তা কি করে হয়। দুলাভাই আপনাকে দেখতে একদম ফিল্মের হিরো লাগছে।

রিয়নঃ তবু ভালো তুমি দেখলে আমায়। কেউ একজন তো আমার দিকে তাকায়ই না। কি পরলাম না পরলাম, কেমন লাগছে আমায় সেদিকে তো তার নজর ই নেই।

ইন্দু চোখ মুখ কুচকে রিয়নের দিকে তাকাতেই রিয়ন প্রসঙ্গ ঘোরাতে, গাড়ি থেকে মিষ্টি আর ফলমূলের প্যাকেটগুলো বের করে এশা,তিশার হাতে দিয়ে বলে,, এই যে মেজ রাণী, ছোট রাণী এটা নিয়ে চলো চলো ভেতরে চলো।এখানে থাকলে কখন কি বিপদ হয় বলা তো যায়না।

রিয়ন,এশা,তিশা ভেতরে যেতেই ইন্দু তো অবাক হয়ে যায় রিয়নের ব্যাবহারে।এটা সে কোন রিয়নকে দেখছে! একটা দিনে মানুষ এতোটা কি করে বদলে যেতে পারে?

ইন্দুও ওদের পিছে পিছে বাড়ির মধ্যে যায়। রিয়ন শ্বশুর, শ্বাশুড়িকে সালাম করে একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ইন্দু গিয়ে সালাম করে মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে। মা বাকে এতোদিন পরে দেখে চোখে জল এসে যায়। সবার সাথে কুশল বিনিময় শেষ হলে তিশা রিয়নকে রুমে নিয়ে যায়। এ বাড়ি তৈরী করার পরে ইন্দু এই প্রথমবার এ বাড়িতে এসেছে। তাই এশা ইন্দুকে সারা বাড়ি ঘুরিয়ে দেখায়। তারপর ইন্দুকে রুমে নিয়ে যায়।

এশাঃ আপু তোমরা ফ্রেশ হয়ে দুলাভাইকে নিয়ে খেতে এসো। আমরা খাবার রেডি করছি।

ইন্দু রিয়নের জন্য টি শার্ট আর প্যান্ট বের করে ওয়াশরুম দেখিয়ে দেয়। রিয়ন শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।

চলবে…..

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১২

ইন্দু শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে রিয়ন বেডে শুয়ে শুয়ে ফোনে কিছু একটা দেখছে। ইন্দু ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে টাওয়াল রেখে আয়নায় চোখ পরতেই দেখে রিয়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইন্দুর দিকে।

ইন্দু একটা লেমন কালারের শাড়ি পরেছে। ভেজা এলোমেলো লম্বা চুলগুলো কিছুটা সামনে কিছুটা পেছনে ছড়িয়ে আছে। ইন্দুকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। এমন অবস্থায় একটা মেয়েকে দেখলে যে কেউ প্রেমে পরাটা স্বাভাবিক।

ইন্দু রিয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাতের চুড়ি শব্দ করতে রিয়নের ধ্যান ভাঙে। রিয়ন সামনে তাকিয়ে দেখে ইন্দু রেডি হয়ে খাবারের জন্য ডাকছে। রিয়ন নিজের মাথায় হালকা করে একটা চাটি মেরে হেসে ফেলে।তারপর ইন্দুর পিছে পিছে যায়। খাবার টেবিল রকমারি খাবারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রিয়ন ইন্দু খাবার খেতে বসেছে। বাকিরা খাবার খেতে বসেনি দেখে রিয়ন সবাইকে একসাথে খাবার খেতে বলে। কেউ বসতে না চাইলেও রিয়নের জোরাজুরিতে একসাথে বসে সবাই খাবার খায়।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিয়ন আর তিশা প্ল্যান করছে বাইরে বেরোনোর। কিন্তু ইন্দু এসে সেই প্ল্যানে জল ঢেলে দিলো। ইন্দু কড়া গলায় বলেছে সারাদিন জার্নি করে এসেছেন এখন চুপচাপ শুয়ে রেস্ট নিন।আমি চাইনা অনিয়ম করে আপনার শরীর আবার খারাপ হয়ে যাক। বেড়ানোর জন্য অনেক সময় পাবেন। কারণ আমরা বেশ কিছুদিন থাকছি এখানে।

