সম্পর্কের অধিকার পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
432

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৩

রিয়নঃ তিশা? ছেলেটি কে?
তিশাঃ এটা পাশের বাড়ির রহিম চাচার ছেলে।
রিয়নঃ তিশা! তুমি খুব ভালো করে জানো আমি এটা জানতে চাইনি। তুমি বুঝতে পেরেছো তো আমি কি বলতে চাইছি?

তিশাঃ ঘাড় একপাশে কাত করে হ্যা জবাব দিলো। তারপরে বললো আ আসলে ভা ভাইয়া, হ হয়েছে কি! আসলে!

রিয়নঃ বুঝতে পেরেছে তিশা একটু দ্বিধার মধ্যে রয়েছে। তাই তিশাকে আশ্বস্ত করে রিয়ন টানা টানা করে বলে তি.. শা..
নো প্রবলেম, আমি কিছু মনে করবোনা তুমি বলো।

তিশা তখন বলে ওর নাম সোহাগ। মাস্টার্সে পড়ে। আপুকে পছন্দ করতো। কিন্তু ওর বাবার আর্থিক অবস্থা আমাদের থেকে অনেক ভালো ছিলো বলে ওর বাবা এসে আমার বাবাকে অনেক অপমান করে। সোহাগ ভাইয়া মাঝে মাঝে এসে আপুর খোঁজ নেয়। কোথায় আছে কেমন আছে? কি করছে? বাড়ি আসবে কবে?

রিয়নঃ আচ্ছা তিশা? তোমার আপু কি সোহাগকে পছন্দ করতো?

তিশাঃ সেটা তো জানি না ভাইয়া। আমি সবার থেকে ছোট। তাই কেউ আমার সামনে সেভাবে কিছু বলতো না। তবে সোহাগ ভাইয়া এসে আপুর খোঁজ নিতো আমার কাছ থেকে। আমি সোহাগ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাই বলেছিলো, সে নাকি আপুকে বিয়ে করতে চায়।

তিশা কথাগুলো বলে রিয়নের দিকে তাকিয়ে দেখে রিয়ন চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। তিশা কিছু না বুঝে বললো ভাইয়া আপনার ঘুম পাচ্ছে আপনি ঘুমান। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে গল্প করবো। তিশা রুম থেকে বেরিয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে যায়।

রিয়নঃ তিশার মুখে সোহাগের কথা শুনে রিয়নের বুকটা কেঁপে ওঠে। হয়তো খুব প্রিয় কিছু হারানোর ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠেছে তার। মনের একটা কোনে দুশ্চিন্তা রয়েই গেল তার বিন্দুকে নিয়ে। শুধু কি সোহাগ ছেলেটাই বিন্দুকে ভালোবাসে? নাকি বিন্দুও….
না না এসব আমি কিছুতেই ভাবতে পারছিনা। দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বেডের উপর বসে পরে রিয়ন। বিন্দুকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে?

ফোন বেজে উঠতেই, ফোনের শব্দে রিয়ন মাথা তুলে ফোনের দিকে তাকায়। দেখে সৃজা ফোন করেছে। সৃজার নামটা ফোনের স্ক্রিনে দেখে মুখে একরাশ বিরক্তি ভাব নিয়ে ফোন রিসিভ না করে কেটে দেয়।
সৃজা আবারও ফোন দেয়। রিয়ন জানে যতোবার ফোন ধরবে না সৃজা ফোন করেই যাবে। তাই অনিচ্ছা সত্বেও সৃজার ফোন রিসিভ করে রিয়ন। ফোন রিসিভ করতেই প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বসে সৃজা।কেন সে গ্রামে এসেছে, কদিন থাকবে, কবে ফিরবে, সৃজাকে কেন জানিয়ে আসেনি?

এমনিতেই মেজাজ ভালো নেই তার উপর সৃজার এমন উদভ্রান্তের মতো কথা শুনে রিয়নের বিরক্তি ভাবটা দ্বিগুন হয়ে যায়।

রিয়নঃ আমি গ্রামে এসেছি তোমায় কে বললো?
সৃজাঃ সেটা মেইন ফ্যাক্ট নয় বেবি! তোমায় যে প্রশ্ন করেছি তার আনসার দাও আমাকে। আনসার মি বেবি!

রিয়ন কিছু বলছেনা দেখে সৃজা বলে ওহ্! বুঝতে পেরেছে ওই গাঁইয়া মেয়েটা তোমায় জোর করে নিয়ে গিয়েছে তাইতো? নো প্রবলেম বেবি! আমিও আসছি। তুমি শুধু লোকেশন টা বলো।

রিয়নঃ বুঝতে পেরেছে এই সৃজাকে বিশ্বাস নেই চলে আসতে পারে। তাই সৃজাকে বলে, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো! আমি তো আমাদের বিজনেসের জন্য এখানে এসেছি। এই ব্রাঞ্চের কিছু কাজ করতে কয়েকদিন সময় লাগবে তারপর ফিরবো। ফিরে এসে কথা বলবো। তোমাকে তো বলেছিলাম আমি বিজি থাকবো আমায় ফোন না করতে?

