সম্পর্কের দেয়াল পর্ব-১১+১২

0
368

#সম্পর্কের__দেয়াল
#একাদশ__পর্ব
|#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
রিধি চমকালো অনেক টাই। নাদিম রিধির ছোট খাটো ধাক্কা লাগার মতো চিৎকার টা শুনতে পেয়ে নিজেও হকচকিয়ে গেছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় তার এই ব্যাপার টা ডিরেক্টলি রিধি কে বলা ঠিক হলো কিনা তা নিয়ে! তাছাড়া আর বলবেই বা কাকে? রিধির বাবা মা আর পাভেলের মা ও চলে আসে সেখানে। উনারা ভয় পেয়ে গেছেন রিধির কিছু হলো নাকি ভেবে। রিধি নিজেকে স্বাভাবিক করার বৃথা চেষ্টা করল তবে হাত অনর্গল কাঁপছে। সে আধো আধো গলায় নাদিম কে বললো,
‘পাভেল কে আপনি কোথায় দেখেন? এখন কোথায় সে? আর পিক ই বা কিসের?’

‘ভাবী ইউ আর অলরাইট? আমার মনে হচ্ছে আপনার কোনো সমস্যা হয়েছে প্লিজ আমাকে বলবেন যে কি হয়েছে? আপনি এতো অস্থির ই বা হচ্ছেন কেন?’

‘আপনি আগে বলুন পাবেল কোথায়?’

‘কুল ডাউন ভাবী। আমি পিক সেন্ট করে দিয়েছি দেখে নিন আর পাভেল এখন কক্সবাজার!’

‘কিহহহ…’

‘আমি আপনাকে একটু পর কল ব্যাক করছি ভাইয়া!’

এই বলে রিধি কল কেটে দেয়। রিধির বাবা মা আর পাভেলের মা ও এতোটা সময় নিরব দর্শক হয়ে সব টা শুনেছে সত্য বাট কিছু বুঝে উঠতে পারে নি। রিধি নাদিমের পাঠানো পিক গুলা দেখে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়ে। রিধির মা দৌড়ে এসে রিধি কে ধরে বলেন,
‘ক্ কি হয়েছে রিধি? তুই এমন করছিস কেন?’

‘মা… পাভেল…

পাভেলের মা ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,
‘পাভেল? ওর কি হয়েছে? কোনো বিপদ হলো না তো?’

রিধির মা রিধির ফোনে ছবি গুলো দেখছিলো রিধির বাবা ফোন টা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে সেগুলো দেখে নিজেকে কঠোর করে ভাবলেন আজ ই উপযুক্ত সময় পাভেলের মা কে নিজেকে ছেলে কু কাজ গুলো খুলে বলার প্রমাণ ও আছে। রিধির মা বললো,

‘রিধি তুই একটু শান্ত হ! আমরা তো আগেই সন্দেহ করেছিলাম এখন সেটাই ঠিক হলো!আজকেই দুই শুয়োর কে জন্মের মতো শিক্ষা দিবো!’

পাভেলের মা রিধির মায়ের মুখে এমন কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলো। একটু আগে রিধি পাভেলের নাম বললো আর রিধির মা কাকে এখন শুয়োর বলছে?

‘বেয়ান আপনি কাকে কি বলছেন? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না!’

‘আপনি তো….

রিধি তার মায়ের হাত ধরে বসিয়ে দেয়। রিধি নিজেই বললো,

‘মা আপনাকে আজ কিছু সত্যি কথা বলার আছে!’

‘কি সত্যি কথা বল?’

‘মা আমরা এই কথাটা জানতাম তবে আমরা এটাও জানতাম আমাদের সামান্য মুখের কথায় আপনি বিশ্বাস করতেন না তবে আজ প্রমাণ ও আছে আজ সব বলার সময় এসেছে!’

‘কি এমন কথা?’