ইন্দুর কথা শুনে রিয়ন মুখটা গম্ভীর করে তিশাকে বলে, ছোট রাণী আজ আর বের হওয়া যাবেনা বড় রাণীর নিষেধ আছে। আমরা আগামীকাল বের হবো।

মা বাবার সাথে বসে কথা বলছে ইন্দু। ইন্দুর মা অনেক প্রশংসা করছে রিয়ন আর তার বাবার নামে। কারণ রিয়নের বাবা ই ইন্দুর পরিবার দেখাশোনা করে এখন। এতো সুন্দর করে বাড়ি করে দেওয়া, ঘড় সাজিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিছু কিনে দিয়েছে আশফাক খান, মাঠে জমিও কিনে দিয়েছে সে ইন্দুর বাবাকে। এগুলো ইন্দুর বাবা মা নিতে চায়নি তবে বাধ্য হয়ে নিতে হয়েছে।
কারণ আশফাক খানের একটাই কথা ইন্দু আমার জীবন বাঁচিয়েছে, আমার ঘরের লক্ষী হয়ে আমার পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তার কাছে এটা অতি সামান্য। ইন্দুর খুশির জন্য তার পরিবারের ভালোর জন্য তো এটুকু করতেই পারি।

এতোদিন পরে মা বাবা আর বোনদের কাছে পেয়ে ইন্দু তো মহা খুশি। এতোদিনের জমানো গল্প সব আজ শেষ করে দেবে তেমনটাই মনে হচ্ছে। বাবা মায়ের সাথে গল্প করে ছাদে চলে যায় তিন বোন।

বসে বসে গল্প করছে তিন বোন। আসলে, এশা আর তিশা ইন্দুর কাছে ইন্দুর শ্বশুরবাড়ির সবার কথা জানতে চেয়েছে। কে কে আছে সেখানে? কে কেমন এসব আরকি।
ইন্দুও দুই বোনের সাথে শ্বশুরবাড়ির গল্প নিয়ে মেতে আছে।

এদিকে রিয়ন কখন এসে ইন্দুর পেছনে বসেছে তা ইন্দু বুঝতেও পারেনি। রিয়নের ঘুম ভাঙতেই কাউকে খুঁজে না পেয়ে, ইন্দুর মা কে জিজ্ঞেস করলো ওরা সবাই কোথায়?
ইন্দুর মা জানালো ওরা ছাঁদে আছে বাবা, তুমি যাও আমি নাস্তা কইরা আনি।
তাই রিয়ন চুপি চুপি ছাঁদে এসে ইন্দুর পেছনে বসে পরে। এশা তিশা সিঁড়ির দিকে মুখ করে বসে ছিল বলে দেখতে পেলেও কিছু বলেনি ইন্দুকে। কারণ রিয়ন ইশারায় আগে থেকেই নিষেধ করেছে।

ইন্দু শ্বশুরবাড়ির সবার গল্পই করছে সবার ই খুব প্রশংসা করছে।তখন রিয়ন বললো সবার কথা বললে, কই আমার কথা তো বললে না? আমি কেমন সেটা তো বললেনা!
নাকি আমি বাদ পরে গেলাম লিস্ট থেকে?

ইন্দু রিয়নের কথা শুনে চমকে পিছনে ঘুরে তাকায়।আসলে রিয়নকে দেখে চমকায়নি ইন্দু। রিয়ন যে ইন্দুকে তুমি সম্বোধন করেছে সেটা শুনে চমকে উঠেছে ইন্দু।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু কিছু বলবে তার আগেই তিশা বলে দুলাভাই! আপনি তো হিরো। আর হিরো সবসময় অনেক ভালো হয়। হিরোকে নিয়ে কিছু না বললেও সে হিরোই হয় দুলাভাই।

তিশার কথা শুনে রিয়ন বুকে হাত দিয়ে বলে, আহ! ছোট রাণী এভাবে বলোনা। পাগল হয়ে যাবো। আমার মনটা তো এখন রঙিন প্রজাপতি হয়ে গেছে। ডানা মেলে আকাশে ভাসতে শুরু করেছে। আর বলোনা উড়তে উড়তে অনেক দুরে চলে গেলে তো আর ফিরেই আসবেনা।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রিয়নের দিকে। এশা আর তিশা হাসতে হাসতে বলে দুলাভাই, আপনি না খুব মজার মানুষ।