সৃজাঃ একচুয়েলি আমি শুনলাম তুমি গ্রামে গিয়েছো, তাও কিনা আবার ওই গাঁইয়া মেয়েটার সাথে, তাই আমার মাথাটা ঠিক ছিলোনা। ওকে বেবি টেক কেয়ার। এখন রাখছি বাই।

রিয়ন ফোনটা বালিশের পাশে রেখে, বিছানায় গা এলিয়ে দিদিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছে এবার ফিরে গিয়ে সৃজাকে সবটা জানানো প্রয়োজন। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায়না।
এদিকে ইন্দু রান্নার কাজে তার মা কে সাহায্য করা শেষ হলে রিয়ার সাথে বসে গল্প করছে।

রিয়াঃ স্যাররা সবাই তোমার খোঁজ করে প্রায়ই। জিজ্ঞেস করে তুমি কেমন আছো? তোমাকে ভার্সিটি যেতে বলেছে স্যার। নোটস নিয়ে আসতে হবে। অবশ্য আমি চেয়েছিলাম দেয়নি। বলেছে তুমি নাকি আসবে? তখন তোমায় দিয়ে দেবে।

ইন্দুঃ ঠিক আছে সে না হয় আমি গিয়েই নিয়ে আসবো।
এবার চল ভেতরে চল। রিয়াকে নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো রিয়ন ঘুমোচ্ছে । তাই ইন্দু কোন শব্দ না করে রুম থেকে বেরিয়ে রিয়াকে নিয়ে তিশার রুমে চলে যায়। তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে ফ্রেশ হতে চলে যায় ইন্দু।

সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে রিয়ন ঘুম থেকে উঠে বসে আছে। ইন্দু রিয়নের জন্য ড্রেস বের করে বেডে রেখে দেয়। রিয়ন সাওয়ার নিয়ে এসে দেখে ইন্দু রুমে নেই।
একটু পরে তিশা এসে রিয়নকে খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যায়।

একসাথে বসে সবাই খাবার খেয়ে নেয়। রিয়া, তিশা, এশা তিশার রুমে গিয়ে বসে গল্প করছে। ইন্দু রিয়নকে নিয়ে গিয়ে রিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রিয়ন সবার সাথে বসে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আজ নতুন একজন এড হলো সেটা হলো রিয়া।

রিয়ন রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো তোমরা সবাই পড়াশোনা করছো বাট তোমাদের আপুকে পড়াশোনা করেনি কেন?
রিয়নের কথা শুনে সবাই রিয়নের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন সবাই এলিয়েন দেখছে। ইন্দু তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে,আমার বরাবরই পড়াশোনায় মন বসতোনা। তাই আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি।
রিয়া তখন ফিক করে হেসে বলে যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখিও তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।

রিয়ন রিয়ার কথা বুঝতে না পরে বলে। এটা কেন বললে?
রিয়াঃ ভাইয়া, অনেকসময় আমাদের চোখের দেখা, মুখের কথা ভুল হয়। তাই সেগুলো বিশ্বাস করতে নেই।
নিজের মন আর মগজকে কাজে লাগান। বাকিটা নিজেই জানতে পারবেন। রিয়ার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইন্দু বলে আজ বিকেলে তোরা কোথায় ঘুরতে যাবি বল?
সবাই মিলে প্ল্যান করলো বিকেলে সবাই মিলে ফুফুর বাড়ি বেড়াতে যাবে। তবে সেখানে গাড়ি নিয়ে যাবেনা হেঁটে হেঁটে যাবে সবাই মিলে। একটা মাঠ পেরুলেই বাড়ি। তবে রাস্তা দিয়ে গেলে অনেকটা পথ যেতে হয়। তাই রাস্তা দিয়ে না গিয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ, বিকেলে সবাই রওয়ানা হয়ে যায়। মাঠের মধ্যে দিয়ে সবাই হেঁটে চলেছে। ক্ষেতের আইল ধরে একে একে হাঁটছে সবাই। সবার সামনে এশা, তারপর রিয়া, তার পেছনে ইন্দু আর ইন্দুর পেছনে রিয়ন। তবে তিশা কারও সাতেও নেই পাঁচেও নেই, তাই সে রিয়নের পাশাপাশি হাঁটছে আর সেলফি তুলছে। সবাই সরিষা ক্ষেতের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। একটু পথ যেতেই রিয়ন ইন্দুর শাড়ির আঁচল চেপে ধরে। আঁচলে টান পরতে ইন্দু পেছনে ঘুরে তাকায়। ইন্দু রিয়নের দিকে তাকাতেই রিয়ন মিষ্টি করে হাসে। আর আমাদের সেলফি কুইন তিশা রাণী সেই সুন্দর মুহুর্তটাকে তার মুঠোফোনে ক্যামেরা বন্দী করে নেয়। যেটা রিয়ন, ইন্দু কেউ বুঝতেও পারেনা।

