সম্পর্কের দেয়াল পর্ব-০৮

0
360

#সম্পর্কের__দেয়াল
#অষ্টম__পর্ব
|#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa|
‘আল্লাহ রে’ বলে চিৎকার দিয়ে রিধি সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যায়। রিধির বাবা বাড়ি নেই। রিধির মা একা কিভাবে কি করবেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। একা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে মেয়ের এই অবস্থা দেখে হা পা কাঁপতে থাকে স্থির হয়ে তিনি ঠিক মতো দাঁড়াতে ও পারছেন না। রিধির বিছানার পাশে ফোন টা কে পড়ে থাকতে দেখে কাঁপা কাঁপা হাতে রিধির বাবা কে ফোন দিয়ে বললো,

‘কোথায় আপনি জলদি আসুন। ডাক্তার রুহুল ভাই কে নিয়ে আসবেন সাথে করে!’

রিধির মায়ের এমন কন্ঠ শুনে তিনি ভয় পেয়ে যায়।

‘উমিলা কি হয়েছে রিধির? তোমার কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? হ্যা্ হ্যালো…..

কল কেটে গিয়েছে হাত থেকে ফোন ফসকে পড়ে গিয়ে। রিধির মা অসহায়ের মতো চিৎকার দিয়ে রিমি কে ডাকতে শুরু করেন।

‘রিমি ও রিমি রে কোথায় তুই? একটু এদিকে আয়….রিমি রে…দেখে যা আমার রিধির কি যেনো হয়েছে….

কিসের রিমি কিসের কি! রিমির কোনো পাত্তা ই নেই। তিনি এখন কি করবেন একা একা! তিনি কাঁদতে শুরু করে দেন। মেয়ের এমন অবস্থায় কোনো মা ঠিক থাকবেন না নিশ্চয়। ঠিক থাকার কথা ও না। তিনি বিছানার চাদর পাল্টে দিয়ে রিধির গায়ে কাঁথা মুড়িয়ে দেন। নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে রিধি। চোখ মুখ শুকানো। ঘেমে একাকার। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে এমন হয়েছে। তিনি পাগলের মতো রিধির পাশে বসে কাঁদতে থাকেন।

রিধির বাবা বাজার ফেলে রেখে ডাক্তার রুহুল কে তার চেম্বার থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। রুহুল দেখেন রিধি সেন্সলেস হয়ে গেছে। অবস্থা করুণ তা দেখেই তিনি বুঝতে পারেন! তিনি জানান তিনি কিছু করতে পারবেন না কারণ তিনি অতো বড় ডাক্তার ও নেন স্থানীয় একজন মাত্র। রিধি কে মেডিকেল হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

রিধির বাবা মা আর দেরি করলো না। যত তাড়াতাড়ি পারে রিধি কে মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাড়ির কোনো কিছু না দেখেই তারা মেয়ের পিছনে পাগলের মতো ছুটে চলে যান। সঙ্গে রুহুল ও ছিলেন। তিনি রিধিরদের সম্পর্কে একজন প্রতিবেশী ও হয়। পাভেলের মা কে রিধির মা রিধির সব কথা খুলে বলেন তিনি ও হাসপাতালে চলে আসেন। রিধির খারাপ সময় অথচ পাভেল ধারে কাছেও নেই! রিধির বাবা মা না পারতে পাভেলের কাছে ফোন ও দিয়েছে কিন্তু ওর ফোন বন্ধ বলছে বারবার। প্রায় অনেক্ষণ পর রিধির জ্ঞান ফিরলো। ডাক্তার কে আসতে দেখে সবাই উনার দিকে এগিয়ে যায়।

‘ডাক্তার আমার মেয়ে…ওর কি অবস্থা এখন?’

‘রোগীর স্বামী কোথায়?’

‘ডাক্তার ও তো অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গেছে! তাই আসতে পারেনি কিন্তু রিধি? সব ঠিক আছে তো?’

‘সব কিছু ঠিকঠাক আছে রোগীর অবস্থা ও এখন অনেকটা ভালো এবং সঙ্কা মুক্ত কিন্তু একটা দুঃসংবাদ আছে!’

সবাই হতভম্ব চোখে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে।

‘কি দুঃসংবাদ?’