রিয়নঃ মেজো রাণী, ছোট রাণী তোমরা একটু বড় রাণীকে বুঝিয়ে বলো আমি মানুষটা খারাপ নয়। আমাকে একটু বিশ্বাস করাই যায়। আশা করি সে বিশ্বাসের অমর্যাদা হবেনা কখনো।

রিয়নের এমন পাগলামো দেখে ইন্দু চোখ নামিয়ে নেয়। আর মনে মনে বলে মাঝে মাঝে তো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে এই পাগলটাকে। খুব বেশি বিশ্বাস আর ভরসা করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো আর সেটা সম্ভব নয়। রিয়নের আর আমার মাঝে এক বিশাল দেওয়াল রয়েছে। যে দেওয়ালের নাম সৃজা।
আমি জানি এই সৃজাকে ছেড়ে রিয়ন কখনও থাকতে পারবেন না। ক্ষণিকের মোহে পরে হয়তো এসব কথা বলছে। গ্রাম ছেড়ে শহরে ফিরলে, মোহ টা কেটে যাবে। তখন এই বিন্দুর জায়গা হবেনা রিয়নের বুকে, সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। এই গাঁইয়া মেয়েটা তখন ভেসে যাবে অবহেলায় সেটা কারও দেখার সময়টাও থাকবেনা।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইন্দু উঠে ছাঁদের একপাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো নিজের কষ্টটাকে লাঘব করার বৃথা চেষ্টা করছে। আর বিড়বিড় করে বলছে আপনি এতো ভালো অভিনয় করতে পারেন? মাঝে মাঝে সত্যি মনে করে খুব বোকা বনে যাই আমি। মাঝে মাঝে কেন যে ভুলে যাই এটা এক বছরের জন্য শুধু অভিনয় মাত্র, এর বেশি কিছু না।

ইন্দু উঠে যেতেই রিয়ন এশা আর তিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে এই শোনো! তোমরা আমাকে দুলাভাই নয় শুধু ভাইয়া বলে ডাকতে পারো। তবে তোমাদের যেটাতে কমফোর্টেবল লাগবে সেটাই বলতে পারো নো প্রবলেম।
তোমরা কথা বলো আমি আসছি বলেই রিয়ন ও ইন্দুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। দুই হাতে ছাঁদের রেলিং ধরে ইন্দুকে উদ্দেশ্য করে বলে আমার জবাবটা এখনো পেলাম না।

ইন্দু রিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে, কোন জাবাবের কথা বলছেন?
রিয়ন ইন্দুকে বলে আমি কি তোমার বিশ্বাসের এতোটাই অযোগ্য!
ইন্দু রিয়নের দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে সব সময় সব জবাব দিতে নেই। নিজের সম্মানের খাতিরে হলেও কিছু জবাব এড়িয়ে যেতে হয়।
আর আমাদের মাঝে এমন কোন সম্পর্ক নেই যেটাতে বিশ্বাস থাকাটা খুব জরুরি।
ইন্দুর কথা শুনে রিয়ন বুঝতে পেরেছে বিন্দু এতো সহজে সবকিছু মেনে নেওয়ার পাত্রি নয়।

ইন্দুর মা সবার জন্য নাস্তা নিয়ে ছাঁদে চলে এসেছে। তিশা ডাকতেই রিয়ন আর ইন্দু ও এসে বসে পরে।
নাস্তা করে অনেকটা সময় গল্প করে কাটিয়ে দেয় সবাই।

রাতের খাবার খেয়ে ইন্দুর রুমে বসে সবাই গল্প করছে। ইন্দু রিয়নকে ওষুধ খাইয়ে দেয়। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই ইন্দুর ফোন বেজে ওঠে। ইন্দু ফোন হাতে নিয়ে দেখে দাদু ফোন করেছে।
ইন্দুর বেডে বসে এশা,তিশা আর রিয়ন আড্ডা দিচ্ছে আর হাসাহাসি করছে তাই ইন্দু রিয়নকে বলে আপনারা এখানে গল্প করতে থাকেন। আমি দাদুর সাথে কথা বলে আসি ঐ রুম থেকে।