ইন্দু রিয়নকে জিজ্ঞেস করলো আঁচল ধরেছে কেন?
রিয়ন জবাব দিলো সরিষা ক্ষেতে পিক তুলবো সবাই মিলে।
অবশেষে সবার ইচ্ছেতে ইন্দু ও বাধ্য হলো ফটো তুলতে।সবাই মিলে অনেকটা সময় নিয়ে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পোজে ফটো তোলে। ইন্দু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে ওদের ফটোশুট। কিন্তু ইন্দুর আড়ালে কেউ একজন ইন্দুর পিক তুলে নিয়েছে নিজের কাছে রাখতে।

সবাই মিলে আবার হাঁটা ধরে ফুফুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। ফুফু তো সবাইকে দেখে মহা খুশি তবে না বলে যাওয়াতে একটু লজ্জাতেও পরেছে ফুফু। কারণ গ্রামের বাড়ি সেভাবে ঘরে সবসময় এমন কিছু থাকেনা যেটা দিয়ে জামাইকে আপ্যায়ণ করা যাবে। তবে ইন্দু থাকতে তো কাউকে অপমানিত হতে দেবেনা, গাছ থেকে টাটকা পেয়ারা, বরই, মুড়ি মাখা, চানাচুর বিস্কুট আর ফ্রিজে রাখা পায়েস দিয়ে নাস্তা সাজিয়ে দেয় রিয়নের সামনে। রুমে বসে নাস্তা করছে হঠাৎ ফুফুর চারচালা টিনের ঘরে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় ইন্দু। রিয়নও ইন্দুর পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।

ছোটবেলা থেকে এমন সুন্দর মনোরম দৃশ্য রিয়ন দেখেনি। হয়তো গ্রামে না এলে এমন দৃশ্য অদেখা ই থেকে যেতো। কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি থেমে গেলে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। অবশ্য ফুফু বার বার করে থেকে যেতে বলেছিলো কিন্তু কেউ থাকেনি।
প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবাই তারাহুরো করে মেঠো পথ ধরে হেঁটে চলেছে। বৃষ্টিতে রাস্তা খুব পিচ্ছিল হয়ে আছে।কোথাও আবার পানি জমে কাদা হয়ে আছে। তিশা সবার আগে আগে হেঁটে চলেছে হাতে বরইয়ের ব্যাগ নিয়ে তার পেছনে এশা পেয়ারার ব্যাগ নিয়ে। রিয়ার পিছে পিছে ইন্দু হাঁটছে তার পেছনে রিয়ন। রিয়নের এমন কর্দমাক্ত পথে হাঁটার অভ্যাস নেই খুব কষ্টে ধিরে ধিরে পা ফেলে হাঁটছে সে। এতো সাবধানতায়ও কিছুটা পথ যেতেই ধপাস!যাহ! শেষ রক্ষা হলোনা।
হুম ঠিকই ধরেছেন, রিয়ন ধপাস খেয়েছে। তবে রিয়ন একা নয় সাথে ইন্দুও আছে। রিয়ন যেখানে যাবে ইন্দুকে সাথে করে নিয়েই যাবে। তাহলে আছাড় খাওয়ার ক্ষেত্রে কেন নয়?

চলবে…..

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৪

রিয়ন যেখানে যাবে ইন্দুকে সাথে করে নিয়েই যাবে। তাহলে আছাড় খাওয়ার ক্ষেত্রে কেন নয়।
এক পায়ের পথ, একে তো হেলে দুলে ব্যালেন্স ঠিক রেখে হাঁটতে হচ্ছে রিয়নকে, তারউপর বৃষ্টি এসে রাস্তা পিচ্ছিল করে দিয়েছে। পা স্লিপ করে পরে যেতেই ইন্দুকে ধরে রিয়ন।কিন্তু আচমকা হাতে টান পরায় নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে ইন্দু সোজা গিয়ে রিয়নের বুকে লুটোপুটি খেলো। এশা, তিশা, রিয়া, ইন্দু আর রিয়নকে টেনে তোলা তো দুর,ওদের পরে যাওয়া দেখে হাসতে হাসতে শেষ। রিয়ন তো কাদার মধ্যেই শুয়েই ইন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে।

ইন্দু কপাল কুচকে রিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে রেস্ট নেওয়ার জন্য আর জায়গা পেলেন না! শেষে কিনা এটাই বেছে নিতে হলো?
একটু পরে ইন্দু আবার বলে, কি হলো, উঠবেন! নাকি এভাবেই শুয়ে থাকবেন। ভুলে যাবেন না এটা আপনার বেডরুম নয়।

রিয়নঃ একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে তারমানে এটা বেডরুম হলে এভাবেই আমার বুকে থাকতে তুমি?

