সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-০৪

0
206

#সম্পর্কের বাঁধন
#_Writer_মারিয়া_
#_Part : 4

জারিফাকে আজ রিলিজ দেওয়া হবে। আবির এসেছে জারিফা কে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আবির হসপিটালের সব কাজ কমপ্লিট করে জারিফাকে নিয়ে জারিফাদের বাসায় চলে আসে।
এখন জারিফা নিজের রুমে বিছানায় বসে আছে। আবির জারিফার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে জারিফার রুমে আসতেই জারিফা বলে ওঠে,
–” কোথায় ছিলে তুমি?”

–” আংকেল, আন্টির সাথে কথা বলছিলাম।”

–” ওহ! আবির!”

–” হুম!”

–” কবিতা আমার ব্যাপারে জানে?”

–” নাহ! আমি কিছু বলি নি। বাবা, মা জানিয়েছেন কি নাহ, আমি জানি নাহ। মনে হয় জানায় নি। আম্মু তোহ এই ব্যাপারে জানেই নাহ। বাবা জানে, বাট মনে হয় বলে নি। কিন্তু কবিতা এতোটুকু হয়তো জানে, আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম নাহ।”

–” ওহ! আবির, আমি জানি নাহ, আমি তোমাকে কি বলবো, একবার মনে হচ্ছে তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো নাহ। আর একবার মনে হচ্ছে তোমাকে যদি আমি পেয়ে যাই, তাহলে ঐ বাচ্চা মেয়েটার কি হবে?”

–” আমিও জানি নাহ জারিফা। একটা কঠিন ধাঁধার মাঝে আছি, কি করা উচিত তাও বুঝতেছি নাহ। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।”

–” আবির! আমি তোমাকে ভালোবাসি আবির। পারবো নাহ বাঁচতে, কি করবো আমি?”
কথাটাহ বলেই জারিফা কান্না করে দেয়। আবির জারিফার সামনে গিয়ে বসে জারিফার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” Please, Jarifa! Don’t do this.”

জারিফা কিছু নাহ বলেই আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবির জারিফার মাথায় হাত রাখে। জারিফা আবিরের বুকে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে।

★★★
কবিতা মায়া চৌধুরীর রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে। কিছু সময় পর রুমের দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” দরজা খোলা আছে।”

কবিতা দরজা খুলে ভেতরে আসতেই মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আরে তুই। আই ভেতরে আই।”

–” মামনি! তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?”

–” হুম! বল।”

–” মামনি! আমি আগামীকাল থেকে স্কুলে যেতে চাই।”

–” ওহ! এই ব্যাপার। যেতে চাস তোহ যাবি৷ আচ্ছা! আমি আবিরকে বলে দিবো, আগামীকাল থেকে তোকে যেনো স্কুলে নিয়ে যায়।”

–” সত্যি?”

–” হ্যা!”

–” Thank you mamoni!”
কথাটা বলেই কবিতা মায়া চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে। মায়া চৌধুরী কবিতার মুখ ধরে কপালে একটা চুমু একে দেয়।

★★★
আবির জারিফার বাসা থেকে সোজা অফিস চলে যায়। অফিসে যেতেই একজন স্টাফ এসে বলে তার বাবা জিহাদ চৌধুরী তার কেবিনে যেতে বলেছে। আবির গিয়ে জিহাদ চৌধুরীর কেবিনে ঢুকতেই জিহাদ চৌধুরী আবিরকে দেখে বলে ওঠে,
–” তুমি এসেছো, তাহলে? তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। বসো।”

আবির জিহাদ চৌধুরীর অপোজিট চেয়ারে বসতেই জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কোথায় ছিলে?”

–” মানে?”

–” মানে, এত লেট হলো অফিস আসতে তাই জিজ্ঞাসা করছি। বাসা থেকে নাকি অনেক আগেই বের হইছো?”

–” তুমি কি আমার উপর নজরদারি করছো? আর কি চাও বলো তোহ? যাহ যাহ চেয়েছো সবই তোহ করেছি। আর কি করার আছে? ঠিক আছে, কোথায় ছিলাম এইটা জানতে চাচ্ছো? তাহলে শোনো আমি জারিফার বাসায় ছিলাম।”

–” তুমি আবার জারিফার কাছে গেছো? একবারও কবিতার কথা ভাবছো নাহ?”

–” কি ভাববো আমি? আমার কথা কেউ কি ভেবেছো। স্পেশালি তুমি, ভেবেছো আমার কথা? আর কেউ নাহ জানুক, তুমি তোহ জানতে আমার একটা পছন্দ আছে। তাও তুমি তোমার বন্ধু কে দেওয়া কথা রাখার জন্য আমাকে তার মেয়ের সাথে জোর করে বিয়ে দিলে। কতই নাহ ভাবো আমাকে নিয়ে তুমি!”
কথাগুলো বলে আবির নিজের কেবিনে চলে যায়।

★★★
বেশ রাত হয়ে গেছে। কবিতা নিজের রুম গুছিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে আবির এসেছে। আবির কে দেখতে একটু কেমন কেমন যেনো লাগছে। কবিতা আবিরের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?”

–” নাহ! ঠিক আছি।”

–” একটু লেবুর শরবত করে দিবো?”

–” নাহ!”