ডাক্তার গম্ভীর মুখে বললেন,
‘উনার বেবি টা নষ্ট হয়ে গেছে!’

সবাই যেনো এই কথা টা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না একে বারে। রিধির মা এটা ধারণা করেছিলেন তাও মন কে বারবার বোঝাচ্ছিলেন না এটা হতে পারে না। কিন্তু তা আসলেই তা হয়ে গেছে! সবাই যেনো আসাড় হয়ে পড়লো। ডাক্তার চলে যায়।

সবাই রিধি কে দেখতে রিধির কাছে গেলে রিধি পাগলের মতো কান্না করে দেয়। সাথে রিধির মা আর পাভেলের মা ও। রিধি বাবা এসব দেখতে পারছেন না তাই তিনি বেরিয়ে যান। রুহুল সাথেই ছিলো। রুহুল রিধির বাবা কে শান্তনা দিচ্ছে। মা মেয়ে দুজন ই কাঁদছে এভাবে হলে রিধি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে দেখে পাভেলের মা নিজেকে সামলে রিধির মাথায় হাত বুলিয়ে রিধির চোখের পানি মুছে দেয়। রিধি পাভেলের মা কে জড়িয়ে ধরে আধো আধো কন্ঠে বললো,

‘মা আল্লাহ এমন কেন করলো? কেন আমার থেকে আমার যক্ষের ধন কে কেড়ে নিল! কেন মা! আমি তো কোনো পাপ করিনি। করলে আমাকে শাস্তি দিতেন তিনি কেন আমার থেকে আমার সন্তান কে কেড়ে নিলেন মা কেন?’

রিধির আহাজারি তে যে কারো কান্না পাবে। না চাইতে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল পাভেলের মায়ের। রিধি মাথা বুকের জড়িয়ে তিনি বললেন,

‘রিধি নিজেকে সামলা। সৃষ্টি কর্তার থেকে ভালো আমরা কেউ ই জানিনা। আর তাছাড়া জানিস তো উপরওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন।’

কান্না থামাথামির নাম ই নেই! পাভেলের মা নিজেকে শক্ত করেন কারণ তিনি ও যদি কাঁদতে বসে যান তাহলে এদের কে শান্তনা দিবে।

‘বেয়ান আপনি ও এভাবে কাঁদতে থাকলে রিধির কি হবে? আপনি কি চান ও এভাবে কাঁদতে কাঁদতে আবার অসুস্থ হয়ে যাক? আল্লাহ যা কেড়ে দেন তার থেকে হাজার গুন বেশি ফিরিয়ে দেন। হয়তো এটা রিধি জন্য ভালো ছিলো না তাই কেড়ে নিয়েছেন নিজেকে সামলান!’

রিধির মা বুঝতে পেরে নিজেকে শক্ত করেন। চোখের পানি মুছে ফেলেন। রিধির হাতে স্যালাইন দিয়ে দেওয়া হয়।রিধি কাঁদতে কাঁদতে অস্থির। তাকে কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছে না। মন শান্ত হচ্ছে না।

এদিকে পাভেল সকালে যাওয়ার আগে একদম স্বাভাবিক আচরণ করেছে তাই রিধি বা রিধির বাবা মা কেউই রিধির বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার দোষ টা পাভেল কে দিতে পারলো না। তাছাড়া ডাক্তার ও তেমন কিছু বলে নি। কোনো রকম প্রমাণ ও নেই তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা পাভেলের দোষ দিবেন? পাভেল রিমি উভয়ের মধ্যে কোনো দোষ কিভাবে দিবেন উপায়ান্তর পেলেন না। দোষী সাব্যস্ত করার কথা মনে পড়তেই রিমির কথা মনে পড়লো!! কোথায় রিমি? বোনের এই অবস্থা অথচ একটি বারের জন্য ও দেখতে এলো না? কিভাবে কি? পাভেলের মা ভাবলেন বাড়িতে কেউ নেই তার উপর দুদিন বাদে তার বিয়ে তাই আসে নি। ইমনের বাবা মা ও সোজা হাসপাতালেই এসেছেন। রিধি কে দেখে তারা রিধির বাবা মা পাভেলের মা সবার সাথে বসে বললেন,

‘বেয়াই বেয়ান সাহেব বেয়াদবি নিবেন না তাও বলছিলাম যে, রিধি মার এই অবস্থা এখন কি বিয়ের কাজে এগোনো ঠিক হবে?’