রিয়নের কথা শুনে আর এক মুহূর্ত ও দেরি করলোনা ইন্দু। এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।
তারপর হাত বাড়িয়ে দেয় রিয়নের দিকে। রিয়নও আর কিছু না বলে ইন্দুর হাত ধরে উঠে পরে।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয় দুজনেই। তিশা তো রিয়ন আর ইন্দুকে দেখলেই হেঁসে উঠছে।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই যে যার রুমে চলে যায়। কারণ আজ বাইরে ঘুরে সবাই ক্লান্ত। রিয়ার বাসায় ফোন কর ইন্দু জানিয়ে দিয়েছে, রিয়া এ বাসায় থাকবে দু একদিন। রিয়ার মা ও রাজি হয়েছে। অবশ্য রিয়া যে এ বাসায় থাকবে সেটা সে বাসায় বলেই এসেছে।

ইন্দু ফ্লোরে বিছানা করছে দেখে রিয়ন ইন্দুর পাশে এক হাঁটু মুড়ে বসে জিজ্ঞেস করলো, কি করছো বিন্দু?
ইন্দু একবার রিয়নের দিকে তাকিয়ে আবার বিছানা করতে করতে বলে, দেখতেই পারছেন কি করছি।

রিয়নঃ হুম, সে তো দেখতেই পাচ্ছি, বাট আমি চাইনা তুমি এই ঠান্ডায় ফ্লোরে ঘুমাও। আর ফ্লোরে কেন ঘুমাচ্ছো তুমি, সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

ইন্দুঃ আমি চাইনা গতরাতের পুনরাবৃত্তি ঘটুক। তাই আপনি বিছানায় শুয়ে পরুন।

রিয়নঃ তুমি তো বলেছিলে আমার বাসায় আমার অধিকার সবকিছুতে সেটা আমি মেনে নিয়েছিলাম তোমার যুক্তি। আজ তুমি যদি আমার সাথে বেড শেয়ার না করো তাহলে ফ্লোরে তুমি নয় আমার ঘুমানোর কথা। এখন তুমি ডিসাইড করো কি করবে।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু অবাক চোখে রিয়নের দিকে তাকায়। রিয়ন বাঁকা একটা হাসি দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।

ইন্দু বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যদি ইন্দু আজ ফ্লোরে ঘুমাতে চায় তো রিয়ন যা বলেছে সেটাই করবে। তাই ইন্দু বিছানা গুটিয়ে রেখে বেডের এক পাশে বসে পরে।
ফোনের দিকে নজর পরতেই ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখতেই অবাক হয়ে যায় ইন্দু। আটাশ মিসড কল। বাবাই ফোন করেছে, দাদু, রুপক,রাই সবাই ফোন করেছে!
ইন্দু কপালে হাত রেখে বলছে ইয়া আল্লাহ! আমি তো এই মোবাইল নামক যন্ত্রটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এতেবার ফেন করেছে? না জানি, কি না কি ভাবছে! আমি ফোন রিসিভ করিনি বলে।
ইন্দু ঝটপট করে বাবাইকে একটা ফোন করে। রিং হওয়ার সাথে সাথেই ফেন তুললো বাবাই।

বাবাইঃ কি রে মা কেমন আছিস? আমার পাগল ছেলেটা কেমন আছে?

ইন্দুঃ সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে বাবাই। তোমরা সবাই কেমন আছো? দাদু, রাই, রুপক, আম্মা সবাই কোথায় আছে? তোমরা খেয়েছো?