–” ভালো লাগবে খেলে করে দিবো?”

–” বললাম তোহ নাহ।”
আবির চেচিয়ে বলে ওঠে। আবিরের এরকম ভাবে কথা বলাতে কবিতা ভয়ে কেঁপে উঠে। আবির এগিয়ে এসে কবিতার কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কেনো এসছো আমার লাইফে? আমার লাইফ টাহ হেল করে দিয়েছো তুমি। আর সহ্য হচ্ছে নাহ আমার। Please leave me alone.”

আবির কথা গুলো বলে কবিতাকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। কবিতা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আবিরের যাওয়ার দিকে। কিছুই যেনো বুঝতে পারছে নাহ। কবিতা বারান্দায় চলে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” বাবা, তেমার খুশির জন্য ওনি বিয়েতে রাজি নাহ এইটা জেনেও আমি এতো কম বয়সে এই বিয়ে টাহ করেছি। কিন্তু আমি কি করে এই মানুষ টাহ কে, আমার দিকে ফেরাবো। ওনি বিয়েতে রাজি কেনো ছিলেন নাহ, সেইটায় তোহ আমার জানা নাই।”

আবির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রুমে কবিতা নেয়। হয়তো নিচে গেছে, এইটা ভেবে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ব্লু সেডের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে, সোফায় শুয়ে পড়ে। বেশ কিছু সময় পরও কবিতা রুমে নাহ আসলে, আবির রুম থেকে বেরিয়ে নিচে সব জায়গায় দেখে আসে, কিন্তু কোথাও কবিতা নেই। আবিরের এইবার মাথায় একটা চিন্তা চলে আসে। মেয়ে টাহ গেলো কই? সেই সময় মেয়েটাহকে ওরকম ভাবে বকা দেওয়া হয়তো ঠিক হয় নি। বাচ্চা একটা মেয়ে। আবির কি মনে করে যেনো বারান্দায় যেতেই দেখে কবিতা বারান্দায় ডিভানের উপর ঘুমিয়ে গেছে। আবির কবিতার সামনে বসে পড়ে, তাকিয়ে থাকে কবিতার মুখের দিকে। চাঁদের আলো এসে কবিতার মুখের উপর এসে পড়েছে, এতে যেনো কবিতার সৌন্দর্য হাজার গুন বেড়ে গেছে। আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” এ কোন ধাঁধায় এসে পড়লাম আমি? কি করবো আমি? এ তোহ নিতান্তই একটা বাচ্চা মেয়ে। নিজের বাবার খুশির জন্য, এই বিয়ে করেছে। আবার ঐদিকে জারিফা। তার ও তোহ কোনো দোষ নাই। আবার কবিতা, এই বাচ্চা মেয়েটার ও তোহ কোনো দোষ নাই।”

আবির কবিতাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

★★★
আবির অফিস যেতে যাবে তখনই পেছন থেকে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আবির!”

–” হুম! আম্মু বলো।”

–” বলছি যে কবিতাকে সাথে করে নিয়ে যা।”

–” কোথায় নিয়ে যাবো?”

–” ও আজ থেকে স্কুলে যাবে। যাহ নিয়ে যাহ।”

–” অন্য গাড়িতে ড্রাইভার নিয়ে যাবে। আমাকে অফিস যেতে হবে।”

–” এইসব কি আবির? ড্রপ করে দিতে কত সময়ই বাহ লাগবে? যাহ নিয়ে যাহ।”

–” উফ! আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসতে বলো।”
মায়া চৌধুরী কবিতাকে নিয়ে আসতেই আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে যেনো চোখ সেখানেই আটকে যায়। কবিতা স্কুল ইউনিফর্ম পরা সাথে চুল গুলো দুই বিনুনি করা। দেখতে পুরো একটা বাচ্চার মতো লাগছে। কবিতা এগিয়ে এসে আবিরের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” চলুন।”

কবিতার কথায় যেনো আবিরের ধ্যান ভাঙে। আবির কিছু নাহ বলে কবিতাকে স্কুলে পৌছে দিয়ে চলে যায়।

★★★
কেটে যায় বেশ কিছু দিন। গড়িয়ে যায় সময়। এগিয়ে চলে জীবন। কবিতা এখন রোজ স্কুলে যায়, আবিরের সাথে দুষ্টামি, বাবা মাকে মাঝে মাঝে দেখতে যাওয়া, বাকি সবার সাথে সময় কেটে যায়। আবির এখন কবিতার করা দুষ্টুমি গুলো কেমন জানি ভালো লাগে, দিনের যেকোনো একটা সময় জারিফাকেও দেওয়া লাগে। এইভাবেই চলছে দিন।
সন্ধ্যায় কবিতা আলমারি তে জামা কাপড় গুছিয়ে রাখছে। হঠাৎ চোখ যায় সেই ডায়েরির উপর। কবিতা ডাইরিটা হাতে নিয়ে দেখতে পায় সেই লিখাটাহ, #_সম্পর্কের_বাঁধন। কবিতা কৌতুহল প্রবন ডায়রি টাহ খুলতেই দেখতে পায়, একটা মেয়ের ফটো। ফটো টাহ দেখতেই কবিতার ভ্রু কুঁচকে যায়। উল্টোতে থাকে ডায়রির পাতা।

চলবে……………🌹