সম্পর্কের দেয়াল পর্ব-১৩+১৪

0
371

#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__১৩
রিধি আর রিধির বাবা মা সবার দৃষ্টির বাহিরে চলে যায়। পাভেলের মায়ের হুস ফিরে আসে। তিনি দ্রুত পায়ে হোটেলের বাইরে এসে দেখেন রিধি বা রিধি বাবা মা কাউকে দেখা যাচ্ছে না। উনি এদিক সেদিক ভালো ভাবে খুঁজে দেখেন কারো ছায়া বিন্দু ও নাই। হঠাৎ করে দুমিনিটের মধ্যে কেউ কিভাবে গায়েব হয়ে যেতে পারে তা পাভেলের মায়ের মাথায় আসলো না। মনে পড়ছে রিধির বলা একটা কথা যা সবার কলকাকলিতে তেমন শুনতে পাওয়া যায় নি কিন্তু পাভেলের মা রিধির কাছাকাছি থাকায় তিনি শুনতে পান। রিধি বলেছিলো,

‘তাহলে আমার কপালে সুখ লেখা নেই। শেষ টা এভাবেই হলো! আজ থেকে আমি ভুলে যাবো রিমি আমার বোন। মৃত সে আমাদের কাছে! আর পাভেল? যে স্বামী স্ত্রীর বন্ধন ছিন্ন করে দিয়েছে ঠিক আছে আজ থেকে পাভেল বা রিমি কেউ না আমার বা আমাদের। সব টা আমার জীবনে একটা কালো অতীত মাত্র!’

সম্পূর্ণ কাহিনী টা সিনেমাটিক লাগছে। কিভাবে কি হলো পাভেলের মা ঠিক বুঝতে পারছেন না। কিন্তু পাভেল রিমি কে বিয়ে করেছে মানে কি? পাভেলের মা ভাবলেন যা করার বাসায় গিয়েই করবেন এখানে নয়। পাভেল কে শিক্ষা দিবেন আসল হীরা তো রিধি ছিলো রিমি নয়। আর রিমি কে ঘর থেকে বের করে দিবেন। এমন মেয়ে কে ছেলের বউ হিসেবে মানতে তিনি পারবেন না কখনো না!পাভেল আর রিধির এই ডিভোর্স পেপার তিনি মানেন না সব ভুয়া। তাই তিনি নিজেকে শক্ত ও কঠোর থেকে ভেঙ্গে তুলোর মতো নরম হয়ে গিয়ে পাভেল আর রিমির কাছে যেতে পা বাড়ান!

এদিকে পাভেলের মা ও চলে যাওয়ায় পাভেল আর রিমি জীতে গেছে ভেবে খুশি তে ফেটে পড়ে একজন আরেক জন কে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ইয়েসসসস আমরা জীতে গেছি!’

‘হু পাভেল লাভ ইউ! লাভ ইউ এ্যা লট!’

‘সেইম টু ইউ সুইটহার্ট!’

‘উফ বুঝলে এতোদিন পর আমার নিজেকে হালকা হালকা লাগছে। এতো দিন কি মনে হয়েছে জানো?’

‘কি?’

‘মাথার উপর ইয়া ভারী ওজনের একটা ঝামেলা নিয়ে ছিলাম এখন সেটা আর নাই!’

‘ঠিক বলেছো আমাদের জীবনে রিধি নামক সবচেয়ে বড় ঝামেলা টাই তো আর নেই এখন সব কিছু ঠিক ঠাক। জীবন থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছি ওকে। এখন শুধু আমি আর তুমি ছাড়া তৃতীয় কেউ ই নেই আমাদের মাঝে! তাই তো এতো ইজি ফিল হচ্ছে!’

পাভেল আর রিমির কথার মাঝখানে পাভেলের মা উপস্থিত হলে দুজন দু দিকে ছিটকে পড়ে। রিমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে পাভেল বললো,

‘মা আমি জানি তুমি কি বলবে…

পাভেলের মা জোড় পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললেন,

‘না আমি কিছু বলবো না। আমার এখানে ভালো লাগছে না বাসায় চল পাভেল!’

