সম্পর্কের অধিকার পর্ব-৭+৮+৯

0
426

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০৭

রিয়নের এখনো সেন্স ফেরেনি। ডক্টর বলেছে রাতে যে কোন সময় জ্ঞান ফিরবে। তাই ইন্দু হসপিটালে রয়ে গেছে। রিয়নের মম থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু ইন্দু থাকতে দেয়নি বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে সবাইকে। রুপক সবাইকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে রাতে ইন্দুর খাবার নিয়ে এসেছে, কিন্তু ইন্দু সে খাবার ছুঁয়েও দেখেনি। ঠাঁয় বসে রয়েছে। রুপক ও হসপিটালে রয়েছে বাসায় ফেরেনি। কখন কি প্রয়োজন হবে, ইন্দু একা একা কি করবে না করবে তাই রয়ে গেছে।

রাত তিনটে এখনো রিয়নের জ্ঞান ফেরেনি। রুপক জেগে ছিল। একটার দিকে ইন্দু তাকে বলেছে প্রয়োজন হলে ডেকে নেবো তুমি ঘুমিয়ে পরো। তাই কেবিনের ভেতরে বসার জন্য যে সোফা রাখা আছে রুপক সেটাতে ঘুমিয়ে পরেছে।

ভোর পাঁচটায় জ্ঞান ফেরে রিয়নের। হাত পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা নাড়াতে পারছেনা। হঠাৎ রিয়নের চোখ পরে ঘুমন্ত ইন্দুর দিকে। রিয়নের হাতটা জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে হয়তো বুঝতেই পারেনি। ইন্দুকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কান্নাকাটি করেছে মেয়েটা। ঘুমিয়ে আছে তবুও মুখটা মলিন হয়ে আছে। মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ইন্দুর দিকে তাকিয়ে রিয়ন একটু মুচকি হাসে কিন্তু কোন শব্দ করেনা কারণ রিয়ন ইন্দুর ঘুমটা ভাঙাতে চায়না।

ইন্দুর ঘুম ভেঙে যায়। ইন্দু চোখ খুলতেই রিয়নের চোখে চোখ পরে যায়।রিয়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইন্দুর দিকে। ইন্দু রিয়নকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তারাহুরো করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে উঠে বসে।

রিয়নকে জিজ্ঞেস করলো কখন উঠেছেন ঘুম থেকে। ইন্দু রিয়নকে বলে না যে এতোটা সময় তার সেন্স ছিলোনা। রিয়ন বলে এইতো কিছুক্ষণ হলো।
ইন্দু জিজ্ঞেস করলো কিছু লাগবে নাকি। রিয়ন বললো নাহ্ কিছু লাগবেনা।

কিছু সময় পরে রিয়নকে ফ্রেশ করিয়ে দেয় ইন্দু।
সকালে অফিস যাওয়ার আগে আশফাক খান রিয়নকে দেখে গিয়েছে আর খাবার দিয়ে গিয়েছে। রিয়নের জন্য একটু স্যুপ করে পাঠিয়েছে রিয়নের মম। ইন্দু বলেছিলো স্যুপ করে দিতে।
ডক্টরের সাথে কথা বলে আজ বিকেলেই রিয়নকে বাসায় নেওয়ার ব্যাবস্থা করেছেন আশফাক খান। কারণ রিয়ন এখানে থাকবেনা বলে বায়না ধরেছে।
ডক্টর এই অবস্থায় ছাড়তে চায়নি রিয়নকে। যদিও গুরুতর আহত নয় তবুও মাথায় চোট লেগেছে, হাতে লেগেছে পায়েও লেগেছে। তবে পায়ের চোট টা একটু বেশিই লেগেছে। যার জন্য প্রায় এক মাসের মতো রেস্টে থাকতে হবে রিয়নকে।পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারছেনা রিয়ন। তবে কিছু দিনের মধেই ঠিক হয়ে যাবে। ইন্দু ডক্টরকে বলেছে সে রিয়নের সব দায়িত্ব পালন করতে পারবে। অবশেষে ডক্টর রিয়নকে বাসায় নেওয়ার পারমিশন দিয়েছে।
ইন্দু রিয়নকে স্যুপ খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দেয়। রুপক এবার ইন্দুকে বললো মিষ্টি ভাবি তুমি খেয়ে নাও এবার। আমি ভাইয়ার কাছে আছি। ভাইয়ার কিছু প্রয়োজন হলে আমি দিয়ে দিবো। ইন্দু একটু হেসে বলে তুমি খেয়ে নাও আমি পরে খেয়ে নিবো।
ইন্দুর কথা শুনে ভ্রু কুচকে রুপক বলে সারাটা রাত না খেয়ে বসে বসে কাটিয়ে দিয়েছো একা একা। আমাকেও জাগতে দাওনি।এখন একটাও কথা বলবেনা যা বলছি চুপচাপ সেটাই করো কথা না বলে খেয়ে নাও। ইন্দু কিছুতেই খেতে বসছেনা, বলছে আমি বড় তাই আমি যা বলবো তোমাকে সেটাই করতে হবে যাও তুমি আগে খেয়ে নাও।

