সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-০৫

0
203

#সম্পর্কের বাঁধন
#_Writer_মারিয়া_
#_Part : 5

রাতে আবির বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আবির সোফায় বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আজ বাসায় এসে এখনো কবিতাকে একবারও দেখে নি, অন্যদিন তোহ বাসায় আসা মাত্রই বকবক করতে করতে কান খেয়ে ফেলে। আজ কই গেছে এই মেয়ে। আবিরের যেনো আর ল্যাপটপ চালাতে ভালো লাগছে নাহ। ল্যাপটপ পাশে রাখতেই দেখে কবিতা এসেছে। আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কোথায় ছিলা এতো সময়?”

–” কেনো?”

–” অন্য দিন তোহ একদম আসার সাথে সাথেই পাশে এসে বকবক শুরু করো। কিন্তু আজ এতো সময় পর।”

–” মিস করছিলেন আমাকে?”

–” আমি কেনো মিস করতে যাবো?”

–” তাহলে জিজ্ঞাসা করছিলেন কেনো?”

–” অন্যদিন তোহ এসেই দেখা যায় আপনাকে। কিন্তু আজ দেখতে পাই নি। তুমি আসো নি, তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম। এর বেশি কিছু নাহ।”
কথাটাহ বলেই আবির বারান্দার দিকে চলে যেতে যায়।
–” কাউকে ভালোবাসেন?”

কবিতার কাথা শুনে আবির দাঁড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মানে?”

–” মানে, আপনার বিয়েতে রাজি নাহ হওয়ার কারন কি কাউকে ভালোবাসেন তাই?”

–” কবিতা, কি বলতে চাইছো?”
কবিতা আলমারির ভেতর থেকে একটা ফটো আর একটা ডায়রি এনে আবিরের সামনে এগিয়ে দেয়। আবির ফটো টাহ হাতে নিয়ে দেখে জারিফার ফটো। কবিতা ডায়রিটাহও এগিয়ে দেয় আবিরের দিকে। ডায়রি টাহ দেখতেই আবির চমকে উঠে। কবিতা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মেয়েটাহ অনেক সুন্দর দেখতে!”

–” কবিতা। আসলে!”

–” আমি সব বুঝতে পেরেছি। আসলে, আমার আব্বু তোহ অনেক অসুস্থ, এখন যদি আমি চলে যাই, তাহলে আমার আব্বুকে বাঁচাতে পারবো নাহ। আব্বু নিতে পারবে নাহ। আমি কখনো আপনার কাছে কোনো প্রকার অধিকার চাইতে আসবো নাহ। আমাকে একটু সময় দেন, তারপর আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন, দিয়েন। কিন্তু এখনি এইসব জানাজানি হলে, আমার আব্বু আরও অসুস্থ হয়ে যাবে। হাত জোর করছি আমি। প্লিজ!”
কথা গুলো বলেই কবিতা রুম থেকে বের হয়ে যায়। আবির পেছন থেকে কয়েকবার কবিতাকে ডাকলেও, কবিতা নাহ শুনেই চলে যায়। আবিরের কেমন জানি, কষ্ট হতে থাকে। আবির বারান্দায় গিয়ে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? কবিতা কে তোহ একটা সময় আমাকে বলতেই হতো। ভালোই হয়েছে ও জেনে গিয়েছে। কিন্তু আমার কেনো এমন লাগছে। কি হচ্ছে এইসব আমার সাথে? কেমন যেনো খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।”

অনেক সময় চলে গেছে কিন্তু কবিতা রুমে আসে নাহ। আবির রুম থেকে বেরিয়ে নিচে তাকাতেই দেখে কবিতা ড্রয়িংরুমে সোফায় শুয়ে আছে। আবির নিচে নেমে আসে। আবিরকে আসতে দেখে কবিতা তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে নেয়। আবির কবিতার সামনে বসতেই দেখে কবিতার চোখ কাপছে। আবিরের বুঝতে অসুবিধা হয় নাহ, যে কবিতা এখনো ঘুমাই নি। আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কবিতা! কবিতা! কবিতা, রুমে চলো। এখানে ঘুমিয়েছো কেন? কবিতা আমি জানি তুমি জেগে আছো। কবিতা আমি তোমাকে সব বলবো, আমার আরও আগে বলা উচিত ছিলো, কিন্তু তুমি তোহ অনেক ছোট তাই বলতে পারি নি। আর তুমি ডিভোর্স, আচ্ছা যাই হোক, এখন রুমে চলো। আচ্ছা ভালো কথায় যাবা নাহ বুঝছি। ওয়েট!”

