সম্পর্কের দেয়াল পর্ব-৩+৪

0
469

#সম্পর্কের__দেয়াল
#তৃতীয়__পর্ব+ চতুর্থ পর্ব
|#Writer_Anahita_Ayat|
এ যেনো মাথার উপর আকাশ টাই ভেঙ্গে পড়লো কারণ রিধি মা হতে চলেছে। ঠিক এই খবর টা শোনার পর তার খুশির জোয়ার ভেঙ্গে যাওয়ার কথা ছিলো। রিধি কল্পনা করেছিলো কথাটা সরাসরি পাভেল কে সে বলবে না। বলবে,
‘অফিস থেকে আসার সময় এক জোড়া জুতো নিয়ে আসবা। যাতে পু পু শব্দ করবে!’ ব্যাস আর কিছু বলা লাগবে না পাভেল বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকাবে। আর খুশিতে রিধি কে কোলে নিয়ে বলবে,
‘রিধি এ কি বললে তুমি আমায়?’

আরো কতো কি কিন্তু হলো তার উল্টো টা। সত্যি ই মানুষ কল্পনায় বেশি সুখী, বাস্তবে নয়। মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। প্রকৃতি নিজের মতো করেই সব কিছু করতে ভালোবাসেন। হয়তো বা প্রকৃতি কারো প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাস ভালোবাসা আর সুখ এই জিনিস গুলো কখনো ‘বেশি’ পছন্দ করেন না! যথাযথ তেই ঠিক আছে অতিরিক্ত কোনো কিছুই মোটেও ভালো নয়। কয়েক দিন আগে প্রেগন্যান্সির টেস্ট করতে গিয়েছিলো রিধি। যা আজকে এতো সব কাহিনী দেখার পর বেমালুম ভুলে ছিলো। রিধির পরিচিতি একজন ডাক্তার মায়ার কাছেই সে গিয়েছিলো। মায়া ই রিধি কে খবর টা দিয়েছে। ফোন কাটার আগে তিনি হেসে হেসে বললেন,

‘রিধি পাভেল কে বলো মিষ্টি পাঠিয়ে দিতে! আমার আবার ডায়বেটিস নেই জব্বর খাওয়া যাবে বুঝলা হাহাহা!’

মায়ার কথায় রিধি স্মিত হাসলো শুধু। মুখ টা শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে। নিজের ডান হাত টা অজান্তেই পেটে চলে গেলো। আজ থেকে সে আর একা নয় তার ভেতরে বেড়ে উঠছে আরো একটা ছোট্ট প্রাণ। রিধি শখের বসে নাম ও ঠিক করে রেখেছিলো। রিধির ‘রি’ আর পাভেল এর ‘পা’ =রিপা। সব কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে। রিধি নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে,

‘আচ্ছা আমি কি পাভেল কে কম ভালোবেসেছিলাম? ওকে ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি ছিলো আমার? নাকি তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসো নি! শুধু ব্যবহার করছো? পুরুষ মানুষ শুধুই মেয়েদের কে চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহার করে? না না পুরুষ তো আমার বাবা ও। পার্থক্য হলো আমার বাবা বীরপুরুষ আর পাভেল একটা কাপুরুষ। এ কেমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেললে তুমি আমাকে পাভেল! না পারছি তোমার ঐ নোংরা কাজ কে মানতে না পারবো এই ছোট্ট প্রাণ কে হেসে গ্রহণ করতে! কি করবো আমি বলতে পারো?’ মনে মন

—————–
হঠাৎ করে এই রাতের মধ্যেই কেন মা আসছে এই বিষয় টা খটকা লাগছে রিমির। তার উপর সমস্যা ও হয়ে যাবে। যতদিন মা থাকবে পাভেলের কাছে ও ঘেঁষা যাবে না। কোনো ভাবে যদি এসব দেখে বা জানতে পারে তাহলে নির্ঘাত তাকে কেটে ফেলবে এটা নিশ্চিত রিমি।

‘ঐ বুড়ি টা কেন যে আসছে বুঝি না! কখনো আমার ভালো চায় নি। হাহ চাইনেই বা কেন আমি তো ঐ বুড়ির কেউ নই! উচ্চবিত্ত পরিবার আর ছেলে সুদর্শন দেখে পাভেলের কাছে বিয়ে দিয়েছে রিধি কে অথচ এটা রিধি ডিজার্ব ই করে না। আমি রিধির থেকে দেখতে হাজার গুন সুন্দর এটা আমার প্রাপ্য ছিলো কিন্তু উনি অন্যায় বিচার করেছেন। আমি ও যা আপোসে পাবো না তা কেড়ে নিবো। হোক না জোড় করে! তাতে কি!’ মনে মনে