রিয়ন এতোক্ষণ ধরে রুপক আর ইন্দুর কথা শুনছিলো এবার রিয়ন বললো, আমার কাছে কাউকেই থাকতে হবেনা আমি এখন ঘুমোবো। আপনারা দুজনেই খেয়ে নিন। আর এমন তো নয় আপনারা বাইরে চলে যাচ্ছেন, এই রুমেই তো খাবেন কোন প্রবলেম নেই। বলেই চোখ বন্ধ করতে করতে বলে আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না ঘুম পাচ্ছে আমার।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু আর রুপক দুজনেই একসাথে খেতে বসে। ইন্দু খাবার খাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।মাঝে মাঝে রুপকের দিকে তাকাচ্ছে। ওদের দুজনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে রুপক হয়তো কিছু বলেছে যার জন্য ইন্দু হাসছে।

রিয়ন এক দৃষ্টিতে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। হাসলে যে এই মেয়েটাকে এতোটা সুন্দর লাগে তা আগে জানতো না রিয়ন। আর ও যে এতোটা হাসি খুশি থাকে সেটা দেখার সৌভাগ্য ও এর আগে হয়নি রিয়নের। আর হবেই বা কি করে ইন্দু তো রিয়নের থেকে সবসময় দুরত্ব বজায় রেখে চলে। শুধু রিয়নের সব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সময়মত গুছিয়ে দেয় ইন্দু।
তবে ইন্দুকে আজ হাসতে দেখে মনের অজান্তেই রিয়নের মনে একটা ভালো লাগা কাজ করে। তাই রিয়নের ঠোঁটের কোনে ও হাসি ফুটে ওঠে।

বিকেলে অফিস থেকে আশফাক খান সোজা হসপিটালে চলে যায়। সেখান থেকে রিয়নকে নিয়ে ইন্দু, রুপক আর আশফাক খান বাসায় ফেরে।
রিয়নকে ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় ইন্দু আর রুপক।
রিয়নকে সময়মত খাওয়ানো ওষুধ খাওয়ানো ফ্রেশ করিয়ে দেওয়া এসব কিছু ইন্দুই করছে।
রিয়ন যখন যে খাবার খাবে সেটা ইন্দুই রান্না করে দেয়। এক কথায় দিন রাত একভাবে সেবা যত্ন করে যাচ্ছে ইন্দু। এক সপ্তাহ হলো আজ। রিয়ন এখন আগের থেকে অনেকটা বেটার। পারিবারিক ডক্টর এসে প্রতিদিন চেকআপ করে যায় রিয়নকে। ডক্টরের নির্দেশনা অনুযায়ী রিয়নকে সেবা যত্ন করেছে খাবার খাইয়েছে। যার ফলে রিয়ন এতো দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। হাতের ব্যান্ডেজও আজ খুলে দিয়েছে ডক্টর। শুধু পায়ের ব্যান্ডেজটা খোলা হয়নি। আরও এক সপ্তাহ রাখতে হবে। ডক্টর ড্রেসিং করে দিয়ে নতুন করে আবার ব্যান্ডেজ করে দেয় প্রতিদিন।

এই কয়েকদিনে ইন্দুকে অনেকটা কাছের লোক বলে মনে হয় রিয়নের। যে মেয়েকে এতোটা অবহেলা করছে সে, আজ সেই মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে চলতে হচ্ছে তাকে। যে রাত দিন এক করে দিয়ে এতোটা পরিশ্রম করছে তার জন্য মনে আলাদা একটা স্পেস হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ কয়দিনে রিয়ন খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে এ পরিবারের সবাই ইন্দুকে কতোটা ভালোবাসে।

বিকেলে রুমে বসে আছে ইন্দু আর রিয়ন। রিয়নকে ফল কেটে দিচ্ছে ইন্দু। তখন দাদু,রুপক,রাই রিয়নের রুমে আসে। ইন্দু সবাইকে ফল কেটে দিয়ে বলে তোমরা সবাই গল্প করো আমি সবার জন্য চা করে আনি বলেই নিচে চলে যায় ইন্দু।
সবার জন্য চা কফি নিয়ে আসে। দাদু চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বলে আমরা চা কফি খেতে আসিনি। রিয়ন এখন অনেকটা সুস্থ আমরা তোকে নিয়ে যেতে এসেছি। কতোদিন আমাদের সাথে আড্ডা দিসনি বলতো! চল আমরা সবাই এখন লুডু খেলবো।
দাদুর কথা শুনে রিয়ন অবক হয়ে বলে কিহ্! তোমরা লুডু খেলবে!

দাদুঃ হুম খেলবো, কেন তোমার কি কোন প্রবলেম আছে দাদুভাই?
রিয়নঃ ন ন না মানে, খেলবে তো ঠিক আছে এখানে খেলো অন্য কোথাও বিন্দুকে নিয়ে যাওয়ার কি আছে?