রিধি তার বাবার থেকে ফোন টা নিয়ে পাভেলের মায়ের হাতে তা দিয়ে বললো,
‘দেখুন তো মা এদের চিনতে পারেন কিনা?’

পাভেলের মা মনোযোগ সহকারে ছবি গুলো দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। কয়েক টা ছবি পাভেল এর মুখ দেখা যাচ্ছে মেয়ে টা পাভেলের বিপরীত দিকে মুখ করে আছে। পাভেল কে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়। আর লাস্ট দুইটাই মেয়েটার চেহারা স্পষ্ট। স্থির চিত্রে থাকা দুজন মানুষ হলো পাভেল আর রিমি। পাভেলের মা অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পোঁছে যান। রিধির বাবা কি মনে করে যেনো বেরিয়ে চলে যায়। পাভেলের মা কিছু বলছে না দেখে রিধি ফের বললো,

‘চিনতে পারছেন মা?’

‘হ্যাঁ একটা পাভেল আর অন্যটা রিমি কিন্তু ওরা এভাবে..???’

শখানেক প্রশ্ন পাভেলের মায়ের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর প্রশ্নবোধক দৃষ্টি টা নিক্ষেপ করা রিধির দিকে। উত্তর টা অবশ্য রিধি ই দিলো,

‘মা আপনি ঠিক চিনেছেন এরা দুজন পাভেল আর রিমি। ওদের এই অবস্থা কেন জানেন?….অতঃপর সেই প্রথম দিন থেকে সব ঘটনা রিধি পাভেলের মা কে খুলে বললো। পাভেলের মা বোকা বনে গেল যেনো। উনি খুব বেশি চমকেছেন পাভেল নিজের বাচ্চা টা কে মেরে ফেলেছে শুনে। কিভাবে পারলো এতো নিষ্ঠুর একটা কাজ করতে? তিনি কান্না করে দিলেন।

‘কোন পাপে এমন একটা কুলাঙ্গার কে পেটে ধরেছিলাম জানিনা। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস রিধি!’

‘মা আপনি এভাবে কাঁদবেন না। আমার উপর অভিশাপ লাগবে!’

‘আমাকে ওদের কাছে নিয়ে চল নিজের হাতে ওদের কে ওদের কৃতকর্মের শাস্তি দিবো!’

রিধির বাবা মা আর পাভেলের মা ড্রয়িংরুমে সোফার উপর বসা। পাভেলের মা ছেলের কুকীর্তি শুনার পর রিধির বাবা মায়ের কাছে খুব লজ্জিত আর অনুতপ্ত বোধ করতে থাকেন। এমন জানোয়ারের মতো কাজ পাভেলের কাছে থেকে আশা করেন নি তিনি। পাভেলের একার দোষ ও নয় রিমির ও দোষ আছে বুঝার পর পাভেলের মা বললেন,

‘বেয়ান আমি তো পাভেল কে একা দোষ দিতে পারিনা সমান দোষে দোষী দুজন ই! রিমি তো আপনাদের মেয়ে তাই না? রিধির সম্পর্কে বোন হয়! রক্তের সম্পর্কের বোন হয়ে কিভাবে সে রিধির এতো বড় ক্ষতি করতে পারলো? আমি জানতে চাই বোন হয়ে বোনের কিভাবে এতো বড় সর্বনাশ করতে পারলো রিমি! রিধি কে বিষ খাইয়ে মারতে চাওয়ায় ওর বুক কাঁপে নি একটু ও?’

রিধির বাবা মা মাথা নিচু করে ফেললো। কিছু টা সময় নিশ্চুপ থেকে রিধির মা বললো,

‘রিমি আমাদের মেয়ে নয়! (রিমি কে নিয়ে সব কথা বললো)’

পাভেলের মা শুধু একের পর এক কথা শুনে অবাক হচ্ছেন।

‘কিহ ও আপনাদের কেউ ই না! কই কখনো তো কেউ বলে নি বা আপনাদের মুখে ও তো শুনিনি!’

