সম্পর্কের দেয়াল পর্ব-০১

0
1203

#সম্পর্কের__দেয়াল
#সূচনা__পর্ব
|Writer_Anahita_Ayat|

‘দুধের গ্লাসে বিষ মিশিয়ে দিয়েছি, খেলেই রাক্ষুসী টা পরপারে পাড়ি জমাবে! তুমি এতো টেনশন করো না তো’ রিমির মুখে কথা টা আমি রুমের বাইরে থেকেই শুনলাম। রুমের দিকে আসতেই তাদের কথোপকথন কানে ভেসে আসলো,,, রিমি সম্পর্কে আমার বোন। পাভেল (আমার স্বামী) রিমির কাঁধে দুহাত রেখে হাসছে। রিমি ও সেইম। মাথায় বাজ পড়লো। পুরোপুরি কথাটা বুঝার পর কিছু না ভেবেই আচমকা দৌড়াতে লাগলাম।

দিক বেদিক শূন্য হয়ে দৌড়ানোর ফলে শাশুড়ি মায়ের রুমের সামনে এসেই দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যাই। মাথায় বেশ গাড়ো ভাবেই ব্যাথা পেয়েছি বুঝতে পারলাম। আমি নিচে পড়ার সাথে সাথে শাশুড়ি মায়ের হাত থেকে দুধের গ্লাস টা নিচে পড়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। তিনি ধড়পড় করে আমার সামনে এসে আমাকে ধরে তুলে দাঁড় করান। মায়ের চোখে মুখে উদ্বিগ্নতা।

‘মা আপনি ঐ দুধটুকু খান নি তো? বলুন না মা খান নি তো? নাকি খেয়েছেন?’

শপিং করতে গিয়েছিলাম মাত্রই এসে রিমি কে বলেছিলাম তেষ্টা পেয়েছে পানি দিতে, ও আমার জন্য দুধ এক গ্লাস নিয়ে আসে। আমি পানি খেয়ে নেই। শাশুড়ি মা আমি এসেছি বুঝতে পেরে উনার কাছে ডেকে ছিলেন।

দুধটুকু আমি না খেয়ে ভাবলাম মা কে দিবো। তাই উনার সাথে কথা বলে রুমের দিকে আসছিলাম আর এসেই এসব শুনলাম।

আমি পাগলের মতো আচরণ করছি দেখে মা খুব অবাক হন যা উনার চোখে মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

‘না খাইনি কিন্তু কেন রিধি কি হয়েছে? আর তুই এভাবে দৌড় দিলি কেন?’

প্রত্যেক টা মেয়ের স্বপ্ন থাকে বিয়ের পর নিজের মায়ের মতো আরেক টা মা কে সে পাবে। হুম আমি পেয়েছি। শাশুড়ি মা আমাকে নিজের মেয়ের মতো করেই দেখেন। কখনো ভাবিনি উনি আমাকে এতো আপন করে নেবেন! এতো ভালোবাসবেন! শশুড় বাবা ১ বছর হলো গত হয়েছেন।

মার কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। অনুভব করলাম কপাল থেকে গরম জাতীয় কিছু চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।

‘রিধি তোর তো কপাল কেটে গেছে রক্ত ও পড়ছে…’

‘ওসব কিছু না’

‘কিছু না মানে তুই এখানে বস’

আমাকে বসিয়ে রেখে উনি চলে যান। আমি এসব কি দেখছি শুনেছি তা ভাবতে থাকলাম। রিমির চোখে আমি রাক্ষুসী? কেননা দুধটুকু আমাকেই খেতে দিয়েছিলো ও,,, ভাবছি রিমি আমাকে কেন মারতে চাইছে?আরো ভাবছি এখন আমার করণীয় কি? সব কিছু গোলমাল লাগছে। কি করবো সেটাও বুঝতে পারছি না।

পাভেল আর রিমি আসার আগেই ফ্লোর টা পরিষ্কার করে নিলাম। শাশুড়ি মা ততক্ষণে চলে আসেন!