বাবাইঃ নারে মা এখনো খাওয়া হয়নি একটু পরে খেতে বসবো। আর সবাই এখানেই আছে। আমরা সবাই একসাথে বসে তোদের কথাই বলছিলাম। তোদের দুজনকে আমরা সবাই খুব মিস করছি রে মা। যতো দ্রুত সম্ভব চলে আয়। ফোন স্পিকারে আছে কথা বল তোর দাদুর সাথে।

ইন্দুঃ হুম দাদু বলো কেমন আছো?
দাদুঃ আমাকে ভুলে গেছিস? কোন খোঁজ নিসনা যে!
ইন্দুঃ আর বলোনা দাদু, তোমার এক নাতিতেই আমি অস্থির। কি করেছে জানো? …….. …
তারপর সারাদিনের কাহিনী বলতে শুরু করে। সারাদিন কি করেছে না করেছে সবকিছু…

এদিকে রিয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইন্দু বেডে আধশোয়া হয়ে বসে গল্প করছে। রিয়ন ফ্লোরে তাকিয়ে দেখলো ইন্দু বিছানা গুটিয়ে রেখেছে। বেডে বসে গল্প করছে দেখে মুখ টিপে একটু হাসে তারপর বেডের মাঝে একটা কোলবালিশ রেখে রিয়নও শুয়ে পরে।

ইন্দু ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। ইন্দুর কথা শুনে ফোনের ওপাশের সবাই হাসতে হাসতে শেষ। রিয়ন কিনা আছাড় খেয়েছে? এটা বলেই দাদুও হাসতে শুরু করে।

ইন্দু হেঁসে হেঁসে ফোনে কথা বলছে, রিয়ন মুগ্ধ হয়ে একমনে তাকিয়ে আছে। ভাবছে এই মেয়েটা এমন কেন? হাসলে কতোটা সুন্দর আর নিষ্পাপ লাগে অথচ সবসময় কড়া মেজাজের টিচারের মতো বিহেভ করে। আজব মেয়ে একটা।
এসব ভাবনার মাঝেই ইন্দুর কথা কানে আসে রিয়নের।
রিয়ন তাকিয়ে দেখে ইন্দু কথা বলা শেষ করে রিয়নের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে।

কি ভাবছেন?

রিয়নঃ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
জানো বিন্দু! আমি না সৃজার সাথে অনেক জায়গায় গিয়েছি, অনেকটা সময় পার করেছি একসাথে। একসাথে রেস্টুরেন্টে খেয়েছি, পার্কে বসে গল্প করেছি, হাত ধরেও হেঁটেছি। কিন্তু এতোটা আনন্দ পাইনি কখনো। এতোটা ভালো লাগেনি কখনো যতোটা আজ ভালো লেগেছে। যখন তুমি আমার হাত ধরে হাঁটছিলে তখন মনে হচ্ছিল এই হাতটা ধরে সারাটাজীবন পার করে দিতে পারবো। তোমার হাত ধরে যে অনুভূতিটা হয়েছে সেটা আগে হয়নি কখনো।

তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিন্দু। আমার লাইফটাকে এভাবে উপভোগ করার সুজোগ করে দেওয়ার জন্য। তুমি আমার লাইফে না আসলে হয়তো আমি এটা বুঝতেই পারতাম না।
জানো বিন্দু! বলেই রিয়ন ইন্দুর দিকে তাকিয়ে দেখে ইন্দু ঘুমিয়ে পরেছে।

রিয়নঃ মুখটা গম্ভীর করে মনে মনে বলতে থাকে, আমি জানি বিন্দু তুমি হয়তো আমায় ভালোবাসোনা, হয়তো তোমার লাইফে অন্য কেউ আছে। এই জন্য তো তুমি বিয়েতে রাজি ছিলেনা। কিন্তু কি করবো বলো, আমি তো তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবোনা। আর তুমি অন্য কারও হবে সেটাও আমি সহ্য করতে পারবোনা।

এদিকে ইন্দু চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবছে রিয়ন কেন এসব বলছে। আর তো মাত্র কয়েকটা মাস তারপর ই তো ও সৃজাকে পাবে। আমি চাইনা এসব শুনতে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এসব শুনতে পারবোনা। অবশ্য আমি এর বেশি মায়ায় জড়াতে চাইনা। তার থেকে ভালো আপনি এটাই জানুন যে আমি আপনার কোন কথাই শুনিনি। ইন্দু চোখ বন্ধ করে আছে চোখের কোণ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে যেটা রিয়ন দেখতে পেলনা।

সকালের নাস্তা শেষ করে সবাই বসে আছে। তখন রিয়ন বলে চলো আজ আমি তোমাদের সবাইকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।
সবাই খুব খুশিতে চিল্লিয়ে ওঠে শুধু ইন্দু ছাড়া।
সবাই রেডি হয়ে নেয় কিন্তু যাবেটা কোথায় সেটা কেউ জানেনা। ইন্দু মনে মনে ভাবছে আজ যদি ভার্সিটি যেতে পারতো তাহলে ভালো হতো। ইন্দুর বেড়াতে যাওয়ার মন মানসিকতা নেই। তার ভাবনা এখন পড়াশোনা নিয়ে। কতোটা দিন ক্লাস করা হয়না। তবে বিয়ের পরে ওই বাসায় পড়াশোনা করতে পারলেও রিয়নের এক্সিডেন্টের পর থেকে সেভাবে পড়াশোনাটাও করতে পারছে না ইন্দু।
ইন্দু চুপচাপ বসে আছে দেখে রিয়ন জিজ্ঞেস করলো তোমার কি হলো রেডি হচ্ছোনা কেন?