ইন্দু তিশার রুমে গিয়ে দাদুর সাথে কথা বলছে সারাদিনের গল্প জুড়ে দেয় দাদু। সবার সাথেই ইন্দুর কথা হলো। ইন্দুকে সবাই খুব মিস করছে। ফোনে কথা বলতে বলতে প্রায় এগারোটা বাজে।
গতকাল রাতে ঘুম হয়নি তার উপর এতোটা পথ জার্নি করে এসেছে। আসার পরেও রেস্ট নেওয়া হয়নি। সবার সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছে পুরোটা বিকেল। এখন শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে ইন্দুর। সকল ঘুম পরীরা এসে যেন ভর করেছে ইন্দুর চোখের পাতায়। কখন ঘুমিয়ে পরেছে ইন্দু বুঝতেই পারেনি।

এদিকে রিয়ন গল্প করছে আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। সাড়ে বারোটা বাজে এখনো ইন্দুর আসার কোন নাম নেই। রিয়নকে বার বার ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখে এশা বলে দুলাভাই ঘুমিয়ে পরেন অনেক রাত হলো আমরাও যাই সকালে কথা হবে আবার।

তিশাকে নিয়ে এশা উঠে যেতেই রিয়ন বলে তোমার আপু কোথায় এখনো রুমে এলোনা যে?
তিশাঃ আপু ঐ পাশের রুমে আছে আমরা গিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এশা তিশা রুম থেকে বের হতেই রিয়ন ও ওদের পিছে পিছে বেরিয়ে যায়।

তিশার রুমে ঢুকতেই তো সবার চোখ ছানাবড়া। ইন্দু নিশ্চিন্তে এখানে ঘুমিয়ে আছে। তিশা ইন্দুকে ডাকলো তবু কোন সারা পেলোনা। রিয়ন বেডের একপাশে বসে ইন্দুকে ডাকলো কিন্তু ইন্দু ঘুমে বিভোর। কয়েকবার ডাকলেও তাতে কোন লাভ হলোনা।

রিয়ন উপায় না পেয়ে ইন্দুকে কোলে তুলে নেয়। ইন্দুকে রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়।

চলবে……

হ্যাপি রিডিং 🥰

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#বোনাস_পার্ট

রিয়ন উপায় না পেয়ে ইন্দুকে কোলে তুলে নেয়। ইন্দুকে রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়। ইন্দু ঘুমে এতোটাই বিভোর যে কিছু টেরও পায়নি। বিছানায় শুইয়ে দিতেই পাশ ফিরে বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকে।

রিয়ন ইন্দুর গায়ে কম্বল টা টেনে দিয়ে পাশে বসে এক মনে ঘুমন্ত ইন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। মুহুর্তেই ইন্দুর হাসিমুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। রিয়ন বসে বসে ভাবছে, জেগে থাকা বিন্দু আর ঘুমন্ত বিন্দুর মধ্যে অনেকটা ফারাক। কতো চঞ্চল ছটফটে মেয়ে, অথচ এখন একদম বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ করে ইন্দুর চকলেট খাওয়ার কথা রিয়নের মনে পরতেই হেসে ওঠে রিয়ন।
রিয়ন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বেডের মাঝে একটা কোলবালিশ রেখে শুয়ে পরে। রিয়ন শুয়ে তার ঘুমন্ত বিন্দুকে দেখছে। দেখতে দেখতে কখন নিজেই ঘুমিয়ে পরেছে বুঝতে পারেনি।