রিয়নের কথা শুনে সবাই একসাথে চোখ বড় বড় করে মুখ এগিয়ে নিয়ে রিয়নের দিকে তাকায়।
রিয়ন তখন বলে একচুয়েলি, আমি তো হাঁটতে পারিনা এখনো, আমার কখন কি প্রয়োজন হয় সেটা তো জানি না। তাই বিন্দু এখানে থাকলে, ইনফ্যাক্ট তোমরা সবাই এখানে থাকলেই ভালো হয় আরকি।

রিয়নের কথা শুনে দাদু আঙুল দিয়ে নাকের ডগা থেকে চশমাটা চোখে দিয়ে বলে সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এই বিন্দু টা আবার কে?

রিয়ন তখন ইন্দুর দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে।ইন্দু কিছু বলবে তার আগেই রুপক বলে ইন্দু জানতাম বিন্তী জানতাম ইশিকাও জানতাম বাট বিন্দুটা টা তো জানতাম না! এটা আবার কবে হলো?

রিয়ন প্রসঙ্গ পাল্টাতে একটু রাগ দেখিয়ে বলে সে যখন হয়েছে হয়েছে । আমি ওসব নামে ডাকতে পারবোনা। আমি বিন্দু নামেই ডাকবো।

দাদু তখন চশমার উপর দিয়ে রিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে ওকে বুঝতে পেরেছি। তা তোমার বিন্দুকে কি আমরা এখন কিছু সময়ের জন্য নিয়ে যেতে পারি?

রিয়নঃ কোথায় নিয়ে যাবে? এইতো বললাম তোমরা এখানেই খেলতে পারো তবুও যাচ্ছো কোথায়?

দাদুঃ না, দুরে কোথাও যাচ্ছি না তোমার বেলকনিতেই আছি। একচুয়েলি হয়েছে কি জানো দাদুভাই? তুমি তো অসুস্থ, তাই তোমার পাশে চিল্লাচিল্লি করে মজা করে খেলাটা না একদমই উচিৎ হবেনা। তাই বেলকনিতে গিয়ে খেলি। আর তুমি ডাকলেও শুনতে পাবো।

রিয়নঃ নাহ্, বেলকনিতে গিয়ে খেলতে হবে না। আমি এতোটাও অসুস্থ নই। তোমরা এই রুমেই খেলবে এমন কি আমার এই বেডে বসেই খেলবে।

রিয়নের কথা শুনে দাদু মুচকি মুচকি হাসছে আর বলছে ওকে তাহলে তাই হবে।সবাই বসো আমরা এখানেই লুডু খেলবো আজ। ইন্দু তো পুরোটা সময় হা করে দাঁড়িয়ে এসব কান্ডকারখানা দেখছিল। কথা বলতে ভুলে গিয়েছে ইন্দু রিয়নের এসব কথা শুনে।

দাদু রুপককে বললো জোড়া মিলে খেলা হবে। রাই আর রুপ হলো, দাদু আর ইন্দু। মাঝখানে বসে খেলা দেখছে রিয়ন।

খেলার সময় দাদু ইন্দুকে ফ্লাইং কিস দেওয়ার মতো করে একটু অভিনয় করে। রিয়ন সেটা দেখে ভ্রু কুচকে ইন্দু আর দাদুর দিকে তাকায়।

চলবে……

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০৮

খেলার সময় দাদু ইন্দুকে ফ্লাইং কিস দেওয়ার মতো করে একটু অভিনয় করে। রিয়ন সেটা দেখে ভ্রু কুচকে ইন্দু আর দাদুর দিকে তাকায়। ইন্দু হাসি মুখে দাদুর সাথে হাই ফাইভ করে। কারণ দাদু আর ইন্দু জিতে গেছে।
এটা দেখে রিয়ন মনে মনে রেগে বলে বুড়ার বয়স বেড়েছে ঠিকই কিন্তু মনে এখনো ১৮ এর হাওয়া বইছে। কেন ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিতে হবে কেন? অন্যের বউয়ের দিকে!

দাদু বললো চল আবার খেলবো। দাদুর মুখের কথা মুখেই রইলো, রিয়ন লুডু গুটিয়ে, গুটি গুছিয়ে সুন্দর করে প্যাক করে বললো এবার তোমরা বের হও আর খেলতে হবে না। আমি এখন ওয়াশরুমে যাবো।

রিয়নের কথা শুনে দাদু বললো ওয়াশরুমে যাবে তো যাও রুপক তোমায় নিয়ে যাচ্ছে। তোমায় রেখে এসে তারপর খেলবে। তুমি ফ্রেশ হয়ে ডাকলে রুপক গিয়ে আবার নিয়ে আসবে।

দাদুর কথা শুনে রিয়ন ভ্রু কুচকে বলে কেন আমি অন্যের সাথে যাবো কেন? আমার বউ থাকতে আমি অন্যের উপর ভরসা করে কেন চলবো? আমার বিন্দু যতোদিন আমার পাশে আছে আমার কাউকে লাগবেনা। এবার তোমরা যাও।

রিয়নের কথায় দাদু একটু রিয়নের দিকে ঝুঁকে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে বলে, তা দাদুভাই বউয়ের উপর তুমি ভরসা করতেই পারো, তা বলে আমরা সবাই অন্যলোক হয়ে গেলাম! এটা তুমি তোমার বিন্দুর সামনে বলতে পারলে দাদুভাই!