‘কাউকে জানাই নি আর কারো থেকে জানার উপায় টাও রাখি নি। তাই বলেই আজ এই দশা! নিজের মেয়ের মতো খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছি আর আজ সেই ই আমার মেয়েটার জীবন টা তছনছ করে দিলো!’

রিধি কিছু টা স্বাভাবিক হওয়ার পর নাদিমের কাছে ফোন দেয়। নাদিম সাথে সাথে ফোন টা উঠায়।

‘ভাইয়া আমাকে আপনি ওরা থাকে কোথায়? এটা বলতে পারবেন? অনেক উপকার হবে!’

‘হুম বলতে পারবো। আপনার অস্থিরতা দেখে বুঝে ছিলাম কোথায় গন্ডগোল আছে তাই আমি পাভেল আর ওর সঙ্গে থাকা মেয়ে টাকে ফলো করি। ওরা …… এই হোটেলে উঠেছে। রুম নাম্বার ১৫..

‘আপনাকে ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যাবে অনেক বড় উপকার করলেন। আমার সারা জীবন মনে থাকবে!’

‘থাক থাক বাট ভাবী আমাকে বলবেন যে কাহিনী টা কি?’

‘অন্য কোনোদিন….

‘আচ্ছা ঠিক আছে…

নাদিম রিধির অবস্থা বুঝে আর তাকে জোড় করলো না কি হয়েছে বলতে। তবে এই টুকু বুঝতে পেরেছে ঝামেলা টা বড় রকমের।

রিধি সবাই কে জানালো তারা আজকেই কক্সবাজার যাবে! সবাই রেডি হয়ে রওয়ানা দেয় উদ্দেশ্য কক্সবাজার। রিধি নিজেও জানে না কি হতে চলেছে। তবে এটা সে ঠিক করেই নিয়েছে এমন একটা লো ম্যান্টালিটির মানুষের সাথে সে আর সংসার করবে না। তবে তাদের অন্যায়ের কাজের কোনো ক্ষমা নেই! এর ফলাফল তাদের ভোগ করতেই হবে!

——————————-

সমুদ্রের পাড় থেকে ঘুরে এসে পাভেল আর রিমি দুজন ই খুব ক্লান্ত ছিলো। রুমে এসে দুজন একসাথে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
‘মন টা ফ্রেশ হয়ে গেলো তাই না?’

‘হুম একদম!’

‘অনেক টায়ার্ড ও লাগছে। একটু ঘুমোতে পারলে ভালো হয়! তুমি তো রাতে আমাকে একটু ও ঘুমাতে দাও নি!’

পাভেল ডেভিল মার্কা হাসি দিলো। পাভেলের হাসি দেখে রিমি লজ্জা পেয়ে যায়। ওদের কাছে অবৈধ সুখের তৃপ্তি আকাশচুম্বী।

‘ডিশিসন ফাইনাল আমি এখন ঘুমাবো এন্ড এটাই আমার শেষ কথা!’

‘কিন্তু আমি যদি ঘুমাতে না দেই?’

‘দিবা না?’

পাভেলের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বললো রিমি। পাভেল সেই চাহনি বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। রিমির রাগ হয়।

‘যাও ঘুমাবো না খুশি?’

‘আরে না না ঘুমাও!’

দুজনন খুনসুটির পর্যায় শেষে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। এই এক ঘুমে ৫ ঘন্টা কখন পার হয়ে যায় নিজেরাও বুঝতে পারে নি। হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে। পাভেলের ঘুম আচমকাই ভেঙ্গে যায়। সে ভাবলো হোটেলের কেউ এসেছে তাই খালি গায়ে এসে দরজা খুলে দিতেই ছোট খাটো একটা ভূমিকম্প বয়ে গেলো পাভেলের মাথার উপর দিয়ে….