পাভেল কে পছন্দ করেছিলো রিমি। রিধির সাথে বিয়ে টা আটকাতে বহু চেষ্টা করেও সে সফল হয়নি। সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য জানিনা বিয়ে টা হয়েই যাই। রিমির তখন মায়ের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ। পুরোনো সব কিছু খুঁজতে গিয়ে জানতে পারে রিমি তাদের মেয়ে ই না। রিমি পরিচয়হীন। তখন রিমির অন্য মানুষ হয়ে যায়। ভুলে যায় সাধারণ জ্ঞান ও। অথচ রিধির বাবা মায়ের ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো না রিমির জন্য।

রিমি মনে মনে এসব বিড়বিড় করছিলো এমন সময় পাভেল ওর রুমে ঢুকে পড়ে।
‘কি ব্যাপার সুন্দরী কি ভাবছো?’

‘ঐ বুড়ি টা আসছে!’

‘কে?’

‘আ্ ম্ মানে আম্মু আসছে!’

‘কিহ…. কখন?’

‘এখন ই। ছাড়ো প্লিজ কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে!’

‘আচ্ছা ছেড়ে দিলাম’

‘তুমি রিধি কে কবে ডিভোর্স দিবা বলতো?’

‘সঠিক সময় আর সুযোগের অপেক্ষায় ই তো আছি মেরি জানেমান!’

রিমি পৈশাচিক হাসি হাসলো। রাত ৯ টায় কলিংবেল বেজে উঠল। পাভেলের মা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দুই বেয়ান ভালো মন্দ কথা বার্তা বলে। রিধি মা কে দেখে জোড় পূর্বক স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে।

‘এতোক্ষণ দেরি করলে কেন মা?’

‘রওনা দিয়ে একটু দেরি হয়ে গেছিলো। তোদের দেখতে মন ছুটেছে তাই চলে এলাম।’

পাভেলের মা হেসে বললো,
‘ভালো একটা কাজ করেছেন বেয়ান! কটা দিন থেকে যাবেন!’

‘আসলে তা তো হবে না। রিমির বিয়ের জন্য প্রস্তাব এসেছে তাই কাল ওকে নিয়ে যাবো।’

‘তার মানে বেয়ান আপনি এই জন্য ই এসেছেন?’

‘হাহাহা! একদিকে ভাবলাম আপনাদের দেখে ও যেতে পারবো রিমি কে ও নিয়ে যেতে পারবো দুই কাজ একসাথেই হয়ে যাবে তাই আসা আর কি!’
————–

রিধির মা রুমে বসে আছেন। রিধি হু হু করে কাঁদতে শুরু করে।
‘একদম কাঁদবি না। তোর বাবা কে আমি সব বলেছি। তোর বাবা বলেছে রিমি কে বিয়ে দিয়ে দিবে তাহলে সব সমস্যার সমাধান হবে। বিয়ে কোনো খেলার জিনিস না যে বললি আর হয়ে গেলো। আমরা মেয়েরা স্বামী ঘরে যাই লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে আর বের হই সাদা কাপড়ে মুড়ে। বিয়ের পর মেয়েদের এটাই চাওয়া। এই তো মেয়েদের জীবন। পাভেল কে তোর কাছে ক্ষমা চাইতে বলবো আর ভবিষ্যতে ও যাতে এসব কাজ না করে! তুই তো ওকে ভালোবাসিস ভালোবাসলে ক্ষমা করা ই যায়!’

‘মা আমি সেজন্য কাঁদছি না!’

‘তাহলে?’

‘রিধি তার পেটের দিকে ইশারা করলো। রিধির মা যখন সব টা বুঝতে পারলেন উনার এতোসব চিন্তার মাঝে ও ঠোঁটের কোণে এক ফালি হাসি ফুটে উঠলো। উনার খুশি যেনো ধরে না। একে একে সবাই জানলো রিধি মা হতে চলেছে। পাভেলের মা খুব খুশি।

‘শোন রিধি এবার থেকে একদম কোনো কাজ করবি না। নিজের যত্ন নিবি আর ভালো মতো খাবি। এছাড়া আর তোর কোনো কাজ নেই বুঝেছিস?

রিধির মা হাসে। শুধু খুশি হতে পারলো না রিমি। ব্যাপার টা তার খুব একটা হজম হলো না।

পাভেল ও ভাবছে এই মুহুর্তে এটা কি হলো! সে চাচ্ছে না রিধি মা হোক! মোটকথা রিধিকেই তার চাই না! পাভেল ও রিধির সাথে কথা বলতে চাচ্ছে একান্তে….