দাদুর কথা শুনে রুপক আর রাই ও মন খারাপের ভাব ধরে কান্না কান্না মুখ করে বললো এটাও শুনতে হলো আমাদের! নিজের মায়ের পেটের ভাই কিনা বলছে অন্যলোক!

রিয়ন সকলের কথা শুনে বুঝতে পেরেছে এরা সবাই রিয়নের সাথে মজা করছে। তাই রিয়ন সিরিয়াস মুখ করে বলে অনেক হয়েছে এবার তোরা বের হবি? আর দাদু তুমিও না! এই বয়সে তুমি পারোও বটে! এবার যাও তো।

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলে ইন্দু রিয়নকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে চাইলে রিয়ন যায়না।

ইন্দু ভ্রু কুচকে বলে এই তো বললেন আপনি ওয়াশরুমে যাবেন এখন বলছেন যাবেন না, এটা কেমন কথা? আপনি ওয়াশরুমে যাবেন বলে দাদু, রাই,রুপক বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

রিয়নঃ কেন, দাদু রুম থেকে চলে গিয়েছে বলে খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? দাদুর ফ্লাইং কিস খুব মিস করছেন বুঝি? এসব কি হুহ্! বরের সামনে অন্য কারোর সাথে হুম!

রিয়নের বলা কথাটা শুনে ইন্দু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চলে যেতে নিলেই রিয়ন ইন্দুর হাত ধরে ফেলে। ইন্দু একবার হাতের দিকে, একবার রিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে হাতটা ছাড়ুন।

রিয়ন ইন্দুর কথা শুনে বলে যদি না ছাড়ি?

ইন্দুঃ কেন ছাড়বেননা? এই হাত কি ধরে রাখার কথা ছিলো?

ইন্দুর কথা শুনে রিয়ন হাতটা ছেড়ে দেয়। ইন্দু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিচে চলে যায়।

এদিকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দাদু,রাই,রুপক সব কিছুই শুনলো।তারপর নিজের রুমে গিয়ে দাদু শব্দ করে হেসে রুপক আর রাইকে বলে দে তালি প্রথম প্ল্যান সাকসেসফুল।

দাদুঃ শোনো রূপক দাদুভাই, আমার বড় দাদুভাই ইন্দুকে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু সেটা মুখে স্বিকার করছে না। হয়তো নিজে বুঝতে পারছে না। তবে এটা ওকে বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব টা আমাদের। এবর শুরু হবে মিশন টু।
তবে তার আগে দাদুভাইয়ের সুস্থ হয়ে ওঠা টা বেশ জরুরি। আর ততোদিনে আমরা সুন্দর করে প্ল্যানটা সাজিয়ে নেই চলো।

ইন্দুর সেবা যত্নে অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে রিয়ন। ইন্দুর কাঁধে ভর দিয়ে হেঁটেছে বেশ কয়েকদিন।রিয়ন যখন রুমে বসে বসে বোর ফিল করে তখন ইন্দু হাত ধরে ধরে এখানে সেখানে নিয়ে ঘুরেছে। বাইরে বাগানে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিতো দোলনায়। আবার হাত ধরে নিয়ে ঘুরতো। কারণ ডক্টর বলেছিলো এখন একভাবে বসিয়ে না রেখে হাঁটাহাটি করাতে।

রিয়নের এক্সিডেন্টের বিশদিন হলো। এখন অনেকটাই সুস্থ। একা চলাফেরা করতে পারে। যদিও একটু কষ্ট হয় চলতে তবুও নিজে নিজে চলার চেষ্টা করে রিয়ন। কিন্তু ইন্দু কখনো একা ছাড়েনা রিয়নকে।

সবাই নিচে সোফায় বসে একসাথে আড্ডা দিচ্ছে তখন রিয়নের ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সৃজা ফোন করেছে।

রিয়ন সবার সামনে থেকে উঠে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইন্দু রিয়নকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। কারণ রিয়ন সুস্থ হলেও সিঁড়ি দিয়ে একা উঠানামা করতে দেয়না ইন্দু।

রুমে গিয়ে রিয়ন ইন্দুকে বলে আমায় একটু পানি দেন বলে রিয়ন সৃজার ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই, খুব অস্থির হয়ে সৃজা বলে বেবি তুমি কেমন আছো? তোমার শরীর কেমন? তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করেছিলে? আমাকে একবারও জানাওনি কেন? আর আমি, আমি তো এর মাঝে দুদিন ফোন করে তোমার সাথে কথা বলেছি। কই আমাকে এক্সিডেন্টের বিষয়ে কিছু বলোনি তো তুমি ?