আবির আর কিছু নাহ বলে কবিতাকে কোলে তুলে নেয়। কবিতা চমকে চোখ খুলে আবিরের দিকে তাকায়। আবির সোজা কবিতাকে নিয়ে রুমে গিয়ে কবিতাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে, রুমের দরজা আটকে দেয়। কবিতা এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। আবির কবিতার দিকে তাকাতেই দেখে, কবিতা তার দিকে তাকিয়ে আছে। আবিরের কাছে কবিতাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। রুমে জ্বালানো ব্লু ড্রিম লাইট টাহ কবিতার মুখের উপর এসে পড়তেই কবিতাকে একটু যেনো বেশি সুন্দর লাগছে। আবির কবিতার দিকে এগিয়ে এসে কবিতার সামনে হাটু ভাজ করে বসতেই দেখে কবিতার চোখ ছলছল করছে। আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কবিতা!”

–” কেনো আনলেন আমাকে এই রুমে।”

–” কবিতা! প্লিজ, আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে। তাই বলে, তুমি ড্রইংরুমে থাকবে এইটা মানতে পারবো নাহ। কারন তোমাকে আমি বিয়ে করে এনেছি, আমার একটা দায়িত্ব আছে তোমার উপর।”

–” শুধু মাত্র দায়িত্বের টানে আমাকে এই রুমে ঠাই দিচ্ছেন?”
আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে আর কিছু নাহ বলে কবিতাকে শুইয়ে দিয়ে কম্বল টেনে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ঘুমিয়ে পড়ো।”

তারপর আবিরও নিজে সোফার উপর গিয়ে শুয়ে পড়ে।

★★★
জারিফা একটা কফি শপে বসে অপেক্ষা করছে আবিরের জন্য। হঠাৎ সামনে কাউকে বসতেই তাকিয়ে দেখে আবির এসেছে। জারিফা একটা মুচকি হাসি দেয়। কিন্তু আবির কে আজ যেনো একটু আনমোনা লাগছে দেখতে। জারিফা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আবির! তুমি ঠিক আছো?”

–” কবিতা সব কিছু জেনে গেছে।”

–” মানে?”

–” মানে, কবিতা আমার ডায়রি টাহ হাতে পেয়ে গেছে। আর ওখান থেকেই সব জেনে গেছে।”

–” ডায়রি? তোমার ঐ ডায়েরি টাহ?”

–” হুম!”

–” তারপর?”
আবির জারিফাকে গতকাল রাতের সব ঘটনা বলে দেয়। জারিফা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” নিজেকে খুব সার্থপর মনে হচ্ছে আবির। নাহ পারছি তোমাকে ভুলে যেতে, আর নাহ পারছি তোমাকে নিজের করে নিতে। বাচ্চা মেয়েটার তোহ কোনো দোষ নেই। আর নাহ, আমার তোমার দোষ আছে। ভালোবেসেছি আমরা একে অপরকে।”

–” পুরো দোষ টাই আমার বাবার। বাবা যদি আমাকে এইভাবে প্রেসার নাহ দিতো তাহলে এতো কিছু হতো নাহ। বিরক্ত লাগছে এখন সব কিছু।”

–” আচ্ছা, একটু শান্ত হও। আর কবিতার সাথে ভালো ভাবে কথা বলো।”

–” জারিফা! আমি কি করবো?”

–” জানি নাহ আবির। কিচ্ছু জানি নাহ। কিচ্ছু নাহ।”
জারিফা আর কিছু নাহ বলে তাড়াতাড়ি কফিশপ থেকে বের হয়ে যায়। আবির কবিতাকে পেছন থেকে ডাকার আগ্রহ টুকুও পায় নাহ।

★★★
কবিতা ড্রইংরুমে বসে বসে টিভি দেখছে। কিছু ভালো লাগছে নাহ কবিতার তাই টিভি দেখাটাহ কেই বেছে নিলো কবিতা। হঠাৎ দরজয় কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতেই দেখে আসিফ। আসিফ কে দেখে কবিতা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আরে ভাইয়া আপনি আসুন, ভেতরে আসুন।”

আসিফ ভেতরে এসে কবিতাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে হালকা হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” কেমন আছো?”

–” জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”

–” আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।”

–” আরে! আসিফ! কখন এলি তুই?”
আসিফ আর কবিতা কারো আওয়াজ পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী। আসিফ মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মামানি! চলে এলাম।”

–” বেশ করেছিস। যাহ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”

–” হুম! কবিতা!”

–” জি ভাইয়া!”

–” আমাকে এক কাপ কফি দিতে পারবা?”

–” অবশ্যই! কেনো নয়।”

–” ওকে! তাহলে তুমি কফিটাহ বানিয়ে আমার রুমে নিয়ে আসো। ওকে?”

–” হুম!”
আসিফ চলে যেতেই কবিতা কফি বানিয়ে নিয়ে আসিফের রুমের সামনে দাড়িয়ে দরজা নক করে। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ নাহ পেয়ে দরজা টাহ আস্তে করে খুলে ভেতরে গিয়ে দেখে আসিফ কোথাও নেই। আর ওয়াশরুমে পানির আওয়াজে কবিতা বুঝে যায় যে আসিফ শাওয়ার নিচ্ছে। কবিতা কফি টাহ সেন্টার টেবিলের উপর রেখে ঘুরে দাড়াতেই দেখে আসিফ ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। আসিফের শরীরে জাস্ট একটা টাওয়াল মাত্র। আসিফকে এরকম অবস্থায় দেখে কবিতা তাড়াতাড়ি উল্টো দিকে ঘুরে বলে ওঠে,
–” সরি সরি! আমি বুঝতে পারি নি আপনি এখনি বের হবেন। আসলে আমি কফিটাহ দিতে এসেছিলাম।”

–” It’s ok! প্রব্লেম নেই। তুমিই তোহ।”
কবিতা আর কিছু নাহ বলে রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আসিফ কবিতার হাত ধরে ফেলে। কবিতা চমকে উঠে তাড়াতাড়ি নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। আসিফ কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সরি! আসলে, একটা কথা বলার ছিলো।”

–” হুম! বলেন।”

–” বলছিলাম যে আবির কোথায়?”

–” বাহিরে, কিছু সময়ের মাঝেই চলে আসবে। আসছি।”
কথাটা বলেই কবিতা আর এক মিনিটও নাহ দাড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসে। আর আসিফ কবিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা শয়তানি হাসি দেয়।

★★★
আবির রাতে বাসায় এসে ড্রইংরুমে আসিফ কে দেখে অনেক খুশি হয়। আবির এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
–” কখন এলি?”

–” বিকালে।”

–” ওহ আচ্ছা। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
আবির ফ্রেশ হয়ে আসিফের সাথে গল্প করে। ডিনার শেষে আসিফের সাথে আরও কিছু সময় কাটিয়ে নিজের রুমে আসতেই দেখে রুম অন্ধকার, শুধু ব্লু সেডের ড্রিম লাইট জ্বালানো। আবির কিছু একটা মনে করে বারান্দায় গিয়ে দেখে কবিতা রেলিং ধরে বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির পেছন থেকে বলে ওঠে,
–” কবিতা!”

কবিতা পেছন ঘুরে দেখে আবির। কবিতা কি মনে করে যেনো আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবির কিছু বলে নাহ, উল্টা এই প্রথম আবিরও কবিতাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুসময় পর আবির কবিতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে, কবিতাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে যায়। আবির কবিতাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ঘুমিয়ে পড়ো। চোখ বন্ধ করো।”

আবিরের কথা শুনে কেমন জানি কবিতাও চোখ বন্ধ করে ফেলে। আবির ঐভাবেই বসে থাকে কাবিতার পাশে। কিছুসময় পর কবিতা ঘুমিয়ে গেলে, আবির কি ভেবে যেনো কবিতার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে, সোফায় গিয়ে শুয়ে শুয়ে ড্রিম লাইটের আলোয় কবিতাকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যায়।

চলবে…………