ইন্দুঃ কোথায় যাচ্ছি সেটা তো বলুন! না বললে রেডি হবো কি করে!

রিয়নঃ তোমাদের শহর ঘুরে দেখবো আজ চলো রেডি হয়ে নাও।

ইন্দু কিছু একটা ভেবে খুব খুশি হয়ে যায়। তারপর দৌড়ে এশা, তিশা আর রিয়ার কাছে গিয়ে কিছু একটা প্ল্যান করে।
তারপর রেডি হয়ে সবাই বেরিয়ে পরে।

রিয়ন আগে থেকেই কোর্ট প্যান্ট পরে রেডি হয়ে গাড়িতে বসে আছে। সবাই গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু সেদিকে রিয়নের কোনো নজর নেই। রিয়ন তো ইন্দুকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে। কারণ যে মেয়েকে আজ অবধি শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু পড়তে দেখেনি রিয়ন। এমন কি এ বাসায় এসেও শুধু শাড়িই পড়েছে। সে কিনা আজ থ্রি পিচ পরে বের হয়েছে?

তবে ইন্দুকে আজ অন্যরকম লাগছে রিয়নের কাছে। অনেক স্মার্ট লাগছে ইন্দুকে।
রিয়ন মনে মনে ভাবছে এই মেয়েকে যখন যেভাবে দেখি সেভাবেই ভালো লাগে। তবে কি আমি আমার বিন্দুর প্রেমে পরেছি?
একটু হেঁসে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে। সামনের সিটে ইন্দু বসেছে আর পেছনে বসেছে এশা,তিশা আর রিয়া।
সবাইকে বেশ হাসি খুশি লাগছে আজ। তবে ইন্দুকে একটু বেশিই খুশি লাগছে।

একটা গেটের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করায় রিয়ন। গেটের দিকে তাকিয়ে তো রিয়ন হা হয়ে যায়।

চলবে…….

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৫

একটা গেটের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করায় রিয়ন। গেটের দিকে তাকিয়ে তো রিয়ন হা হয়ে যায়।
এটা তো ভার্সিটি। এখানে কেন নিয়ে এলো বিন্দু! গাড়ি সাইড করে রাখতেই সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।

রিয়ন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে, আমরা এখানে কেন এলাম?

ইন্দু কিছু বলবে তার আগেই রিয়া বললো একচুয়েলি ভাইয়া, আমি তো ছুটি নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ হঠাৎ একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস পরে গিয়েছে। যদি ক্লাসটা মিস করি তাহলে খুব বড় প্রবলেম হয়ে যাবে আমার। তাই আপনি যদি কিছু মনে না করেন…

রিয়নঃ না, না, ঠিক আছে তুমি ক্লাস করো নো প্রবলেম আমরা বরং ওয়েট করি তোমার জন্য।

রিয়াঃ ইশশ! কি ঝামেলায় ফেলে দিলাম বলুনতো ভাইয়া? আমার জন্য আপনাদের সবাইকে এখন কতোটা কষ্ট করতে হবে! আমি আপুকে বলেছিলাম আমাকে রেখে বেড়াতে যেতে কিন্তু আপু কিছুতেই রাজি হলোনা।

ইন্দুঃ তো মনে মনে খুব খুশি। আর অসংখ্য ধন্যবাদ দিচ্ছে রিয়াকে। এভাবে বিষয়টা ম্যানেজ করে নেবে সেটা ইন্দু ভাবতেই পারেনি।

রিয়নঃ ঠিকই তো, বিন্দু তো ঠিক কাজ ই করেছে। তোমার একটা ক্লাস আছে, নো প্রবলেম। ক্লাস করে এসো আমরা এদিকটায় বসি কোথাও গিয়ে।

তিশাঃ একটু ইনোসেন্ট মুখ করে বলে ভাইয়া এটা আপনি কি বলছেন? আমি কখনো ভার্সিটি দেখিনি। প্রথমবার এলাম আর আপনি বলছেন বসে থাকবেন? এটা কিন্তু ঠিক না।

রিয়নঃ ওকে ওকে চলো তাহলে আমরা ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখি। রিয়া ততক্ষণে ক্লাস করে আসুক।

ইন্দু এবার কি করবে বুঝতে পারছেনা। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
রিয়ন ইন্দুকে ডেকে বললো, কি হলো! দাঁড়িয়ে আছো কেন চলো।

ইন্দুঃ না মানে, হ্যা, ইয়ে মানে!
রিয়নঃ কি তখন থেকে না মানে ইয়ে মানে করে যাচ্ছো চলো।পড়াশোনা নাই জানতে পারো। অন্তত ক্যাম্পাসটাতো ঘুরে দেখতেই পারো নাকি?