চলবে__________________

#সম্পর্কের__দেয়াল
#দ্বাদশ__পর্ব
|#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa|
দরজা খুলতেই রিধি কে দেখে পাভেল বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। আচমকা ঘুম ভেঙ্গেছে তাই স্বপ্ন দেখছে ভেবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেই পাভেল বললো,
‘শোনো এসব করে না কোনো লাভ নাই। আমি আমার রিমি কে ভালোবাসি। তোমাকে আর চাই না!তোমার হাত থেকে রেহাই পেতে কত কিছু করেছি শেষে স্বপ্নে ও এসে হানা দিলে?’

রিধি ও সেইম হাসি হেসে পাভেলের চোখের সামনে তুড়ি মেরে বললো,
‘আমি স্বপ্ন নয় বাস্তবেই এসেছি! আর একা ও নয় সঙ্গে আরো ৩ জন আছেন! মা বাবা কোথায় আপনারা আসুন!’

পাভেল হকচকিয়ে উঠলো হাতে চিমটি কেটে দেখতে গেলেই ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে সে। বুঝলো এটা কোনো স্বপ্ন নয় একেবারেই সম্পূর্ণ বাস্তব। কিন্তু রিধি এখানে কি করে? মাথায় হাজার টা প্রশ্ন জট পাকিয়ে বসে আছে। পাভেল মা এসে দেখলো ছেলের খুব বাজে অবস্থা। খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আর দেরি করলেন না কয়েক পলক পাভেলের দিকে তাকিয়ে কষিয়ে একটা চড় মারলেন পাভেলের গালে। ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে লাগলেন,

‘আমি ভাবতেও লজ্জা লাগছে তুই আমার ছেলে! এতো নিকৃষ্ট হয়ে গেছিস তুই?’

পাভেল চড় খেয়ে ঠিক কোন রিয়েকশন দিবে নিজেও বুঝতে পারছেন না।

‘মা তুমি?’

‘হ্যাঁ আমি তোদের সব কু কর্মের কথা জেনে গেছি!’

‘মানে?'(অবাক হয়ে)

রিধি বললো,
‘মানে এটাই যে তুমি রিমির সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত। আমার সন্তান কে তুমি ই মেরেছো! রিমির সঙ্গে মিশে আমাকে বিষ খাইয়ে মারতে চেয়েছো! রিমি কে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতে তুমি ই সাহায্য করেছো! আমি আমরা সব জানি পাভেল সব!’

‘কিহ…(পাভেল যেনো কারেন্টের শখ খেলো! ওরা জানলো কিভাবে ওতসব?)

সবাই ভেতরে যেতে চাইলে পাভেল বাঁধা দেয়। পাভেল কে ঠেলে ঢুকে যান তারা। পাভেল হুস ফিরিয়ে তড়িঘড়ি করে একটা শার্ট পড়ে নেয়। তারপর এগিয়ে এসে তার মা কে বলতে থাকে,

‘মা শোনো উনারা যা বলছে সব মিথ্যা বিশ্বাস করো!’

‘বিশ্বাসের আর কি বাকি টা রেখেছিস তুই? রিধির বোন কে নিয়ে হোটেলে…! ছিঃ আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে! রিধির পেটের সন্তানের বাবা তো তুই ছিলি কিভাবে পারলি নিষ্পাপ প্রাণ টাকে মারতে? একটা বার ও বুক কাঁপে নি তোর?’

‘বেয়ান আমি রিমি কে আজ উচিত শিক্ষা ই দিবো আর আপনি আপনার ছেলে কে!’