‘মা বাসায় তো যাবো কিন্তু তুমি তো বললে না রিমি কে আমার বউ হিসেবে মানো কিনা?’

পাভেলের মা রিমির দিকে তাকালো রাগ তার মাথায় উঠে যায়।

‘যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর কি বলবো? তুই যখন রিমি কেই চাস আর রিধি কে ডিভোর্স ও দিয়ে দিয়েছিস আমার আর কিছু বলার নাই বাবা! এখন বাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা কর আগে!’

পাভেল তো আরো বেশি খুশি হয়ে যায়।

‘থ্যাঙ্ক ইউ মা!’

রিমি ও মাথা ওড়না দিয়ে পাভেলের মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে। রিমি এতো সব কিছু কিভাবে ভুলে গিয়ে দিব্যি হাসছে তা পাভেলের মা বুঝতে পারছেন না। তবে এটা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন এই রিমি আর যাই হোক না কেন কোনো মানুষ তো নয়। এ স্রেফ জানোয়ার ই। নাহলে যারা তাকে খাইয়ে পড়িয়ে কোলে পিঠে করে মানুষ করলো তাদের কেই আজ পর করে দিলো জাস্ট পাভেলের জন্য! জানোয়ার ছাড়া এমন পাষাণ হৃদয়ের মানুষ কেউ হতে পারে না।

————————–
রিধি আর রিধির বাবা মা বাড়ি ফিরে আসে। কারো পেটে এক ফোঁটা দানা পানি ও যায় নি। রিধি সেই বিকেল বেলা থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। ঘটে যাওয়া সব ঘটনা চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে।এও ভেসে উঠছে পাভেল কিভাবে রিমির সাইড নিয়ে কথা বললো। আর কিভাবে পাভেল তার সাথে চিটিং করে ডিভোর্স করিয়ে নিলো। একজন রিধি কে ঠকিয়েছে আর একজন বেঈমানি করেছে কষ্ট পাচ্ছে রিধি আর হাসছে বেঈমান আর ঠকবাজ রা! আজব না? রিধির মা আসেন রিধি উনাকে জাপটে ধরে পাগলের মতো কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে,

‘মা এসব কি হয়ে গেলো মা? এসব কেন হলো মা! আল্লাহ কেন আমার থেকে সব কেড়ে নিয়ে আমাকে এভাবে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিলেন কেন মা? আমার কোন পাপের শাস্তি আমি পাচ্ছি বলতে পারবেন?’

মেয়ের কান্নায় মা ও ভেঙ্গে পড়ে কাঁদতে থাকেন। এতো কষ্ট হচ্ছে যে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর হাসি খুশি মেয়ে টা কে একটা লম্পটের হাতে তুলে দিয়ে সুখ কেড়ে নিয়ে কতো বড় ভুল তারা করেছেন আজ বুঝতে পারছেন। মেয়ে কে ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে গিয়ে হাসি খুশি টাই কেড়ে নিলেন! নিজেদের মস্ত বড় ভুল টা আজ তাদের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে হাসছে। রিধির মা রিধির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা সরূপ বললো,

‘নিজেকে সামলা রিধি এভাবে ভেঙ্গে পড়লে হবে না। তুই এতো দুর্বল না তা কেন ভুলে যাচ্ছিস তুই?’

‘কিভাবে নিজেকে সামলাবো মা ওরা আমার থেকে সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে! আমার সন্তান আমার সুখ সব! সব কিছু!’

‘আজ তুই কাঁদছিস ওরা হাসছে কাল ওরা কাঁদবে তুই হাসবি!’

রিধি তাও ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে!