ইন্দুঃ ডান হাতের একটা আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করছে আর ভাবছে, পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে যা হয় আর কি! আমার ই ভার্সিটিতে দাঁড়িয়ে আমাকেই ক্যাম্পাস চেনাবে?

রিয়নঃ কি হলো? কি ভাবছো বলোতো?
ইন্দুঃ কই কিছু ভাবছিনা তো? ঠিক আছে চ চলুন।

এশাঃ দাঁড়া আপু তুই কোথায় যাচ্ছিস? তোর না পায়ে ব্যাথা। এইতো গাড়িতে উঠতে উঠতে বলছিলি কাল অনেকটা পথ হেঁটে নাকি তোর পায়ে ব্যথা হয়েছে? তোকে আসতে হবেনা। তুই বরং রিয়া আপুর সাথে গিয়ে বসে থাক। তারপর রিয়া আপুর ক্লাস শেষ হলে তুইও আপুর সাথে এসে এখানে দাঁড়াস।

রিয়নঃ খুব চিন্তিত হয়ে, বিন্দু! তোমার পায়ে ব্যথা? কই আমাকে তো বলোনি? খুব বেশি ব্যাথা? বেশি হলে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই তুমি গাড়িতে বসে থাকো।

ইন্দুঃ আরে তেমন কিছু না! এই সামান্য একটু ব্যাথা। ঠিক হয়ে যাবে কোনো প্রবলেম নেই। আপনারা যান, ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখুন।
রিয়ন, এশা আর তিশা চলে গেলো ক্যাম্পাস দেখতে।

ইন্দু রিয়ার সাথে ক্লাসের দিকে হাঁটা দেয়। ইন্দু মনে মনে বলছে, আপনাকে লুকিয়ে চুরিয়ে এভাবে আমি ক্লাস করতে চাইনি। কিন্তু আমি নিরুপায়। আপনি অশিক্ষিত, গাঁয়ের আনস্মার্ট মেয়ে বলে অপমান করেছিলেন আমায়। আমি চাইনা আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে আপনি আমায় পছন্দ করেন। যদি কখনো সেই অশিক্ষিত মেয়েটাকে ভালোবাসতে পারেন, সেদিন ভালোবাসার অধিকার নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াবেন। সেদিন ভেবে দেখবো।

প্রায় এক ঘন্টা স্যারদের সাথে কথা বলে নোটস কালেক্ট করে। প্রবলেমগুলো সলভ করে ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে আসে ইন্দু আর রিয়া। ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে রিয়নকে ফোন করে গাড়ির কাছে আসতে বলে ইন্দু।

রিয়া আর ইন্দু হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে আসছে গেটের দিকে। ইন্দু রিয়াকে বলছে অসংখ্য ধন্যবাদ রে রিয়ু পাখি। তুই আজ আমায় হেল্প না করলে হয়তো নোটস কালেক্ট করাটা প্রবলেম হয়ে যেতো। প্রবলেমগুলো সলভ করাও কষ্টকর হতো। রিয়ন যেভাবে সবসময় সাথে সাথে থাকছে, তাতে মনে হয়না ভার্সিটিতে আসা সম্ভব হতো। তবে আগামীকাল ও আসতে পারলে ভালো হতো।
দেখি চেষ্টা করে ম্যানেজ করতে পারি কিনা।

রিয়াঃ তুমি ম্যানেজ করো। আর বাকিটা আমরা দেখে নিবো। বলেই দুজনে হাসতে হাসতে মেইন গেটের পাশে এসে দাঁড়ায়।

কেমন আছো ইন্দু? অবশ্য তুমি যে ভালো আছো সেটা তোমার দামি পোশাক, তোমার মনের আনন্দ, আর তোমার মুখের হাসিই প্রমাণ করে দিচ্ছে।

কথাটা শুনে ঘুরে তাকিয়ে চমকে ওঠে ইন্দু। শুধু চমকায় না কিছুটা অবাকও হয়ে যায়। এতোদিন পরে আজ আবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সোহাগ।
ইন্দু একটা মিষ্টি হাসি সোহাগকে উপহার দিয়ে বলে, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ খুব ভালো রেখেছে। আর শুধু আমি নয় আমার পুরো পরিবার ই ভালো আছে। অন্তত কেউ বাড়ি বয়ে এসে অপমান তো করেনা।