রাতের খাবার শেষ করে রিধির মা রিমি কে ডাকতে যান!

‘রিমি তোর সাথে আমার কথা আছে একটু এদিকে আয়!’

‘হ্যাঁ মা বলো’

এরপর তিনি যা বললেন তা শুনে রিমি একটা বড়সড় ধাক্কা খায়….উনি বলেছিলেন,,,,,,!

রিধির মা রিমি কে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন,
‘কাল তোকে আমার সাথে যেতে হবে!’

রিমি অবাক হয়ে বললো,
‘কেন মা?’

‘কাল তোকে দেখতে আসবে!’

‘কিহ…. কি বলছো এসব!’

‘ঠিকই বলছি। ছেলে ভালো পরিবার ও ভালো নিজেদের কোম্পানি আছে। ছেলে নিজেই তার ব্যবসা সামলায়।আর একটা বোন ছিলো বিয়ে দিয়ে দিয়েছে!তোর অপছন্দ হবে না!’

রিধি ও তাদের কাছে এসে রিমি কে বললো,
‘হ্যাঁ, বাবা ঠিক মতো খোঁজ খবর নিয়েছে। তুই যেমন ছেলে চেয়েছিলো ইমন জুবায়ের তেমন ই একজন!’

‘তার মানে আপু তুমি ও জানতে এই ব্যাপারে?’

রিধি কে কিছু বলতে না দিয়ে তার মা বললেন,
‘ও সম্পর্কে তোর বড় বোন। নিশ্চয় ছোট বোনের বিয়ে সম্পর্কে ওর জানার অধিকার আছে!’

‘তোমরা যে ছেলের খোঁজ খবর নিচ্ছো আমাকে একবার জানাতে পারতে!’

‘এই তো এখনি জানালাম…

‘কিন্তু…

‘কোনো কিন্তু নেই কাল আমার সাথে যাচ্ছিস শেষ কথা! রিধি ঘুমাতে যা!’

রিধি আর তার আম্মু চলে যায়। রিমি রুমে গিয়ে সামনে থাকা চেয়ার টায় সজোরে লাথি মেরে ফেলে দেয়। একে একে সব প্ল্যান এ পানি ঢালা হচ্ছে তার। রিধি মা হতে চলেছে তার উপর কাল তাকে দেখতে আসছে রিমি তো না ও করতে পারবে না! কি হবে এবার? টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে গেছে রিমি। কিছু একটা তো তার করতে হতোই! কিন্তু সামনে এগোনোর আগে হোচট কেন খাচ্ছে বুঝে উঠতে পারছে না সে! রিধির বাচ্চা টা নষ্ট করে দিতে হবে এ ছাড়া আর উপায় নেই! এ সম্পর্কে পাভেলের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো রিমি কিন্তু এখন কিভাবে কথা বলবে কোনো উপায় নেই! সময় হবে কিনা কে জানে!
——————–
রিধি রুমে আসে। পাভেল ও রিমির মতোই সব চিন্তা করতে করতে রুমের এপাশ ওপাশ পায়চারী করছিলো। রিধি কে আসতে দেখে বেশ চমকে বললো,

‘তুমি আসছো?’

‘হ্যাঁ কেন খুঁজছিলে নাকি?’

‘হ্যাঁ মানে না!’

‘মানে মানে না করে বলো!’

পাভেলের মা রিধির প্রেগন্যান্ট হওয়াতে খুব খুশি ছিলেন। এর মধ্যে রিধি কে বাচ্চা নষ্ট করতে বলার কোনো সোজা শক্তপোক্ত কারণ পাভেল দেখাতে পারলো না। কারণ মাকে সে ভয় পায়। রিধি যদি পাভেলের কথা টা তার মাকে গিয়ে বলে ফলে তুলকালাম কান্ড ঘটে যেতে পারে।কারণ রিধি কে তার মা খুব ভালোবাসে। সব কিছু ভেবে পাভেলের আর সাহসে কুলালো না রিধি কে বাচ্চা নষ্ট করতে বলার।

রিধির মন জ্ঞানে পাভেল এরকম কথা বলবে ভাবনাতে নেই। কিন্তু পাভেলের প্রতি আস্থা বিশ্বাস সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে। রিধি আর সংসার করতো না কিন্তু শাশুড়ি মায়ের ভালোবাসা নাতি নাতনির মুখ দেখবে ভেবে হাসি খুশি মুখ সব অদ্ভুত মায়ায় ফেলে দিচ্ছে। তাছাড়া ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ও মাফ করে দেয় পাভেল তো মানুষ মাত্র। নিজের ভুল স্বীকার করে পাভেল অনুতপ্ত হলে রিধি ভাবলো ক্ষমা করে দেবে। পাভেল কে গম্ভীর দেখে রিধি বললো,

‘কি ব্যাপার কিছু বলছো না কেন?’