এদিকে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইন্দু। রিয়ন ফোনে কথা বলছে দেখে রিয়নকে ডিসটার্ব করলোনা।

রিয়নঃ আরে ইয়ার! এতো অস্থির হচ্ছো কেন? আমার কিছু হয়নি আমি ঠিক আছি। সামান্য একটু লেগেছিল তাই কিছু জানাইনি তোমায়। আমি একদম ফিট আছি এখন। তোমায় এতো টেনশন করতে হবেনা। কথা বলতে বলতেই পেছন থেকে কেউ রিয়নকে জড়িয়ে ধরে রিয়ন চমকে উঠে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়ন যা দেখছে তা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন।সৃজা এসে রিয়নকে জড়িয়ে ধরেছে।

রিয়ন ইন্দুর দিকে তাকায়। ইন্দু পানির গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েই আছে। তবে সৃজার এমন কান্ড দেখে ইন্দু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইন্দুর পাশে দাঁড়িয়ে ইন্দুকে শক্ত করে ধরে আছে রাই।

রিয়ন সৃজাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে কি করছো কি সৃজা? পাগলামি করছো কেন? আ’ম ফাইন।

সৃজা রিয়নকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে বেবি ইউ নো না, আমি কতোটা ভাবি তোমায় নিয়ে। আমি সবসময় তোমাকে নিয়ে কতোটা টেনশনে থাকি বলো। আর তুমি আমাকে কিছুই জানালে না? This is not fair baby.

সৃজার এমন কথা শুনে রাই আস্তে আস্তে বলে যত্তসব ন্যাকামি। দেখলে গা জ্বলে যায়।

ইন্দু পানির গ্লাসটা রিয়নের দিকে এগিয়ে দিতেই সৃজা বলে। বেবি, এটা কি তোমাদের নতুন সার্ভেন্ট? একে তো আগে কখনো দেখিনি?

রিয়ন কিছু বলবে তার আগেই রাই বলে এটা কোন সার্ভেন্ট নয় ও হলো ইন্দু। এ বাড়ির বড় বউ। যাকে জড়িয়ে ধরে বেবি বাবু করছো তার ওয়াইফ। বাই দ্যা ওয়ে ওকে দেখে তোমার কেন মনে হলো ও মেড সার্ভেন্ট?

রাই কথাটা শেষ করতেই সৃজা বলে ওহ্ আচ্ছা, এই তাহলে সেই গাঁইয়া মেয়েটা, যে কিনা জোর করে আমার বেবির ঘাড়ে ঝুলে পরেছে। একটা ক্ষেত লো ক্লাসের অশিক্ষিত মেয়ে। ওর কোন যোগ্যতা আছে নাকি হাই সোসাইটিতে ওঠাবসা করার। আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখো। রিয়ন বেবির জন্য আমি পার্ফেক্ট তুমি নয়।

রাই সৃজাকে থামিয়ে দিয়ে বলে সে তুমি নিজের প্রশংসা নিজে করতেই পারো।কিন্তু তুমি কি জানো, তোমার এই স্মার্ট, মডার্ন, হায়ার এডুকেটেড বেবিটা এতোদিন এই গাঁইয়া মেয়েটার উপর নির্ভরশীল ছিল? ইনফ্যাক্ট এখন পর্যন্ত ও এই গাঁইয়া মেয়েটার কাঁধে ভর দিয়ে চলতে হয় তোমার বেবিকে! জানোনা, আর জানবেই বা কি করে তুমি তো সুখের পায়রা দুঃসময়ে আসবে কেন?

আর তুমি ভাবিকে কি বলছিলে অশিক্ষিত? তুমি কি জানো ভাবি..
ইন্দু রাইয়ের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরায় রাই আর কিছু বললোনা। রাই বুঝতে পেরেছে ইন্দু তার শিক্ষার কথা তার যোগ্যতার কথা কাউকে জানাতে চায়না।

ইন্দু পানির গ্লাস টা সেন্টার টেবিলে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

রাই ও রুম থেকে বেরিয়ে দাদুর রুমে চলে যায়। কারণ দাদু ই তখন রাইকে সৃজার পিছে পিছে রিয়নের রুমে পাঠিয়েছিল।
রাই দাদুকে সবটা বলে।দাদু সব কিছু শুনে চুপচাপ বসে আছে।

ইন্দু ছাদে গিয়ে একপাশে বসে আছে। রাই ইন্দুর পাশে গিয়ে বসে ইন্দুকে জিজ্ঞেস করলো কেন বলতে দিলেনা ভাবি? তুমি অশিক্ষিত নও। কেন বলতে দিলেনা তুমিও ওদের থেকে কোন অংশে কম নয়? ওদের ও তো এটা জানা প্রয়োজন যে, ওরা যেটা ভাবছে তুমি সেটা নয়। তুমি ওদের ভাবনার থেকে ও হাজার হাজার গুণ উপরে।