‘কপাল কেটে গেছে সেটা দেখছিস না? ব্যথা নিয়েও ফ্লোর কেন মুছতে গেছিস আমি ই তো পারতাম!’

‘না মা’

‘দেখি এদিকে আয়।’

মা আমার কপালে ব্যান্ডেজ করে দেন। এমন সময় দেখি পাভেল উপর থেকে নিচে নেমে আসছে। আমাদের কে দেখে এমন ভাব করলো যেনো আমার এই অবস্থা দেখে সে কষ্ট পাচ্ছে।

‘রিধি এ কি হলো তোমার? কপাল কেটে গেলো কি করে?’

শাশুড়ি মা আমাকে কিছু বলতে দিলেন না। আমি ভয়ে আছি এখন তিনি কি না কি বলে দেন। ভাগ্যিস মা আমি যা নিয়ে ভয়ে ছিলাম সেটা নিয়ে কিছুই বললেন না।

‘আরে দেখ না দরজার সাথে ধাক্কা লেগে এই অবস্থা!’

‘মা একটু কেটেছে ভালো হয়ে যাবে!’

‘রিধি ঠিক করে চলতে পারো না?’

কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না। পাভেলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। চোখের সামনে আরো একটা দৃশ্য দেখতে পারছি সেটা হলো পাভেল রিমির কাঁধে দুহাত রেখে হাসছে। ভুল দেখলাম নাকি সঠিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছি। পাভেল ব্যস্ততার ভান ধরলো।

‘আচ্ছা আমি আসার সময় ঔষধ নিয়ে আসবো!’

‘তুই কোথায় যাচ্ছিস পাভেল?’

‘এই তো মা একটু বাহিরে যাচ্ছি!’

‘আচ্ছা যা মনে করে ঔষধ ও নিয়ে আসিস!’

‘ঠিক আছে!’

পাভেল চলে গেল।কিছুক্ষণ পর দেখলাম রিমি ও এগিয়ে আসে।

‘আপু কিভাবে কাটলা?’

‘আরে এটা কিছু না!’

‘কিছু না মানে?’ (এ কি রাক্ষুসী টা মরে নি দেখছি! কি ব্যাপার বিষে ও কি ফরমালিন আছে নাকি?) মনে মনে!

আমি রিমির মনের কথা বুঝতে পেরে নিজেই নিজের সাথে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম। একটা মানুষের এতো রূপ! আসলেই মানুষ বহুরূপী। আর মুখোশধারী সয়তান।

‘আসো আপু তোমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেই। শপিং মল থেকে এসেছো ক্লান্ত শরীর নিয়ে কেন কাজ করতে গেলে বলো তো? আমি তো আছি তাই না আসো আমার সাথে!’

কেন যেনো রিমি কে ভয় লাগছে। ও আমাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে আমি শাশুড়ি মায়ের এক হাত টেনে ধরলাম। ভীত হয়ে আছি!

‘মা আপনি একটু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন?’

মা আমার আকুতি হয়তো বুঝতে পেরেছেন।

‘আহা আপু আমি আছি তো আমি দিবো!’

‘না মাকেই লাগবে! মায়ের আদর অন্য কারো তে পোষাবে না!’

মা এক গাল হাসলেন।

‘চল ‘রিধি আমি ই দিবো রিমি মা তুমি রান্নাঘরের দিক টা দেখো তো!’

ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছি। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। মাথা ব্যথায় ফেটে যাওয়ার উপক্রম। কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না। সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙ্গল। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি মা টিভি দেখছেন।

‘রিধি তোর ঘুম ভেঙ্গেছে আয় একটু এদিকে আয়!’

আমি মায়ের কাছে এসে বসলাম।

‘এখন কেমন লাগছে তোর?’

‘এইতো মা বেশ!’

‘ব্যথা বেশি করে?’

‘না,,,

‘পাভেল ঔষধ নিয়ে এসেছে খেয়ে নিস দেখবি ব্যথা চলে যাবে!’

‘পাভেল কখন আসলো?’

‘তুই যখন ঘুমে ছিলি তখন এসেছে!’

‘ওহ আচ্ছা!’