‘রিধি আমরা যেটা বুঝতে পেরেছি সেটা তুই এখনো বুঝতে পারিস নি। পাভেল তোর যোগ্য ই না। আমরা তোর অযোগ্য একজন ছেলের কাছে তোকে বিয়ে দিয়ে বড় ভুল করেছে মাফ করে দিস তুই আমাদের!’

‘মা…

‘আমি ঠিক ই বলছি। পাভেলের মতো কুকুর তোকে পাওয়ার যোগ্য না। যোগ্যতা থেকে বেশি কিছু পেলে মানুষ সত্যিই পশুর মতো হয়ে যায় প্রমানিত! তোর জীবনে এই দুঃখ থাকবে না এমন কেউ আসবে যে তোকে খুব সুখে রাখবে দেখিস! শুধু এই খারাপ সময় টা তে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখ!’

‘কিন্তু ওদের কৃতকর্মের ফল তো ওদের ভোগ করতেই হবে!’ ক্ষুব্ধ দৃষ্টি নিয়ে বললো রিধি!

‘তোর কি মনে হয় ওরা তোর সাথে এমন অন্যায় অবিচার করে পার পেয়ে যাবে? কখনো না! সময় টা হোক ওদের শাস্তি টা তুই নিজের চোখেই দেখবি আর হাসবি!’

‘আমি ফ্রেশ হবো মা!’

রিধি ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আয়নায় একবার নিজের চেহারা টা দেখে নেয়। কেমন শুকিয়ে আছে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে রিধি তার নিচে বসে পড়লো। আর কাঁদলো না সে তবে একটা ডিশিসন সে নিয়ে নেয়। এখানে এই শহরে তারা আর থাকবে না! না হলে কিছু চিরচেনা স্মৃতি আর ক্ষত বার বার আঘাত করবে নিজেদের! রিধি তার বাবা মা কে এই কথাটা জানাবে বলে মনস্থির করলো!

———————-

পাভেল রিমি আর পাভেলের মা ও সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসেন।জ্যামে পড়ার কারণে ৫ ঘন্টা লেগেছে তাদের আসতে। পাভেলের মা যেনো হাঁপিয়ে উঠেছেন বারবার রিধির অসহায় মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে একবার রিধি কে দেখতে উনার মন কেমন করছে। পারছেন না উড়ে চলে যেতেন। মন কে আর বেঁধে রাখতে পারলেন না তিনি! রিধিদের বাসায় যাওয়ার জন্য এই সন্ধ্যায় ই রওনা দিবেন ভাবলেন যেই সিড়ি বেয়ে নিচে আসলো ওমনি উনার মাথা টা কেমন ঝিম মেরে আসে আর তিনি সঙ্গে সঙ্গেই মাথা ঘুরে পড়ে যান……!

চলবে________________

#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__১৪
হঠাৎ করে মাথা ঝিম মেরে উঠায় পাভেলের মা মাথায় হাত দিয়ে সেখানেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পাভেল সেটা দেখতে পেয়ে দৌড়ে নিচে এসে দেখে তার মা বেহুঁশ হয়ে গেছে।

‘রিমি? কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি এদিকে আসো! মা এখানে অজ্ঞান হয়ে গেছে!’

পাভেল ডাকছে শুনে রিমি ও তাড়াহুড়ো করে নিচে আসতে গিয়ে সিড়ি থেকে পা আচমকা হোচট করে নিজেই পড়ে যায়। পাভেল বুঝতে পারছে না মা কে দেখবে নাকি রিমি কে! পাভেল এবার দৌড়ে রিমির কাছে গেলো। পায়ে ভালো ভাবেই ব্যাথা পেয়েছে রিমি। ফলে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। মনে হচ্ছে পা টা ভেঙ্গেই গেলো।

‘রিমি ব্যাথা পেয়েছো?’

‘হুম মনে হচ্ছে পা টা ভেঙ্গেই গেছে! আল্লাহ গো….’