রাইয়ের কথা শুনে ইন্দু বলে,
জানো রাই আমি না কখনো অন্যের ক্লাসে নিজেকে দাঁড় করিয়ে নিজের পরিচয় টা দিতে চাইনি। আমি চাই আমি যেমন তেমন জেনেই আমায় কেউ ভালোবাসুক। আমি চাই এই গাঁইয়া মেয়েটাকেই সবাই আপন করে নিক। আমি চাই এই আমিটাকেই কেউ ভালোবাসুক, ভার্সিটি টপার আমিটাকে নয়।
ঠোঁটের কোনে একটু হাসি টেনে রাইকে বলে আমায় একটু একা থাকতে দেবে রাই?
রাই কিছু না বলে চুপচাপ নিচে চলে যায়।

রাই চলে যেতেই ইন্দুর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরে নোনা জল। ইন্দুর মনের যতো অভিযোগ সব আজ নোনা জল হয়ে গড়িয়ে পরছে। ইন্দু জানে রিয়ন তার নয় এক বছরের জন্য শুধু রিয়ন তার হওয়ার অভিনয় করছে মাত্র, এর বেশি কিছু নয়। তবুও এই কয়েকটা দিনে রিয়নকে নিজের করে পাওয়ার লোভটা জেঁকে বসেছিল ইন্দুর মনের মধ্যে।

চলবে….

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব০৯

এই কয়েকটা দিনে রিয়নকে নিজের করে পাওয়ার লোভটা জেঁকে বসেছিল ইন্দুর মনের মধ্যে।
বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করার পর নিজেকে অনেকটা হালকা মনে হয় ইন্দুর। চোখের জল মুছে বসে আছে। ভাবছে কেন শুধু শুধু কান্না করছে, এমনটা তো হওয়ার ই ছিল।

এদিকে ইন্দু রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রিয়ন সৃজাকে বললো, এটা তুমি কি করলে সৃজা। ওকে এভাবে না বললেও পারতে। ও নিজের জায়গা ছেড়ে দিতে চেয়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য, আর তুমি কিনা ওকেই এতো কথা শুনিয়ে দিলে? ওই গাঁইয়া মেয়েটার জন্য তোমার ভালোবাসা তোমার সামনে দাঁড়িয়ে। তার জন্য মিনিমাম রেসপেক্ট তোমার থাকার কথা। তা না করে তুমি ওকে এতোটা অপমান করলে? এটা আমি তোমার থেকে আশা করিনি কখনো।

সৃজাঃ তুমি তো জানো বেবি, তোমার সাথে আমি কাউকে সহ্য করতে পারিনা। তাই রেগে গিয়ে আমি ওসব বলে ফেলেছি তুমি আমার উপর রাগ করোনা প্লিজ!

রিয়নঃ আমার রাগ করা না করায় কি এসে যায়। তুমি তো আমায় কিছু বলোনি বলেছো বিন্দুকে।

রিয়নের মুখে বিন্দু নাম শুনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে বিন্দু মানে? রাইমা যে বললো ওর নাম ইন্দু?

রিয়নঃ হুম ওকে সবাই ইন্দু বলে ডাকে কিন্তু আমি ওকে বিন্দু বলেই ডাকি। ও আমার লাইফে বিন্দুই।

সৃজা একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে ঠিকি বলেছো বেবি। ওর অস্তিত্ব তোমার লাইফে বিন্দুর মতোই যেন হয়। যার অবস্থান অতি ক্ষুদ্র আর নগন্য।

রিয়নঃ তুমি এভাবে হুটহাট আমার বাসায় চলে আসবেনা। আর আমায় ফোন ও করবেনা বেশি। এভাবে আমার বাসায় চলে এলে পাপা বিষয়টা ভালো চোখে দেখবেনা, সেটা আমাদের জন্য আরও খরাপ হবে।

সৃজাঃ ওকে বেবি তবে আমি তো তোমায় না দেখে থাকতে পারবোনা তাই প্রমিস করো মাঝে মাঝে তুমি আমার সাথে বাইরে মিট করবে।

রিয়নঃ ওকে তাই হবে, আমি নিজে গিয়ে তোমার সাথে মিট করবো তবে তোমাকেও কথা দিতে হবে আমাকে আগে থেকেই না জানিয়ে আমার বাসায় আসা আমার সাথে মিট করার জন্য বায়না করা চলবেনা।

সৃজা কিছু সময় চুপ থেকে বলে ওকে বেবি। তোমার কথাই হবে। কিন্তু তুমি আমার ফোন রিসিভ না করলে আমার সাথে মিট না করলে আমি সোজা চলে আসবো এ বাসায়।

রিয়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই সৃজা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রাতে রিয়ন বসে আছে রুমে। ইন্দু খাবার এনে রিয়নকে খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দেয়। অবশ্য খাবারটা রিয়ন এখন নিজে নিজেই খায়। শুধু সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করাটা রিয়নের জন্য কষ্টকর তাই ইন্দু তার খাবারটা রুমেই এনে দেয়। রিয়ন অনেকক্ষণ ধরে ইন্দুকে কিছু বলার চেষ্টা করছে বাট ইন্দু সে সময়টা পর্যন্ত দিচ্ছেনা। এটা ওটাতে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে।
ইন্দু রিয়নের সব কিছু ঠিকঠাক করে দিয়ে বলে আপনি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরুন। আমি সবাইকে খাবার দিবো নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।

ইন্দু রুম থেকে বের হবে তখন রিয়ন বলে, বিন্দু!
রিয়নের মুখে বিন্দু শুনে দাঁড়িয়ে যায় ইন্দু। তারপর রিয়নের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে কিছু বলবেন?