রিধির মা বাঘিনীর মতো গিয়ে ঘুমন্ত রিমির চুলের মুঠি ধরে উঠে সোজা দাঁড় করিয়ে নেন। রিমি পুরাই বেক্কল হয়ে গেলো। আচমকা চুল ধরে টান পড়ায় ব্যথা টা ভালো করেই পায়। চোখ খুলে শক্ড। এমন কিছু দেখবে পাভেল আর রিমি কারো ভাবনায় ছিটেফোঁটা ও ছিলো না। রিমি একটু বেশি ই অবাক হয়। রিধির মা রাগে গর্জে উঠে বললেন,

‘তুই আমার মেয়েটার জীবন শেষ করে দিয়ে এখানে আয়েশ করে ঘুমাচ্ছিস? ওর চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে ফুর্তিতে আছিস দুজন? লজ্জা করলো না বোনের স্বামী কে নিয়ে হোটেলে শুয়ে থাকতে? ব**শা তুই? একটা ব**শা কে খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছিলাম আমরা?’

রিমি কি করবে বা কি উত্তর দিবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছে মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে। রিমি চুলে ব্যথা পাওয়ার কারণে কেঁদে দেয়। রিমি কে উদ্দেশ্য করে বলা রিধির মায়ের কথা টা শুনে পাভেলের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। উনাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘মুখ সামলে কথা বলুন আপনি!’

পাভেলের মা বললো,

‘কেন মুখ সামলাবে বেয়ান তো ঠিক কথাই বলছে! কোনো সৎ চরিত্রবান মেয়ে কি রাত বিরাতে বোনের জামাইয়ের সঙ্গে রাত কাটায়? আর তোর চরিত্র এমন পাভেল?’

রিমির উনাদের সব কথা শুনে লজ্জায় ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছা হলো। এমন কথা ওবধি শুনতে হবে ভাবে নি! রিমির অসহায় লাগছে ভারী এই অসহায়ত্ব কে প্রশ্রয় একমাত্র পাভেল ই দিতে পারবে তাই রিমি দৌড়ে পাভেলের কাছে যেতে নিবে রিধি রিমির হাত টেনে ধরে বাঁধা দেয়।

‘অনেক দৌড়েছিস আর না!’

রিমি অসহায় চোখে পাভেলের দিকে তাকায় আর পাভেল রিধির দিকে। সবার চোখ আগুনের ফুলকির ন্যায় রাগে ক্ষোভে জ্বলছে জ্বল করছে। পাভেল নিজেও রেগে যায়। এভাবে হুট করে এসে তাদের আঘাত করা আর যা নয় তা বলার কোনো মানে নাই। পাভেল রেগে রিধির কাছে গিয়ে বললো,

‘রিধি ওর হাত ছাড়ো!’

‘ছাড়বো না কি করবে তুমি?’

‘যা করার করে ফেলেছি ছাড়ো বলছি ছাড়ো!’

পাভেল এক ঝটকায় রিধির হাত থেকে রিমি কে ছাড়িয়ে নেয়। এটা দেখে রিধির মা ভীষণ রেগে রিমির গালে সজোরে আঘাত করে বললেন,

‘কোন সাহসে বাসা থেকে পালিয়েছিস তুই?’

তিনি আবারো মারতে হাত উঠালে পাভেল সেই হাত ধরে চেঁচিয়ে বললো,

‘ব্যাস এনাফ ইজ এনাফ! কি শুরু করেছেন আপনারা? আর আপনি কোন অধিকারে আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুললেন?’

পাভেলের মুখের কথা শুনে পাভেলের মা বললো,
‘তোর স্ত্রী মানে?’

পাভেল চিল্লিয়ে বললো,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ রিমি আমার স্ত্রী। ও খারাপ চরিত্রের নয়। ও আমার বিয়ে করা বউ। আমি রিমি কে বিয়ে করেছি নিয়ম মাফিক ও এখন আমার স্ত্রী! শুনেছেন আপনারা?’

কথা টা রিধি বুঝে উঠার সাথে সাথেই পাভেলের শার্টের কলার ধরে বললো,

‘তোর বউ মানে? কিসের বউ! মগের মুল্লুক পেয়েছিস নাকি যে বললেই হয়ে গেলো?’

এবার পাভেল রিধির গালে চড় বসালো! মেয়ের গালে হাত তোলায় রিধির বাবা বাঘের মতো গর্জন করতে লাগলেন!