‘না কিছু না!’

পাভেল চুপ রিধি পাভেলের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘পাভেল?’

‘হ্ হ্যাঁ?’

‘আমি মা হওয়াতে তুমি খুশি হও নি?’

‘না না এমন না! আমি খুশি হয়েছি তো! এখন ঘুমাও!’

রিধি আসলেই ক্লান্ত ছিলো শুয়ে পড়তেই ঘুমের দেশে চলে যায়। রিমির ঘুম উধাও। পাভেল কে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে ভেবে চোখ বন্ধ করতে পারছে না। তার উপর যেভাবে বলছে ছেলের ও তাকে পছন্দ হবে এতে সে নিশ্চিত। বলা বাহুল্য রিমি নিজের সৌন্দর্য নিয়ে ভীষণ গৌরব আর অহংকারের করে। দরজায় কেউ নক করলো রিমি বললো,

‘কে?’

‘আমি দরজা খোল। তোর সাথে ঘুমাবো!’

মেজাজ টা চরম খারাপ হয়ে গেলো। পাভেলের সাথে কথা বলার যেই একটু সুযোগ ছিলো তাও একে বারে বন্ধ হয়ে গেলো। নেমে এলো ঘুটঘুটে অন্ধকার।

রিধির মায়ের চোখে ও ঘুম নেই। তিনি ভাবতেও পারছেন না যাকে যত্নআত্তি করে বড় করেছে সেই মেয়ে কে কিনা রিধি কে মারার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। উনার গা জ্বলছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ইচ্ছা করছে এক্ষুনি গলা টিপে দিতে কিন্তু সেটা ও তিনি পারবেন না। কারণ রিধির বাবা বলেছেন বিয়ে দিয়ে দিলে আপদ নিজের ঘাড় থেকে বিদায় হবে।

তাছাড়া ইমন জুবায়ের এর পরিবার উচ্চবিত্ত ঠিক আছে তবে পরিবারে ইমনের মা বদ মেজাজি আর ভীষণ রাগি মহিলা। ইমের সাথে রিমির বিয়ের পর ও যদি তার এই সব আকাম করে থাকে ইমনের মা জানতে পারলে রিমি কে তো আর এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না। তাছাড়া রিধির মেয়ে মানুষ ইমন তো আর না। তিনি আল্লাহ আল্লাহ করছেন যেনো সব ঠিকঠাক মতই হয়।

রিধির মা এটাও বুঝতে পারছেন রিমির চোখে ঘুম নাই। ঘুমাচ্ছে না সে। কারণ এতো বছর রিমি কে দেখে আসছে ছোট থেকে বড় করেছে রিমির সব জানা। তাই তিনি বললেন,

‘রিমি ঘুমাচ্ছিস না কেন?’

রিমি কোনো সাড়াশব্দ করছে না।

‘আমি জানি তুই জেগে আছিস!’

রিমি দাঁত মুখ খিচে বললো,
‘তুমি ঘুমাচ্ছো না কেন?’

‘আমি চোর পাহারা দিচ্ছি দেখছিস না?’

রিমি আচমকা এমন কথা শুনে হতভম্ব,
‘ম্ মা্ মানে?’

‘মানে তুই ঘুমাস নি তাই আমার ঘুম আসছে না। এতো চিন্তা ভাবনা না করে ঘুমা! রায় জাগলে চেহারা ভেঙ্গে যায় ব্রণ উঠে!’

ব্যাস হয়ে গেলো চেহারা সৌন্দর্যের কথা শুনতেই কিছুটা দমে গেলো রিমি। তাই আর কথা বাড়ালো না। নিজের চেহারার কিছু হলে যে তার গৌরনে দাগ পড়বে। তাই সে চুপচাপ ঘুমিয়ে যায়। রিধির মা ঘুমোতে পারলো না।

————————
পাবেলের মা রিধি কে কোনো কাজ করতেই দিচ্ছেন না। রিধি মুখ ফুলিয়ে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বসে থাকলো। মুখ খুলে কিছু বলতেও পারছে না। তবে শাশুড়ি মার উপর অভিমান হচ্ছে বটে। রিধি প্রেগন্যান্ট তাই বলে সারাদিন বসে শুয়ে থাকবে? এটা কোনো কথা? রিধি ইচ্ছা করছে গলা ছেড়ে কাঁদতে। শেষে কিচ্ছু করতে না পেরে পেটের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘বাবু তুই এটা কি করলি রে? মা কে সারাদিন এভাবে বসিয়ে রাখতেই আসার খবর পাঠিয়েছিস?’