‘কি বলো এসব রিমি? দেখি আমাকে ধরে দাঁড়াও তো’

রিমি পাভেলের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়াতে নেয় আবার নিচে পড়ে যায়। ব্যথায় ‘মা..’ বলে ছোট করে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে। পাভেলের অবস্থা নাজেহাল। বউ কে সামলাবে নাকি মা কে! বেচারার মুখভঙ্গি দেখার মতো হয়েছে। আর কোনো উপায় না পেয়ে পাভেল রিমি কে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে যায়। বিছানায় শুইয়ে দেয়।

‘তুমি এখানে থাকো আমি মা কে দেখছি!’

‘মার কি হয়েছে?’

‘জানিনা মা হঠাৎ করে বেহুঁশ হয়ে গেছে আমি দেখছি তুমি এখানে থাকো!’

পাভেল তার মায়ের কাছে এসে দেখে তিনি এখনো ফ্লোরে পড়ে আছেন। ছেলেদের বিয়ের পরের জীবনে কোনো এক‌ অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তে একটা প্রশ্ন সামনে চলে আসে! তোমার কাছে মা বড় নাকি বউ? মনে হচ্ছে পাভেলের জীবনে আজ সেই মুহুর্ত টা এসেই ছিলো। আর পাভেলের উত্তর ছিলো তার কাছে বউ বড়! মা নয়! হায়রে সন্তান! যে মা ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধারণ করে বড় করেছে আজ সেই মায়ের ছেলে হয়ে উনাকেই অবমাননা! উপরওয়ালা সইবেন না!

পাভেল এবার তার মা কে কোলে উঠানোর চেষ্টা করলো একজন এ সম্ভব হচ্ছে না তাও বহু কষ্টে সোফায় শুইয়ে দিতে সক্ষম হয়। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই পাভেলের মা চোখ খুললো।

ওদিকে রিমি এক পৈশাচিক হাসি হাসছে। সত্যি তো এটাই সে পায়ে অতোটা ব্যথা পায় নি। যা পেয়েছে অতি সামান্য, গভীর কিছু নয়।অন্তত হাটতে সে পারতো কিন্তু পাভেল কি করে তা দেখতে এই এক্টিং টা সে করেছে। আর জয় আবার ও তার ই। রিমি বুঝতে পারলো পাভেল তাকে ভালোবাসে। শুধু ভালোবাসা নয় অন্ধের মতোই। তার কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ রিমি তার মা ও নয়। রিমি সারপ্রাইজ’ড হয়ে গেছে জেনো। তার খুশি যেনো আর ধরে না। এতো টাই খুশি লাগছে যে বিছানা থেকে নেমে সে মনের আনন্দে নাচ করা শুরু করেছে। আর গুন গুন করে গান ধরেছে, ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!’

পাভেলের মা চোখ খুলে প্রথমে সব কিছু ঝাপসা দেখছিলো। চোখ মুখ মুছে দেখলো পাভেল তার পাশেই বসা। মাথা টা এখনো কেমন করছে।

‘পাভেল?’

‘মা জ্ঞান ফিরেছে তোমার? কি হলো হঠাৎ করে অজ্ঞান কি করে হতে গেলে তুমি?’

পাভেলের মা মুখ ফসকে বলে ফেললেন,
‘অতিরিক্ত টেনশন আর দুশ্চিন্তা থেকেই হয়তো!’

পাভেল চোখ কুঁচকে মায়ের দিকে তাকায়,
‘অহহো মা কেন এতো টেনশন করছো তুমি? রিমি রিধির থেকে ও অনেক ভালো সত্যি বলছি। তুমি অযথাই টেনশন করছো!’

তিনি পাভেলের কথা শুনে চুপ থাকলেন। ভেতরের ক্ষয়ে যাওয়া হৃদয়ের ক্ষত কিভাবে বুঝবেন পাভেল কে যে রিধির মতো রিমি কখনোই হতে পারবে না। আর রিমি কে তো তিনি মানবেন ই না। রিধি ই সব রিমি কিছু না। আর যাই হোক একটা চরিত্রহীন মেয়ে কে ছেলের বউ বলে মেনে নেওয়া যায় না।

পাভেল তার মা কে চুপ থাকতে দেখে বললো,
‘মা এদিকে তাকাও! আমার কথা টা শোনো!’