‘আমার মেয়ের গালে হাত তুললি? তোর সেই হাত আমি আজকে ভেঙ্গে ফেলবো!’

রিধির বাবা পাভেলের সাথে ধস্তাধস্তি তে লেগে যান। রিধি আর পাভেলের মা দুজন কে ছাড়িয়ে নেন। রিমি শুধু হা হয়ে দেখছে! পাভেলের মা রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,

‘পাভেল এসব কি বলছিস! রিধি তোর বিয়ে করা বউ তার অনুমতি ব্যতীত তুই রিমি কে বিয়ে করতে পারিস না!’

‘কে বলেছে রিধি আমার বউ?’

‘মানে?’

পাভেল লাগেজ থেকে সেই ডিভোর্স পেপার টা বের করে তার মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘এই দেখো মা রিধি নিজেই আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে।’

‘আর তুই?’

‘আমি রিমি কে ভালোবাসি তাই আমি ও ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে দিয়েছি!’

রিধি আর তার বাবা মা ভীষণ অবাক। কারণ তারা কেউ ই এই ডিভোর্স পেপারের ব্যাপারে অবগত নয়! পাভেলের মা বললেন,

‘রিধি এসব কি সত্যি?’

‘আমি আর ডিভোর্স পেপার? মা আমি এই ডিভোর্স পেপারের ব্যাপারে জানিনা!’

‘তাহলে তোর সিগনেচার এখানে আসলো কি করে?’

রিধির মা পাভেলের মায়ের হাত থেকে ডিভোর্স পেপার কেড়ে নিয়ে দেখলো সত্যিই রিধির সিগনেচার করা আছে।

‘কি হলো রিধি বল?’

‘আম্মু বিশ্বাস করেন আমি এই ডিভোর্স পেপারের কোনো কিছু জানিনা! এখানে আমার সিগনেচার কিভাবে আসলো তাও জানিনা!’

রিমি ক্রুদ্ধ হয়ে বললো,

‘আপু ডিভোর্স তো ঠিকি দিয়েছো এখন এখানে ন্যাকা সাজতে এসেছো?’

‘না আমি ডিভোর্স দেই নি! এসব মিথ্যা বানোয়াট!’

পাভেল বললো,

‘আচ্ছা সব মিথ্যা? ঠিক আছে তাহলে আমি তোমাকে এখন এই মুহূর্তে তালাক দিচ্ছি‌….

পাভেলের মা কথাটা শুনে কি করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন,

‘পাভেল….

পাভেল তার মায়ের কথায় কান না দিয়ে বললো,

‘১ তালাক…২ তালাক…৩ তালাক….

সবাই হতবাক হয়ে দেখলো। রিমি রিধির সামনে এসে হেসে বললো,

‘এবার তো মানো তাই না?’

তালাক দিলে আল্লাহর সাত আসমান পর্যন্ত কেঁপে উঠে রিধি সব হারিয়ে হাউমাউ করে ফ্লোরে বসে কাঁদতে শুরু করলো। এতো কষ্ট হচ্ছে যেনো কেউ কলিজা টা ছিড়ে নিয়েছে। রিধির মা রেগে আবারো রিমির চুলেলের মুঠি ধরলেন,

‘তোর জন্য হয়েছে সব তুই একটা রাক্ষুসী আমার মেয়ের সংসার ভেঙ্গে দিয়েছিস!’

পাভেল রিমি কে ছাড়িয়ে নিজের পেছনে দাঁড় করায় আর রিধির মায়ের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বললো,

‘আপনি ওকে আর একবারো ছোঁয়ার দুঃসাহস দেখাবেন তো খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি!’

‘ওকে আমি ছোঁয়ার অধিকার আছে ও আমার মেয়ে!’

রিমি শয়তানি হাসি হেসে বললো,

‘ভুল বললেন আপনি! আমি আপনার বা আপনাদের কেউ ই নই!’