কিন্তু বিপত্তি ঘটল তখন, যখন ঘুম ভাঙলো ইন্দুর।

ইন্দুর তো বরাবরই আজানের সুর কানে ভেসে আসতেই ঘুম ভেঙে যায়। আজও তার অন্যথা হলোনা। আজানের শব্দ কানে আসতেই ইন্দু চোখ বন্ধ করেই ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু উঠতে সক্ষম হলোনা। তার মনে হলো কিছু একটা তাকে শক্ত করে আটকে রেখেছে। চোখ মেলে তাকাতেই ইন্দুর লাগলো এক বিশাল ঝটকা। ইন্দু তো কারো বুকে জরিয়ে আছে। টি শার্ট দেখে ইন্দু বুঝতে পেরেছে এটা অন্য কেউ নয় এটা তার ই বর রিয়ন। তবে ইন্দু রিয়নের মুখোমুখি নয়। ইন্দুর মাথা রিয়নের বুকে। ইন্দু রিয়নের এক বাহুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে অন্য বাহুতে রিয়ন ইন্দুকে জরিয়ে ধরে আছে। ইন্দুর হঠাৎ মনে হলো সে তো তিশার রুমে ঘুমিয়েছিলো, তাহলে রিয়নও কি তিশার রুমেই এসে ঘুমিয়েছে? সেটা জানতে ইন্দু মাথা তুলে তাকাতেই ইন্দুর কপালে রিয়নের ঠোঁট ছুঁয়ে যায়। ইন্দু চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রিয়নের দিকে। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে, নাহ্! এটা তো ইন্দুর ই রুম।
তাহলে কি রিয়ন তুলে এনেছে ?

কথাটা ভাবতেই ইন্দু রিয়নের বাহুডোর থেকে মুক্তি পেতে, দুরে সরার চেষ্টা করতেই রিয়ন আরও শক্ত করে ইন্দুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুম জরানো কন্ঠে বলে কি করছো বিন্দুপাখি! ডিস্টার্ব কেন করছো! ঘুমোতে দাওনা একটু শান্তিতে।

ইন্দু রিয়নের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে, এটা কি ধরনের ব্যাবহার হুমমম! আমাকে এভাবে জরিয়ে ধরে আছেন কেন? ঘুমের সুযোগ নিয়েছেন? আপনি জানেন, আমি আপনার সাথে বেড শেয়ার পর্যন্ত করিনি আর আপনি আমায় জরিয়ে আছেন!

ইন্দুর কথা শুনে রিয়ন দাঁতে দাঁত চেপে একহাতে ইন্দুর থুতনি পেচিয়ে দুই চোয়াল শক্ত করে ধরে বলে, “এই মেয়ে এই, কি যা তা বলে যাচ্ছো তখন থেকে হ্যা! আমি তোমার ঘুমের সুজোগ নিয়েছি? তার মানে টা কি হুম! আমায় কি তোমার কাপুরুষ বলে মনে হয়? আর শোনো! তুমি আমার ওয়াইফ।
আমরা লিগ্যালি হাসবেন্ড -ওয়াইফ সো তোমাকে টাচ করার সম্পুর্ন রাইট আমার আছে।”
যদিও আমি তোমাকে জরাইনি, তুমি নিজেই আমার জায়গায় এসে আমাকে জরিয়ে ধরেছো। মাঝে কোলবালিশ দিয়ে রেঝেছিলাম সেটাও ছুড়ে ফেলেছো। তাই, তখন তুমি জরিয়ে ধরেছো আর এখন আমি তোমায় জরিয়ে থাকবো ইট’স ভেরি সিম্পল।

রিয়নের কথা শুনে তো ইন্দুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে। কারণ ইন্দুর ঘুমটা গভির হলেও ইন্দু ঘুমের ঘোরে কখনো হাতপা ছোড়াছুড়ি করেনা। যে পাশ ফিরে ঘুমায় সে পাশেই রাত শেষ। আর এ ছেলেটা কিনা বলছে ইন্দু ঘুমের ঘোরে এমনটা করেছে?

ইন্দু ভালো করে তাকিয়ে দেখে রিয়ন ঠিকই বলছে। ইন্দু নিজের জায়গা ছেড়ে রিয়নের জায়গায় চলে এসেছে আর নিজের বালিশ ছেড়ে রিয়নের বাহুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। আর কোলবালিশটা পায়ের কাছে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ইন্দু এবার চুপচাপ ভাবছে এসব হলো আর আমি জানতেই পারলাম না!