রিয়নঃ Sorry,
ইন্দুঃ কেন বলুনতো!
রিয়নঃ একচুয়েলি সৃজা আপনাকে এভাবে বলবে সেটা ভাবতে পারিনি। আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না ওর কথায়।

ইন্দুঃ মুখে হাসি টেনে বলে না, না, কি মনে করবো।আমি কিছু মনে করিনি। আর সৃজা ম্যাডাম যা বলেছেন ঠিকি তো বলেছেন। আমি যেমন উনি ঠিক তেমনটাই বলেছেন। এতে কিছু মনে করার কি আছে।
আর আপনাকে কিছু বলার আছে আমার।

রিয়নঃ হ্যা হ্যা বলুন না, কি বলবেন?

ইন্দুঃ আপনি সৃজা ম্যাডামের সাথে যখন খুশি দেখা করতে পারবেন, যখন খুশি কথা বলতে পারবেন, এমন কি এ বাসাতেও নিয়ে আসতে পারবেন কোন সমস্যা নেই আমার। আমাদের মাঝে যে চুক্তিটা ছিলো সেটা আর মানতে হবেনা আপনাকে। আর হ্যা আমি আপনাকে মুক্ত করে দিবো।আমায় একটু সময় দেন। বাবাইকে ম্যানেজ করতে পারলেই আপনাকে মুক্ত করে দিবো।

মুক্তি পাওয়ার কথা শুনে রিয়নের খুশি হওয়ার কথা, আনন্দ পাওয়ার কথা। কারণ এই বিয়েটাকে তো রিয়ন মানতেই পারেনি। কিন্তু এই মুহুর্তে হলো তার উল্টোটা। আনন্দ পাওয়ার বদলে তার বুকে একটা কষ্ট অনুভব করলো রিয়ন। কিছু একটা হারানোর কষ্ট।

রিয়নকে কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই কারও সাথে ধাক্কা লাগে ইন্দুর। চোখে টলমল জল নিয়ে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাই দাঁড়িয়ে আছে। ইন্দু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ত্ তু তুমি এখানে? ইন্দুর কথার জবাব না দিয়ে রাই ইন্দুকে টানতে টানতে রাইয়ের রুমে নিয়ে যায়। রাই ইন্দুকে বলে মিষ্টি ভাবি তুমি কি বলছো এসব! তুমি এভাবে হার মেনে নেবে? আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে তুমি? কষ্ট হবেনা তোমার? আর ভাইয়া! ভাইয়াকে ছেড়ে থাকতে পারবে? কষ্ট হবেনা! তুমি মুখে না বললেও আমরা বুঝি তুমি ভাইয়াকে কতোটা ভালোবাসো।

রাইয়ের মুখে এসব কথা শুনে ইন্দু আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলোনা ইন্দুকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলো। অনেকক্ষণ কান্না করে থেমেছে ইন্দু।
রাই চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে পাশে বসিয়ে বলে যাও ফ্রেশ হয়ে এসো নিচে সবাই ওয়েট করছে। ডিনার শেষে এ ব্যাপারে কথা বলবো। এখন একদম কান্নাকাটি নয়।

ইন্দু ফ্রেশ হয়ে রাইয়ের সাথে নিচে যায়। খাবার রেডি করে টেবিলে সাজানো শেষ হতেই ইন্দুর ফোন বেজে ওঠে।
ইন্দু ফোনে তাকাতেই দেখে তার মা ফোন করেছে। ইন্দু ফোন রিসিভ করতেই হুহু করে কেঁদে ওঠে ইন্দুর মা।

ইন্দুঃ কি হলো মা এভাবে কাঁদছো কেনো।আর এতো রাতও জেগে আছো? ঘুমাওনি? বাবার শরীর ঠিক আছে তো? বাড়ির সবাই কেমন আছে?

ইন্দুর মাঃ সবাই ভালো আছে। তুই কবে আসবি মা? কতোটা দিন তোকে দেখিনা।আয়না রে মা একবার! তোর বাবা তো রাতে ঘুমের ঘোরেও তোর নাম ধরে ডেকে ওঠে। কেঁদে রাত পার করে।
ইন্দু এই কথাগুলো শুনে অঝোরে কাঁদতে থাকে। ফোনের স্পিকার অন থাকায় সবাই মা মেয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। কারণ মায়ের ফোন পেয়ে ইন্দু আগে কখনো এভাবে কান্না করেনি।আজকে এতো কান্নার কারণটা আর কেউ না বুঝলেও রাই আর দাদু বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।