পাভেলের মা রিধির অবস্থা দেখে মিটমিট হাসছেন। খেয়াল করলেন রিধি নিচের দিকে তাকিয়ে নিজেই যেনো কি বিড় বিড় করছে তাই তিনি এসে বললেন,

‘শুধু কি একা একা বিড়বিড় করবি এই নে এটা!’

রিধি আহাম্মকের মতো পাভেলের মায়ের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

‘এটা কি?’

‘ঝুনঝুনি!’

‘আমি কি করবো?’

‘নে এটা দিয়ে তুই খেল বসে বসে!’.

রিধির হাতে ঝুনঝুনি ধরিয়ে দিয়ে তিনি হাসতে হাসতে চলে যায়। রিধি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আবারো ও নিজের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এটা কেমন বিচার?’ বেচারিরি মুখ খানা দেখার মতো হয়েছে।

পাভেল আজ অফিসে যায় নি ঘরে বসে বসে ল্যাপটপের কি যেনো কাজ করছে। রিধি অন্য রুমে। হঠাৎ কানে এলো রিমি বলছে,

‘আপনি এবার গিয়ে এখানে বসুন আমি রান্না করি!’

পাভেলের মা বসতে চাইলো না। তিনি বললেন,
‘আরে মেয়ে আমাকে এতো দুর্বল মনে করো না হ্যাঁ? শরীরে এখনো যথেষ্ট শক্তি আছে বুঝলা?’

‘হুম বুঝেছি! তাহলে আপনাকে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত বানিয়ে দেই? আপনি তো তা খেতে পছন্দ করেন তাই না?’

‘পারবে?’

‘অবশ্যই!’

‘আচ্ছা বানিয়ে আনো!’

রিমি লেবুর শরবত পুরোপুরি বানিয়ে পাভেলের কাছে গিয়ে বললো,

‘দুলাভাই এটা আপনার আম্মু কে দিয়ে আসুন তো আমার একটু কাজ আছে উপরে ঘরে যাচ্ছি!’

‘ওকে আমি দিয়ে আসছি! রেখে যাও এখানে!’

রিমি রুমে যায় পেছন পেছন এদিক সেদিক তাকিয়ে পাভেলের মা আছে কিনা দেখে রিধি ও উপরে যায়। রিধি নিজের রুমে যাওয়ার আগে রিমির রুমে সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় রিমি মনের খুশিতে নাচছে। আহা কি আনন্দে আকাশে বাতাসে বলে গুনগুন করে গান গাইছে। গান শেষ করে রিমি কিছু একটা বলে উঠলো। রিমির কথাটা ছিলো এরকম!

‘যাও পাভেল সুইটহার্ট মাকে শরবত নয় বিষ খাইয়ে দাও পরমম যত্নে। তোমার মা রিধি কে সরিয়ে আমাকে কখনো মেনে নিবে না তাই তোমার মাকেই আমাদের রাস্তা থেকে সবার আগে সরিয়ে দিলাম হাহাহা!’

পাভেল ততক্ষণে মাকে খাইয়ে দিয়ে বাসা থেকে জরুরী কাজে বের ও হয়ে গেছে। রিধি কথা শুনে চোখ মুখ উল্টে ফেললো। কারণ পাভেল কে চলে যেতে দেখেছে ১০ মিনিটের উপরে হবে। এতোক্ষণ তো শুধু সে রিমির কান্ড দেখছিলো। হায় সর্বনাশ রিধি আচমকা দৌড়াতে দেয়। সিড়ি বেয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখে পাভেলের মা নিচে পড়ে আছে।রিধি মা মা ডাকছে কোনো সাড়াশব্দ নেই। নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখে নিশ্বাস চলছে না। মুখ দিয়ে ফেনা ঝরছে। চোখ উল্টানো এ যেনো মরার আগে ছটফট করার চিহ্ন। ঠোঁট নীল বর্ণ ধারণ করে আছে। বিষক্রিয়ায় এমন হয়েছে! রিধি এসব দেখে সেখানেই “মা” বলে জোড়ে চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়!

চলবে___________________