মা সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে টিভি দেখেন আজ টিভি দেখছেন না। পাভেল কখন আসলো আর এখন কোথায় কি করছে? মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে!

‘আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসি!’

‘না তুই অসুস্থ!’

‘আরে না আমি একদম ঠিক আছি!’

কিচেনের সামনে আসতেই কারো যেনো ফিসফিস করে কথা বলা শুনলাম। উঁকি দিয়ে দেখতেই দেখি পাভেল রিমি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে। ছিঃ

বুঝতে আর বাকি রইল না যে পাভেলের সাথে রিমির অবৈধ সম্পর্ক। এই জন্যই আমাকে মারতে চাচ্ছে। না চাইতেই অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর নিজেকে শান্ত করলাম…

‘পাভেল…পাভেল কোথায় তুমি?’

কিচেন থেকে সরে পাভেল কে ডাকতে লাগলাম। লক্ষ্য করলাম পাভেল কিচেন থেকে এক প্রকার ছিটকে বেরিয়ে আসে। আমি সব দেখে ও না দেখার ভান করলাম আবারো,,,

‘ও তুমি এখানে কি করছো?’

‘একটু পানি খেতে এসেছিলাম! তোমার ঘুম ভাঙ্গল কখন?’

‘এইতো এখনি!’

পাভেল চলে যায়। আমি কিচেনে ঢুকি। দেখলাম কিচেনে রিমি নাই। বুঝতে পারলাম ও লুকিয়ে আছে। দারুণ ভাবে এক্টিং করলাম আমি। নিজের মতো করে কাপা কাপা হাতে চা বানিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলাম।

এও টের পেলাম রিমি বের হয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। এবং কিছু সময় পর উপর থেকে নিচে আসছে।

‘কিরে রিমি তুই কোথায় ছিলি?’

কিছুই জানি না এমন ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলাম,

‘রুমে শুয়ে ছিলাম!’

‘ওহ আয় চা খা!’

‘না এখন ভালো লাগছে না পরে খাবো!’

‘আমি বিষ মেশাই নি খেতে পারিস!’

‘কি বললে?’

‘কই ক্ কিছু ন্ না! তাহলে তুই এখানে বস আমি রুম থেকে আসি!’

‘আচ্ছা যাও!’

‘কেন রিধি তুই ও একসাথে বসে চা খা!’

‘না মা’ রুমে গিয়েই খাবো!’

‘যা তাহলে!’

রুমে চলে আসলাম। দরজা বন্ধ করে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম। হাতড়ে হাতড়ে ফোন টা খুঁজতে লাগি। অবশেষে পেয়ে ও যাই। দুচোখ শুধু স্ক্রীনের উপর আম্মু (১) দিয়ে সেইভ করা নাম্বার টাকে দেখছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম। রিং হওয়ার আম্মু কল টা রিসিভ করল। নিজেকে সামলাতে পারলাম না। ফুঁপিয়ে কাঁদছি! ওপাশ থেকে আম্মু সব শুনছেন,,,

‘রিধি ও রিধি,,, কি হলো তোর? মা তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?’

আম্মু ও রিতিমত ছটফট করতে লাগলেন। আম্মু কে সব খুলে বললাম। আম্মু একটু ও অবিশ্বাস করলেন না! অবিশ্বাসের কিছুই যে নেই এখানে! রিমি ওখানে গেলে থাকতে চাইতো না বারবার আমার শশুড় বাড়ি তে আসতে চাইতো আজ বুঝতে পারছি সব। শেষে আম্মু কে একটা প্রশ্ন করলাম,

‘আম্মু রিমি কি আমার বোন ‌না? আমার রক্তের সম্পর্কের হয়ে কিভাবে ও রক্তের সাথেই বেঈমানি করতে পারে!!!!!!

আম্মুর উত্তর টা শুনে সব কিছু ধোঁয়াশা লাগল। এ যেনো বিশ্বাস ই করতে পারছি না!!!! রিমি তো……..

চলবে🍁

ভুল দোষ গুলো ক্ষমা করবেন,,,,