রিধির বাবা রিমি কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘ঠিক বলেছিস তুই আজ প্রমাণ করে দিলি রাস্তার কুকুর কে রাস্তায় ই মানায় কোনো ঘরে নয়! তুই এও প্রমাণ করে দিলি যে পর কখনো আপন হয় না। আমাদের খেয়ে পড়ে আমাদের কপালেই লাথি মারলি! তোর বিচার আল্লাহ অবশ্যই করবে!’

পাভেল চোখ গরম করে বললো,

‘আল্লাহ কোনো বিচার করবেন না! আর কুকুর আপনারা রিমি নয়!’

পাভেলের মা কিছুতেই উনাদের থামাতে পারছেন না।

‘পাভেল এসব কি বলছিস তুই?’

‘আমাকে বলতে দাও মা!’

রিধির মা বললো,

‘আল্লাহর গজব পড়বে যাবে দেখে নিস! তুই আমার মেয়ে কে ঠকিয়েছিস আর রিমি তুই বেঈমানি করেছিস তোদের শাস্তি তো….

‘এইইই চুপ করুন হ্যাঁ আর এক্ষুনি এখান থেকে বেরিয়ে যান বলছি! আপনাদের মেয়ের সাথে যা সম্পর্ক ছিলো সব শেষ ওকে?’

‘তুই আমার মেয়ের যোগ্যতা রাখিস না। তোর জন্য রাস্তার কুকুর ই যোগ্যতা রাখে!’

রিধির বাবা পাভেলের দিকে সিংহের মতো গর্জে এগোতে যাবে রিধি বাঁধা দিলো। মা বাবা দুজন কে থামিয়ে রিধি শক্ত কন্ঠে বললো,

‘রিমি তোর সাথে আজ থেকে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ভুলে যাবি তোর পৃথিবী তে মা বাবা নামক কেউ ছিলো! আজ থেকে আমাদের মাঝে এক বিশাল সম্পর্কের দেয়াল উঠে গেলো। এই দেয়াল জোড় করে তুলে দিয়েছিস তুই তোরা! আমার সাথে মস্ত বড় অন্যায় করেছিস তোরা। যা আমার প্রাপ্য ছিলো না। আমার এই বুকফাটা আর্তনাদ গুলো কখনো বিফলে যাবে না। আমি সয়ে গেলাম আল্লাহ যেনো না সয়! বাবা মা চলো….!’

রিধি তার বাবা মা কে নিয়ে চলে যেতে নেয় পাভেলের মা বাঁধা দেয়।

‘কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?’

কোনো উত্তর দিলেন না। পাভেল বললো,

‘মা, যাচ্ছে যেতে যাও। জীবন থেকে আবর্জনা দূর হচ্ছে!’

রিধি পেছন ফিরে একবার রিমি আর পাভেলের মুখের দিকে তাকালো তারা আজ জীতে গেছে। বিজয়ের হাসি তাদের মুখে। রিধি পেছন হালকা দৌড়ে আবার পাভেলের মায়ের কাছে আসলো। চোখে একরাশ পানি আর বুকে এক পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে বললো,

‘আল্লাহ আমার ভাগ্যে এতো ভালো একজন শাশুড়ি মা রেখেছিলো ঠিকই কিন্তু সারাজীবনের জন্য রাখে নি! এই দেখা ই শেষ দেখা! ভালো থাকবেন মা!’

পাভেলের বলা শেষ কথার প্রতি উত্তরে রিধি মনে মনে বললো,

‘এই আবর্জনা ই তোদের জীবন ধ্বংস করে দেবে। যেভাবে আমার জীবন থেকে সুখ আর আমার সন্তান কে কেড়ে নিয়েছিলি ঠিক সেভাবে আমি তোদের থেকে তোদের জান টাই কেড়ে নেবো! এটাই শেষ নয় সূচনা মাত্র….!’

চলবে______________________