ছেলের দিকে তাকালেন তিনি! পাভেল ফের বললো,
‘তোমার কাছে আমার সুখ বড় তাই না? তুমি তো চাও নিশ্চয় আমার সুখি আর হাসি খুশি থাকি। তাহলে রিমি কে মেনে নাও। রিমি কে আমি ভালোবাসি আমি রিমির সাথেই আমি হাসি খুশি আর ভালো থাকবো যা রিধির সাথে একেবারেই নয়। কারণ আমি রিধি কে ভালোবাসি না। প্লিজ মা বোঝো একটু!’

‘তুই রিধি কে কেন বিয়ে করেছিলি তাহলে পাভেল?’

এবার পাভেলের মা রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কথা টা বললেন। পাভেল তার মায়ের এই প্রশ্নের জবাবে ঠিক কোন উত্তর টা দিবে ভাবতে থাকলো। অন্যদিকে তাদের সকল কথা উপর থেকে কান খাড়া করে শুনছে রিমি।

‘কি হলো চুপ করে আছিস কেন এখন?’

‘মা ওই আসলে ওই টা মিসটেক ছিলো!’

‘কিসের মিসটেক পাভেল? তুই আর রিমি তোরা দুজন মিলে রিধির জীবন নিয়ে এভাবে খেলতে পারলি? রিধি কি দোষ করেছিলো আর তোর সন্তান? ওকেও মেরে দিয়েছিস? ভাবতে পারিস তুই কতোটা পাষাণ! তোর কাছে তোর সন্তানের কোনো মূল্য ছিলো না তুই তাকে স্বার্থপরের মতো মেরে দিয়েছিস এখন তো আমার মনে হচ্ছে আমি ও তোর কাছে সেইফ না। যে কোনো সময় তুই তো আমাকে ও মেরে ফেলতে দুবার ভাববি না পাভেল?’

পাভেল মায়ের কথায় গুলো শুনে চুপসে গেলো। নিজের মা কে নিজেই মেরে ফেলার মতো দুঃসাহস তার কখনো হয় নি। ভাবনায় ও ছিলো না এমন কিছু। পাভেল আঁতকে উঠলো,

‘মা তুমি এসব কি বলছো?’

‘আমি যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি!’

‘না মা এইসব আর কখনো বলো না প্লিজ। আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। রিধির সাথে কাজ টা আমি ঠিক করিনি কিন্তু আমার সন্তান ওকে তো আমি মারিনি মা!’

‘তুই না মারলে কে মেরেছে তোর বউ রিমি?’

রিমি উপর থেকে সব খুব ভালো করে শুনছে আর সামনে তার সাথে কি কি করবে পাভেলের মা সেটা নিয়ে আগে থেকেই ভাবতে শুরু করে দিয়েছে অলরেডি। তবে এবার তার কথায় উঠায় পাভেল কি জবাব দেয় তা জানতে বেশ উৎসুক রিমি!

‘না মা আমি বা রিমি কেউ ই এই কাজ টা করিনি!’

‘তাহলে কে করেছে? রিধির তো সব ঠিক ছিলো তাহলে হঠাৎ করে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে কি করে আমাকে বল তুই?’

‘মা যা হয় ভালোর জন্য হয় জানো না। আমরা কেউ ই মারিনি। প্রকৃতি ই এটা করেছে হয়ছো কারণ তিনি ও হয়তো চাচ্ছিলেন না আমি রিধির সাথে থাকি। প্রকৃতি চাইছিলেন আমি আর রিমি এক হই আর সুখে থাকি!’

‘নিজেদের দোষ প্রকৃতির উপর চাপিয়ে দিচ্ছিস? প্রকৃতি এই ঘোর মিথ্যা অপবাদ সইবেন না কিন্তু পাভেল!’