ইন্দুকে এভাবে ভাবতে দেখে রিয়ন একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে রাতের কথাটা ভাবতে থাকে।
রাতে ঘুমন্ত ইন্দুকে দেখে ইন্দুর মায়ায় পরে যায় রিয়ন। কি হবে, কি হবেনা এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কোলবালিশটা সরিয়ে রেখে ইন্দুকে একটানে নিজের কাছে এনে ইন্দুকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।
কিন্তু ইন্দু এখন সেটা জানতে পারলে একটা হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দেবে। তাই রিয়ন দায়টা ইন্দুর ঘাড়েই চাপিয়েছে।

ইন্দু মুখটা গম্ভীর করে বলে ছাড়ুন, নামাজ পড়বো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

রিয়ন ইন্দুকে ছেড়ে দিতেই ইন্দু বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসে রিয়নকে ডেকে তোলে।
রিয়ন ও ফ্রেশ হয়ে ওজু করে একসাথে দুজন সালাত আদায় করে নেয়। তারপর দুজনেই উঠনে দাঁড়িয়ে আছে।
বাইরে হালকা আলো ফুটতে শুরু করেছে। এখনো অন্ধকার দুর হয়নি আর হালকা কুয়াশার কারণে রাস্তায় তেমন লোকজনের আনাগোনা নেই। বড় উঠনটার শেষ প্রান্ত থেকেই রাস্তা। এটা মেঠো পথ নয়। তবে পিচঢালা হলেও গ্রামের রাস্তা। তাই তেমন গাড়ি চলাচল নেই।

ইন্দুঃ হাঁটতে যাবেন?
রিয়নঃ এতো ভোরে হাঁটতে যাবো?
ইন্দুঃ হেঁটেই দেখুন না! গ্রামের সকালটা উপভোগ করে দেখুন ভালো লাগবে। হয়তো এমন সুযোগ আর আসবেনা।

রিয়নঃ ওকে, চলো না ঘুরে আসি অজানাতে। তারপর বিড়বিড় করে বলে, রিয়ন তো বিন্দুতেই মিশে গেছে।

ইন্দু ভ্রু কুচকে বললো কোথায় যেতে চান?
রিয়নঃ তোমার এলাকা আমি তো চিনিনা। তাই কোথায় যাওয়া যায় সেটা তুমি ভালো জানো।

ইন্দু রিয়নের কথা শুনে বলে ঠিক আছে চলুন সামনের দিকে যাওয়া যাক। তারপর দুজনে গল্পে গল্পে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে এসেছে। এক কিঃমিঃ পথ না হলেও প্রায় অনেকটা কাছে চলে এসছে। ইন্দু আর রিয়ন একটা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এখনো সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ইন্দু বললো চলুন এবার ফেরা যাক।

রিয়নঃ আর একটু থাকি। একটু পরে ফিরবো। খুব ভালো লাগছে। নিজেকে অনেকটা হালকা লাগছে।

ইন্দুঃ চলুন সামনে স্টেশন আছে দেখে আসবেন।
রিয়নঃ ওকে চলো।

দুজন হাঁটতে হাঁটতে রেল স্টেশনে পৌঁছে যায়। স্টেশনে তেমন একটা লোক নেই। দু একজন এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে।

রিয়নঃ বিন্দু! তুমি আমার হাত ধরে হাঁটবে রেললাইনে?

ইন্দু রিয়নের দিকে তাকাতেই রিয়ন বলে একচুয়েলি আমার হাঁটতে ইচ্ছে হলো তাই বললাম। তোমার হাঁটতে ইচ্ছে না হলে কোন প্রয়োজন নেই।

ইন্দু আর কিছু না বলে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। রিয়ন হাসিমুখে ইন্দুর হাত ধরে হাঁটতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে ইন্দু বললো ইচ্ছে পুরণ হয়েছে? এবার ফিরে চলুন।

রিয়নঃ এ হাত ধরে চলতে গিয়ে থামতে ইচ্ছে করছেনা। মনে হচ্ছে নতুন করে চলতে শিখছি। জীবনকে নতুন করে অনুভব করতে পারছি।রংহীন জীবনটা আমার আবার রঙিন হয়ে উঠেছে।

ইন্দুঃ থামতে ইচ্ছে না করলে রাস্তায় না খেয়ে থাকতে হবে চলুন ফিরতে হবে লেট হয়ে যাচ্ছে।