ইন্দুর মুখে কথাগুলো শুনে সোহাগ বলে, ভালো থাকলেই ভালো। কখনো যদি মনে হয় তাহলে আমার কাছে আসতে পারো। এটুকু কথা দিতে পারি ফেরাবোনা কখনো।

তেমন দিনটা যেন বিন্দুর জীবনে কখনো না আসে।

কথাটা শুনে সোহাগ পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে কোর্ট প্যান্ট পরে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সোহাগঃ আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না?
রিয়নঃ সোহাগের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে,
হাই, আমি রিয়ন আহনাফ রুপন। ওপস! নাম বললে তো চিনতে পারবেন না। আমি ইশিকা বিন্তী ইন্দুর হাসবেন্ড।

রিয়নে মুখে নিজের পুরো নাম শুনে ইন্দু একটু অবাক হয়েছে। যে ছেলে একটা নাম মনে রাখার আগ্রহ দেখায়না, সে কিনা পুরো নাম বলে দিলো! আবার হাসবেন্ড দাবি করছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো যে কিনা এই বিয়েটাই মানেনা সে কিনা হাসবেন্ড দাবি করছে আবার ভবিষ্যতে কেমন দিন আসবে কি আসবে না সেটাও ঠিক করছে? ব্যাপারটা অনেকটা হাস্যকর।

সোহাগঃ খুব তো বড় বড় কথ বলছেন, তা সারাজীবন ধরে রাখতে পারবেন তো নিজের কাছে? এটা টাকায় কেনার জিনিস নয়। ভালোবাসা দিয়ে বুঝলেন তো! ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হবে সারাজীবন। পারবেন তো ভালোবেসে আগলে রাখতে?
আপনারা শহরের ধনী মাবুষেরা তো শুধু টাকা পয়সা, ভোগ বিলাসিতা বোঝেন। আপনাদের কাছে তো ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।

রিয়নঃ এতোই যদি ভালোবাসা তাহলে রাখতে পারলেন না কেন? যে ভালোবাসা প্রিয়জনকে ধরে রাখতে পারেনা সেই ভালোবাসা নিয়ে আবার গর্ব করেন?
কি নিয়ে এতোটা অহংকার করছেন? সেই ভালোবাসা নিয়ে? যে ভালোবাসা আজ অন্যের সংসারে রাজত্ব করছে?

এতোক্ষণ ধরে ইন্দু চুপচাপ শুনলেও এখন আর চুপ থাকতে পারলোনা, তাই দুজনকেই থামিয়ে দিয়ে বললো কি শুরু করেছেন টা কি বলুনতো! ভার্সিটি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার মাঝে এতো লোকজন যাওয়া আসা করছে। আর আপনারা ঝগড়া করছেন?

ইন্দু আর কিছু না বলে রিয়নকে নিয়ে টানতে টানতে গাড়িতে ওঠে। একচুয়েলি ইন্দু একটু শঙ্কায় আছে। যদি রিয়ন কোনভাবে পড়াশোনার কথা জানতে চায়, তাহলে তো সব ঝামেলা পেকে যাবে।
ইন্দুর সাথে সাথে বাকিরা গাড়িতে উঠে বসে। রিয়ন গাড়ি নিয়ে চলে আসে সেখান থেকে। সোহাগ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।

রিয়নঃ এভাবে চলে এলে কেন?
ইন্দুঃ কিভাবে?
রিয়নঃ নাহ্! আমার কেন যেন মনে হলো তুমি সোহাগের কাছ থেকে পালিয়ে এলে। কিন্তু কেন? আমার মনে হচ্ছে আপনি আমার থেকে কিছু লুকোচ্ছেন। কি লুকোচ্ছেন বলুনতো?

ইন্দুঃ আ আমি ক্ কি লুকোতে যাবো? কিছু লুকোচ্ছিনা তো?
এশাঃ একচুয়েলি ভাইয়া হয়েছে কি! সোহাগ ভাইয়া লোকটা সুবিধার নয়। তাই আপু সবসময় ওর থেকে দুরে দুরে থাকে।

রিয়নঃ ওহ্! শুধু কি তাই?
ইন্দুঃ আস্তে করে রিয়নকে বলে আপনি কি আমায় সন্দেহ করছেন?

রিয়নঃ প্রশ্নই ওঠে না? এমন সাহস যেন আমার কখনো না হয় যে তোমায় সন্দেহ করবো।

ইন্দু রিয়নের কথাটা শুনে রিয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। যেটার জবাব রিয়নও হাসি দিয়েই দেয়।

রিয়ন একটা প্যাকেট ইন্দুর হাতে ধরিয়ে দেয়।

ইন্দুঃ এটাতে কি আছে?
রিয়নঃ খুলে দেখো।
ইন্দুঃ প্যাকেট টা খুলে দেখে

চলবে…

হ্যাপি রিডিং 🥰