‘মা বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি!’

ছেলের সাথে কথা কাটাকাটি তে না পেরে পাভেলের মা কষ্ট করে উঠে দাঁড়ান। একটু আগেই মনে হচ্ছিলো শরীরে শক্তি নেই এখন মনে হচ্ছে পুনরায় তিনি শক্তি ফিরে ফেলেন। পাভেলের সাথে আর এক বিন্দু ও কথা বলার ইচ্ছা নেই তাই হয়তো শক্তি আপনাআপনি চলে এসেছে।

‘তোর যা ইচ্ছে তাই কর আমাকে বলতে আসিস না!’

পাভেলের মা কে আসতে দেখে রিমি দৌড়ে রুমে গিয়ে শুয়ে থাকে। পাভেলের মা তার রুমে চলে যায়। পাভেল মাথায় হাত দিতে বসে নিরুপায়ের ন্যায় বসে আছে।

রিমি এতো টুকু বুঝতে পেরেছে পাভেলের মায়ের মন গলাতে হবে। মহিলা অতোটা সুবিধার নয় তাই তেল মেরে একটু দেখতে হবে। কিন্তু এখন তো তার আবার এক্টিং শুরু করার কথা ছিলো কিন্তু তা আর হলো না। রান্না করতে যেতে হবে। তাই রিমি নিজেই নিচে যায়। পাভেল রিমি কে আসতে দেখে চোখ বড় বড় একবার রিমির বাম পায়ের দিকে তাকালো। রিমি পাভেলের তাকানো দেখে হেসে বললো,

‘একটু তেল মালিশ করে দিয়েছে ব্যথা সেরে গেছে!’

পাভেল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,
‘থ্যাঙ্ক গড। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!’

‘ধুর বোকা! আমি একদম ঠিক আছি!’

—————————-

ড্রয়িংরুমে রিধি আর তার বাবা মা বসা। রিধি ব্যতিত সকলের চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। রিধির মা হঠাৎ বললো,

‘রিধি তুই না কি বলতে চেয়েছিলি?’

‘হুম।’

‘তো এখন বল কি বলবি!’

‘মা আমরা এই শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবো!’

রিধির বাবা মা চমকালেন না একটু ও। কারণ তারা ও এরকম কিছু একটা ভেবে রেঝেছিলেন।

‘এখানে থাকলে পাড়া প্রতিবেশী সবাই অনেক বাজে কথা বলবে আমাদের উস্কানি দেবে। জানেন তো গোপন কথা বাতাসের আগে ছড়ায়। রিমির কথা ও ছড়াতে দেরি হবে না। তখন এই‌ পরিবেশে এখানে আমরা ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না। সবাই আমাকে বলবে কিরে নিজের স্বামী কে খুইয়ে বোন কে দিয়ে এসেছিস! ইত্যাদি আরো নানান কিছু। তার চেয়ে বরং আমরা দূরে কোথাও চলে যাই। সেখানে আর যাই হোক একটু শান্তিতে নিশ্বাস তো নিতে পারবো!’

‘ঠিক বলেছিস। আমরাও ভাবছিলাম!’

অবশেষে রিধি আর রিধির বাবা মা কথা বলে ঠিক করলো তারা সকালেই অন্যত্র চলে যাবেন। আজ রাতেই সব গুছিয়ে নিতে বলা হলো। কথা মতো সব কিছু গুছিয়ে ও নেয় রিধি! এই বিষাক্ত শহর আর কিছু মুখোশধারী মানুষ কে রাজত্ব করতে দিয়ে তারা ই বিদায় নেবে। তবে রাজত্ব খুব বেশিদিন টিকতে দিবে না। তাদের শেষ অবসান ঘটাবে হয়তো রিধি নয়তো প্রকৃতি…..!

চলবে_________________

রি-চেইক করা হয় নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!