রিয়নঃ মুখটা গম্ভীর করার ভাব ধরে বলে দিলে তো আমার রোমান্টিক মোডের তেরোটা বাজিয়ে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে চলো ফিরে চলো কি আর করার। দুজনে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে সেই ব্রিজটার উপর এসে দাঁড়ায়। কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে। রিয়ন ইন্দুর হাতটা তখনো ধরে আছে।
কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে ইন্দু আর রিয়ন বাড়ির পথে হাঁটা ধরে। কিছুটা পথ এসে ইন্দু রিয়নকে বলে হাতটা ছেড়ে দিতে।

রিয়নঃ কেন? হাতটা ছাড়তে যাবো কেন? আমি এভাবেই ঠিক আছি।
ইন্দুঃ এখন রাস্তায় লোকজন আছে। এটা খারাপ দেখাবে।
রিয়নঃ কেন? আমি কি অন্য কারও হাত ধরেছি নাকি? আমি আমার ওয়াইফের হাত ধরেছি তো কেউ কিছু কেন বলবে?

ইন্দুঃ এটা গ্রাম। আপনার মডার্ন সিটি নয়।
ইন্দুর কথা শুনে রিয়ন ইন্দুর হাত ছেড়ে দেয়।

বাসায় ঢুকতে এশার সাথে রিয়ন আর ইন্দুর দেখা হয়ে যায়। এশার হাতে বাজারের ব্যাগ। রিয়ন এশাকে বললো তুমি এখানে একটু ওয়েট করো,আমি এক্ষুণি আসছি। জরুরি কথা আছে তোমার সাথে। ভেতরে গিয়ে রিয়ন ইন্দু দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নেয়। রিয়ন রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে এশার সাথে।

ইন্দু আর তিশা তার মায়ের সাথে হাতে হাতে নাস্তা রেডি করছে।

রিয়ন আর এশা বাজার থেকে ফিরে এসেছে। রিয়ন এতোকিছু বাজার নিয়ে এসেছে, মনে হচ্ছে পুরো বাজারটাই তুলে এনেছে। বাড়ির পাশের এক চাচিকে ডেকে আনা হয়েছে মাছ কেটে দেওয়ার জন্য। আর হাতে হাতে একটু রান্না করার জন্য।
নাস্তা করে রিয়ন আর তিশা গল্প করায় ব্যস্ত। যতো গল্প আছে তিশার পেটে, সব গরগর করে ঢেলে দিচ্ছে রিয়নের কাছে। রিয়ন খুব মজা নিয়ে গল্প শুনছে তিশার।

বাকিরা সবাই নাস্তা করে রান্নার কাজে ব্যস্ত।
তখন পেছন থেকে বলে বিয়ের পরে সবাই চেঞ্জ হয় জানতাম বাট এতোটা স্বার্থপর হয় জানতাম না। কথা শুনে ঘুরে তাকাতেই ইন্দুর খুশিতে মুখ ঝলমল করে ওঠে। দৌড়ে গিয়ে রিয়াকে জরিয়ে ধরে ইন্দু।
তারপর সবাই মিলে রান্নার কাজে হাত লাগায়।রান্নার ফাঁকে ফাঁকে জমিয়ে গল্প করছে সবাই

হঠাৎ জানালার পাশ থেকে একটা ছেলে তিশাকে বললো, কিরে তিশা! তোর আপু এসেছে শুনলাম।
তিশাঃ হুম এসেছে, আর শুধু আপু একা আসেনি দুলাভাই ও সাথে এসেছে।
ছেলেটিঃ তা তোর দুলাভাই ইন্দুকে রেখে চলে যাবে, নাকি সাথে নিয়ে যাবে? শহরের ছেলেদের কোন বিশ্বাস নেই বুঝলি? ওরা আমাদের মতো এমন সহজ সরল হয়না। ওরা প্রেম, ভালোবাসা বিশ্বাসের কদর করতে জানেনা।

রিয়ন আড়ালে বসে আছে বলে রিয়নকে দেখতে পায়নি ছেলেটা

তিশাঃ আমার আপুকে নিয়ে তোমায় এতোটা ভাবতে হবেনা ভাইয়া। নিজেকে নিয়ে ভাবো। আর আমার দুলাভাই অন্য ছেলেদের মতো নয়। আমার দুলাভাই ইজ দ্যা বেস্ট।

রিয়নঃ তিশা? ছেলেটি কে?

চলবে……….

(বোনাস পার্ট দিলাম। রি চেক হয়নি।)

হ্যাপি রিডিং🥰