রিধির বাবা মা চুপ রইলেন। তা দেখে ইমনের বাবা বললেন,
‘আচ্ছা আপনারা ভেবে আমাদের কে ফোনে হলেও জানিয়ে দেবেন!’

‘আচ্ছা ঠিক আছে’

কথা এই ই রইল।

—————————
পাভেল কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে ফোন টা অন করে। তার মায়ের নাম্বারে কল দেয়। পাভেলের কল পেতেই তিনি ফোন টা সঙ্গে সঙ্গে ই রিসিভ করেন!

‘পাভেল তোর ফোন বন্ধ কেন? ওতো কল দিয়েছে সবাই ঢুকলো না যে!’

‘চার্জ ছিলো না। আর এদিকে আমি ও অফিসের কাজের চাপে এতোই ব্যস্ত যে খেয়াল ই করিনি! কেন মা কি হয়েছে?’

পাভেলের মা গোটা বিষয় টা বললেন। পাভেলের খুব আফসোস ‌হলো।

‘এসব কি বলছো মা কিভাবে হলো এটা?’

‘জানিনা রে। সব ঠিক ছিলো। থাক আল্লাহ চায় নি তাই হয়তো এমন হয়েছেন। সেসব নিয়ে আর ভাবিস না ভবিষ্যত নিয়ে ভাব। তুই রিধির সাথে কথা বল ওকে শান্তনা দে!’

‘রিধি কে ফোন টা দাও!’

‘দিচ্ছি!’

রিধি কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পাভেল ও বুঝতে পারে রিধি খুব মুষড়ে পড়েছে।

‘রিধি প্লিজ কেঁদো না। দেখো আমাদের তো এখন কিছু করার নেই তাই না! কান্না করলে কি এখন কিছু হবে?’

‘তুমি কি বুঝবে আমার কষ্টের। আমি তো মা ছিলাম ওর কাছের! তুমি তো…

‘রিধি কান্না থামাও বলছি!’

রিধি নিজেকে শান্ত করতেই পারছে না। থেমে থেমে কাঁদছে। পাভেল বিরক্তের চরম সিমায় গিয়ে ফোন রেখে দেয়।

রিধি এখন অনেক টাই সুস্থ। বাড়ি তে নিয়ে যাওয়া যাবে। তাছাড়া হাসপাতালে থাকলে রিধি আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। বাড়ি তে নিয়ে যাওয়াই ভালো।

বাড়িতে পৌঁছেই সবাই দেখলো বাড়ির অবস্থা আগের মতই। রিধি কে কয়েক টা দিন টোটাল বেড রেস্ট এ থাকতে বলা হয়েছে তাই রিধি কে রিধির রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেন। পরক্ষণেই রিমি কথা উঠতেই রিধির মা রিমির রুমে যায়।

‘রিমি তুই কেমন পাষাণ রে রিধির এতো খারাপ অবস্থা অথচ তুই একটা বারের জন্য ও দেখতে গেলি না? শত্রু ও তো এমন নিষ্ঠুর হয় না!’

রিধির মা এসব বলতে বলতে রুমে ঢুকে দেখে এ কি রিমি কই? রুম তো পুরা শুনশান ফাঁকা কেউ ই নেই এখানে! রিমি গেলো কই তাহলে? তিনি পুরো বাড়ি খুঁজে দেখলেন রিমি নেই! পাড়া প্রতিবেশী কে জিঙ্গেস করলো রিমি আছে কিনা তারা জানালো না নেই! কোত্থাও নেই রিমি! হন্ন হয়ে খুঁজেও হদিস মিললো না! শেষে খবর রটল রিমি পালিয়ে গেছে….. পাড়া প্রতিবেশী দের মধ্যে একজন দুজন এমন করে কানাকানি হতে হতে পুরা এলাকায় জানাজানি হয়ে যায় রিমির পালিয়ে যাওয়ার খবর!

রিধির খারাপ সময় টা কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে পালিয়ে গেছে রিমি। অথচ কেউ কিচ্ছু টের ও পেলো না। পাবে কিভাবে সবাই তো রিধি কে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো আর রিমি সেই সুযোগে পগাড় পাড়….!

চলবে_____________