দাদু ইন্দুর ফোনটা নিয়ে ইন্দুর মায়ের সাথে কথা বলে, ইন্দুকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো তুইকি বাড়ি যেতে চাস? ইন্দু চোখের পানি মুছে ঘাড় নেড়ে জবাব দিলো যার মানে হ্যা।

দাদু ইন্দুকে বললো ঠিক আছে আগামী পরশু তুই বাড়ি যাবি। তবে হ্যা, এই কথাটা আগেই যেন বড় দাদুভাই না জানে। বড় দাদুভাই জানবে যাওয়ার সময়। দাদুর কথায় ইন্দু খুব খুশি হয়। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে যাবে তখন দাদু বলে ইন্দু! তুই খাওয়া শেষ করে আমার ঘরে একবার আয়তো দাদুভাই। আর রাই, রুপক দাদুভাই তোমরাও এসো তোমরা ছাড়া তো আবার আমার আড্ডাটা জমেনা।

দাদু রুমে চলে গেলে আশফাক খান ইন্দুর মাথায় হাত দিয়ে বলে তুই আমার ঘরের লক্ষী। তুই আমার ঘরে এসে আমার ঘরের চিত্রটাই পাল্টে দিয়েছিস। সবাই কতো হাসিখুশি থাকে। এসব কিছু তোর জন্য সম্ভব হয়েছে। তুই না থাকলে বাসাটা পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগবে রে। বেশিদিন থাকিসনা, চলে আসিস তারাতারি।

ইন্দু আশফাক খানের হাত ধরে বলে বাবাই এটার জন্য আমায় তো কোন গিফট দিলেনা তুমি! আমি কিছু চাইলে আমায় দেবে?

আশফাক খানঃ চেয়েই দেখনা একবার!
ইন্দুঃ ঠিক আছে বাবাই সময় হলে চেয়ে নিবো। তবে তোমায় কথা দিতে হবে আমায় কিন্তু খালি হাতে ফেরানো চলবেনা।
আশফাক খানঃ এই আশফাক খান তার কথার নড়চড় করেনা।

আশফাক খান রুমে চলে গেলে, রিয়নের মম আর ইন্দু খাবার খেয়ে নেয়। ইন্দু রুমে না গিয়ে দাদুর রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে সবাই মিলে দাদুর বেডে গোল হয়ে বসে গল্প করছে।
ইন্দুকে দেখে সবাই নড়েচড়ে বসে ইন্দুকে জায়গা করে দেয় বসার জন্য। অনেক গল্প গুজব করছে সবাই মিলে। অনেক হাসি ঠাট্টায় মেতে আছে সবাই। কারণ সবাই জানে আজ ইন্দুর ভিষণ মন খারাপ।

রাত একটা বাজতে চললো ইন্দু এখনো রুমে ফেরেনি। রিয়ন বেডে শুয়ে এক দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। স্ক্রিনে ভেসে আছে ইন্দুর হাসিমুখ। রিয়ন নিজেও জানে না কেন ইন্দুর হাসিমুখটা দেখলে তার এতোটা ভালো লাগে। ফোনের দিকে তাকিয়ে টাইমটা দেখে নিয়ে অবাক হয়ে যায় রিয়ন। একটা বাজবে কিন্তু ইন্দু এখনো রুমে আসেনি? কোথায় আছে মেয়েটা? নাকি রাগটা খুব বেশিই করেছে, যার জন্য এতো রাত হয়ে গিয়েছে তবুও রুমে আসেনি মেয়েটা!

এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। রাইয়ের রুমে উঁকি দিয়ে কাউকে না পেয়ে একটু এগিয়ে যেতেই, দাদুর রুম থেকে কথার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যায় রিয়ন। দাদুর রুমের সামনে দাঁড়াতেই রিয়নের চোখ কপালে উঠে যায়।

বিড়বিড় করে বলতে থাকে এ মেয়ের কি কোন কাণ্ডজ্ঞান হবেনা! অসুস্থ বরকে রুমে ফেলে রেখে এখানে আড্ডা দিচ্ছে! কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে দাদুর রুমে গিয়ে বলে কি হলো তোমাদের ঘুম নেই? এতো রাত অবধি জেগে থাকলে শরীর খারাপ করবে। যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।
আর দাদু তুমিও ওদের সাথে এভাবে জেগে আছো! তোমার তো ডক্টর রাত জাগতে বারণ করেছে ভুলে গেছো?

আর এইযে আপনি! নিজে তো ঘুমাবেন না আবার অন্যের ঘুম ও নষ্ট করছেন। চলুন আমার সাথে, বলে ইন্দুকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায়।
রিয়নের এমন কান্ড দেখে সবাই হেসে ওঠে।

ইন্দুকে রুমে নিয়ে গিয়ে ঘড়ির দিকে ইশারা করে বলে কটা বাজে এখন? এতো রাত ও অন্য রুমে কেন?

ইন্দুঃ তাতে কি আমি কোথায় থাকলাম বা না থাকলাম তাতে আপনার কি?

চলবে……

হ্যাপি রিডিং 🥰